সুমি মনে মনে বলল, ঠিক।
নূরজাহান বলল, তয় আপনেরে একটা কথা কই। বেশির ভাগ পুরুষ মানুষই কইলাম মাইয়া মানুষের লগে জোর জবরদস্তি করে। মাইয়াগ মন না বুইঝা, শরীল না বুইঝা কামডা করে। প্রেম ভালবাসা ওই টাইমে বোঝতে চায় না। বিয়া কইরা পুরুষপোলাগুলি কী করে? পয়লা রাইতেই বউডার লগে জোর করে। বউডার মনও বোঝে না, শইলও বোঝে না। আপনেরা যে ধর্ষণ ধর্ষণ বলেন, দুনিয়ার বেশির ভাগ পুরুষ মাইয়াগ আসলে ধর্ষণই করে।
সুমি কথা বলল না।
নূরজাহান বলল, তয় প্রেম ভালবাসা থাকলে, দুইজনে দুইজনরে বুইঝা যদি মিলিত হয় সেইটা দুনিয়ার সবচে’ আনন্দের।
একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জয়ের কথা মনে পড়ল সুমির। শরীরের খুব ভেতরে কেমন একটা কাঁপন লাগল। সুমি যেন কেমন দিশেহারা হলো। নূরজাহান ঘুমিয়ে পড়ার পরও অনেকক্ষণ জেগে রইল সে।
গভীর রাতে ঘুমের ভেতর সে রাতের পর আজ আবার সেই অনুভূতিটা হলো সুমির। প্রথমে মনে হলো পায়ের পাতায় কে যেন খুব আলতো ভঙ্গিতে সুরসুরি দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমটা সুমির ভাঙল। প্রথমে পা দুটো সে টেনে নিল। তারপর অপেক্ষা করতে লাগল ব্যাপারটা আবার ঘটে কি না!
কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আবার সেই অনুভূতি।
অনুভূতিটা এবার ওপর দিকে উঠছে। শরীর কাঁটা দিচ্ছে সুমির। কী রকম হিম হয়ে আসছে।
তবু দম বন্ধ করে পড়ে রইল সুমি।
কিন্তু হাঁটুর ওপর আর উঠল না অনুভূতিটা। আচমকাই থেমে গেল। তারপরও সেই অনুভূতির জন্য অপেক্ষা করতে লাগল সুমি। কারণ ঘুম ভাঙার পর পরই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাপারটা আসলে কী হচ্ছে তাকে আজ বুঝতে হবে।
দম বন্ধ করে পড়ে রইল সুমি।
কয়েক মুহূর্ত পর টের পেল তার নাভিমূলে সে রাতের সেই অনুভূতি হচ্ছে। কে যেন আলতো করে মুখ ঘষছে। ফলে শরীরের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে তার। একেবারেই অচেনা এক অনুভূতি। অস্থির লাগছে তার, ভীষণ অস্থির লাগছে।
তরপর আচমকাই থেমে গেল অনুভূতিটা।
কিন্তু তারপরও অপেক্ষা করতে লাগল সুমি। শেষ অবস্থাটা বোঝার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই যা আশা করেছে সুমি তাই হলো। তার গলার কাছে, ঘাড়ের কাছে এবং গালে কে যেন খুবই আলতো এবং আদুরে ভঙ্গিতে মুখ ঘষতে লাগল। সঙ্গে সেই পারফিউমের গন্ধটাও পেল সুমি। ওয়ান ম্যান শো।
কয়েক মুহূর্ত মাত্র। তারপরই ধরফর করে বিছানায় উঠে বসল সুমি। বেডসুইচ টিপে লাইট জালল।
কই রুমে কেউ নেই। ওই তো মেঝেতে গভীর ঘুমে ডুবে আছে নূরজাহান।
আজ আর সেই রাতের মতো ভয় পেল না সুমি। নূরজাহানকে ডাকল।
চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসল নূরজাহান। কী হইছে?
ঘটনাটা বলল সুমি। শুনে ঘুম ভাঙা চোখে তার দিকে খানিক তাকিয়ে রইল নূরজাহান। তারপর বলল, আপনেরে কিছু কথা জিজ্ঞাসা করি?
করো।
আপনার সঙ্গে কী কারও মনের সম্পর্ক আছে?
কেন একথা বলছ?
কারণ আছে।
কী কারণ?
থাকলে আমারে বলেন। তাইলে ঘটনাটা বুঝতে আমার সুবিধা হইব।
হ্যাঁ।
নূরজাহান উৎফুল্ল হলো। আছে?
এখন নেই।
তাইলে?
ছিল।
এখন নাই ক্যান?
ওসব শুনে তোমার লাভ কী?
লাভ আছে।
কী লাভ?
আমিও তো মাইয়া মানুষ। আমি আপনের সমস্যাটা বুঝতে পারুম।
ওসব আমি আসলে কাউকে বলতে চাই না। যা শেষ হয়ে গেছে তা বলে আর লাভ কী?
সুমির মুখের দিকে তাকিয়ে নূরজাহান বলল, আপনে কইতাছেন শেষ হইয়া গেছে কিন্তু আমার মনে হয় শেষ হয় নাই।
কেন?
আমার মনে হয় আপনের মনের মইধ্যে, অন্তরের মইধ্যে এখনও রইয়া গেছে সে।
সুমি কথা বলল না।
নূরজাহান বলল, আপনি এখনও তার কথা ভাবেন?
না একদম ভাবি না।
নূরজাহান হাসল। ভাবেন কিন্তু আপনি বুঝতে পারেন না। আপনার মনে হয় আপনি তার কথা ভাবতাছেন না। তার কথা আপনে ভুইলা গেছেন। আসলে ভোলেন নাই।
সুমি চুপ করে রইল।
নূরজাহান বলল, যখন ভাব ছিল তখন তার লগে আপনের কী কী হইছে?
কী কী হয়েছে মানে?
টান ভালবাসা থাকলে দুইজন মানুষে যা যা হয় আমি তা বলতাছি।
ধুৎ ওসব কিছুই আমাদের হয়নি।
সে আপনের হাত ধরছে? জড়াইয়া ধরছে কোনওদিন। চুমা দিছে?
না। এসবের কিছুই হয়নি তার সঙ্গে আমার। শুধু কথা হয়েছে।
খালি কথা? দেখা সাক্ষাৎ হয় নাই?
একদিন মাত্র হয়েছিল। তারপরই…।
তারপর কী হইছে?
বাদ দাও ওসব কথা। বলতে ভাল লাগছে না।
সুমি অন্যদিকে মুখ ফেরাল।
নূরজাহান তখন চিন্তিত চোখে সুমির দিকে তাকিয়ে আছে।
খানিক তাকিয়ে থেকে বলল, যখন কথা হইত তখন কী ধরনের কথা হইত?
একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সুমি কী রকম কেঁপে উঠল। কী যেন কী কথা মনে পড়ল তার। মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল। নূরজাহানকে সে বলল, ঠিক আছে। তুমি শুয়ে পড়। আমি লাইট অফ করে দিচ্ছি। যা বোঝার আমি বুঝে গেছি।
সুমি লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল।
কিন্তু সুমির আচরণের মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারল না নূরজাহান। সুমি শুয়ে পড়ার পরও অন্ধকার বিছানায় অনেকক্ষণ বসে রইল সে।
৭. অপলক চোখে সুমির দিকে তাকিয়ে
অপলক চোখে সুমির দিকে তাকিয়ে রইল জয়।
একি সত্যি সুমি?
নাকি সে স্বপ্ন দেখছে?
সুমিও তাকিয়ে ছিল জয়ের দিকে। জয়ের চোখে পলক পড়ছে না দেখে মিষ্টি হেসে, স্নিগ্ধ গলায় বলল, কী দেখছ?
সঙ্গে সঙ্গে চোখে পলক পড়ল জয়ের। মুগ্ধ গলায় সে বলল, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
কী বিশ্বাস হচ্ছে না?
এই তুমি কি সত্যি সেই তুমি?