মিসির আলি আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে লাগলেন। তিনি দেবীর কথা এখনো শুনতে পাচ্ছেন। কী অপূর্ব কণ্ঠ। কী অলৌকিক সৌন্দর্য। কিন্তু এ সবই মায়া। অসুস্থ ব্যথাজর্জরিত মনের সুখ-কল্পনা। প্রকৃতি চাচ্ছে নারকীয় কষ্ট থেকে তাঁর মন ফিরিয়ে নিতে। সে-জন্যেই সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে তাঁকে ভোলাচ্ছে। হয়তো নীলুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হবে। তাতে কিছুই প্রমাণিত হয় না। প্রমাণ বড় কঠিন জিনিস। বড় কঠিন।
মিসির আলি কাতর কণ্ঠে বললেন, কষ্ট কমিয়ে দাও। কষ্ট কমিয়ে দাও।
অপরূপা নারীমূর্তি চাঁপা ফুলের গন্ধ ছড়াতে—ছড়াতে দূরে সরে যাচ্ছে। তার পায়ে ঝুমঝুম করছে নূপুর। কে যেন দরজা ধাক্কা দিচ্ছে কে সে? সাজ্জাদ হোসেন? ওরা কি ধরে ফেলেছে ফিরোজকে? ওকে সুস্থ করে তুলতে হবে। ইসিটি দিয়ে দেখলে হয়। দুগ্ধক মনে হয়তো এখন সে সুন্থ। তাকে একবার আঘাত করেই তার চেতনা ফিরে এসেছে।
হানিফা। হানিফা কেমন আছে? কোথায় আছে? সুখে আছে তো? আহ্, বড় কষ্ট। কেউ আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দাও—ঘুম পাড়িয়ে দাও। আমি তলিয়ে যেতে চাই অতল অন্ধকারে। বড় কষ্ট, বড় কষ্ট।
সাজ্জাদ হোসেন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন। টর্চের আলো ফেললেন মিসির আলির মুখে। সাজ্জাদ হোসেনের মুখে এক ধরনের প্রশান্তি লক্ষ করা গেল। কারণ, নগ্নগাত্র আগন্তুককে কিছুক্ষণ আগেই ধরা হয়েছে। খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার, পুলিশকে সে প্রথম যে-কথাগুলি বলে, তা হচ্ছে, আপনারা স্যারকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন। এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে যান। আর আমার বাবাকে টেলিফোন করে বলুন, আমি ভালো হয়ে গেছি। স্যারের বাসায় এক জনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সে আমাকে ভালো করে দিয়েছে।
—————
গল্পের অধিকাংশ চরিত্রই কাল্পনিক। পরিচিত কিছু চরিত্র এবং কিছু ঘটনা ব্যবহার করেছি। তবে কাউকে হেয় কক্সবার জন্যে করা হয় নি। মানুষের প্রতি আমার মমতা মিসির আলির মতো হয়তো নয়, কিন্তু খুব কমও নয়।