৩। [শাস্তি ] আসবে আল্লাহ্র নিকট থেকে যিনি উর্দ্ধে আরোহণের সোপান সমূহের প্রভু। ৫৬৭৬
৫৬৭৬। “Ma’arij ” – উর্দ্ধলোকের সিড়ি বা সোপান। সূরা [ ৪৩ : ৩৩ ] আয়াতে রয়েছে, ” রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিড়ি যাহাতে উহারা আরোহণ করে; যেখানে “Ma’arij” শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে। এই সূরাতে এই শব্দটি আধ্যাত্মিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। নশ্বর দেহের অধিকারী মানুষ কি সেই সমুচ্চ মর্যদার অধিকারী আল্লাহ্র নিকট পৌঁছাতে সক্ষম ? আল্লাহ্র অসীম করুণা ও দয়া মানুষকে ফেরেশতাদের উপরে মর্যদা দান করেছেন। এ ভাবেই মানুষ সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হয়। কিন্তু এ পথ খুব বন্ধুর। এ পথ একদিনে বা অল্প সময়ে অতিক্রম করা সম্ভব নয়। দেখুন পরবর্তী দুইটি টিকা।
আয়াতঃ 070.004
ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।
The angels and the Rûh [Jibrael (Gabriel)] ascend to Him in a Day the measure whereof is fifty thousand years,
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
TaAAruju almala-ikatu waalrroohu ilayhi fee yawmin kana miqdaruhu khamseena alfa sanatin
YUSUFALI: The angels and the spirit ascend unto him in a Day the measure whereof is (as) fifty thousand years:
PICKTHAL: (Whereby) the angels and the Spirit ascend unto Him in a Day whereof the span is fifty thousand years.
SHAKIR: To Him ascend the angels and the Spirit in a day the measure of which is fifty thousand years.
KHALIFA: The angels, with their reports, climb to Him in a day that equals fifty thousand years.
৪। ফেরেশতাগণ ও রুহু ৫৬৭৭ আল্লাহ্র দিকে আরোহণ করে এমন দিনে যার পরিমাণ পৃথিবীর পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। ৫৬৭৮
৫৬৭৭। “Ruh” – বা আত্মা। দেখুন সূরা [ ৭৮ : ৩৮ ] আয়াত যেখানে বলা হয়েছে “রূহু” ও ফিরিশতাগণ “। আবার সূরা [ ৯৭ : ৪ ] আয়াতে বলা হয়েছে, ” ফিরিশতাগণ ও রূহু “। সূরা [ ১৬ : ২ ] আয়াতে বর্ণিত রূহু শব্দটির অনুবাদ করা হয়েছে ‘ওহী’ শব্দটি দ্বারা। কোন কোন তফসীরকারের মত্যে রূহু শব্দটি দ্বারা জিব্রাঈল ফিরিশতাকে বুঝানো হয়। রূহুকে বিভিন্ন ভাবে এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু মওলানা ইউসুফ আলী সাহেবের মতে রূহু শব্দটির অর্থ আরও ব্যপক হওয়া প্রয়োজন, তা হলে যে কোন বর্ণনা প্রসঙ্গে তা ব্যবহৃত হতে পারে। মানুষকে আল্লাহ্ রূহু দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। রূহু হচ্ছে পরমাত্মার অংশ যা আল্লাহ্ ফুৎকারের সাহায্যে মানুষের ভিতরে আত্মারূপে প্রবেশ ঘটিয়েছেন। দেখুন সূরা [ ১৫ : ২৯ ] আয়াত। এভাবেই আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহ্ আমাদের সুউচ্চ মর্যদা দান করেছেন এবং তাঁর সান্নিধ্যের আলোকের যোগ্য করেছেন।
৫৬৭৮। ফিরিশতা ও রূহু আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের যোগ্যতা অর্জন করে থাকে বহু বছরের সাধনায়। এই মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত যোগ্যতা অর্জন, আধ্যাত্মিক জগতের সর্বোচ্চ যোগ্যতা ব্যতীত সম্ভব নয়। এই যোগ্যতা অর্জনের জন্য বহু সময়ের প্রয়োজন ; পৃথিবীর মাপকাঠিতে তা হয়তো পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতের জন্য তা হবে এক মূহুর্ত বা একদিন। এ ভাবেই সময়ের আপেক্ষিক ধারণাকে প্রকাশ করা হয়েছে যার ব্যাখ্যা একমাত্র বিজ্ঞানই দিতে পারে। দেখুন সূরা [ ৩২ : ৪ – ৫ ] ও টিকা ৩৬৩২ এবং ৩৬৩৪।
আয়াতঃ 070.005
অতএব, আপনি উত্তম সবর করুন।
So be patient (O Muhammad SAW ), with a good patience.
فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيلًا
Faisbir sabran jameelan
YUSUFALI: Therefore do thou hold Patience,- a Patience of beautiful (contentment).
PICKTHAL: But be patient (O Muhammad) with a patience fair to see.
SHAKIR: Therefore endure with a goodly patience.
KHALIFA: Therefore, you shall resort to a gracious patience.
৫। সুতারাং তুমি ধৈর্য্য ধারণ কর, পরম [ সন্তোষজনক ] ধৈর্য। ৫৬৭৯
৫৬৭৯। আল্লাহ্ রাসুলের (সা) জীবনের উদাহরণের মাধ্যমে ধৈর্য ধারণের প্রতি উপদেশ দান করেছেন। রাসুলের (সা) প্রতি অত্যাচার ও নির্যাতন যখন ছিলো প্রতিদিনের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা, এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁকে আল্লাহ্র উপরে নির্ভর করতে বা ধৈর্য ধারণ করতে উপদেশ দান করেছেন। বিপদ ও বিপর্যয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে অভিযোগের প্রবণতা দেখা যায়। মানুষ তার দুভার্গ্যের জন্য সকলকে দোষী করার প্রয়াস পায়। তাঁর এই অভিযোগ কখনও হয় প্রকাশ্য কখনও অপ্রকাশ্য। তার এই অভিযোগ পূর্ণ অসহায়ত্ব কোন ধৈর্য প্রদর্শন নয়। এই আয়াতে যে ধৈর্যের উল্লেখ করা হয়েছে তা “পরম ধৈর্য “। অর্থাৎ জীবনের সকল অবস্থাতেই আল্লাহ্র উপরে নির্ভর করা এবং দুঃখ -বিপদ, বিপর্যয়কে আল্লাহ্র দান হিসেবে গ্রহণ করে এ সবের মাঝে নিহিত আল্লাহ্র মঙ্গল ইচ্ছাকে অনুসন্ধান করার নামই হচ্ছে “পরম ধৈর্য” বা “Patience of beautiful Contentment”। মোমেন বান্দারা বিশ্বাস করবে যে তাদের জীবনে যাই-ই ঘটুক না কেন তা আল্লাহ্ প্রেরণ করেছেন বান্দার কল্যাণের জন্য, যেমনটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম নবী করিমের জীবনে। এরূপ ধৈর্য্য হচ্ছে বেহেশতি শান্তির প্রতীক, কারণ তা উৎসারিত হয় আল্লাহ্র প্রতি পবিত্রতম বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা থেকে।