হাদীস নং ৩৬৫৫
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবদুর রাহমান ইবনে মুতঈম রা. বলেন, আমার ব্যবসার একজন অংশীদার কিছু দেরহাম (রৌপ্য মুদ্রা) বাজারে নিয়ে বাকীতে বিক্রি করে। আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ। এরূপ ক্রয়-বিক্রয় কি জায়েজ? তিনিও বললেন, সুবহানাল্লাহ ! আল্লাহর কসম, আমি ইহা খোলা বাজারে বিক্রি করেছি তাতে কেউ তা আপত্তি করেননি। এরপর আমি বারা ইবনে আযিব রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন তখন আমরা এরূপ বাকীতে ক্রয়-বিক্রয় করতাম; তখন তিনি বললেন, যদি নগদ হয় তবে তাকে কোন বাঁধা নেই। আর যদি ধারে হয় তবে জায়েয হবে না। তুমি যায়েদ ইবনে আরকাম রা.-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞাসা করে নাও। কেননা তিনি আমাদের মধ্যে একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। এরপর আমি যায়েদ ইবনে আরকামকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনিও অনুরূপ বললেন। সুফিয়ান রহ. রাবী হাদীসটি কখনও এরূপ বর্ণনা করেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আমাদের নিকট আসনে, তখন আমরা হজ্জের মৌসুম পর্যন্ত মিয়াদে বাকীতে ক্রয়-বিক্রয় করতাম।
হাদীস নং ৩৬৫৬
মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………..আবু হুরায়রা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যদি আমার উপর দশজন ইয়াহূদী ঈমান আনত তবে সমগ্র ইয়াহূদী সম্প্রদায়ই ঈমান গ্রহণ করত।
হাদীস নং ৩৬৫৭
আহমদ অথবা মুহাম্মদ ইবনে উবায়দুল্লাহ আল-গুদনী রহ………..আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের কিছু লোক আশুরা দিবসকে অত্যন্ত সম্মান করত এবং সেদিন তারা সাওম পালন করত। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইয়াহূদীদের অপেক্ষা ঐ দিন সাওম পালন করার আমরা অধিক হকদার। তারপর তিনি সকলকে সাওম পালন করার আদেশ দিলেন।
হাদীস নং ৩৬৫৮
যিয়াদ ইবনে আইয়্যূব রহ………..ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন দেখতে পেলেন ইয়াহূদীগণ আশুরা দিবসে সাওম দিবসে সাওম পালন করে। তাদেরকে সাওম পালনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলল, এদিনই আল্লাহ তায়ালা মূসা আ. ও বনী ইসরাঈলকে ফিরাউনের উপর বিজয় দান করেছিলেন। তাই আমরা ঐ দিনের সম্মানার্থে সাওম পালন করে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের চাইতে আমরা মূসা আ.-এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি সাওম পালনের আদেশ দেন।
হাদীস নং ৩৬৫৯
আবদান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুলে সিঁথি না কেটে সোজা পিছনের দিকে ছেড়ে দিতেন। আর মুশরিকগণ তাদের চুলে সিঁথি কাটত। আহলে কিতাব সিঁথি কাত না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন আদেশ না আসা পর্যন্ত আহলে কিতাবের অনুকরণকে পছন্দ করতেন। তারপর (আদেশ আসলে) তাঁর মাথায় সিঁথি কাটলেন।
হাদীস নং ৩৬৬০
যিয়াদ ইবনে আইয়্যূব রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এরাই তো সেই আহলে কিতাব যারা (তাওরাত ও কুরআনকে) ভাগাভাগি করে ফেলেছে, কিছু অংশের উপর ঈমান এনেছে এবং কিছু অংশকে অস্বীকার করেছে।
হাদীস নং ৩৬৬১
হাসান ইবনে উমর ইবনে শাকীক রহ………..সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত, আমি (অন্যায়ভাবে) দশজনের অধিক মালিকের হাত বদল হয়েছি।
হাদীস নং ৩৬৬২
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু উসমান রা. বলেন, তুমি সালমান রা.-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি (পারস্যের) রাম হুরমুয শহরের অধিবাসী।
হাদীস নং ৩৬৬৩
হাসান ইবনে মুদরিক রহ………..সালমান ফারসী রা. বলেন, ঈসা এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের মধ্যে ছয়শ বছরের ব্যবধান ছিল।
মাগাযী (যুদ্ধাভিযান) অধ্যায় (৩৬৬৪-৩৭৪৫)
হাদীস নং ৩৬৬৪
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যায়েদ ইবনে আরকামের পাশে ছিলাম। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়ছি যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, উনিশটি। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হল আপনি তাঁর সাথে কতটি যুদ্ধে শরীক ছিলেন? তিনি বললেন, সতেরটিতে। (আবু ইসহাক বলেন) আমি বললাম, এসব যুদ্ধের মধ্যে সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল কোনটি? তিনি বললেন, উশায়রা বা উসায়রা। (বর্ণনাকারী বলেন) বিষয়টি আমি কাদাতা রা.-এর কাছে আলোচনা করলে তিনিও বললেন, উশায়রা (এর যুদ্ধই সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল)।
হাদীস নং ৩৬৬৫
আহ্মাদ ইব্ন উসমান(রহঃ) সা‘দ ইব্ন মু‘ইয়ায (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন। তাঁর ও উমাইয়া ইব্ন খালফের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। উমাইয়া মদিনায় আসলে সা‘দ ইব্ন মু’আযের অতিথি হত এবং সা‘দ (রাঃ) মক্কায় গেলে উমাইয়ার আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন। রাসূল (সাঃ) মদিনায় হিজতর করার পর একদা সা‘দ (রাঃ) উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা গেলেন এবং উমাইয়ার বাড়ীতে অবস্থান করলেন। তিনি উমাইয়াকে বললেন, আমাকে এমন একটি নিরিবিলি সময়ের কথা বল যখন আমি (শান্তভাবে) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারব। তাই দ্বি-প্রহরের সময় একদিন উমাইয়া তাঁকে সাথে নিয়ে বের হল, যখন তাঁদের সাথে আবূ জেহেলের দেখা হল। তখন সে ( আবূ জেহেল উমাইয়াকে লক্ষ্য করে) বলল, হে আবূ সাফ্ওয়ান! তোমার সাথে ইনি কে? সে বলল, ইনি সা’দ (ইব্ন মু’আয)। তখন আবূ জেহেল তাকে (সা’দ ইব্ন মু‘আযকে) লক্ষ্য করে বলল, আমি তোমাকে নিঃশঙ্ক চিত্তে ও নিরাপদে মক্কায়(বায়তুল্লাহর)তাওয়াফ করতে দেখেছি অথচ তোমরা ধর্মত্যাগীদের আশ্রয় দান করেছ এবং তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে চলেছ। আল্লাহর কসম, (এ মুহূর্তে) তুমি আবূ সাফওয়ানের (উমাইয়া) সঙ্গে না থাকলে তোমার পরিজনদের কাছে নিরাপদে ফিরে যেতে পারতে না। সা’দ (রাঃ) এর চেয়েও অধিক উচ্চস্বরে বললেন, আল্লাহর কসম, তুমি এতে যদি আমাকে বাঁধা দাও তাহলে আমিও এমন একটি ব্যাপারে তোমাকে বাঁধা দেব যা তোমার জন্য এর চেয়েও ভীষণ কঠিন হবে। আর তা হল, মদিনার উপকন্ঠ দিয়ে তোমার(ব্যবসা বাণিজ্যের বৃহত্তম কেন্দ্র সিরিয়ার) যাতায়তের রাস্তা (বন্ধ করে দেব)। তখন উমাইয়া তাকে বলল, হে সা’দ (রাঃ) এ উপত্যাকার প্রধান সর্দার আবূল হাকওমের( আবূ জেহেল) সাথে এরূপ উচ্চস্বরে কথা বলিও না। তখন সা’দ (রাঃ) বললেন, হে উমাইয়া! তুমি চুপ কর। আল্লাহর কসম, আমি রাসুল্লুল্লাহ -কে বলতে শুনেছি যে, তারা তোমার হত্যাকারী। উমাইয়া জিজ্ঞাসা করল, মক্কার বুকে? সা’দ (রাঃ) বললেন, তা জানিনা। উমাইয়া এতে ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। এরপর উমাইয়া বাড়ী গিয়ে তার(স্ত্রীকে ডেকে) বলল, হে উম্মে সাফওয়ান সা’দ আমার সম্পর্কে কি বলছে জানো? সে বলল, সা’দ তোমাকে কি বলেছে? উমাইয়া বলল, সে বলেছে যে, রাসূল (সাঃ) তাদেরকে জানিয়েছে যে, তারা আমার হত্যাকারী। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি মক্কায়? সে(সা’দ) বলল, তা আমি জানিনা। এরপর উমাইয়া বলল, আল্লাহর কসম, আমি কখনো মক্কা থেকে বের হব না। কিন্তু বদর যুদ্ধের দিন সমাগত হলে আবূ জেহেল সর্বস্তরের জনসাধারণকে সদলবলে বের হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলল, তোমরা তোমাদের কাফেলা রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হও। উমাইয়া(মক্কা ছেড়ে) বের হওয়াকে অপছন্দ করলে আবূ জেহেল এসে তাকে বলল, হে আবূ সাফওয়ান। তুমি এ উপত্যাকার আধিবাসিদের(একজন) নেতা, তাই লোকেরা যখন দেখবে(তুমি যুদ্ধ যাত্রায়) পেছনে বয়ে গেছ তখন তারাও তোমার সাথে এ বলে পেছনেই থেকে যাবে। এ বলে আবূ জেহেল তার সাথে পীড়াপীড়ি করতে থাকলে সে বলল, তুমি যেহেতু আমাকে বাধ্য করে ফেলেছ তাই খোদার কসম অবশ্যই আমি এমন একটি উষ্ট্র ক্রয় করব যা মক্কার সবচাইতে ভাল। এরপর উমাইয়া(তার স্ত্রীকে) বলল, হে উম্মে সাফওয়ান; আমার সফরের ব্যবস্থা কর। তখন তার স্ত্রী তাকে বলল, হে আবূ সাফওয়ান! তোমার মদিনাবাসী ভাই যা বলেছিলেন তা তুমি ভূলে গিয়েছ কি? সে বলল, না। আমি তাদের সাথে কিছু দূর যেতে চাই মাত্র। রওয়ানা হওয়ার পর রাস্তায় যে মন্যিলেই উমাইয়া কিছুক্ষণ অবস্থান করেছে সেখানেই সে তার উট বেঁধে রেখেছে, গোটা পথেই এরূপ সে করল পরিশেষে বদর প্রান্তরে আল্লাহর হুকুমে সে মারা গেল।