হাদীস নং ৩৭০৮
উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………..উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুবাইর রা. বলেছেন, বদর যুদ্ধের দিন আমি উবায়দা ইবনে সাঈদ ইবনে আস রা. কে এমন অস্ত্রাবৃত অবস্থায় দেখলাম যে, তার দুচোখ ব্যতীত আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তাকে আবু যাতুল কারিশ বলে ডাকা হত। সে বলল, আমি আবু যাতুল কারিশ। (এ কথা শুনে) বর্শা দিয়ে আমি তার উপর হামলা করলাম এবং তার চোখ ফুড়ে দিলাম। সে তৎক্ষণাৎ মারা গেল।হিশাম বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে, যুবাইর রা. বলেছেন, তার (উবায়দা ইবনে সাঈদ ইবনে আসের) লাশের উপর পা রেখে বেশ বল প্রয়োগ করে ( তার চোখ থেকে) আমি বর্শাটি টেনে বের করলাম। এতে বর্শার উভয় প্রান্তে বাঁকা হয়ে যায়। উরওয়া রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইরের নিকট বর্শাটি চাইলে তিনি তা তাকে দিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর তিনি তা নিয়ে যান। এবং পরে আবু বকর রা. তা চাইলে তিনি তাকে বর্শা খানা দিয়ে দেন। আবু বকরের ইন্তিকালের পর উমর রা. তা চাইলেন। তিনি তাকে বর্শা খানা দিয়ে দিলেন। কিন্তু উমরের ইন্তিকালের পর যুবাইর রা. পুনরায় বর্শাটি নিয়ে যান। এরপর উসমান রা. তাঁর নিকট বর্শাখানা চাইলে তিনি উসমানকে তা দিয়ে দেন। তবে উসমানের শাহাদতের পর তা আলীর লোকজনের হস্তগত হওয়ার পর আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. তা চেয়ে যান। এরপর থেকে শহীদ হওয়া পর্যন্ত বর্শাখানা তাঁর নিকটই থাকে।
হাদীস নং ৩৭০৯
আবুল ইয়ামান রহ……….আবু ইদরীস আয়িযুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রহ. থেকে বর্ণিত যে, উবাদা ইবনে সামিত রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার হাতে বায়আত গ্রহণ কর। তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
হাদীস নং ৩৭১০
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী আবু হুযাইফা রা. এর আনসারী মহিলার আযাদকৃত গোলাম সালিমকে পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদকে পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি তাকে তার ভ্রাতুস্পুত্রী হিনদা বিনতে ওয়ালীদ ইবনে উতবার সাথে বিয়ে করিয়ে দেন। জাহিলিয়্যাতের আমলে কেউ কোন ব্যক্তিকে পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করলে লোকেরা তাকে তার (পালনকারী) প্রতিই সম্বোধন করত, এবং সে তার পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকারী হত। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাযিল করলেন, “তোমরা তাদেরকে ডাক তাদের পিতৃ পরিচয়ে”। এরপর (আবু হুযায়ফার স্ত্রী) সাহলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে হাদীসে বর্ণিত প্রকৃত ঘটনা বর্ণনা করলেন।
হাদীস নং ৩৭১১
আলী রহ………..রুবায়ই বিনতে মুআওয়িয রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমার বাসর রাতের পরদিন সকাল বেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসলেন এবং তুমি (খালিদ ইবনে যাকওয়ান) যেভাবে আমার কাছে বসে আছে ঠিক সে ভাবে আমার পাশে আমার বিছানায় এসে বসলেন। তখন কয়েকজন ছোট বালিকা দুফ বাজিয়ে বদর যুদ্ধে নিহত শহীদ পিতাদের প্রশংসা শ্লোক আবৃত্তি করছিল। পরিশেষে একটি বালিকা বলে উঠল, আমাদের মাঝে এমন একজন নবী আছেন, যিনি জানেন, আগামীকাল কি হবে। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরূপ কথা বলবে না, বরং পূর্বে যা বলতে ছিলে তাই বল।
হাদীস নং ৩৭১২
ইবরাহীম ইবনে মূসা ও ইসমাঈল রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী আবু তালহা রা. আমাকে জানিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ঘরে কুকুর কিংবা ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। ইবনে আব্বাসের মতে ছবি-এর অর্থ হচ্ছে প্রাণীর ছবি।
হাদীস নং ৩৭১৩
আবদান ও আহমাদ ইবনে সালিহ রহ………..আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের গনীমতের মাল থেকে আমার অংশে আমি একটি উট পেয়েছিলাম। ফায় থেকে প্রাপ্ত এক পঞ্চামাংশ থেকেও সেদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি উট প্রদান করেন। আমি যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমার সাথে বাসর রাত যাপন করার ইচ্ছা করলাম এবং বানু কায়নুকা গোত্রের একজন ইয়াহূদী স্বর্ণকারকে ঠিক করলাম যেন সে আমার সাথে যায়। (সেখান থেকে) আমরা ইযখির ঘাস সংগ্রহ করে নিয়ে আসব। পরে ঐ ঘাস স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রি করে তা আমি আমার বিয়ের ওয়ালিমায় খরচ করার ইচ্ছা করেছিলাম। (একদা ঐ কার্যে যাত্রা করার জন্য) আমি আমার উট দুটোর জন্য গদি, বস্তা এবং দড়ি ব্যবস্থা করছিলাম আর উট দুটো এক আনসারী ব্যক্তির ঘরের পার্শ্বে বসানো ছিল। আমার যা কিছু সংগ্রহ করার তা সংগ্রহ করে নিয়ে এসে দেখলাম উট দুটোর চুট কেটে ফেলা হয়েছে এবং সে দুটির বক্ষ বিদীর্ণ করে কলিজা খুলে নেওয়া হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে আমি আমার অশ্রু সংবরণ করতে পারলাম না। আমি (নিকটস্থ লোকদেরকে) জিজ্ঞাসা করলাম, এ কাজ কে করেছে? তারা বললেন, আবদুল মুত্তালিবের পুত্র হামযা এ কাজ করেছেন। এখন তিনি এ ঘরে আনসারদের কিছ মদ্যপায়ীদের সাথে মদপান করছেন। সেখানে আছে একদল গায়িকা ও কতিপয় সঙ্গী সাথী।(মদ্যপানের সময়) গায়িকা ও তার সঙ্গীগণ গানের ভেতর বলেছিল, হে হামযা ! মোটা উষ্ট্রদ্বয়ের চুট দুটো কেটে নিল আর তাদের পেট চিরে কলীজা বের করে নিয়ে আসল। আলী রা. বলেন, তখন আমি পথ চলতে চলতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট চলে গেলাম। তখন তাঁর নিকট যায়েদ ইবনে হারিসা রা. উপস্থিত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে দেখা মাত্রই) আমি যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি তা বুঝে ফেললেন। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি হয়েছে ? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আজকের মত বেদনাদায়ক ঘটনা আমি কখনো দেখিনি। হামযা আমার উট দুটোর উপর খুব যুলুম করেছেন, তিনি উট দুটোর চুট কেটে ফেলেছেন এবং বক্ষ বিদীর্ণ করেছেন। এখন তিনি একটি ঘরে একদল মদ্যপায়ীদের সাথে অবস্থান করছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদরখানা চেয়ে নিলেন এবং তা গায়ে দিয়ে হেটে রওয়ানা হলেন। (আলী বলেন) এরপর আমি এবং যায়েদ ইবনে হারিস রা. তাকে অনুসরণ করলাম। (হাটতে হাটতে) তিনি যে ঘরে অবস্থান করছিলেন সে ঘরের কাছে পৌঁছে তার নিকট অনুমতি চাইলেন। তাকে অনুমতি দেয়া হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযাকে তার কৃতকর্মের জন্য ভৎসনা করতে শুরু করলেন। হামযা তখন নেশাগ্রস্ত। চোক দুটো তার লাল। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন এবং দৃষ্টি উপর দিকে উঠিয়ে তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাটুর দিকে তাকালেন। এরপর দুষ্টি আরো একটু উপর দিকে উঠিয়ে তিনি তাঁর চেহারার প্রতি তাকালেন। এরপর হামযা বললেন, তোমরা তো আমার পিতার দাস। (এ কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝলেন যে, তিনি এখন নেশাগ্রস্ত। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনের দিকে হটে (সেখান থেকে) বেরিয়ে পড়লেন, আমরাও তাঁর সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লাম।