হাদীস নং ৩৬৪৯
ইবরাহীম ইবনে হামযা রহ………উমর ইবনে আবদুল আযীয রহ. হতে বর্ণিত, তিনি সাইব ইবনে উখতে নামর রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি (মুহাজিরদের হজ্জ সম্পাদনান্তে) মক্কায় অবস্থান সম্পর্কে কি শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি আলা ইবনুল হাযরামী রা.-এর নিকট শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুহাজিরদের জন্য তাওয়াফে সদর আদায় করার পর তিন দিন মক্কায় অবস্থান করার অনুমতি রয়েছে।
হাদীস নং ৩৬৫০
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………..সাহল ইবনে সাদ রা. বর্ণনা করেন, লোকেরা বছর গণনা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুওয়াত লাভের দিন থেকে করেনি এবং তাঁর ওফাত দিবস থেকেও করে দিন বরং তাঁর মদীনায় হিজরত থেকে বছর গণনা করা হয়েছে।
হাদীস নং ৩৬৫১
মুসাদ্দাদ রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় দু’দু রাকআত করে সালাত ফরয করা হয়েছিল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করলেন, ঐ সময় সালাত চার রাকআত করে দেয়া হয়। এবং সফর কালে পূর্বাবস্থায় অর্থাৎ দু’রাকআত বহাল রাখা হয়। আবদুর রাজ্জাক রহ. মামর সূত্রে রেওয়ায়াত বর্ণনায় যাদীদ ইবনে যুবাইর-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং ৩৬৫২
ইয়াহইয়া ইবনে কাযআ রহ……….সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. বলেন, বিদায় হজ্জের বছর আমি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর নিকটবর্তী হয়ে পড়ি তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার রোগ কি পর্যায় পৌঁছেছে তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আমি একজন বিত্তবান লোক। আমার ওয়ারিশ হচ্ছে একটি মাত্র কন্যা। আমি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ আল্লাহর রাস্তায় সাদকা করে দিব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক? তিনি বললেন, হে সাদ, এক তৃতীয়াংশ দান কর। তৃতীয়াংশই অনেক বেশী। তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিদেরকে বিত্তবান রেখে যাও ইহাই উত্তম, এর চাইতে যে তুমি তাদেরকে নিঃস্ব রেখে গেলে যে তারা অন্যের নিকট হাত পেতে ভিক্ষা করে। আহমদ ইবনে ইউসুফ রহ………..ইবরাহীম রহ. থেকে এ কথাগুলোও বর্ণনা করেছেন। তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের সম্পদশালী রেখে যাবে আর তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছু করবে, আল্লাহ তার প্রতিদান তোমাকে দেবে। তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমাটি তুলে দিবে এর প্রতিদানও আল্লাহর তোমাকে দেবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার সাথী সঙ্গীদের থেকে পিছনে পড়ে থাকব? তিনি বললেন, তুমি কখনই পিছনে পড়ে থাকবে না আর এ অবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যে কোন নেক আমল করবে তাহলে তোমার সম্মান ও মর্যাদা আরো বেড়ে যাবে। সম্ভবতঃ তুমি পিছনে থেকে যাবে এবং এর ফলে তোমার দ্বারা অনেক মানুষ উপকৃত এবং অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। হে আল্লাহ ! আমার সাহাবীদের হিজরতকে অক্ষুণ্ন রাখুন। তাদেরকে পশ্চাৎমুখী করে ফিরিয়ে নিবেন না। কিন্তু অভাবগ্রস্ত সাদ ইবনে খাওলার মক্কায় মৃত্যুর কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। আহমদ ইবনে ইউনুস রহ. ও মূসা রহ. ইব্রাহীম সুত্রে বর্ণনা করেছেন, أن تذر ورثتك তোমার উত্তরাধিকারীদের রেখে যাওয়া……।
হাদীস নং ৩৬৫৩
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা. যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সাদ ইবনে রাবী আনসারী রা-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দিলেন। সাদ রা. তার সম্পত্তি ভাগ করে অর্ধেক সম্পত্তি এবং দু’জন স্ত্রীর যে কোন একজন নিয়ে যাওয়ার জন্য আবদুর রাহমানকে অনুরোধ করলেন। তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ আপনার পরিবাবর্গ ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন। আমাকে স্থানীয় বাজারের রাস্তাটি দেখিয়ে দিন। তিনি (বাজারে গিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করলেন এবং) মুনাফা স্বরূপ কিছু ঘি ও পনীর লাভ করলেন। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত হল। তিনি তখন তার গায়ে ও কাপড়ে হলুদ রং-এর চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, হে আবদুর রাহমান ব্যাপার কি? তিনি বললেন,আমি একজন আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তাকে কি পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি বললেন, তাকে নাওয়াত (খেজুর বিচি) পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা করে নাও।
হাদীস নং ৩৬৫৪
হামীদ ইবনে উমর রহ…………আনাস রা. বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা.-এর নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মদীনায় আগমনের সংবাদ পৌঁছলে তিনি এসে তাকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করছি। এগুলোর সঠিক উত্তর নবী ব্যতীত অন্য কেউ জানেনা। ১. কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত ও লক্ষণ কি? ২. জান্নাতবাসীদের সর্বপ্রথম আহার্য কি? ৩. কি কারণে সন্তান আকৃতিতে কখনও পিতার অনুরূপ কখনো বা মায়ের অনুরূপ হয়? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়গুলো সম্পর্কে এই মাত্র জিবরাঈল আ. আমাকে জানিয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. এ কথা শুনে বললেন, তিনিই ফেরেশতাদের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ১. কিয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার সর্বপ্রথম লক্ষণ হল লেলীহান আগুন যা মানুষকে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে ধাওয়া করে নিয়ে যাবে এবং সবাইকে সমবেত করবে। ২. সর্বপ্রথম আহার্য যা জান্নাতবাসী ভক্ষণ করবে তা হল মাছের কলীজার অতিরিক্ত অংশ ৩. যদি নারীর আগে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান পিতার অনুরূপ হয় আর যদি পুরুষের আগে নারীর বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান মায়ের অনুরূপ হয়। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই এবং নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহূদীগণ এমন একটি সম্প্রদায় যারা অন্যের কুৎসা রটনায় অত্যন্ত পটু। আমার ইসলাম গ্রহণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে আমার অবস্থা সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডাকলেন, তারা হাযির হল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মাঝে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির পুত্র। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা বলত, যদি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ইসলাম গ্রহণ করে তবে কেমন হবে? তোমরা তখন কি করবে? তারা বলল, আল্লাহ তাকে একাজ থেকে রক্ষা করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার এ কথাটি বললেন, তারাও পূর্বরূপ উত্তর দিল। তখন আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বেরিয়ে আসলেন, এবং বললেন, أشهد أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله ইহা শুনে ইয়াহূদীগণ বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে মন্দ লোক এবং মন্দ লোকের ছেলে। অতঃপর তারা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে আরো অনেক কথাবার্তা বলল। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি ইহাই আশংকা করেছিলাম।