এভাবে চিন্তার বিষয় এ ছিল যে যদি এ অবস্থায় আমার মৃত্যু এসে যায়, আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করেন, অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হলে আমি মানুষের কাছে এই অবস্থায় থেকে যাব তারা কেউ আমার সাথে কথাও বলবে না, আর আমার জানোযার সালাত (নামায/নামাজ)ও আদায় করবে না। এরপর (পঞ্চাঁশ দিন পর) আল্লাহ তা‘আলা আমার তওবা কবূল করে তাঁর [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি আয়াত অবতীর্ণ করেন। তখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী ছিল। সে রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালমা (রাঃ) এর কাছে ছিলেন, উম্মে সালমা (রাঃ) আমার প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল ছিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে সালমা! কা‘আবের তওবা কবূল করা হয়েছে। উমম সালমা (রাঃ) বললেন, তাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য কাউকে তাঁর কাছে পাঠাব? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন খবর পেলে সব লোক এসে সমবেত হবে। তারা তোমাদের ঘুম নষ্ট করে দিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর (সকলের মধ্যে) আমাদের তওবা কবূল হওয়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন। এ (ঘোষণার) সময় (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারক খুশততে চাঁদের ন্যায় চমকাচ্ছিল। যেসব মুনাফিক মিথ্যা আযুহাত দেখিয়ে [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসন্তুষ্টি থেকে] রেহাই পেয়েছিল, তাদের চেয়ে তওবা কবূলের ব্যপারে আমরা তিনজন পিছনে পড়ে গিয়েছিলাম, এরপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তওবা কবূল করে আয়াত অবতীর্ণ করেন।
(তাবুকের যুদ্ধে) অনুপস্থিতিদের মধ্যে যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে মিথ্যা কথা বলেছে এবং যারা মিথ্যা আযুহাত দেখিয়েছে তাদের অত্যন্ত জঘন্যভাবে নিন্দাবাদ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘‘তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা তোমাদের কাছে আযুহাত পেশ করবে, বল, মিথ্যা অযুহাত পেশ করো না, আমরা তোমাদেরকে কখনোই বিশ্বাস করবো না। আল্লাহ আমাদেরকে তোমাদের খবর জানিয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করবেন। (৯ঃ ৯৪)
হাদিস নম্বরঃ ৪৩২১ | 4321 | ٤۳۲۱
পরিচ্ছদঃ ২৪১০. আল্লাহর বাণীঃ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও (৯ঃ ১১৯)
৪৩২১। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ) (দৃষ্টিহীন হওয়ার পরে) এর পথপ্রদর্শক হিসেবে ছিলেন। তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আমি কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ), তাবুক যুদ্ধে যারা পশ্চাতে থেকে গিয়েছিলেন তাদের ঘটনা বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহর কসম! হয়ত আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সত্য কথা কথা প্রকাশের কারণে, অন্য কাউকে এত বড় নিয়ামত দান করেন নি যতটুকু আমাকে প্রদান করেছেন। যখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার সঠিক কারণ বর্ণণা করেছি তখন থেকে আজ পর্যন্ত (যে কোন ব্যাপারে) মিথ্যা বলার ইচ্ছাটুকু পর্যন্ত আমার হয়নি। শেষে পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আয়াত নাযিল করলেন, ‘‘আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নাবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদিগকের প্রতি …… এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’’ (৯: ১১৭-১১৯)
হাদিস নম্বরঃ ৪৩২২ | 4322 | ٤۳۲۲
পরিচ্ছদঃ ২৪১১. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে এক রাসুল এসেছেন। তোমাদের যা বিপন্ন করে, তা তার জন্য অতি কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু (৯ঃ ১২৮)
৪৩২২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … যায়েদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি ওহী লেখকদের মধ্যে একজন ছিলেন, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) (তার খিলাফতের সময়) এক ব্যাক্তিকে আমার কাছে পাঠালেন। এ সময় ইয়ামামার যুদ্ধ চলছিল। (আমি তার কাছে চলে আসলাম) তখন তাঁর কাছে উমর (রাঃ) বসা ছিলেন। তিনি [আবূ বকর (রাঃ) আমাকে] বললেন, উমর (রাঃ) আমার কাছে এসে বললেন যে, ইয়ামামার যুদ্ধ তীব্র গতিতে চলছে, আমার ভয় হচ্ছে, কুরআনের অভিজ্ঞগণ (হাফিজগণ) ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান নাকি! যদি আপনার তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করেন তবে কুরআনের অনেক অংশ বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং কুরআনকে একত্রিত করে সংরক্ষণ করা ভাল মনে করি। আবূ বকর (রাঃ) বলেন, আমি উমর (রাঃ) কে বললাম, আমি এ কাজ কিভাবে করতে পারি, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে যাননি।
কিন্তু উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! এটা কল্যাণকর হবে। উমর (রাঃ) তাঁর এ কথার পুনরুক্তি করতে থাকেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা এ কাজ কনরার জন্য আমার বক্ষকে উন্মুক্ত করে দেন। (অর্থাৎ এ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হই) এবং শেষ পর্যন্ত (এ ব্যাপারে) আমার অভিমত উমর (রাঃ) এর মতই হয়ে যায়। যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেন, উমর (রাঃ) সেখানে নিরবে বসা ছিলেন, কোন কথা বলছিলেন না। এরপর আবূ বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, দেখ, তুমি যুবক এবং জ্ঞানি ব্যাক্তি। আমরা তোমার প্রতি কোনরূপ বিরূপ ধারণা পোষণ করি না। কেননা, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে ওহী লিপিবদ্ধ করতে। সুতরাং তুমি কুরআনের আয়াত সংগ্রহ করে একত্রিত কর। কসম! তিনি কুরআন একত্রিত করার যে নির্দেশ আমাকে দিলেন সেটি আমার কাছে এত ভারী মনে হল যে, তিনি যদি কোন একটি পাহাড় স্থানান্তরিত করতে নির্দেশ দিতেন তাও আমার কাছে এরূপ ভারী মনে হতো না।