২। তিনিই, কিতাবীদের মধ্যে যারা অবিশ্বাসী ৫৩৬৯, তাদের প্রথম বার সমবেত ভাবে তাদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। তোমরা কল্পনাও কর নাই যে, তারা নির্বাসিত হবে ৫৩৭০, এবং তারা ধারণা করেছিলো যে, তাদের [ দুর্ভেদ্য ] দুর্গগুলি তাদের আল্লাহ্র [ আজাব ] থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আল্লাহ্র [শাস্তি ] এমন এক দিক থেকে এলো, যা ছিলো তাদের ধারণাতীত ৫৩৭১ এবং যা তাদের অন্তরে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলো। সুতারাং তারা তাদের নিজ হস্ত দ্বারা ও মোমেনদের হস্ত দ্বারা নিজেদের বাড়ী -ঘর ধ্বংস করে ফেললো ৫৩৭২। হে চক্ষুষ্মান ! এর থেকে উপদেশ গ্রহণ কর।
৫৩৬৯। হিজরত করে রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদিনা পৌঁছে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে সর্ব প্রথম মদিনা ও তৎপার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারী ইহুদী গোত্র সমূহের সাথে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। এই চুক্তি ইতিহাসখ্যাত ‘মদিনা চুক্তি ‘ যার দ্বারা ইহুদীরা মুসলমানদের সাথে শান্তিতে বসবাসের অঙ্গীকার দান করে। মদিনা থেকে তিন মাইল দক্ষিণে মদিনা শহরের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিলো বানু নাদের নামক ইহুদী গোত্রের বাস, যদিও তারা মুসলিমদের সাথে শান্তিতে বসবাসের অঙ্গীকারে আবদ্ধ ছিলো, কিন্তু তারা ৩য় হিজরী শাওয়াল মাসে সংঘটিত ওহদের যুদ্ধে মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এই ঘটনার চারমাস পরে ৪র্থ হিজরীর রবিউল মাসে এদের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। রাসুলুল্লাহ্ [সা ] প্রথমে তাদের মদিনা থেকে চলে যেতে নির্দ্দেশ দেন। এই আদেশ অমান্য করায় তিনি তাদের দুর্গ অবরোধ করেন [ হি : ৪/ খৃ ৬২৫ ]। প্রথমে ইহুদীরা ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দান করে নাই – কারণ তাদের দূর্গ ও মিত্র শক্তির উপরে উপরে তাদের ছিলো অগাধ বিশ্বাস। কিন্তু মুসলমানেরা যখন ইহুদীদের দুর্গ অবরোধ করলো, ইহুদীদের মিত্র শক্তিরা কোনও সাহায্য বা সহযোগীতার হাত সম্প্রসারিত করলো না, ফলে তারা কিছুদিন পরে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয় এবং মুসলমানেরা তাদের মদিনা ত্যাগে বাধ্য করেন। ইহুদীদের অধিকাংশ সিরিয়াতে তাদের আত্মীয় স্বজনের নিকট গমন করে, অবশিষ্ট অংশ খাইবারে গমন করে। দেখুন [ ৩৩ : ২৭ ] আয়াতের টিকা ৩৭০৫। বানু নাদেররা চুক্তি ভঙ্গের দ্বারা যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো, মৃত্যুদন্ডই ছিলো তার উপযুক্ত জবাব। কিন্তু আল্লাহ্র নবী তাদের জীবন ভিক্ষা দেন এবং তাদের পশু সম্পদ ও অন্যান্য জিনিষসহ মদিনা ত্যাগের অনুমতি দান করেন।
৫৩৭০। “তোমরা কল্পনাও কর নাই যে, তারা নির্বাসিত হবে।” – অর্থাৎ পবিত্র মুসলিম রক্তপাত ব্যতীত, কোনরকম সংঘর্ষ ব্যতীত এরূপ বিজয় লাভ ঘটবে তা ছিলো মুসলমানদের কল্পনাতীত।
৫৩৭১। ইহুদীদের ভূমিকা ছিলো দ্বৈত। তারা একদিকে মদিনার মুসলমানদের সাথে রাসুলের (সা) নেতৃত্বে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলো, অপরদিকে তারা গোপনে মক্কার প্যাগানদের সাথে আবু জহলের নেতৃত্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতো এবং তাদের সাথে মদিনার মোনাফেকরাও ষড়যন্ত্রে যোগদান করে। এমনকি আল্লাহ্র রাসুল (সা ) যখন একদিন তাদের মাঝে ছিলেন, তারা রাসুলুল্লাহ্ কে (সা ) হত্যার ষড়যন্ত্র করে। এ ভাবেই তারা আতিথেয়তার অবমাননা ও তাদের কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে। তাদের ধারণা ছিলো বিপদে মক্কার কোরাইশরা ও মদিনার মোনাফেকরা তাদের রক্ষা করবে। কিন্তু প্রকৃত বিপদের সময়ে ইহুদীদের মিত্র শক্তিরা সাহায্যের জন্য কোনও চেষ্টাও করলো না। মুসলমানরো তাদের দুর্গ অবরোধ করে ছিলো এগারো দিন। এই এগারো দিনে তাদের অসহায়ত্বের প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে। তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য জিনিষের সরবরাহ বন্দ করে দেয়া হয়। অবরোধের প্রয়োজনীয় কৌশল হিসেবে মুসলমানেরা দুর্গের বাইরের সকল খেজুর গাছ সমূহ কর্তন করে ফেলেন। তাদের অসহায়ত্ব তাদের ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তোলে। তাদের অন্তর শঙ্কায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং তারা শর্তাধীনে আত্ম সমর্পন করে। কিন্তু তারা তাদের দুর্গ ত্যাগের প্রাক্কালে, নিজ হস্তে তাদের বাড়ী ঘর ধ্বংস করে। দেখুন পরবর্তী টিকা।
৫৩৭২। ইহুদীদের আত্মসমর্পনের পরে তাদের দশদিন সময় দেয়া হয়, পরিবার পরিজনসহ সে স্থান ত্যাগ করার জন্য এবং তাদের অনুমতি দেয়া হয় বহনযোগ্য বস্তু যা তাদের সাধ্যে কুলায় তা তাদের সাথে বহন করার জন্য। মুসলমানেরা যাতে তাদের আবাসসমূহ ব্যবহার করতে না পারে সে কারণে তারা নিজ হস্তে তাদের আবাস সমূহ ধ্বংস করে ফেলে। অবরোধের পরিণতিতে মুসলমানদের দ্বারা যে ধ্বংস সংঘটিত হওয়ার কথা ছিলো, সে কাজকে ইহুদীরা নিজেরাই ত্বরান্বিত ও সমাপ্ত করলো। এ ভাবেই আল্লাহ্র পরিকল্পনা কার্যকর হয়। যে জ্ঞানী, সেই শুধু পারে ঘটনার উর্দ্ধে উঠে হৃদয় দিয়ে অনুভবের মাধ্যমে আল্লাহ্র কৌশলী কার্যকে উপলব্ধি করতে। যার আছে অন্তর্দৃষ্টি বা মনের চোখ একমাত্র সেই পারে প্রকৃত ঘটনার তাৎপর্য বুঝতে।
আয়াতঃ 059.003
আল্লাহ যদি তাদের জন্যে নির্বাসন অবধারিত না করতেন, তবে তাদেরকে দুনিয়াতে শাস্তি দিতেন। আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আযাব।
And had it not been that Allâh had decreed exile for them, He would certainly have punished them in this world, and in the Hereafter theirs shall be the torment of the Fire.