হাদীস নং ৩৭৮৭
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খুবাইব রা.-এর হত্যাকারী হল আবু সিরওয়া (উকবা ইবনে হারিস)।
হাদীস নং ৩৭৮৮
আবু মামার রহ………….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক প্রয়োজনে সত্তরজন সাহাবীকে (এক জায়গায়) পাঠালেন, যাদের ক্বারী বলা হত। বনী সুলাইম গোত্রের দুটি শাখা–রিল ও যাকওয়ান বিরে মাউনা নামক একটি কূপের নিকট তাদেরকে আক্রমণ করলে তাঁর বললেন, আল্লাহর কসম, আমরা তোমাদের সাথে লড়াই করার উদ্দেশ্যে আসিনি। আমরা তো কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশীত একটি কাজের জন্য এ পথ দিয়ে যাচ্ছি। এতদসত্ত্বেও তারা তাদেরকে হত্যা করে দিল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত ফজরের নামাযে তাদের জন্য বদদোয়া করলেন। এভাবেই কুনুত পড়া আরম্ভ হয়। (রাবী বলেন : এর পূর্বে আমরা) কখনো আর কুনুত (এ নাযিলা) পড়িনি। আবদুল আযীয রহ. বলেন, এক ব্যক্তি আনাস রা. -কে জিজ্ঞাসা করলেন, কুনুত কি রুকুর পর পড়তে হবে না কিরাত শেষ করে পড়তে হবে? উত্তরে তিনি বললেন না কিরাত শেষ করে পড়তে হবে।
হাদীস নং ৩৭৮৯
মুসলিম রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবের কয়েকটি গোত্রের প্রতি বদদোয়া করার জন্য নামাযে রুকুর পর কুনুত পাঠ করেছেন।
হাদীস নং ৩৭৯০
আবদুল আলা ইবনে হাম্মাদ রহ………….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, রিল, যাওয়অন উসায়্যা ও বনূ লিহইয়ানের লোকেরা শত্রু র মুকাবিলা কারার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে সত্তরজন আনসারী সাহাবী পাঠিয়ে তিনি তাদেরকে সাহায্য করলেন। সেকালে আমরা তাদেরকে ক্বারী নামে অভিহিত করতাম। তারা দিনের বেলা লাকড়ি কুড়াতেন এবং রাতের বেলা নামাযে কাটাতেন। যেতে যেতে তাঁরা বিরে মাউনার নিকট পৌঁছলে তারা (আমির ইবনে তোফায়লের আহবানে ঐ গোত্র চতুষ্টয়ের লোকেরা) তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং তাদেরকে শহীদ করে দেয়। এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছলে তিনি এক মাস পর্যন্ত ফজরের নামাযে আরবের কতিপয় গোত্র তথা রিল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদোয়া করে কুনূত পাঠ করেন। আনাস রা. বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সম্পর্কি কিছু আয়াত পাঠ করতাম। অবশ্য পরে এর তিলাওয়াত রহিত হয়ে যায়। (একটি আয়াত ছিল) অর্থাৎ “আমাদের কাওমের লোকদেরকে জানিয়ে দাও। আমরা আমাদের প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করেছেন”। কাতাদা রা. আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাকে বলেছেন, আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এক মাস পর্যন্ত ফজরের নামাযে আরবের কতিপয় গোত্র —তথা রিল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদোয়া করে কুনুত পাঠ করেছেন। (ইমাম বুখারী রহ.-এর উস্তাদ) খলীফা রহ. এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে যুরাই রহ. সাঈদ ও কাতাদা রা.-এর মাধ্যমে আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, যে ,তাঁরা ৭০ জন সকলেই ছিলেন আনসার। তাদেরকে বিরে মাউনা নামক স্থানে শহীদ করা হয়েছিল। (ইমাম বুখারী রহ.) বলেন, এখানে “কুরআন” শব্দটি কিতাব বা অনুরূপ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
হাদীস নং ৩৭৯১
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী ৱসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মামা উম্মে সুলাইমানের (আনাসের মা) ভাই (হারাম ইবনে মিলহান রা.) কে সত্তরজন অশ্বারোহীসহ (আমির ইবনে তুফায়েলের নিকট) পাঠালেন। মুশরিকদের দলপতি আমির ইবনে তুফায়েল (পূর্বে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনটি বিষয়ের যেকোন একটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। সে বলেছিল, পল্লী এলাকায় আপনার কর্তৃত্ব থাকবে এবং শহর এলাকায় আমার কর্তৃত্ব থাকবে। অথবা আমি আপনার খলীফা হব বা গাতফান গোত্রের দুই হাজার সৈন্য নিয়ে আমি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। এরপর আমির উম্মে ফুলানের গৃহে মহামারিতে আক্রান্ত হল। সে বলল, অমুক গোত্রের মহিলার বাড়িতে উটের যেমন ফোড়া হয় আমরাও তেমন ফোঁড়া আক্রান্ত হল। সে বলল, অমুক গোত্রের মহিলার বাড়িতে উটের যেমন ফোড়া হয় আমারও তেমন ফোঁড়া হয়েছে। তোমরা আমার ঘোড়া নিয়ে আস। তারপর (ঘোড়ায় আরোহণ করে) অশ্বপৃষ্ঠেই সে মৃত্যুবরণ করে। উম্মে সুলাইম রা.-এর ভাই হারাম (ইবনে মিলহান রা.) এক খোঁড়া ব্যক্তি ও কোন এক গোত্রের অপর এক ব্যক্তি সহ সে এলাকার দিকে রওয়ানা করলেন। (হারাম ইবনে মিলহান রা.) তার দুই সাথীকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা নিকটেই অবস্থান কর। আমিই তাদের নিকট যাচ্ছি। তারা যদি আমাকে নিরাপত্তা দেয়, তাহলে তোমরা এখানেই থাকবে। আর যদি তারা আমাকে শহীদ করে দেয় তাহলে তোমরা তোমাদের নিজেদের সাথীদের কাছে চলে যাবে। এরপর তিনি (তাদের নিকট গিয়ে) বললেন, তোমরা (আমাকে) নিরাপত্তা দিবে কি? দিলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতাম। তিনি তাদের সাথে এ ধরনের আলাপ-আলোচনা করছিলেন। এমতাবস্থায় তারা এক ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করলে সে পেছন দিক থেকে এসে তাকে বর্শা দ্বারা আঘাত করল। হাম্মাদ রহ. বলেন, আমাম মনে হয় আমার শায়খ (ইসহাক রহ.) বলেছিলেন যে, বর্শা দ্বারা আঘাত করে এপার ওপার করে দিয়েছিল। (আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে) হারাম ইবনে মিলহান রা. বললেন, আল্লাহ আকবার, কাবার প্রভুর শপথ! আমি সফলকাম হয়েছি। এরপর উক্ত (হারামের সঙ্গী) লোকটি (অপেক্ষমান সাথীদের সাথে) মিলিত হলেন। তারা হারামের সঙ্গীদের উপর আক্রমণ করলে খোঁড়া ব্যক্তি ব্যতীত সকলেই নিহত হলেন। খোঁড়া লোকটি ছিলেন পাহাড়ের চুড়ায়। এরপর আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি (একখানা) আয়াত নাযিল করলেন যা পরে মানসুখ হয়ে যায়। আয়াতটি ছিল এই “আমরা আমাদের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করেছে”। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্রিশ দিন পর্যন্ত ফজরের নামাযে রিল, যাকওয়ান, বনূ লিহইয়ান এবং উসায়্যা গোত্রের জন্য বদদোয়া করেছেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয়েছিল।