হাদীস নং ৩১৫১
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহর বাণী حتى إذا استيأس الرسل وظنوا أنهم قد كذبوا আয়াতাংশের মধ্যে كذبوا হবে, না كذبوا হবে? (যাল হরফে তাশদীদ সহ পড়তে হবে না তাশদীদ ব্যতীত)? হযরত আয়েশা রা. বলেন, (এখানে كذبوا নয়, كذبوا হবে) কেননা, তাদের কওম তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল। (উরওয়া রহ. বলেন) আমি বললাম, মহান আল্লাহর কসম, রাসূলগণের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, তাদের কওম তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছে, আর তাতো সন্দেহের বিষয় ছিল না। (কাজেই এখানে كذبوا হবে কিভাবে?) তখন হযরত আয়েশা রা. বলেন, হে উরাইয়্যাহ! এ ব্যাপারে তাদের তো দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। (অর্থাৎ এখানে তিনি ظن -কে يقين অর্থে নিয়েছেন)। (উরওয়া রহ. বলেন) আমি বললাম, সম্ভবত: এখানে হবে। হযরত আয়েশা রা. বললেন, মাআযাল্লাহ (আল্লাহর পানাহ) রাসূলগণ কখনো আল্লাহ সম্পর্কে এরূপ ধারণা করতেন না। (অর্থাৎ كذبوا হলে অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহ পাক রাসূলগণের সাথে মিথ্যা বলেছেন। অথচ রাসূলগণ কখনো এরূপ ধারণা করতে পারে না) তবে এ আয়াত সম্পর্কে আয়েশা রা. বলেন, তারা রাসূলগণের অনুযায়ী যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছেন এবং রাসূলগণকে বিশ্বাস করেছেন। তাদের উপর আযমায়েশ (ঈমানের পরীক্ষা) দীর্ঘায়িত হয়। তাদের প্রতি সাহায্য পৌঁছতে বিলম্ব হয়। অবশেষে রাসূলগণ যখন তাদের কওমের লোকদের মধ্যে যারা তাদেরকে মিথ্যা মনে করেছে, তাদের ঈমান আনার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেলেন এবং তাঁরা এ ধারণা করতে লাগলেন যে তাদের অনুসারীগণও তাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করবেন, ঠিক এ সময়ই মহান আল্লাহর সাহায্য পৌঁছে গেল। استيأسوا শব্দটি استفعلوا -এর ওযনে এসেছে। يئست منه থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ তারা ইউসুফ আ. থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। لاتيئسوا من روح الله -এর অর্থ- তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।
হাদীস নং ৩১৫২
আবদা রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সম্মানিত ব্যক্তি -যিনি সন্তান সম্মানিত ব্যক্তির, যিনি সন্তান সম্মানিত ব্যক্তির, যিনি সন্তান সম্মানিত ব্যক্তির, তিনি হলেন ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আ.।
হাদীস নং ৩১৫৩
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আলী জুফী রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদা আইয়্যূব আ. নগ্ন দেহে গোসল করছিলেন। এমন সময় তাঁর উপর স্বর্ণের এক ঝাঁক পঙ্গপাল পতিত হল। তিনি সেগুলো দুহাতে ধরে কাপড়ে রাখতে লাগলেন। তখন তাঁর রব তাকে ডেকে বললেন, হে আইয়্যূব! তুমি যা দেখতে পাচ্ছ, তা থেকে কি আমি তোমাকে মুখাপেক্ষীহীন করে দেইনি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, হে রব! কিন্তু আমি আপনার বরকতের অমুখাপেক্ষী নই।
হাদীস নং ৩১৫৪
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………উরওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়েশা রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হেরা পর্বতের গুহা থেকে) খাদীজা রা.-এর নিকট ফিরে আসলেন তাঁর হৃদয় কাঁপছিল। তখন খাদীজা রা. তাকে নিয়ে ওয়ারকা ইবনে নাওফলের নিকট গেলেন। তিনি খৃষ্টান ধর্ম অবলম্বন করেছিলেন। তিনি আরবী ভাষায় (অনুবাদ করে) ইনযীল পাঠ করতেন। ওয়ারকা জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি দেখেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সব ঘটনা জানালেন। তখন ওয়ারকা বললেন, এত সেই নামুস (ফেরেশতা) যাকে আল্লাহ তা’আলা মূসা আ.-এর কাছে নাযিল করেছিলেন। আপনার সে সময় যদি আমি পাই, তবে সর্বশক্তি দিয়ে আমি আপনাকে সাহায্য করব। নামুস অর্থ গোপন তত্ত্ব ও তথাবাহী যাকে কেউ কোন বিষয়ে খবর দেয় আর সে তা অপর থেকে গোপন রাখে।
হাদীস নং ৩১৫৫
হুদবা ইবনে খালিদ রহ……….মালিক ইবনে সাসাআ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজ রাত্রির ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তাদের কাছে এও বলেন, তিনি যখন পঞ্চাশ আকাশে এসে পৌঁছলেন, তখন হঠাৎ সেখানে হারূন আ.-এর সাথে সাক্ষাত হল। জিবরাঈল আ. বললেন, ইনি হলেন, হারূন আ. তাকে সালাম করুন। তখন আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, মারহাবা পূণ্যবান ভাই ও পূণ্যবান নবী। সাবিত এবং আব্বাদ ইবনে আবু আলী রহ. আনাস রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় কাতাদা র.-এর অনুরসণ করেছেন।
হাদীস নং ৩১৫৬
ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে রাতে আমার মিরাজ হয়েছিল, সে রাতে আমি মূসা আ.-কে দেখতে পেয়েছি। তিনি হলেন, হালকা পাতলা দেহ বিশিষ্ট ব্যক্তি, তাঁর চুল কুঁকড়ানো ছিলনা। মনে হচ্ছিল তিনি যেন ইয়ামান দেশীয় শানুআ গোত্রের একজন লোক, আর আমি ঈসা আ.-কে দেখতে পেয়েছি। তিনি হলেন মধ্যম দেহ বিশিষ্ট গায়ের রং ছিল লাল। যেন তিনি এইমাত্র হাম্মাম থেকে বের হলেন। আর ইবরাহীম আ.-এর বংশধরদের মধ্যে তাঁর সাথে আমার চেহারায় মিল সবচেয়ে বেশী। তারপর আমার সামনে দুটি পেয়ালা আনা হল। তার একটিতে ছিল দুধ আর অপরটিতে ছিল শরাব। তখন জিবরাঈল আ. বললেন, এ দুটির মধ্যে যেটি চান আপনি পান করতে পারেন। আমি দুধের পেয়ালাটি নিলাম এবং তা পান করলাম। তখন বলা হল, আপনি ফিতরাত বা স্বভাব ও প্রকৃতিকে বেছে নিয়েছেন। দেখুন, আপনি যদি শরাব নিয়ে নিতেন, তাহলে আপনার উম্মাতগণ পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।