১২। পাপিষ্ঠ, সীমালংঘনকারীরা ব্যতীত আর কেহ তা অস্বীকার করে না।
১৩। যখন তার নিকট আমার আয়াত সমূহ আবৃত্তি করা হয়, সে বলে, ” ইহা অতীতকালের কাহিনী। ” ৬০১৬
৬০১৬। দেখুন অনুরূপ সূরা [ ৬ : ২৫ ] আয়াত; [ ৬৮ : ১৫ ] ইত্যাদি। এই আয়াতের মাধ্যমে পাপিষ্ঠ ও সীমালংঘনকারীদের মানসিকতাকে তুলে ধরা হয়েছে। এরা ঘৃণা সহকারে সত্যকে প্রত্যাখান করে এবং এমন ভান করে যে সত্য হচ্ছে মিথ্যা।
আয়াতঃ 083.014
কখনও না, বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয় মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।
Nay! But on their hearts is the Rân (covering of sins and evil deeds) which they used to earn .
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِم مَّا كَانُوا يَكْسِبُونَ
Kalla bal rana AAala quloobihim ma kanoo yaksiboona
YUSUFALI: By no means! but on their hearts is the stain of the (ill) which they do!
PICKTHAL: Nay, but that which they have earned is rust upon their hearts.
SHAKIR: Nay! rather, what they used to do has become like rust . upon their hearts.
KHALIFA: Indeed, their hearts have become shielded by their sins.
১৪। কখনই না ! বরং তারা যে [ পাপ ] করেছে, তা তাদের হৃদয়ে মরিচা ধরিয়েছে ৬০১৭
৬০১৭। ‘হৃদয়’ শব্দটি দ্বারা এখানে মানুষের আত্মাকে বুঝানো হয়েছে। এই নশ্বর দেহের অভ্যন্তরে আল্লাহ্ তাঁর রূহুর অংশ ফুৎকারের সাহায্যে প্রবেশ করিয়েছেন [ ১৫ : ২৯]। রূহু বা আত্মা হচ্ছে অমর এবং প্রতিটি মানুষ পবিত্র ও কলুষমুক্ত আত্মা দেহের মাঝে ধারণ করে পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করে। জীবনে চলার পথে প্রতিটি ভুল পদক্ষেপ এবং পাপ কার্য আত্মার উপরে কলুষতার চিহ্ন বা মরিচা বা জং দ্বারা আবৃত করে দেয়। ফলে আত্মার শুভ্রতা ও ঔজ্জল্য ধীরে ধীরে নিষ্প্রভ হয়ে আসে। কিন্তু পাপ কার্যের পরে অনুতাপ ও আত্মসংশোধনের মাধ্যমে এই কলুষতা বা মরিচাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা সম্ভব। কিন্তু যদি কেউ পাপ কার্যের পরে অনুতপ্ত না হয়ে, পাপ কাজ চালিয়েই যেতে থাকে তবে আত্মার উপরে কলুষতার বা মরিচার প্রলেপ ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে। একখন্ড লৌহকে দীর্ঘদিন মুক্ত বাতাসে উম্মুক্ত রেখে দিলে তার উপরে মরিচার প্রলেপ শুরু হয়ে যায়। এবং দীর্ঘদিনের ব্যবধানে সেই মরিচার প্রলেপ এতটাই গভীর রূপ ধারণ করে যে, মূল লৌহ খন্ডকে সনাক্ত করাই তখন দুষ্কর ব্যাপার হয়ে যায়। মরিচা বা জং এর উদাহরণের মাধ্যমে এই সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে যে, লোহা যেমন বিপরীত পরিবেশে তার ধর্ম বা গুণাগুণ হারিয়ে ফেলে এবং মরিচা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়, আত্মার অবস্থাও পাপ কার্য দ্বারা সেরূপ ধারণ করে। পাপের কালিমা আত্মার স্বচ্ছতাকে ঢেকে ফেলে ফলে, তাদের আত্মার মাঝে আল্লাহ্র হেদায়েতের আলোর প্রবেশের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। আত্মার এই অবস্থাকেই [ ২ : ৭ ] আয়াতে ‘সীলমোহর’ রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। লোহা যেরূপ মরিচার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত লৌহ হিসেবে না থেকে মরিচা বা অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়; আত্মিক অবস্থারও হয় সেরূপ। শারীরিক ভাবে এ সব ব্যক্তি জীবিত বলে পরিগণিত হলেও এদের ঘটে আধ্যাত্মিক মৃত্যু। আত্মার উপরে পাপের কলুষতার আবরণ তাদের মাঝে সত্যকে বোঝার ও ধারণ করার ক্ষমতাকে অবলুপ্ত করে দেয়। আল্লাহ্র হেদায়েতের আলো ও আত্মার মাঝে কঠিন দেয়ালের সৃষ্টি করে। এ কারণেই তারা সত্যকে বুঝতে অক্ষম হয়, এবং সত্যকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করতে সাহস পায়।
আয়াতঃ 083.015
কখনও না, তারা সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার অন্তরালে থাকবে।
Nay! Surely, they (evil-doers) will be veiled from seeing their Lord that Day.
كَلَّا إِنَّهُمْ عَن رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوبُونَ
Kalla innahum AAan rabbihim yawma-ithin lamahjooboona
YUSUFALI: Verily, from (the Light of) their Lord, that Day, will they be veiled.
PICKTHAL: Nay, but surely on that day they will be covered from (the mercy of) their Lord.
SHAKIR: Nay! most surely they shall on that day be debarred from their Lord.
KHALIFA: Indeed, they will be isolated, on that day, from their Lord.
১৫। সেদিন তারা তাদের প্রভুর [ নূর ] থেকে অন্তরিত হবে। ৬০১৮
১৬। উপরন্তু তারা জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে।
৬০১৮। ‘অন্তরিত’ অর্থাৎ পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকবে। পূত পবিত্র আত্মাকে আয়নার সাথে তুলনা করা যায়। পরিষ্কার আয়নাতে যেরূপ উজ্জ্বল প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হয়, পূত পবিত্র আত্মার মাঝেও সেরূপ আল্লাহ্র জ্ঞান,প্রজ্ঞার আলোর প্রতিফলন ঘটে। আল্লাহ্র হেদায়েতের আলো এ সব আত্মাকে করে উদ্ভাসিত। কিন্তু যে আত্মা পাপের কালিমাতে কলুষিত হয় সে আত্মাকে তুলনা করা যায় মসীলিপ্ত আয়নার সাথে। মসীলিপ্ত আয়নাতে যেরূপ কোনও প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হয় না, ঠিক সেরূপ হচ্ছে পাপে আসক্ত আত্মার অবস্থান। এ সব আত্মাতে আল্লাহ্র নূর বা সত্য,জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোর অনুপ্রবেশের দ্বার রুদ্ধ হয়ে যায়। ঠিক যেনো দেয়াল দ্বারা তাদের অন্তরিত করা হয়েছে। ফলে, বিচার দিবসে পূণ্যাত্মারা আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভে হবেন ধন্য। অপরপক্ষে,পাপাত্মার কখনও স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভে সক্ষম হবে না। স্রষ্টা ও তাদের মাঝে থাকবে “অন্তরায়” বা দেয়াল পাপীদের দৃষ্টিগোচর করানো হবে দোযখের আগুন – যা তাদের জন্য প্রজ্জ্বলিত যা তাদের জন্য একমাত্র সত্য।