হাদীস নং ৩১৬৯
আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মুসলিম আর একজন ইয়াহুদী পরস্পরকে গালি দিল। মুসলিম ব্যক্তি বললেন, সেই সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সমগ্র জগতের উপর মনোনীত করেছেন। কসম করার সময় তিনি একথাটি বলেছেন। তখন ইয়াহুদী লোকটিও বলল, ঐ সত্তার কসম! যিনি মূসা আ.-কে সমগ্র জগতের উপর মনোনীত করেছেন। তখন সেই মুসলিম সাহাবী সে সময় তার হাত উঠিয়ে ইয়াহুদী লোকটিকে একটি চড় মারলেন। তখন সে ইয়াহুদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেল এবং ঐ ঘটনাটি অবহিত করলো যা তার ও মুসলিম সাহাবীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে মূসা আ.-এর উপর অধিক মর্যাদা দেখাতে যেওনা (কেননা কিয়ামতের দিন) সকল মানুষ বেহুঁশ হয়ে যাবে। আর আমিই সর্বপ্রথম হুশ ফিরে পাব। তখনই আমি মূসা আ.-কে দেখব, তিনি আরশের একপাশে ধরে রয়েছেন। আমি জানিনা, যারা বেহুঁশ হয়েছিল, তিনিও কি তাদের মধ্যে ছিলেন? তারপর আমার আগে তাঁর হুশ এসে গেছে? অথবা তিনি তাদেরই একজন, যাদেরকে আল্লাহ বেহুঁশ হওয়া থেকে বাদ দিয়েছিলেন।
হাদীস নং ৩১৭০
আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম আ. ও মূসা আ. (রূহানী জগতে) তর্ক-বিতর্ক করছিলেন। তখন মূসা আ. তাকে বলছিলেন, আপনি সেই আদম যে, আপনার ভুল আপনাকে বেহেশত থেকে বের করে দিয়েছিল। আদম আ. তাকে বললেন, আপনি সেই মূসা যে, আপনাকে আল্লাহ তাঁর রিসালাত দান এবং বাক্যালাপ দ্বারা সম্মানিত করেছিলেন। তারপরও আপনি আমাকে এমন একটি বিষয়ে দোষারোপ করছেন যা আমার সৃষ্টির আগেই আমার তাকদীরে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার বলেছেন, এ বিতর্কে আদম আ. মূসা আ.-এর উপর জয়ী হন।
হাদীস নং ৩১৭১
মুসাদ্দাদ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে তিনি বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে আসলেন এবং বললেন, আমার নিকট সকল নবীর উম্মতকে পেশ করা হয়েছিল। তখন আমি এক বিরাট দল দেখতে পেলাম, যা দিগন্ত ঢেকে ফেলেছিল।তখন বলা হল, ইনি হলেন মূসা আ. তাঁর কওমের সাথে।
হাদীস নং ৩১৭২
ইয়াহইয়া ইবনে জাফর রহ………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষের মধ্যে অনেকেই কামালিয়াত অর্জন করেছেন। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া এবং ইমরানের কন্যা মারইয়াম ব্যতীত আর কেউ কামালিয়াত অর্জনে সক্ষম হয়নি। তবে আয়েশার মর্যাদা সব মহিলার উপর এমন, যেমন সারীদে (গোশতের ঝোলে ভিজা রুটির) মর্যাদা সর্ব প্রকার খাদ্যের উপর।
হাদীস নং ৩১৭৩
মুসাদ্দাদ রহ. এবং আবু নুআইম রহ………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে যে, আমি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইউনুস আ. থেকে উত্তম। মুসাদ্দাদ রহ. বাড়িয়ে বললেন, ইউনুস ইবনে মাত্তা।
হাদীস নং ৩১৭৪
হাফস ইবনে উমর রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন বান্দার জন্য এমন কথা বলা শোভনীয় নয় যে, নিশ্চয়ই আমি (মুহাম্মদ) ইউনুস ইবনে মাত্তা থেকে উত্তম আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (ইউনুসকে) তাঁর পিতার দিকে সম্পর্কিত করেছেন।
হাদীস নং ৩১৭৫
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার এক ইয়াহুদী তার কিছু দ্রব্য সামগ্রী বিক্রির জন্য পেশ করছিল, তার বিনিময়ে তাকে এমন কিছু দেওয়া হল যা সে পছন্দ করল না। তখন সে বলল, না ! সেই সত্তার কসম, যে মূসা আ.-কে মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। এ কথাটি একজন আনসারী (মুসলিম) শুনলেন, তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। আর তার (ইয়াহুদীর) মুখের উপর এক চড় মারলেন। আর বললেন, তুমি বলছো সেই সত্তার কসম! যিনি মূসাকে মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বিদ্যমান। তখন সে ইয়াহুদী লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেল এবং বলল, হে আবুল কাসিম! নিশ্চয়ই আমার জন্য নিরাপত্তা এবং আহাদ রয়েছে অর্থাৎ আমি একজন যিম্মী। অতএব অমুক ব্যক্তির কি হল, কি কারণে সে আমার মুখে চড় মারলো? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তুমি তার মুখে চড় মারলে? আনসারী ব্যক্তি ঘটনাটি বর্ণনা করলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হলেন। এমনকি তাঁর চেহারায় তা প্রকাশ পেল। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহর নবীগণের মধ্যে কাউকে কারো উপর (অন্যকে হেয় করে) মর্যাদা দান করো না। কেননা কিয়ামতের দিন যখন শিঙ্গায় ফুক দেওয়া হবে, তখন আল্লাহ যাকে চাইবেন সে ব্যতীত আসমান ও যমীনের বাকী সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে। তারপর দ্বিতীয়বার তাঁতে ফুক দেওয়া হবে। তখন সর্বপ্রথম আমাকেই উঠানো হবে। তখনই আমি দেখতে পাব মূসা আ. আরশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তূর পর্বতের ঘটনার দিন তিনি যে বেহুঁশ হয়েছিলেন, এটা কি তারই বিনিময়, না আমারই আগে তাকে উঠানো হয়েছে? আর আমি এ কথাও বলি না যে কোন ব্যক্তি ইউনুস ইবনে মাত্তার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।