অউক্সো! কে বলিল…!
আমিই সিদিন বছিলুম, যে মুরগীগুনো সব মারা গেল হঠাৎ, রাতে কিছু নাই…সব্বাইকে খুঁজতে পাঠালুম; অবশেষে অউক্সো…ছিল…!
এ সময়ে প্রধান শিক্ষয়িত্রী তাঁহার সঙ্গের বালিকাদের ঐ বিশেষ্যটি সম্পর্কে কৌতূহল দর্শনে তাহা নিবৃত্তির মানসে নিম্নস্বরে কহিলেন, অসসা…না বভরিল কোনটি, বিফ ইন বৃফ্ (beef in brief)। আমার ত ভুলিয়া যাওয়া উচিত নহে, কোথায় দেখিয়াছি–আঃ আমার বয়স হইয়াছে, রহ মনে করি, ইনসিওর ইট উইথ গিলেনডারস–সম্ভবত অক্সসাই?…কিন্তু ইহার পরক্ষণেই উত্রাই-নামার বেসামাল তাঁহাতে, কেননা ঐ অক্সো সূত্রে মনিব পত্নীর ভদ্রতা-ব্যভিচারিণী কথা তাঁহাকে জ্বরগ্রস্ত করিল। যুগপৎ স্বদেশীনেতার মন্তব্য কানে আসিল, গরু খাওয়া ঠিক নয়!
এই বিষয়ে বিলাসিতা-বিরোধী স্বদেশী নেতার জবাব প্রথমে প্রধান শিক্ষয়িত্রীর আরামপ্রদ বলিয়া বোধ হয় (আদতে যেহেতু প্রথমত ঐ ব্যক্তি মনিব দম্পতিদের বুজরুক বলিয়া থাকে ও তাঁহারা অত্যন্ত ধনী বিধায় ইংরাজের খয়ের খাঁ বলে) তাই এই নেতাকে তিনি পছন্দ করেন–আবার অপছন্দ করেন খুবই, কেন না তাঁহার স্বামী বলিয়াছেন যে তাঁহাকে এ্যানারকিষ্ট দীননাথ জানাইয়াছে ঐ লোকটি নিজের ফটোর একটি ব্লক করিয়াছে, দুঃস্থ নির্বোধ পত্রিকাওয়ালারা যাঁহারা ব্লক ছাপান উচ্চমানভাবে, তাঁহাদের দিয়া থাকে, ছবি ছাপায়।
এইভাবে সেই লোকটি জনপ্রিয়। লোকটি রাজনীতিবিদরা যেমন হইয়া থাকে, চরকা কাটে, অনেক,গ্রামে প্রহৃত হইয়াছে, অনেক বন্যার টাকা আত্মসাৎ করিয়াছে…এ-ক্লাস প্রিঞ্জনার ত দূরের কথা কখনও বি-ক্লাসও নয়! এখন কোন এক মিউনিসিপালিটির ধাঙ্গড় নেতা, সে তাহাদের শোষণ করিতেছে, বলে পৃথিবীতে রাজা বলিয়া কিছু নাই! যুবতী দেখিলেই কামে গোঁয়ার হইয়া উঠে! এই বিলাসিতা-বিরোধী স্বদেশী নেতা মনিব পত্নীর মুখে অক্,সো গো-মাংস শুনিয়া মহা ধিক্কারে কহিলেন, গরু খাওয়া ঠিক নয়…একে গরম দেশ, গরু মানুষের উপকারী…আমাদের দেশ…।
ইহাতে মনিব পত্নী নিদারুণ অবজ্ঞায় মুখ ঘুরাইয়া লইয়াছিলেন, এমন যে তাহার সহিত তাঁহার বাক্যালাপে মানহানি ঘটিতে আছে, বিলাসিতা-বিরোধী স্বদেশী নেতা প্রস্থান করিল। তিনি, মনিব পত্নী এখন নিলজ্জভাবে বলিয়াছিলেন,–গরম দেশ…উনি যেমন বলেন মেয়েছেলে সহ্য হচ্ছে না? আর গরুর মাংস ত কি কথা…! সমবেত সকলে এই সরলতায় বিশেষ আমোদিত হয়। একমাত্র প্রধান শিক্ষয়িত্ৰী ব্যতিরেকে, যিনি এখনও যুবতীর ন্যায় কণ্টকিত লাল হইয়া থাকেন। তিনি বড়ই অপদস্ত হইয়াছিলেন।
এখন প্রধান শিক্ষয়িত্রী কোনক্রমে ঐ বিষয় এড়াইতে তৎপর হইয়া কহিলেন, কিছু মনে লইবেন, আপনাদিগের তুল্য এত উচ্চশ্রেণীর অর্থাৎ মানে…যা বলিতে চাহি তাহা ইহা যে…ইত্যাকারে তাঁহার কণ্ঠস্বর শ্লেষাত্মক হইতেছিল, জাতিতত্ত্ব লইয়া ঝটিতি বলিলেন–আমাদের কাহাকেও ছোট ভাবিয়া অর্থাৎ ছোট করিয়া বড় ভাবা…মানে ঈশ্বর যাহাকে যেমন করিয়াছিলেন…কি উচিত…শোভা পায় না…।
মনিব মহাশয় অত্যন্ত বাধিত হইয়া উত্তর করিলেন,–আমার বাক্য আপনি মার্জনা করিবেন –আমাদের এই চমৎকার ঘৃণা অবজ্ঞাটা থাকিতে দিন…।
যে প্রধান শিক্ষয়িত্রী একদা নিঃসংশয়চিত্ত হইলেন যে মনিব মহাশয় নিজে আত্মসমালোচনা করিলেন, আবার একদা কুঞ্চিত তাঁহার হইল, অতএব কোন তত্ত্ব অনুমানে–মনিব মহাশয়ের উক্তি কি শ্লেষ-নির্ঘাত তাহা অবধারণে তিনি মুস্কিলে ছিলেন; সম্ভবপর হইলে এই স্থান তিনি ত্যাগ করিতেন, তবু স্বভাববশত উত্তর করা উচিত বিধায়ে ব্যক্ত করিলেন, মানুষ কোন কদভ্যাস বা…আপনার ন্যায় ব্যক্তি এরূপ…মনোভাব।
সম্ভ্রান্ত শিক্ষিতা ভদ্রমহিলার মন্দ দশা বুঝিয়া মনিব মহাশয় বিচলিত হইয়াও বলিতে উদ্যত হইলেন যে আপনি কি মদীয় জীবনী পাঠ করিয়াছেন, কিন্তু তিনি স্তব্ধ।
এখন খানিক শাসনের ভঙ্গীতে বিড়ম্বিত প্রধান শিক্ষয়িত্রী ব্যাখ্যা করিলেন,–উহাদের ডোম বলিয়া ছাড়িয়া দিলে চলিবে না…আমাদের কর্তব্য উহাদের শিক্ষা দেওয়া…ক্রীশ্চান ধৰ্ম্ম বলে…আমরা ত বলি মানুষকে সৎপথে চালিত করা…বালককে…সে চপলমতি, তাহারে শিক্ষা দিতে হইবে যে পক্ষী হইলেও উহাদের সুখদুঃখ বোধ তথা প্রাণ আছে…এখন হইতে যদি শিক্ষা দিতে অবহেলা করি তাহা হইলে, একটু একটু করিয়া যে পাপ আত্মায় প্রবেশ করিতেছে…!
মনিব মহাশয় তদুত্তরে, তিনি আবাল্য জানিতেন আত্মা সম্পর্কে ভগবান কি বলিয়াছেন, তিনি আলস্য ত্যজিয়া মৌখিক বিনয়ে নিবেদন করিলেন,–সুঘরাইএর ভাবান্তর কোন আলোচনার বস্তু নহে…ইহা অবশ্যই একশবার যে আপনি যাহা বলিলেন তাহা অভ্রান্ত-তবে যদি অনুমতি করেন তাহা হইলে বলি যে সুঘরাইএর উক্ত ব্যবহারে কোন আত্মসুখ নাই–সে নিষ্পাপ! উহা নিষ্পাপ! যেমত যেমন পিঠোপিঠি ভ্রাতা ভগিনীতে ঘটিয়া থাকে…আমি দেখিয়াছি ও নিজে পাখীটিরে আঘাত করিয়া বলিতেছে, আমারে তুই মার না কেন?–সহজ সম্পর্ক তাহা ব্যতীত অন্য কিছু না,…জানিবেন ইহা খুনসুড়ীই, কেহ বলিতে পারেন যে মাত্রালঙ্ঘিত খুনসুড়ী ইহা, তবু ইহা খুনসুড়ী!
এবং ইহার সহিত-যে তিনি শিক্ষিত, যে তিনি চিন্তা করিতে পারেন, ইহা যাহাতে সুস্পষ্ট হয়, তৎপ্রবর্ত্তীত উত্থাপন করিলেন যে, ইহার মধ্যে সেই ঐতিহাসিকতার আঁশ নাই, যাহা কোন ফরাসী পাদরী (দু’বোয়া!) মনে পড়ে যাহারে ‘প্লেইজির ইল্লিসিট’ বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন ইহা তাহা নয়!…ইহা অতীব প্রাচীন মনুষ্য বা বালকস্বভাব মাত্র…দেখুন মানুষে অনেক বিশ্রী বস্তুর সুন্দর নামকরণ করে, তেমনি উচিত ছিল এই সহজ সাধারণ স্বভাবের একটি বিশেষ নাম দেওয়া…তাহা হইলে…আমরা ইহার চরিত্র বা প্রকৃতি নিরূপণে নিশ্চিত হইতাম…আমার ধারণা ইহা সম্পূর্ণ পূৰ্ব্ব কথিত সম্পর্ক ইহা।