সুমির খুবই অবাক লাগছিল। বলল, সত্যি?
নূরজাহান হাসল। আসল ঘটনাটা আগে শোনেন।
আসল ঘটনা আবার কী? সব তো বলেই ফেললে!
বলি নাই। শোনেন। দেড় দুই মাসের মাথায় শিরিন একদিন বমি করতে লাগল।
শুনে চমকাল সুমি। কী?
হ। বেদম বমি।
কেন?
বোঝেন নাই আপনে?
না।
শিরিন পোয়াতি হইয়া গেছে।
তাই নাকি? কীভাবে?
নূরজাহান আবার হাসল। আপনে অহনও অনেক কিছু বোঝেন না। এইডা তো খুব সোজা ব্যাপার। আন্ধার ঘরে তাগড়া জুয়ান বদর ফকির শিরিনের বদজীন ছাড়াইছে কেমনে? পর পর তিনদিন?
সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা বুঝে গেল সুমি। শরীরের ভেতর কেমন একটা অনুভূতি হলো তার। একেবারেই অচেনা এক অনুভূতি। ফ্যাল ফ্যাল করে নূরজাহানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সে।
নূরজাহান বলল, এইবার আপনেরে আসল কথাটা কই। দুনিয়াতে বদজীন ভূত পেত্নি পরি এইসব আছে কি নাই কেউ জানে না। তবে মাইয়া মানুষের শরিলে আর মনে যে একটা কইরা বদজীন আছে এইডা বেবাক মাইয়া মাইনষেই জানে। যুবতী হইয়া উঠনের পরই বদজীনটা বিরক্ত শুরু করে। সেই বদজীনরে কেউ কেউ দমাইয়া রাখতে পারে, কেউ কেউ পারে না। যারা না পারে তাগ নানান পদের অসুবিধা দেখা দেয়। তয় বিয়া হইয়া গেলে, স্বামীর লগে থাকতে শুরু করলে বদজীনে আর বিরক্ত করে না।
নূরজাহানের কথার অর্থ পরিষ্কার বুঝল সুমি।
কিন্তু তার সমস্যাটা কি ওরকম?
নূরজাহান বলল, আমার মনে হয় মনের বদজীনে আপনেরে বিরক্ত করতে শুরু করছে।
এখন তাহলে কী করা উচিত আমার?
বলব?
হ্যাঁ।
রাগ করবেন না তো?
না।
আপনের বিয়া হইয়া যাওন উচিত।
কিন্তু তুমি যা বলছ ওই ধরনের সমস্যা আমার নেই।
আছে। আপনে বুঝতে পারছেন না।
এবার অন্য একটা কথা মনে পড়ল সুমির। বলল, তাহলে কথা শুরুর প্রথম দিকে তুমি যে বলেছিলে এই এলাকায় নাকি বদজীন নেই, থাকলে তুমি টের পেতে না কী যেন! সেই কথাটার অর্থ কী?
নূরজাহান আবার হাসল। ওই কথার কোনও অর্থ নাই। এমনিতেই বলছিলাম। অর্থ ছাড়াও কত কথা আমরা কই।
আমার মনে হয় তুমি মিথ্যে বলছ।
কেমুন?
আসলে আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করার জন্য, অথবা কালরাতে কী হয়েছে এসব জানার জন্য ওইসব বদজীন ইত্যাদির কথা বলে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছ।
নূরজাহান হাসল। ঠিকই বলছেন।
তারপর উঠল। যাই। অনেক কথা কইলাম আপনের লগে। তয় যা কইলাম বেবাকই সত্য। মাইয়া মানুষের শরিল আর মনেই থাকে বদজীন। এই বদজীন ছাড়ানের একমাত্র পথ হইল বিয়া।
কিন্তু তুমি তো বলেছ বিবাহিত মেয়েদেরকেও বদজীনে ধরে!
হ ধরে! কখন ধরে জানেন?
কখন?
যখন নতুন নতুন বিয়া হয় মেয়েগ, দুই চাইরদিন স্বামীর লগে থাকে। তারপর দেখা গেল বউ রাইখা স্বামী চইলা গেছে দূরে। দুই চাইর ছয়মাস একবছর স্বামী ফিরে না, এই পদের মেয়েগও বদজীনে ধরে।
বলে নূরজাহান আর দাঁড়াল না।
নূরজাহান চলে যাওয়ার পর শুধুই জয়ের কথা মনে পড়তে লাগল সুমির।
৪. জয়দের বাড়িতে পৌঁছতে
জয়দের বাড়িতে পৌঁছতে ঠিক পঞ্চাশ মিনিট লাগল।
তেমন খুঁজতেও হয়নি বাড়ি। একবারেই পাওয়া গেল।
স্কুটার থেকে নেমে জয়কে দেখতে পেল মিলা। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ফেডেড জিনসের লুজ ধরনের জিনস পরা, আকাশি রংয়ের টিশার্ট। বাঁহাতে সুন্দর বেল্টের ঘড়ি। পায়ে সুন্দর স্যান্ডেলসু। সকালবেলা গোসল, সেভ এসব সেরে বেরুবার ফলে বেশ ফ্রেস লাগছে তাকে।
জয়কে দেখে খুব ভাল লাগল মিলার। মনে হলো এই মানুষের ওপর সর্বান্তকরণে নির্ভর করা যায়। এই মানুষ কারও কোনও ক্ষতি করতে পারে না।
মনটা আশ্চর্য এক ভাল লাগায় ভরে গেল তার।
মিলাকে দেখেই স্কুটারের সামনে এগিয়ে এসেছে জয়। সঙ্গে সঙ্গে তার গা থেকে চমৎকার একটা পারফিউমের গন্ধ এলো। এই গন্ধে মুহূর্তের জন্য কী রকম যেন দিশেহারা হলো মিলা। অপলক চোখে জয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সে।
মিলাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসল জয়। কী হলো? নামবে না?
মিলা থতমত খেল। তারপর লাজুক হাসল। নামব না কেন?
কোলের ওপর কলেজের ব্যাগ। ব্যাগ নিয়ে নামল সে।
জয় বলল, আমি একটা কাজ করতে চাই। তুমি কি রাগ করবে?
জয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মিলা বলল, হ্যাঁ খুবই রাগ করব।
কথাটা না শুনেই বলছ?
বুঝে গেছি কী করতে চাইছেন আপনি।
বলো তো?
স্কুটার ভাড়াটা দিয়ে দিতে চাইছেন।
জয় হাসল। হ্যাঁ।
কেন আপনি দেবেন?
বলেই ব্যাগের ভেতর থেকে ছোট্ট পার্স বের করল মিলা। একটা পঞ্চাশ টাকা আর একটা দশ টাকার নোট স্কুটারঅলাকে দিল। তারপর জয়ের দিকে। তাকাল। চলুন।
মিলাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে এল জয়।
বাড়ির ভেতরে নানা রকমের জিনিসপত্র ছড়ানো। লেবার ওস্তাগাররা আসছে, যাচ্ছে। ঠুকুর ঠাকুর শব্দ হচ্ছে। বাইরে থেকে বেশ একটা হযবরল অবস্থা। কিন্তু জয়ের রুমে বলতে গেলে তেমন কোনও শব্দই আসছে না। বেশ ছিমছাম সুন্দর রুম। সিঙ্গেল খাট পাতা। নরম ফোমের ওপর আড়ংয়ের বেডকাভার। বিছানার একপাশে বেডসাইট টেবিল। তাতে জয়ের মোবাইল সেটটা পড়ে আছে। দুতিনটি পত্রিকা, সুন্দর একটা টেবিল ল্যাম্প। এক পাশে দেয়ালের সঙ্গে দুটো বেতের সোফা, ছোট্ট টিপয়। আরেক পাশে ওয়ার্ডরোব। তার ওপর চৌদ্দইঞ্চি সনি টেলিভিশন। একটা ক্রিস্টালের ফ্লাওয়ারভাস, ছোট্ট একটা টেপ রেকর্ডার, কয়েকটা অডিও ক্যাসেট, দুতিনটি পারফিউম, রুম স্প্রে। সবমিলে অত্যন্ত রুচিকর একটা পরিবেশ।