হাদীস নং ৩৭৮১
মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ…………আবু মূসা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একখানা তরবারি নাড়া দিলাম, অমনি এর মধ্যস্থলে ভেঙ্গে গেল। (আমি বুঝতে পারলাম) এটা উহুদ যুদ্ধে মুমিনদের উপর আগত বিপদেরই প্রতিচ্ছবি ছিল। এরপর আমি তরবারিটিকে পুনারায় নাড়া দিলাম। এতে তার পূর্বের থেকেও অধিক সুন্দর হয়ে গেল। এর অর্থ হল (পরবর্তীকালে) মুমিনদের বিজয় লাভ ও তাদের একতাবদ্ধ হওয়া এবং স্বপ্নে আমি একটি গরুও দেখেছিলাম। উহুদ যুদ্ধে মুমিনদের শাহাদত বরণ করাই হচ্ছে এর তাবীর। আল্লাহর প্রতিদান অতি উত্তম বা আল্লাহর সকল কাজ কল্যাণময়।
হাদীস নং ৩৭৮২
আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………. খাব্বাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হিজরত করেছিলাম। এতে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। অতএব আল্লাহর কাছে আমাদের প্রতিদিন নির্ধারিত হয়ে আছে। আমাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ অতিবাহিত হয়ে গিয়েছেন অথবা (রাবী বলেছেন) কেউ চলে গিয়েছেন। অথচ পার্থিব প্রতিদান থেকে তিনি কিছুই ভোগ করতে পারেননি। মুসআব ইবনে উমাইর রা. হলেন তাদের মধ্যে একজন। উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি শাহাদত বরণ করেছেন। একখান মোটা চাদর ব্যতীত তিনি আর কিছুই রেখে যাননি। এ দ্বারা আমরা তাঁর মাথা ঢাকলে পা দু’খানা বেরিয়ে যেত এবং পা দু’খানা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে যেত। (এ দেখে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, এ কাপড় দ্বারা তার মাথা ঢেকে দাও এবং উভয় পা ইযখির (এক প্রকার ঘাস) দ্বারা আবৃত করে দাও। অথবা বললেন, (রাবীর সন্দেহ) তাঁর উভয় পায়ের উপর ইযখির দিয়ে দাও। আর আমাদের মধ্যে কেউ এমনও আছেন, যার ফল উত্তমরূপে পেকেছে, এখন তিনি তা সংগ্রহ করছেন।
হাদীস নং ৩৭৮৩
নাসর ইবনে আলী রহ………..কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রা.-এর নিকট থেকে শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উহুদ পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত করে) বলেছেন, এ পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও একে ভালবাসি।
হাদীস নং ৩৭৮৪
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে উহুদ পাহাড় পরিলক্ষিত হলে তিনি বললেন, এ পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও একে ভালবাসি। হে আল্লাহ ! ইবরাহীম আ. মক্কাকে হরম শরীফ ঘোষণা দিয়েছেন এবং আমি দুটি কংকরময় স্থানের মধ্যবর্তী জায়গাকে (মদীনাকে) হরম শরীফ ঘোষণা দিচ্ছি।
হাদীস নং ৩৭৮৫
আমর ইবনে খালিদ রহ…………উকবা রা. থেকে বর্ণিত যে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনা থেকে) রেব হয়ে (উহুদ প্রান্তরে গিয়ে) উহুদের শহীদগণের জন্য জানাযার নামাযেরও মত নামায আদায় করলেন। এরপর মিম্বরের দিকে ফিরে এসে বললেন, আমি তোমাদের অগ্রগামী ব্যক্তি এবং আমিই তোমাদের সাক্ষ্যদাতা। আমি এ মুহূর্তেই আমার হাউয (কাউসার) দেখতে পাচ্ছি। আমাকে পৃথিবীর ধন ভাণ্ডারের চাবি দেওয়া হয়েছে অথবা বললেন, (রাবীর সন্দেহ) আমাকে পৃথিবীর চাবি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম, আমার ইন্তিকালের পর তোমরা শিরকে লিপ্ত হবে— আমার এ ধরণের কোন আশংকা নেই। তবে আমি আশংকা করি যে, তোমরা পৃথিবীর ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে পড়বে।
হাদীস নং ৩৭৮৬
ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুশরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য) আসিম ইবনে উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর নানা আসিম ইবনে সাবিত আনসারী রা.-এর নেতৃত্বে একটি গোয়েন্দা দল কোথাও প্রেরণ করলেন। যেতে যেতে তারা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছলে হুযায়ল গোত্রের একটি শাখা বনী লিহইয়ানের নিকট তাদের আগমনের কথা জানিয়ে দেওয়া হল। এ সংবাদ পাওয়ার পর বনী লিহইয়ানের প্রায় একশ তীরন্দাজ সমভিব্যাহারে তাদের প্রতি ধাওয়া করল। দলটি তাদের (মুসলিম গোয়েন্দা দলের) পদচিহ্ন অনুসরণ করে এমন এক স্থানে গিয়ে পৌঁছল, যে স্থানে অবতরণ করে সাহাবীগণ খেজুর খেয়েছিলেন তারা সেখানে খেজুরের আটি দেখতে পেল যা সাহাবীগণ মদীনা থেকে পাথেয়রূপে এনেছিলেন। তখন তারা বলল, এগুলো তো ইয়াসরিবের খেজুর (এর আটি)। এরপর তারা পদচিহ্ন ধরে খুজতে খুজতে শেষে পর্যন্ত তাদেরকে ধরে ফেলল। আসিম ও তাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে ফাদফাদ নামক টিলায় উঠে আশ্রয় নিলেন। এবার শত্রু দল এসে তাদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলল, আমরা তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যদি তোমরা নেমে আস তাহলে আমরা তোমাদের একজনকেও হত্যা করব না। আসিম রা. বললেন, আমি কোন কাফেরের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ আমাদের এ সংবাদ আপনার রাসূলের নিকট পৌঁছিয়ে দিন। এরপর তারা মুসলিম গোয়েন্দা দলে প্রতি আক্রমন করল এবং তীর বর্ষণ করতে শুরু করল। এভঅবে তারা আসম রা.-সহ সাতজনকে তীর নিক্ষেপ করে শহীদ করে দিল। এখন শুধু বাকী রইলেন খুবাইর রা. যায়েদ রা. এবং অপর একজন (আবদুল্লাহ ইবনে তারিক) সাহাবী রা.। পুনরায় তারা তাদেরকে ওয়াদা দিল। এই ওয়াদায় আশ্বস্ত হয়ে তাঁরা তাদের কাছে নেমে এলেন। এবার তারা তাদেরকে কাবু করে ফেলার পর নিজেদের ধনুকের তার খুলে এর দ্বারা তাদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাদের সাথী তৃতীয় সাহাবী (আবদুল্লাহ ইবনে তারিক) রা. বললেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। তাই তিনি তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করলেন। তারা তাকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা-হেচড়া করল এবং বহু চেষ্টা করল। কিন্তু তিনি তাতে রাযী হলেন না। অবশেষে কাফেররা তাকে শহীদ করে দিল এবং খুবাইব ও যায়েদ রা.-কে মক্কার বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দিল। বনী হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফল গোত্রের লোকেরা খুবাইব রা.-কে কিনে নিল। কেননা বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব রা. হারিসকে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছু দিনি বন্দী অবস্থায় কাটান। অবশেষে তারা তাকে হত্যা করার দৃঢ় সংকল্প করলে তিনি নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার জন্য হারিসের এক কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে তাকে তা দিল। (পরবর্তীকালে মুসলমান হওয়ার পর) হারিসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার একটি শিশু বাচ্চা সম্পর্কে অসাবধান থাকায় সে পায়ে হেটে তাঁর কাছে চলে যায় এবং তিনি তাকে স্বীয় উরুর উপর বসিয়ে রাখেন। এ সময় তাঁর হাতে ছিল সেই ক্ষুর। এ দেখে আমি অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। খুবাইব রা. তা বুঝতে পেরে বললেন, তাকে মেরে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পাচ্ছ? ইনশা আল্লাহ আমিতা করার নই। সে (হারিসের কন্যা) বলত, আমি খুবাইব রা. থেকে উত্তম বন্দী আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে আঙ্গুরের থোকা থেকে আঙ্গুর থেকে দেখেছি। অথচ তখন মক্কার কোন ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আবদ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত রিযিক ব্যতীত আর কিছুই নয়। এরপর তারা তাকে হত্যা করার জন্য হারাম শরীফের বাইরে নিয়ে গেল। তিনি তাদেরকে বললেন, আমাকে দুরাকাত নামায আদায় করার সুযোগ দাও। (নামায আদায় করে) তিনি তাদের কাছে ফিরে এসে বললেন, আমি মৃত্যুর ভয়ে শংকিত হয়ে পড়েছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করতে তাহলে আমি (নামাযকে) আরো দীর্ঘায়িত করতাম। হত্যার পূর্বে দু’রাকাআত নামায আদায়ের সুন্নাত প্রবর্তন করেছেন সর্বপ্রথম তিনিই । এরপরতিনি বললেন, হে আল্লাহ, তাদেরকে এক এক কর গুণে রাখুন। এরপর তিনি দুটি পঙক্তি আবৃত্তি করলেন, “যেহেতু আমি মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণ করছি তাই আমার কোন শংকা নেই। আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যেকোন পার্শ্বে আমি ঢলে পড়ি”। আমি যেহেতু আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করছি তাই তিনি ইচ্ছা করলে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে বরকত দান করতে পারেন”। এরপর উকবা ইবনে হারিস তাঁর দিকে এগিয়ে গেল এবং তাকে শহীদ করে দিল। কুরাইশ গোত্রের লোকেরা আসিম রা.-এর শাহাদতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর মৃতদেহ থেকে কিছু অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। কারণ আসিম রা. বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন, যা তাদের প্রেরিত লোকদের হাত থেকে আসিম রা.-রক্ষা করল। ফলে তারা তাঁর দেহ থেকে কোন অংশ নিতে সক্ষম হল না।