হাদীস নং ৩২৬১
আবুল ইয়ামান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বরের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় পূর্ব দিকে ইশারা করে বলতে শুনেছি, সাবধান! ফিতনা ফাসাদের উৎপত্তি ঐদিক থেকেই হবে এবং ঐদিক থেকেই শয়তানের শিং-এর উদয় হবে।
হাদীস নং ৩২৬২
আবু নুআঈম রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরাইশ, আনসার, জুহায়না, মুযায়না, আসলাম, গিফার এবং আশজা গোত্রগুলো আমার আপনজন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ব্যতীত অন্য কেহ তাদের আপনজন নেই।
হাদীস নং ৩২৬৩
মুহাম্মদ ইবনে গুরায়না যুহরী রহ………..আবদুল্লাহ (ইবনে উমর) রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উপবিষ্ট অবস্থায় বলেন, গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে নিরাপদে রাখুন আর উসাইয়া গোত্র, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করেছে।
হাদীস নং ৩২৬৪
মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাহাদিগকে নিরাপদে রাখুন। গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুন।
হাদীস নং ৩২৬৫
কাবিসা ও মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবা কিরামকে লক্ষ্য করে) বলেন, বলত জুহায়না, মুযায়না, আসলাম ও গিফার গোত্র যদি আল্লাহর নিকট বানূ তামীম, বানূ আসাদ, বানূ গাতফান ও বানূ আমের হতে উত্তম বিবেচিত হয়ে তবে কেমন হবে? তখন জনৈক সাহাবী বললেন, তবে তারা (শেষোক্ত গোত্রগুলো) ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পূর্বোক্ত গোত্রগুলো বানূ তামীম, বানূ আসাদ, বানূ আবদুল্লাহ ইবনে গাতফান এবং বানূ আমের ইবনে সাসা থেকে উত্তম।
হাদীস নং ৩২৬৬
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…………আবু বাকরা তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, আকরা ইবনে হাবিস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরয করলেন, আসলাম গোত্রের সুররাক হাজীজ, গিফার ও মুযায়না গোত্রদ্বয় আপনার নিকট বায়আর করেছে এবং (রাবী বলেন) আমার ধারণা জুহায়না গোত্রও। এ ব্যাপারে ইবনে আবু ইয়াকুব সন্দেহ পোষণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি কি জান, আসলাম, গিফার ও মুযায়না গোত্রদ্বয়, (রাবী বলেন) আমার মনে হয় তিনি জুহায়না গোত্রের কথাও উল্লেখ করেছেন যে বনূ তামীম, বনূ আমির আসাদ এবং গাতফান (গোত্রগুলো) যারা ক্ষতিগ্রস্থ ও বঞ্চিত হয়েছে, তাদের তুলনায় পূর্বোক্ত গোত্রগুলো উত্তম। রাবী বলেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, পূর্বোক্ত গুলো শেষোক্ত গোত্রগুলোর তুলনায় অবশ্যই অতি উত্তম।
হাদীস নং ৩২৬৭
সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আসলাম, গিফার এবং মুযায়না ও জুহানা গোত্রের কিয়দংশ অথবা জুহানার কিয়দাংশ কিংবা মুযায়নার কিয়দংশ আল্লাহর নিকট অথবা বলেছেন কিয়ামতের দিন আসাদ, তামীম, হাওয়াযিন ও গাতফান গোত্র থেকে উত্তম বিবেচিত হবে।
হাদীস নং ৩২৬৮
যায়েদ ইব্ন আখযাম (রহঃ) ……. আবূ জামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন) আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) আমাদিগকে বললেন, আমি কি তোমাদিগকে আবূ যার (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহনের ঘটনা সরববিস্তার বর্ণনা করব ? আমার বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বলেন, আবু যার (রাঃ) বলেছেন, আমি গিফার গোত্রের একজন মানুষ। আমরা জানোতে পেলাম মক্কায় এক ব্যক্তি আত্মপ্রকাশ করে নিজেকে নাবী (সাঃ) বলে দাবী করেছেন। আমি আমার ভাই (উনাইস)-কে বললাম, তুমি মক্কায় গিয়ে ঐ ব্যক্তির সহিত সাক্ষাত ও আলোচনা করে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে এস। সে রওয়ানা হয়ে গেল এবং মক্কার ঐ লোকটির সহিত সাক্ষাত ও আলাপ আলোচনা করে ফিরে আসলে আমি জিজ্ঞাসা করলাম- কি খবর নিয়ে এলে ? সে বলল, আল্লাহ্র কসম ! আমি একজন মহান ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করেন। আমি বললাম, তোমার সংবাদে আমি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। তারপর আমি একটি ছড়ি ও এক পাত্র খাবার নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হয়ে পড়লাম। মক্কায় পৌছে আমার অবস্থা দাঁড়াল এই- তিনি আমার পরিচিত নন, কারো নিকট জিজ্ঞাসা করাও আমি সমীচীন মনে করি না। তাই আমি যমযমের পানি পান করে মসজিদে অবস্থান করতে থাকলাম। একদিন সন্ধ্যা বেলায় আলী (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে গমন কালে আমার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, মনে হয় লোকটি বিদেশী। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমার সাথে আমার বাড়িতে চল। রাস্তায় তিনি আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেন নি। আর আমিও ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন কিছু বলিনি। তাঁর বাড়িতে রাত্রি যাপন করে ভোর বেলায় পুনরায় মসজিদে গমন করলাম যাতে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। কিন্তু ঐখানে এমন কোন ব্যক্তি ছিল না যে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলবে। ঐ দিনও আলী (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে গমনকালে বললেন, এখনো কি লোকটি তার গন্তব্যস্থল ঠিক করতে পারেনি ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আমার সাথে চল। পথিমধ্যে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বল, তোমার বিষয় কি ? কেন এ শহরে আগমন ? আমি বললাম, যদি আপনি আমার বিষয়টি গোপন রাখবেন বলে আশ্বাস দেন তাহলে তা আপনাকে বলতে পারি। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি গোপনীয়তা রক্ষা করব। আমি বললাম, আমরা জানোতে পেরেছি, এখানে এমন এক ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে যিনি নিজেকে নাবী (সাঃ) বলে দাবী করেন। আমি তাঁর সাথে সবিস্তর আলাপ আলোচনার করার জন্য আমার ভাইকে পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু সে ফেরত গিয়ে আমাকে সন্তোষজনক কোন কিছু বলতে পারেনি। তাই নিজে দেখা করার ইচ্ছা নিয়ে এখানে আগমন করেছি। আলী (রাঃ) বললেন, তুমি সঠিক পথপ্রদর্শক পেয়েছ। আমি এখনই তাঁর খেদমতে উপস্থিত হওয়ার জন্য রওয়ানা হয়েছি। তুমি আমার অনুসরন করো এবং আমি যে গৃহে প্রবেশ করি তুমিও সে গৃহে প্রবেশ করবে। রাস্তায় যদি তোমার বিপদজনক কোন ব্যক্তি দেখতে পাই তাহলে আমি জুতা ঠিক করার ভান করে দেয়ালের প্বার্শে সরে দাঁড়াব, যেন আমি জুতা ঠিক করতেছি। তুমি কিন্তু চলতেই থাকবে। (যেন কেউ বুঝতে না পারে তুমি আমার সঙ্গী)। আলী (রাঃ) পথ চলতে শুরু করলেন। আমিও তাঁর অনুসরন করে চলতে লাগলাম। তিনি নাবী (সাঃ) -এর নিকট প্রবেশ করলে, আমিও তাঁর সাথে ঢুকে পড়লাম। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ), আমার নিকট ইসলাম পেশ করুন। তিনি পেশ করলেন। আর আমি মুসলমান হয়ে গেলাম। নাবী (সাঃ) বললেন, হে আবূ যার। আপাততঃ তোমার ইসলাম গ্রহন গোপন রেখে তোমার দেশে চলে যাও। যখন আমাদের বিজয় সংবাদ জানোতে পারবে তখন এসো। আমি বললাম, যে আল্লাহ্ আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম ! আমি কাফির মুশরিকদের সম্মুখে উচ্চস্বরে তৌহিদের বাণী ঘোষণা করব। [ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেন, ] এই কথা বলে তিনি মসজিদে হারামে গমন করলেন, কুরাইশের লোকজনও সেথায় উপস্থিত ছিল। তিনি বললেন, হে কুরাইশগণ ! আমি নিশ্চিত ভাবে সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহ্র বান্দা ও তাঁর রাসূল (সাঃ)। ইহা শুনে কুরাইশগণ বলে উঠল, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। তারা আমার দিকে এগিয়ে আসল এবং আমাকে নির্মমভাবে প্রহার করতে লাগল ; যেন আমি মরে যাই। তখন আব্বাস (রাঃ) আমার নিকট পৌছে আমাকে ঘিরে রাখলেন (প্রহার বন্ধ হল)। তারপর তিনি কুরাইশকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের বিপদ অবশ্যম্ভাবী। তোমরা গিফার বংশের একজন লোককে হত্যা করতে উদ্যোগী হয়েছ অথচ তোমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের কাফেলাকে গিফার গোত্রের সন্নিকট দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। (ইহা কি তোমাদের মনে নেই ?) একথা শুনে তারা সরে পড়ল। পরদিন ভোরবেলা কাবাগৃহে উপস্থিত হয়ে গেল দিনের মতই আমি আমার ইসলাম গ্রহনের পূর্ণ ঘোষণা দিলাম। কুরাইশগণ বলে উঠল, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। পূর্ব দিনের মত আজও তারা নির্মমভাবে আমাকে মারধর করলো। এই দিনও আব্বাস (রাঃ) এসে আমাকে রক্ষা করলেন এবং কুরাইশদিগকে লক্ষ্য করে ঐ দিনের মতো বক্তব্য রাখলেন। ইব্ন ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইহাই ছিল আবূ যার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহনের প্রথম ঘটনা।