তার মানে সুমি প্রথমে তার মামাতো ভাইকে চিনতেই পারেনি। সুমির অবশ্য এরকম একটা স্বভাব আছে। চট করে অনেক চেনা মানুষকেও চিনতে পারে না সে।
এই স্বভাবটার কথা আমি অবশ্য জানি না। যাহোক, শোন। আমি তারপর ভাবলাম, অকারণেই ভাবলাম, সুমি তো তার মামাতো ভাইকেই চিনতে পারেনি, দেখি তত অন্য কেউ মামাতো ভাই সেজে ফোন করলে সে কী করে? কিন্তু আমার বন্ধু বাবু খুবই কঠিন টাইপের জিনিস। চাইলে খাতায় লিখে রাখা সুমির নাম্বার আমাকে কিছুতেই দেবে না।
কিন্তু একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না, নাম্বারটা সে খাতায় লিখে রাখল কেন?
জয় হাসল। কোনও কারণ নেই। কেউ এই ধরনের দোকানে এসে যদি বলে ভাই আমি একটা ফোন করব, সাধারণত দোকানের লোকরা বলে, নাম্বারটা বলুন ডায়াল করে দিচ্ছি।
ও এই কারণ?
না আর একটা কারণও আছে।
কী?
এইভাবে নাম্বারটা লিখে রাখলে সারাদিনে কতগুলি ফোন করা হলো তার একটা হিসেব থাকে। বিজনেসের হিসাব মেলাতে সুবিধে হয়।
মুখের মজাদার একটা ভঙ্গি করল মিলা। বুঝেছি। কিন্তু ওই খাতা থেকে কোনও নাম্বার চাইলে আপনার বন্ধু আপনাকে দেবে না কেন?
নীতিগতভাবেই তো দেয়া উচিত না। কারণ ওটা বাবুর বিজনেস। তার ওখান থেকে নাম্বার নিয়ে কেউ যদি কাউকে ডিস্টার্ব করে!
তা ঠিক।
কিন্তু সুমির নাম্বারটা আমি পেয়ে গেলাম বেশ সহজ একটা কায়দায়। ওর মামাতো ভাই যখন ফোন করে প্রথমদিককার দুতিনটে নাম্বার আমি মনে রেখেছিলাম। হঠাৎ করে বাবুকে বললাম, দেখি তোর খাতাটা, আজ কতগুলো ফোন হলো? বিজেনেস কেমন হলো? বাবু খুবই উৎসাহ নিয়ে খাতাটা আমাকে দিল। সুমির নাম্বারটা আমি মুখস্ত করে ফেললাম। বাবু কিছু বুঝতেই পারল না। সেদিনই বিকেলবেলা সুমিকে ফোন করলাম। ভাগ্য কী রকম ভাল দেখ, সুমিই ফোন ধরল। বললাম, হ্যালো, সুমি আছে? সুমি বলল, বলছি। আপনি কে? সুমির গলার স্বর এবং কথা বলার ধরন আমার এত ভাল লাগল, আমি কিন্তু আর কোনও চালাকি করলাম না। পরিষ্কার বললাম, কীভাবে ওর নাম্বার পেয়েছি এবং ফোনটা ওর মামাতো ভাই সেজে ফান করার জন্য করেছিলাম, কিন্তু সুমির গলা এবং কথা বলার ধরন এত ভাল লাগল যে তার সঙ্গে ফান করতে ইচ্ছে করছে না। আমার কথা শুনে সুমি একেবারে আকাশ থেকে পড়ল। কী বলছেন আপনি? এইভাবে অচেনা কারও সঙ্গে কেউ ফান করে? আপনি তো অদ্ভুত মানুষ!
জয় একটু থামল। এইভাবে শুরু হয়েছিল আমাদের।
মিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় কে নক করল। উঠে দরজা খুলল জয়। শপিংব্যাগে বার্গার এবং ভার্জিনকোলা দিয়ে গেল অল্প বয়েসি একটা ছেলে। সে এই বাড়ির কাজের একজন লেবার।
খাবারের প্যাকেট মিলার সামনে ছোট্ট টিপয়ের ওপর নামিয়ে রাখল জয়। বলল, চল আগে খেয়ে নিই। আমার খুব খিদে পেয়েছে।
মিলা সঙ্গে সঙ্গে একটা বার্গার এবং ভার্জিনকোলা বের করে জয়ের হাতে দিল। আপনি খান।
আমি একা খাব কেন? তুমিও খাও।
খাচ্ছি।
বলে মিলাও তার প্যাকেট খুলল।
খেতে খেতে জয় বলল, তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের কথা হয়। কখনও আমি ফোন করি, কখনও সুমি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা হয়। কারণ আমাদের দুজনার কারও তেমন কোনও কাজ নেই। আমি মাস্টার্স করে বসে আছি। চাকরি বাকরি করতে চাইলাম। বাবা বললেন দরকার নেই। আগে বাড়িটা তৈরি কর তারপর বিজনেসে লাগিয়ে দেব। সুমি বিএ পাস করেছে, মাস্টার্সে ভর্তি হবে। দুজনের হাতেই অনেক সময়। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার কী জানো, কথা বলতে বলতে নিজেদের অজান্তে কখন যে আমরা পরস্পরকে তুমি করে বলতে শুরু করেছি, পরস্পরকে ভালবেসে ফেলেছি, পরস্পরের প্রতিটি খুটিনাটি বিষয় শেয়ার করতে শুরু করেছি, টেরই পাইনি।
তখনও আপনারা কেউ কাউকে দেখেননি।
হ্যাঁ।
এটাই সবচে আশ্চর্যের ঘটনা।
সত্যি। খুবই আশ্চর্যের ঘটনা।
বার্গার শেষ করে ভার্জিনকোলা খুলল জয়। চুমুক দিল। কিন্তু ততদিনে ভালবাসার কথা সবই আমাদের হয়ে গেছে। এক পর্যায়ে যখন দুজন দুজনকে দেখার জন্য অস্থির তখন সুমি আমার সঙ্গে দেখা করতে এল তোমাকে নিয়ে।
ওই তো গুলশানের সেই রেস্টুরেন্টে। কিন্তু সুমিকে দেখে আপনার ভাল লাগল না।
চোখ তুলে মিলার দিকে তাকাল জয়। কে বলেছে তোমাকে?
আমি জানি। আমার মনে হয়েছিল সুমির চে’ আপনি আমাকে বেশি লাইক করেছেন। এজন্য সুমির সামনেই আমার ফোন নাম্বার চাইলেন। তারপর ফোন করে আমাকে প্রপোজ করলেন।
প্রপোজ করলাম মানে কী? তোমাকে বললাম, তোমাকে আমার খুব ভাল লেগেছে। তুমি সুমির চে’ বেশি সুন্দর এবং স্মার্ট। তুমি চাইলে সুমিকে বাদ দিয়ে আমি তোমার সঙ্গে প্রেম করব।
এটা প্রপোজ করা না?
এক অর্থে তো অবশ্যই।
কিন্তু আপনার কি মনে হয়নি কথাটা আমি সুমিকে বলে দেব?
না মনে হয়নি।
কেন?
আমার দিকে তোমার তাকানো ইত্যাদি দেখে আমার মনে হয়েছিল আমাকেও বোধহয় তোমার ভাল লেগেছে।
তা কিন্তু ঠিক। আপনাকে আমার ভাল লেগেছে।
এজন্যই মনে হয়েছে সুমিকে তুমি বলবে না।
আমি কিন্তু সুমিকে বলে দিয়েছিলাম।
আমি জানি। যেদিন তুমি বলেছ সেদিনই সুমি আমাকে সব জানিয়েছে। এবং আমার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করেছে। আমাকে আর ফোন করে না, আমি ফোন করলে রিসিভ করে না। কখনও যদি ফোন ধরে, আমার গলা শোনার সঙ্গে সঙ্গে রেখে দেয়।