আর যে পর্য্যবেক্ষণ করিবেন অলোেকা তেমনই ভাবে দণ্ডায়মানা। এবং যে অন্য ধারে, শালা রাজনৈতিক-কবন্ধ, শালা, যে ক্রমবর্ধমান জাতীয় চরিত্র, যে রুমাল বিন্যস্ত করিতেছিল, ইহারই এই ব্যক্তির কারণে, এই ছোট ধরিত্রীতে, অনেক রমণী অনাদৃতা হইয়াছেন! ইহার লালা-মিশ্রিত বলদ হাসি হাসি কীদৃশ নীচযান! সেই দুৰ্বত্তের শব্দাবলীতে কথাতে নারী, জাতি, শোষণ শব্দ আছে, সে ভাবে অভিজাতরাই গোঁড়া অপ্রাকৃতিক এবং সে নিজে ভূত বিশ্বাস করিলেও, ভগবান নাই, ইহা জানে!
এখনও নাচ আরম্ভ হয় নাই; রাজনৈতিক কবন্ধ ক্রমশঃ বিকলাঙ্গ হইতেছে! সাঁওতালগণের চিড়া খাওয়া দর্শনে তাহার জিহ্বায় জল আসিল, অথচ এই ব্যক্তি প্রতি প্লেট হইতে কিছু না কিছু খাইয়াছে, বলিয়াছে অপচয় অন্যায়। এবং আড়দৃষ্টিতে দেখিল, সে সাঁওতাল রমণীদের সান্নিধ্য চাহিতে ছিল।
.
ঐ সেই সরসীবাবু, যিনি স্যার পি’র বহু গল্প জানেন: দেওঘর স্টেশনে স্যর পি’র খাস বেয়ারা আবদুল হাতের ঘড়ি দেখিয়া কহিল, মেরী বাবা (অলোকা) টায়েম হইয়াছে, আমি কি হুজুরকে ঔষধ দিব। কেননা স্যর পি…স্নায়ু পীড়া-গ্রস্ত; ইনি বুনো ফুল ফুটুস গাছের সমীপে বহুসময় যাপন করেন, কেহ তাঁহাকে বলিয়াছে উহার গন্ধ স্নায়ুকে সমতা দেয়। যে ঐ দিবস দেওঘর স্টেশনের ফার্স্ট ক্লাশ বিশ্রামাগারটি আর এক রূপ ধারণ করিয়াছিল, খসখসের টাটু পর্যন্ত টানান হয়; এখন অসময়; রেলওয়ের কর্মচারীবৃন্দ হন্তদন্ত। ইতিমধ্যে মাস্টার মহাশয়, অপরাধী যেমন, আসিয়া কাহিল স্বরে জানাইলেন,–স্যর গাড়ী এখনও মধুপুরে পৌঁছায় নাই! বুঝিতে পারিতেছি না…এবং ইনি টেলিগ্রাম যন্ত্রের শব্দের জন্য এই স্থান হইতে উৎকর্ণ থাকেন। অলোকা তাহার পিকিংগীজ লইয়া না-জ্বালা টেবিল আলোর গোলাকার কাঁচে আপন প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করিতে আছে, এখন তাহার আতঙ্ক নাই, সর্পভীতি নাই, এখানেও তাহার আকৃতির কোন বিচ্যুতি নাই! ইহার দরুণ প্রতিচ্ছবি মজা-উদ্দীপক হইল না, সে মাস্টার মহাশয়ের কথা শুনিয়া তাঁহারই দিকে অসহায়ভাবে চাহিল, পিতামহকে দেখিতে তাহার জোর ছিল না, কেন না তিনি বেচারী যারপরনাই অধৈৰ্য্য; গোলাপের কলম তাঁহার বিদেশ হইতে আসিয়া কলিকাতা বন্দরে আসিয়াছে, কয়েক রাত্র তাঁহার ঘুম ছিল না; গোলাপের কলম হাওড়া ছাড়িয়াছে তাঁহার ঘুম হয় নাই; এখন এই স্টেশনে পৌঁছিবে, তিনি গোলাপের কলম লইতে আসিয়াছেন।
সরসীবাবু সেই অভিজাতকে অপেক্ষমাণ দেখিয়াছেন। ঐ স্যর পি…মহানুভব, ঐ স্যার পি…শান্ত। প্রকৃতির! ইহাও সরসীবাবু বলিতে পারেন।
.
একদা মনে পড়ে আমাদের লেখকের বাড়ীতে আমার বাবা, অনন্যোপায় বেড়া নিমিত্ত অনেক লেডি হ্যাঁমিলটন ও মার্শল নীলের কাটিং রোপণ করেন, কালে সেগুলি ঝামরাইয়া উঠে। সেবার রিখিয়ায় আসিয়া এই সংবাদে স্যর পি…ম্রিয়মাণ; তিনি বেড়ার অন্যধারে থাকিয়া জানাইলেন, ইহা অন্যায়।
আমার বাবা উত্তর করিলেন,–মহাশয়, মুঘোল বাগিচায় এরূপ ব্যবহার আছে!
তিনি সলজ্জভাবে বলিলেন, তাহারা যাযাবর জাতি ছিল, খুনী ছিল! আমার বাবা তাঁহার দিকে চাহিয়া রহিলেন, শুনিলেন স্যর পি’র কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হইল, ইহার কাঁটা আছে ইহাই জানিয়াছেন, আমি ভাবি আপনি শুধু, হায়! জানিলেন গোলাপের কাঁটা আছে…ইহা লিখিত থাকিবে! স্যর পি…অতীব দীপ্তিশীল, আবার নিষ্প্রভ কেননা মানুষের দুঃখ হইতে দুঃখতর দুঃখ তাঁহাতে আছে!
.
এখন নাচ হইবে।
মনিব পত্নী উতলা হওয়ত স্বামীকে বলিলেন,-হতভাগা এখনও এল না (সুঘরাই) তুমি ত তাকে…তোমার মাথায় যে কি চাপে…পাখী আনতে বললে! এই অন্ধকার রাস্তা!
মনিব মহাশয় আপন পত্নীর বাক্যে কিছু আশ্চর্য্যে থাকিয়া কহিলেন, তোমার মনে পড়ে, আনা পাভলুভা কে…ওঃ তাহার প্রবেশ মনে পড়ে? সব থেকে আমাদের বিরক্ত করিতেছিল, সেই আলোর ছটা যাহা সারা প্রেক্ষাগৃহ পার হইয়া আসিতেছিল,…(ওল্ড) এম্পায়ার ত…প্রজেকশ্যন রুম হইতে আলো আসিতেছিল তাই। কিন্তু ষ্টারে ব্যবস্থা আর এক, কর্ণাৰ্জ্জুন নাটকেনরেশবাবুর হাতে, মানে শকুনির হাতে, সেই অব্যর্থ পাশায়…কাহার হাড় যেন। কি আলো! আজও মনে আছে। হ্যাঁ তুমি কি। পাগল হইলে; অন্ধকারেই উহারা ভাল দেখিতে পায়…সে কি চেঞ্জার! নিশ্চয় হারামজাদা খাঁচাটি। সাজাইতেছে…নাচ আরম্ভ হইবার আগেই সে আসিবে।…আমি আনা পাভলুভার নাচ কলিকাতাতে দেখি…সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ ঐভাবে, সেই হাঁসের ন্যায়, মরিতে চাহে…।
.
সদ্যোজাত শিশু না কাঁদিলে সকলেরই, ধাত্রী হইতে গৃহস্থের মহা দুশ্চিন্তা উদ্বেগ হয় ত, সেবার আমার স্ত্রী নবজাতক কাঁদে না দেখিয়া, কান্দিল না দেখিয়া, সন্নিহিত ধাত্রীকে কহিলেন, এই জাতক না কাঁদিলে বাঁচিবে কেমনে; না কান্দিলে…রহ, আমি চপেটাঘাত করি। সে কান্দিল! সে বাঁচিবে।
শ্রোতারা সকলেই সেই প্রহেলিকাময়ী ধাত্রীবিদ্যা পারদর্শিনীকে, যিনি এই নৃত্যজমায়েতে তাঁহাকে, এখন অদূরে আছেন, দেখিল।
মনিব পত্নী মহা উৎসাহে প্রকাশ করিলেন, দেখ ঠিক এমনিতারা আমরা কলকাতায় এ্যাট হোম দেব (!) কি বল? এমনি চেয়ার তক্তাপোষ টুল ইজিচেয়ার মোড়া বেঞ্চ এই রকমই পাথর থেকে চায়না, কাঁসা, জার্মান সিলভার, রূপার ডিস, মাটিরও কিছু গেলাসও…এ্যাট হোম দেব.পেলমেল…কি বল? খুব মজা হবে না!