যদি তেমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে তো ভয়াবহ রকমের বিপাকে পড়বে মিলা।
সুমির ইচ্ছে হলো উঠে গিয়ে এখুনি ফোন করে মিলাকে। পরিষ্কার জেনে নেয় ব্যাপারটি।
তারপরই অন্য একটা কথা ভেবে ভেতরে ভেতরে শান্ত হলো সে।
না তেমন ব্যাপার নিশ্চয় হয়নি।
তিনমাস হয়ে গেছে।
তেমন কিছু হলে এর মধ্যেই টের পেয়ে যেত মিলা। সুমিকে বলতো।
এসব ভেবে সুমি কেমন একটা হাঁপ ছাড়ল।
ঠিক তখুনি মেঝেতে শোয়া নূরজাহান বলল, কী হলো?
সুমি অবাক হলো। কী?
ঘুমান নাই?
না।
ক্যান?
ঘুম আসছে না।
নূরজাহান হাসল। তেলাপোকার ডর না বদজীনের?
কোনটারই না।
তাহলে?
এমনি।
তারপর আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ। এই ফাঁকে সুমি ভাবল একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রেপ সম্পর্ক নূরজাহানের কাছ থেকে কিছু জানা যায় কী না দেখা যাক। ব্যাপারটা ঘটে যাওয়ার পর কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে মেয়েদের! শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা। হয়তো মানসিক সমস্যার কথা তেমন বলতে পারবে না নূরজাহান, শারীরিকগুলো নিশ্চয় পারবে।
সুমি তারপর মেঝের দিকে কাত হলো। বুয়া?
জী।
তোমার কি ঘুম পাচ্ছে?
না।
কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করি?
জ্বী করেন।
তুমি কি রেপ বোঝ?
জ্বী না।
শব্দটা ইংরেজি। হয়তো এজন্য বুঝতে পারছ না। বাংলায় বললে বুঝবে। শ্লীলতাহানি। সহজ বাংলায় ধর্ষণ।
জ্বী বুঝছি। বদমাইসা ব্যাটাগুলি জোর জবরদস্তি মাইয়া মানুষের ইজ্জত নষ্ট করলে সেইটারে বলে ধর্ষণ।
হ্যাঁ।
হঠাৎ এই কথাটা আপনার মনে আসল ক্যান?
তেমন কোনও কারণ নেই। পেপারে প্রায়ই এসব নিয়ে পড়ি তো, এজন্য তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম।
হ এই হগল কাম দেশ গেরামে বেশি হয়।
শহরেও হয়।
শহরে মনে হয় কম হয়।
না, আমার ধারণা শহরেই বেশি হয়। শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে বেশি হয়। কিন্তু সেসব কথা তেমন বাইরে আসে না। কেউ জানতে পারে না।
হইতে পারে। দেশ গেরামের ঘটনাগুলি মাইনষে জাইনা যায়। শহরেরগুলি মাইনষে জানে না। কেউ পোয়াতি হইয়া গেলেও অন্যে টের পায় না।
হ্যাঁ। কারণ শহরে এগুলো তেমন কোনও সমস্যা নয়।
কিন্তু দেশ গেরামের মাইয়াগুলির বড় সমস্যা হয়। এইসব কারণে আত্মহত্যাও করে কোনও কোনও মাইয়া।
এমন ঘটনা জানা আছে তোমার?
থাকব না ক্যান? আমাগ গেরামের রাবি, মানে রাবেয়াই তো আত্মহত্যা করছিল।
সে রেপড হয়েছিল?
জী?
মানে তাকে কেউ ওসব করেছিল?
হ।
বল তো ঘটনাটা।
রাবি আছিল বাড়ির কামের মাইয়া। আমাগ গেরামে সর্দার বাড়ি বহুত বড়বাড়ি। ওই বাড়িতে কাম করতো সে। রাবিগ বাড়ি আছিল পদ্মার চরে। গরিব মানুষের মাইয়া। তেরো চৌদ্দ বছর বয়সে চর থিকা কাজের আশায় আইছিল আমাগ গেরামে। সর্দার বাড়িতে ঝিয়ের কাম লইলো। চুপচাপ ধরনের ভাল মাইয়া। কাম ছাড়া কিছু বোঝে না। ওই বয়েসি মাইয়াগ লাহান শয়তানি বদমাইসি নাই।
দেখতে কেমন ছিল?
ভাল না।
কী?
হ একদমই ভাল না। পাতিলের তলার লাহান গায়ের রং। চেহারাও ভাল না। তয় শইলখান বড় সোন্দর। ওই রকম শইলের মাইয়াগ পুরুষ পোলারা বহুত পছন্দ করে। সর্দার বাড়িতে তাগড়া জুয়ান লোকজন আছিল ম্যালা। সর্দারগ ভাই বেরাদর, পোলাপান সব মিলা ম্যালা পুরুষপোলা। রাবি থাকত রান্ধন ঘরে। এক রাইতে ঘরের ঝাঁপ কেমনে কেমনে খুইলা কে একজন ঢুইকা গেল সেই ঘরে। তারপর রাবির মুখ চাইপা ধইরা, পুরুষপোলাগুলি যা করে আর কি? রাবির সর্বনাশ হইয়া গেল। কিন্তু মাইয়াডা বুঝতেই পারল না কামডা কে করল! ঘুটঘুইটা আন্ধারে রাবি চিনতেই পারল না তারে। যাওনের সময় বেড়া আবার কইয়া গেল এই কথা কেউরে কইলে জান যাইব তোর। রাবি কেউরে কয় নাই। দুই তিনমাস পর তো পেট ফুইলা উঠল রাবির। বাড়ির মহিলারা টের পাইয়া গেল। ধরল রাবিরে। ক কার লগে নষ্টামি করছস? রাবি লজ্জায় মরে। কইতে চায় না, কইতে চায় না। শেষ পর্যন্ত বলল ঘটনাটা, কিন্তু কেউ বিশ্বাস করল না। কইলো, এই ঘটনা তুই বানাইছস। সত্য না। সত্য হইলে ঘটনা ঘইটা যাওনের পর আমাগ কছ নাই ক্যান? রাবি বলল, ডরে কই নাই। কেউ বিশ্বাস করল না। রাবিরে বাড়িত থিকা বাইর কইরা দিতে চাইল। সেই রাইতেই সর্দার বাড়ির বাগানে গিয়া আমগাছের লগে গলায় দড়ি দিল রাবি।
কিন্তু এই ঘটনা তোমরা জানলে কী করে? মানে গেরামের অন্যান্য লোকে জানল কী করে?
এইসব ঘটনা কি আর চাপা থাকে নাকি? কোনও না কোনওভাবে লোকে জাইনা যায়।
কিন্তু এই কাজগুলি পুরুষ মানুষরা করে কেন?
পুরুষ মানুষরা আসলে মানুষ হিসাবে ভাল হয় না। মাইয়া মানুষের লগে জোর দেখাইতে তারা পছন্দ করে।
অথচ মেয়েরা মায়ের জাত। মেয়েদের পেট থেকেই পুরুষরা জন্মায়। এই কথা তারা মনে রাখে না।
হ্যাঁ। রাখলে এসব করা সম্ভব নয়। অথচ নারী পুরুষের সত্যিকার মিলন পৃথিবীর সবচে’ আনন্দের বিষয়। যদি সেই মিলনে প্রেম থাকে, ভালবাসা থাকে।
এইটা ঠিক বলছেন। প্রেম ভালবাসা থাকলে দুইজন দুইজনরে পাওয়ার জন্য পাগল হয়।
তার মানে ভালবাসা থাকলে ব্যাপারটা গভীর আনন্দের আর ভালবাসা না থাকলে ব্যাপারটা চরম ঘৃণার এবং বেদনার।
হ।
জোর করে ব্যাপারটা হলে সাধারণত কী কী অসুবিধা হয় মেয়েদের? তুমি জানো বুয়া?
শরীরের অসুবিধা হয়। বাচ্চা হইয়া যাইতে পারে। আর যেইটা সবচে’ বড় ক্ষতি হয়, এত আনন্দের ব্যাপারটার মধ্যে বিরাট একটা ভয় ঢুইকা যায়। অনেক মাইয়া সারাজীবনেও আর এই ব্যাপারটার স্বাদ বোঝে না।