- বইয়ের নামঃ সহিহ বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড (৩০৯১-৩৭৪৫)
- লেখকের নামঃ ইমাম বুখারী
- প্রকাশনাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
- বিভাগসমূহঃ ইসলামিক বই, হাদীস শরীফ
সহিহ বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড (৩০৯১-৩৭৪৫)
আম্বিয়া কিরাম (আ.) অধ্যায় (৩০৯১-৩২৪২)
হাদীস নং ৩০৯১
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। এরপর তিনি (আল্লাহ) তাকে (আদমকে) বললেন, যাও। ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর। এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিরূপে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কেননা, এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। তারপর আদম আ. (ফেরেশতাদের) বললেন, “আসসলামু আলাইকুম”। ফেরেশতাগণ তার উত্তরে “আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বললেন। ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে “ওয়া রাহমাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম আ.-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
হাদীস নং ৩০৯২
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার মত। তারা না করবে পেশাব আর না করবে পায়খানা। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক হতে শ্লেষ্মাও বের হবে না। তাদের চিরুণি হবে স্বর্ণের তৈরী। তাদের ঘাম হবে মিসকের ন্যায় সুগন্ধ পূর্ণ। তাদের ধুনচি হবে চন্দন কাঠের। বড় চক্ষু বিশিষ্ট হুরগণ হবেন তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই। সবাই তাদের আদি পিতা আদম আ.-এর আকৃতিতে হবেন। উচ্চতায় তাদের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত বিশিষ্ট।
হাদীস নং ৩০৯৩
মুসাদ্দাদ রহ……….উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত যে, উম্মে সুলাইম রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ সত্য প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। মেয়েদের স্বপ্নদোষ হরে কি তাদের উপর গোসল ফরয হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। যখন সে বীর্য দেখতে পাবে। এ কথা শুনে উম্মে সালামা রা. হাসলেন এবং বললেন, মেয়েদের কি স্বপ্নদোষ হয়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা না হলে সন্তান তার সদৃশ হয় কিভাবে।
হাদীস নং ৩০৯৪
ইবনে সালাম রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সালামের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদীনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তরে নবী ছাড়া আর কেউ অবগত নয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সাদৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের সাদৃশ্য হয়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইমাত্র জিবারাঈল আ. আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবী বলেন, তখন আবদুল্লাহ রা. বললেন, সে তো ফেরেশতাগণের মধ্যে ইয়াহুদীদের শত্রু । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে।আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন খাবেন তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথমে স্খলিত হয় তবে সন্তান তার সদৃশ হবে আর যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের পূর্বে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সাদৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছ নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসূল। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদীরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রটনা করবে।তারপর ইয়াহুদীরা এল এবং আবদুল্লাহ রা. ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করে, এতে তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ রা. তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির সন্তান এবং তার তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল।