হাদীস নং ৩৮০২
আমর ইবনে আলী রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন পরিখা খনন করা হচ্ছিল তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার কাছে কোন কিছু আছে কি? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দারুণ ক্ষুধার্ত দেখেছি। (এ কথা শুনে) তিনি একটি চামড়ার পাত্র এনে তা থেকে এক সা পরিমাণ যব বের করে দিলেন।আমাদের গৃহপালিত একটি বকরীর বাচ্চা ছিল। আমি সেটি যবেহ করলাম এবং গোশত কেটে কেটে ডেকচিতে ভরলাম। আর সে (আমার স্ত্রী) যব পিয়ে দিল। আমি আমার কাজ শেষ করার সাথে সাথে সেও তার কাজ শেষ করল। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে চললাম। তখন সে বলল, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের নিকট লজ্জিত করবেন না। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট চুপে চুপে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমরা আমাদের একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করেছি এবং আমাদের ঘরে এক সা যব ছিল। তা আমার স্ত্রী পিষে দিয়েছে। আপনি আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আসুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চ স্বরে সবাইকে বললেন, হে পরিখা খননকারিগণ ! জাবির খানার ব্যবস্থা করেছে। এসো, তোমরা সকলেই চল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার আসার পূর্বে তোমাদের ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও তৈরী করবে না। আমি (বাড়ীতে) আসলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামসহ তাশরীফ আনলেন। এরপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট আসলে সে বলল, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। (তুমি এ কি করলে? এতগুলো লোক নিয়ে আসলে? অথচ খাদ্য একেবারে নগণ্য) আমি বললাম, তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি। এরপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে আটার খামির বের করে দিলে তিনি তাতে মুখের লালা মিশিয়ে দিলেন এবং বরকতের দোয়া করলেন। এরপর তিনি ডেকচির দিকে এগিয়ে গেলেন এবং তাতে মুখের লালা মিশিয়ে এর জন্য বরকতের দোয়া করলেন। তারপর বললেন, (হে জাবির) রুটি প্রস্তুতকারিণীকে ডাক। সে আমার কাছে বসে রুটি প্রস্তুত করুক এবং ডেকচি থেকে পেয়ালা ভরে গোশত পরিবেশন করুক। তবে (চুলা থেকে) ডেকচি নামাবে না। তাঁরা (আগন্তুক সাবাহায়ে কেরাম) ছিলেন সংখ্যায় এক হাজার। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তাঁরা সকলেই তৃপ্তিসহকারে খেয়ে অবশিষ্ট খাদ্য রেখে চলে গেলেন। অথচ আমাদের ডেকচি পূর্বের ন্যায় তখনও টগবগ করছিল এবং আমাদের আটার খামির থেকেও পূর্বের মত রুটি তৈরী হচ্ছিল।
হাদীস নং ৩৮০৩
উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল উচু অঞ্চল ও নীচু অঞ্চল হতে এবং তোমাদের চক্ষু বিস্ফারিত হয়েছিল……..(৩৩: ১০) তিনি বলেন, এ আয়াতখানা খন্দকের যুদ্ধে নাযিল হয়েছে।
হাদীস নং ৩৮০৪
মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ…………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধের দিন মাটি বহন করেছিলেন। এমনকি মাটি তাঁর পেট ঢেকে ফেলেছিল অথবা (রাবী সন্দেহ) তাঁর পেট ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। এ সময় তিনি বলছিলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ হেদায়েত না করলে আমরা হেদায়েত পেতাম না, দান সদকা করতাম না, এবং নামাযও আদায় করতাম না। সুতরাং (হে আল্লাহ!) আমাদের প্রতি রহমত নাযিল করুন এবং আমাদেরকে শত্রুর সাথে মুকাবিলা করার সময় দৃঢ় পদ রাখুন। নিশ্চয়ই মক্কাবাসীরা আমাদের প্রতি বিদ্রোহ করেছে। যখনই তারা ফিতনার প্রয়াস পেয়েছে তখনই আমরা উপেক্ষা করেছি। শেষের কথাগুলো বলার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চ স্বরে “উপেক্ষা করেছি” “উপেক্ষা করেছি” বলে উঠেছেন।
হাদীস নং ৩৮০৫
মুসাদ্দাদ রহ…………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে পূবালি বায়ূ দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে, আর আদ জাতিকে পশ্চিমা বায়ূ দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
হাদীস নং ৩৮০৬
আহমদ ইবনে উসমান রহ…………..বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব (খন্দক) যুদ্ধের সময় র পরিখা খনন করেছেন। আমি তাকে খন্দকের মাটি বহন করতে দেখেছি। এমনকি ধূলাবালি পড়ার কারণে তার পেটের চামড়া ঢাকা পড়ে গিয়েছে। তিনি অধিক পশম বিশিষ্ট ছিলেন। সে সময় আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাটি বহন করা অবস্থায় ইবনে রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতে শুনেছি। তিনি বলছিলেন, হে আল্লাহ ! আপনি যদি হেদায়েত না করতেন তাহলে আমরা হেদায়েত পেতাম না, আমরা সদকা করতাম না এবং আমরা নামাযও আদায় করতাম না। সুতরাং আমাদের প্রতি আপনার রহমত নাযিল করুন এবং দুশমনের মুকাবিলা করার সময় আমাদেরকে দৃঢ় পদ রাখুন। অবশ্য মক্কাবাসীরাই আমাদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন করেছে। তারা ফিতনা বিস্তার করতে চাইলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। রাবী (বারা) বলেন, শেষ পঙক্তিটি আবৃত্তি করার সময় তিনি তা প্রলম্বিত করে পড়তেন।