মিলা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, সব ব্যাপারেই।
খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে?
মিলা হাসল। এই একটা ব্যাপারে আমি একেবারেই সিরিয়াস না।
অর্থাৎ না খেয়ে থাকেন?
আরে না।
তাহলে?
খাই। খিদে পেলে হাতের কাছে যা পাই তাই খেয়ে ফেলি। আমার তেমন কোনও চয়েজ থাকে না।
এখন কি আপনার খিদে পেয়েছে?
না। কখন পাবে?
জানি না।
দুপুরে খিদে আপনার পায় তো, নাকি?
তা পায়।
তখন কী খাবেন?
ভাত।
কিন্তু এখানে যে ভাতের ব্যবস্থা নেই।
মিলা বুঝে গেল এতক্ষণ ধরে খাওয়া দাওয়া নিয়ে কেন কথা বলছে জয়। বলল, এখানে ভাতের কোনও দরকার নেই। আমি বাসায় গিয়ে খাব।
তুমি যাবে কটায়?
এখান থেকে দুটো কিংবা সোয়া দুটোয় স্টার্ট করব। অর্থাৎ তিনটার মধ্যে বাসায় পৌঁছাতে হবে। সেভাবেই বলে বেরিয়েছি।
সোয়া দুটো পর্যন্ত না খেয়ে থাকবে তুমি?
আমার কোনও অসুবিধা হবে না।
কিন্তু আমাকে তো কিছু না কিছু খেতে হবে। খিদে কিন্তু আমি একদম সহ্য করতে পারি না। খিদে পেলে মাথা খারাপ হয়ে যায় আমার।
আপনি খান। আপনাকে খেতে মানা করেছে কে?
তবে ভাত আমি খেতেই চাই না। খাদ্যের মধ্যে আমার সবচে’ অপছন্দ ভাত।
আর পছন্দ?
চুমু।
মিলা হাসল। ধুৎ। সব সময় ফাজলামো করবেন না।
এবার জয়ও হাসল। নির্মল মুখ করে হাসল। তোমার সঙ্গে খুব ফান করি আমি।
কেন করেন?
ভাল লাগে। খুব ভাল লাগে। ফান কিন্তু সবার সঙ্গে করা যায় না, জানো? কোনও কোনও মানুষের সঙ্গে করা যায়।
আমার সঙ্গে কেন করা যায় বলুন তো?
ফানটা তুমি বোঝ এবং এনজয় করো। তোমার সঙ্গে যেদিন প্রথম দেখা হলো, কথা হলো, সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম তুমি ঠাট্টাপ্রিয় মানুষ। যারা ঠাট্টা পছন্দ করে তারা মনের দিক দিয়ে খুব ভাল হয়। এজন্যই তো তোমাকে আমি প্রপোজ করলাম।
এখন তো মনে হচ্ছে সেটাও ঠাট্টা।
জয় সঙ্গে সঙ্গে অমিতাভ বচ্চন হয়ে গেল। কৌন বনেগা ক্রোড়পতি স্টাইলে বলল, এই প্রশ্নের জবাব, ব্রেক কা বাদ।
মিলা খিলখিল করে হেসে উঠল। তারপর বলল, কিসের ব্রেক?
আগের প্রসঙ্গ। বল কী খাবে?
বললাম তো কিছু খাব না।
তুমি এমনিতেই অত্যন্ত স্লিম, এট্রাকটিভ ফিগারের, তোমার ডায়েট করবার কোনও দরকার নেই।
আরে ধুৎ ওসব ডায়েট ফায়েট আমি করি না।
তাহলে বল, কী খাবে? ভাত ছাড়া।
আপনি কি সারাদিন এখানে থাকবেন?
তীক্ষ্ণচোখে মিলার মুখের দিকে তাকাল জয়। কেন বল তো?
এমনি।
আমার মনে হয় কারণ আছে।
কী কারণ?
তুমি কি চাইছো আমি তোমার সঙ্গে বেরুই। তারপর কোথাও কিছু খেয়ে, মানে কোথাও ফাস্টফুডের দোকান থেকে কিংবা কোনও চায়নিজ রেস্টুরেন্ট থেকে লাঞ্চ করে তোমাদের বাড়ির কাছাকাছি কোথাও তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি!
না আমি এরকম ভাবিনি।
তাহলে ঠিক আছে।
তারপর নিজেই খাবারের ডিসিশানটা নিল জয়। এখন আর ফান নয়, আমি সিরিয়াসলি বলছি।
মিলা সঙ্গে সঙ্গে বলল, বলুন। আমিও সিরিয়াসলি শুনছি।
তুমি যদি সত্যি সত্যি ভাত খেতে চাও, আমি আনাতে পারি। উত্তরায় এখন সব ব্যবস্থা আছে। সুন্দর সুন্দর ভাতের হোটেল আছে। ভাত মাছ মাংস সবজি ডাল, চাইলে সবই তোমাকে আমি আনিয়ে দিতে পারি। আমার রুমে প্লেট গ্লাস ফ্রেসপানি চামচ সবই আছে। অর্থাৎ ভাল ব্যবস্থা।
কিন্তু ভাত এখানে আমি খাব না।
শুনে খুশি হলাম।
কেন?
তুমি ভাত খেলে, তোমাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য ভদ্রতা করে আমাকেও খেতে হতো। এখন তাহলে একটা কাজ করি, চিকেন বার্গার আর ভার্জিনকোলা আনাই, বেশ স্মার্ট খাবার…।
জয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই মিলা বলল, কিন্তু আমার একদম খিদে পাচ্ছে না। আপনি শুধু আপনার জন্য আনান।
জয় গম্ভীর হলো। বাজে কথা বলো না। দুপুর হয়ে গেছে, খিদে পাবে না কেন তোমার?
মিলা বুঝল খেতে তাকে হবেই। বলল, কিন্তু আনবে কে?
লোক আছে। কোনও অসুবিধা নেই। তুমি স্রেফ দুটো মিনিট বসবে, আমি লোক পাঠিয়ে আসছি।
সত্যি সত্যি দেড় দুমিনিটে ফিরে এল জয়। মুখে সুন্দর হাসি।
মিলা বলল, ব্রেক কা বাদ কিন্তু শেষ। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
জয় কী রকম উদাস এবং আনমনা হলো। সামান্য সময় কিছু ভাবল। তারপর বলল, তোমার সব কথার উত্তরই আজ পেয়ে যাবে। মানে যা যা জানতে চাইবে তুমি। তোমার মনে যা যা আছে।
একটা একটা করে প্রশ্ন করব?
সিওর।
প্রথমে তাহলে ওই প্রশ্নটার উত্তর দিন।
আমি তোমাকে প্রপোজ করেছিলাম ওটা ফান কী না?
হ্যাঁ।
এই প্রশ্নটার উত্তর দেব সবার শেষে।
কেন?
এমনি।
উত্তরটা কিন্তু আমি জানি।
আমিও জানি।
মিলা অবাক হলো, ওমা, আপনি তো জানবেনই।
জয় শব্দ করে হাসল। তোমার এই অবাক হওয়াটা দেখার জন্য এভাবে বললাম।
ইস আপনি সারাক্ষণ কীভাবে যে এত মজা করেন!
এবার প্রশ্নগুলো করতে থাকো।
মিলা আচমকা বলল, সুমির সঙ্গে আপনার কী হয়েছিল?
প্রেম, প্রেম হয়েছিল।
আমি তো তাই জানতাম। এনিওয়ে, কীভাবে হয়েছিল বলবেন আমাকে?
সুমি তোমাকে বলেনি?
কিছুটা বলেছে।
কিছুটা কেন বলবে? তুমি হচ্ছো সুমির এক নাম্বার বন্ধু। তোমাকে তার সবই বলার কথা। এবং আমাকে সে বলেছে, আমাদের কথা তুমি সব জানো। অর্থাৎ তোমাকে সে সব বলেছে।
কী কী বলেছে শুনবেন?
বল।
আপনাদের পরিচয় হয়েছিল টেলিফোনে।
হ্যাঁ। ওর এক মামাতো ভাইয়ের কাছ থেকে নাম্বারটা আমি পেয়েছিলাম।
কিন্তু মামাতো ভাইটাকে আপনি চেনেন না।
রাইট। সে আমার চেনা পরিচিত কেউ নয়। আসলে সুমিকে ফোন করার ব্যাপারটাও ছিল একটা ফান। আমার যা স্বভাব আর কি? ধানমন্ডিতে একটা ফোন ফ্যাক্সের দোকান করেছে আমার বন্ধু বাবু। বাবুর দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছি, একটা ছেলে এল ফোন করতে। আমাদের বয়সীই হবে। নাম্বারটা সে বলল। বাবুর সামনে একটা সাদা খাতা। খাতায় চট করে নাম্বারটা সে লিখল। লিখে ফোন ডায়াল করল। করে ছেলেটাকে ধরিয়ে দিল। ছেলেটা বলল, কে? সুমি? আমি বাদশা। কোন বাদশা মানে? তোর মামাতো ভাই।