হাদীস নং ৩৬৪৩
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…………উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী রহ. বলেন, আমি উসমান রা.-এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি আমার বক্তব্য শুনার পর তাশাহহুদ পাঠের পর বললেন, আম্মা বাদু। আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে সত্যসহ প্রেরণ করা হয়েছিল তৎপ্রতি ঈমান এনেছিলেন আমিও তাদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম। উভয় হিজরতে (হাবশায় ও মদীনায়) অংশ গ্রহণ করেছি। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামাতা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি তাঁর হাতে বায়আত করেছি, আল্লাহর কসম আমি কখনো তাঁর নাফরমানী করিনি তাঁর সাথে প্রতারণামূলক কোন কিছু করিনি। এমতাবস্থায় তাঁর ওফাত হয়েছে। ইসহাক কালবী শুয়ায়বের অনুসরণ করতঃ যুহরী সুত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ৩৬৪৪
ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, যে বছর উমর রা. শেষ হজ্জ আদায় করেন সে বছর আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা. মিনায় তাঁর পরিবারে কাছে ফিরে আসেন এবং সেখানে আমার সাথে তাঁর সাক্ষাত ঘটে। (উমর রা. লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে চাইলে) আবদুর রাহমান রা. বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, হজ্জ মওসুমে বুদ্ধিমান ও নির্বোধ সব রকমের মানুষ একত্রিত হয়। তাই আমার বিবেচনায় আপনি ভাষণ দান থেকে বিরত থাকুন। এবং মদীনা গমন করে ভাষণ দান করুন। মদীনা হল দারুল হিজরত, (হিজরতের স্থান) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতের পবিত্র ভূমি। সেখানে আপনি অনেক জ্ঞানী, গুণী ও বুদ্ধিমান লোককে একান্তে পাবেন। উমর রা. বললেন, মদীনায় গিয়েই সর্বপ্রথম আমার ভাষণটি অবশ্যই প্রদান করব।
হাদীস নং ৩৬৪৫
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………….খারিজা ইবনে যায়েদ ইবনে সাবিত রা. বলেন, উম্মুল আলা রা. নামক জনৈক আনসারী মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে বায়আত করেন। তিনি বর্ণনা করেন, যখন মুহাজিরদের অবস্থানের ব্যাপারে আনসারদের মধ্যে লটারী অনুষ্ঠিত হল তখন উসমান ইবনে মাযউনের বসবাস আমাদে ভাগে পড়ল। উম্মুল আলা রা. বলেন, এরপর তিনি আমাদের এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তার সেবা শুশ্রূষা করলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর ওফাত হয়ে গেল। আমরা কাফনের কাপড় পরিয়ে দিলাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এখানে তাশরীফ আনলেন। ঐ সময় আমি উসমান রা.-কে লক্ষ্য করে বলছিলাম। হে আবু সায়িব ! তোমার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। তোমার ব্যাপারে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেমন করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন? আমি বললাম, আমার মাত-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তো জানিনা। (তবে তাকে যদি সম্মানিত করা না হয়) তবে কাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম, উসমানের মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম, আমি তার সম্বন্ধে কল্যাণের আশা পোষণ করছি। আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্ত্বেও জানিনা আল্লাহর তাঁর সাথে কি ব্যবহার করবেন। উম্মুল আলা রা. বলেন, আল্লাহর কসম, আমি এ কথা শুনার পর আর কাউকে (দৃঢ়তার সহিত) পূত-পবিত্র বলব না। উম্মুল আলা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ কথা আমাকে চিন্তিত করল। এরপর আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে, উসমান ইবনে মাযউন রা. এর জন্য একটি নহর প্রবাহিত রয়েছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে আমার স্বপ্নটি ব্যক্ত করলে তিনি বললেন, এ হচ্ছে তার (নেক) আমল।
হাদীস নং ৩৬৪৬
উবায়দুল্লাহ ইবনে সাঈদ রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বুআস যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ ছিল যা আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুকূলে তাঁর হিজরতের পূর্বেই সংঘটিত করিয়েছিলেন, যা তাদের (মদীনাবাসীদের) ইসলাম গ্রহণের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন তাদের গোত্রগুলো ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং তাদের অনেক নেতৃবৃন্দ নিহত হয়েছিল।
হাদীস নং ৩৬৪৭
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ…………আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, আবু বকর রা. ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আযহার দিনে তাকে দেখতে এলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রা.-এর গৃহে অবস্থান করছিলেন। ঐ সময় দুজন অল্প বয়সী বালিকা এ কবিতাটি উচ্চস্বরে আবৃত্তি করছিল যা আনসারগণ বুআস যুদ্ধে আবৃত্তি করেছিল। তখন আবু বকর রা. দু’বার বললেন, এ হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু বকর, তাদেরকে ছেড়ে দাও। কেননা প্রত্যেক সম্প্রদায়েই ঈদ রয়েছে আর আজকের দিন হল আমাদের ঈদের দিন।
হাদীস নং ৩৬৪৮
মুসাদ্দাদ ও ইসহাক ইবনে মানসুর রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন তখন মদীনার উচু এলাকার আমর ইবনে আউফ গোত্রে অবস্থান করলেন। আনাস রা. বলেন, সেখানে তিনি চৌদ্দ দিন অবস্থান করেন। এরপর তিনি বানু নাজ্জারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিকট সংবাদ পাঠালেন। তারা সকলেই তরবারী ঝুলিয়ে উপস্থিত হলেন। আনাস রা. বলেন, সেই দৃশ্য এখনো যেন আমি দেখতে পাচ্ছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. তাঁর পিছনে উপবিষ্ট রয়েছেন, আর বনু নাজ্জারের প্রধানগণ রয়েছেন তাদের পার্শ্বে। অবশেষে আবু আইয়্যূব রা.-এর বাড়ীর চত্বরে উটটি বসে পড়ল। রাবী বলেন, ঐ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানেই সালাতরে সময় হত সেখানেই সালাত আদায় করে নিতেন। এবং তিনি কোন কোন সময় ছাগল-ভেড়ার খোয়াড়েও সালাত সালাত আদায় করতেন। রাবী বলেন, তারপর তিনি মসজিদ নির্মাণের আদেশ দিলেন। তিনি বনী নাজ্জারের নেতাদের ডাকলেন এবং তারা এলে তিনি বললেন, তোমাদের এ বাগানটি আমার নিকট বিক্রি করে দাও। তারা বলল, আল্লাহর কসম, আমরা বিক্রি করব না। আল্লাহর কসম-এর বিনিময় আল্লাহর নিকট চাই। রাবী বলেন, এই স্থানে তখন ছিল মুশরিকদের পুরাতন কবর, বাড়ী ঘরের কিছু ভগ্নাবশেষ কয়েকটি খেজুরের গাছ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশে মুশরিকদের কবরগুলি নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হল। অগ্নাবশেষ সমতল করা হল, খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলা হল। রাবী বলে, কর্তিত খেজুর গাছের কাণ্ডগুলি মসজিদের কেবলার দিকে এর খুটি হিসাবে এক লাইনে স্থাপন করা হল এবং খুটির ফাঁকা স্থানে রাখা হল পাথর। তখন সাহবায়ে কেরাম পাথর বহন করে আনছিলেন এবং ছন্দ যুক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করছিলেন: আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদের সঙ্গে ছিলেন এবং বলছেন, হে আল্লাহ ! প্রকৃত কল্যাণ একমাত্র আখিরাতের কল্যাণই। হে আল্লাহ ! তুমি মুহাজির ও আনসারদের সাহয্য কর।