হাদীস নং ৩১০৪
ইসহাক ইবনে নাসর রহ…………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক যিয়াফতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁর সামনে (রান্না করা) ছাগলের বাহু পেশ করা হল, এটা তাঁর কাছে পছন্দীয় ছিল। তিনি সেখান থেকে এক টুকরা খেলেন এবং বললেন, আমি কিয়ামতের দিন সমগ্র মানব জাতির সরদার হব। তোমরা কি জান? আল্লাহ কিভাবে (কিয়ামতের দিন) একই সমতলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্রিত করবেন। যেন একজন দর্শক তাদের সবাইকে দেখতে পায় এবং একজন আহবানকারীর ডাক সবার কাছে পৌঁছায়। সূর্য তাদের অতি নিকটে এসে যাবে। তখন কোন কোন মানুষ বলবে, তোমরা কি লক্ষ্য করনি, তোমরা কি অবস্থায় আছ এবং কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছ। তোমরা কি এমন ব্যক্তিকে খুজে বের করবে না, যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের রবের নিকট সুপারিশ করবেন? তখন কিছু লোক বলবে, তোমাদের আদি পিতা আদম আ. আছেন। (চল তাঁর কাছে যাই)। তখন সকলে তাঁর কাছে যাবে এবং বলবে হে আদম! আপনি সমস্ত মানব জাতির পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে রূহ আপনার মধ্যে ফুঁকেছেন। তিনি ফেরেশতাদেরকে (আপনার সম্মানের) নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সকলে আপনাকে সিজাদও করেছেন এবং তিনি আপনাকে জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছেন। আপনি কি আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করবেন না? আপনি দেখেন না, আমরা কি অবস্থায় আছি এবং কি কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি? তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজ আমাকে রাগন্বিত হয়েছেন, এর পূর্বে এমন রাগান্বিত হননি আর পরেও এমন রাগান্বিত হবেন না। আর তিনি আমাকে বৃক্ষটি থেকে (ফল খেতে) নিষেধ করেছিলেন। তখন আমি ভূল করেছি। এখন আমি নিজের চিন্তায়ই ব্যস্ত। তোমরা আমি ব্যতীত অন্যের কাছে যাও। তোমরা নূহের কাছে চলে যাও। তখন তারা নূহ আ. এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে নূহ ! পৃথিবীবাসীদের নিকট আপনিই প্রথম রাসূল এবং আল্লাহ আপনার নাম রেখেছেন কৃতজ্ঞ বান্দ। আপনি কি লক্ষ করছেন না, আমরা কি ভয়াবহ অবস্থায় পড়ে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কতইনা দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হয়ে আছি? আপনি কি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করবেন না? তখন তিনি বললেন, আমার রব আজ এমন রাগান্বিত হয়ে আছেন, যা ইতিপূর্বে হন নাই এবং এমন রাগান্বিত পরেও হবেন না। এখন আমি নিজের চিন্তায়ই ব্যস্ত। তোমরা নবী (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর কাছে চলে যাও। তখন তারা আমার কাছে আসবে আর আমি আরশের নীচে সিজদায় পড়ে যাব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনার মাথা উঠান এবং সুপারিশ করুন। আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে আর আপনি যা চান, আপনাকে তাই দেওয়া হবে। মুহাম্মদ ইবনে উবাইদ রহ. বলেন, হাদীসের সকল অংশ আমি মুখস্থ করতে পারিনি।
হাদীস নং ৩১০৫
নাসর ইবনে আলী রহ……………আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল ক্বারীদের ক্বিরাতের ন্যায় فهل من مدكر তিলাওয়াত করেছেন।
হাদীস নং ৩১০৬
আবদান ও আহমাদ ইবনে সালিহ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু যার রা. হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (লাইলাতুল মিরাজে) আমার ঘরের ছাদ উন্মক্ত করা হয়েছিল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। তারপর জিবরাঈল আ. অবতরণ করলেন এবং আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। এরপর তিনি যমযমের পানি দ্বারা তা ধুইলেন। এরপর হিকমত ও ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ একখানা সোনার তশতরি নিয়ে আসেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। তারপর আমার বক্ষকে পূর্বের ন্যায় মিলিয়ে দিলেন। এবার তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিলেন। এরপর যখন দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে পৌঁছলেন, তখন জিবরাঈল আ. আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে জবাব দিলেন, আমি জিবরাঈল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সাথে কি আর কেউ আছেন? তিনি বললেন, আমার সাথে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন। দ্বাররক্ষী জিজ্ঞাসা করলেন, তাকে কি ডাকা হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। তারপর দরজা খোলা হল। যখন আমরা আকাশের উপরে আরোহণ করলাম, হঠাৎ দেখলাম এক ব্যক্তি যার ডানে একদল লোক আর তাঁর বামেও একদল লো। যখন তিনি তাঁর ডাক দিকে তাকান তখন হাসতে থাকেন আর যখন তাঁর বাম দিকে তাকান তখন কাঁদতে থাকেন। (তিনি আমাকে দেখে) বললেন, মারহাবা! নেক নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিবরাঈল ! ইনি কে তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম আ. আর তাঁর ডানের ও বামের এ লোকগুলো হল তাঁর সন্তান (আত্ম সমূহ) এদের মধ্যে ডানদিকের লোকগুলো হল জান্নাতী আর বামদিকের লোকগুলো হল জাহান্নামী। অতএব যখন তিনি ডান দিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম দিকে তাকান তখন কাঁদেন। এরপর আমাকে নিয়ে জিবরাঈল আ. আরো উপরে উঠলেন। এমনকি দ্বিতীয় আকাশের দ্বারে এসে গেলেন। তখন তিনি এ আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! দ্বাররক্ষী তাকে প্রথম আকাশের দ্বাররক্ষী যেরূপ বলেছিল, অনুরূপ বলল। তারপর তিনি দরজা খুলে দিলেন। আনাস রা. বলেন, এরপর আবু যার রা. উল্লেখ করেছেন, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশসমূহে ইদরীস, মূসা, ঈসা ও ইবরাহীম আ.-এর সাক্ষাত পেয়েছেন। তাদের কার অবস্থান কোন আকাশে আমার কাছে তা বর্ণনা করেননি। তবে তিনি এটা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে আদম আ.-কে এবং ষষ্ঠ আকাশে ইবরাহীম আ.-কে দেখতে পেয়েছেন। আনাস রা. বলেন, জিবরাঈল আ. যখন (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ) ইদরীস আ.-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি (ইদরীস আ.) বলেছিলেন, নেক নবী ও নেক ভাই। আপনাকে মারহাবা! আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে তিনি জবাব দিলেন, ইনি ইদরীস আ.। এরপর মূসা আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! নেক নবী ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে তিনি জবাব দিলেন, ইনি মূসা আ.। তারপর ঈসা আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! নেক নবী ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে তিনি জবাব দিলেন, ইনি ঈসা আ.। তারপর ইবরাহীম আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! নেক নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে তিনি জবাব দিলেন, ইনি ইবরাহীম আ.। ইবনে শিহাব রহ. বলেন, আমাকে ইবনে হাযম রহ. জানিয়েছেন যে, ইবনে আব্বাস ও আবু হাইয়্যা আনসারী রা. বলতেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এরপর জিবরাঈল আ. বললেন, ঊর্ধ্বে নিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আমি একটি সমতল স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখান থেকে কলমসমূহের খসখস শব্দ শুনছিলাম। ইবনে হাযম রহ. এবং আনাস ইবনে মালিক রা. বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন আল্লাহ আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। এরপর ইম এ নির্দেশ নিয়ে ফিরে চললাম। যখন মূসা আ.-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার রব আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, পুনরায় আপনার রবের কাছে ফিরে যান (এবং তা কমাবার জন্য আবেদন করুন) কেননা আপনার উম্মতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। তখন ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার জন্য আবেদন করলাম। তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা আ.-এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আপনার রবের কাছে গিয়ে পুনরায় কমাবার আবেদন করুন এবং তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্বের অনুরূপ কথা আবার উল্লেখ করলেন। এবার তিনি (আল্লাহ) তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা আ.-এর কাছে আসলাম এবং তিনি পূর্বের মত বললেন। আমি তা করলাম। তখন আল্লাহ তার এক অংশ মাফ করে দিলেন। আমি পুনরায় মূসা আ.-এর কাছে আসলাম এবং তাকে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আরো কমাবার জন্য আরয করুন। কেননা আপনার উম্মতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। আমি আবার গিয়ে আমার রবের নিকট তা কমাবার আবেদন করলাম। তিনি বললেন, এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাকী রইল। আর তা সাওয়াবের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান হবে। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। তারপর আমি মূসা আ.-এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি এবারও বললেন, আপনার রবের কাছে গিয়ে আবেদন করুন। আমি বললাম, এবার আমার রবের সম্মুখীন হতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এরপর জিবরাঈল আ. চললেন এবং অবশেষে আমাকে সাথে করে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। দেখলাম তা এমন অপরূপ রঙে পরিপূর্ণ, যা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। এরপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হল। দেখলাম এর ইট হচ্ছে মোতির তৈরী আর তার মাটি হচ্ছে মিসক বা কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধযুক্ত।