বিলাসের নবতম দিব্য জামা কাপড়—যাহা স্পোর্টস ধরণের—তাহার নীচে অতি সূক্ষ্ম দেহ যেন বা প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল, একদা তাহার মনে হইল, রঙ্গস্বামী কি এই যশস্বিনী ধরিত্রীর লোক নহে? এ কথা এ অভিমান মনে উঠে সঙ্গে সঙ্গেই মিলাইয়া গেল, কেন বা রঙ্গস্বামী উচ্চশ্রেণীর দক্ষিণ ভারতীয়—ব্রাহ্মণ্য ধর্ম্মের স্বর্গীয় সুষমায় যে জীবনধারা গঠিত, ফাঁকি নাই। এখন, বিলাস—সাঁওতাল রমণীরা যেরূপ হাটে আসিয়া আপনার বিক্রয়ার্থে ঠেকাপূর্ণ সামগ্রীর সম্মুখে, মুখে একটি হাত দিয়া নির্ব্বাক হইয়া দাঁড়াইয়া থাকে সেইরূপ দণ্ডায়মান।
সঘন ট্রাজেডির অভিনেতার মতই টেবিলের সবুজ বনাতের উপর দিয়া বার বার ঘুরাইয়া গভীর কণ্ঠে বলিতে লাগিলেন “ভগবানকে ধন্যবাদ যে তুমি এই শতাব্দীতে জন্মেছ…(তবু এখানে রঙ্গস্বামীর স্বর নিদাঘের দ্বিপ্রহরের ফেরিওয়ালার ডাকের মতই ক্লান্ত শোনাইল) যখন দিন দিন রাত্র রাত্র—আপনার সহজ রূপে এসেছে; বহু মহাপুরুষকে তুমি কল্পনা করে নিতে পারো…আমার বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে…”
বিলাস সত্যই রঙ্গস্বামীর এই সরলতায় মুগ্ধ হইয়া চাহিয়া রহিল, সহসা তাহার মনে হইল, এই স্যানাটোরিয়ামের সাজগোজ আসবাবপত্রের সহিত কি মিল আছে? এখানে ওখানে সর্ব্বত্রে লুই কাতজ আমলীয় সাজসজ্জা তাহাকে এখন বুদ্ধিহীন করিল, কেন এত ঝাড় লণ্ঠন, সেজ, বাতিদান, ঈবনী, গোল্ড ওরমলু, কারপেট…এক মাত্র এপরন, চার্ট, খাট এবং এটা সেটা ছাড়া সবই ভারী সুন্দর শান্তি উপত্যকা! এই স্যানাটোরিয়ামকে সাজাইতে যখনই মহামান্য রাহা বাহাদুরকে কোন কিছু প্রয়োজন এ-প্রার্থনা জানাইয়াছে, তৎক্ষণাৎই তাহা মঞ্জুর হইয়াছে। কিছুদিন পূর্ব্বে নয়টি পরীধৃত সোনার সৌখীন কাজ করা একটি ঘড়ি পাঠাইয়া দিয়াছেন—রঙ্গস্বামী ঘড়িটি ঈবনীর ম্যানটেল-পিসে রাখার সময় হাঁকিয়া বলিয়াছেন “চিলড্রেন…জগতের যত সুসময় এই ঘড়িটিতে জমা হয়ে আছে…তোমরা যদি লাভ করতে চাও…এটার দিকে তাকিও” বিলাস ছেলেমানুষ যেমত কঠিন অঙ্কের সামনে ঘর্ম্মাক্ত হইয়া উঠে, তেমনি অদ্ভুত অদ্ভুত কথা এবং আপনার অভিজ্ঞতার সমক্ষে সে অস্থির।
“আমি অনেক দূরে চলে যাচ্ছি…ভগবানকে বিশ্বাস ক’রো” রঙ্গস্বামী বলিতেছিলেন। ‘বিশ্বাস ক’রো’ কথাটা ভোরের হাওয়ার মত বিলাসের শীর্ণ মুখে আসিয়া লাগিল; এবং সে উদ্গ্রীব হইয়া রঙ্গস্বামীর মুখপানে তাকাইল, পুনরায় তাঁহার স্বর শোনা গেল “মাই ডিয়ার এ এক অদ্ভুত শতক, দেখ না একজনকে একজনের বলতে হয়, তাঁকে বিশ্বাস করো…” বলিয়াই আপনার দুঃসাহসিক হাতখানি বাড়াইয়া দিলেন, এখন তাঁহার সার্টের হাতার হীরকখণ্ড দেখা দিল। ওমি হীরকখণ্ড দেখিয়া মনে মনে প্রশংসা করিয়াছিল।
গোলাপ সুন্দরী – ০২
গোলাপ সুন্দরী – ০২
বিলাস ইদানীং আপনার ব্যাধিমুক্ত হাতখানি বাডাইয়া দিয়াছে, এ সময় তাহার সুন্দর কালো দুখানি চোখ জলসিক্ত হয়, কম্পিত কণ্ঠে সে কহিল “আমি জানি না কেমন করে…”
“আ আ…ধন্যবাদ দেবো এই ত”
“পুনরায়”
“ও ডিয়ার ও ডিয়ার. . ‘বলো না বলো না” বলিয়া চক্ষুদ্বয় বড় করিয়া রঙ্গস্বামী পুনৰ্ব্বার কহিলেন “বলো…বিদায়”
বিলাস হরিণশাবকের মত করিয়া মুখখানি তুলিয়া কহিল “কেমন করে বলি আপনাকে…”
ঠিক এই সময় পাশের হল হইতে কেমন যেন ভৌতিক গোলমাল ভাসিয়া আসিল ; অনুচ্চ এবং মৰ্ম্মান্তিক, গুহার প্রতিধ্বনি যেমন, গহ্বর আপনার প্রাচীনতম আবহাওয়া লইয়া দীর্ঘকায়া হইয়া উঠিল । এ কক্ষের সকলেই উৎকীর্ণ, ঝটিতি উদ্বিগ্ন হয় ; স্নেহপ্রবণ রঙ্গস্বামী আপনার চেয়ার ছাড়িয়া দ্রুতপদে ঘর ছাড়িয়া যাইবার কালে, বিলাসের উদ্বেগ ব্যস্ততা লক্ষ্য করিয়া কহিলেন “উত্তেজিত হ’য়ো না, দৌড়ে না”
বিলাস এবং ওমি ডাক্তারের পিছন পিছন করিডোরে আসিতেই দেখিল, মোহিত সবেগে হাতছানি দিয়া তাহাদের ডাকিতেছে । বিলাস কৰ্ত্তব্যপরায়ণ এবং ওমি কৌতুহলপরতন্ত্র, দুইজনে হল অভিমুখে অগ্রসর হইল। হলের দরজার অনতিদূরে মনোরম আঙুরলতার কেয়ারি করা সিল্কের খাড়া স্ক্রীনের পাশ দিয়া দেখে, প্রত্যেক বিছানায় শুয়ে-শুয়ে নিরাকার রোগীসকল ঊর্দ্ধে দৃষ্টি রাখিয়া আত্মঘাতী সৰ্ব্বনাশের আওয়াজ করিতেছে, সে আওয়াজে গিরিনদী ভূমিকার পূৰ্ব্বেকার স্তব্ধতা ছিল, যে স্তব্ধতায় দশাসই উৎকণ্ঠিত যৌবনার কেশরাশির আঁধার ছিল, যে আঁধার বাঁশরীর বিচিত্র অন্তরীক্ষ—তথাপি বিলাস আপনার সংযম হারায় নাই, স্পষ্ট করিয়া চাহিতে চেষ্টা করিল।
বিলাস দেখিয়াছিল, হলের প্রায় মধ্যস্থলে চেট্রি—সে আপনার খাট ছাড়িয়া এখন ঐখানে—তাহাকে দেখিয়া মনে হয় যে ঘোর উত্তেজনাবশত তাহার প্রায় নির্বাপিত শরীরের মধ্যে যেটুকু ঔদ্ধত্য ছিল, তাহাও কম্পমান, সে ঊর্দ্ধে দৃষ্টি রাখিয়া অতি পরিশ্রান্ত নৃত্যরত বাইজীর মত তাহার ঠোঁট অদ্ভূত ভঙ্গিমায় বিকৃত হইতেছে মাত্র, কিন্তু স্বর নাই…এইবার চেট্টি, ভয়ঙ্করভাবে আহত যেমন, টলিতে টলিতে অন্য আর খাটের বাজু ধরিয়া একটি হাত সঞ্চালন করিয়া সহসা উদাত্ত কণ্ঠে কহিল “ইয়া চলন্ত নিদ্রা অহো ভ্ৰাম্যমাণ এপিটাপ”
সকলেই দেখিল একটি বুদ্বুদ—সাবানজলের বুদ্বুদ—এ হলে হাওয়া খেলিয়া বেড়াইতেছে, এখন এইমাত্র, ঝাড়ের কলমে লাগিয়া নিশ্চিহ্ন হইয়া গেল । ( ফলে পুনরায় আমরা বিস্ময় ফিরিয়া পাইলাম)। কালহত ঘরটিকে বুদ্বুদ ভীত হইল না।
অথচ বিলাস স্বচক্ষে দেখিল, স্বল্পালোকিত রঙ্গমঞ্চ, তাহার গভীরতা হইতে একটি কিশোর আপনার বক্ষদেশে একটি হস্তস্থাপন করিয়া অন্য হস্তটি ডানার মত মেলিয়া এই বলিতে বলিতে অগ্রসর হইতেছে যে, “আর নয় আর নহে আমারে ফিরায়ে দাও মোর মনোভাব”। বিলাস স্তম্ভিত হইয়াছিল ।
রঙ্গস্বামীকে হলের অস্থিরতা যারপরনাই বিমূঢ় করিয়াছিল, কৰ্ত্তব্যজ্ঞান সত্ত্বেও তিনিও হয়ত বা মুগ্ধ হইয়াছিলেন। সাবানজলের বুদ্বুদটি লুপ্ত অদৃশ্য হইবার পরক্ষণেই দেখা গেল, চেট্টির ব্যাধি-ক্লান্ত শরীরটি উৎসাহিত, উত্তেজিত, হিম, বীরদপ, গীতব্যঞ্জক উদাত্ত কণ্ঠস্বরের উপরেই যেন বা ঝরিয়া পড়িল, এতদর্শনে হলময় সকরুণ ব্যথিত বাণবিদ্ধ কষ্টের ধ্বনি উৎসারিত হয় এবং আপনা হইতে একটি বর্তমানকাল দেখা দিল, আর যে বাস্তবতা ঝটিতি অনিত্যতাকে কেন্দ্র করিয়া সকলের সমক্ষে অত্যন্ত সহজরূপ পরিগ্রহ করিল।
চেট্টি এখনও সেইভাবে পড়িয়া আছে, সমস্ত দেহে হারমানা লাঞ্ছিত ভাব, উপরের জানালার লিনটেলের লাল নীল সবুজ কাঁচের আলো-খেলান ছায়া ইদানীং চেট্টির মুখে দেহে পড়িয়াছিল, ওষ্ঠের এক কোণ বাহিয়া চাপ রক্ত অনেক দূর আসিয়াছে, কাঁচের লাল সবুজ ছায়ায় রক্ত অধিক কালো, ওলিভকুঞ্জের ঘনঘটা করা রাত্র যেমন বা তার বক্ষে ছিল, ইদানীং ঝরিয়া পড়িল । বিলাস শান্তভাবে ইহা দেখিতে লাগিল ।
যে নাপিত ৬নং রোগীকে কামাইতেছিল, সে খুব ব্যগ্রভাবে ধরিয়া এতাবৎ ঘটনা পরম্পরা সাক্ষ্য দিবার মত করিয়া দেখিতেছিল ; হঠাৎ নিস্তব্ধতায় সে পুনরায় আপনার কার্য্য করিবার মানসে ডান হাতের খুর বাম হস্তে লইয়া বুরুশ জলে ডুবাইয়া যেন সম্বিৎ ফিরিয়া পাইল ।
বিলাস এখনও ঝরিয়া পড়া রাত্র দেখিতেছিল, অনেকদিন পূৰ্ব্বে বিদ্যুতের আলোয় আর একজনের মুখে এরূপ রক্ত দেখিয়াছে,—সে আত্মারাম । বেচারী আত্মারাম, অনেক কথাই বিলাসের মনে পড়িল, যখন প্রায় সে হার স্বীকার করিয়া আসিয়াছে, তখন কোথা হইতে একটি থারমোমিটার সে যোগাড় করিয়াছিল, আপনার টেম্পারেচার দেখিয়া রুদ্ধশ্বাসে জিগির দিয়া উঠিল “নৰ্ম্মাল নৰ্ম্মাল —দেখ ডাক্তার” রঙ্গস্বামী তাহার থারমোমিটার দেখিয়া কিছুটা সন্দেহের বশে অন্য রোগীকে দিলেন, সেখানেও ‘নৰ্ম্মাল’ ; এবং সঙ্গে সঙ্গে নিজের থারমোমিটার বাহির করিতেই ব্যাপারটা যেন তাঁহার বোধগম্যে আসিল । অবশেষে তিনিও সায় দিয়াছিলেন “হ্যাঁ নৰ্ম্মাল—তোমার বাড়িতে চিঠি দেবো ।” তারপর পরদিন আত্মারামকে কেহ আর দেখে নাই…কেহ কোন প্রশ্নও করে নাই । এই আত্মারাম বিলাসকে দু’তিনটি প্রেমপত্র লিখিয়াছিল, তারপর একদিন রাত্রে বিলাস ঘুম ভাঙ্গিয়া দেখে আত্মারাম তাহাকে সস্নেহে চুম্বন করিতেছে, এবং ধীর কণ্ঠে বলিতেছে “আমি তোমায় ভালবাসি বিলাস” এবং ঠিক তখনই বিলাস চমকিত বিদ্যুৎ আলোকে শাপগ্রস্ত আত্মারামের মুখে রক্ত রেখা দেখে ।
এতক্ষণে ডাক্তার রঙ্গস্বামী প্রায় চেট্টির কাছে । চেট্টি যারপরনাই শান্ত। তথাপি তাহার গর্ব্বিত দৃষ্টি এখনও ঊর্দ্ধে বুদ্বুদ অনুসন্ধানে ব্যস্ত, যদিচ বুদ্বুদ আর নাই তবুও তাহার খরচৈত্রে বিদীর্ণ পলিমাটি-প্রায় ওষ্ঠযুগল কোন এক এপিটাপ আবৃত্তিতে চঞ্চল।
বিলাসের, এতদ্দর্শনে, আপনার যুবরাজ সদৃশ মুখমণ্ডল কালো হইয়া উঠে, আর যে চেট্টির দূরদৃষ্ট তাহাকে নিঃসন্দেহে অতিমাত্রায় মৰ্ম্মাহত করিয়াছিল, ফলে তাহার সুন্দর রাধিকার ন্যায় চক্ষুদ্বয় আরক্ত হইল ; সে কেবল মাত্র অস্ফুট অসংযত কণ্ঠে বলিয়া উঠিয়াছিল “ও চেট্টি” এবং যুগপৎ অনুভব করিল আসন্ন সন্ধ্যায় কোন বেলাতটে দাঁড়াইয়া নিকটের, নিম্নে, বহমান উচ্ছসিত জলধারার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া সে অদ্ভুত টান টানা স্বরে বলিয়া চলিয়াছে ।
সলুই কি সি ম্যৎনাঁ দোর
ভি প্লু দ্য পিতিয়ে ক্য দাঁভি
এ সুফরি মিল ফোয়া লা মোর
আভাঁ ক্য দ্য পারদ্যর লা ভি
পাসাঁ ন্য ফে ইসি দ্য ব্রুই
গারদ বিয়াঁ ক্য তু ন্য ল্য ভেই
কার ভোয়াসী লা প্রমিয়ের নুই
ক্য ল্যু পভ্যয়র স্কারোঁ স্যমেই।
এইটি চেট্টির খুব প্রিয় এপিটাপ, এইটি তাহার নিকট হইতেই শেখা। এ-আবৃত্তির কালে বিলাসের মুখ-নিঃসৃত একটি গুনগুন আওয়াজ শোনা গেল, নিশ্চয়ই বিলাস সম্ভবত, সদর্পে এ সময়ে আপনার প্যাচ-পকেটে—যাহা অত্যন্ত স্পোর্টস—একটি হাত ঠেলিয়া রাখিয়াছিল। এবং আরবার আপনার মস্তকখানি আন্দোলিত করত চেট্টির মুখের দিকে চাহিয়া ধীরে ধীরে বলিয়াছিল “এ সুফরি মিল ফোয়া লা মোর, আভাঁ ক্য দ্য পারদ্যর্ লা ভি” এক্ষেত্রে তাহার কণ্ঠস্বর শুনিলে মনে হয় সে যেমন বা বেদান্তের অভিধা ক্রমে ক্রমে মিশাইয়া ফেলিতেছে, পরক্ষণেই মনে হয় যে তাহা স্বপ্নমাত্র, উক্ত এপিটাপের অতি সাধারণ মায়াপ্রবণ অর্থই তাহা জ্ঞাপন করিতেছে যথা “এবং সহ করেছে হাজারবার মরণ, ঠিক পূৰ্ব্বে জীবন হারাবার অর্থাৎ জীবন হারাবার পূৰ্ব্বে সে হাজার বার মরিয়াছে” একথা অবশ্যই যে বিলাসের এই আবৃত্তির পশ্চাতে যথাযথ শ্লেষ ছিল ।
চেট্টির এপিটাপ উদ্ধৃতির জ্বালায় সকলেই পাগল হইয়াছে, তাহার লাল চামড়ায় বাঁধান সোনার কাজ করা খাতাটিতে অজস্র এপিটাপ সংগ্রহ, নিজেও সে এপিটাপ রচনা করিত । সে নিজের বিছানায় বসিয়া, ইদানীং জৌলুষহীন মরা এককালের সুন্দর মুক্তার মত দাত চাপিয়া ধীরে ধীরে আবৃত্তি করিত তখন অন্যান্য বিছানার স্বাস্থ্যহীন মানুষেরা ভয়ে শুষ্ক হয় । বাক্যগুলির মধ্যে বাঘের গন্ধ ওতপ্রোত হইয়া উঠিত। পাঠের পরই চেট্টির বিদ্রুপাত্মক হাস্যে সারা হল ত্ৰাহি ত্ৰাহি, কে জানে চেট্টি অত্যন্ত নির্দয় ছিল কি না ! হয়তো ছিল ! চেট্টির নামে অনেকেই ডাক্তারকে বলিয়াছে কিন্তু কোন ফল হয় নাই ।
বিলাস প্রথম চেট্টির গলার স্বর শুনিলেই ত্রস্ত হইয়া উঠিত, তাহার পর একরূপ সে চেট্টিকে সহ্য করিয়া ফেলিয়াছিল। অদ্য সকালে যখন সে অন্যান্তের নিকট হইতে বিদায় লইয়া, চেট্রির কাছে দাঁড়াইল, চেট্টি তাহার হাতে নীল কাগজটি দিয়া কহিল “বিদায়”
“এটা কি”
“তোমার নামে এপিটাপ, পড়” বিলাস সহাস্যে কহিল “কি নির্দ্দয় তুমি” বলিয়া সে কাগজটি ধীরে আপনার পকেটে রাখিয়া দিল… এবং চেট্টির একটি হাত লইয়া আপনার সুন্দর গণ্ডদেশে বুলাইয়াছিল ।
হলের এ দুর্ঘটনাবু সামনে দাঁড়াইবার মত শিক্ষা তথা ধৈর্য্য ওমির ছিল না, তথাপি সে স্ক্রীণ পার হইয়া খানিক অগ্রসর হইয়াছিল । হলের এ-ঘটনা এত বেশী গোপনীয় ব্যক্তিগত (?) যে তাহার এখানে দাঁড়ান এক প্রকার দুঃসহ বলিয়া বোধ হইতেছিল, ফলে একবার সে জানালা দিয়া দূর পৰ্ব্বতমালার দিকে চাহিল। এবং এই নিৰ্য্যাতন হইতে অব্যাহতি পাইবার নিমিত্ত বিলাসের কোটে মৃদু আঘাতও করিল। বিলাসের বস্তুত, তখন কোন ব্যবহারিক জ্ঞান পর্য্যন্ত ছিল না ।
হলের অবস্থা যখন প্রায় শান্ত তখন ওমি বিলাসকে জোর করিয়া ধরিয়া পুনরায় করিডোরে আসিল। উহাদের দুজনকে দেখিয়া মোহিত উচ্চকণ্ঠে সুরু করিবামাত্র নিম্ন কণ্ঠে কহিল…”তোমাদের সাধারণ কাণ্ড পর্য্যন্ত নেই…এখান থেকে চল্লিশ মাইল তারপর ট্রেন…”
“সরি”—বলিয়াই ওমি ভাইকে কহিল…“বিলা খুব সাবধান…এতটুকু একসাইটমেন্ট নয়”
“আমার কিন্তু বড্ড কষ্ট হচ্ছে…”
“টমিরট…থাকলেই পারতে” মোহিত কহিল…এবং পরে মহাবিরক্তি সহকারে যোগ দিল “এক মুহূৰ্ত্ত থাকতে ভাল লাগছে না…”
ভালো লাগল।