০৩। অবিশ্বাসীরা বলে ৩৭৮৮, ” আমাদের নিকট [ কেয়ামতের ] ক্ষণ আসবে না।” বল, ” না , আমার প্রভুর শপথ ৩৭৮৯, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট উহা আসবেই।” যিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন; যার নিকট আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অণু পরিমাণ জিনিষও গোপন থাকে না। বরং তার থেকে ছোট অথবা বড় এমন কোন কিছুই নাই যা সুস্পষ্টরূপে কিতাবে লেখা নাই ৩৭৯০-
৩৭৮৮। উপরের আয়াত দুটি আমাদের এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মান্ডে কাফেরদের অবস্থানকে বুঝতে সাহায্য করে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে, আকাশ ও ভূমন্ডলে , আল্লাহ্র সকল সৃষ্টি পরস্পর সমন্বিত [Harmony] ভাবে সঙ্গতি রক্ষা করে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখে। প্রতিটি বস্তু বা প্রাণকে আল্লাহ্ এক বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। বস্তু বা প্রাণকে সেই বিশেষ উদ্দেশ্যের প্রতি নিবেদিত হওয়াই হচ্ছে তার চরম ও পরম পাওয়া , এবং তখনই প্রকৃতিতে সমন্বিত [Harmony] সঙ্গতি ও শান্তি রক্ষা পায়। যে বস্তু বা প্রাণ এই সঙ্গতি রক্ষা না করে, তার ধ্বংস অনিবার্য। কারণ প্রকৃতির সমন্বিত ক্ষমতার বাইরে কেউ যেতে অক্ষম। ঠিক সেই ভাবে আল্লাহ্ মানুষের আত্মাকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করার জন্য ও আল্লাহ্র প্রশংসা করার জন্য। এটাই হচ্ছে আত্মার স্বাভাবিক ধর্ম। আর এই প্রশংসা ও প্রার্থনা করতে হবে স্ব-ইচ্ছায়। কারণ একমাত্র মানুষকেই স্রষ্টা সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন – যা হচ্ছে মানুষের জন্য আল্লাহ্র আমানত। কাফের বা অবিশ্বাসীরা এই আমানতের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকে , তাদের অবিশ্বাসের দরুণ [ দেখুন ৩৩ : ৭২ আয়াত এবং টিকা সমূহ ]। অবশ্যই এর পরিণতিতে তাদের আত্মার ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহ্ বলেছেন তাদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর মর্মন্তুদ শাস্তি দেখুন আয়াত নং ৫ ]। মানুষের কোনও শক্তিই প্রাকৃতিক আইনের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারে না। জাগতিক , নৈতিক বা আধ্যাত্মিক সকল কর্মকান্ডই প্রাকৃতিক আইনের অধীন। আল্লাহ্ যাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন সেটাই হচ্ছে তার জন্য সেই প্রাকৃতিক আইন। প্রতিটি কাজেরই শেষ পরিণাম আছে। নিউটনের সেই বিখ্যাত সুত্র : Every action there is an equal and opposite reaction. আধ্যাত্মিক জগতের ক্ষেত্রেও এই সুত্র প্রযোজ্য যদিও আধ্যাত্মিক জগত আমাদের চোখে বস্তু জগতের ন্যায় দৃশ্যমান নয়।
৩৭৮৯। আল্লাহ্র শপথের মাধ্যমে কিয়ামতের অবশ্যম্ভবীতা সম্বন্ধে আল্লাহ্র কর্তৃত্বকে প্রকাশ করা হয়েছে এই আয়াতে; যিনি শেষ বিচারের মালিক।
৩৭৯০। “এমন কোন কিছুই নাই যা সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা নাই।” মানুষের অভিজ্ঞতাকে প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা জানি লিপিবদ্ধ বিবরণী, স্মরণ শক্তি থেকে অধিক নির্ভুল , বিশ্বাসযোগ্য এবং যদি তা সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হয় তবে তা চিরস্থায়ী। যদি লিপিকা সঠিক ভাবে লেখা হয়; এতে যদি দুর্বোধ্য কিছু না থাকে, তবে সময়ের ব্যবধানেও তা সঠিকভাবে পাঠোদ্ধার হয় এবং বক্তব্য সঠিকভাবে অনুধাবণ করা সম্ভব হয়, যার সম্বন্ধে কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকে না। মানুষের দোষত্রুটি মুক্ত করে আল্লাহ্র আইন এভাবেই লিপিবদ্ধ আছে সুস্পষ্ট কিতাবে। আর সে লেখা হচ্ছে নির্ভুল , যা অনন্তকাল স্থায়ী – কখনও মুছে যাবে না। ছোট-বড় , সব কিছু সেখানে স্থান লাভ করেছে এবং ভালো কাজের শেষ পরিণতি পুরষ্কার এবং মন্দ কাজের শাস্তি।
আয়াতঃ 034.004
তিনি পরিণামে যারা মুমিন ও সৎকর্ম পরায়ণ, তাদেরকে প্রতিদান দেবেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক।
That He may recompense those who believe (in the Oneness of Allâh Islâmic Monotheism) and do righteous good deeds. Those, theirs is forgiveness and Rizqun Karîm (generous provision, i.e. Paradise).
لِيَجْزِيَ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُوْلَئِكَ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
Liyajziya allatheena amanoo waAAamiloo alssalihati ola-ika lahum maghfiratun warizqun kareemun
YUSUFALI: That He may reward those who believe and work deeds of righteousness: for such is Forgiveness and a Sustenance Most Generous.”
PICKTHAL: That He may reward those who believe and do good works. For them is pardon and a rich provision.
SHAKIR: That He may reward those who believe and do good; these it is for whom is forgiveness and an honorable sustenance.
KHALIFA: Most certainly, He will reward those who believe and lead a righteous life. These have deserved forgiveness and a generous provision.
০৪। ইহা এজন্য যে, যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তিনি তাদের পুরষ্কৃত করতে পারেন। তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও উত্তম জীবনোপকরণ ৩৭৯১।
৩৭৯১। ‘রিজিক ‘ – শব্দটির অর্থ ব্যপক। সাধারণ ভাবে রিজিক অর্থ সেই সব খাদ্য যা শরীরের পুষ্টি সাধন করে, তাই আমরা বুঝে থাকি। তবে এর অর্থ সীমাবদ্ধ নয়। রিজিক অর্থ সেই সব জাগতিক বস্তু যা শরীরের পুষ্টি সাধন করে, আধ্যাত্মিক বস্তু যা আত্মার কল্যাণ সাধন করে।