এটাই তো উচিত। সুমির জায়গায় আপনি হলেও তো তাই করতেন।
হয়তো করতাম। কিন্তু আজ তোমাকে আমি আসল কথাটা বলি, তোমাকে ফোন করে প্রপোজ ইত্যাদি করা বা তোমার সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা, পুরোটাই কিন্তু ফান ছিল।
মিলা একেবারে থতমত খেয়ে গেল। ফান ছিল মানে?
আমি এক ধরনের মজা করার জন্য ওভাবে বলেছিলাম তোমাকে। দেখতে চেয়েছিলাম ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়। তুমি সত্যি সত্যি আমার প্রতি দুর্বল হও কী না। নিজেকে দিয়ে দেখতে চাইলাম, মানুষের মত বদলায় কী না। ভালবাসার ক্ষেত্র বদলায় কি না।
কী দেখলেন?
বদলায়।
হ্যাঁ। আমিও তাই মনে করি।
বদলায় বলেই সুমি যখন আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল আমি তোমাকে ফোন করতে শুরু করলাম। তোমার সঙ্গে আলাদা করে দেখা টেখাও হলো।
আর আমার কী হলো জানেন? সুমির ওপর খুব রাগ হলো যখন সে আমাকে ব্লেম দিল।
কী ব্লেম?
বলল নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রশ্রয় দিয়েছি। নয়তো আপনি নাকি প্রপোজ করার সাহস পেতেন না। শুনে এত মেজাজ খারাপ হলো আমার। ডিসাইড করলাম সুমির সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখব না এবং আপনার সঙ্গে সম্পর্ক করব।
এবং তাই করতে লাগলে?
হ্যাঁ।
কোন ফাঁকে দুজনেরই খাওয়া শেষ। বাগারের খালি প্যাকেট এবং ভার্জিনকোলার শূন্য টিন ঘরের কোণে একটা বাক্সেটে ফেলে দিল জয়। দেখে মিলা বলল, আপনি খুব গুছালো ধরনের।
কিন্তু জীবনের আসল জায়গাটাই অগোছালো করে ফেলেছি।
কীভাবে?
ছেলেমানুষি করে।
আপনার কথা আমি বুঝতে পারিনি।
এই যে সুমিকে নিয়ে, তোমাকে নিয়ে যা করলাম।
হ্যাঁ এটা আসলে ছেলেমানুষিই।
তুমিও তো আমার সঙ্গে তাল দিয়ে গেলে! তোমার তো উচিত ছিল আমাদের দুজনার সমস্যাটা মিটিয়ে দেয়া।
কীভাবে?
প্রেমিক প্রেমিকার ভুল বোঝাবুঝি হলে মাঝখানে যে বন্ধু থাকে সে তা মিটিয়ে দেয় না?
কিন্তু সমস্যা তো সেই বন্ধুটাকে নিয়েই!
তা ঠিক। জয়ের চোখের দিকে তাকাল মিলা। আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?
সিওর।
আজ কিন্তু কোনও ফান করবেন না। পরিষ্কার জবাব দেবেন।
ঠিক আছে।
আপনি কি সত্যি সুমিকে ভালবাসতেন?
জয়ও মিলার চোখের দিকে তাকাল। বাসতাম না, এখনও বাসি।
কিন্তু আপনি যে বলেছেন আমি সুমির চে’ বেশি সুন্দর, বেশি স্মার্ট?
সেটাও সত্যি। সত্যি তুমি সুমির চে’ অনেক বেশি সুন্দর এবং স্মার্ট। কিন্তু সৌন্দর্য এবং স্মার্টনেসের সঙ্গে প্রেমের কোনও সম্পর্ক নেই। পৃথিবীতে অনেক সুন্দরী এবং স্মার্ট মেয়ে আছে কিন্তু তারা আমার প্রেমিকা নয়। তাদেরকে আমি ভালবাসি না। আমি ভালবাসি সুমিকে।
মিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কথাটা আরও আগে বললে পারতেন।
কী হতো তাহলে?
এই জটিলতাগুলো তৈরি হতো না।
সুমিকে আমি বলতে চেয়েছি। নানারকমভাবে চেষ্টা করেছি কিন্তু সে আমার সঙ্গে কথাই বলে না। আমার ফোন রিসিভই করে না।
মিলা আবার জয়ের চোখের দিকে তাকাল। বুঝলাম। আর আমার ব্যাপারটা?
জয় হাসল। তোমার আবার কোন ব্যাপার?
এই যে যখন তখন আমাকে ফোন করা, আজ নিয়ে চারবার দেখা হলো। এত রোমান্টিক কথাবার্তা বললেন। এরকম নিভৃত ঘরে বসে আছি আমরা। দুজন।
আসলে তোমাকে আমি আমার বন্ধু ভেবেছি। সুমির এত ভাল বন্ধু তুমি, ভেবেছি আমারও বন্ধু হবে তুমি।
আমিও তাই হতে চেয়েছিলাম। কিন্ত…।
কী?
কোথায় যেন অন্যরকম কী একটা হতে চলেছে।
ওসব কিছু না। মন থেকে সব ঝেড়ে ফেল। ভাব আমরা দুজন বন্ধু, স্রেফ বন্ধু। ভাল বন্ধু।
আমার মনে হয় সেটা ভাবাই ভাল।
তারপর মিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
জয় বলল, কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না সুমিকে আমি কেমন করে ফিরে পাব?
মিলা উঠল। চেষ্টা করুন। নিশ্চয় পেয়ে যাবেন।
মিলাকে উঠতে দেখে জয়ও উঠল। তোমাকে কি একটা স্কুটার ডেকে দেব?
ভাল হয়।
যে ছেলেটা খাবার এনেছিল তাকেই স্কুটার ডাকতে পাঠালো জয়।
স্কুটার আসার পর, স্কুটারে চড়ার আগে মিলা বলল, আপনি সত্যি খুব ভাল।
জয় হাসল। কেন এটা বলছ?
টেলিফোনে কত রকমের কথা আপনার সঙ্গে হয়েছে। প্রেম, ভালবাসা, চুমু, কত রকমের কথা বলেছেন। অথচ আজ এতটা নিভৃতে পেয়ে আপনি আমার হাতটাও ধরেননি। কোনও না কোনওভাবে আমার ওপর কোনও চান্স নেননি। ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেননি।
তা আমি কেন করব, বলো। আমার সব স্পর্শ আমি সুমির জন্য তুলে রেখেছি।
৫. বিকেলবেলা দোতলার বারান্দায় বসে
বিকেলবেলা দোতলার বারান্দায় বসে আছে সুমি।
এই বারান্দায় তিন চারটা বেতের চেয়ার আর নীচু ধরনের বেতের গ্লাসটপ টেবিল আছে। বিকেলবেলা কখনও কখনও এখানে বসে চা খায় সবাই।
আজ কেউ নেই। আজ সুমি একা।
আজকাল একা থাকলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে সুমি। কী যে ভাবে তা সে নিজেই জানে। পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে কিংবা কেউ এসে দাঁড়ালে সহজে দেখতেই পায় না।
এখনও পেল না।
কয়েক মুহূর্ত সুমির পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে মৃদুশব্দে গলা খাঁকাড়ি দিল মিলা।
এই শব্দে সুমি যে খুব একটা চমকালো তা নয়, তবে পেছনে মুখ ফেরাল সে। কিন্তু মিলাকে দেখে মুখের তেমন ভাবান্তর হলো না। নির্বিকার গলায় বলল, কখন এলি?
এই মাত্র।
আয়, বোস।
সুমির মুখোমুখি চেয়ারে বসল মিলা। তীক্ষ্ণচোখে সুমির মুখের দিকে তাকাল। কী হয়েছে তোর?
কই?
চেহারা কী রকম ভেঙে গেছে। চোখ ঢুকে গেছে গর্তে। চোখের কোলে গাঢ় হয়ে কালি পড়েছে। মনে হচ্ছে চোখে কাজল দিয়েছিস তুই।