.
মনিব মহাশয় ধীর কণ্ঠে উত্তর দিয়াছিলেন,–এত উতলা হইবার কারণ নাই, সে হারামজাদা হয়ত পাখীটিরে সাজাইতেছে…বেচারী বড় দুঃখিত হইত…এই নৃত্য একমাত্র সে আর সেই পক্ষীরই দেখার উপযুক্ত, তাহাদের ভুল হইবে না–আমরা অনেক কিছু ভাবিব তবে দেখিব…এই নৃত্য যে কোনও ধ্বংসাবশেষকে দুর্লভতা দিবে…সে যদি একা দেখে বড় ক্লেশ পাইবে!…এ নাচ দারুণ, এ নৃত্য দারুণ হইবে।
মনিব পত্নী কহিলেন, মেরীকে তুমি ডেকো…কি যে এরা ছাই স্বাধীনতা স্বাধীনতা করে চেঁচায়, মরণ!
কাছেই একদল নানা বয়সী পুরুষ ঘোর তর্ক করিতেছিল, নিয়ত বাঙালী, বাঙলা দেশ, রিট্রেঞ্চমেন্ট, চরকা–একটা হোক্স, শব্দ উৎসারিত হইতেছিল যে সকলেই তর্ক জয় ইচ্ছুক, ইহাদের উৎসাহে জাতীয়তাবাদী দৈনিক পত্র-এর প্রচারসংখ্যা ক্রমবর্ধমান, যে ইহারা দেশ-প্রেমে ক্লান্ত হওয়ত এখন হাওয়া বদলাইতে আসিয়াছে। এই দেশাত্মবোধের মধ্যে রাজনৈতিক-কবন্ধ ছিল না! কেন না এনারকিষ্ট দীননাথ এখানে, সে বড় বালাই। এহেন ঘোরতর বাগযুদ্ধে মুরারীবাবু চোখ খুলেন নাই, তিনি স্বাধীনতায়, যে এবং তাঁহার হৃদ্বয় কুঞ্চিত নয়, নিশ্চয় বিরাট কোন সিদ্ধির জন্য আরও গভীরে তিনি আছেন। এক সময় তিনি ঘোষণা করিবেন, আমার আমিত্ব কি দুস্তর, কি বিচিত্র! আমি স্বাতি নক্ষত্রে যে জল তাহাতে গৌরবান্বিত হইলাম, তোমরা আমারে আরও খানিক মগ্ন থাকিতে দাও, আমি তোমাদিগকে অনেকবিধ আশ্চৰ্য কথা বলিব!
.
ডেপুটি কমিশনার এইচ. কিউ তাঁহার মোম চর্চ্চিত গোঁফ, তিনি দারুণ জবর পিগ ষ্টিকার একজন, তাহার নেত্র বীরতুল্য, তাঁহার বুটের আওয়াজ অধস্তনদের স্মরণে! তিনি সিগার-এর ধূম ত্যাগ করিতে, ধূমবৃত্ত উদ্ভূত হইল, কহিলেন, বিলি তুমি বিস্ময়কর, তোমার উচিত ছিল…কি ক্রেজি আমি…যেহেতু বালুকার বৈভব দিয়া তুমি নিৰ্ম্মিত, তোমাতে অন্ধকারের অ নাই। সূৰ্য্য উপাসনা হইতে পৌত্তলিকতা এবং বিমূর্ত মানসিকতার যখন সবেমাত্র সঞ্চার, বাস্তবতা যখন প্রহেলিকা, তাহার ইতঃমধ্যে লহমার কোনখানে ডাগর দাম্ভিকতায় তুমি খেলা করিতে পার!
হায় এ শতাব্দীতে মারাত্মক যুদ্ধ ঘটিয়াছে, এ শতাব্দীতে, বলিতে কি, রমণীর কোন প্রয়োজনই নাই! তুমি নিরর্থক, তোমার বাম বক্ষস্থিত কৃষ্ণপক্ষ রাত্রির, স্বেদবিন্দুতে অপুত্রকের পুত্র হয়, তোমার দক্ষিণেরটিতে শুক্লপক্ষীয় স্বেদবিন্দুকে, নদীসমূহে বন্যা দেখা দেয়, দেশান্তর হইতে আজব পক্ষীতে তোমার উন্মাদনা আছে, হায় আমাদের কাহারও নিকট সেই মুক্তামালা নাই যে তোমারে প্রীতিভক্তিতে প্রণামী দিব, যে এ পর্যন্ত যাহারা তোমার শুভ নামে আত্মহত্যা করিয়াছে, সেই তাহারাই তোমারে সৰ্ব্বদা অদৃশ্য থাকিয়া রক্ষা করিতেছে, তাহারা তোমার নামে আত্মত্যাগ করিতে, বহু তরুণকে প্ররোচিত করিতেছে–তাহাদের শেষ–পত্রসল তোমাকে, যদ্যপি আইনবিরুদ্ধ, আমি তবু দিব!…যে হয়ত উহা সকল তোমার উন্মাদনাকে খুসী করিবে…কি ক্রেজি আমি…বিলি তোমাকে আমরা দেখিলাম যে বিলি তুমি অপরিসীম টেররিফিক (বিলির উচ্চারণে) তুমি…তোমার কারণে পুলিশ রিপোর্ট বলে, তোমার কারণে ম্যাডাল্স স্কোয়ারে সেদিন সন্ধ্যায় রক্তাক্ত জঙ্গ হয়, তোমার জানলা হইতে তুমি দেখিয়াছ, দুইপক্ষ সকলে উদ্বুদ্ধ হইয়া খরতর লড়াই করে, কত হকিস্টিক ভাঙ্গিল, কত ইলেকট্রিক তারের চাবুক চালনার শব্দ সাঁইসাঁই হইল, পাঞ্চ ব্যবহৃতও হয়, কে একজন পার্কের ফরাশের (যে গ্যাস জ্বালে) মই লইয়া রণস্থলে আসিল!…ইহা কিছু নয়, একটি জাতিকে উচ্ছন্ন দিবার সম্ভাবনা তোমাতে…ইহা, এতাদৃশ বাক্যে খাঁটি ইংরাজ ডি. সি-র আধা নীল চক্ষুদ্বয় সুনীল হইল।
…দেখ দেখ ঐ সাঁওতাল কি পৰ্য্যন্ত আনন্দের! কি বাঘেরা!
শ্রোতৃবর্গের কণ্ঠ শুষ্ক হয়, তাহারা পুরাতন প্যাটার্নের অলঙ্কার, যথা, মটরমালা, মপচেন ইত্যাদির নিমিত্ত খানিক মৌন, তাহারাও সাঁওতাল দেখিল। এ সাঁওতালগণ বহু জনপদবধূর রাত্র আত্মসাতে কালো!
একটি শিশু কি অফুরন্ত তাহার চেহারা, যে কাজলকে, নিজ চক্ষুস্থিত, নৈনেত্তর করিয়াছে, তবু কি মধুর। শিশু হস্তীর প্রায় ছুটিয়া আসিয়া দাশ মহাশয়কে জানাইল,–মেতমতাই নমচ্কাল…মেতমতাই নমচ্কাল (নমস্কার)।
সহচরীবৃন্দ কহিল,–আমরা লাভ ম্যারেজ শুনিয়াছি কিন্তু বিলিকে কখনও শুনি নাই। অদ্য প্রাতে ভ্রমণরত বিলিকে আমরা দেখিয়াছি, তাহার পথের সম্মুখে কয়েক তরুণদের আগমন, বিলি শুধু মাত্র ফুৎকারে তাহাদের বিশৃঙ্খল করত কহিয়াছিল,যাও এক ফুৎকারে তোমাদের উড়াইয়া দিলাম। সত্যই তাহারা ছিন্নভিন্ন মেঘের ন্যায় হইল। যে এখন সহচরীদের বিস্ময়োক্তি ও ঐ যে শিশুকথিত পদবন্ধ অবাক মিশ্রিত–দুই পক্ষের এক এক শব্দ কখনও পাশাপাশি–সুতরাং এক অদ্ভুত ভাষার কথার সৃষ্টি হয়।
এক কাশি শব্দ শ্রুত হইল, আর আর প্রসব-বৃত্তান্ত সূচিত হইয়াছিল, আর স্বরে, পুনরায় ধ্বনিত হইল,–আমার স্ত্রী জন্ম সম্পর্ক নেশার দরুণ এক এক কুহক ঘটনা জানেন, আমি জানি, তিনি আমায় অনেক গুহ্যাতিগুহ্য অভিজ্ঞতা, তত্ত্ব, বলিয়াছেন, যে তাঁহার হস্ত নাড়ী কৰ্ত্তনের মুহূর্তে ঝনাৎ শব্দ করিয়া উঠে, তাঁহাতে দিব্য দৃষ্টি উপজাত হয়, যাহার বলে তিনি প্রত্যক্ষ করেন, ঝরণা, মৃত্তিকা, উদ্ভিদের ঈশ্বরী জাগ্রত, সৌরজগত বিচ্ছিন্ন হওয়ার অনৈসর্গিক শব্দ উহা–ঐ ঝনাৎ, তাহার শরীর এক অভূতপূর্ব দশা প্রাপ্ত হয়, মনে হয় তৎক্ষণাৎই তাহার বিবাহ ও স্বামী পরিচিত হইল, ধ্রুব যে তদীয় দেহে অন্য মনোরমত্ব উপচাইল!