হাদীস নং ৩৭৬৮
উবায়দুল্লাহ ইবনে সাঈদ রহ…………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে মুশরিকরা পরাজিত হয়ে গেলে অভিশপ্ত ইবলীস চীৎকার করে বলল, হে আল্লাহর বান্দারা, তোমাদের পেছন দিকে থেকে আরেকটি দল আসছে। এ কথা শুনে তারা পেছনের দিকে ফিরে গেল। তখন অগ্রভাগ ও পশ্চাদ ভাগের মধ্যে পরস্পর সংঘর্ষ হল। এ পরিস্থিতিতে হুযায়ফা রা. দেখতে পেলেন যে, তিনি তাঁর পিতা ইয়ামন রা.-এর সাথে লড়াই করছেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ, (ইনি তো) আমার পিতা, আমার পিতা (তাকে আক্রমণ করবেন না)। রাবী বলেন, আল্লাহর কসম, এতে তাঁরা বিরত হলেন না। বরং তাকে হত্যা করে ফেললেন। তখন হুযায়ফা রা. বললেন, আল্লাহ আপনাদেরকে ক্ষমা করে দিন। উরওয়া রা. বলেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহর সাথে মিলনের (মৃত্যুর) পূর্ব পর্যন্ত হুযায়ফা রা.-এর মনে এ ঘটনার অনুতাপ বাকী ছিল।
হাদীস নং ৩৭৬৯
আবদান রহ…………ইসমান ইবনে মাওহাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তি বায়তুল্লাহ এসে সেখানে একদল লোককে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এসব লোক কারা? তারা বললেন, এরা হচ্ছেন কুরাইশ গোত্রের লোক। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এ বৃদ্ধ লোকটি কে? উপস্থিত সকলেই বললেন, ইনি হচ্ছেন (আবদুল্লাহ) ইবনে উমর রা.। তখন লোকটি তাঁর (ইবনে উমর) কাছে গিয়ে বললেন, আমি আপনাকে কিছু কথা জিজ্ঞাসা করব, আপনি আমাকে বলেন দেবেন কি? এরপর লোকটি বললেন, আমি আপনাকে এই ঘরের মর্যাদার কসম দিয়ে বলছি, উহুদ যুদ্ধের দিন উসমান ইবনে আফফান রা. পালিয়েছিলেন, এ কথা আপনি কি জানেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বললেন, তিনি বদরের রণাঙ্গনে অনুপস্থিত ছিলেন, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি— এ কথাও কি আপনি জানেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি পুনরায় বললেন, তিনি বায়আতে রিদওয়ানেও অনুপস্থিত ছিলেন—- এ কথাও কি আপনি জানেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাবী বলেন, লোকটি তখন আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করল। তখন ইবনে উমর রা. বললেন, এসো এখন আমি তোমাকে সব ব্যাপারে অবহিত করছি এবং তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর খুলে বলছি। (১) উহুদের রণাঙ্গন থেকে তাঁর পালানোর ব্যাপারে সম্বন্ধে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (২) বদর যুদ্ধে তাঁর অনুপস্থিত থাকার কারণ হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (রুকাইয়া) তাঁর স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন অসুস্থ। তাই তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মতই তুমি সাওয়াব লাভ করবে এবং গনীমতের অংশ পাবে। (৩) বায়আতে রিদওয়ান থেকে তাঁর অনুপস্থিত থাকার কারণ হল এই যে, মক্কাবাসীদের নিকট উসমান ইবনে আফফান রা. থেকে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি থাকলে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা পাঠাতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জন্য উসমান রা.-কে (মক্কা) পাঠালেন। তাঁর মক্কা গমনের পরই বায়আতে রিদওয়ান সংঘটিত হয়েছিল। তাই (বায়আত গ্রহণের সময়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাতখানা অপর হাতের উপর রেখে বলেছিলেন, এটাই উসামানের হাত। এরপর তিনি (আবদুল্লাহ ইবনে উমর) বললেন, এই হল উসমান রা.-এর অনুপস্থিতির মূল কারণ। এখন তুমি যাও এবং এ কথাগুলো মনে গেথে রেখ।
হাদীস নং ৩৭৭০
আমর ইবনে খালিদ রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-কে পদাতিক বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু তারা পরাজিত হয়ে (মদীনার দিকে) ছুটে গিয়েছিলেন। এটাই হচ্ছে, রাসূল (সা.) এর তাদেরকে পেছনের দিকে থেকে ডাকা।
হাদীস নং ৩৭৭১
ইয়াহইয়া ইবনে আবদুল্লাহ সুলামী রহ……….আবদুল্লাহ ইবন উমর রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ফজরের নামাযের শেষ রাকাতে রুকূ থেকে মাথা উত্তোলন করে “সামিআল্লাহু লিমান হামীদা” বলার পর বলতে শুনেছেন, হে আল্লাহ আপনি অমুক, অমুক এবং অমুকের উপর লানত বর্ষণ করুন, তখন আল্লাহ নাযিল করলেন, তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি দেবেন, এ বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই। কারণ তারা যালিম। হানজালা রহ……..সালিম ইবনে আবদুল্লাহ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া, সুহাইল ইবনে আমর এবং হারিস ইবনে হিশামের জন্য বদদোয়া করতেন। এ প্রেক্ষিতেই নাযিল হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতখানা। তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি দেবেন, এ বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই। কারণ তারা যালিম।
হাদীস নং ৩৭৭২
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………….সালাবা ইবনে আবু মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার উমর খাত্তাব রা কতগুলো চাদর মদীনাবাসী মহিলাদের মধ্যে বন্টন করলেন। পরে একটি সুন্দর চাদর অবশিষ্ট রয়ে গেল। তার নিকট উপস্থিত লোকদের একজন বলে উঠলেন, হে আমীরুল মুমিনীন ! এ চাদরখান আপনার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাতনী আলী রা-এর কন্যা উম্মে কুলসুম রা.-কে দিয়ে দিন। উমর রা. বললেন, উম্মে সালীত রা. তার চেয়েও অধিক হকদার। উম্মে সালীত রা. আনসারী মহিলা। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছেন। উমর রা. বললেন, উহুদের দিন এ মহিলা আমাদের জন্য মশক ভরে পানি এনেছিলেন।