৩২। পৃথিবীতে আদম সন্তানের অবস্থান হচ্ছে স্বল্পকালীন। এই স্বল্পকালীন সময় হচ্ছে নিজেকে পরকালের জন্য প্রস্তুত করার শিক্ষানবীশকাল (Probationary Period) আত্মার উন্নতি লাভ করাই হচ্ছে এই পৃথিবীতে অবস্থানের একমাত্র লক্ষ্য। আত্মার উন্নতিকে এখানে সমৃদ্ধি এবং আত্মার অধঃপতনকে এখানে শাস্তিরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। পাপের পথ পিচ্ছিল ও নিম্নগামী। এই পিচ্ছিল পথে যাত্রা শুরু করলে গতি হয় ক্রমাগত দ্রুত ও ত্বরাণ্বিত। শেষ পর্যন্ত এ পথ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভবপর হয় না। কারণ একটি পাপ বহু পাপের জন্ম দেয়, যেমন-একটি পূণ্য আরও পূণ্যকে আকর্ষণ করে।
আয়াতঃ 002.008
আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।
And of mankind, there are some (hypocrites) who say: ”We believe in Allâh and the Last Day” while in fact they believe not.
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللّهِ وَبِالْيَوْمِ الآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ
Wamina alnnasi man yaqoolu amanna biAllahi wabialyawmi al-akhiri wama hum bimu/mineena
YUSUFALI: Of the people there are some who say: “We believe in Allah and the Last Day;” but they do not (really) believe.
PICKTHAL: And of mankind are some who say: We believe in Allah and the Last Day, when they believe not.
SHAKIR: And there are some people who say: We believe in Allah and the last day; and they are not at all believers.
KHALIFA: Then there are those who say, “We believe in GOD and the Last Day,” while they are not believers.
রুকু – ২
৩৩। এবারে আল্লাহ্ তৃতীয় শ্রেণীর লোকদের সম্বন্ধে বলেছেন। এরা হচ্ছে মিথ্যুক অর্থাৎ মুনাফিক। এরা নিজেদের কাছে নিজেরা বিশ্বস্ত নয়। এরা মুখে বলে এক কথা কিন্তু এদের অন্তর বলে অন্য কথা। ফলে এদের অন্তরে জন্ম নেয় দুরারোগ্য ব্যাধি (২ : ১০)। সংসারে ভালো অপেক্ষা মন্দের প্রভাব বা বিস্তার ঘটে অত্যন্ত দ্রুত। মুনাফিকদের অন্তরের ব্যাধি সেইরূপ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অবিশ্বস্ততা, স্বার্থপরতা, হিংসা-দ্বেষ প্রভৃতি বিভিন্ন রিপু মুনাফিকের অন্তর ছেয়ে ফেলে। এই সকলই মুনাফিকের অন্তরের ব্যাধি। যদি সময়মত সাবধানতা অবলম্বন করা যায় অন্তরের এই অবস্থা (State of mind) থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘদিন যারা মিথ্যার আশ্রয়ে আত্মাকে কলুষিত করে তাদের আত্মার উপরে কঠিন আবরণ পড়ে। অন্তর হয়ে যায় পাথরের ন্যায় শক্ত। সে শক্ত পর্দা ভেদ করে সত্যের আলো তাদের অন্তরে পৌঁছাতে পারে না।
আয়াতঃ 002.009
তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না।
They (think to) deceive Allâh and those who believe, while they only deceive themselves, and perceive (it) not!
يُخَادِعُونَ اللّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلاَّ أَنفُسَهُم وَمَا يَشْعُرُونَ
YukhadiAAoona Allaha waallatheena amanoo wama yakhdaAAoona illa anfusahum wama yashAAuroona
YUSUFALI: Fain would they deceive Allah and those who believe, but they only deceive themselves, and realise (it) not!
PICKTHAL: They think to beguile Allah and those who believe, and they beguile none save themselves; but they perceive not.
SHAKIR: They desire to deceive Allah and those who believe, and they deceive only themselves and they do not perceive.
KHALIFA: In trying to deceive GOD and those who believe, they only deceive themselves without perceiving.
০৯। আল্লাহ্ ও বিশ্বাসীদের তারা প্রতারিত করতে চায়, কিন্তু [এর দ্বারা] তার শুধুমাত্র নিজেদের প্রতারিত করে অথচ তারা [তা] বুঝতে পারে না।১০। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি; এবং আল্লাহ্ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করেছেন ৩৪; তারা [ভোগ করবে] নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।
৩৪। মিথ্যুক বা মুনাফিকেরা সব সময়েই হয় অবিশ্বস্ত (Insincere) এবং নীতিজ্ঞানশূন্য। একজন নীতি জ্ঞানশূন্য লোক হয় লোভী এবং সুবিধাবাদী। সুবিধাবাদীরা সর্বদা মন্দের সাথে ভালোর এবং সত্য ও ন্যায়ের সাথে অন্যায়, অসত্য ও দুর্নীতির সমঝোতা করতে ব্যস্ত থাকে। কপটতাই তাদের ব্যাধি। কারণ এই সমঝোতার ফলে সে তার অবস্থানকে সুবিধাজনক স্থানে নিতে সক্ষম হয়। নিজের অবস্থান ভালো করাই মুনাফিকের একমাত্র উদ্দেশ্য। সুবিধা ভোগ করাই তাদের একমাত্র ধ্যান ধারণা। কোনও ন্যায়-নীতি তাদের চিন্তায় স্থান পায় না। কিন্তু সংসারে কখনও ভাল ও মন্দের, ন্যায় ও অন্যায়ের, সত্য ও মিথ্যার সন্ধি হতে পারে না। যারা তা করতে চায় তার অন্তরে ব্যাধিগ্রস্থ। কারণ তারা তাদের নিজেদের অন্তরের কাছে বিশ্বস্ত নয়। এর ফলে তাদের অন্তর কোন ভাল গ্রহণ করতে পারে না। যদি কোন ভালও তাদের কাছে আসে, তবে তারা তা মন্দে রূপান্তরিত করে ফেলে। এরকম উদাহরণ আমরা অহরহ আমাদের চারপাশে দেখি। এখানে আল্লাহ্ উদাহরণ দিচ্ছেন যে, বৃষ্টি আল্লাহ্র নেয়ামত স্বরূপ। যে বৃষ্টিধারা ধরনীকে ফুল-ফল ও ফসলে ভরিয়ে দেয়। ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য্যে ধরণীকে করে আমোদিত। সেই বৃষ্টির ফলে আগাছার বৃদ্ধিতে সহায়তা হয়। কাঁটাগাছের কাঁটার বৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত হয়। শুধু যে ত্বরাণ্বিত হয় তাই-ই নয় কাঁটাকে করে শক্তিশালী। সেইরূপ মুনাফেকের অন্তরের সংস্পর্শে ‘ভালো’ মন্দরূপ ধারণ করে। মুনাফেকের ব্যাধি তার অন্তরে। ঐ কাঁটা গাছের মত, আল্লাহ্র রহমত এদের জন্য সুফল বয়ে না এনে অন্তরের ব্যাধির ব্যাপ্তি ঘটায়।