রুনু বললেন, ঠিকই বলেছিস। এরকমই ঘটেছে।
সুমি বলল, না। নিশ্চয় এর মধ্যে অন্যকোনও ব্যাপার আছে। সুরসুরিটা আমি পরিষ্কার টের পেয়েছি। শ্বাস ফেলাটা টের পেয়েছি। যে ধরনের পারফিউমের গন্ধ ছিল ওই ধরনের পারফিউম আমার কালেকশানে নেই।
মূসা সাহেব বললেন, তুই কি তাহলে বলতে চাচ্ছিস যে ব্যাপারটা ভুতুড়ে?
কিন্তু ভূতের ভয় আমার নেই। বিশ্বাসও নেই।
তাহলে এত ভয় পেয়েছিস কেন?
ভয় পাওয়ার কারণ, ব্যাপারটা সত্যি ঘটেছে।
এবার সাদি একটা হাই তুলল। ধুৎ কিছু না এসব। যা শুয়ে পড় গিয়ে। আমি গেলাম। সকালে অফিস আছে।
সুমি বলল, কিন্তু একটা ব্যাপার তোমাদের প্রমাণ করা উচিত।
কী?
ওই যে তুমি বললে হয়তো আমার রুমে কোনও পারফিউমের শিশি ভোলা আছে কিংবা ভেঙেছে, ওটা তো এখুনি তোমরা প্রমাণ করতে পার।
রুনু বললেন, ঠিক।
মূসা সাহেব বললেন, চল সবাই মিলে তাহলে ওর রুমে যাই। খুঁজে পেতে দেখি।
সাদির খুব একটা ইচ্ছে ছিল না। তবু সবার সঙ্গে সুমির রুমে এসে ঢুকল।
রুমে ঢুকে প্রথমেই সুইচ টিপলেন রুনু। উজ্জ্বল আলোয় ভরে গেল রুম।
সুমি কী রকম একটা হাপ ছাড়ল। ভয়টা এখন অনেকটাই কমেছে। তবু বুকের ভেতর কী রকম থম ধরে আছে।
মূসা সাহেব রুনু এবং সাদি তখন রুমের চারদিকে তাকিয়ে ভাঙা কিংবা মুখ ভোলা পারফিউমের শিশি খুঁজছে। সুমি নিজেও তার ড্রেসিংটেবিলটা তন্ন তন্ন করে খুঁজল, ও রকম কোনও পারফিউমের শিশি পাওয়া যায় কী না।
না পাওয়া গেল না।
হতাশ হয়ে সাদি বলল, সুমি, এসব আসলে তোর মনের গণ্ডগোল। এই রুমের কোথাও কিছু নেই, কিছু হয়নি। যেসব অনুভূতির কথা তুই বললি ওসব হয়েছে স্বপ্নে অথবা তোর অবচেতন মনে। হয়তো এই ধরনের কিছু তুই ভেবেছিস কিংবা কল্পনা করেছিস। ঘুমটা গম্ভীর হয়নি বলে ঘুমে জাগরণে মিলেমিশে ওসব তোর মনে হয়েছে। কিছু না, কিছু না। শুয়ে পড়। দরকার হলে একটা রিলাকজিন খা। ফ্রেস ঘুম হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সঙ্গে সঙ্গে ভয় পেল সুমি। না না এই রুমে একা আমি আর পোব না। কিছুতেই না।
তাহলে কোথায় শুবি?
মূসা সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকালেন। মেয়েটা যখন ভয় পাচ্ছে, তুমি না হয় ওর সঙ্গে থাক।
রুনু একটু বিরক্ত হলেন। ওর বিছানায় আমার ঘুম হবে? তুমি তো জানো নিজের বিছানা ছাড়া একদম ঘুমোতে পারি না আমি। সকালে কোর্টে দৌড়াতে হবে। জরুরী একটা কেস আছে। ঘুমটা ভাল না হলে…। তারচে’ বরং একটা কাজ করি নীচতলা থেকে নূরজাহান আর মতিকে ডাকি। নূরজাহান শোবে সুমির রুমের মেঝেতে আর মতি সামনের বারান্দায়।
শুনে মূসা সাহেব একটু গম্ভীর হলেন। এতকিছুর দরকার নেই। সুমি, তুই গিয়ে তোর মার সঙ্গে আমাদের রুমে শো। আমি থাকছি তোর রুমে।
সাদি বলল, আমি তাহলে গেলাম বাবা।
যা।
কিন্তু মায়ের পাশে শুয়েও বাকি রাতটা আর ঘুমোতে পারল না সুমি। সারারাত মনের ভেতরটা আকুলি বিকুলি করল তার। বুকটা ভার হয়ে রইল। মনে মনে প্রায় সারারাত আল্লাহকে ডাকল সুমি।
২. আপনি কোথায়
আপনি কোথায়?
ফোনে হ্যালো ইত্যাদি না বলে সরাসরি এরকম প্রশ্ন, জয় একটু থতমত খেল। তারপরই বুঝে গেল ফোনটা কার। সঙ্গে সঙ্গে মুখটা হাসি হাসি হয়ে গেল তার, গলার স্বর রোমান্টিক হয়ে গেল। মিলা?
তো কে?
কোত্থেকে?
টেলিফোনের দোকান থেকে। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর কই?
কোথায় আমি?
হ্যাঁ।
উত্তরায়।
ওখানে কী করছেন?
সুপারভাইজারি।
মানে?
সুপারভাইজারি মানে জানো না? তদারকি।
বুঝলাম। কিসের তদারকি করছেন আপনি?
বাড়ির।
মিলা বুঝে গেল উত্তরায় যে বাড়ি তৈরি করছেন জয়ের বাবা সে বাড়ির কাজ দেখতে গেছে জয়। এরকম প্রায়ই যায় সে। সারাদিন কাটিয়ে দেয় ওই। বাড়িতে। পরিচয়ের পর বার তিনেক ওই বাড়িতে বসে মিলার ফোন রিসিভ করেছে সে।
কিন্তু আজ এতদূরে আছে জয় এটা তেমন ভাল লাগল না মিলার। বিরক্ত হয়ে বলল, ইস, অতদূরে গেছেন কেন? কাছাকাছি কোথাও থাকতে পারলেন না?
জয় হাসল। কাছাকাছি থাকলে কী হতো?
দেখা হতে পারত।
তাই নাকি?
তো কী!
কী সৌভাগ্য আমার! সত্যি বলছ?
এখনও পর্যন্ত মিথ্যে কথা আপনার সঙ্গে আমি বলিনি।
কবে বলবে?
কখনই না।
কেন?
মিথ্যে বলতে আমি খুব অপছন্দ করি।
একথা সবাই বলে। তারপরও নানাভাবে প্রচুর মিথ্যে বলে।
আমি বলব না।
বলো অন্তত আমার সঙ্গে বলবে না।
আপনার সঙ্গে নয়, কারও সঙ্গেই বলবে না।
বলবে তো বটেই। এবং আজই বলবে।
কার সঙ্গে?
তোমার মা বাবার সঙ্গে কিংবা বাড়ির অন্য কারোর সঙ্গে।
কী ভাবে?
ধরো তোমার মা বাবা কিংবা গার্জিয়ান ধরনের কেউ ঠিক এই সময়টার কথা তোমাকে জিজ্ঞেস করল। এই সময়টায় তুমি কী করছিলে। তুমি কি সত্য কথা বলবে? বলবে যে বান্ধবীর প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে কথা বলছিলে। এবং কথাও মোটামুটি রোমান্টিক ধাঁচের।
বান্ধবীর প্রাক্তন প্রেমিক কথাটা শুনে বিরক্ত হলো মিলা। রুক্ষ গলায় বলল, আমার এত পয়সা নেই যে ফোনের দোকান থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল টু মোবাইল ফালতু কথা বলব।
জয় বুঝে গেল মিলা রেগেছে। বলল, সরি। জরুরী কথাটাই বলো।
এখন আর বলার মুড নেই।
প্লিজ বলো, প্লিজ।
মিলা চুপ করে রইল।
জয় বলল, তুমি কি তোমাদের বাড়ির ওখান থেকে ফোন করেছ?
না।
তাহলে কোথায় তুমি?
ইস্কাটনে।
ওখানে কী?
আমার বান্ধবী মুন্নিদের ফ্ল্যাট। ওর কাছে এসেছিলাম একটু দরকারে। কিন্তু মুন্নি নেই।