- সূরার নামঃ সূরা বাকারা
- বিভাগসমূহঃ ইসলামিক বই, কোরআন শরীফ
সূরা বাকারা
আয়াতঃ 002.001
আলিফ লাম মীম।
Alif-Lâm-Mîm. [These letters are one of the miracles of the Qur’ân and none but Allâh (Alone) knows their meanings].
الم
Alif-lam-meem
YUSUFALI: A.L.M.
PICKTHAL: Alif. Lam. Mim.
SHAKIR: Alif Lam Mim.
KHALIFA: A.L.M.
২৫। আলিফ্ লাম্ মিম্ -এই তিনটি অক্ষর সূরা বাকারা এবং আরও ৩, ২৯, ৩০, ৩১ এবং ৩২ এই সূরাগুলির (মোট সংখ্যা ৬) প্রারম্ভে স্থাপন করা হয়েছে। সূরা বাকারা এবং সূরা আল-ইমরানে একটা জাতির উত্থান-পতন, ভূত-ভবিষ্যত এবং তাদের সমগ্র ইতিহাস সম্বন্ধে বলা হয়েছে, আবার সেই সাথে নূতন জাগ্রত জাতি মুসলমানদের সামাজিক রীতিনীতি সম্বন্ধেও বলা হয়েছে। সূরা ২৯ এ ঠিক একইরকম যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে। তবে এখানে জাতি হিসেবে না বলে প্রতিটি আত্মার জীবন-মৃত্যু, জয়-পরাজয়, অতীত-বর্তমান অর্থাৎ এই পৃথিবীতে মানব-আত্মার অস্তিত্বের পূর্ণ ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা ৩০ আমাদের বলে, আল্লাহ্ সকল শক্তির উৎস। সব কিছু তাঁর থেকে উৎপত্তি আবার তাঁর কাছেই সবকিছু ফিরে যাবে। সূরা ৩১ ও ৩২ শে ঐ কথাকেই পুনরায় সঞ্জিবীত করা হয়েছে।
নূতনভাবে, নূতন ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে যে, এক আল্লাহ্ই হচ্ছেন সবকিছুর স্রষ্টা এবং একমাত্র তিনিই শেষ বিচারের মালিক। সূতরাং সে সব সূরা আলিফ্, লাম্, মিম্ এই তিন অক্ষর দ্বারা শুরু হয়েছে তাদের সবার মধ্যেই অন্তর্নিহিত ভাব এক। আর তা হচ্ছে জীবন ও মৃত্যুর রহস্য, সৃষ্টির আরম্ভ ও শেষের রহস্য এবং সব রহস্যের সমাধান এক স্রষ্টার কাছে বিদ্যমান। তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ। এই অক্ষর তিনটি সম্বন্ধে অনেক কথা বলা হয়েছে, অনেক আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এর সবটাই অনুমান নির্ভর। প্রকৃত অর্থ জানেন একমাত্র আল্লাহ্। অনেকে মনে করেন এই অক্ষরগুলি প্রতীকধর্মী। সুতরাং এ সম্বন্ধে যুক্তি তর্কের অবকাশ নাই।
——————————–
সূরা বাকারা – ২
২৮৬ আয়াত, ৪০ রুকু, মাদানী
[দয়াময়,পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে]
ভূমিকা : প্রারম্ভিক সূরা ফাতেহায় ৭টি আয়াতকে কোরআন শরীফের সার সংক্ষেপ বলা যায়, ঠিক সে রকম এই সূরায় ২৮৬টি আয়াতে সমগ্র কোরআন শরীফের শিক্ষাকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
সার সংক্ষেপ : এই সূরায় –
১-২৯ আয়াতে গূঢ় অর্থসম্পন্ন উপদেশাবলীর মাধ্যমে তিন রকম লোকের কথা বলা হয়েছে এবং কিভাবে এই তিন শ্রেণীর লোক আল্লাহ্র উপদেশাবলী গ্রহণ করে সে সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। যারা আল্লাহ্র কাছে হেদায়েত প্রার্থনা করে অবশ্যই আল্লাহ্র বাণী তাদের পথ প্রদর্শন করে। যারা তাঁর বাণী প্রত্যাখ্যান করে তারা চক্ষুষ্মান হয়েও অন্ধ। তাদের আত্মায় সীল-মোহর দেয়া। মুনাফিকদের জন্য করুণা, কারণ তারা নিজেরাও প্রতারিত এবং অন্যকেও প্রতারিত করতে সর্বদা থাকে সচেষ্ট। সুন্দর উপমার সাহায্যে এই কথাটি প্রকাশ করা হয়েছে। বৃষ্টি ফসলের জমিকে ফুল-ফল-ফসলে ভরিয়ে তোলে। আবার সেই বৃষ্টিই আগাছায় ভর্তি জমিতে কাঁটাগাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সেরূপ বিশ্বাসী বা ঈমানদার লোকের জন্য আল্লাহ্র বাণী, তার ঈমানের ভীত আরও মজবুত করে, আবার সেই একই বাণী অবিশ্বাসীদের হৃদয়ের ব্যাধি বৃদ্ধি করে।
আয়াত ৩০-৩৯ এ বলা হয়েছে মানুষের সৃষ্টি সম্বন্ধে, বলা হয়েছে সৃষ্ট জগতে তার উচ্চে অধিষ্ঠান, তার পতন, পৃথিবীতে বিবর্তণের ধারায় তার পথ চলার নির্দেশ সম্বন্ধে।
আয়াত ৪০-৮৬ এ বলা হয়েছে ইসরাইলীদের সম্পর্কে। তাদের কিতাব, তাদের ঐতিহ্য, আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামত এবং কিভাবে তারা আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়েছিলো, উপমা ও সাধারণ কাহিনীর মাধ্যমে তা বর্ণনা করা হয়েছে।
আয়াত ৮৭-১২১ হযরত মুসা (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ) এর সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিভাবে তাঁরা অবাধ্য ও অবিশ্বাসী জনতার সাথে সংগ্রাম করেছিলেন। কিভাবে ঐশী কিতাব প্রাপ্ত লোকেরা তাদের নিজেদের কিতাবের বাণী অস্বীকার করেছিলো। কিভাবে তারা অহংকারের স্ফীত হয়ে হযরত মুহম্মদ (দঃ) কে অস্বীকার করেছিলো; যদিও তারা জানতো যে নবুয়তের ধারাবাহিকতায় তিনিই শেষ নবী।
আয়াত ১২২-১৪১। পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর সম্বন্ধে এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম একজন সতিক্যারের পূণ্যবান ইমাম ছিলেন। তিনি আরবে জন্ম গ্রহণকারী হযরত ইসমাঈলের বংশের পূর্বপুরুষ। আবার ইসরাইল সম্প্রদায়েরও পূর্বপুরুষ ছিলেন তিনি। তিনিই হযরত ইসমাঈল সহযোগে কাবা শরীফ নির্মাণ করেন এবং পরিশুদ্ধ করেন। এভাবেই তিনি সকলের জন্য একই ধর্মের অবতারণা করেন। আর তাঁর এই ধর্মের বিশ্বনন্দিত রূপই হচ্ছে ইসলাম।
আয়াত ১৪২-১৬৭। কা’বা শরীফ এখন বিশ্ব মানবের এবাদতের স্থান এবং বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের প্রতীক।
আয়াত ১৬৮-২৪২। এভাবেই বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের প্রতিষ্ঠা যার এক নির্দিষ্ট কেন্দ্রবিন্দু ও প্রতীক আছে – আর তা হচ্ছে কা’বা শরীফ। সারা মুসলিম জাহানের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম কানুনের প্রবর্তন করা হয়েছে। তাদের সামাজিক জীবন, ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন সম্পর্কে নিয়ম-নীতি নির্দেশ দান করা হয়েছে। একথা দ্ব্যার্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে কোন ধর্ম নাই, কোনও পূণ্য নাই। পূণ্য আছে এক স্রষ্টায় বিশ্বাসে, জীবে দয়ায়, প্রার্থনায়, দানে এবং দুঃখ দুর্দশায় ধৈর্য্য ধারণের মধ্যে। সামাজিক জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন-খাদ্য, পানীয়, উপবাস, বিষয়-সম্পত্তির বন্টন, জিহাদ, মদ, জুয়া, এতিম এবং মেয়েদের প্রতি ব্যবহার সম্পর্কীয় নিয়ম কানুন ইত্যাদি সম্পর্কে নির্দেশ দান করা হয়েছে।
আয়াত ২৪৩-২৫৩। জিহাদকে যেনো ভুল বোঝা না হয়। জিহাদের প্রকৃতরূপকে বোঝানোর জন্য তালুত, গোলিয়াথ ডেভিডের ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। যুগে-যুগে, কালে-কালে নবী রাসূলদের পৃথিবীকে প্রেরণ করা হয়েছে মিথ্যার বিরুদ্ধে জেহাদ এবং সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য।
আয়াত ২৫৪-২৮৩। এই আয়াতসমূহে বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে সত্যিকারের গুণাবলী বা ধর্মাচারণ মুখের কথা নয়। সত্যিকারের ধর্ম নির্ভর করে-দয়া, মায়া, মহত্ব, স্রষ্টার প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি ও ভালোবাসার মধ্যে।
আয়াত ২৫৫। এই আয়াতটিতে আল্লাহ্র প্রকৃতি সম্বন্ধে বলা হয়েছে। আয়াতটিকে বলা হয় “আয়তাল কুরশী”। অর্থাৎ তিনি সেই বিশ্ব প্রতিপালক যার আসন ভূলোকে, দ্যুলোকে, সর্বত্র। যার উপস্থিতি বিশ্বব্যাপী।
আয়াত ২৮৪-২৮৬। এই সূরা শেষ করা হয়েছে এক স্রষ্টায় বিশ্বাস (Faith), তাঁর প্রতি আনুগত্য এবং ধর্মের ব্যাপারে ব্যক্তিগত দায় দায়িত্বের উপরে গুরুত্ব আরোপ করে।
কুরআন শরীফে সূরা বাকারা হচ্ছে সর্ববৃহৎ সূরা। ২৮২ নম্বর আয়াতটি হচ্ছে কুরআন শরীফের সর্ববৃহৎ আয়াত যা এই সূরাতে বিদ্যমান। আয়াত ৬৭-৭১ এ দেয়া উপমা অনুসারে গাভী নাম দেয়া হয়েছে। এই উপমায় দেখানো হয়েছে, যখন বিশ্বাসের ভিত থাকে দুর্বল, তখন আনুগত্য প্রকাশ করা হয় কষ্টসাধ্য। যখন বিশ্বাসের ভিতে চির ধরে মানুষ নানা অজুহাতে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকে। এমন কি যদিও তারা আক্ষরিক অর্থে, আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে স্রষ্টাকে মান্য করতে চেষ্টা করে কিন্তু তা হয় সম্পূর্ণ বাহ্যিক। যে বিশ্বাস, যে আনুগত্য আত্মার অন্তস্থল থেকে উৎসারিত নয় তা স্রষ্টার কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়। এসব লোকেরা নিজেদের ধার্মিক বলে প্রচার করলেও এরা আত্মিক দিক থেকে মৃত। এদের আত্মা মমিতে পরিণত হয়ে যায়। তাদের আত্মম্ভরিতা, স্বার্থপরতা, স্বনির্ভরশীলতা তাদের করে তোলে অহংকারী। ফলে তারা বুঝতে অপারগ যে আত্মিক দিক থেকে তারা মৃত। কারণ স্রষ্টার যে করুণা যা বিশ্বজগতকে বেষ্টন করে আছে, যে অমিয়ধারাতে সারা সৃষ্টি অবগাহন করে ধন্য তারা তা বুঝতে অসমর্থ। স্রষ্টার অস্তিত্ব তারা অনুভব করতে অসমর্থ। জীবন বহমান-গতিশীল, কর্মচঞ্চল। হীন, নীচ, কর্দমাক্ত জীবন থেকে উর্ধ্বলোকে আরোহণের চেষ্টাই হচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য। এটাই হচ্ছে এই সূরার মূল ধারা। এ সূরা মদিনায় নাজেল হওয়া সূরাগুলির মধ্যে প্রধান সূরা ।
আয়াতঃ 002.002
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,
This is the Book (the Qur’ân), whereof there is no doubt, a guidance to those who are Al-Muttaqûn [the pious and righteous persons who fear Allâh much (abstain from all kinds of sins and evil deeds which He has forbidden) and love Allâh much (perform all kinds of good deeds which He has ordained)].
ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
Thalika alkitabu la rayba feehi hudan lilmuttaqeena
YUSUFALI: This is the Book; in it is guidance sure, without doubt, to those who fear Allah;
PICKTHAL: This is the Scripture whereof there is no doubt, a guidance unto those who ward off (evil).
SHAKIR: This Book, there is no doubt in it, is a guide to those who guard (against evil).
KHALIFA: This scripture is infallible; a beacon for the righteous;
২৬। ‘আল্লাহ্ ভীরু বা তাকওয়া অবলম্বনকারী’-এ আরবী শব্দটির অর্থ আল্লাহ্ ভীতি। আল্লাহ্ ভীতি অর্থ এই নয় যে অপরাধীরা যেভাবে বিচারককে ভয় পায় সেভাবে শুধুমাত্র শাস্তির ভয়ে ভয় করা। তাকওয়ার মূল ভাব হচ্ছে আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসা। আর এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। অর্থাৎ মনের ঐকান্তিক ইচ্ছা আল্লাহ্র আদেশকে মেনে চলার বা যা থেকে আল্লাহ্ বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে স্বেচ্ছায় বিরত থাকা। আল্লাহ্র প্রতি এই ভালবাসাই হচ্ছে সকল কিছুর মূল চালিকাশক্তি। তাকওয়াকে এভাবে প্রকাশ করা যায়। প্রথমতঃ (১) আল্লাহ্কে ভয় করতে হবে ভালবেসে। (২) আল্লাহ্ যা অপছন্দ করেন তা থেকে দূরে থাকতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ্র আইন না ভাঙ্গা, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে না যাওয়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আল্লাহ্ বারে বারে বলেছেন-মিথ্যা কথা না বলতে, সত্যি কথা বলতে, অন্যকে না ঠকাতে, ন্যায় ও সত্যের পথে চলতে ইত্যাদি মেনে চলাই হচ্ছে আল্লাহ্র আইন মেনে চলা। আল্লাহ্কে ভালবেসে, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের আশায়, আল্লাহ্র অনুগ্রহের আশায় আমাদের জিহবা (অর্থাৎ কথা বা ভাষা), হাত (অর্থাৎ কাজ, সমাজ ও সংসারের প্রতি),মন ও মেধাকে সংযত করতে হবে। অর্থাৎ নিজেকে কথায়, কাজে, সমস্ত অন্যায় ও অসত্য থেকে শুধুমাত্র আল্লাহ্কে সন্তুষ্টি করার জন্য সংযত রাখতে হবে। (৩) অন্যায়, অসত্য ইত্যাদি থেকে নিজেকে সর্বদা বিরত রাখার ফলে ব্যক্তির চরিত্রে সৎগুণের জন্মলাভ করে, এই গুণাবলীই হচ্ছে ধর্মপরায়ণতার ভিত্তি। এরূপ ব্যক্তি সর্বান্তকরণে অসৎ ও অন্যায় পথ পরিহার করবে এবং নিজের জীবনে ন্যায়, সত্য ও কর্তব্যনিষ্ঠা, ধৈর্য্য প্রভৃতি গুণের প্রতিফলন ঘটাবে। এর জন্য প্রয়োজন সর্বশক্তি দিয়ে আল্লাহ্র পথে জিহাদ-Cause of God is the cause of justice and cause of oppressed। [দেখুন টিকা ৭৪০, আয়াত ৪৭ : ১৭]
আয়াতঃ 002.003
যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে
Who believe in the Ghaib and perform As-Salât (Iqâmat-as-Salât), and spend out of what we have provided for them [i.e. give Zakât , spend on themselves, their parents, their children, their wives, etc., and also give charity to the poor and also in Allâh’s Cause – Jihâd, etc.].
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
Allatheena yu/minoona bialghaybi wayuqeemoona alssalata wamimma razaqnahum yunfiqoona
YUSUFALI: Who believe in the Unseen, are steadfast in prayer, and spend out of what We have provided for them;
PICKTHAL: Who believe in the Unseen, and establish worship, and spend of that We have bestowed upon them;
SHAKIR: Those who believe in the unseen and keep up prayer and spend out of what We have given them.
KHALIFA: who believe in the unseen, observe the Contact Prayers (Salat), and from our provisions to them, they give to charity.
২৭। বিশ্বে যা কিছু সুন্দর সবকিছুর মূল চালিকাশক্তি সর্বশক্তিমান এক আল্লাহ্। আল্লাহ্ তাঁর বান্দাকে যা কিছু নেয়ামত দান করেছেন তা থেকে সৎকাজে দান করতে বলা হয়েছে। অনেক তফসীরকারগণ মনে করেন অর্থ এবং ধন-সম্পদই একমাত্র দান করার বিষয়বস্তু। কিন্তু আল্লাহ্র নেয়ামতকে শুধুমাত্র অর্থের নিক্তিতে মাপলে ভুল করা হবে। মানুষকে আল্লাহ্ সৃষ্টির সেরা জীব করেছেন সেটা শুধুমাত্র এজন্য নয় যে, সে আর্থিক সাচ্ছন্দ্য সংগ্রহে সক্ষম। মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাত’- সৃষ্টির সেরা জীব, কারণ তার চারিত্রিক গুণাবলী। চারিত্রিক গুণাবলীর কারণেই মানুষ কখনও ফেরেশতার সমতুল্য, আবার এর অভাবে পশুর সমান। এই সব চারিত্রিক গুণাবলী, মেধা, মননশক্তি সবই মহান আল্লাহ্র দান। এ সবই আল্লাহ্র নেয়ামত। আল্লাহ্র নেয়ামতকে আমরা তিন ভাগে বিভক্ত করতে পারি।
প্রথমত : বস্তুগত দান, যথা ধন-সম্পদ, খাদ্য, বাসস্থান, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। অর্থাৎ যা কিছু আমরা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করতে পারি, এ সব কিছুই এই শ্রেণীর নেয়ামতের অন্তর্গত।
দ্বিতীয়ত : স্পর্শাতীত দান অর্থাৎ যে নেয়ামত পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করা যায় না যথা- উচ্চ মর্যাদা, বংশ মর্যাদা, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপক্তি, সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্য, প্রতিভা, মেধা, বিদ্যা, বুদ্ধি ইত্যাদি যা ব্যক্তির চরিত্রের প্রকাশ পায় তা সবই আল্লাহ্র নেয়ামত।
তৃতীয়ত : বিবেক (Spiritual gift),জাগ্রত বিবেক আল্লাহ্র সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। যথা-ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা,ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা, অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা, মানুষকে তার গুণাবলীর দ্বারা বিচার করার ক্ষমতা, ভালোবাসার ক্ষমতা, গুণাবলীর সনাক্ত করার ক্ষমতা,ইত্যাদি ইত্যাদি।
আল্লাহ্ বিভিন্ন ব্যক্তিকে তার এই নেয়ামতের বিভিন্ন অংশ দান করে থাকেন। কেউ হয়তো অর্থ-সম্পদে সম্পদশীল, আবার কেউ উচ্চ পদ মর্যাদার অধিকারী, কেউ মেধা, বুদ্ধিতে কৃতী। আল্লাহ্ বলেছেন যার মধ্যে এই তিন ধরনের যে কোন ধরনের নেয়ামতের প্রকাশ ঘটুক না কেন তা নিয়ে অহংকার করার কিছুই নাই। এ সবই বান্দার জন্য আল্লাহ্র দান। এ দান কখনও একা ভোগ করতে নাই। আল্লাহ্র সন্তুষ্টি বিধানের জন্য, তার সৃষ্টির সেবার জন্য, মানুষের মঙ্গলার্থে এসব নেয়ামত বা আল্লাহ্র দানকে ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ যার অর্থ আছে তিনি অর্থ দান করবেন জনহিতকর কাজে। যার মেধা আছে তিনি সেই মেধা, যার প্রভাব প্রতিপত্তি আছে তিনি সেই প্রভাব প্রতিপত্তি ইত্যাদি যে নেয়ামতই বান্দার থাকুক না কেন তিনি সেই নেয়ামত আল্লাহ্র সন্তুষ্টি বিধানের জন্য মানুষের মঙ্গলের জন্য তার সৃষ্টির সেবার জন্য ব্যয় করবেন। অর্থাৎ অর্থ-সম্পদ, ক্ষমতা, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষা, সঙ্গীত, শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের যে দক্ষতা বা প্রতিভা যাই-ই থাকুক না কেন তা আল্লাহ্র সৃষ্টির মঙ্গলের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে আল্লাহ্র এবাদত করা। ঠিক সেইভাবে যে ব্যক্তি আত্মিক নেয়ামতে ধন্য বা বিবেকবান, তার উচিত তার সেই জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি সমাজের বিবেককে জাগ্রত করার কাজে নিবেদন করা। জনসাধারণের বিবেককে জাগ্রত করার জন্য, তারা যাতে ন্যায়কে-অন্যায় থেকে পার্থক্য করতে পারে, ভালকে মন্দ থেকে আলাদা করতে পারে, বিশ্ব মানবতার জন্য তাদের সেই জ্ঞানকে ব্যবহার বা বিতরণ করতে হবে। এর জন্য আমাদের কঠোর তপস্বী হওয়ার প্রয়োজন নাই অথবা অত্যন্ত কৃপণ বা অপচয়ী হওয়ারও প্রয়োজন নাই। এই হচ্ছে দানের সংজ্ঞা।
আয়াতঃ 002.004
এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।
And who believe in (the Qur’ân and the Sunnah) which has been sent down (revealed) to you (Muhammad Peace be upon him ) and in [the Taurât (Torah) and the Injeel (Gospel), etc.] which were sent down before you and they believe with certainty in the Hereafter. (Resurrection, recompense of their good and bad deeds, Paradise and Hell, etc.).
والَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
Waallatheena yu/minoona bima onzila ilayka wama onzila min qablika wabial-akhirati hum yooqinoona
YUSUFALI: And who believe in the Revelation sent to thee, and sent before thy time, and (in their hearts) have the assurance of the Hereafter.
PICKTHAL: And who believe in that which is revealed unto thee (Muhammad) and that which was revealed before thee, and are certain of the Hereafter.
SHAKIR: And who believe in that which has been revealed to you and that which was revealed before you and they are sure of the hereafter.
KHALIFA: And they believe in what was revealed to you, and in what was revealed before you, and with regard to the Hereafter, they are absolutely certain.
২৮। ঈমান বা আল্লাহ্তে বিশ্বাস শুধুমাত্র একটি মৌখিক স্বীকারোক্তি মাত্র নয়। এটি এমন এক বিশ্বাস যা উৎসারিত হয় গভীর বোধ, অবিচল আস্থা, সেই আস্থা ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতা থেকে-যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র আদেশ-নির্দেশের প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনের বাস্তব চর্চা এবং নিঃস্বার্থ মানবসেবার মাধ্যমে।
আয়াতঃ 002.005
তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।
They are on (true) guidance from their Lord, and they are the successful.
أُوْلَـئِكَ عَلَى هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
Ola-ika AAala hudan min rabbihim waola-ika humu almuflihoona
YUSUFALI: They are on (true) guidance, from their Lord, and it is these who will prosper.
PICKTHAL: These depend on guidance from their Lord. These are the successful.
SHAKIR: These are on a right course from their Lord and these it is that shall be successful.
KHALIFA: These are guided by their Lord; these are the winners.
২৯। ‘সফলকাম’ হবে বা ‘উন্নতি’ লাভ করবে অর্থাৎ আল্লাহ্র নেয়ামতের অধিকারী হবে। এগুলি সেইসব দুর্লভ চারিত্রিক গুণাবলী যার উল্লেখ পূর্বে করা হয়েছে। অর্থাৎ বান্দা যদি আল্লাহ্র হুকুম বা আল্লাহ্র আইন মেনে চলে (যথা-সত্য কথা বলে, ন্যায়ের জন্য জিহাদ করে, মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে ইত্যাদি) তবে তার চরিত্রে দুর্লভ গুণাবলীর জন্ম নেবে। বোঝানোর জন্য একটি ছোট উদাহরণ দেয়া গেলো। সত্য কথা বলার অভ্যাস করা আল্লাহ্র হুকুম। আমাদের রাসূল (সাঃ) জীবনে কোনওদিন এমনকি নবুয়তের পূর্বেও একটিও মিথ্যা কথা বলেন নাই। এটাই হচ্ছে আমাদের সর্বপ্রথম এবং প্রধান সুন্নত এবং ফরজ। সত্যবাদীতা এক ধরণের অভ্যাস। এর থেকে যে চারিত্রিক গুণাবলীর জন্ম নেয় তা হচ্ছে সততা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি। আবার মিথ্যা বলাও একধরণের অভ্যাস। এর থেকে চরিত্রে যে সব দোষের সৃষ্টি হয়-তা হচ্ছে দূর্নীতিপরায়ণতা, অবিশ্বস্ততা, স্বার্থপরতা, অন্যকে ঠকানোর প্রবণতা ইত্যাদি। আত্মার উন্নতি লাভই হচ্ছে আধ্যাত্মিক সফলতার মূল কথা। সুতরাং যারা আল্লাহ্র কেতাবে বিশ্বাসী এবং সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করেন আল্লাহ্ তাদের আত্মিক উন্নতি দান করেন। এর ফলে যে সমাজ আল্লাহ্র আইন মেনে চলে সে সমাজ শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে। কারণ একটি পাপ অপর একটি পাপকে আকর্ষণ করে, অনুরূপভাবে একটি নেকীর (অর্থাৎ চারিত্রিক গুণাবলীর) বদলায় অপর নেকী বা (চারিত্রিক গুণাবলী) সৃষ্ট হয়।
‘নেকী” একটি বিমূর্ত অর্থজ্ঞাপক শব্দ। কিন্তু আমাদের সমাজে নেকী শব্দটিকে বস্তুগতভাবে উপস্থাপন করা হয়। যেমন-কোন কোন মৌলভী সাহেবেরা বলে থাকেন-অমুক কাজটি করলে আল্লাহ্ ৭০টি নেকী দান করবেন। নেকীকে এরকম বস্তুগতভাবে উপস্থাপন করা যায় না। নেকী হচ্ছে আল্লাহ্র সেই বিশেষ নেয়ামত যা আত্মাকে সমৃদ্ধ করে, ফলে আত্মা দুঃখ-কষ্ট ভরা পৃথিবীতে থেকেও দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পায়; আত্মা অপার শান্তির পরশ অনুভব করে। সেই হিসেবে নেকী হচ্ছে চারিত্রিক গুণাবলী কারণ একমাত্র শুদ্ধ চারিত্রিক গুণাবলীই মানব সন্তানকে লোভ-লালসা ভরা পৃথিবীর উর্ধ্বে স্থাপন করতে পারে। আর ব্যক্তি যখন লোভ-লালসা ভরা পৃথিবীতে থেকেও তার উর্ধ্বে অবস্থান করতে পারে, শুধু তখনই সে বেহেশতি শান্তির স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ, ঈর্ষা-নীচতা আত্মার ভিতরে যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। এই আয়াতে যে তিন শ্রেণীর লোকের কথা বলা হয়েছে, এরা হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর।
আয়াতঃ 002.006
নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না।
Verily, those who disbelieve, it is the same to them whether you (O Muhammad Peace be upon him ) warn them or do not warn them, they will not believe.
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ
Inna allatheena kafaroo sawaon AAalayhim aanthartahum am lam tunthirhum la yu/minoona
YUSUFALI: As to those who reject Faith, it is the same to them whether thou warn them or do not warn them; they will not believe.
PICKTHAL: As for the Disbelievers, Whether thou warn them or thou warn them not it is all one for them; they believe not.
SHAKIR: Surely those who disbelieve, it being alike to them whether you warn them, or do not warn them, will not believe.
KHALIFA: As for those who disbelieve, it is the same for them; whether you warn them, or not warn them, they cannot believe.
৩০। এই আয়াতে দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকদের কথা আলোচনা করা হয়েছে। কাফের শব্দটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ্র আইন অমান্য করে তাদের। আল্লাহ্র সান্নিধ্য বা হেদায়েত পেতে হলে প্রয়োজন ঐকান্তিক বিশ্বাস ও আন্তরিকতা। আন্তরিকভাবে আল্লাহ্র কাছে হেদায়েতের জন্য আকুতি জানাতে হবে। যে আল্লাহ্র কাছে আন্তরিকভাবে হেদায়েত বা সত্যপথে চলার নিশানা অনুসন্ধান করে, আল্লাহ্র অসীম রহমত তাকে বিধৌত করে। সত্য পথে চলার নিশানা তাদের নিকট হয় স্পষ্ট প্রতীয়মান। কিন্তু যদি কেউ অহংকারে স্ফীত হয়ে আল্লাহ্র আইন (God’s Law) লঙ্ঘন করে, তাকে আল্লাহ্ হেদায়েত করেন না। কারণ মানুষই একমাত্র প্রাণী যাকে আল্লাহ্ সীমিত আকারে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি (Limited free will) দান করেছেন। সত্য পথ ও ভুল পথ এর যে কোন একটা পথকে বেছে নেবার স্বাধীনতা একমাত্র মানুষেরই আছে। কারণ মানুষ হচ্ছে ‘সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব’। মানুষের শারীরিক যে চাহিদা তার সাথে প্রাণীকূলের শারীরিক চাহিদারও কোনও পার্থক্য নাই। আরাম-আয়েশ, ভাল খাদ্য, প্রজনন ইত্যাদি জৈবিক ব্যাপারে মানুষ ও প্রাণীকূলের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নাই। পার্থক্য হচ্ছে মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী। নিজের সুখ ও সাচ্ছন্দ্য নিজে সৃষ্টি করে নিতে পারে। নিজের ভাল নিজে বুঝতে পারে। ইচ্ছা করলে সে চরিত্রের মাধুর্যে ফেরেশতার সমকক্ষ হতে পারে আবার ইন্দ্রিয়ের দাসে পরিণত হয়ে পশুর থেকে নিম্নস্তরে শয়তানে পরিণত হতে পারে। মানুষকে আল্লাহ্ খুব ‘সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি’ ( Limited free will ) দান করেছেন। যা সৃষ্টির অন্য কোন প্রাণীকে দান করা হয় নাই।
এই ‘সীমিত স্বাধীনতা’ সর্বপ্রথম হযরত আদম (আঃ) কে দেয়া হয় এবং এই সীমিত স্বাধীনতা প্রয়োগের ক্ষমতাও তাকে দেয়া হয়। নির্দেশ দান করা হয় যে নির্দিষ্ট গাছের নিকটবর্তী যেন তিনি না হন। কিন্তু আমাদের পূর্ব পুরুষ হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ্ কর্তৃক দেয়া সীমিত স্বাধীনতার অপব্যবহার করেন ও প্রলোভনের কাছে আত্মসমর্পনণ করেছিলেন ফলে আল্লাহ্র হুকুম অমান্য করেছিলেন। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থাৎ আল্লাহ্ প্রদত্ত সীমিত স্বাধীনতার অপব্যবহার করে, আল্লাহ্র দেখানো পথকে অস্বীকার করে, আল্লাহ্র আইন লঙ্ঘন করে, আল্লাহ্ তাদের হেদায়েত করেন না। ফলস্বরূপ তাদের আধ্যাত্মিক জগত ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। শারীরিকভাবে তাদের আল্লাহ্ প্রদত্ত অন্যসব দক্ষতা ও মানসিক শক্তি (Faculty of mind) অটুট থাকে। কর্মময় পৃথিবীতে হয়তো বা তারা হয় অত্যন্ত সফল কিন্তু তাদের আধ্যাত্মিক জগৎ বা বিবেক (Spiritual Faculty) হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং মৃত। ফলে তাদের সত্যকে দেখার ক্ষমতা, অনুধাবন করার ক্ষমতা, বুঝতে পারার ক্ষমতা হয় বিলুপ্ত। ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য করার ক্ষমতা হয় দূরীভূত। আরও দেখুন টীকা ৯৩ [২:৮৮]
আয়াতঃ 002.007
আল্লাহ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
Allâh has set a seal on their hearts and on their hearings, (i.e. they are closed from accepting Allâh’s Guidance), and on their eyes there is a covering. Theirs will be a great torment.
خَتَمَ اللّهُ عَلَى قُلُوبِهمْ وَعَلَى سَمْعِهِمْ وَعَلَى أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ عظِيمٌ
Khatama Allahu AAala quloobihim waAAala samAAihim waAAala absarihim ghishawatun walahum AAathabun AAatheemun
YUSUFALI: Allah hath set a seal on their hearts and on their hearing, and on their eyes is a veil; great is the penalty they (incur).
PICKTHAL: Allah hath sealed their hearing and their hearts, and on their eyes there is a covering. Theirs will be an awful doom.
SHAKIR: Allah has set a seal upon their hearts and upon their hearing and there is a covering over their eyes, and there is a great punishment for them.
KHALIFA: GOD seals their minds and their hearing, and their eyes are veiled. They have incurred severe retribution.
৩১। সমস্ত সত্য ও সুন্দরের উৎস আল্লাহ্। যদি আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যকে অস্বীকার করি, অন্যায় করি, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করি, আল্লাহ্র আইন অমান্য করি, তবে আল্লাহ্ আমাদের হৃদয়কে যে পবিত্রভাবে সৃষ্টি করেছেন-অন্তরের সেই পবিত্রতা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। আমরা আল্লাহ্র অসীম রহমত থেকে বঞ্চিত হতে থাকবো। এর ফলে আমাদের অন্তরে সত্যিকারের ধর্মবোধ জন্মাবে না। আমাদের বিবেক ধীরে ধীরে অন্ধকার নিমজ্জিত হবে। শেষ পর্যন্ত আমাদের বিবেক (Spiritual Faculty) হয়ে যাবে মৃত। এর ফলে আমাদের অন্তরে সত্যকে ধারণ করার ক্ষমতা লোপ পাবে। সত্যকে অসত্য থেকে, ন্যায়কে অন্যায় থেকে পার্থক্য করার ক্ষমতা রহিত হবে। আমাদের সমস্ত ইন্দ্রিয় হবে সত্য বিমুখ, সত্যের আলো এবং ভালোর আলো সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। এটাই হচ্ছে আল্লাহ্ প্রদত্ত শাস্তি। চক্ষুষ্মান ব্যক্তি হয়েও অন্তর্দৃষ্টি বিহীন হবে। শ্রবণশক্তি থাকা সত্ত্বেও সত্য ও ন্যায়ের আহবান তার শ্রবণে পৌঁছাবে না। একেই বলা হয়েছে চক্ষু ও কর্ণে সীল মোহর দ্বারা বন্ধ করে দেওয়া। [দেখুন টিকা ৬৩১]
৩২। পৃথিবীতে আদম সন্তানের অবস্থান হচ্ছে স্বল্পকালীন। এই স্বল্পকালীন সময় হচ্ছে নিজেকে পরকালের জন্য প্রস্তুত করার শিক্ষানবীশকাল (Probationary Period) আত্মার উন্নতি লাভ করাই হচ্ছে এই পৃথিবীতে অবস্থানের একমাত্র লক্ষ্য। আত্মার উন্নতিকে এখানে সমৃদ্ধি এবং আত্মার অধঃপতনকে এখানে শাস্তিরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। পাপের পথ পিচ্ছিল ও নিম্নগামী। এই পিচ্ছিল পথে যাত্রা শুরু করলে গতি হয় ক্রমাগত দ্রুত ও ত্বরাণ্বিত। শেষ পর্যন্ত এ পথ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভবপর হয় না। কারণ একটি পাপ বহু পাপের জন্ম দেয়, যেমন-একটি পূণ্য আরও পূণ্যকে আকর্ষণ করে।
আয়াতঃ 002.008
আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।
And of mankind, there are some (hypocrites) who say: ”We believe in Allâh and the Last Day” while in fact they believe not.
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللّهِ وَبِالْيَوْمِ الآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ
Wamina alnnasi man yaqoolu amanna biAllahi wabialyawmi al-akhiri wama hum bimu/mineena
YUSUFALI: Of the people there are some who say: “We believe in Allah and the Last Day;” but they do not (really) believe.
PICKTHAL: And of mankind are some who say: We believe in Allah and the Last Day, when they believe not.
SHAKIR: And there are some people who say: We believe in Allah and the last day; and they are not at all believers.
KHALIFA: Then there are those who say, “We believe in GOD and the Last Day,” while they are not believers.
রুকু – ২
৩৩। এবারে আল্লাহ্ তৃতীয় শ্রেণীর লোকদের সম্বন্ধে বলেছেন। এরা হচ্ছে মিথ্যুক অর্থাৎ মুনাফিক। এরা নিজেদের কাছে নিজেরা বিশ্বস্ত নয়। এরা মুখে বলে এক কথা কিন্তু এদের অন্তর বলে অন্য কথা। ফলে এদের অন্তরে জন্ম নেয় দুরারোগ্য ব্যাধি (২ : ১০)। সংসারে ভালো অপেক্ষা মন্দের প্রভাব বা বিস্তার ঘটে অত্যন্ত দ্রুত। মুনাফিকদের অন্তরের ব্যাধি সেইরূপ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অবিশ্বস্ততা, স্বার্থপরতা, হিংসা-দ্বেষ প্রভৃতি বিভিন্ন রিপু মুনাফিকের অন্তর ছেয়ে ফেলে। এই সকলই মুনাফিকের অন্তরের ব্যাধি। যদি সময়মত সাবধানতা অবলম্বন করা যায় অন্তরের এই অবস্থা (State of mind) থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘদিন যারা মিথ্যার আশ্রয়ে আত্মাকে কলুষিত করে তাদের আত্মার উপরে কঠিন আবরণ পড়ে। অন্তর হয়ে যায় পাথরের ন্যায় শক্ত। সে শক্ত পর্দা ভেদ করে সত্যের আলো তাদের অন্তরে পৌঁছাতে পারে না।
আয়াতঃ 002.009
তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না।
They (think to) deceive Allâh and those who believe, while they only deceive themselves, and perceive (it) not!
يُخَادِعُونَ اللّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلاَّ أَنفُسَهُم وَمَا يَشْعُرُونَ
YukhadiAAoona Allaha waallatheena amanoo wama yakhdaAAoona illa anfusahum wama yashAAuroona
YUSUFALI: Fain would they deceive Allah and those who believe, but they only deceive themselves, and realise (it) not!
PICKTHAL: They think to beguile Allah and those who believe, and they beguile none save themselves; but they perceive not.
SHAKIR: They desire to deceive Allah and those who believe, and they deceive only themselves and they do not perceive.
KHALIFA: In trying to deceive GOD and those who believe, they only deceive themselves without perceiving.
০৯। আল্লাহ্ ও বিশ্বাসীদের তারা প্রতারিত করতে চায়, কিন্তু [এর দ্বারা] তার শুধুমাত্র নিজেদের প্রতারিত করে অথচ তারা [তা] বুঝতে পারে না।১০। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি; এবং আল্লাহ্ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করেছেন ৩৪; তারা [ভোগ করবে] নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।
৩৪। মিথ্যুক বা মুনাফিকেরা সব সময়েই হয় অবিশ্বস্ত (Insincere) এবং নীতিজ্ঞানশূন্য। একজন নীতি জ্ঞানশূন্য লোক হয় লোভী এবং সুবিধাবাদী। সুবিধাবাদীরা সর্বদা মন্দের সাথে ভালোর এবং সত্য ও ন্যায়ের সাথে অন্যায়, অসত্য ও দুর্নীতির সমঝোতা করতে ব্যস্ত থাকে। কপটতাই তাদের ব্যাধি। কারণ এই সমঝোতার ফলে সে তার অবস্থানকে সুবিধাজনক স্থানে নিতে সক্ষম হয়। নিজের অবস্থান ভালো করাই মুনাফিকের একমাত্র উদ্দেশ্য। সুবিধা ভোগ করাই তাদের একমাত্র ধ্যান ধারণা। কোনও ন্যায়-নীতি তাদের চিন্তায় স্থান পায় না। কিন্তু সংসারে কখনও ভাল ও মন্দের, ন্যায় ও অন্যায়ের, সত্য ও মিথ্যার সন্ধি হতে পারে না। যারা তা করতে চায় তার অন্তরে ব্যাধিগ্রস্থ। কারণ তারা তাদের নিজেদের অন্তরের কাছে বিশ্বস্ত নয়। এর ফলে তাদের অন্তর কোন ভাল গ্রহণ করতে পারে না। যদি কোন ভালও তাদের কাছে আসে, তবে তারা তা মন্দে রূপান্তরিত করে ফেলে। এরকম উদাহরণ আমরা অহরহ আমাদের চারপাশে দেখি। এখানে আল্লাহ্ উদাহরণ দিচ্ছেন যে, বৃষ্টি আল্লাহ্র নেয়ামত স্বরূপ। যে বৃষ্টিধারা ধরনীকে ফুল-ফল ও ফসলে ভরিয়ে দেয়। ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য্যে ধরণীকে করে আমোদিত। সেই বৃষ্টির ফলে আগাছার বৃদ্ধিতে সহায়তা হয়। কাঁটাগাছের কাঁটার বৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত হয়। শুধু যে ত্বরাণ্বিত হয় তাই-ই নয় কাঁটাকে করে শক্তিশালী। সেইরূপ মুনাফেকের অন্তরের সংস্পর্শে ‘ভালো’ মন্দরূপ ধারণ করে। মুনাফেকের ব্যাধি তার অন্তরে। ঐ কাঁটা গাছের মত, আল্লাহ্র রহমত এদের জন্য সুফল বয়ে না এনে অন্তরের ব্যাধির ব্যাপ্তি ঘটায়।
আয়াতঃ 002.010
তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।
In their hearts is a disease (of doubt and hypocrisy) and Allâh has increased their disease. A painful torment is theirs because they used to tell lies.
فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللّهُ مَرَضاً وَلَهُم عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
Fee quloobihim maradun fazadahumu Allahu maradan walahum AAathabun aleemun bima kanoo yakthiboona
YUSUFALI: In their hearts is a disease; and Allah has increased their disease: And grievous is the penalty they (incur), because they are false (to themselves).
PICKTHAL: In their hearts is a disease, and Allah increaseth their disease. A painful doom is theirs because they lie.
SHAKIR: There is a disease in their hearts, so Allah added to their disease and they shall have a painful chastisement because they
KHALIFA: In their minds there is a disease. Consequently, GOD augments their disease. They have incurred a painful retribution for their lying.
০৯। আল্লাহ্ ও বিশ্বাসীদের তারা প্রতারিত করতে চায়, কিন্তু [এর দ্বারা] তার শুধুমাত্র নিজেদের প্রতারিত করে অথচ তারা [তা] বুঝতে পারে না।১০। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি; এবং আল্লাহ্ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করেছেন ৩৪; তারা [ভোগ করবে] নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।
৩৪। মিথ্যুক বা মুনাফিকেরা সব সময়েই হয় অবিশ্বস্ত (Insincere) এবং নীতিজ্ঞানশূন্য। একজন নীতি জ্ঞানশূন্য লোক হয় লোভী এবং সুবিধাবাদী। সুবিধাবাদীরা সর্বদা মন্দের সাথে ভালোর এবং সত্য ও ন্যায়ের সাথে অন্যায়, অসত্য ও দুর্নীতির সমঝোতা করতে ব্যস্ত থাকে। কপটতাই তাদের ব্যাধি। কারণ এই সমঝোতার ফলে সে তার অবস্থানকে সুবিধাজনক স্থানে নিতে সক্ষম হয়। নিজের অবস্থান ভালো করাই মুনাফিকের একমাত্র উদ্দেশ্য। সুবিধা ভোগ করাই তাদের একমাত্র ধ্যান ধারণা। কোনও ন্যায়-নীতি তাদের চিন্তায় স্থান পায় না। কিন্তু সংসারে কখনও ভাল ও মন্দের, ন্যায় ও অন্যায়ের, সত্য ও মিথ্যার সন্ধি হতে পারে না। যারা তা করতে চায় তার অন্তরে ব্যাধিগ্রস্থ। কারণ তারা তাদের নিজেদের অন্তরের কাছে বিশ্বস্ত নয়। এর ফলে তাদের অন্তর কোন ভাল গ্রহণ করতে পারে না। যদি কোন ভালও তাদের কাছে আসে, তবে তারা তা মন্দে রূপান্তরিত করে ফেলে। এরকম উদাহরণ আমরা অহরহ আমাদের চারপাশে দেখি। এখানে আল্লাহ্ উদাহরণ দিচ্ছেন যে, বৃষ্টি আল্লাহ্র নেয়ামত স্বরূপ। যে বৃষ্টিধারা ধরনীকে ফুল-ফল ও ফসলে ভরিয়ে দেয়। ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য্যে ধরণীকে করে আমোদিত। সেই বৃষ্টির ফলে আগাছার বৃদ্ধিতে সহায়তা হয়। কাঁটাগাছের কাঁটার বৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত হয়। শুধু যে ত্বরাণ্বিত হয় তাই-ই নয় কাঁটাকে করে শক্তিশালী। সেইরূপ মুনাফেকের অন্তরের সংস্পর্শে ‘ভালো’ মন্দরূপ ধারণ করে। মুনাফেকের ব্যাধি তার অন্তরে। ঐ কাঁটা গাছের মত, আল্লাহ্র রহমত এদের জন্য সুফল বয়ে না এনে অন্তরের ব্যাধির ব্যাপ্তি ঘটায়।
আয়াতঃ 002.011
আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি।
And when it is said to them: ”Make not mischief on the earth,” they say: ”We are only peacemakers.”
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لاَ تُفْسِدُواْ فِي الأَرْضِ قَالُواْ إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ
Wa-itha qeela lahum la tufsidoo fee al-ardi qaloo innama nahnu muslihoona
YUSUFALI: When it is said to them: “Make not mischief on the earth,” they say: “Why, we only Want to make peace!”
PICKTHAL: And when it is said unto them: Make not mischief in the earth, they say: We are peacemakers only.
SHAKIR: And when it is said to them, Do not make mischief in the land, they say: We are but peace-makers.
KHALIFA: When they are told, “Do not commit evil,” they say, “But we are righteous!”
১১। যখন তাদের বলা হয়, ‘পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না,’ তারা বলে, ‘কেন, আমরা তো কেবলমাত্র শান্তি স্থাপন করতে চাচ্ছি।’১২। নিশ্চয়ই এরাই তারা যারা অশান্তি সৃষ্টি করে, কিন্তু তারা [তা] বুঝতে পারে না ৩৫।
৩৫। যেহেতু মুনাফেকের ব্যাধি তার অন্তরে, তাদের ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা হবে তিরোহিত, ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার অন্তর্দৃষ্টির হবে অভাব। ফলে এ রকম লোক যখন দেশের শাসন ব্যবস্থায় আসে অথবা কোনও দায়িত্বপূর্ণ পদ গ্রহণ করে এমন কি সমাজ-জীবনের যে কোন ক্ষু্দ্রতম কাজেও তারা অংশগ্রহণ করে; তখন সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা হয় বিঘ্নিত। তারা সমাজ-জীবনকে কলুষিত করে, অশান্তির সৃষ্টি করে। কারণ, আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অন্তর্দৃষ্টি ব্যতীত সমাজ ও সংসারে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব নয়। আর আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মুনাফিকের অন্তরে অনুপস্থিত। কিন্তু মুনাফিকেরা মনে করে তারা শান্তির জন্যই কাজ করছে-কারণ তাদের দূরদৃষ্টির অভাবে প্রকৃত শান্তি ও শৃঙ্খলার রূপ অনুধাবন করতে তারা হয় অপারগ।
আয়াতঃ 002.012
মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।
Verily! They are the ones who make mischief, but they perceive not.
أَلا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُونَ وَلَـكِن لاَّ يَشْعُرُونَ
Wa-itha qeela lahum aminoo kama amana alnnasu qaloo anu/minu kama amana alssufahao ala innahum humu alssufahao walakin la yaAAlamoona
YUSUFALI: Of a surety, they are the ones who make mischief, but they realise (it) not.
PICKTHAL: Are not they indeed the mischief-makers? But they perceive not.
SHAKIR: Now surely they themselves are the mischief makers, but they do not perceive.
KHALIFA: In fact, they are evildoers, but they do not perceive.
১১। যখন তাদের বলা হয়, ‘পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না,’ তারা বলে, ‘কেন, আমরা তো কেবলমাত্র শান্তি স্থাপন করতে চাচ্ছি।’১২। নিশ্চয়ই এরাই তারা যারা অশান্তি সৃষ্টি করে, কিন্তু তারা [তা] বুঝতে পারে না ৩৫।
৩৫। যেহেতু মুনাফেকের ব্যাধি তার অন্তরে, তাদের ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা হবে তিরোহিত, ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার অন্তর্দৃষ্টির হবে অভাব। ফলে এ রকম লোক যখন দেশের শাসন ব্যবস্থায় আসে অথবা কোনও দায়িত্বপূর্ণ পদ গ্রহণ করে এমন কি সমাজ-জীবনের যে কোন ক্ষু্দ্রতম কাজেও তারা অংশগ্রহণ করে; তখন সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা হয় বিঘ্নিত। তারা সমাজ-জীবনকে কলুষিত করে, অশান্তির সৃষ্টি করে। কারণ, আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অন্তর্দৃষ্টি ব্যতীত সমাজ ও সংসারে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব নয়। আর আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মুনাফিকের অন্তরে অনুপস্থিত। কিন্তু মুনাফিকেরা মনে করে তারা শান্তির জন্যই কাজ করছে-কারণ তাদের দূরদৃষ্টির অভাবে প্রকৃত শান্তি ও শৃঙ্খলার রূপ অনুধাবন করতে তারা হয় অপারগ।
আয়াতঃ 002.013
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না।
And when it is said to them (hypocrites): ”Believe as the people (followers of Muhammad Peace be upon him , Al-Ansâr and Al-Muhajirûn) have believed,” they say: ”Shall we believe as the fools have believed?” Verily, they are the fools, but they know not.
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاء أَلا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاء وَلَـكِن لاَّ يَعْلَمُونَ
Wa-itha qeela lahum aminoo kama amana alnnasu qaloo anu/minu kama amana alssufahao ala innahum humu alssufahao walakin la yaAAlamoona
YUSUFALI: When it is said to them: “Believe as the others believe:” They say: “Shall we believe as the fools believe?” Nay, of a surety they are the fools, but they do not know.
PICKTHAL: And when it is said unto them: believe as the people believe, they say: shall we believe as the foolish believe? are not they indeed the foolish? But they know not.
SHAKIR: And when it is said to them: Believe as the people believe they say: Shall we believe as the fools believe? Now surely they themselves are the fools, but they do not know.
KHALIFA: When they are told, “Believe like the people who believed,” they say, “Shall we believe like the fools who believed?” In fact, it is they who are fools, but they do not know.
৩৬। মুনাফেকের চরিত্রের আর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা নিন্দুক হয়ে থাকে। এদের চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আত্মম্ভরিতা ও অহংকার। নিজেকে সর্বদা সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তা করা। যারা বিশ্বাসী ও ধার্মিক, তারা অবশ্যই আল্লাহ্র আইন মেনে চলবে । তারা হবে সত্য ও ন্যায়ের পূজারী। এটা মুনাফেকের চোখে বোকামীর সামিল কিন্তু তারা জানে না যে আল্লাহ্র চোখে মুনাফেকেরা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও বোকা।
আয়াতঃ 002.014
আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্রা।
And when they meet those who believe, they say: ”We believe,” but when they are alone with their Shayâtin (devils – polytheists, hypocrites, etc.), they say: ”Truly, we are with you; verily, we were but mocking.”
وَإِذَا لَقُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْاْ إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُواْ إِنَّا مَعَكْمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِؤُونَ
Wa-itha laqoo allatheena amanoo qaloo amanna wa-itha khalaw ila shayateenihim qaloo inna maAAakum innama nahnu mustahzi-oona
YUSUFALI: When they meet those who believe, they say: “We believe;” but when they are alone with their evil ones, they say: “We are really with you: We (were) only jesting.”
PICKTHAL: And when they fall in with those who believe, they say: We believe; but when they go apart to their devils they declare: Lo! we are with you; verily we did but mock.
SHAKIR: And when they meet those who believe, they say: We believe; and when they are alone with their Shaitans, they say: Surely we are with you, we were only mocking.
KHALIFA: When they meet the believers, they say, “We believe,” but when alone with their devils, they say, “We are with you; we were only mocking.”
৩৭। মুনাফেকী যখন অন্তরের অন্তঃস্থলে গভীরভাবে তার শিকড় বিস্তার করে, তখন তারা হয়ে উঠে অত্যন্ত কপট ও ভণ্ড। মুখে মধু ঢেলে তারা ধার্মিক লোকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে যেনো তাদের প্রকৃতরূপ বিশ্ববাসীরা অনুধাবন করতে না পারে। কিন্তু যখন তারা স্বগোত্রে প্রত্যাবর্তন করে তখন নিজমূর্তি ধারণ করে। কিন্তু কপটতা, ভণ্ডামীর পরিণতি কখনও ভালো হয় না। একে আল্লাহ্ তুলনা করেছেন সেই লোকের সাথে যে তার বাণিজ্যে মুনাফা লাভের পরিবর্তে লোকসান দিয়েছে। কারণ এই পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান খুবই ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে আমরা এসেছি বেহেশ্ত লাভের বাণিজ্যে। আত্মা তার মূলধন। এই মূলধনকে যে উন্নত করতে পারবে তারই আছে মুনাফা। অন্যথায় যে আত্মাকে লোভ-লালসা, অন্যায়, অসত্যের কাছে বিক্রি করে সে ঐ ব্যক্তির মত যে বাণিজ্যে লোকসান দেয়।
আয়াতঃ 002.015
বরং আল্লাহই তাদের সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান ও পেরেশান থাকে।
Allâh mocks at them and gives them increase in their wrong-doings to wander blindly.
اللّهُ يَسْتَهْزِىءُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
Allahu yastahzi-o bihim wayamudduhum fee tughyanihim yaAAmahoona
YUSUFALI: Allah will throw back their mockery on them, and give them rope in their trespasses; so they will wander like blind ones (To and fro).
PICKTHAL: Allah (Himself) doth mock them, leaving them to wander blindly on in their contumacy.
SHAKIR: Allah shall pay them back their mockery, and He leaves them alone in their inordinacy, blindly wandering on.
KHALIFA: GOD mocks them, and leads them on in their transgressions, blundering.
১৫। তাদের ঠাট্টা-তামাশা আল্লাহ্ তাদের উপরে ছুড়ে দেবেন এবং তাদের সীমালংঘনের জন্য [অবাধ্যতার] রশিকে লম্বা করে দেবেন, যেনো তারা অন্ধের ন্যায় [সামনে পিছনে] পথভ্রষ্ট ভাবে ঘুরে বেড়ায়।১৬। এরাই তারা যারা হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রান্তি কিনে নিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা বাণিজ্য লাভজনক নয়, এবং তারা সত্য পথের নির্দেশ হারিয়ে ফেলেছে।
১৭। তাদের উপমা সেই ব্যক্তির ন্যায় ৩৮, যে আগুন জ্বালালো। যখন তা তার চতুর্দিক আলোকিত করলো, আল্লাহ্ তাদের আলো সরিয়ে নিলেন এবং তাদের ঘোর অন্ধকারে পরিত্যাগ করলেন, যেনো তারা দেখতে না পায়।
১৮। তারা বধির, মূক এবং অন্ধ, তারা [সঠিক পথে] ফিরবে না।
৩৮। মুনাফিকের আত্মা ভণ্ডামী, জুয়াচুরি, অসত্য, অন্যায়ে পরিপূর্ণ। এগুলির সাহায্যে সে খুব সহজেই কোনও কাজে জয়লাভ করে এবং প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়, সেই লোকটির মত যে ক্ষণস্থায়ী আগুন জ্বালাতে সক্ষম হয়ে চারিদিকের গাঢ় অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং সকলের প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু তার জ্বালানো আগুন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এক সময় তা নিভে যায়। ফলে চারিদিক আবার গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। হঠাৎ আলোর ঝলকানির পরে এ গাঢ়তা পূর্বের গাঢ়তার থেকে আরও বেশি প্রতীয়মান হয়। এই উপমার সাহায্যে আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন যে, যেসব কাজের ভিত্তি অন্যায়, অসত্য, অবিশ্বাস, ভণ্ডামীর উপর প্রতিষ্ঠিত, তার ফল কখনও স্থায়ী হয় না। ঐ কাজের সাফল্য অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী, আগুণের ক্ষণস্থায়ী আলোর মত। যে আলো অন্ধকারকে চিরতরে দূর করতে অপারগ। মুনাফিকেরা ভণ্ডামীর সাহায্যে জয়ী হতে চায়। ফলে তার কাজের নিয়তে আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস, সত্যের প্রতি বিশ্বস্ততা, প্রতিপালকের রহমতের আশা সবই থাকে অনুপস্থিত। মুনাফিকের কাজের নিয়ত কখনই মহৎ হয় না। কখনই ভালো হয় না। ফলে সময়ের বৃহত্তর পরিসরে মুনাফিকের কাজের নিয়ত বা অন্তরের উদ্দেশ্য সকলের নিকট পরিস্ফুটিত হয়ে যায়। সত্য প্রকাশিত হয়। ফলে কাজের সব পরিণতি হয় বিফল। সত্যের উদ্ভাসিত আলোতে মুনাফিকের অন্তর ভয়ে ত্রাসে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। অন্তরের ভয় ত্রাস, মুনাফিকদের সুস্থ চিন্তাধারাকে বাধাগ্রস্থ করে, ফলে তারা সত্যকে জানতে, সত্যকে অনুধাবন করতে, শুনতে বা দেখতে অক্ষম হয়। মুনাফিকের আত্মার চারিদিক প্রাচীর বেষ্টিত হয়ে যায়। প্রাচীর বেষ্টিত স্থান যেমন সূর্যের ঝলমলে আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ঠিক সেইরূপ মুনাফিকের অন্তরের মিথ্যার আবরণ সত্যের আলোর প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাদের আত্মা সত্যের আলো বা আল্লাহ্র হেদায়েতের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে, কিন্তু মিথ্যার আবরণ তাদের আত্মায় সত্যের আলো প্রবেশে বাঁধা দেয়। ফলে তারা অন্ধকারে অন্ধের মত পথ হাতড়ে বেড়ায়। তাদের আত্মা চায় মুক্তির আলো, মুক্তির বাতাস। কিন্তু তারা তা পায় না। তারা মিথ্যার অন্ধকারে অন্ধ ও বধির। সত্যকে খুঁজে নেবার ক্ষমতাও তাদের নাই। সুতরাং তারা আর ফিরবে না। অর্থাৎ তাদের অনুভূতিতে সত্য ও ন্যায় বোঝার মত যোগ্যতা রইল না। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমানকে প্রতিহত করছে।
আয়াতঃ 002.016
তারা সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করে। বস্তুতঃ তারা তাদের এ ব্যবসায় লাভবান হতে পারেনি এবং তারা হেদায়েতও লাভ করতে পারেনি।
These are they who have purchased error for guidance, so their commerce was profitless. And they were not guided.
أُوْلَـئِكَ الَّذِينَ اشْتَرُوُاْ الضَّلاَلَةَ بِالْهُدَى فَمَا رَبِحَت تِّجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُواْ مُهْتَدِينَ
Mathaluhum kamathali allathee istawqada naran falamma adaat ma hawlahu thahaba Allahu binoorihim watarakahum fee thulumatin la yubsiroona
YUSUFALI: These are they who have bartered Guidance for error: But their traffic is profitless, and they have lost true direction,
PICKTHAL: These are they who purchase error at the price of guidance, so their commerce doth not prosper, neither are they guided.
SHAKIR: These are they who buy error for the right direction, so their bargain shall bring no gain, nor are they the followers of the right direction.
KHALIFA: It is they who bought the straying, at the expense of guidance. Such trade never prospers, nor do they receive any guidance.
১৫। তাদের ঠাট্টা-তামাশা আল্লাহ্ তাদের উপরে ছুড়ে দেবেন এবং তাদের সীমালংঘনের জন্য [অবাধ্যতার] রশিকে লম্বা করে দেবেন, যেনো তারা অন্ধের ন্যায় [সামনে পিছনে] পথভ্রষ্ট ভাবে ঘুরে বেড়ায়।১৬। এরাই তারা যারা হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রান্তি কিনে নিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা বাণিজ্য লাভজনক নয়, এবং তারা সত্য পথের নির্দেশ হারিয়ে ফেলেছে।
১৭। তাদের উপমা সেই ব্যক্তির ন্যায় ৩৮, যে আগুন জ্বালালো। যখন তা তার চতুর্দিক আলোকিত করলো, আল্লাহ্ তাদের আলো সরিয়ে নিলেন এবং তাদের ঘোর অন্ধকারে পরিত্যাগ করলেন, যেনো তারা দেখতে না পায়।
১৮। তারা বধির, মূক এবং অন্ধ, তারা [সঠিক পথে] ফিরবে না।
৩৮। মুনাফিকের আত্মা ভণ্ডামী, জুয়াচুরি, অসত্য, অন্যায়ে পরিপূর্ণ। এগুলির সাহায্যে সে খুব সহজেই কোনও কাজে জয়লাভ করে এবং প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়, সেই লোকটির মত যে ক্ষণস্থায়ী আগুন জ্বালাতে সক্ষম হয়ে চারিদিকের গাঢ় অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং সকলের প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু তার জ্বালানো আগুন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এক সময় তা নিভে যায়। ফলে চারিদিক আবার গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। হঠাৎ আলোর ঝলকানির পরে এ গাঢ়তা পূর্বের গাঢ়তার থেকে আরও বেশি প্রতীয়মান হয়। এই উপমার সাহায্যে আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন যে, যেসব কাজের ভিত্তি অন্যায়, অসত্য, অবিশ্বাস, ভণ্ডামীর উপর প্রতিষ্ঠিত, তার ফল কখনও স্থায়ী হয় না। ঐ কাজের সাফল্য অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী, আগুণের ক্ষণস্থায়ী আলোর মত। যে আলো অন্ধকারকে চিরতরে দূর করতে অপারগ। মুনাফিকেরা ভণ্ডামীর সাহায্যে জয়ী হতে চায়। ফলে তার কাজের নিয়তে আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস, সত্যের প্রতি বিশ্বস্ততা, প্রতিপালকের রহমতের আশা সবই থাকে অনুপস্থিত। মুনাফিকের কাজের নিয়ত কখনই মহৎ হয় না। কখনই ভালো হয় না। ফলে সময়ের বৃহত্তর পরিসরে মুনাফিকের কাজের নিয়ত বা অন্তরের উদ্দেশ্য সকলের নিকট পরিস্ফুটিত হয়ে যায়। সত্য প্রকাশিত হয়। ফলে কাজের সব পরিণতি হয় বিফল। সত্যের উদ্ভাসিত আলোতে মুনাফিকের অন্তর ভয়ে ত্রাসে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। অন্তরের ভয় ত্রাস, মুনাফিকদের সুস্থ চিন্তাধারাকে বাধাগ্রস্থ করে, ফলে তারা সত্যকে জানতে, সত্যকে অনুধাবন করতে, শুনতে বা দেখতে অক্ষম হয়। মুনাফিকের আত্মার চারিদিক প্রাচীর বেষ্টিত হয়ে যায়। প্রাচীর বেষ্টিত স্থান যেমন সূর্যের ঝলমলে আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ঠিক সেইরূপ মুনাফিকের অন্তরের মিথ্যার আবরণ সত্যের আলোর প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাদের আত্মা সত্যের আলো বা আল্লাহ্র হেদায়েতের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে, কিন্তু মিথ্যার আবরণ তাদের আত্মায় সত্যের আলো প্রবেশে বাঁধা দেয়। ফলে তারা অন্ধকারে অন্ধের মত পথ হাতড়ে বেড়ায়। তাদের আত্মা চায় মুক্তির আলো, মুক্তির বাতাস। কিন্তু তারা তা পায় না। তারা মিথ্যার অন্ধকারে অন্ধ ও বধির। সত্যকে খুঁজে নেবার ক্ষমতাও তাদের নাই। সুতরাং তারা আর ফিরবে না। অর্থাৎ তাদের অনুভূতিতে সত্য ও ন্যায় বোঝার মত যোগ্যতা রইল না। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমানকে প্রতিহত করছে।
আয়াতঃ 002.017
তাদের অবস্থা সে ব্যক্তির মত, যে লোক কোথাও আগুন জ্বালালো এবং তার চারদিককার সবকিছুকে যখন আগুন স্পষ্ট করে তুললো, ঠিক এমনি সময় আল্লাহ তার চারদিকের আলোকে উঠিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দিলেন। ফলে, তারা কিছুই দেখতে পায় না।
Their likeness is as the likeness of one who kindled a fire; then, when it lighted all around him, Allâh took away their light and left them in darkness. (So) they could not see.
مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِي اسْتَوْقَدَ نَاراً فَلَمَّا أَضَاءتْ مَا حَوْلَهُ ذَهَبَ اللّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِي ظُلُمَاتٍ لاَّ يُبْصِرُونَ (17
Mathaluhum kamathali allathee istawqada naran falamma adaat ma hawlahu thahaba Allahu binoorihim watarakahum fee thulumatin la yubsiroona
YUSUFALI: Their similitude is that of a man who kindled a fire; when it lighted all around him, Allah took away their light and left them in utter darkness. So they could not see.
PICKTHAL: Their likeness is as the likeness of one who kindleth fire, and when it sheddeth its light around him Allah taketh away their light and leaveth them in darkness, where they cannot see,
SHAKIR: Their parable is like the parable of one who kindled a fire but when it had illumined all around him, Allah took away their light, and left them in utter darkness– they do not see.
KHALIFA: Their example is like those who start a fire, then, as it begins to shed light around them, GOD takes away their light, leaving them in darkness, unable to see.
১৫। তাদের ঠাট্টা-তামাশা আল্লাহ্ তাদের উপরে ছুড়ে দেবেন এবং তাদের সীমালংঘনের জন্য [অবাধ্যতার] রশিকে লম্বা করে দেবেন, যেনো তারা অন্ধের ন্যায় [সামনে পিছনে] পথভ্রষ্ট ভাবে ঘুরে বেড়ায়।১৬। এরাই তারা যারা হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রান্তি কিনে নিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা বাণিজ্য লাভজনক নয়, এবং তারা সত্য পথের নির্দেশ হারিয়ে ফেলেছে।
১৭। তাদের উপমা সেই ব্যক্তির ন্যায় ৩৮, যে আগুন জ্বালালো। যখন তা তার চতুর্দিক আলোকিত করলো, আল্লাহ্ তাদের আলো সরিয়ে নিলেন এবং তাদের ঘোর অন্ধকারে পরিত্যাগ করলেন, যেনো তারা দেখতে না পায়।
১৮। তারা বধির, মূক এবং অন্ধ, তারা [সঠিক পথে] ফিরবে না।
৩৮। মুনাফিকের আত্মা ভণ্ডামী, জুয়াচুরি, অসত্য, অন্যায়ে পরিপূর্ণ। এগুলির সাহায্যে সে খুব সহজেই কোনও কাজে জয়লাভ করে এবং প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়, সেই লোকটির মত যে ক্ষণস্থায়ী আগুন জ্বালাতে সক্ষম হয়ে চারিদিকের গাঢ় অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং সকলের প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু তার জ্বালানো আগুন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এক সময় তা নিভে যায়। ফলে চারিদিক আবার গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। হঠাৎ আলোর ঝলকানির পরে এ গাঢ়তা পূর্বের গাঢ়তার থেকে আরও বেশি প্রতীয়মান হয়। এই উপমার সাহায্যে আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন যে, যেসব কাজের ভিত্তি অন্যায়, অসত্য, অবিশ্বাস, ভণ্ডামীর উপর প্রতিষ্ঠিত, তার ফল কখনও স্থায়ী হয় না। ঐ কাজের সাফল্য অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী, আগুণের ক্ষণস্থায়ী আলোর মত। যে আলো অন্ধকারকে চিরতরে দূর করতে অপারগ। মুনাফিকেরা ভণ্ডামীর সাহায্যে জয়ী হতে চায়। ফলে তার কাজের নিয়তে আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস, সত্যের প্রতি বিশ্বস্ততা, প্রতিপালকের রহমতের আশা সবই থাকে অনুপস্থিত। মুনাফিকের কাজের নিয়ত কখনই মহৎ হয় না। কখনই ভালো হয় না। ফলে সময়ের বৃহত্তর পরিসরে মুনাফিকের কাজের নিয়ত বা অন্তরের উদ্দেশ্য সকলের নিকট পরিস্ফুটিত হয়ে যায়। সত্য প্রকাশিত হয়। ফলে কাজের সব পরিণতি হয় বিফল। সত্যের উদ্ভাসিত আলোতে মুনাফিকের অন্তর ভয়ে ত্রাসে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। অন্তরের ভয় ত্রাস, মুনাফিকদের সুস্থ চিন্তাধারাকে বাধাগ্রস্থ করে, ফলে তারা সত্যকে জানতে, সত্যকে অনুধাবন করতে, শুনতে বা দেখতে অক্ষম হয়। মুনাফিকের আত্মার চারিদিক প্রাচীর বেষ্টিত হয়ে যায়। প্রাচীর বেষ্টিত স্থান যেমন সূর্যের ঝলমলে আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ঠিক সেইরূপ মুনাফিকের অন্তরের মিথ্যার আবরণ সত্যের আলোর প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাদের আত্মা সত্যের আলো বা আল্লাহ্র হেদায়েতের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে, কিন্তু মিথ্যার আবরণ তাদের আত্মায় সত্যের আলো প্রবেশে বাঁধা দেয়। ফলে তারা অন্ধকারে অন্ধের মত পথ হাতড়ে বেড়ায়। তাদের আত্মা চায় মুক্তির আলো, মুক্তির বাতাস। কিন্তু তারা তা পায় না। তারা মিথ্যার অন্ধকারে অন্ধ ও বধির। সত্যকে খুঁজে নেবার ক্ষমতাও তাদের নাই। সুতরাং তারা আর ফিরবে না। অর্থাৎ তাদের অনুভূতিতে সত্য ও ন্যায় বোঝার মত যোগ্যতা রইল না। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমানকে প্রতিহত করছে।
আয়াতঃ 002.018
তারা বধির, মূক ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে না।
They are deaf, dumb, and blind, so they return not (to the Right Path).
صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لاَ يَرْجِعُونَ (18
Summun bukmun AAumyun fahum la yarjiAAoona
YUSUFALI: Deaf, dumb, and blind, they will not return (to the path).
PICKTHAL: Deaf, dumb and blind; and they return not.
SHAKIR: Deaf, dumb (and) blind, so they will not turn back.
KHALIFA: Deaf, dumb, and blind; they fail to return.
১৫। তাদের ঠাট্টা-তামাশা আল্লাহ্ তাদের উপরে ছুড়ে দেবেন এবং তাদের সীমালংঘনের জন্য [অবাধ্যতার] রশিকে লম্বা করে দেবেন, যেনো তারা অন্ধের ন্যায় [সামনে পিছনে] পথভ্রষ্ট ভাবে ঘুরে বেড়ায়।১৬। এরাই তারা যারা হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রান্তি কিনে নিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা বাণিজ্য লাভজনক নয়, এবং তারা সত্য পথের নির্দেশ হারিয়ে ফেলেছে।
১৭। তাদের উপমা সেই ব্যক্তির ন্যায় ৩৮, যে আগুন জ্বালালো। যখন তা তার চতুর্দিক আলোকিত করলো, আল্লাহ্ তাদের আলো সরিয়ে নিলেন এবং তাদের ঘোর অন্ধকারে পরিত্যাগ করলেন, যেনো তারা দেখতে না পায়।
১৮। তারা বধির, মূক এবং অন্ধ, তারা [সঠিক পথে] ফিরবে না।
৩৮। মুনাফিকের আত্মা ভণ্ডামী, জুয়াচুরি, অসত্য, অন্যায়ে পরিপূর্ণ। এগুলির সাহায্যে সে খুব সহজেই কোনও কাজে জয়লাভ করে এবং প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়, সেই লোকটির মত যে ক্ষণস্থায়ী আগুন জ্বালাতে সক্ষম হয়ে চারিদিকের গাঢ় অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং সকলের প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু তার জ্বালানো আগুন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এক সময় তা নিভে যায়। ফলে চারিদিক আবার গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। হঠাৎ আলোর ঝলকানির পরে এ গাঢ়তা পূর্বের গাঢ়তার থেকে আরও বেশি প্রতীয়মান হয়। এই উপমার সাহায্যে আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন যে, যেসব কাজের ভিত্তি অন্যায়, অসত্য, অবিশ্বাস, ভণ্ডামীর উপর প্রতিষ্ঠিত, তার ফল কখনও স্থায়ী হয় না। ঐ কাজের সাফল্য অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী, আগুণের ক্ষণস্থায়ী আলোর মত। যে আলো অন্ধকারকে চিরতরে দূর করতে অপারগ। মুনাফিকেরা ভণ্ডামীর সাহায্যে জয়ী হতে চায়। ফলে তার কাজের নিয়তে আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস, সত্যের প্রতি বিশ্বস্ততা, প্রতিপালকের রহমতের আশা সবই থাকে অনুপস্থিত। মুনাফিকের কাজের নিয়ত কখনই মহৎ হয় না। কখনই ভালো হয় না। ফলে সময়ের বৃহত্তর পরিসরে মুনাফিকের কাজের নিয়ত বা অন্তরের উদ্দেশ্য সকলের নিকট পরিস্ফুটিত হয়ে যায়। সত্য প্রকাশিত হয়। ফলে কাজের সব পরিণতি হয় বিফল। সত্যের উদ্ভাসিত আলোতে মুনাফিকের অন্তর ভয়ে ত্রাসে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। অন্তরের ভয় ত্রাস, মুনাফিকদের সুস্থ চিন্তাধারাকে বাধাগ্রস্থ করে, ফলে তারা সত্যকে জানতে, সত্যকে অনুধাবন করতে, শুনতে বা দেখতে অক্ষম হয়। মুনাফিকের আত্মার চারিদিক প্রাচীর বেষ্টিত হয়ে যায়। প্রাচীর বেষ্টিত স্থান যেমন সূর্যের ঝলমলে আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ঠিক সেইরূপ মুনাফিকের অন্তরের মিথ্যার আবরণ সত্যের আলোর প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাদের আত্মা সত্যের আলো বা আল্লাহ্র হেদায়েতের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে, কিন্তু মিথ্যার আবরণ তাদের আত্মায় সত্যের আলো প্রবেশে বাঁধা দেয়। ফলে তারা অন্ধকারে অন্ধের মত পথ হাতড়ে বেড়ায়। তাদের আত্মা চায় মুক্তির আলো, মুক্তির বাতাস। কিন্তু তারা তা পায় না। তারা মিথ্যার অন্ধকারে অন্ধ ও বধির। সত্যকে খুঁজে নেবার ক্ষমতাও তাদের নাই। সুতরাং তারা আর ফিরবে না। অর্থাৎ তাদের অনুভূতিতে সত্য ও ন্যায় বোঝার মত যোগ্যতা রইল না। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমানকে প্রতিহত করছে।
আয়াতঃ 002.019
আর তাদের উদাহরণ সেসব লোকের মত যারা দুর্যোগপূর্ণ ঝড়ো রাতে পথ চলে, যাতে থাকে আঁধার, গর্জন ও বিদ্যুৎচমক। মৃত্যুর ভয়ে গর্জনের সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে রক্ষা পেতে চায়। অথচ সমস্ত কাফেরই আল্লাহ কর্তৃক পরিবেষ্ঠিত।
Or like a rainstorm from the sky, wherein is darkness, thunder, and lightning. They thrust their fingers in their ears to keep out the stunning thunderclap for fear of death. But Allâh ever encompasses the disbelievers (i.e. Allâh will gather them all together).
أَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَاء فِيهِ ظُلُمَاتٌ وَرَعْدٌ وَبَرْقٌ يَجْعَلُونَ أَصْابِعَهُمْ فِي آذَانِهِم مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِ واللّهُ مُحِيطٌ بِالْكافِرِينَ
Aw kasayyibin mina alssama-i feehi thulumatun waraAAdun wabarqun yajAAaloona asabiAAahum fee athanihim mina alssawaAAiqi hathara almawti waAllahu muheetun bialkafireena
YUSUFALI: Or (another similitude) is that of a rain-laden cloud from the sky: In it are zones of darkness, and thunder and lightning: They press their fingers in their ears to keep out the stunning thunder-clap, the while they are in terror of death. But Allah is ever round the rejecters of Faith!
PICKTHAL: Or like a rainstorm from the sky, wherein is darkness, thunder and the flash of lightning. They thrust their fingers in their ears by reason of the thunder-claps, for fear of death, Allah encompasseth the disbelievers (in His guidance, His omniscience and His omnipotence).
SHAKIR: Or like abundant rain from the cloud in which is utter darkness and thunder and lightning; they put their fingers into their ears because of the thunder peal, for fear of death, and Allah encompasses the unbelievers.
KHALIFA: Another example: a rainstorm from the sky in which there is darkness, thunder, and lightning. They put their fingers in their ears, to evade death. GOD is fully aware of the disbelievers.
১৯। অথবা [অন্য উপমা হচ্ছে] ৩৯, আকাশের বৃষ্টি ভারাক্রান্ত মেঘ; এতে রয়েছে ঘোর অন্ধকার, বজ্র এবং বিদ্যুৎ। হতবুদ্ধি করা বজ্রের উচ্চ শব্দকে দূরে রাখার জন্য মৃত্যুভয়ে তারা কর্ণে আঙ্গুলি চেপে ধরে। কিন্তু ঈমানকে প্রত্যাখানকারীদের আল্লাহ্ সর্বদিক থেকে ঘিরে থাকেন।২০। বিদ্যুৎ চমক তাদের দৃষ্টি শক্তিকে প্রায় কেড়ে নেয়। প্রতিবার [বিদ্যুতের] আলো যখন তাদের [সাহায্য] করে, তারা [তার সাহায্যে] পথ চলতে থাকে। এবং যখন তাদের উপর অন্ধকার নেমে আসে, তারা থমকে দাঁড়ায়। আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করতেন তবে, তাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ের উপরে সর্বশক্তিমান।
৩৯। মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা অত্যন্ত সুবিধাবাদী। এদের একদল ইসলামের বিজয় দেখে তার প্রতি ধাবিত হয় আবার যখনই স্বার্থে আঘাত লাগে তখনই মত পরিবর্তন করে। এই আয়াতে উপমার সাহায্যে তাদেরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সাধারণতঃ এরা তাদের অবস্থার প্রেক্ষিতে সুসময়ে আত্মতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট কিন্তু যখনই কোনও বিপদ আপতিত হয় তখন তাদের যে অবস্থা হয় সেই অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। বিদ্যুতের আলো তাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়। বজ্র তাদের কানে তালা লাগিয়ে দেয়, শ্রবণশক্তি হরণ করে। মৃত্যুভয় তাদের শঙ্কিত করে তোলে। তারা আল্লাহ্র উপর নির্ভরশীলতা হারিয়ে ফেলে। অথচ আল্লাহ্ সবার উপরে শক্তিমান, কাফেররাও তারই ক্ষমতার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ্ তাদের সময় দেন। ফলে চোখ ধাঁধানো বিদ্যুৎ ও কানে তালা লাগানো বজ্রের গর্জনের ফাঁকে যখন একটু আলোকিত হয়, তখন তারা পথ চলার চেষ্টা করে। আবার যখন অন্ধকার বিরাজ করে তখন দাঁড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ উপমার সাহায্যে বুঝাতে চাওয়া হয়েছে যে, মুনাফিকদের অন্ধকারাচ্ছন্ন আত্মায় মাঝে মাঝে সত্যের আলোর, হেদায়েতের আলোর চমক খেলে যায়। অর্থাৎ মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে ন্যায় ও সত্য ও বিবেক জাগ্রত হয়-তবে তা হয় অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। সে সময়ে তারা পথ চলতে চেষ্টা করে কিন্তু আবার তারা মিথ্যার অন্ধকারে ডুবে যায়, সম্ভবতঃ ক্ষণস্থায়ী পথ চলার শক্তিতে তারা উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের বুদ্ধিমত্তাতে অহংকারে স্ফীত হয়। কিন্তু তা না করে তারা যদি বিনয়ের সাথে আল্লাহ্র অনুগ্রহ কামনা করতো আল্লাহ্র আশ্রয় কামনা করতো তবে অবশ্যই তারা আল্লাহ্র নিরাপদ আশ্রয়ে তাঁর রহমতে ধন্য হত।
আয়াতঃ 002.020
বিদ্যুতালোকে যখন সামান্য আলোকিত হয়, তখন কিছুটা পথ চলে। আবার যখন অন্ধকার হয়ে যায়, তখন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তাহলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ের উপর সর্বময় ক্ষমতাশীল।
The lightning almost snatches away their sight, whenever it flashes for them, they walk therein, and when darkness covers them, they stand still. And if Allâh willed, He could have taken away their hearing and their sight. Certainly, Allâh has power over all things.
يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْ كُلَّمَا أَضَاء لَهُم مَّشَوْاْ فِيهِ وَإِذَا أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُواْ وَلَوْ شَاء اللّهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ إِنَّ اللَّه عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (20
Yakadu albarqu yakhtafu absarahum kullama adaa lahum mashaw feehi wa-itha athlama AAalayhim qamoo walaw shaa Allahu lathahaba bisamAAihim waabsarihim inna Allaha AAala kulli shay-in qadeerun
YUSUFALI: The lightning all but snatches away their sight; every time the light (Helps) them, they walk therein, and when the darkness grows on them, they stand still. And if Allah willed, He could take away their faculty of hearing and seeing; for Allah hath power over all things.
PICKTHAL: The lightning almost snatcheth away their sight from them. As often as it flasheth forth for them they walk therein, and when it darkeneth against them they stand still. If Allah willed, He could destroy their hearing and their sight. Lo! Allah is able to do all things.
SHAKIR: The lightning almost takes away their sight; whenever it shines on them they walk in it, and when it becomes dark to them they stand still; and if Allah had pleased He would certainly have taken away their hearing and their sight; surely Allah has power over all things.
KHALIFA: The lightning almost snatches away their eyesight. When it lights for them, they move forward, and when it turns dark, they stand still. If GOD wills, He can take away their hearing and their eyesight. GOD is Omnipotent.
১৯। অথবা [অন্য উপমা হচ্ছে] ৩৯, আকাশের বৃষ্টি ভারাক্রান্ত মেঘ; এতে রয়েছে ঘোর অন্ধকার, বজ্র এবং বিদ্যুৎ। হতবুদ্ধি করা বজ্রের উচ্চ শব্দকে দূরে রাখার জন্য মৃত্যুভয়ে তারা কর্ণে আঙ্গুলি চেপে ধরে। কিন্তু ঈমানকে প্রত্যাখানকারীদের আল্লাহ্ সর্বদিক থেকে ঘিরে থাকেন।২০। বিদ্যুৎ চমক তাদের দৃষ্টি শক্তিকে প্রায় কেড়ে নেয়। প্রতিবার [বিদ্যুতের] আলো যখন তাদের [সাহায্য] করে, তারা [তার সাহায্যে] পথ চলতে থাকে। এবং যখন তাদের উপর অন্ধকার নেমে আসে, তারা থমকে দাঁড়ায়। আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করতেন তবে, তাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ের উপরে সর্বশক্তিমান।
৩৯। মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা অত্যন্ত সুবিধাবাদী। এদের একদল ইসলামের বিজয় দেখে তার প্রতি ধাবিত হয় আবার যখনই স্বার্থে আঘাত লাগে তখনই মত পরিবর্তন করে। এই আয়াতে উপমার সাহায্যে তাদেরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সাধারণতঃ এরা তাদের অবস্থার প্রেক্ষিতে সুসময়ে আত্মতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট কিন্তু যখনই কোনও বিপদ আপতিত হয় তখন তাদের যে অবস্থা হয় সেই অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। বিদ্যুতের আলো তাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়। বজ্র তাদের কানে তালা লাগিয়ে দেয়, শ্রবণশক্তি হরণ করে। মৃত্যুভয় তাদের শঙ্কিত করে তোলে। তারা আল্লাহ্র উপর নির্ভরশীলতা হারিয়ে ফেলে। অথচ আল্লাহ্ সবার উপরে শক্তিমান, কাফেররাও তারই ক্ষমতার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ্ তাদের সময় দেন। ফলে চোখ ধাঁধানো বিদ্যুৎ ও কানে তালা লাগানো বজ্রের গর্জনের ফাঁকে যখন একটু আলোকিত হয়, তখন তারা পথ চলার চেষ্টা করে। আবার যখন অন্ধকার বিরাজ করে তখন দাঁড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ উপমার সাহায্যে বুঝাতে চাওয়া হয়েছে যে, মুনাফিকদের অন্ধকারাচ্ছন্ন আত্মায় মাঝে মাঝে সত্যের আলোর, হেদায়েতের আলোর চমক খেলে যায়। অর্থাৎ মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে ন্যায় ও সত্য ও বিবেক জাগ্রত হয়-তবে তা হয় অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। সে সময়ে তারা পথ চলতে চেষ্টা করে কিন্তু আবার তারা মিথ্যার অন্ধকারে ডুবে যায়, সম্ভবতঃ ক্ষণস্থায়ী পথ চলার শক্তিতে তারা উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের বুদ্ধিমত্তাতে অহংকারে স্ফীত হয়। কিন্তু তা না করে তারা যদি বিনয়ের সাথে আল্লাহ্র অনুগ্রহ কামনা করতো আল্লাহ্র আশ্রয় কামনা করতো তবে অবশ্যই তারা আল্লাহ্র নিরাপদ আশ্রয়ে তাঁর রহমতে ধন্য হত।
আয়াতঃ 002.021
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারবে।
O mankind! Worship your Lord (Allâh), Who created you and those who were before you so that you may become Al-Muttaqûn (the pious – see V.2:2).
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ (21
Ya ayyuha alnnasu oAAbudoo rabbakumu allathee khalaqakum waallatheena min qablikum laAAallakum tattaqoona
YUSUFALI: O ye people! Adore your Guardian-Lord, who created you and those who came before you, that ye may have the chance to learn righteousness;
PICKTHAL: O mankind! worship your Lord, Who hath created you and those before you, so that ye may ward off (evil).
SHAKIR: O men! serve your Lord Who created you and those before you so that you may guard (against evil).
KHALIFA: O people, worship only your Lord – the One who created you and those before you – that you may be saved.
রুকু – ৩
৪০। ‘তাকওয়া’ এর জন্য দেখুন [২:২ টিকা ২৬]। এবাদত কথাটির অর্থ অনেক ব্যাপক। শুধুমাত্র যান্ত্রিকভাবে নামাজ পড়া, রোযা রাখা, যাকাত দেয়া এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যে এবাদতের সাথে আত্মার যোগাযোগ নাই তা এবাদতই নয়। এবাদতের পূর্বশর্ত হচ্ছে আল্লাহ্র সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য মনের ঐকান্তিক ইচ্ছা। বিনয়ের সাথে, ভক্তির সাথে, স্রষ্টার প্রতি নিবেদিত প্রতিটি কাজই হচ্ছে এবাদত। সে কাজ যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, যদি তা নিবেদিত হয় আল্লাহ্র জন্য, আল্লাহ্কে খুশী করার জন্য, তবেই তাই-ই হচ্ছে আসল এবাদত। যখন বান্দার মনের অবস্থা এই পর্যায়ে উন্নীত হয় যে তার সমস্ত ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা সবই স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য নিবেদিত তখনই বান্দার চরিত্রে মুত্তাকী (Righteousness) হওয়ার মত গুণাবলীর সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসাতে, বিনয়ে নিবেদিত আত্মাই হচ্ছে মুত্তাকী। আল্লাহ্ আমাদের তাঁর কাছে আত্মসমর্পনের এই সুযোগ দিয়েছেন। বান্দাকে ‘সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি’ (Limited Free Will) এর মাধ্যমে বান্দাকে পরীক্ষা করেন। বান্দা যেনো স্ব-ইচ্ছায়, মহান সত্তার কাছে আত্মনিবেদন করে। যদি আমরা তা করতে পারি তবে আমাদের ভিতরে যে পরিবর্তন আসবে তা আমাদের কল্পনারও বাইরে। আমাদের সর্বসত্ত্বা আল্লাহ্র রহমতে বিধৌত হয়ে তা সৌন্দর্য মণ্ডিত হয়ে উঠবে। আমরা হব এক সুস্থ শৃঙ্খলায় পরিবর্তিত মানুষ।
আয়াতঃ 002.022
যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান।
Who has made the earth a resting place for you, and the sky as a canopy, and sent down water (rain) from the sky and brought forth therewith fruits as a provision for you. Then do not set up rivals unto Allâh (in worship) while you know (that He Alone has the right to be worshipped).
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأَرْضَ فِرَاشاً وَالسَّمَاء بِنَاء وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقاً لَّكُمْ فَلاَ تَجْعَلُواْ لِلّهِ أَندَاداً وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
Allathee jaAAala lakumu al-arda firashan waalssamaa binaan waanzala mina alssama-i maan faakhraja bihi mina alththamarati rizqan lakum fala tajAAaloo lillahi andadan waantum taAAlamoona
YUSUFALI: Who has made the earth your couch, and the heavens your canopy; and sent down rain from the heavens; and brought forth therewith Fruits for your sustenance; then set not up rivals unto Allah when ye know (the truth).
PICKTHAL: Who hath appointed the earth a resting-place for you, and the sky a canopy; and causeth water to pour down from the sky, thereby producing fruits as food for you. And do not set up rivals to Allah when ye know (better).
SHAKIR: Who made the earth a resting place for you and the heaven a canopy and (Who) sends down rain from the cloud then brings forth with it subsistence for you of the fruits; therefore do not set up rivals to Allah while you know.
KHALIFA: The One who made the earth habitable for you, and the sky a structure. He sends down from the sky water, to produce all kinds of fruits for your sustenance. You shall not set up idols to rival GOD, now that you know.
২২। যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা এবং আকাশকে ছাদ করেছেন; এবং আকাশ থেকে বৃষ্টি প্রেরণ করে তা দিয়ে জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপন্ন করেছেন। সুতরাং যখন তোমরা [সত্যকে] জানো তখন আল্লাহ্র প্রতিদ্বন্দী দাঁড় করিও না ৪১।
৪১। এই আয়াতে আল্লাহ্র মাহাত্ম্য, তাঁর অপরিসীম করুণার কথা বলা হয়েছে। আমাদের এই দেহ-মন, পার্থিব ও আধ্যাত্মিক জীবন সবই স্রষ্টার দান, তারই উপরে সবই নির্ভরশীল। এই আয়াতে আকাশ ও জমিকে প্রতীক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে জমিকে বিছানা অর্থাৎ পার্থিব আরাম-আয়েশ এবং আকাশকে ছাদ অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জীবনের নিরাপত্তা বোঝানো হয়েছে। আকাশ থেকে বৃষ্টি হয়, বৃষ্টি হচ্ছে আল্লাহ্র রহমতের প্রতীক। কারণ বৃষ্টির অভাবে শস্য-শ্যামল ভূমি মরুভূমিতে পরিণত হয়। আবার বৃক্ষলতা বিহীন ভূমি বৃষ্টির পানিতে সজীবতা ধারণ করে। তাই বৃষ্টিকে এখানে প্রতীকধর্মী শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। পৃথিবীতে যে বৃষ্টি হয় তা পৃথিবীর সজীবতার জন্য প্রয়োজন। সেই রকম আল্লাহ্র রহমতের বৃষ্টি আধ্যাত্মিক জগতের বিকাশ ও অন্তর্দৃষ্টি (Spiritual Insight) লাভের জন্য প্রয়োজন। ইহজগত ও পরজগতের সব কিছুই আল্লাহ্র উপরই নির্ভরশীল। এই সত্য জানার পর কেউ যদি অন্য কিছুকে আল্লাহ্র সমকক্ষ মনে করে তা হবে মহাপাপ। এই সমকক্ষ মনে করার প্রবণতা আমাদের জীবনে অত্যন্ত প্রবল। এই সমকক্ষ মনে করাকেই বলা হচ্ছে আল্লাহ্র সাথে অংশীদার করা। এটা শুধুমাত্র মূর্তি পূজার মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করলে তা হবে ভুল। শুধুমাত্র মূর্তি পূজায় আল্লাহ্র সাথে অংশীদার করা হয় এ ধারণার বশবর্তী আমাদের অনেকেই। কিন্তু মূর্তি পূজা ছাড়াও বহু ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের স্রষ্টার সমকক্ষ মনে করতে ভালবাসি। হতে পারে আত্ম-অহংকার, আত্ম-গর্ব, সামাজিক কুসংস্কার ইত্যাদি। একটি ছোট উদাহরণ দ্বারা এটাকে উপস্থাপন করা যায় যেমন, রত্ন পাথর ধারণ করা। বিপদ-আপদ, দুঃখ-দুর্দশা এসবের জন্য সর্বশক্তিমানের আশ্রয় প্রার্থনা না করে রত্ন পাথরের আশ্রয় গ্রহণ করা হচ্ছে সর্বশক্তিমানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করা। বিশেষ দিনে যাত্রা করা। শুভ-অশুভ দিন ধার্য করা ইত্যাদি। এর থেকে প্রমাণ হয় আমরা সর্বশক্তিমানের উপর নির্ভরশীল নই। আবার আত্মগর্ব, আত্ম-অহংকার নিজের উপর প্রচণ্ড বিশ্বাসে আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীলতা না থাকা ইত্যাদি এসবই আল্লাহ্র সাথে অংশীদারিত্ব কল্পনা করা। আজকে আমরা বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে চমৎকৃত, মুগ্ধ। মানুষ ‘জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং’ এর সাফল্যে স্রষ্টার সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত। গ্রহ-গ্রহান্তরে তার যাত্রা। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। এসবের ফলে অনেকের মধ্যে এমন অহংবোধের জন্ম হয়েছে যে তারা স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে তার প্রতি আনুগত্য ফেলছে হারিয়ে। তারা বিজ্ঞানের জ্ঞানকে স্রষ্টার আসনে বসায়। অনেক শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক নিজের সাফল্যে বিমোহিত হয়ে একমাত্র নিজেকেই এই সাফল্যের নিয়ামক মনে করে। তার মেধা বা প্রতিভা যে স্রষ্টার দান, তার সাফল্যের পেছনের এই ছোট্ট অথচ মৌলিক শর্তটি সে ভুলে যায়। প্রতিভা, মেধা, ক্ষমতা, অর্থ-বিত্ত এসব মানুষকে আত্মঅহংকারী করে তোলে। আল্লাহ্র সাথে এও এক ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ও এক ধরনের শেরেকী করা।
আয়াতঃ 002.023
এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।
And if you (Arab pagans, Jews, and Christians) are in doubt concerning that which We have sent down (i.e. the Qur’ân) to Our slave (Muhammad Peace be upon him ), then produce a Sûrah (chapter) of the like thereof and call your witnesses (supporters and helpers) besides Allâh, if you are truthful.
وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُواْ بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُواْ شُهَدَاءكُم مِّن دُونِ اللّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
Wa-in kuntum fee raybin mimma nazzalna AAala AAabdina fa/too bisooratin min mithlihi waodAAoo shuhadaakum min dooni Allahi in kuntum sadiqeena
YUSUFALI: And if ye are in doubt as to what We have revealed from time to time to Our servant, then produce a Sura like thereunto; and call your witnesses or helpers (If there are any) besides Allah, if your (doubts) are true.
PICKTHAL: And if ye are in doubt concerning that which We reveal unto Our slave (Muhammad), then produce a surah of the like thereof, and call your witness beside Allah if ye are truthful.
SHAKIR: And if you are in doubt as to that which We have revealed to Our servant, then produce a chapter like it and call on your witnesses besides Allah if you are truthful.
KHALIFA: If you have any doubt regarding what we revealed to our servant, then produce one sura like these, and call upon your own witnesses against GOD, if you are truthful.
৪২। কুরআনের আয়াত যে আল্লাহ্র বাণী, তার প্রমাণ কি? আল্লাহ্ এখানে উপযুক্ত প্রমাণের উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্ আমাদের নবীর মাধ্যমে অনেক সূরা নাজিল করেছেন। আল্লাহ্ এখানে বলেছেন, ‘তোমরা কি অনুরূপ একটা সূরাও রচনা করতে পারবে?’ আল্লাহ্র বাণীর মানুষের সুপ্ত আধ্যাত্মিক শক্তিকে জাগরিত করার যে ক্ষমতা সে ক্ষমতা মানুষের তৈরি বাণীতে নাই। থাকা সম্ভবও নয়। মানুষ নিজের কূপমণ্ডুকতা, হঠকারীতা, বিবেকহীনতা, অজ্ঞনতার ফলে এসব কথা বলে যে, আল্লাহ্র বাণী মানুষের সৃষ্টি। কুরআন এক ঐশী গ্রন্থ। কুরআন যে আলোর ভূবন ও আধ্যাত্মিক জগতের সন্ধান দেয়, তার স্থায়িত্ব, অস্তিত্ব ও প্রভাব, যুগ, কাল অতিক্রান্ত।
আয়াতঃ 002.024
আর যদি তা না পার-অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।
But if you do it not, and you can never do it, then fear the Fire (Hell) whose fuel is men and stones, prepared for the disbelievers.
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُواْ وَلَن تَفْعَلُواْ فَاتَّقُواْ النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ (24
Fa-in lam tafAAaloo walan tafAAaloo faittaqoo alnnara allatee waqooduha alnnasu waalhijaratu oAAiddat lilkafireena
YUSUFALI: But if ye cannot- and of a surety ye cannot- then fear the Fire whose fuel is men and stones,- which is prepared for those who reject Faith.
PICKTHAL: And if ye do it not – and ye can never do it – then guard yourselves against the Fire prepared for disbelievers, whose fuel is of men and stones.
SHAKIR: But if you do (it) not and never shall you do (it), then be on your guard against the fire of which men and stones are the fuel; it is prepared for the unbelievers.
KHALIFA: If you cannot do this – and you can never do this – then beware of the Hellfire, whose fuel is people and rocks; it awaits the disbelievers.
৪৩। কুরআনের বাণীর সৌন্দর্য্য, ভাষা, গাম্ভীর্য, নিগূঢ় অর্থ, সর্বোপরি আধ্যাত্মিক জগত ও মনোজগতের উপরে এর যা প্রভাব, তার সমকক্ষ কিছু রচনা করা কোনও মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। তবুও কেউ যদি একগুয়ে অবাধ্যভাবে সত্যকে অস্বীকার করে, আল্লাহ্র বাণীকে ঐশী বাণী হিসেবে গ্রহণে অস্বীকার করে, তবে অবশ্যই অস্বীকারকারীর অন্তরে যন্ত্রণার উদ্ভব হয়। সেই যন্ত্রণার আগুনে তার আজীবন লালিত মিথ্যা উপাস্যগুলিই [এটা হতে পারে আত্মগর্ব, আত্মপ্রচার, আত্ম-প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতা ও অর্থের প্রতিপত্তি, বিজ্ঞান ইত্যাদি] শুধু শেষ হয়ে যায় না, তার অন্তরের অন্তঃস্থলে সেই আগুন তার লেলিহান শিখা বিস্তার লাভ করে। এরপরেও কি তাদের জ্ঞান ফিরবে না? আত্মার এই যন্ত্রণা তার সমস্ত অনুভূতি, সমস্ত সত্তাকে অন্তরের অন্তঃস্থলকে তীব্রভাবে দহন করে। এ যন্ত্রণা শারীরিক নয়। এক ভয়াবহ শূন্যতা, ভয়ানক যন্ত্রণা তার আত্মাকে দহন করবে। সংসারের কোন সুখ, অর্থ-বিত্ত, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি কিছুই তাকে সেই জ্বালা ভুলাতে সাহায্য করবে না। অনেকে হয়তো বা মনে করতে পারে যে সে সব যন্ত্রণার উর্ধ্বে, নির্বিকার। কিন্তু আত্মার এ আগুন সেই লৌহ কঠিন আত্মাকেও দহন করবে। এ কথাটাকে কুরআন শরীফে এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যে দোযখের জ্বালানী হবে পাপিষ্ঠ আত্মা। পাথরের ন্যায় শক্ত আত্মার জন্য দেখুন। [২:২৪, ৭৪, ২৬৪ আয়াত]
আয়াতঃ 002.025
আর হে নবী (সাঃ), যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্তুতঃ তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।
And give glad tidings to those who believe and do righteous good deeds, that for them will be Gardens under which rivers flow (Paradise). Every time they will be provided with a fruit therefrom, they will say: ”This is what we were provided with before,” and they will be given things in resemblance (i.e. in the same form but different in taste) and they shall have therein Azwâjun Mutahharatun (purified mates or wives), (having no menses, stools, urine, etc.) and they will abide therein forever.
وَبَشِّرِ الَّذِين آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ كُلَّمَا رُزِقُواْ مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقاً قَالُواْ هَـذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ وَأُتُواْ بِهِ مُتَشَابِهاً وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
Wabashshiri allatheena amanoo waAAamiloo alssalihati anna lahum jannatin tajree min tahtiha al-anharu kullama ruziqoo minha min thamaratin rizqan qaloo hatha allathee ruziqna min qablu waotoo bihi mutashabihan walahum feeha azwajun mutahharatun wahum feeha khalidoona
YUSUFALI: But give glad tidings to those who believe and work righteousness, that their portion is Gardens, beneath which rivers flow. Every time they are fed with fruits therefrom, they say: “Why, this is what we were fed with before,” for they are given things in similitude; and they have therein companions pure (and holy); and they abide therein (for ever).
PICKTHAL: And give glad tidings (O Muhammad) unto those who believe and do good works; that theirs are Gardens underneath which rivers flow; as often as they are regaled with food of the fruit thereof, they say: this is what was given us aforetime; and it is given to them in resemblance. There for them are pure companions; there for ever they abide.
SHAKIR: And convey good news to those who believe and do good deeds, that they shall have gardens in which rivers flow; whenever they shall be given a portion of the fruit thereof, they shall say: This is what was given to us before; and they shall be given the like of it, and they shall have pure mates in them, and in them, they shall abide.
KHALIFA: Give good news to those who believe and lead a righteous life that they will have gardens with flowing streams. When provided with a provision of fruits therein, they will say, “This is what was provided for us previously.” Thus, they are given allegorical descriptions. They will have pure spouses therein, and they abide therein forever.
৪৪। এই আয়াতটি উপরের আয়াতের বিপরীত ভাব প্রকাশ করে। দোযখের শাস্তির প্রতীক হচ্ছে আগুন, বেহেশ্তের শান্তির প্রতীক হচ্ছে বাগান। এখানে প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে কারণ বেহেশ্তের শান্তি ও দোযখের শাস্তি এই পৃথিবীতে বসে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। যখন কল্পনা বাস্তবকে অতিক্রম করে যায় তখন তা প্রকাশের ভাষা হয় একমাত্র প্রতীক। ছবির মত প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণ, অবস্থান, উপভোগ সবই অত্যন্ত আরামদায়ক, শান্তিদায়ক। সেই কারণে বেহেশ্তের বর্ণনায় প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর ও সৌন্দর্য্যরে অবতারণা করা হয়েছে। এটা এমন একটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আঁধার যা ভাষায় বর্ণনা করা দুঃসাধ্য। স্বচ্ছ সলিল ধারণ করে স্রোতস্বিনী ছোট নদী বয়ে যাচ্ছে একপাশ দিয়ে। তার পানি স্ফটিকের মত স্বচ্ছ যা সূর্য ও চন্দ্রালোককে প্রতিফলিত করে। সাজানো ফুল ও ফলের বাগান। বনতল ফুলে ফুলে ছাওয়া। ফলভারে গাছ অবনত। আর এসব ফল হবে প্রত্যেকের পছন্দের প্রতীক। এখানে ফল কথাটি প্রতীকধর্মী। পার্থিব জীবনে এই পৃথিবীতে আমরা যেসব ফল খাই, তার স্বাদ আমাদের করে তৃপ্ত। বিভিন্ন ফলের বিভিন্ন স্বাদ, বিভিন্ন গন্ধ। বেহেশ্তী ফলকে এখানে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আত্মত্যাগ ও ভাল কাজের পরে আমাদের আত্মায় এক স্বর্গীয় অনুভূতি বিরাজ করে। যে কাজ যত বেশি নিঃস্বার্থ ও আল্লাহ্র প্রতি নিবেদিত, তার অনুভূতি তত তীব্র শান্তিদায়ক। পৃথিবীর গাছের ফলের যেরূপ স্বাদের, গন্ধের ও রূপের তারতম্য আছে, আল্লাহ্র প্রতি নিবেদিত নিঃস্বার্থ মহৎ কাজের পরে আত্মার ভিতরের অনুভূতিরও সেরূপ তারতম্য ঘটে। এই তারতম্য ঘটে কাজের তারতম্য অনুযায়ী। ভাল কাজের পর আমরা আমাদের আত্মায় যে সুখ ও শান্তির অনুভূতি লাভ করি একেই বেহেশ্তি ‘ফলের’ প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তার ফলে বেহেশ্তে যে ‘ফল’ আমরা ভোগ করবো তার রূপ, রস, গন্ধ, অনুভূতি সবই হবে পৃথিবীতে [নিঃস্বার্থ, আল্লাহ্র প্রতি নিবেদিত ভাল কাজের ফল] ভোগ করা সুখ-শান্তির অনুভূতি ফলেরই অনুরূপ। মনে হবে এ ফল তো আমরা আগেও ভোগ করেছি। অর্থাৎ ভাল কাজের পর যে স্বর্গীয় অনুভূতি সেই অনুভূতিরই অনুভব। তবে তার তীব্রতা হবে আরও গভীর, আরও সুন্দর। আত্মার অন্তঃস্থল তার পরশে হবে পুলকিত, শিহরিত, শান্ত। আত্মায় লাভ করবে অপার শান্তি। এর কারণ পূর্বেই পৃথিবীতে আমাদের সেই অভিজ্ঞতা লাভ হয়েছে।
মৃত্যুর সাথে সাথে আমাদের এই মরদেহের বিনাশ ঘটে, কিন্তু এই দেহের মাধ্যমে পৃথিবীতে আমরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করি, মৃত্যুর পরেও আত্মা সেই অভিজ্ঞতা বহন করে পরকালের যাত্রা শুরু করে। অর্থাৎ ভাল কাজের শেষে যে স্বর্গীয় অনুভূতি বা শান্তি আর মন্দ কাজের শেষে আত্মার যন্ত্রণা বা অস্থিরতা এই অভিজ্ঞতা মৃত্যুর পরেও আমরা বহন করে নিয়ে যাব পরলোকে। পৃথিবীর অভিজ্ঞতা পরকালে বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এই অভিজ্ঞতাকেই ‘ফলের’ প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে।
বেহেশ্তের বর্ণনায় এর পরে এসেছে সঙ্গীর কথা। অনেকেই এই কথাটাকে স্থুলভাবে যৌনসঙ্গী রূপে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এখানে ‘মুতাহ্হারাতুন’ শব্দটির দ্বারা বুঝানো হয়েছে সেই সব সঙ্গী যারা পূত ও পবিত্র। এই শব্দটির দ্বারা যে পবিত্রতা বুঝাতে চাওয়া হয়েছে তা হবে সর্বোচ্চ। অনেকে এভাবে তফসীর করেছেন যে তারা হবে পবিত্র কারণ তারা মল-মূত্র ত্যাগ করবে না বা তাদের মাসিক হবে না। অর্থাৎ মাসিক কথাটির দ্বারা তারা বুঝাতে চাচ্ছেন সে সঙ্গীরা সবাই স্ত্রী ধর্মী। কিন্তু সঙ্গী অর্থ শুধু মেয়ে নয়। এখানে সঙ্গী কথাটি দ্বারা ‘আত্মার সঙ্গী’ এ কথাটাকেই বোঝানো হয়েছে। নশ্বর দেহ-মিলনে যে সঙ্গ-সুখ তা ক্ষণস্থায়ী, তা স্থুল, তা জৈব। এই স্থুল সঙ্গ-সুখ পেতে হলে লিঙ্গের প্রয়োজন। যৌন সঙ্গীর প্রয়োজন। কিন্তু মরদেহ ত্যাগ করে যে অবিনশ্বর ও চিরঞ্জীব আত্মা থাকে তার কোনও লিঙ্গ নাই। সে পুরুষও নয়, মেয়েও নয়। পুত-পবিত্র আত্মারা হবে পরস্পরের সঙ্গী। এই প্রেম হবে দেহাতীত। পৃথিবীর প্রেমের যে অনুভূতি তার থেকে এর অনুভূতি হবে বহুগুণ তীব্র। এর যে শান্তি তা হবে স্থায়ী। পৃথিবীর মত তা ক্ষণস্থায়ী হবে না।
আয়াতঃ002.027
(বিপথগামী ওরাই) যারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ পাক যা অবিচ্ছিন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, তা ছিন্ন করে, আর পৃথিবীর বুকে অশান্তি সৃষ্টি করে। ওরা যথার্থই ক্ষতিগ্রস্ত।
Those who break Allâh’s Covenant after ratifying it, and sever what Allâh has ordered to be joined (as regards Allâh’s Religion of Islâmic Monotheism, and to practise its legal laws on the earth and also as regards keeping good relations with kith and kin ), and do mischief on earth, it is they who are the losers.
الَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الأَرْضِ أُولَـئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
Allatheena yanqudoona AAahda Allahi min baAAdi meethaqihi wayaqtaAAoona ma amara Allahu bihi an yoosala wayufsidoona fee al-ardi ola-ika humu alkhasiroona
YUSUFALI: Those who break Allah’s Covenant after it is ratified, and who sunder what Allah Has ordered to be joined, and do mischief on earth: These cause loss (only) to themselves.
PICKTHAL: Those who break the covenant of Allah after ratifying it, and sever that which Allah ordered to be joined, and (who) make mischief in the earth: Those are they who are the losers.
SHAKIR: Who break the covenant of Allah after its confirmation and cut asunder what Allah has ordered to be joined, and make mischief in the land; these it is that are the losers.
KHALIFA: who violate GOD’s covenant after pledging to uphold it, sever what GOD has commanded to be joined, and commit evil. These are the losers.
২৬। আল্লাহ্ মশা কিংবা তার চাইতে হীন কোন বস্তুর উপমা দিতে অবজ্ঞা প্রকাশ করেন না, ৪৫। যারা ঈমান এনেছে তারা জানে যে, এই সত্য তার প্রভুর নিকট থেকে আগত। কিন্তু যারা ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করে তারা বলে, ‘এই উপমার দ্বারা আল্লাহ্ কি বোঝাতে চান?’ এর দ্বারা তিনি অনেককে বিপথে চালিত করেন এবং অনেককে সৎপথে পরিচালিত করেন। বস্তুতঃ যারা [সত্য পথ] পরিত্যাগ করেছে তারা ব্যতীত অন্য কাউকে তিনি বিভ্রান্ত করেন না।
২৭। যারা অনুমোদন করার পরে আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ্ যা সংযুক্ত রাখতে আদেশ দিয়েছেন তা ভঙ্গ করে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়, এগুলি [শুধুমাত্র] তাদেরই নিজের ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।
৪৫। আরবী শব্দের প্রতিশব্দ ‘অতিক্ষুদ্র’ কথাটির দ্বারা যা বুঝাতে চাওয়া হয়েছে তার অর্থ হচ্ছে দুর্বলতম প্রাণী। এটা শুধু যে আয়তনে তাই-ই নয়, সর্ব ব্যাপারেই যে প্রাণী অত্যন্ত নগন্য। সূরা ২৯ : ৪১ তে উপমার জন্য মাকড়সাকে ব্যবহার করা হয়েছে। অনুরূপভাবে সূরা ২২ : ৭৩ তে মাছিকে উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার উপমার জন্য প্রাকৃতিক, অতি-প্রাকৃতিক শক্তিকেও ব্যবহার করা হয়েছে যেমন ২ : ১৯ তে বজ্র এবং বিদ্যুৎকে উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ্র কাছে তার প্রতিটি সৃষ্টিই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ। তাই আমাদের কাছে যা অত্যন্ত নগণ্য ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আল্লাহ্ তাকেও উপমা হিসেবে ব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করেন না। আল্লাহ্র সৃষ্টিতে বিশাল সিন্ধু, পর্বত, মহীরুহ, বিশাল প্রাণী ইত্যাদি এ সবে যে সৃষ্টি নৈপুণ্য বা কৌশল বিদ্যমান, ক্ষুদ্র মশা, মাছি বা পিপঁড়া বা মাকড়সাতে সেই পরিমাণ সৃষ্টি কৌশল বিদ্যমান। বিজ্ঞান বলে প্রতিটি ক্ষুদ্র প্রাণী বা বস্তু, তাদের যে ধর্ম ও সৃষ্টি কৌশল তা সবই আল্লাহ্র অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞারই স্বাক্ষর। এমনকি অনুজীব যাদের অনুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যতীত দেখা সম্ভব নয়, তাদেরও অবজ্ঞা করার ক্ষমতা আমাদের নাই। কারণ আমরা জানি এরা আমাদের চর্মচক্ষুর অগোচরে থেকেও মানুষের মত শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকেও ধ্বংস করে দিতে পারে। যেমন-প্লেগ, কলেরা, বসন্ত ইত্যাদির জীবাণু চর্মচক্ষে দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু এদের ধ্বংস করার ক্ষমতা আমরা সবাই জানি। সাম্প্রতিককালে এইড্স এর আতঙ্ক সকলেরই জানা। সুতরাং স্রষ্টার সৃষ্টিতে ছোট বড় কিছু নাই এই বোধ শুধুমাত্র দূরদর্শী ও চিন্তাশীলরাই অনুধাবন করতে পারে, যারা সত্যিকারের ভাবে মুমিন। মুমিনদের জন্য এসব দৃষ্টান্ত হেদায়েতের উপকরণ। আর যাদের মন মস্তিষ্ক অবিরাম খোদাদ্রোহিতার ফলে সম্পূর্ণভাবে বুদ্ধি-বিবেচনা ও অনুধাবন শক্তি বিবর্জিত হয়ে পড়েছে, তাদের জন্য উপরিউক্ত উপমা আরও পথভ্রষ্টতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই সাথে এটাও লক্ষণীয় যে আয়াত ২৬ ও ২৭ এক সাথে পড়া উচিত। পথভ্রষ্টদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে আয়াত ২ : ২৭-তে। এরা সেই সব পাপী যারা আল্লাহ্র সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। যারা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, পৃথিবীতে হিংসা , বিদ্বেষের আগুন জ্বালায়, সমাজের শান্তির পরিবর্তে হানাহানির সৃষ্টি করে।
২:২৭ এই আয়াতে যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে এটা এখানে কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের (ইহুদী) জন্য বলা হলেও এর আবেদন সর্বকালের, সর্বস্থানের জন্য প্রযোজ্য। এখানে ইহুদীদের আচার আচরণ সম্বন্ধে বলা হয়েছে। আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মুনাজাতের জবাবে বলেছেন যে আল্লাহ্র নির্দেশিত বাণী যুগে যুগে হযরত ইব্রাহীমের (আঃ) বংশধরদের মাধ্যমেই প্রচারের জন্য পাঠাবেন। বিনিময়ে তারা আল্লাহ্ নির্দেশিত পথে চলবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ইহুদীরা তাদের সেই অঙ্গীকার থেকে দূরে সরে গিয়েছে। শুধু তাই-ই নয় তারা আল্লাহ্র প্রেরিত রসুলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, তাদের হত্যা ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত, ফলে তাদের আত্মার ধ্বংস নিজেরাই ডেকে এনেছে। ইহুদীদের উপমার সাহায্যে আল্লাহ্ সমগ্র মানব সমাজকে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে পৃথিবীর প্রতিটি জীবন আল্লাহ্র কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। আল্লাহ্ তাদের ভালবাসেন, দয়া করেন। বিনিময়ে তারা আল্লাহ্র প্রদর্শিত পথে চলবে। এই পথ চলা হবে স্ব-ইচ্ছায়। স্রষ্টার কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পনের মাধ্যমে। যারা তা না করে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ্র প্রদর্শিত পথকে উপক্ষো করে, তাদের বিবেক (Spiritual Insight) হয় তমসাচ্ছন্ন। বিবেক তমসাচ্ছন্ন হলে মানুষের মধ্যে ভাল-মন্দের, ন্যায়-অন্যায় এর মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এর ফলে আল্লাহ্র রহমত তাদের অন্তরকে স্পর্শ করে না। পরিণতিতে অন্তরের অন্ধকার দূরীভূত হয় না, বিবেক জাগ্রত হয় না। বিবেকহীন আত্মা পশুর সমান। যার অন্তর প্রদর্শিত পথের আলো গ্রহণে অপারগ, তার মত হতভাগা আর কে আছে? তার জন্য পৃথিবী হাহাকারময় ও অশান্তিময়। তাদের পরকাল দোযখের আগুনের লেলিহান শিখায় আবৃত। আল্লাহ্র পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য এতে ব্যাহত হয় না একবিন্দুও। তাই ক্ষুদ্র বস্তুর উপমা এসব অন্তর বোঝার ক্ষমতা রাখে না। কারণ তাদের আত্মা অন্ধকারে আচ্ছন্ন। শুধুমাত্র তারাই বুঝতে পারবে, যাদের আত্মায় আল্লাহ্র হেদায়েতের আলো প্রবেশ লাভ করেছে। বরং এইসব উপমাতে তাদের ঈমানের দৃঢ়তা আরও বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ্র রহমত তাদের অন্তরকে বিধৌত করে, ফলে তাদের অন্তর্দৃষ্টি, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অনুধাবন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
আয়াতঃ 002.028
কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অতঃপর তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে।
How can you disbelieve in Allâh? Seeing that you were dead and He gave you life. Then He will give you death, then again will bring you to life (on the Day of Resurrection) and then unto Him you will return.
كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتاً فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
Kayfa takfuroona biAllahi wakuntum amwatan faahyakum thumma yumeetukum thumma yuhyeekum thumma ilayhi turjaAAoona
YUSUFALI: How can ye reject the faith in Allah?- seeing that ye were without life, and He gave you life; then will He cause you to die, and will again bring you to life; and again to Him will ye return.
PICKTHAL: How disbelieve ye in Allah when ye were dead and He gave life to you! Then He will give you death, then life again, and then unto Him ye will return.
SHAKIR: How do you deny Allah and you were dead and He gave you life? Again He will cause you to die and again bring you to life, then you shall be brought back to Him.
KHALIFA: How can you disbelieve in GOD when you were dead and He gave you life, then He puts you to death, then He brings you back to life, then to Him you ultimately return?
২৮। কিভাবে তোমরা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসকে অস্বীকার কর ৪৬? যখন দেখতে পাও তোমরা ছিলে প্রাণহীন এবং তিনি তোমাদের জীবন দিয়েছেন। তারপরে তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন এবং পুণরায় তোমাদের জীবনে ফিরিয়ে আনবেন এবং পুণরায় তাঁর নিকটই হবে তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন।২৯। তিনিই পৃথিবীর সকল বস্তু তোমাদের [ব্যবহারের] জন্য সৃষ্টি করেছেন। উপরন্তু তার পরিকল্পনা আকাশকেও অন্তর্ভূক্ত করে, তিনি সপ্ত আসমান তৈরির কাজকে সুষম করেন। সকল বিষয় সম্বন্ধে তিনি পরিপূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী।
৪৬। এই [২ : ২২]-আয়াতে আল্লাহ্ তার বান্দাকে জানাচ্ছেন তার অসীম করুণার কথা। সন্দেহ বাতিকদের সন্দেহ খণ্ডন করেছেন ২ : ২৩-এ। অন্যায় কাজের শাস্তি বর্ণনা করেছেন ২ : ২৪ আয়াতে এবং যারা পৃথিবীতে ভাল কাজ করে তাদের জন্য আছে সুখবর :২৫ আয়াতে। কোরআনের আয়াতে এসব বর্ণনা করা হয়েছে চমৎকার ভাষা ও যুক্তির মাধ্যমে। আয়াত ২ : ২৬-২৭ আয়াতে বলা হয়েছে যে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভালর পরিবর্তে মন্দকে বেছে নেয়, আল্লাহ্র বাণীকে অস্বীকার করে, আল্লাহ্র দেখানো রাস্তাকে (নৈতিক ও চারিত্রিক গুনাবলীর উন্নতি) পরিহার করে, ফলে আল্লাহ্র সাথে মানুষের যে ওয়াদা তারা তা ভঙ্গ করে। মহাগ্রন্থ কুরআনে বর্ণিত ছোট ছোট উপমার দ্বারা এইসব উদ্ধত ও অবাধ্যজনকেই বিপথগামীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এরা আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এবং যে সব সম্পর্ক আল্লাহ্ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে। যার পরিণাম স্বরূপ ধরার বুকে অশান্তি বিস্তার করে।
এর পরের আয়াতে ২ : ২৮-২৯ আল্লাহ্ তার বান্দার অন্তরের অনুভূতির কাছে আবেদন রেখেছেন। তিনি বলেছেন এই পৃথিবীতে বান্দার সর্ব অস্তিত্ব, তার ধন-সম্পদ, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি, জ্ঞান-মেধা সবকিছুই তাঁরই দান। জীবন ও মৃত্যুর রহস্য তাঁরই হাতে। মরদেহের মৃত্যুই জীবনের শেষ কথা নয়। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবন। এই পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনকে পরকালের ‘শিক্ষানবীশ কাল’ (Probationary Period) বলা যায়। পরকালের অনন্ত জীবনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সময় হচ্ছে পৃথিবীর এই জীবন। এই জীবন শেষে আল্লাহ্র কাছেই ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব করে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টিকে মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আলোচ্য আয়াতে এ তথ্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় যে পৃথিবীতে এমন কোন বস্তু নাই যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের উপকার সাধন করে না। পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীব থেকে বিরাট মহাবিশ্ব সবই তাঁর সৃষ্টি। মহাবিশ্বের আয়তন ধারণা করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। এই মহাকাশকে আল্লাহ্ সপ্ত আকাশে ভাগ করেছেন। ভবিষ্যতের বিজ্ঞানই হয়তো এই সপ্ত আকাশের সন্ধান দেবে। এখানে সপ্ত আকাশ হয়তো আল্লাহ্ সাতটি গ্যালাক্সির বা ছায়াপথের সন্ধান দিচ্ছেন-যেখানে আমাদের বিজ্ঞান বিশ্বজগতের শুধুমাত্র এক আকাশ বা একটি ছায়াপথের সন্ধান দেয়। ভবিষ্যতের বিজ্ঞান আমাদের এই রহস্যের সমাধান দেবে। স্রষ্টার সৃষ্টি বিশাল এবং সুক্ষ্ম কৌশল এবং জ্ঞানে ভরা। তার সৃষ্টির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাঁর সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য ও জ্ঞান আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে ধারণা করাও অসম্ভব। সেই স্রষ্টাকে ইচ্ছাকৃতভাবে যারা অস্বীকার করে তাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি (Spiritual Faculty) আস্তে আস্তে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যায়।
আয়াতঃ 002.029
তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত।
He it is Who created for you all that is on earth. Then He Istawâ (rose over) towards the heaven and made them seven heavens and He is the All-Knower of everything.
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الأَرْضِ جَمِيعاً ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاء فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
Huwa allathee khalaqa lakum ma fee al-ardi jameeAAan thumma istawa ila alssama-i fasawwahunna sabAAa samawatin wahuwa bikulli shay-in AAaleemun
YUSUFALI: It is He Who hath created for you all things that are on earth; Moreover His design comprehended the heavens, for He gave order and perfection to the seven firmaments; and of all things He hath perfect knowledge.
PICKTHAL: He it is Who created for you all that is in the earth. Then turned He to the heaven, and fashioned it as seven heavens. And He is knower of all things.
SHAKIR: He it is Who created for you all that is in the earth, and He directed Himself to the heaven, so He made them complete seven heavens, and He knows all things.
KHALIFA: He is the One who created for you everything on earth, then turned to the sky and perfected seven universes therein, and He is fully aware of all things.
২৮। কিভাবে তোমরা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসকে অস্বীকার কর ৪৬? যখন দেখতে পাও তোমরা ছিলে প্রাণহীন এবং তিনি তোমাদের জীবন দিয়েছেন। তারপরে তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন এবং পুণরায় তোমাদের জীবনে ফিরিয়ে আনবেন এবং পুণরায় তাঁর নিকটই হবে তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন।২৯। তিনিই পৃথিবীর সকল বস্তু তোমাদের [ব্যবহারের] জন্য সৃষ্টি করেছেন। উপরন্তু তার পরিকল্পনা আকাশকেও অন্তর্ভূক্ত করে, তিনি সপ্ত আসমান তৈরির কাজকে সুষম করেন। সকল বিষয় সম্বন্ধে তিনি পরিপূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী।
৪৬। এই [২ : ২২]-আয়াতে আল্লাহ্ তার বান্দাকে জানাচ্ছেন তার অসীম করুণার কথা। সন্দেহ বাতিকদের সন্দেহ খণ্ডন করেছেন ২ : ২৩-এ। অন্যায় কাজের শাস্তি বর্ণনা করেছেন ২ : ২৪ আয়াতে এবং যারা পৃথিবীতে ভাল কাজ করে তাদের জন্য আছে সুখবর :২৫ আয়াতে। কোরআনের আয়াতে এসব বর্ণনা করা হয়েছে চমৎকার ভাষা ও যুক্তির মাধ্যমে। আয়াত ২ : ২৬-২৭ আয়াতে বলা হয়েছে যে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভালর পরিবর্তে মন্দকে বেছে নেয়, আল্লাহ্র বাণীকে অস্বীকার করে, আল্লাহ্র দেখানো রাস্তাকে (নৈতিক ও চারিত্রিক গুনাবলীর উন্নতি) পরিহার করে, ফলে আল্লাহ্র সাথে মানুষের যে ওয়াদা তারা তা ভঙ্গ করে। মহাগ্রন্থ কুরআনে বর্ণিত ছোট ছোট উপমার দ্বারা এইসব উদ্ধত ও অবাধ্যজনকেই বিপথগামীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এরা আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এবং যে সব সম্পর্ক আল্লাহ্ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে। যার পরিণাম স্বরূপ ধরার বুকে অশান্তি বিস্তার করে।
এর পরের আয়াতে ২ : ২৮-২৯ আল্লাহ্ তার বান্দার অন্তরের অনুভূতির কাছে আবেদন রেখেছেন। তিনি বলেছেন এই পৃথিবীতে বান্দার সর্ব অস্তিত্ব, তার ধন-সম্পদ, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি, জ্ঞান-মেধা সবকিছুই তাঁরই দান। জীবন ও মৃত্যুর রহস্য তাঁরই হাতে। মরদেহের মৃত্যুই জীবনের শেষ কথা নয়। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবন। এই পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনকে পরকালের ‘শিক্ষানবীশ কাল’ (Probationary Period) বলা যায়। পরকালের অনন্ত জীবনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সময় হচ্ছে পৃথিবীর এই জীবন। এই জীবন শেষে আল্লাহ্র কাছেই ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব করে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টিকে মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আলোচ্য আয়াতে এ তথ্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় যে পৃথিবীতে এমন কোন বস্তু নাই যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের উপকার সাধন করে না। পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীব থেকে বিরাট মহাবিশ্ব সবই তাঁর সৃষ্টি। মহাবিশ্বের আয়তন ধারণা করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। এই মহাকাশকে আল্লাহ্ সপ্ত আকাশে ভাগ করেছেন। ভবিষ্যতের বিজ্ঞানই হয়তো এই সপ্ত আকাশের সন্ধান দেবে। এখানে সপ্ত আকাশ হয়তো আল্লাহ্ সাতটি গ্যালাক্সির বা ছায়াপথের সন্ধান দিচ্ছেন-যেখানে আমাদের বিজ্ঞান বিশ্বজগতের শুধুমাত্র এক আকাশ বা একটি ছায়াপথের সন্ধান দেয়। ভবিষ্যতের বিজ্ঞান আমাদের এই রহস্যের সমাধান দেবে। স্রষ্টার সৃষ্টি বিশাল এবং সুক্ষ্ম কৌশল এবং জ্ঞানে ভরা। তার সৃষ্টির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাঁর সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য ও জ্ঞান আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে ধারণা করাও অসম্ভব। সেই স্রষ্টাকে ইচ্ছাকৃতভাবে যারা অস্বীকার করে তাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি (Spiritual Faculty) আস্তে আস্তে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যায়।
আয়াতঃ 002.030
আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
And (remember) when your Lord said to the angels: ”Verily, I am going to place (mankind) generations after generations on earth.” They said: ”Will You place therein those who will make mischief therein and shed blood, – while we glorify You with praises and thanks (Exalted be You above all that they associate with You as partners) and sanctify You.” He (Allâh) said: ”I know that which you do not know.”
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأَرْضِ خَلِيفَةً قَالُواْ أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاء وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
Wa-ith qala rabbuka lilmala-ikati innee jaAAilun fee al-ardi khaleefatan qaloo atajAAalu feeha man yufsidu feeha wayasfiku alddimaa wanahnu nusabbihu bihamdika wanuqaddisu laka qala innee aAAlamu ma la taAAlamoona
YUSUFALI: Behold, thy Lord said to the angels: “I will create a vicegerent on earth.” They said: “Wilt Thou place therein one who will make mischief therein and shed blood?- whilst we do celebrate Thy praises and glorify Thy holy (name)?” He said: “I know what ye know not.”
PICKTHAL: And when thy Lord said unto the angels: Lo! I am about to place a viceroy in the earth, they said: Wilt thou place therein one who will do harm therein and will shed blood, while we, we hymn Thy praise and sanctify Thee? He said: Surely I know that which ye know not.
SHAKIR: And when your Lord said to the angels, I am going to place in the earth a khalif, they said: What! wilt Thou place in it such as shall make mischief in it and shed blood, and we celebrate Thy praise and extol Thy holiness? He said: Surely I know what you do not know.
KHALIFA: Recall that your Lord said to the angels, “I am placing a representative (a temporary god) on Earth.” They said, “Will You place therein one who will spread evil therein and shed blood, while we sing Your praises, glorify You, and uphold Your absolute authority?” He said, “I know what you do not know.”
রুকু – ৪
৪৭। ফেরেশতারা যদিও পূত, পবিত্র এবং ক্ষমতাধর তবুও তারা সম্পূর্ণ নয়। তাদের ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী ও সম্পূর্ণ (Perfect) তবুও তারা অসম্পূর্ণ। কারণ তাদের কার্যপ্রণালীর মধ্যে কোথাও আবেগ ও অনুভূতির স্থান নাই। এখানেই ফেরেশতাদের সাথে মানুষের পার্থক্য। এখানেই ফেরেশতাদের উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। যে রকম কম্পিউটার যে কোনও কাজে মানুষের থেকে অত্যন্ত দ্রুত, অত্যন্ত নির্ভুল এবং অত্যন্ত শক্তিশালী,-তবুও মানুষ কম্পিউটার থেকে শ্রেষ্ঠ। ফেরেশতারা আবেগ ও অনুভূতিশূন্য ফলে তারা কম্পিউটারের মত যান্ত্রিক। আবেগ ও অনুভূতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকাশ হচ্ছে-ভালবাসার ক্ষমতা। সৃষ্টির মধ্যে একমাত্র মানুষেরই ভালবাসার ক্ষমতা আছে। এই আবেগ ও অনুভূতি (Passion and emotion) ঠিকভাবে পরিচালিত করে মানুষ হয় দেবত্বে উন্নীত, আবার অন্ধ আবেগ ও অনুভূতির ফলে মানুষ ন্যায়-অন্যায় বোধ হারিয়ে ফেলে। নিজেকে পশুর স্তরে নামিয়ে ফেলে। কে কিভাবে তার আবেগ ও অনুভূতিকে পরিচালিত করে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে তার “স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি” প্রয়োগের উপরে। একমাত্র মানুষকেই আল্লাহ্ “সীমিত স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি” দান করেছেন। ফলে পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্ট জীবের মধ্যে একমাত্র মানুষই তার নিজস্ব ভাগ্য গড়ার অধিকার লাভ করেছে। যখন এই ইচ্ছা শক্তি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তখন মানুষ নিজের সৌভাগ্য নিজে গড়ে তোলে। প্রকৃতিকে বশ করে, নিজেকে পৃথিবীর ‘খলিফা’ রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এমন ক্ষমতা আল্লাহ্ একমাত্র মানুষকেই দিয়েছেন।
অপরপক্ষে ফেরেশতাদের আমরা কল্পনা করতে পারি, যাদের নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি নাই। তাদের আমরা শক্তির (Force) প্রতীক হিসেবে ধরতে পারি। আল্লাহ্র হুকুম যারা নির্ভুলভাবে মেনে চলে। কিন্তু নিজস্ব বিচার বিবেচনা নাই। ফলে আল্লাহ্র প্রতিভূ হওয়ার ক্ষমতা নাই। আল্লাহ্র প্রতিভূ হওয়া যায় তখনই যখন নিজস্ব আবেগ, অনুভূতির সাহায্যে সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টিতে সমস্ত ইচ্ছাশক্তিকে নিয়োজিত করার ক্ষমতা থাকে, ভাল কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে, মন্দ কাজে বাঁধা দান করতে পারে, তখনই মানুষের মনুষ্যত্ব প্রকাশ পায় এবং মানুষ দেবত্বে উন্নীত হয়। ‘খলিফার’ গুণাবলী অর্জনে সক্ষম হয়। এই পার্থক্য শেক্সপীয়ার [৯৪ সনেটে] কয়েকটি পংক্তিতে প্রকাশ করেছেন, ‘They are the lords and owners of their faces. Others but stewards of their excellence.’ যেহেতু ফেরেশতারা আবেগ-অনুভূতিহীন, তাই আবেগ অনুভূতির অপব্যবহারের ফলে পৃথিবীতে যে দুঃখ দুর্দশার উদ্ভব হবে সেটাই তাদের প্রধান শঙ্কার বিষয় ছিল। আসলে মানুষের মাঝে স্রষ্টা তাঁর বৈশিষ্ট্যের রূপ প্রকাশ করেছেন। মানুষ সৃষ্টি করে, মানুষ তার সৃষ্টিকে রক্ষা করে, সর্বোপরি মানুষ ভালবাসে। যেরূপ স্রষ্টা আমাদের এবং বিশ্বচরাচরের তার সমস্ত সৃষ্টিকেই ভালবাসেন। আবেগ-অনুভূতির সর্বোচ্চ ফসল হচ্ছে ভালবাসা। ভালবাসা চাওয়া ও ভালাবাসা দেওয়া। স্রষ্টার করুণা ও দয়া-তাঁর ভালবাসারই প্রকাশ। ফেরেশতারা স্রষ্টার এই বিশেষ দিকটি অনুধাবন করতে অক্ষম। কারণ তারা আবেগ ও অনুভূতি বিহীন। ফেরেশতারা বিনয় ও ভক্তি সহকারে আল্লাহ্র কাছে মানুষ সৃষ্টিতে আপত্তি জানিয়েছেন। ফেরেশতাদের মতামত প্রকাশ কোন প্রতিবাদ ছলে অহংকার প্রদর্শন বা যোগ্যতার দাবী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং তাদের অভিমতের অভিব্যক্তি ছিল একান্ত অনুগতের ন্যায় এবং বিনীতভাবে নিজস্ব খেদমত পেশ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এখানে এ কথা ভাবার অবকাশ নাই যে ফেরেশতারা হিংসার বশবর্তী হয়ে এরকম অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ তা সম্ভব নয়। হিংসা বা রাগ, দ্বেষ সবেরই উৎপত্তিস্থল হচ্ছে আবেগ ও অনুভূতি। ফেরেশতারা সর্বপ্রকার আবেগ ও অনুভূতিশূন্য। সুতরাং ভালবাসার আবেগ ও অনুভূতি অনুভব করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেই কারণেই সর্বজ্ঞ আল্লাহ্ তাদের বলেছেন যে তাদের জ্ঞান সীমিত এবং ফেরেশতারা তা স্বীকার করে নেয় [২ : ৩২]।
ফেরেশতাদের এই যে অপূর্ণতা এটা তাদের কোনও ত্রুটি নয়। আল্লাহ্ তাদের সেইভাবেই সৃষ্টি করেছেন এবং আল্লাহ্ যখন ফেরেশতাদের নিকট আদমের (আঃ) মানসিক উৎকর্ষতার প্রমাণ দাখিল করলেন তখন ফেরেশতারা তাদের অপূর্ণতা স্বীকার করে নিল।
আয়াতঃ 002.031
আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।
And He taught Adam all the names (of everything) , then He showed them to the angels and said, ”Tell Me the names of these if you are truthful.”
وَعَلَّمَ آدَمَ الأَسْمَاء كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلاَئِكَةِ فَقَالَ أَنبِئُونِي بِأَسْمَاء هَـؤُلاء إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
WaAAallama adama al-asmaa kullaha thumma AAaradahum AAala almala-ikati faqala anbi-oonee bi-asma-i haola-i in kuntum sadiqeena
YUSUFALI: And He taught Adam the names of all things; then He placed them before the angels, and said: “Tell me the names of these if ye are right.”
PICKTHAL: And He taught Adam all the names, then showed them to the angels, saying: Inform Me of the names of these, if ye are truthful.
SHAKIR: And He taught Adam all the names, then presented them to the angels; then He said: Tell me the names of those if you are right.
KHALIFA: He taught Adam all the names then presented them to the angels, saying, “Give me the names of these, if you are right.”
৪৮। এই আয়াতের তর্জমা এরকম দাঁড়ায় যে, ‘বস্তুর প্রকৃতি শিক্ষা দেন’ অনুবাদেকরা একে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে বস্তুসামগ্রীর নাম, এদের গুণাগুণ ও লক্ষনাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের যোগ্যতা। অর্থাৎ একমাত্র আদমই সেই বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন যার সাহায্যে মানুষ জড় প্রকৃতিকে অতিক্রম করে তার প্রকৃত সত্তাকে উদ্ঘাটনে সক্ষম হবে। এ যোগ্যতা কেবলমাত্র আদম সন্তানকেই দেয়া হয়েছে। ফেরেশতাদের স্বভাব প্রকৃতি মোটেই এর উপযোগী নয়। এসব কিছুই আদমকে তার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ধর্ম হিসেবেই শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে শিক্ষাদানের কোনও আয়োজনই করা হয় নাই। বরং আদম (আঃ) কে সৃষ্টির প্রারম্ভিক পর্যায়ে এসব জ্ঞান স্বভাবগত করেই দেওয়া হয়েছিল। যেমন-সদ্যজাত শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই মায়ের দুধ পান করতে এবং হাঁসের ছানা সাঁতার কাটতে জানে। এ ব্যাপারে কোনও বাহ্যিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয় না। হযরত আদমের (আঃ) জন্য জন্মগতভাবে যে বিশেষ গুণাবলী ছিল, তা হচ্ছে তার আবেগ ও অনুভূতি, যার সাহায্যে তিনি বস্তু জগতের উর্ধ্বেও চিন্তা করতে সক্ষম ছিলেন। সমস্ত আয়াতটাই এক বিশেষ অর্থবোধক। যে বিশেষ চারিত্রিক গুণাবলীর জন্য আদম সন্তানকে ফেরেশতাদের থেকে পৃথক এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে তা হচ্ছে – ১) মানুষ ভালবাসতে পারে, ২) নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগে কোনও কাজের পরিকল্পনা করতে পারে, ৩) ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, ফলে আল্লাহ্র প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা রাখে। মানুষের এই বিশেষ গুণাবলীর জন্যই মানুষ স্রষ্টাকে না দেখেও নিজের সত্ত্বার ভিতরে স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে। সে বিশ্বাস করে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ আদম সন্তানকে ভালবাসেন। তিনি সর্বজ্ঞ। তিনি সব দেখেন, সব শুনেন। মানুষ তার অন্তরের অন্তঃস্থলের কোনও চিন্তা, কোনও কাজ, কোনও অনুভব, কোনও কিছু তাঁর কাছে গোপন করতে পারে না। সর্বশক্তিমানের উপর বিশ্বাস, তাঁর প্রতি আনুগত্য, ভালবাসা, সবই জন্মলাভ করে মানুষের সেই বিশেষ চারিত্রিক গুণাবলীর জন্য, আর তা হচ্ছে আবেগ ও অনুভূতি (Feeling)। এই বিশেষ গুণটি অর্থাৎ আবেগ ও অনুভূতি শুধু যে ফেরেশতাদের মধ্যেই অনুপস্থিত তাই নয়, সমগ্র বিশ্ব চরাচরে মানুষ বাদে সমস্ত প্রাণীকূলের মধ্যেও অনুপস্থিত।
আয়াতঃ 002.032
তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।
They (angels) said: ”Glory be to You, we have no knowledge except what you have taught us. Verily, it is You, the All-Knower, the All-Wise.”
قَالُواْ سُبْحَانَكَ لاَ عِلْمَ لَنَا إِلاَّ مَا عَلَّمْتَنَا إِنَّكَ أَنتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
Qaloo subhanaka la AAilma lana illa ma AAallamtana innaka anta alAAaleemu alhakeemu
YUSUFALI: They said: “Glory to Thee, of knowledge We have none, save what Thou Hast taught us: In truth it is Thou Who art perfect in knowledge and wisdom.”
PICKTHAL: They said: Be glorified! We have no knowledge saving that which Thou hast taught us. Lo! Thou, only Thou, art the Knower, the Wise.
SHAKIR: They said: Glory be to Thee! we have no knowledge but that which Thou hast taught us; surely Thou art the Knowing, the Wise.
KHALIFA: They said, “Be You glorified, we have no knowledge, except that which You have taught us. You are the Omniscient, Most Wise.”
৩২। তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র, আপনি যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের অন্য কোন জ্ঞান নাই। প্রকৃতপক্ষে আপনিই [একমাত্র] জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় পূর্ণাঙ্গ।৩৩। তিনি বললেন, ‘হে আদম! এগুলির প্রকৃতি সম্বন্ধে বল।’ যখন সে ফেরেশতাদের তা বলল, আল্লাহ্ বললেন, ‘আমি কি তোমাদের বলি নাই যে আমি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন রহস্য অবগত, এবং তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর আমি তা [সব] জানি?’
৩৪। এবং স্মরণ কর, আমি ফেরেশতাদের বলেছিলাম, ‘আদমকে সেজ্দা কর।’ ইবলীশ ব্যতীত সকলেই সেজ্দা করলো ৪৯। সে অমান্য করলো এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলো। [ফলে] সে কাফেরদের অন্তুর্ভূক্ত হল।
৪৯। এই আরবী আয়াতের অনুবাদ দাঁড়ায় যে, ‘ইবলীশ ব্যতীত সকলেই সিজ্দা করলো।’ এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইব্লিশ একজন ফেরেশ্তা কিন্তু ফেরেশ্তারা পথভ্রষ্ট হবে সে রকম ক্ষমতা তাদের নাই। মুসলিম দর্শনে তা স্বীকারও করে না। সূরা ১৩ এর আয়াত ৫০-এ ইব্লিশকে জ্বীন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা পরে এ সম্বন্ধে আলোচনা করবো।
আয়াতঃ 002.033
তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর!
He said: ”O Adam! Inform them of their names,” and when he had informed them of their names, He said: ”Did I not tell you that I know the Ghaib (unseen) in the heavens and the earth, and I know what you reveal and what you have been concealing?”
قَالَ يَا آدَمُ أَنبِئْهُم بِأَسْمَآئِهِمْ فَلَمَّا أَنبَأَهُمْ بِأَسْمَآئِهِمْ قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ
Qala ya adamu anbi/hum bi-asma-ihim falamma anbaahum bi-asma-ihim qala alam aqul lakum innee aAAlamu ghayba alssamawati waal-ardi waaAAlamu ma tubdoona wama kuntum taktumoona
YUSUFALI: He said: “O Adam! Tell them their names.” When he had told them, Allah said: “Did I not tell you that I know the secrets of heaven and earth, and I know what ye reveal and what ye conceal?”
PICKTHAL: He said: O Adam! Inform them of their names, and when he had informed them of their names, He said: Did I not tell you that I know the secret of the heavens and the earth? And I know that which ye disclose and which ye hide.
SHAKIR: He said: O Adam! inform them of their names. Then when he had informed them of their names, He said: Did I not say to you that I surely know what is ghaib in the heavens and the earth and (that) I know what you manifest and what you hide?
KHALIFA: He said, “O Adam, tell them their names.” When he told them their names, He said, “Did I not tell you that I know the secrets of the heavens and the earth? I know what you declare, and what you conceal.”
৩২। তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র, আপনি যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের অন্য কোন জ্ঞান নাই। প্রকৃতপক্ষে আপনিই [একমাত্র] জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় পূর্ণাঙ্গ।৩৩। তিনি বললেন, ‘হে আদম! এগুলির প্রকৃতি সম্বন্ধে বল।’ যখন সে ফেরেশতাদের তা বলল, আল্লাহ্ বললেন, ‘আমি কি তোমাদের বলি নাই যে আমি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন রহস্য অবগত, এবং তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর আমি তা [সব] জানি?’
৩৪। এবং স্মরণ কর, আমি ফেরেশতাদের বলেছিলাম, ‘আদমকে সেজ্দা কর।’ ইবলীশ ব্যতীত সকলেই সেজ্দা করলো ৪৯। সে অমান্য করলো এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলো। [ফলে] সে কাফেরদের অন্তুর্ভূক্ত হল।
৪৯। এই আরবী আয়াতের অনুবাদ দাঁড়ায় যে, ‘ইবলীশ ব্যতীত সকলেই সিজ্দা করলো।’ এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইব্লিশ একজন ফেরেশ্তা কিন্তু ফেরেশ্তারা পথভ্রষ্ট হবে সে রকম ক্ষমতা তাদের নাই। মুসলিম দর্শনে তা স্বীকারও করে না। সূরা ১৩ এর আয়াত ৫০-এ ইব্লিশকে জ্বীন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা পরে এ সম্বন্ধে আলোচনা করবো।
আয়াতঃ 002.034
এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।
And (remember) when We said to the angels: ”Prostrate yourselves before Adam.”. And they prostrated except Iblîs (Satan), he refused and was proud and was one of the disbelievers (disobedient to Allâh).
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلاَئِكَةِ اسْجُدُواْ لآدَمَ فَسَجَدُواْ إِلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
Wa-ith qulna lilmala-ikati osjudoo li-adama fasajadoo illa ibleesa aba waistakbara wakana mina alkafireena
YUSUFALI: And behold, We said to the angels: “Bow down to Adam” and they bowed down. Not so Iblis: he refused and was haughty: He was of those who reject Faith.
PICKTHAL: And when We said unto the angels: Prostrate yourselves before Adam, they fell prostrate, all save Iblis. He demurred through pride, and so became a disbeliever.
SHAKIR: And when We said to the angels: Make obeisance to Adam they did obeisance, but Iblis (did it not). He refused and he was proud, and he was one of the unbelievers.
KHALIFA: When we said to the angels, “Fall prostrate before Adam,” they fell prostrate, except Satan; he refused, was too arrogant, and a disbeliever.
৩২। তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র, আপনি যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের অন্য কোন জ্ঞান নাই। প্রকৃতপক্ষে আপনিই [একমাত্র] জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় পূর্ণাঙ্গ।৩৩। তিনি বললেন, ‘হে আদম! এগুলির প্রকৃতি সম্বন্ধে বল।’ যখন সে ফেরেশতাদের তা বলল, আল্লাহ্ বললেন, ‘আমি কি তোমাদের বলি নাই যে আমি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন রহস্য অবগত, এবং তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর আমি তা [সব] জানি?’
৩৪। এবং স্মরণ কর, আমি ফেরেশতাদের বলেছিলাম, ‘আদমকে সেজ্দা কর।’ ইবলীশ ব্যতীত সকলেই সেজ্দা করলো ৪৯। সে অমান্য করলো এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলো। [ফলে] সে কাফেরদের অন্তুর্ভূক্ত হল।
৪৯। এই আরবী আয়াতের অনুবাদ দাঁড়ায় যে, ‘ইবলীশ ব্যতীত সকলেই সিজ্দা করলো।’ এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইব্লিশ একজন ফেরেশ্তা কিন্তু ফেরেশ্তারা পথভ্রষ্ট হবে সে রকম ক্ষমতা তাদের নাই। মুসলিম দর্শনে তা স্বীকারও করে না। সূরা ১৩ এর আয়াত ৫০-এ ইব্লিশকে জ্বীন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা পরে এ সম্বন্ধে আলোচনা করবো।
আয়াতঃ 002.035
এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।
And We said: ”O Adam! Dwell you and your wife in the Paradise and eat both of you freely with pleasure and delight of things therein as wherever you will, but come not near this tree or you both will be of the Zâlimûn (wrong-doers).”
وَقُلْنَا يَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلاَ مِنْهَا رَغَداً حَيْثُ شِئْتُمَا وَلاَ تَقْرَبَا هَـذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الْظَّالِمِينَ
Waqulna ya adamu oskun anta wazawjuka aljannata wakula minha raghadan haythu shi/tuma wala taqraba hathihi alshshajarata fatakoona mina alththalimeena
YUSUFALI: We said: “O Adam! dwell thou and thy wife in the Garden; and eat of the bountiful things therein as (where and when) ye will; but approach not this tree, or ye run into harm and transgression.”
PICKTHAL: And We said: O Adam! Dwell thou and thy wife in the Garden, and eat ye freely (of the fruits) thereof where ye will; but come not nigh this tree lest ye become wrong-doers.
SHAKIR: And We said: O Adam! Dwell you and your wife in the garden and eat from it a plenteous (food) wherever you wish and do not approach this tree, for then you will be of the unjust.
KHALIFA: We said, “O Adam, live with your wife in Paradise, and eat therefrom generously, as you please, but do not approach this tree, lest you sin.”
৫০। প্রশ্ন হচ্ছে বেহেশ্তের বাগানের অবস্থান কি আমাদের পৃথিবীতেই ছিল কি না? অবশ্যই না। কারণ ৩৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘পৃথিবী হবে তোমাদের বাসস্থান।’ পৃথিবীতে পতনের পূর্বে আদমের অবস্থান এমন এক জায়গায় ছিল যেখানে নির্মল হৃদয়ে বিরাজ করতো অপার শান্তি, নির্মল ভালবাসা, বিশ্বাস, আত্মার ভিতরে আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসের অপূর্ব আনুগত্য। আর পৃথিবী এমন এক জায়গা যেখানে প্রতি নিয়ত যে পরিবেশ বিরাজ করে তা কখনই বেহেশ্তের উপযোগী নয়। পৃথিবীতে বিরাজ করে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা। এখানে প্রতিনিয়ত স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসের অভাব পরিলক্ষিত হয়।
সুতরাং যারা বলে আদমের স্বর্গ পৃথিবীরই কোনও এক জায়গা তারা ভুল বলে। কারণ হয়তো স্বর্গ এমন এক জায়গা যেখানে আত্মার অবস্থান হবে স্থান ও কালের (Time & space) এর উর্ধ্বে। খ্রীষ্টানরা বলে আদমের স্বর্গ থেকে পতনের কারণ আদমের ‘জ্ঞান বৃক্ষের’ নিকট গমন এবং এর ফল ভক্ষণ। কিন্তু তা যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না। কারণ আল্লাহ্ ফেরেশতাদের বলেছেন [২ : ৩১] যে মানুষকে তিনি জ্ঞান দান করেছেন, যা ফেরেশতাদের নাই। সুতরাং মানুষের মধ্যে যে জ্ঞান ধারণের ক্ষমতা বা বিকাশ তা স্রষ্টা মানুষ সৃষ্টির সময়েই দান করেছেন। তাহলে কুরআন শরীফে যে বৃক্ষের নিকট আদম সন্তানকে অগ্রসর হতে নিষেধ করা হয়েছিল তা কি? তা অবশ্যই পাপ বৃক্ষ [Tree of evil]। আর এটা পাপ বৃক্ষ বলেই আল্লাহ্ শুধু যে এর ফল খেতে নিষেধ করেছেন তা নয়; এমনকি এর ধারে কাছে যেতেও নিষেধ করেছেন।
৫১। ‘জুল্ম’ আরবী শব্দটি বহুবিদ অর্থ করা যায়। এর দ্বারা ভুল, অন্যায়, ক্ষতি ইত্যাদি বুঝায়। যখন অন্যের প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল বা ক্ষতি করা হয় তখন তা অত্যাচার বা নিষ্পেষণে পরিণত হয়, তখন পাপবোধ অত্যাচারীর আত্মাকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে ফেলে। সুতরাং পাপী ব্যক্তি তার আত্মাকে ‘জুল্ম’ করে। আত্মার যা স্বাভাবিক বিকাশ তা বাধাগ্রস্থ হয়। স্বাভাবিকভাবে আত্মা হচ্ছে পূত, পবিত্র ও নিষ্পাপ। সৃষ্টির আদিতে আত্মার পরিচয় হচ্ছে স্বর্গীয়; শান্তিতে আপ্লুত কিন্তু কৃত পাপ তার আত্মাকে অন্ধকারে বা যন্ত্রণায় নিক্ষিপ্ত করে। ফলে আত্মার মধ্যে শান্তির পরিবর্তে যন্ত্রণার উদ্ভব হয় ‘জুল্ম’ এই শব্দটির দ্বারা আত্মার স্বাভাবিক গতির বিরুদ্ধাচরণ করা বুঝানো হয়েছে।
আয়াতঃ 002.036
অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে।
Then the Shaitân (Satan) made them slip therefrom (the Paradise), and got them out from that in which they were. We said: ”Get you down, all, with enmity between yourselves. On earth will be a dwelling place for you and an enjoyment for a time.”
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ وَقُلْنَا اهْبِطُواْ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِي الأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَى حِينٍ
Faazallahuma alshshaytanu AAanha faakhrajahuma mimma kana feehi waqulna ihbitoo baAAdukum libaAAdin AAaduwwun walakum fee al-ardi mustaqarrun wamataAAun ila heenin
YUSUFALI: Then did Satan make them slip from the (garden), and get them out of the state (of felicity) in which they had been. We said: “Get ye down, all (ye people), with enmity between yourselves. On earth will be your dwelling-place and your means of livelihood – for a time.”
PICKTHAL: But Satan caused them to deflect therefrom and expelled them from the (happy) state in which they were; and We said: Fall down, one of you a foe unto the other! There shall be for you on earth a habitation and provision for a time.
SHAKIR: But the Shaitan made them both fall from it, and caused them to depart from that (state) in which they were; and We said: Get forth, some of you being the enemies of others, and there is for you in the earth an abode and a provision for a time.
KHALIFA: But the devil duped them, and caused their eviction therefrom. We said, “Go down as enemies of one another. On Earth shall be your habitation and provision for awhile.”
৫২। [২ : ৩৪]-এ ‘ইব্লিশ’ এই কথাটির দ্বারা দুষ্টের বা শয়তানের ক্ষমতাকে (Power of Evil) বুঝানো হয়েছে। শয়তানের ক্ষমতা হচ্ছে ভালকে অবদমিত করার চেষ্টা ও শত্রুতা। ভালোর বিরুদ্ধে মন্দের বিদ্রোহ করা ও ভালোকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা, এই-ই হচ্ছে শয়তানের ক্ষমতা ও কার্যপ্রণালী। এখানে বেহেশ্তের বাগান থেকে পতনকে রূপক অর্থে প্রকাশ করলে আমরা আমাদের চারিপাশের পৃথিবীতে এর অসংখ্য উদাহরণই দেখতে পাই। পৃথিবীর মানুষ প্রতিনিয়ত লোভ-প্রলোভন বা শয়তানের কুমন্ত্রণার কাছে পরাজিত হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে সে আত্মার নিষ্পাপ অবস্থা যা সৃষ্টির আদিতে সে স্রষ্টার কাছে থেকে লাভ করেছিল, যার ফলে তার নির্মল আত্মায় অপার বেহেশতি শান্তি বিরাজ করতো সেই মানসিক অবস্থা থেকে বিচ্যুত হয়। লোভ-প্রলোভন, অন্যায় অত্যাচারের ফলে আত্মার শান্তি হয় বিঘ্নিত। আত্মা হয় মানসিক যন্ত্রণায় ক্ষত-বিক্ষত ও জর্জরিত। রূপক অর্থে আমাদের মানসিক শান্তিময় অবস্থা [State of Felicity] থেকে শয়তানের ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করাই হচ্ছে বেহেশ্ত থেকে পৃথিবীতে পতন যা অহরহ-ই আমাদের চারিপাশে ঘটে।
৫৩। মানুষ সৎ কাজের ফলে আত্মায় বেহেশ্তের শান্তি অনুভব করে, অসৎ কাজের ফল হচ্ছে দোযখের যন্ত্রণা। এই যন্ত্রনা হয় আত্মায়। এখানে আদম অর্থ মানব সম্প্রদায়কে বুঝানো হচ্ছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই আদম সন্তান। এখানে আদম, ইভ, শয়তান সবাইকে পরস্পরের শত্রু হিসেবে বলা হয়েছে। অর্থাৎ শয়তানের প্রলোভনই হচ্ছে মানুষের শত্রু, আত্মার যন্ত্রণা।
৫৪। পৃথিবীর আবাসস্থল মানব সন্তানের জন্য অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে অবস্থানকালে আদম সন্তানকে তার জীবিকার জন্য তার বাঁচার জন্য অহরহ সংগ্রাম করতে হবে-এইই আল্লাহ্র হুকুম। সংগ্রামী জীবনের মাধ্যমেই তাকে বেঁচে থাকতে হবে এবং এর মাধ্যমেই ভালোকে গ্রহণ করে, মন্দকে প্রতিহত করে আত্মাকে বেহেশ্তের উপযোগী করতে হবে। পৃথিবীতে তাঁর বেঁচে থাকার সংগ্রাম হচ্ছে আত্মিক এবাদতের এবং আত্মিক উন্নতির এক অপরিহার্য অংশ।
আয়াতঃ 002.037
অতঃপর হযরত আদম (আঃ) স্বীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই তিনি মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।
Then Adam received from his Lord Words . And his Lord pardoned him (accepted his repentance). Verily, He is the One Who forgives (accepts repentance), the Most Merciful.
فَتَلَقَّى آدَمُ مِن رَّبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
Fatalaqqa adamu min rabbihi kalimatin fataba AAalayhi innahu huwa alttawwabu alrraheemu
YUSUFALI: Then learnt Adam from his Lord words of inspiration, and his Lord Turned towards him; for He is Oft-Returning, Most Merciful.
PICKTHAL: Then Adam received from his Lord words (of revelation), and He relented toward him. Lo! He is the relenting, the Merciful.
SHAKIR: Then Adam received (some) words from his Lord, so He turned to him mercifully; surely He is Oft-returning (to mercy), the Merciful.
KHALIFA: Then, Adam received from his Lord words, whereby He redeemed him. He is the Redeemer, Most Merciful.
৫৫। ৩১ নং আয়াতে ‘আল্লাহ্ সকল জিনিসের প্রকৃতি শিক্ষা দিলেন’ বলা হয়েছে। এই ‘সকল জিনিষের প্রকৃতি হচ্ছে বস্তুর ধর্ম। ঠিক সেইভাবে এখানে আল্লাহ্র কাছ থেকে ‘প্রত্যাদেশের বাণী পেল অর্থাৎ প্রত্যাদেশ বা আধ্যাত্মিক’ জ্ঞান লাভ করলো। কারণ কোনও জ্ঞান শিখতে হলে তার নিজস্ব চেষ্টায় শিখতে হয়। কিন্তু প্রত্যাদেশ বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান যা আল্লাহ্র অসীম রহমত বা করুণার প্রতীক যা নদীর ফল্গুধারার মত স্বতঃপ্রবাহিত। হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ্র কাছ থেকে সেই অসীম রহমতেরই সন্ধান পেয়েছিলেন।
আরবীতে অনুতাপ [তওবা] কথাটির অর্থ ফিরিয়া আসা এবং ‘তওয়াফ’ কথাটির ব্যবহার হয়েছে আল্লাহ্র কাছে কৃত পাপের ক্ষমা চাওয়া হিসেবে। কারণ আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও দয়ালু (Oft-returning Or Ever returning)। ক্ষমা চাওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে কৃত পাপের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করা। অনুতাপ তিনটি ধাপের সমন্বয়ে গঠিত। প্রথমতঃ পাপী ব্যক্তি তার কৃত পাপকে সনাক্ত করবে। দ্বিতীয়তঃ সেই পাপ কাজকে শুধু সনাক্ত করলেই হবে না তা পরিত্যাগ করতে হবে। তৃতীয়তঃ ভবিষ্যতেও সে সেই মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবে এই মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা ও দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করা। এই তিনটি ধাপের সমন্বয়ই হচ্ছে অনুতাপ করা। এই তিনটি ধাপের যে কোনও একটির অভাব থাকলে তওবা হবে না। অর্থাৎ অতীতের পাপকে সনাক্ত করা, বর্তমানে তা পরিহার করা এবং ভবিষ্যতে তা না করার সংকল্প গ্রহণ করা-এই তিনটি জিনিসের সমাবেশ না ঘটা পর্যন্ত তওবা হবে না।
এরপরে আসে অতীতের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া। মানুষ অত্যন্ত দুর্বল চরিত্রের। সে বার বার ভুল করে এবং বার বার আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চায়। যতক্ষণ পর্যন্ত তার ক্ষমা চাওয়া হয় আন্তরিক এবং সত্যিকারের, আল্লাহ্ অসীম করুণার অধিকারী, রহমানুর রহীম এবং ক্ষমাশীল। একমাত্র তাঁর করুণাই আমাদের দোষত্রুটি মুক্ত হতে সাহায্য করে।
আয়াতঃ 002.038
আমি হুকুম করলাম, তোমরা সবাই নীচে নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে।
We said: ”Get down all of you from this place (the Paradise), then whenever there comes to you Guidance from Me, and whoever follows My Guidance, there shall be no fear on them, nor shall they grieve.
قُلْنَا اهْبِطُواْ مِنْهَا جَمِيعاً فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
Qulna ihbitoo minha jameeAAan fa-imma ya/tiyannakum minnee hudan faman tabiAAa hudaya fala khawfun AAalayhim wala hum yahzanoona
YUSUFALI: We said: “Get ye down all from here; and if, as is sure, there comes to you Guidance from me, whosoever follows My guidance, on them shall be no fear, nor shall they grieve.
PICKTHAL: We said: Go down, all of you, from hence; but verily there cometh unto you from Me a guidance; and whoso followeth My guidance, there shall no fear come upon them neither shall they grieve.
SHAKIR: We said: Go forth from this (state) all; so surely there will come to you a guidance from Me, then whoever follows My guidance, no fear shall come upon them, nor shall they grieve.
KHALIFA: We said, “Go down therefrom, all of you. When guidance comes to you from Me, those who follow My guidance will have no fear, nor will they grieve.
৫৬। লক্ষ্য করুন এই আয়াতটি শুরু হয়েছে বহুবচন ‘আমরা’ দিয়ে এবং শেষে একবচন ‘আমার’ ব্যবহার করা হয়েছে। কুরআন শরীফের বহুস্থানে আল্লাহ্ নিজেকে প্রথম পুরুষ বহুবচন ‘আমরা’ ব্যবহার করেছেন। কারণ এটা ব্যবহার হয়েছে সম্মানীয় অর্থে। এরকম ব্যবহার জনসাধারণের জন্য রাজকীয় হুকুম জারীর মধ্যেও করা হয়ে থাকে। ঠিক সে রকমভাবেই আদম, ইভ, শয়তানের জন্য যা সাধারণ হুকুম তা প্রকাশ করার জন্য সম্মানীয় আল্লাহ্র হুকুমকে বহুবচনের ব্যবহার করা হয়েছে; যেমন-‘আমরা বললাম, তোমরা এখান থেকে নেমে যাও।’ কিন্তু স্রষ্টা যখন ব্যক্তিগতভাবে কারও প্রতি করুণা প্রকাশ করেছেন তখন নিজেকে বহুবচনের পরিবর্তে একবচনের ব্যবহার করেছেন। যেমন, ‘যারা আমার সৎ পথের নির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নাই।’
এই আয়াতে মানুষের অধঃপতন সত্ত্বেও আদম সন্তানকে আল্লাহ্ সুন্দরতম জীবনের, তাঁর করুণাধারা, তাঁর ক্ষমার আশ্বাস দিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন পথের নিশানার। যদি মানব জাতি তার নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে, তবে মহান স্রষ্টা আমাদের আশ্বাস দিচ্ছেন যে আমাদের কোনও ভয় নাই, পৃথিবীর কোন ব্যাথা, গ্লানি আমাদের আত্মাকে স্পর্শ করবে না। আমাদের পার্থিব জীবন হবে শান্তিময় এবং পারলৌকিক জীবন হবে ঐশ্বর্যময়। কারণ আল্লাহ্র নির্দেশিত পথে চলার ফলে আত্মার যাত্রা শুরু হবে পরমাত্মার দিকে। পরমাত্মার সান্নিধ্যই আত্মার একমাত্র কাম্য। ফলে মহান স্রষ্টার করুণায় আত্মা হয় বিধৌত, আপ্লুত।
আয়াতঃ 002.039
আর যে লোক তা অস্বীকার করবে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পাবে, তারাই হবে জাহান্নামবাসী; অন্তকাল সেখানে থাকবে।
But those who disbelieve and belie Our Ayât (proofs, evidences, verses, lessons, signs, revelations, etc.) such are the dwellers of the Fire, they shall abide therein forever.
وَالَّذِينَ كَفَرواْ وَكَذَّبُواْ بِآيَاتِنَا أُولَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
Waallatheena kafaroo wakaththaboo bi-ayatina ola-ika as-habu alnnari hum feeha khalidoona
YUSUFALI: “But those who reject Faith and belie Our Signs, they shall be companions of the Fire; they shall abide therein.”
PICKTHAL: But they who disbelieve, and deny Our revelations, such are rightful Peoples of the Fire. They will abide therein.
SHAKIR: And (as to) those who disbelieve in and reject My communications, they are the inmates of the fire, in it they shall abide.
KHALIFA: “As for those who disbelieve and reject our revelations, they will be dwellers of Hell, wherein they abide forever.”
৫৭। কিন্তু যখন মানব সন্তান আল্লাহ্র নির্দেশিত পথ ত্যাগ করে, তখন সে আত্মার জন্য স্বর্গীয় আলো প্রবেশে পথ বন্ধ করে দেয়। এভাবে সে ক্রমাগত আল্লাহ্র নির্দেশিত পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার ফলে তার আত্মায় আল্লাহ্র রহমত ও হেদায়েতের আলো পৌঁছাতে পারে না। ইচ্ছাকৃতভাবে স্রষ্টার নির্দেশিত পথকে উপক্ষো করার ফলে আত্মা তার পবিত্রতা হারায়, ফলে আত্মা অন্ধকারে আবৃত হয়ে যায় এবং আত্মার মধ্যে যন্ত্রণার উদ্ভব হয়। আল্লাহ্র নির্দেশিত পথ হচ্ছে সৎ জীবন যাপন করা। সৎ জীবন যাপনের মাধ্যমে আত্মিক শক্তির উদ্ভব হয়। আত্মার মধ্যে আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভ করা যায়। ফলে হৃদয় হয় আলোকিত। অর্থাৎ সৎ জীবন যাপনের ফলে আত্মায় বিভিন্ন গুণরাজির জন্ম নেয়। এই গুণরাজিই হচ্ছে আল্লাহ্র নেয়ামত। ফলে মানুষ আত্মার মধ্যে শান্তি লাভ করে।
কিন্তু যে ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ্র প্রদর্শিত পথ পরিহার করে, তার হৃদয় ভয়, ভীতি, আশঙ্কায় পূর্ণ হয়ে যায়। হৃদয়ের মধ্যে আল্লাহ্র সান্নিধ্য অনুভব করতে সে হয় ব্যর্থ-ফলে তার হৃদয় সর্বদা থাকে শঙ্কিত, ভীত। এর ফলে জন্ম নেয় অনিশ্চয়তা এবং এক ধরণের আত্মিক যন্ত্রণা। আত্মার এই যন্ত্রণাকেই [Spiritual Fire] দোযখের আগুন বলা হয়েছে একং তারা এই আগুনে চিরদিন থাকবে।
আয়াতঃ 002.040
হে বনী-ইসরাঈলগণ, তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং তোমরা পূরণ কর আমার সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা, তাহলে আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। আর ভয় কর আমাকেই।
O Children of Israel! Remember My Favour which I bestowed upon you, and fulfill (your obligations to) My Covenant (with you) so that I fulfill (My Obligations to) your covenant (with Me), and fear none but Me.
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُواْ نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَوْفُواْ بِعَهْدِي أُوفِ بِعَهْدِكُمْ وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ
Ya banee isra-eela othkuroo niAAmatiya allatee anAAamtu AAalaykum waawfoo biAAahdee oofi biAAahdikum wa-iyyaya fairhabooni
YUSUFALI: O Children of Israel! call to mind the (special) favour which I bestowed upon you, and fulfil your covenant with Me as I fulfil My Covenant with you, and fear none but Me.
PICKTHAL: O Children of Israel! Remember My favour wherewith I favoured you, and fulfil your (part of the) covenant, I shall fulfil My (part of the) covenant, and fear Me.
SHAKIR: O children of Israel! call to mind My favor which I bestowed on you and be faithful to (your) covenant with Me, I will fulfill (My) covenant with you; and of Me, Me alone, should you be afraid.
KHALIFA: O Children of Israel, remember My favor, which I bestowed upon you, and fulfill your part of the covenant, that I fulfill My part of the covenant, and reverence Me.
রুকু – ৫
৫৮। আল্লাহ্ এখানে ইসরাঈলীদের প্রতি তাঁর অনুকম্পাসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। আল্লাহ্ বলেছেন যে তিনি তাদের মিশরীয় দাসত্ব থেকে মুক্ত করে দুধ ও মধুতে ভরা ক্যানান দেশে স্বাধীনভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেছেন, ‘আমি আমার চুক্তি পালন করেছি, তোমরা তোমাদের চুক্তি পালন কর।’
আয়াতঃ 002.041
আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবক্তা হিসেবে তোমাদের কাছে। বস্তুতঃ তোমরা তার প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ।
And believe in what I have sent down (this Qur’ân), confirming that which is with you, [the Taurât (Torah) and the Injeel (Gospel)], and be not the first to disbelieve therein, and buy [get (ÊÇÎÐ ÇÌÑÇ)] not with My Verses [the Taurât (Torah) and the Injeel (Gospel)] a small price (i.e. getting a small gain by selling My Verses), and fear Me and Me Alone. (Tafsir At-Tabarî, Vol. I, Page 253).
وَآمِنُواْ بِمَا أَنزَلْتُ مُصَدِّقاً لِّمَا مَعَكُمْ وَلاَ تَكُونُواْ أَوَّلَ كَافِرٍ بِهِ وَلاَ تَشْتَرُواْ بِآيَاتِي ثَمَناً قَلِيلاً وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ
Waaminoo bima anzaltu musaddiqan lima maAAakum wala takoonoo awwala kafirin bihi wala tashtaroo bi-ayatee thamanan qaleelan wa-iyyaya faittaqooni
YUSUFALI: And believe in what I reveal, confirming the revelation which is with you, and be not the first to reject Faith therein, nor sell My Signs for a small price; and fear Me, and Me alone.
PICKTHAL: And believe in that which I reveal, confirming that which ye possess already (of the Scripture), and be not first to disbelieve therein, and part not with My revelations for a trifling price, and keep your duty unto Me.
SHAKIR: And believe in what I have revealed, verifying that which is with you, and be not the first to deny it, neither take a mean price in exchange for My communications; and Me, Me alone should you fear.
KHALIFA: You shall believe in what I have revealed herein, confirming what you have; do not be the first to reject it. Do not trade away My revelations for a cheap price, and observe Me.
৫৯। ইহুদীরা পূর্বেই আল্লাহ্র বাণী লাভ করেছে হযরত মুসার মাধ্যমে। সেই বাণীর সমর্থক হিসেবে হযরত মুহম্মদ (দঃ) এর আবির্ভাব। সুতরাং হযরতের (দঃ) কাছে আল্লাহ্ যা নাজিল করেছেন তা ইহুদীদের পূর্ব পরিচিত হওয়ার কথা। তবু ইহুদীরাই প্রথম, যারা আল্লাহ্র বাণীর বিরুদ্ধাচরণ করেছে। নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ রক্ষার জন্যই তারা তা করে। কিন্তু আল্লাহ্র নির্দেশ তাদের ক্ষুদ্র বিচার-বিবেচনার অনেক উর্ধ্বে। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ্র আয়াতসমূহের বিনিময়ে মূল্য গ্রহণ নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হলো-মানুষের মর্জি ও স্বার্থের তাগিদে আয়াতসমূহের মর্ম বিকৃত ও ভুলভাবে প্রকাশ করে কিংবা তা গোপন রেখে টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। এ কাজটি উম্মতের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। তাই সৎ কাজ ও নিজ কর্তব্য সম্বন্ধে নির্দেশ আল্লাহ্র কাছ থেকে নিতে হবে। অর্থাৎ কুরআন শরীফ পড়ে বুঝে সেই অনুযায়ী জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোনও পুরোহিত (পীর-ফকির-মাজার) বা অমনোনীত ফতোয়াবাজ বা সামাজিক রীতিনীতি বা সামাজিক সংস্কার এ সবের অনুগত হওয়া হারাম।
আয়াতঃ 002.042
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না।
And mix not truth with falsehood, nor conceal the truth [i.e. Muhammad Peace be upon him is Allâh’s Messenger and his qualities are written in your Scriptures, the Taurât (Torah) and the Injeel (Gospel)] while you know (the truth) .
وَلاَ تَلْبِسُواْ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُواْ الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
Wala talbisoo alhaqqa bialbatili wataktumoo alhaqqa waantum taAAlamoona
YUSUFALI: And cover not Truth with falsehood, nor conceal the Truth when ye know (what it is).
PICKTHAL: Confound not truth with falsehood, nor knowingly conceal the truth.
SHAKIR: And do not mix up the truth with the falsehood, nor hide the truth while you know (it).
KHALIFA: Do not confound the truth with falsehood, nor shall you conceal the truth, knowingly.
৪৩। এবং তোমরা সালাতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাক; যাকাত আদায় কর; এবং যারা আমার সামনে মাথা নত করে তাদের সাথে মাথা নত কর [এবাদতের জন্য] ৬০।
৬০। সত্য গোপন করা এবং তাতে সংযোজন ও সংমিশ্রণ করা হারাম। যদিও উপরিউক্ত আয়াত ইহুদীদের সম্বোধন করে নাজিল করা হয়েছে তবুও এর আবেদন সর্বকালের সর্বযুগের, সর্ব জাতির জন্য সর্বাবস্থায় প্রযোজ্য। বাঙালি জাতির এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা কর্তব্য। শ্রোতা ও সম্বোধিত ব্যক্তিকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে বা নিজ কার্য সিদ্ধির উদ্দেশ্যে সত্যকে মিথ্যার সাথে উপস্থাপন করা সম্পূর্ণ না-জায়েজ ও হারাম।
আয়াতঃ 002.043
আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।
And perform As-Salât (Iqâmat-as-Salât), and give Zakât, and Irka’ (i.e. bow down or submit yourselves with obedience to Allâh) along with ArRaki’ûn.
وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ
Waaqeemoo alssalata waatoo alzzakata wairkaAAoo maAAa alrrakiAAeena
YUSUFALI: And be steadfast in prayer; practise regular charity; and bow down your heads with those who bow down (in worship).
PICKTHAL: Establish worship, pay the poor-due, and bow your heads with those who bow (in worship).
SHAKIR: And keep up prayer and pay the poor-rate and bow down with those who bow down.
KHALIFA: You shall observe the Contact Prayers (Salat) and give the obligatory charity (Zakat), and bow down with those who bow down.
৪৩। এবং তোমরা সালাতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাক; যাকাত আদায় কর; এবং যারা আমার সামনে মাথা নত করে তাদের সাথে মাথা নত কর [এবাদতের জন্য] ৬০।
৬০। সত্য গোপন করা এবং তাতে সংযোজন ও সংমিশ্রণ করা হারাম। যদিও উপরিউক্ত আয়াত ইহুদীদের সম্বোধন করে নাজিল করা হয়েছে তবুও এর আবেদন সর্বকালের সর্বযুগের, সর্ব জাতির জন্য সর্বাবস্থায় প্রযোজ্য। বাঙালি জাতির এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা কর্তব্য। শ্রোতা ও সম্বোধিত ব্যক্তিকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে বা নিজ কার্য সিদ্ধির উদ্দেশ্যে সত্যকে মিথ্যার সাথে উপস্থাপন করা সম্পূর্ণ না-জায়েজ ও হারাম।
আয়াতঃ 002.044
তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?
Enjoin you Al-Birr (piety and righteousness and each and every act of obedience to Allâh) on the people and you forget (to practise it) yourselves, while you recite the Scripture [the Taurât (Torah)]! Have you then no sense?
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلاَ تَعْقِلُونَ
Ata/muroona alnnasa bialbirri watansawna anfusakum waantum tatloona alkitaba afala taAAqiloona
YUSUFALI: Do ye enjoin right conduct on the people, and forget (To practise it) yourselves, and yet ye study the Scripture? Will ye not understand?
PICKTHAL: Enjoin ye righteousness upon mankind while ye yourselves forget (to practise it)? And ye are readers of the Scripture! Have ye then no sense?
SHAKIR: What! do you enjoin men to be good and neglect your own souls while you read the Book; have you then no sense?
KHALIFA: Do you exhort the people to be righteous, while forgetting yourselves, though you read the scripture? Do you not understand?
৪৪। তোমরা কি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দাও, এবং নিজেরা তা [অনুশীলন] করতে ভুলে যাও? যদিও তোমরা আল্লাহ্র কিতাব পাঠ কর? তোমরা কি বুঝবে না?৪৫। তোমরা [আল্লাহ্র] সাহায্য প্রার্থনা কর ধৈর্য্য, অধ্যবসায় এবং সালাতের মাধ্যমে। বিনয়ী ব্যক্তি ব্যতীত আর সকলের নিকট ইহা নিশ্চিতভাবে কঠিন কাজ ৬১।
৬১। আল্লাহ্ এখানে ধৈর্য্য, অধ্যবসায় ও প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ্র সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। বাংলায় আরবী সবর্ কথাটির অনুবাদ করা হয়েছে ধৈর্য্য। কিন্তু সবর্ কথাটির অর্থ এত ব্যাপক যে শুধুমাত্র ধৈর্য্য এই একটি মাত্র শব্দ দ্বারা এর অর্থের ব্যাপকতা বুঝানো সম্ভব নয়। এর দ্বারা বুঝায় –
১) ধৈর্য্য অর্থাৎ তাড়াহুড়া না করে ধীর স্থিরভাবে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা।
২) কোন কাজে দৃঢ়ভাবে এবং অধ্যবসায়ের সাথে লেগে থাকার ক্ষমতা। যে কোনও কাজ করতে গেলে সাফল্য না-ও আসতে পারে, কিন্তু তার দরুন হতাশাগ্রস্থ না হয়ে দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা এবং অধ্যাবসায়ী হওয়ার নামই ধৈর্য্য।
৩) কোনও কাজে ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতাই ধৈর্য্য। কোনও দৈব ক্ষমতায় (Chance action) বিশ্বাসী না হয়ে নিজের যোগ্যতার উপরে এবং আল্লাহ্র উপরে আস্থাশীল হয়ে ধারাবাহিকভাবে ক্রমান্বয়ে কাজ করার ক্ষমতাই হচ্ছে সবর্।
৪) সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা সবই আল্লাহ্র দান হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষমতা এবং সেই কারণে কোনও সাফল্যে বা সুখে উদ্বেলিত না হওয়া এবং ব্যর্থতা বা দুঃখে মানসিক অস্থিরতা প্রকাশ না করা বা ভেঙ্গে না পড়া বা আল্লাহ্কে দোষারোপ না করার নামই হচ্ছে সবর্ বা ধৈর্য্য।
এই চারটি গুণের সমন্বয় করলে চরিত্রের যে দৃঢ়তার অভিব্যক্তি বুঝানো যায় তাকেই এক কথায় সবর্ নামে অভিব্যক্তি করা হয়। এর অর্থ কেউ যেনো এ না বুঝে যে পৃথিবীর সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা সম্পর্কে নিরাসক্ত ভাবই হচ্ছে সবর্। সবর্ হচ্ছে সর্বক্ষণ, সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র কাছে শুকরিযা আদায় করা। মনে এই আশা পোষণ করা যে দুঃখ তাঁরই দান। দুঃখের মাঝেও নিশ্চয়ই তাঁর কল্যাণময় ইঙ্গিত আছে। সুতরাং দুঃখের অমানিশা একদিন অতিক্রান্ত হবেই। এই বিশ্বাসের নামই সবর্।
আয়াতঃ 002.045
ধৈর্য্যর সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।
And seek help in patience and As-Salât (the prayer) and truly it is extremely heavy and hard except for Al-Khâshi’ûn [i.e. the true believers in Allâh – those who obey Allâh with full submission, fear much from His Punishment, and believe in His Promise (Paradise, etc.) and in His Warnings (Hell, etc.)].
وَاسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلاَّ عَلَى الْخَاشِعِينَ
WaistaAAeenoo bialssabri waalssalati wa-innaha lakabeeratun illa AAala alkhashiAAeena
YUSUFALI: Nay, seek (Allah’s) help with patient perseverance and prayer: It is indeed hard, except to those who bring a lowly spirit,-
PICKTHAL: Seek help in patience and prayer; and truly it is hard save for the humble-minded,
SHAKIR: And seek assistance through patience and prayer, and most surely it is a hard thing except for the humble ones,
KHALIFA: You shall seek help through steadfastness and the Contact Prayers (Salat). This is difficult indeed, but not so for the reverent,
৪৪। তোমরা কি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দাও, এবং নিজেরা তা [অনুশীলন] করতে ভুলে যাও? যদিও তোমরা আল্লাহ্র কিতাব পাঠ কর? তোমরা কি বুঝবে না?৪৫। তোমরা [আল্লাহ্র] সাহায্য প্রার্থনা কর ধৈর্য্য, অধ্যবসায় এবং সালাতের মাধ্যমে। বিনয়ী ব্যক্তি ব্যতীত আর সকলের নিকট ইহা নিশ্চিতভাবে কঠিন কাজ ৬১।
৬১। আল্লাহ্ এখানে ধৈর্য্য, অধ্যবসায় ও প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ্র সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। বাংলায় আরবী সবর্ কথাটির অনুবাদ করা হয়েছে ধৈর্য্য। কিন্তু সবর্ কথাটির অর্থ এত ব্যাপক যে শুধুমাত্র ধৈর্য্য এই একটি মাত্র শব্দ দ্বারা এর অর্থের ব্যাপকতা বুঝানো সম্ভব নয়। এর দ্বারা বুঝায় –
১) ধৈর্য্য অর্থাৎ তাড়াহুড়া না করে ধীর স্থিরভাবে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা।
২) কোন কাজে দৃঢ়ভাবে এবং অধ্যবসায়ের সাথে লেগে থাকার ক্ষমতা। যে কোনও কাজ করতে গেলে সাফল্য না-ও আসতে পারে, কিন্তু তার দরুন হতাশাগ্রস্থ না হয়ে দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা এবং অধ্যাবসায়ী হওয়ার নামই ধৈর্য্য।
৩) কোনও কাজে ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতাই ধৈর্য্য। কোনও দৈব ক্ষমতায় (Chance action) বিশ্বাসী না হয়ে নিজের যোগ্যতার উপরে এবং আল্লাহ্র উপরে আস্থাশীল হয়ে ধারাবাহিকভাবে ক্রমান্বয়ে কাজ করার ক্ষমতাই হচ্ছে সবর্।
৪) সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা সবই আল্লাহ্র দান হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষমতা এবং সেই কারণে কোনও সাফল্যে বা সুখে উদ্বেলিত না হওয়া এবং ব্যর্থতা বা দুঃখে মানসিক অস্থিরতা প্রকাশ না করা বা ভেঙ্গে না পড়া বা আল্লাহ্কে দোষারোপ না করার নামই হচ্ছে সবর্ বা ধৈর্য্য।
এই চারটি গুণের সমন্বয় করলে চরিত্রের যে দৃঢ়তার অভিব্যক্তি বুঝানো যায় তাকেই এক কথায় সবর্ নামে অভিব্যক্তি করা হয়। এর অর্থ কেউ যেনো এ না বুঝে যে পৃথিবীর সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা সম্পর্কে নিরাসক্ত ভাবই হচ্ছে সবর্। সবর্ হচ্ছে সর্বক্ষণ, সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র কাছে শুকরিযা আদায় করা। মনে এই আশা পোষণ করা যে দুঃখ তাঁরই দান। দুঃখের মাঝেও নিশ্চয়ই তাঁর কল্যাণময় ইঙ্গিত আছে। সুতরাং দুঃখের অমানিশা একদিন অতিক্রান্ত হবেই। এই বিশ্বাসের নামই সবর্।
আয়াতঃ 002.046
যারা একথা খেয়াল করে যে, তাদেরকে সম্মুখীন হতে হবে স্বীয় পরওয়ারদেগারের এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।
(They are those) who are certain that they are going to meet their Lord, and that unto Him they are going to return.
الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلاَقُو رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
Allatheena yathunnoona annahum mulaqoo rabbihim waannahum ilayhi rajiAAoona
YUSUFALI: Who bear in mind the certainty that they are to meet their Lord, and that they are to return to Him.
PICKTHAL: Who know that they will have to meet their Lord, and that unto Him they are returning.
SHAKIR: Who know that they shall meet their Lord and that they shall return to Him.
KHALIFA: who believe that they will meet their Lord; that to Him they ultimately return.
রুকু – ৬
৬২। আয়াত [২ : ৪০]-তে আল্লাহ্ ইসরাঈলীদের বলেছেন যে, তিনি তাদের বিশেষ নেয়ামত দান করেছেন। উপরিউক্ত আয়াতে সামগ্রিকভাবে নেয়ামতসমূহ বা আল্লাহ্র দানসমূহের (Gift) কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখানে অনেক নেয়ামতের মধ্যে বিশেষভাবে একটি নেয়ামতের কথা বলা হয়েছে। ইহুদীদের ইতিহাস বলে আল্লাহ্ ইহুদীদের বিশেষ ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
আয়াতঃ 002.047
হে বনী-ইসরাঈলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর।
O Children of Israel! Remember My Favour which I bestowed upon you and that I preferred you to the ’Alamîn (mankind and jinns) (of your time period, in the past).
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُواْ نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ
Ya banee isra-eela othkuroo niAAmatiya allatee anAAamtu AAalaykum waannee faddaltukum AAala alAAalameena
YUSUFALI: Children of Israel! call to mind the (special) favour which I bestowed upon you, and that I preferred you to all other (for My Message).
PICKTHAL: O Children of Israel! Remember My favour wherewith I favoured you and how I preferred you to (all) creatures.
SHAKIR: O children of Israel! call to mind My favor which I bestowed on you and that I made you excel the nations.
KHALIFA: O Children of Israel, remember My favor which I bestowed upon you, and that I blessed you more than any other people.
রুকু – ৬
৬২। আয়াত [২ : ৪০]-তে আল্লাহ্ ইসরাঈলীদের বলেছেন যে, তিনি তাদের বিশেষ নেয়ামত দান করেছেন। উপরিউক্ত আয়াতে সামগ্রিকভাবে নেয়ামতসমূহ বা আল্লাহ্র দানসমূহের (Gift) কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখানে অনেক নেয়ামতের মধ্যে বিশেষভাবে একটি নেয়ামতের কথা বলা হয়েছে। ইহুদীদের ইতিহাস বলে আল্লাহ্ ইহুদীদের বিশেষ ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
আয়াতঃ 002.048
আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না।
And fear a Day (of Judgement) when a person shall not avail another, nor will intercession be accepted from him nor will compensation be taken from him nor will they be helped.
وَاتَّقُواْ يَوْماً لاَّ تَجْزِي نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ شَيْئاً وَلاَ يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلاَ يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلاَ هُمْ يُنصَرُونَ
Waittaqoo yawman la tajzee nafsun AAan nafsin shay-an wala yuqbalu minha shafaAAatun wala yu/khathu minha AAadlun wala hum yunsaroona
YUSUFALI: Then guard yourselves against a day when one soul shall not avail another nor shall intercession be accepted for her, nor shall compensation be taken from her, nor shall anyone be helped (from outside).
PICKTHAL: And guard yourselves against a day when no soul will in aught avail another, nor will intercession be accepted from it, nor will compensation be received from it, nor will they be helped.
SHAKIR: And be on your guard against a day when one soul shall not avail another in the least, neither shall intercession on its behalf be accepted, nor shall any compensation be taken from it, nor shall they be helped.
KHALIFA: Beware of the day when no soul can avail another soul, no intercession will be accepted, no ransom can be paid, nor can anyone be helped.
৬৩। আলোচ্য আয়াতে যেদিনের কথা বলা হয়েছে, সেটি হল কিয়ামতের দিন। সেদিন প্রত্যেককে নিজ নিজ কর্মফলের হিসাব দিতে হবে এবং প্রত্যেককে নিজ কর্মের জন্য দায়ী থাকতে হবে। কেহই অন্যের কর্ম ফলের জন্য দায়ী হবে না। অথবা পূণ্য কাজ বা সুপারিশের বদৌলতে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে না; বা অপরের পাপের পরিণতিতে কেহ দোযখবাসী হবে না। প্রত্যেকের দায়িত্ব প্রত্যেকের নিজের। এখানে আল্লাহ্ সাবধান করে দিচ্ছেন যে আমরা যেনো নিজেদের পাহারা দিয়ে রাখি। প্রত্যেকের দায়িত্ব তার নিজস্ব দায়িত্ব (Personal Responsibility)। একথা যেনো ইহুদীরা মনে না করে যে তারা আল্লাহ্র বিশেষ নেয়ামত প্রাপ্ত হয়েছিল, সুতরাং পরলোকে তাদের জন্য হবে বিশেষ সুপারিশ।
এখানে সকলের জন্য এই উপদেশ যে আল্লাহ্র চোখে সবাই সমান। সকলকে তার নিজ নিজ কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সাদা-কালো, নারী-পুরুষ এর মধ্যে কোন ভেদাভেদ নাই।
আয়াতঃ 002.049
আর (স্মরণ কর) সে সময়ের কথা, যখন আমি তোমাদিগকে মুক্তিদান করেছি ফেরআউনের লোকদের কবল থেকে যারা তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দান করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদিগকে অব্যাহতি দিত। বস্তুতঃ তাতে পরীক্ষা ছিল তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, মহা পরীক্ষা।
And (remember) when We delivered you from Fir’aun’s (Pharaoh) people, who were afflicting you with a horrible torment, killing your sons and sparing your women, and therein was a mighty trial from your Lord.
وَإِذْ نَجَّيْنَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوَءَ الْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَاءكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءكُمْ وَفِي ذَلِكُم بَلاء مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ
Wa-ith najjaynakum min ali firAAawna yasoomoonakum soo-a alAAathabi yuthabbihoona abnaakum wayastahyoona nisaakum wafee thalikum balaon min rabbikum AAatheemun
YUSUFALI: And remember, We delivered you from the people of Pharaoh: They set you hard tasks and punishments, slaughtered your sons and let your women-folk live; therein was a tremendous trial from your Lord.
PICKTHAL: And (remember) when We did deliver you from Pharaoh’s folk, who were afflicting you with dreadful torment, slaying your sons and sparing your women: that was a tremendous trial from your Lord.
SHAKIR: And when We delivered you from Firon’s people, who subjected you to severe torment, killing your sons and sparing your women, and in this there was a great trial from your Lord.
KHALIFA: Recall that we saved you from Pharaoh’s people who inflicted upon you the worst persecution, slaying your sons and sparing your daughters. That was an exacting test from your Lord.
৬৪। উপরে যে বিশেষ আচরণের কথা বলা হয়েছে এখান থেকে তার বিস্তারিত বর্ণনা আরম্ভ হয়েছে। মিশরের দাসত্ব বন্ধন ছিলো এক ভীষণ পরীক্ষা ইহুদীদের জন্য। দিবা-রাত্র তাদের অমানুষিক পরিশ্রম করতে হতো, তারপরও তারা পেতো অমানবিক ব্যবহার। কোনও এক গণক ভবিষ্যৎ বাণী করেছিল যে, ইসরাঈলী বংশে এমন এক ছেলের জন্ম হবে যার হাতে ফেরাউনের পতন হবে। এজন্য ফেরাউন আদেশ দেন ইসরাঈলদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করার জন্য এবং কন্যা সন্তানদের জীবিত রাখার জন্য। এই হুকুমের প্রেক্ষিতেই হযরত মুসার জন্মের পর তিনমাস পর্যন্ত তাঁকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। যখন আর তা সম্ভব হলো না তখন তাঁর মা তাকে একটি ঝুড়িতে করে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন। পরবর্তীতে ফেরাউনের স্ত্রী ও কন্যা তাঁকে উদ্ধার করে এবং দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন [২৮:৯]। এভাবেই হযরত মুসা তাঁর শত্রুদের দ্বারাই প্রতিপালিত হতে থাকলেন। এ সবই আল্লাহ্র ইচ্ছা। কারণ হযরত মুসা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তি, যিনি তাঁর জাতিকে মিশরীয় দাসত্ব থেকে মুক্ত করবেন। আল্লাহ্র অপূর্ব লীলায় হযরত মুসা শুধু যে জীবন রক্ষা পেলেন তাই-ই নয় শত্রুপুরীতে বসবাস করে শত্রুদের সমস্ত জ্ঞান আহরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কারণ আল্লাহ্র ইচ্ছা ছিল মিশরীয়দের জ্ঞান ভান্ডার হযরত মুসার কাছে উন্মুক্ত করা। কারণ তিনি ছিলেন ইসরাঈলীদের মুক্ত করার জন্য আল্লাহ্ কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তি সেজন্য আল্লাহ্ তাঁকে শত্রু শিবিরের সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলেন। ফেরাউনের রাজপ্রাসাদে থেকে তিনি প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হয়েছিলেন মিশরবাসীর অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা ইসরাঈলীদের উপর। এ সবই আল্লাহ্র ইচ্ছায় সংঘটিত হয়। আল্লাহ্র ইচ্ছা হযরত মুসার জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করা। কারণ এ জ্ঞান তাঁকে ইসরাঈলীদের মুক্ত করতে সাহায্য করবে।
সাধারণ উপদেশ হলো, আল্লাহ্র ইচ্ছা কীভাবে প্রতিপালিত হয় তা বোঝার ক্ষমতা বা রদ করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাই। থাকলে ফেরাউনের নিজ পুরীতে সন্তানতুল্য আদরে নিজশত্রু (হযরত মুসা) প্রতিপালিত হতো না।
আয়াতঃ 002.050
আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফেরআউনের লোকদিগকে অথচ তোমরা দেখছিলে।
And (remember) when We separated the sea for you and saved you and drowned Fir’aun’s (Pharaoh) people while you were looking (at them, when the sea-water covered them).
وَإِذْ فَرَقْنَا بِكُمُ الْبَحْرَ فَأَنجَيْنَاكُمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ
Wa-ith faraqna bikumu albahra faanjaynakum waaghraqna ala firAAawna waantum tanthuroona
YUSUFALI: And remember We divided the sea for you and saved you and drowned Pharaoh’s people within your very sight.
PICKTHAL: And when We brought you through the sea and rescued you, and drowned the folk of Pharaoh in your sight.
SHAKIR: And when We parted the sea for you, so We saved you and drowned the followers of Firon and you watched by.
KHALIFA: Recall that we parted the sea for you; we saved you and drowned Pharaoh’s people before your eyes.
৬৫। শেষ পর্যন্ত ইসরাঈলীরা যখন মিশর থেকে পলায়ন করতে সক্ষম হলো, তখন ফেরাউন তাদের পশ্চাৎ ধাবন করলো। আল্লাহ্র কুদরতে সমুদ্র দ্বিধাবিভক্ত হলো এবং বনী-ইসরাঈলীরা লোহিত সাগর অতিক্রম করতে সক্ষম হলো। কিন্তু ফেরাউন তাদের পশ্চাদ্ধাবন করতে যেয়ে সমুদ্রে ডুবে মারা গেল।
আয়াতঃ 002.051
আর যখন আমি মূসার সাথে ওয়াদা করেছি চল্লিশ রাত্রির অতঃপর তোমরা গোবৎস বানিয়ে নিয়েছ মূসার অনুপস্থিতিতে। বস্তুতঃ তোমরা ছিলে যালেম।
And (remember) when We appointed for Mûsa (Moses) forty nights, and (in his absence) you took the calf (for worship), and you were Zâlimûn (polytheists and wrong-doers, etc.).
وَإِذْ وَاعَدْنَا مُوسَى أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِن بَعْدِهِ وَأَنتُمْ ظَالِمُونَ
Wa-ith waAAadna moosa arbaAAeena laylatan thumma ittakhathtumu alAAijla min baAAdihi waantum thalimoona
YUSUFALI: And remember We appointed forty nights for Moses, and in his absence ye took the calf (for worship), and ye did grievous wrong.
PICKTHAL: And when We did appoint for Moses forty nights (of solitude), and then ye chose the calf, when he had gone from you, and were wrong-doers.
SHAKIR: And when We appointed a time of forty nights with Musa, then you took the calf (for a god) after him and you were unjust.
KHALIFA: Yet, when we summoned Moses for forty nights, you worshiped the calf in his absence, and turned wicked.
৫১। এবং স্মরণ কর, মুসার জন্য চল্লিশ রাত্রি নির্ধারিত ৬৬ করেছিলাম। তাঁর অনুপস্থিতিতে তোমরা গো বৎসকে [উপাস্য রূপে] গ্রহণ করলে এবং [ফলে] তোমরা মহা পাপ করলে।
৬৬। এই আয়াতের ঘটনা ঐ সময়ের পর। হযরত মুসা ৪০ দিন তূর পাহাড়ে অবস্থান করেন এবং আল্লাহ্র এবাদতে মগ্ন থাকেন ফলে তাওরাত কিতাব লাভ করেন। কিন্তু বনী ইসরাঈলীরা হযরত মুসার অনুপস্থিতিতে অধৈর্য্য হয়ে উঠলো এবং সোনা দিয়ে একটি গো-বৎসের প্রতিমূর্তি করে তার পূঁজা শুরু করে দিলো।
আয়াতঃ 002.052
তারপর আমি তাতেও তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও।
Then after that We forgave you so that you might be grateful.
ثُمَّ عَفَوْنَا عَنكُمِ مِّن بَعْدِ ذَلِكَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
Thumma AAafawna AAankum min baAAdi thalika laAAallakum tashkuroona
YUSUFALI: Even then We did forgive you; there was a chance for you to be grateful.
PICKTHAL: Then, even after that, We pardoned you in order that ye might give thanks.
SHAKIR: Then We pardoned you after that so that you might give thanks.
KHALIFA: Still, we pardoned you thereafter that you may be appreciative.
৫২। এরপরেও আমি তোমাদের ক্ষমা করলাম ৬৭, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ লাভ কর।
৬৭। হযরত মুসা আল্লাহ্র কাছে তাঁর জাতির জন্য ক্ষমা চাইলেন এবং আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিলেন। এই হচ্ছে কুরআনের বর্ণনা কিন্তু ওল্ড টেস্টামেন্টের বর্ণনায় বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আসলে ইহুদী এবং খৃস্টানদের ধর্মগ্রন্থ হযরত মুসা এবং হযরত ঈসার মৃত্যুর বহুপরে সংগৃহীত হয়। সেই সময়ে তা অবিকৃত ছিল না। ফলে বহু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে।
আয়াতঃ 002.053
আর (স্মরণ কর) যখন আমি মূসাকে কিতাব এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বিধানকারী নির্দেশ দান করেছি, যাতে তোমরা সরল পথ প্রাপ্ত হতে পার।
And (remember) when We gave Mûsa (Moses) the Scripture [the Taurât (Torah)] and the criterion (of right and wrong) so that you may be guided aright.
وَإِذْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَالْفُرْقَانَ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
Wa-ith atayna moosa alkitaba waalfurqana laAAallakum tahtadoona
YUSUFALI: And remember We gave Moses the Scripture and the Criterion (Between right and wrong): There was a chance for you to be guided aright.
PICKTHAL: And when We gave unto Moses the Scripture and the criterion (of right and wrong), that ye might be led aright.
SHAKIR: And when We gave Musa the Book and the distinction that you might walk aright.
KHALIFA: Recall that we gave Moses scripture and the statute book, that you may be guided.
৫৩। এবং স্মরণ কর, আমি মুসাকে কিতাব এবং ফুরকান [ন্যায়-অন্যায় পার্থক্যকারী] দান করেছিলাম, যেনো তোমরা সৎপথে চলার সুযোগ লাভ কর ৬৮।
৬৮। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশই হচ্ছে আল্লাহ্র ইচ্ছার প্রকাশ। যার সাহায্যে আমরা ভাল-মন্দ, সত্য-অসত্য, ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। এই প্রত্যাদেশকে আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি আল্লাহ্র কিতাবে। ইতিহাস থেকে আমরা সেই শিক্ষাই পাই যে, সেই জাতিই পৃথিবীতে স্থায়িত্ব পেয়েছে যারা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ মেনে চলেছে। আর যারা চলে নাই তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। এই আয়াতে ‘কিতাব’ ও ‘ফুরকান’ শব্দটি অনেক তফসীরকারগণ সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আবার অনেকে এই দুই শব্দকে সম্পূর্ণ আলাদা অর্থবোধক শব্দ হিসেবে ধরেছেন। ‘কিতাব’ অর্থ লিখিত বই এবং ‘ফুরকান’ অর্থ তফসীরকারগণ ব্যাখ্যা করেছেন ‘আল্লাহ্র নিদর্শন’। মাওলানা ইউসুফ আলী সাহেব শেষোক্তদের সাথে একমত। কারণ ফুরকান শব্দটি [২১ : ৪৮]-আয়াতে হযরত মুসা ও তার ভাই হারূনের বর্ণনায় ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু হারুণ কোনও কিতাব প্রাপ্ত হন নাই সুতরাং ফুরকান আলাদা এবং অন্য অর্থবোধক কোন শব্দ হবে যা আল্লাহ্র নিদর্শনকে প্রকাশ করে। যার সাহায্যে ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। এছাড়াও [২৫ নং] সূরাটির নাম ‘ফুরকান’ এবং এই সূরার প্রথম আয়াতেই ফুরকান শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং ‘ফুরকান’ শব্দটি কিতাবের পরিবর্তে হতে পারে না। এর অর্থ হওয়া উচিত যুগে যুগে আল্লাহ্র নিদর্শন। মুসলমানদের কিতাব ও নিদর্শন দুটোই আছে। ফুরকান হলো ন্যায় ও অন্যায়ের মানদন্ড।
আয়াতঃ 002.054
আর যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদেরই ক্ষতিসাধন করেছ এই গোবৎস নির্মাণ করে। কাজেই এখন তওবা কর স্বীয় স্রষ্টার প্রতি এবং নিজ নিজ প্রাণ বিসর্জন দাও। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর তোমাদের স্রষ্টার নিকট। তারপর তোমাদের প্রতি লক্ষ্য করা হল। নিঃসন্দেহে তিনিই ক্ষমাকারী, অত্যন্ত মেহেরবান।
And (remember) when Mûsa (Moses) said to his people: ”O my people! Verily, you have wronged yourselves by worshipping the calf. So turn in repentance to your Creator and kill yourselves (the innocent kill the wrongdoers among you), that will be better for you with your Lord.” Then He accepted your repentance. Truly, He is the One Who accepts repentance, the Most Merciful.
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ إِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ أَنفُسَكُمْ بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوبُواْ إِلَى بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُواْ أَنفُسَكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ عِندَ بَارِئِكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
Wa-ith qala moosa liqawmihi ya qawmi innakum thalamtum anfusakum biittikhathikumu alAAijla fatooboo ila bari-ikum faoqtuloo anfusakum thalikum khayrun lakum AAinda bari-ikum fataba AAalaykum innahu huwa alttawwabu alrraheemu
YUSUFALI: And remember Moses said to his people: “O my people! Ye have indeed wronged yourselves by your worship of the calf: So turn (in repentance) to your Maker, and slay yourselves (the wrong-doers); that will be better for you in the sight of your Maker.” Then He turned towards you (in forgiveness): For He is Oft-Returning, Most Merciful.
PICKTHAL: And when Moses said unto his people: O my people! Ye have wronged yourselves by your choosing of the calf (for worship) so turn in penitence to your Creator, and kill (the guilty) yourselves. That will be best for you with your Creator and He will relent toward you. Lo! He is the Relenting, the Merciful.
SHAKIR: And when Musa said to his people: O my people! you have surely been unjust to yourselves by taking the calf (for a god), therefore turn to your Creator (penitently), so kill your people, that is best for you with your Creator: so He turned to you (mercifully), for surely He is the Oft-returning (to mercy), the Merciful.
KHALIFA: Recall that Moses said to his people, “O my people, you have wronged your souls by worshiping the calf. You must repent to your Creator. You shall kill your egos. This is better for you in the sight of your Creator.” He did redeem you. He is the Redeemer, Most Merciful.
৫৪। এবং স্মরণ কর মুসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিলো, ‘হে আমার সম্প্রদায়! গো বৎসকে উপাসনা করে তোমরা নিজের [আত্মার] প্রতি ঘোর অত্যাচার করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার দিকে [অনুতাপের মাধ্যমে] ফিরে এসো এবং [পাপীরা] নিজেদের হত্যা কর ৬৯। তোমাদের সৃষ্টিকর্তার চোখে এটাই শ্রেয়! অতঃপর তিনি তোমাদের ক্ষমা করলেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
৬৯। ওল্ড টেস্টামেন্টের ভাষ্য অনুযায়, ‘Go in and out from gate to gate throughout the camp, and slay every man his brother, and every man his companion, and every man his neighbor………. and there fell of the people that day 3,000 men.’ আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে হয় হত্যা ছিল তাদের জন্য মহা পরীক্ষা। কিন্তু আল্লাহ্ তাদের ক্ষমা করে দিলেন। ‘আন্ফুসাকুম’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘আত্মা’, ‘ব্যক্তি’ নয়। সেদিক থেকে অর্থ করলে হযরত মুসার নির্দেশের অর্থ দাঁড়ায়, ‘গো-বৎস পূজার’ দ্বারা তোমরা তোমাদের আত্মাকে কলুষিত করেছ সুতরাং তোমাদের অপবিত্র আত্মাকে বিনাশ কর। আল্লাহ্র চোখে তা-ই হবে তোমাদের জন্য প্রযোজ্য।
আয়াতঃ 002.055
আর যখন তোমরা বললে, হে মূসা, কস্মিনকালেও আমরা তোমাকে বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে (প্রকাশ্যে) দেখতে পাব। বস্তুতঃ তোমাদিগকে পাকড়াও করল বিদ্যুৎ। অথচ তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে।
And (remember) when you said: ”O Mûsa (Moses)! We shall never believe in you till we see Allâh plainly.” But you were seized with a thunderbolt (lightning) while you were looking.
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَى لَن نُّؤْمِنَ لَكَ حَتَّى نَرَى اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْكُمُ الصَّاعِقَةُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ
Wa-ith qultum ya moosa lan nu/mina laka hatta nara Allaha jahratan faakhathatkumu alssaAAiqatu waantum tanthuroona
YUSUFALI: And remember ye said: “O Moses! We shall never believe in thee until we see Allah manifestly,” but ye were dazed with thunder and lighting even as ye looked on.
PICKTHAL: And when ye said: O Moses! We will not believe in thee till we see Allah plainly; and even while ye gazed the lightning seized you.
SHAKIR: And when you said: O Musa! we will not believe in you until we see Allah manifestly, so the punishment overtook you while you looked on.
KHALIFA: Recall that you said, “O Moses, we will not believe unless we see GOD, physically.” Consequently, the lightning struck you, as you looked.
৫৫। এবং স্মরণ কর, তোমরা বলেছিলে; ৭০ ‘হে মুসা! আমরা আল্লাহ্কে সুস্পষ্টরূপে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করবো না।’ কিন্তু তখন তোমরা বজ্রাহত হলে, যদিও তোমরা তাকিয়ে ছিলে।
৭০। হযরত মুসা (আঃ) তূর পর্বত থেকে তাওরাত নিয়ে এসে বনী ইসরাঈলের সামনে পেশ করে বললেন যে, এটা আল্লাহ্ প্রদত্ত কিতাব। তখন কিছু সংখ্যক উদ্ধত লোক বলল, যদি আল্লাহ্ স্বয়ং বলে দেন যে, এ কিতাব তাঁর প্রদত্ত তবে অবশ্যই আমাদের বিশ্বাস এসে যাবে। মুসা (আঃ) আল্লাহ্র আদেশক্রমে তাদেরকে তূর পর্বতে যেতে বললেন। বনী ইসরাঈলীরা সত্তর জন লোককে মনোনীত করে হযরত মুসা (আঃ) এর সঙ্গে তূর পর্বতে পাঠাল। সেখানে পৌঁছে তারা আল্লাহ্র বাণী স্বয়ং শুনতে পেলো। তখন তারা নতুন ভান করে বলল, শুধু কথা শুনে তো তৃপ্তি হচ্ছেনা; আল্লাহ্ই জানেন এ কথা কে বলছে। যদি আল্লাহকে দেখতে পাই, তবে অবশ্যই মেনে নেবো। কিন্তু যেহেতু এ মরজগতে আল্লাহ্কে দেখার ক্ষমতা কারও নাই কাজেই এ ধৃষ্টতার জন্য তাদের উপর বজ্রপাত হল এবং সবাই ধ্বংস হয়ে গেলো।
আয়াতঃ 002.056
তারপর, মরে যাবার পর তোমাদিগকে আমি তুলে দাঁড় করিয়েছি, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও।
Then We raised you up after your death, so that you might be grateful.
ثُمَّ بَعَثْنَاكُم مِّن بَعْدِ مَوْتِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
Thumma baAAathnakum min baAAdi mawtikum laAAallakum tashkuroona
YUSUFALI: Then We raised you up after your death: Ye had the chance to be grateful.
PICKTHAL: Then We revived you after your extinction, that ye might give thanks.
SHAKIR: Then We raised you up after your death that you may give thanks.
KHALIFA: We then revived you, after you had died, that you may be appreciative.
৫৬। তোমাদের মৃত্যুর পরে আমি তোমাদের পুনর্জীবিত করলাম; [ফলে] তোমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ ছিলো।
৫৭। আমি তোমাদের মেঘের ছায়া দিয়েছিলাম, এবং তোমাদের নিকট মান্না ৭১ ও কোয়েল প্রেরণ করেছিলাম এই বলে: ‘তোমাদের ভাল যা দান করেছি তা থেকে আহার কর।’ [কিন্তু তারা বিদ্রোহ করে]; তারা আমার কোন ক্ষতি করতে পারে নাই, বরং তারা তাদের নিজের আত্মার প্রতি ক্ষতি করেছে।
৭১। ইহুদীরা যে প্রান্তরে থাকতো তা ছিল উন্মুক্ত মরুভূমি প্রান্তর। এখানে কোনও লোকালয় বা গাছ ছিল না যার নীচে শীত-গরম বা সূর্যতাপ থেকে আশ্রয় নেয়া চলে। তেমনিভাবে এখানে পানাহারের উপকরণ বা পরিধানের বস্ত্রসামগ্রীও ছিল না। কিন্তু আল্লাহ্ হযরত মুসার দোয়ার বদৌলতে যাবতীয় প্রয়োজন মেটাবার বন্দোবস্ত করেন। মেঘ দ্বারা ছায়া দানের এবং ক্ষুধা পেলে ‘মান্না ও সালওয়া’ এর বন্দোবস্ত করেন। ‘মান্না’ কি? মান্নাকে বলা হয়েছে বরফের মত স্বচ্ছ, শ্রভ্র এক ধরণের মিষ্ট খাবার যা মাটিতে জমে থাকতো। এগুলিকে পরদিন পর্যন্ত রেখে দিলে পচে যেতো এবং সূর্যতাপে রাখলে গেল যেতো। প্রত্যেক লোকের জন্য প্রয়োজন ছিল এক ওমের (হিব্রু মাপ) যা ২ কোয়ার্টের সমান বর্তমানে সময়ে ‘মান্না’ বলতে যা বোঝায় তা হচ্চে ঝাউ জাতীয় একরকম চিরহরিৎ বৃক্ষের রস। এই রস মিষ্টি এবং আঠালো। এক রকমের পোকা যখন বৃক্ষকে ছিদ্র করে তখন এই রস নির্গত করে। ভারতে যেমন-লাক্ষা পোকা দ্বারা এক রকম বৃক্ষ থেকে লাক্ষা উৎপন্ন হয়।
সালওয়া হচ্ছে কোয়েল পাখীর মত ছোট ছোট পাখীর ঝাঁক। পাখীর ঝাঁক তাদের কাছে ঝাঁকে ঝাঁকে সমবেত হত, আর তারা সেগুলি সংগ্রহ করে নিত। পাখীর ঝাঁক তাদের দেখে পালাতো না। ‘মান্নার’ অসাধারণ প্রাচুর্য এবং কোয়েল পাখীর লোকভীতি না থাকাও ছিল অস্বাভাবিক। এ হিসেবে উভয় বস্তুই অদৃশ্য ধনভান্ডার হতে দেওয়া হয়েছিলো বলে প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে কোয়েল পাখির ঝাঁক বছরের কোনও এক নির্দিষ্ট সময়ে ভূ-মধ্যসাগরের বাতাস দ্বারা পরিচালিত হয়ে এখানে এসে পড়ে। এ ঘটনা ১৯১৪-১৯১৮ সনের বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বহু ভারতীয় সামরিক অফিসার যারা মিশর ও প্যালেষ্টাইনের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন তারা প্রত্যক্ষ করেছেন।
আয়াতঃ 002.057
আর আমি তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি মেঘমালার দ্বারা এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছি ’মান্না’ ও সালওয়া’। সেসব পবিত্র বস্তু তোমরা ভক্ষন কর, যা আমি তোমাদেরকে দান করেছি। বস্তুতঃ তারা আমার কোন ক্ষতি করতে পারেনি, বরং নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে।
And We shaded you with clouds and sent down on you Al-Manna and the quails, (saying): ”Eat of the good lawful things We have provided for you,” (but they rebelled). And they did not wrong Us but they wronged themselves.
وَظَلَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْغَمَامَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَى كُلُواْ مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـكِن كَانُواْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
Wathallalna AAalaykumu alghamama waanzalna AAalaykumu almanna waalssalwa kuloo min tayyibati ma razaqnakum wama thalamoona walakin kanoo anfusahum yathlimoona
YUSUFALI: And We gave you the shade of clouds and sent down to you Manna and quails, saying: “Eat of the good things We have provided for you:” (But they rebelled); to us they did no harm, but they harmed their own souls.
PICKTHAL: And We caused the white cloud to overshadow you and sent down on you the manna and the quails, (saying): Eat of the good things wherewith We have provided you – they wronged Us not, but they did wrong themselves.
SHAKIR: And We made the clouds to give shade over you and We sent to you manna and quails: Eat of the good things that We have given you; and they did not do Us any harm, but they made their own souls suffer the loss.
KHALIFA: We shaded you with clouds (in Sinai), and sent down to you manna and quails: “Eat from the good things we provided for you.” They did not hurt us (by rebelling); they only hurt their own souls.
৫৬। তোমাদের মৃত্যুর পরে আমি তোমাদের পুনর্জীবিত করলাম; [ফলে] তোমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ ছিলো।
৫৭। আমি তোমাদের মেঘের ছায়া দিয়েছিলাম, এবং তোমাদের নিকট মান্না ৭১ ও কোয়েল প্রেরণ করেছিলাম এই বলে: ‘তোমাদের ভাল যা দান করেছি তা থেকে আহার কর।’ [কিন্তু তারা বিদ্রোহ করে]; তারা আমার কোন ক্ষতি করতে পারে নাই, বরং তারা তাদের নিজের আত্মার প্রতি ক্ষতি করেছে।
৭১। ইহুদীরা যে প্রান্তরে থাকতো তা ছিল উন্মুক্ত মরুভূমি প্রান্তর। এখানে কোনও লোকালয় বা গাছ ছিল না যার নীচে শীত-গরম বা সূর্যতাপ থেকে আশ্রয় নেয়া চলে। তেমনিভাবে এখানে পানাহারের উপকরণ বা পরিধানের বস্ত্রসামগ্রীও ছিল না। কিন্তু আল্লাহ্ হযরত মুসার দোয়ার বদৌলতে যাবতীয় প্রয়োজন মেটাবার বন্দোবস্ত করেন। মেঘ দ্বারা ছায়া দানের এবং ক্ষুধা পেলে ‘মান্না ও সালওয়া’ এর বন্দোবস্ত করেন। ‘মান্না’ কি? মান্নাকে বলা হয়েছে বরফের মত স্বচ্ছ, শ্রভ্র এক ধরণের মিষ্ট খাবার যা মাটিতে জমে থাকতো। এগুলিকে পরদিন পর্যন্ত রেখে দিলে পচে যেতো এবং সূর্যতাপে রাখলে গেল যেতো। প্রত্যেক লোকের জন্য প্রয়োজন ছিল এক ওমের (হিব্রু মাপ) যা ২ কোয়ার্টের সমান বর্তমানে সময়ে ‘মান্না’ বলতে যা বোঝায় তা হচ্চে ঝাউ জাতীয় একরকম চিরহরিৎ বৃক্ষের রস। এই রস মিষ্টি এবং আঠালো। এক রকমের পোকা যখন বৃক্ষকে ছিদ্র করে তখন এই রস নির্গত করে। ভারতে যেমন-লাক্ষা পোকা দ্বারা এক রকম বৃক্ষ থেকে লাক্ষা উৎপন্ন হয়।
সালওয়া হচ্ছে কোয়েল পাখীর মত ছোট ছোট পাখীর ঝাঁক। পাখীর ঝাঁক তাদের কাছে ঝাঁকে ঝাঁকে সমবেত হত, আর তারা সেগুলি সংগ্রহ করে নিত। পাখীর ঝাঁক তাদের দেখে পালাতো না। ‘মান্নার’ অসাধারণ প্রাচুর্য এবং কোয়েল পাখীর লোকভীতি না থাকাও ছিল অস্বাভাবিক। এ হিসেবে উভয় বস্তুই অদৃশ্য ধনভান্ডার হতে দেওয়া হয়েছিলো বলে প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে কোয়েল পাখির ঝাঁক বছরের কোনও এক নির্দিষ্ট সময়ে ভূ-মধ্যসাগরের বাতাস দ্বারা পরিচালিত হয়ে এখানে এসে পড়ে। এ ঘটনা ১৯১৪-১৯১৮ সনের বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বহু ভারতীয় সামরিক অফিসার যারা মিশর ও প্যালেষ্টাইনের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন তারা প্রত্যক্ষ করেছেন।
আয়াতঃ 002.058
আর যখন আমি বললাম, তোমরা প্রবেশ কর এ নগরীতে এবং এতে যেখানে খুশী খেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে থাক এবং দরজার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করার সময় সেজদা করে ঢুক, আর বলতে থাক-‘আমাদিগকে ক্ষমা করে দাও’-তাহলে আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব এবং সৎ কর্মশীলদেরকে অতিরিক্ত দানও করব।
And (remember) when We said: ”Enter this town (Jerusalem) and eat bountifully therein with pleasure and delight wherever you wish, and enter the gate in prostration (or bowing with humility) and say: ’Forgive us,’ and We shall forgive you your sins and shall increase (reward) for the good-doers.”
وَإِذْ قُلْنَا ادْخُلُواْ هَـذِهِ الْقَرْيَةَ فَكُلُواْ مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَداً وَادْخُلُواْ الْبَابَ سُجَّداً وَقُولُواْ حِطَّةٌ نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطَايَاكُمْ وَسَنَزِيدُ الْمُحْسِنِينَ
Wa-ith qulna odkhuloo hathihi alqaryata fakuloo minha haythu shi/tum raghadan waodkhuloo albaba sujjadan waqooloo hittatun naghfir lakum khatayakum wasanazeedu almuhsineena
YUSUFALI: And remember We said: “Enter this town, and eat of the plenty therein as ye wish; but enter the gate with humility, in posture and in words, and We shall forgive you your faults and increase (the portion of) those who do good.”
PICKTHAL: And when We said: Go into this township and eat freely of that which is therein, and enter the gate prostrate, and say: “Repentance.” We will forgive you your sins and will increase (reward) for the right-doers.
SHAKIR: And when We said: Enter this city, then eat from it a plenteous (food) wherever you wish, and enter the gate making obeisance, and say, forgiveness. We will forgive you your wrongs and give more to those who do good (to others).
KHALIFA: Recall that we said, “Enter this town, where you will find as many provisions as you like. Just enter the gate humbly, and treat the people nicely. We will then forgive your sins, and increase the reward for the pious.”
৫৮। এবং স্মরণ কর আমি বলেছিলাম, ‘এই শহরে প্রবেশ কর ৭২ এবং সেখানে তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী যা খুশী প্রচুর পরিমাণে আহার কর। কিন্তু [শহরের] তোরণ দিয়ে প্রবেশের সময়ে অঙ্গ বিন্যাসে ও ভাষাতে বিনয় প্রকাশ করবে। আমি তোমাদের দোষত্রুটি ক্ষমা করে দেবো এবং যারা সৎ কাজ করে তাদের প্রতি [আমার অনুগ্রহ] বৃদ্ধি করে দেবো।’
৭২। এ জায়গাটি সম্ভবতঃ সিত্থিম। এটা জর্দানের পূর্বপ্রান্তে আকাশিয়া শহর। এখানেই ইসরাঈলীরা নীতিভ্রষ্ট হয় এবং গো-বৎস পূজার অপরাধে অপরাধী হয়। [Num xxv 1-2], যার ফলে ভয়াবহ শাস্তিরূপে তাদের মধ্যে প্লেগ রোগের আবির্ভাব হয় এবং যাতে প্রায় ২৪,০০০ লোক মারা যায়।
যখন বনী ইসরাঈলীদের একটানা মান্না ও সালওয়া খেতে খেতে বিস্বাদ এসে গেলো এবং স্বাভাবিক খাবারের জন্য প্রার্থনা করলো তখন তাদেরকে এমন এক নগরীতে প্রবেশ করতে হুকুম দেওয়া হলো, যেখানে পানাহারের জন্য সাধারণভাবে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি পাওয়া যাবে। যখন তারা নগরীতে প্রবেশ করতে আরম্ভ করবে শহরের দরজা দিয়ে, তখন বিনয়ের সাথে প্রণত মস্তকে প্রবেশ করবে এবং মুখে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু যে শব্দটির (সাংকেতিক) সাহায্যে ক্ষমা চাইতে বলা হলো ইহুদীরা তা পরিবর্তন করে ফেললো। আরবীতে এই শব্দটি ছিল ‘হিত্তাতুন’ যা বিনয় এবং ক্ষমা প্রার্থনার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। এই বিশেষ ঘটনা থেকে যে শিক্ষা গ্রহণের ইঙ্গিত আল্লাহ্ তায়ালা দিচ্ছেন তা হচ্ছে কোনও কাজে বিজয়ের মুহূর্তে আমরা বিনয়ী ও নম্র থাকবো যেনো আল্লাহ্র চোখে আমাদের আচরণ পছন্দনীয় হয়। অন্যথায় আমাদের উদ্ধত ও অহংকার আচরণ আমাদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে।
আয়াত [২ : ৫৮-৫৯] কে সূরা [৭ : ১৬১-১৬২] সাথে তুলনা করা যায়। দু একটা শব্দ যেমন-[২ : ৫৮] তে ব্যবহার করা হয়েছে, ‘শহরে প্রবেশ কর’ কিন্তু [৭ ; ১৬১] তে ব্যবহার করা হয়েছে ‘বাস কর; আবার [২ : ৫৯] এ ব্যবহার করা হয়েছে ‘আদেশ লঙ্ঘন করা’ এবং [৭ : ১৬২] তে ‘সীমা লঙ্ঘন করা’ বলা হয়েছে। কিন্তু এর জন্য আয়াতের অর্থের কোন পরিবর্তন হয় নাই।
আয়াতঃ 002.059
অতঃপর যালেমরা কথা পাল্টে দিয়েছে, যা কিছু তাদেরকে বলে দেয়া হয়েছিল তা থেকে। তারপর আমি অবতীর্ণ করেছি যালেমদের উপর আযাব, আসমান থেকে, নির্দেশ লংঘন করার কারণে।
But those who did wrong changed the word from that which had been told to them for another, so We sent upon the wrong-doers Rijzan (a punishment) from the heaven because of their rebelling against Allâh’s Obedience. (Tafsir At-Tabarî, Vol. I, Page 305).
فَبَدَّلَ الَّذِينَ ظَلَمُواْ قَوْلاً غَيْرَ الَّذِي قِيلَ لَهُمْ فَأَنزَلْنَا عَلَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ رِجْزاً مِّنَ السَّمَاء بِمَا كَانُواْ يَفْسُقُونَ
Fabaddala allatheena thalamoo qawlan ghayra allathee qeela lahum faanzalna AAala allatheena thalamoo rijzan mina alssama-i bima kanoo yafsuqoona
YUSUFALI: But the transgressors changed the word from that which had been given them; so We sent on the transgressors a plague from heaven, for that they infringed (Our command) repeatedly.
PICKTHAL: But those who did wrong changed the word which had been told them for another saying, and We sent down upon the evil-doers wrath from heaven for their evil-doing.
SHAKIR: But those who were unjust changed it for a saying other than that which had been spoken to them, so We sent upon those who were unjust a pestilence from heaven, because they transgressed.
KHALIFA: But the wicked among them carried out commands other than the commands given to them. Consequently, we sent down upon the transgressors condemnation from the sky, due to their wickedness.
৫৯। কিন্তু সীমালঙ্ঘনকারীরা, তাদের যে বাণী দেয়া হয়েছিলো তা পরিবর্তন করে ফেললো। সুতরাং আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের উপর আসমান থেকে প্লেগ প্রেরণ করলাম, যেহেতু তারা [আমার আদেশ] বারে বারে লঙ্ঘন করেছিলো।
রুকু – ৭
৬০। এবং স্মরণ কর মুসা তার সম্প্রদায়ের জন্য পানির প্রার্থনা করলো, আমি বললাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর।’ ফলে সেখান থেকে বারটি ঝর্ণাধারা উৎসরিত হলো। প্রত্যেক গোত্র ৭৩ তাদের নিজ নিজ পানির স্থান জেনে নিল। সুতরাং আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবিকা থেকে আহার ও পান কর এবং পৃথিবীতে পাপ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।
৭৩। এই আয়াতে ইহুদীদের বিভিন্ন উপজাতি (Tribe) সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। ইহুদীদের বার (১২)টি উপজাতি হচ্ছে ইয়াকুব নবীর ১২ জন ছেলের বংশধরগণ। ইয়াকুব নবীকে ইহুদীরা নাম দিয়েছে ইসরাঈল। সেই কারণে ইহুদীদের আর এক নাম বনী ইসরাঈল বা ইসরাঈলের বংশধর।
সিনাই পর্বতের কাছে হোরের নামক স্থানে যেখানে মুসা নবীকে প্রত্যাদেশ বা আল্লাহ্র আইন প্রদান করা হয় সেখানে ১২ ফুট উচ্চ এবং ৫০ ফুট পরিধি বিশিষ্ট লাল গ্রানাইট পাথরের স্তুপ থেকে ১২টি ঝর্ণা প্রবাহিত যা ১৫ শতাব্দীতে ইউরোপীয়ান পরিব্রাজক ব্রেভডেনবাচ (Brevdenbach) প্রত্যক্ষ করেন। এই ঝর্ণাগুলির অস্তিত্ব হযরত মুহম্মদের (দঃ) সময়েও ছিলো এবং সম্ভবতঃ এখনও আছে।
এই আয়াতকে আল্লাহ্ উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন আরও মহত্তর কিছু শিক্ষা দেওয়ার জন্য। এই পৃথিবীতে চলার পথে আমরা আত্মিক দিক থেকে নিঃসঙ্গ। মায়া-মমতাহীন, স্বার্থপর পৃথিবীতে একটু স্নেহ ভালবাসা ও সঙ্গের জন্য তৃষিত হই। পৃথিবীর পথ আদম সন্তানের জন্য পৃথিবীকে করে তোলে বন্ধুর ও কঙ্করময়। আধ্যাত্মিক জগতের বা আত্মার তৃষ্ণা মেটাতে পরম করুণাময় যুগে-যুগে, কালে কালে তাঁর দূত প্রেরণ করেছেন পৃথিবীতে। এমনকি পাথরের মত শক্ত যাদের হৃদয [যেমন-প্যাগান আরবেরা] তাদের মাঝেও আমাদের নবীর মত দূত প্রেরণ করেছেন তাঁর রহমতের ফল্গুধারায় তাদের কঠিন হৃদয়কে সঞ্জীবিত করার জন্য। আর এই সব নবী ও রাসূলগণের চারিপাশে বিভিন্ন জাতি তাদের বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা, নিয়ে বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে ভীড় করেছে, তারা ধর্মের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে, আত্মিক তৃষ্ণা মিটিয়েছে। যেমন-তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ইসরাঈলীদের ১২টি সম্প্রদায় ১২টি ঝর্ণাধারার চারিপাশে সমবেত হয়েছিল। আল্লাহ্ যুগে যুগে মানুষের জন্য ঐ ঝর্ণাধারার মত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাদের অমিয় বাণীর প্রভাবে মানুষের আত্মা তার তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। আত্মার খোরাক আল্লাহ্ এই ভাবেই যুগে যুগে বিশ্ববাসীদের কাছে প্রেরণ করেছেন। আমরা এর জন্য পরম করুণাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। কীভাবে? আল্লাহ্র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা মৌখিক নয়-তা হবে কার্যাবলীর মাধ্যমে প্রকাশ। আমরা আমাদের আচরণের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। আমরা নিজেদের অন্যায়, অবিচার ও স্বার্থপরতা নামক রিপু থেকে নিজেকে রক্ষা করবো। সর্বদা মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান ক্ষণস্থায়ী। আর এই ক্ষণস্থায়ী অবস্থানেরই কার্যকলাপ নির্ধারণ করবে আমাদের আগামী দিনের বা পরকালের অবস্থান। এই হচ্ছে বিশ্ব প্রতিপালকের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা। আর এই কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী অবস্থানকালে। যে ক্ষণস্থায়ী অবস্থান কালকে বলা যায় আমাদের ‘শিক্ষানবীশকাল’ (Probationary Period) অনন্ত পরকালের জন্য।
আয়াতঃ 002.060
আর মূসা যখন নিজ জাতির জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, স্বীয় যষ্ঠির দ্বারা আঘাত কর পাথরের উপরে। অতঃপর তা থেকে প্রবাহিত হয়ে এল বারটি প্রস্রবণ। তাদের সব গোত্রই চিনে নিল নিজ নিজ ঘাট। আল্লাহর দেয়া রিযিক খাও, পান কর আর দুনিয়ার বুকে দাংগা-হাংগামা করে বেড়িও না।
And (remember) when Mûsa (Moses) asked for water for his people, We said: ”Strike the stone with your stick.” Then gushed forth therefrom twelve springs. Each (group of) people knew its own place for water. ”Eat and drink of that which Allâh has provided and do not act corruptly, making mischief on the earth.”
وَإِذِ اسْتَسْقَى مُوسَى لِقَوْمِهِ فَقُلْنَا اضْرِب بِّعَصَاكَ الْحَجَرَ فَانفَجَرَتْ مِنْهُ اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْناً قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍ مَّشْرَبَهُمْ كُلُواْ وَاشْرَبُواْ مِن رِّزْقِ اللَّهِ وَلاَ تَعْثَوْاْ فِي الأَرْضِ مُفْسِدِينَ
Wa-ithi istasqa moosa liqawmihi faqulna idrib biAAasaka alhajara fainfajarat minhu ithnata AAashrata AAaynan qad AAalima kullu onasin mashrabahum kuloo waishraboo min rizqi Allahi wala taAAthaw fee al-ardi mufsideena
YUSUFALI: And remember Moses prayed for water for his people; We said: “Strike the rock with thy staff.” Then gushed forth therefrom twelve springs. Each group knew its own place for water. So eat and drink of the sustenance provided by Allah, and do no evil nor mischief on the (face of the) earth.
PICKTHAL: And when Moses asked for water for his people, We said: Smite with thy staff the rock. And there gushed out therefrom twelve springs (so that) each tribe knew their drinking-place. Eat and drink of that which Allah hath provided, and do not act corruptly, making mischief in the earth.
SHAKIR: And when Musa prayed for drink for his people, We said: Strike the rock with your staff So there gushed from it twelve springs; each tribe knew its drinking place: Eat and drink of the provisions of Allah and do not act corruptly in the land, making mischief.
KHALIFA: Recall that Moses sought water for his people. We said, “Strike the rock with your staff.” Whereupon, twelve springs gushed out therefrom. The members of each tribe knew their own water. Eat and drink from GOD’s provisions, and do not roam the earth corruptingly.
৫৯। কিন্তু সীমালঙ্ঘনকারীরা, তাদের যে বাণী দেয়া হয়েছিলো তা পরিবর্তন করে ফেললো। সুতরাং আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের উপর আসমান থেকে প্লেগ প্রেরণ করলাম, যেহেতু তারা [আমার আদেশ] বারে বারে লঙ্ঘন করেছিলো।
রুকু – ৭
৬০। এবং স্মরণ কর মুসা তার সম্প্রদায়ের জন্য পানির প্রার্থনা করলো, আমি বললাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর।’ ফলে সেখান থেকে বারটি ঝর্ণাধারা উৎসরিত হলো। প্রত্যেক গোত্র ৭৩ তাদের নিজ নিজ পানির স্থান জেনে নিল। সুতরাং আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবিকা থেকে আহার ও পান কর এবং পৃথিবীতে পাপ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।
৭৩। এই আয়াতে ইহুদীদের বিভিন্ন উপজাতি (Tribe) সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। ইহুদীদের বার (১২)টি উপজাতি হচ্ছে ইয়াকুব নবীর ১২ জন ছেলের বংশধরগণ। ইয়াকুব নবীকে ইহুদীরা নাম দিয়েছে ইসরাঈল। সেই কারণে ইহুদীদের আর এক নাম বনী ইসরাঈল বা ইসরাঈলের বংশধর।
সিনাই পর্বতের কাছে হোরের নামক স্থানে যেখানে মুসা নবীকে প্রত্যাদেশ বা আল্লাহ্র আইন প্রদান করা হয় সেখানে ১২ ফুট উচ্চ এবং ৫০ ফুট পরিধি বিশিষ্ট লাল গ্রানাইট পাথরের স্তুপ থেকে ১২টি ঝর্ণা প্রবাহিত যা ১৫ শতাব্দীতে ইউরোপীয়ান পরিব্রাজক ব্রেভডেনবাচ (Brevdenbach) প্রত্যক্ষ করেন। এই ঝর্ণাগুলির অস্তিত্ব হযরত মুহম্মদের (দঃ) সময়েও ছিলো এবং সম্ভবতঃ এখনও আছে।
এই আয়াতকে আল্লাহ্ উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন আরও মহত্তর কিছু শিক্ষা দেওয়ার জন্য। এই পৃথিবীতে চলার পথে আমরা আত্মিক দিক থেকে নিঃসঙ্গ। মায়া-মমতাহীন, স্বার্থপর পৃথিবীতে একটু স্নেহ ভালবাসা ও সঙ্গের জন্য তৃষিত হই। পৃথিবীর পথ আদম সন্তানের জন্য পৃথিবীকে করে তোলে বন্ধুর ও কঙ্করময়। আধ্যাত্মিক জগতের বা আত্মার তৃষ্ণা মেটাতে পরম করুণাময় যুগে-যুগে, কালে কালে তাঁর দূত প্রেরণ করেছেন পৃথিবীতে। এমনকি পাথরের মত শক্ত যাদের হৃদয [যেমন-প্যাগান আরবেরা] তাদের মাঝেও আমাদের নবীর মত দূত প্রেরণ করেছেন তাঁর রহমতের ফল্গুধারায় তাদের কঠিন হৃদয়কে সঞ্জীবিত করার জন্য। আর এই সব নবী ও রাসূলগণের চারিপাশে বিভিন্ন জাতি তাদের বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা, নিয়ে বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে ভীড় করেছে, তারা ধর্মের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে, আত্মিক তৃষ্ণা মিটিয়েছে। যেমন-তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ইসরাঈলীদের ১২টি সম্প্রদায় ১২টি ঝর্ণাধারার চারিপাশে সমবেত হয়েছিল। আল্লাহ্ যুগে যুগে মানুষের জন্য ঐ ঝর্ণাধারার মত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাদের অমিয় বাণীর প্রভাবে মানুষের আত্মা তার তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। আত্মার খোরাক আল্লাহ্ এই ভাবেই যুগে যুগে বিশ্ববাসীদের কাছে প্রেরণ করেছেন। আমরা এর জন্য পরম করুণাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। কীভাবে? আল্লাহ্র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা মৌখিক নয়-তা হবে কার্যাবলীর মাধ্যমে প্রকাশ। আমরা আমাদের আচরণের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। আমরা নিজেদের অন্যায়, অবিচার ও স্বার্থপরতা নামক রিপু থেকে নিজেকে রক্ষা করবো। সর্বদা মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান ক্ষণস্থায়ী। আর এই ক্ষণস্থায়ী অবস্থানেরই কার্যকলাপ নির্ধারণ করবে আমাদের আগামী দিনের বা পরকালের অবস্থান। এই হচ্ছে বিশ্ব প্রতিপালকের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা। আর এই কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী অবস্থানকালে। যে ক্ষণস্থায়ী অবস্থান কালকে বলা যায় আমাদের ‘শিক্ষানবীশকাল’ (Probationary Period) অনন্ত পরকালের জন্য।
আয়াতঃ 002.061
আর তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে কখনও ধৈর্য্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী।
And (remember) when you said, ”O Mûsa (Moses)! We cannot endure one kind of food. So invoke your Lord for us to bring forth for us of what the earth grows, its herbs, its cucumbers, its Fûm (wheat or garlic), its lentils and its onions.” He said, ”Would you exchange that which is better for that which is lower? Go you down to any town and you shall find what you want!” And they were covered with humiliation and misery, and they drew on themselves the Wrath of Allâh. That was because they used to disbelieve the Ayât (proofs, evidences, verses, lessons, signs, revelations, etc.) of Allâh and killed the Prophets wrongfully. That was because they disobeyed and used to transgress the bounds (in their disobedience to Allâh, i.e. commit crimes and sins).
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَى لَن نَّصْبِرَ عَلَىَ طَعَامٍ وَاحِدٍ فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنبِتُ الأَرْضُ مِن بَقْلِهَا وَقِثَّآئِهَا وَفُومِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَا قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ الَّذِي هُوَ أَدْنَى بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ اهْبِطُواْ مِصْراً فَإِنَّ لَكُم مَّا سَأَلْتُمْ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَآؤُوْاْ بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُواْ يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ذَلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعْتَدُونَ
Wa-ith qultum ya moosa lan nasbira AAala taAAamin wahidin faodAAu lana rabbaka yukhrij lana mimma tunbitu al-ardu min baqliha waqiththa-iha wafoomiha waAAadasiha wabasaliha qala atastabdiloona allathee huwa adna biallathee huwa khayrun ihbitoo misran fa-inna lakum ma saaltum waduribat AAalayhimu alththillatu waalmaskanatu wabaoo bighadabin mina Allahi thalika bi-annahum kanoo yakfuroona bi-ayati Allahi wayaqtuloona alnnabiyyeena bighayri alhaqqi thalika bima AAasaw wakanoo yaAAtadoona
YUSUFALI: And remember ye said: “O Moses! we cannot endure one kind of food (always); so beseech thy Lord for us to produce for us of what the earth groweth, -its pot-herbs, and cucumbers, Its garlic, lentils, and onions.” He said: “Will ye exchange the better for the worse? Go ye down to any town, and ye shall find what ye want!” They were covered with humiliation and misery; they drew on themselves the wrath of Allah. This because they went on rejecting the Signs of Allah and slaying His Messengers without just cause. This because they rebelled and went on transgressing.
PICKTHAL: And when ye said: O Moses! We are weary of one kind of food; so call upon thy Lord for us that He bring forth for us of that which the earth groweth – of its herbs and its cucumbers and its corn and its lentils and its onions. He said: Would ye exchange that which is higher for that which is lower? Go down to settled country, thus ye shall get that which ye demand. And humiliation and wretchedness were stamped upon them and they were visited with wrath from Allah. That was because they disbelieved in Allah’s revelations and slew the prophets wrongfully. That was for their disobedience and transgression.
SHAKIR: And when you said: O Musa! we cannot bear with one food, therefore pray Lord on our behalf to bring forth for us out of what the earth grows, of its herbs and its cucumbers and its garlic and its lentils and its onions. He said: Will you exchange that which is better for that which is worse? Enter a city, so you will have what you ask for. And abasement and humiliation were brought down upon them, and they became deserving of Allah’s wrath; this was so because they disbelieved in the communications of Allah and killed the prophets unjustly; this was so because they disobeyed and exceeded the limits.
KHALIFA: Recall that you said, “O Moses, we can no longer tolerate one kind of food. Call upon your Lord to produce for us such earthly crops as beans, cucumbers, garlic, lentils, and onions.” He said, “Do you wish to substitute that which is inferior for that which is good? Go down to Egypt, where you can find what you asked for.” They have incurred condemnation, humiliation, and disgrace, and brought upon themselves wrath from GOD. This is because they rejected GOD’s revelations, and killed the prophets unjustly. This is because they disobeyed and exceeded the limits.
৬১। এবং স্মরণ কর তোমরা বলেছিলে, ‘হে মুসা! আমরা [সর্বদা] একই প্রকার খাদ্য সহ্য করতে পারছি না। সুতরাং তোমার প্রভুর নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, তিনি যেনো আমাদের জন্য ভূমি জাত দ্রব্য উৎপন্ন করেন- শাক-সব্জি এবং শশা, রসুন, ডাল এবং পিয়াঁজ।’ সে [মুসা] বলল, ‘তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুর পরিবর্তে নিকৃষ্টতর বস্তু চাও? তবে তোমরা যে কোন নগরে যাও। তোমরা যা চাও তা সেখানে পাবে। ৭৪। লাঞ্ছনা ও দুর্দশা তাদের [চারিদিক থেকে] ঘিরে ধরলো ৭৫, তারা নিজেদের উপরে আল্লাহ্র ক্রোধকে আকর্ষণ করেছিলো। এর কারণ তারা আল্লাহ্র আয়াতকে অস্বীকার করতো এবং আল্লাহ্র নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করতো। অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘনের জন্য তাদের এই পরিণতি হয়েছিলো।
৭৪। ‘মিশরা’ কথাটির আরবী শব্দরূপ দাঁড়ায় ‘যে কোন শহর’। কথাটির শব্দরূপই সব নয়, এর গূঢ় অর্থ হবে মিশরের যে কোনও শহর। কারন ‘তানউইন’ আরবী শব্দটির দ্বারা যা প্রকাশ করা হয়েছে তার অর্থ ‘মিশরের’ কোনও স্থানের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন দেশ যা মিশরের মতই উর্বর। এই আয়াতে ইহুদীদের ভৎর্সনা করা হয়েছে। ইহুদীরা একই খাবার প্রতিদিন খাওয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলো। কারণ মিশরে তারা যখন কৃতদাস বন্ধনে আবদ্ধ ছিল, ফেরাউনদের খাবারের প্রাচুর্য ও প্রকারভেদ তাদের প্রলুব্ধ করতো। দাসত্বের বন্ধন, অত্যাচার অপেক্ষা তাদের কাছে খাবারের বিভিন্নতা ও প্রাচুর্য হয়ে উঠলো বেশী লোভনীয়। এ ব্যাপারে হযরত মুসা (আঃ) এর ভৎর্সনা ছিল দু’ভাবে, (১) বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু খাবার যে কোনও শহরেই পাওয়া যায়, কিন্তু তার পরিবর্তে কি স্বাধীনতা বিক্রি করা যায়? সুস্বাদু খাবার অপেক্ষা কি স্বাধীনতা বহু মূল্যবান নয়? (২) সামনেই ইহুদীদের জন্য রয়েছে আল্লাহ্র অঙ্গীকারাবদ্ধ সমৃদ্ধির দেশ, আর পিছনে রয়েছে দাসত্বের দেশ (মিশর)। কোনটা মঙ্গলজনক? তারা কি ভালর প্রতিদানে মন্দকে বেছে নেবে?
৭৫। এখান থেকে এই আয়াতের অর্থ সার্বজনীন। আল্লাহ্ ইহুদীদের দাসত্ব মুক্ত করে আল্লাহ্র মনোনীত স্থানে তাদের বাসস্থান স্থির করলেন। কিন্তু ইহুদীরা আল্লাহ্র এই বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলো। ফলে তাদের উপর আল্লাহ্র গজব নাজেল হলো। তাদের লাঞ্ছনা গঞ্জনা জাতীয় বিপর্যয়ে পরিণত হলো। এটা আমরা ইহুদীদের ইতিহাস পড়লেই দেখতে পাই। প্রথমতঃ তারা ‘আসেরিয়ান’দের দ্বারা পরাজিত ও বন্দী হয়ে তাদের দেশে নীত হয়। পরে পারস্য সম্রাট তাদের আসেরিয়ানদের থেকে মুক্ত করে তাদের দাসে পরিণত করেন এবং এর পরে তারা আবার গ্রীক, রোমান ও আরবদের অধীনে চলে যায়। এর ফলে ইহুদী জাতি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই থেকে নিজেদের স্বাধীন আবাসস্থল থেকে বঞ্চিত হয় এবং সেই থেকে তারা পৃথিবীব্যাপী ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজেদের কোনও মাতৃভূমি নাই। এ লাঞ্ছনা এ জন্য হলো যে তারা আল্লাহ্র বিধি বিধানের প্রতি কুফরী করেছিলো এবং নবীদের হত্যা করেছিলো। তারা আল্লাহ্র আনুগত্য প্রকাশ করতো না এবং আনুগত্যের সীমা লঙ্ঘন করতো।
নবী-হত্যা শুরু হয় আবেল হত্যার মধ্য দিয়ে, যে ছিল ইহুদীদের পূর্বপুরুষ। এরপর ইয়াকুব নবীর জ্যোষ্ঠ পুত্ররা ইউসুফ নবীকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। ইউসুফ নবীকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁরা তাকে কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করে। যদিও আল্লাহ্র অপার করুণায় তাঁর মৃত্যু ঘটে নাই, তিনি অপরিচিত বণিকদের দ্বারা উদ্ধারপ্রাপ্ত হন এবং মিশরে আনীত হন, কিন্তু তাঁর ভাইরা ভাতৃ হত্যার পাপে অভিযুক্ত। কারণ আল্লাহ্ কর্মকে বিচার করেন তার নিয়ত দ্বারা। ইউসুফ নবীর ভাইদের সংকল্প ছিল তাঁকে হত্যা করার। তিনি নিহত হন নাই সেটা আল্লাহ্র অসীম করুণা ও দয়া। কিন্তু এতে তাঁর ভাইদের মানসিক অবস্থা বা নিয়তের কোন তারতম্য ঘটে নাই। সুতরাং ভাতৃ হত্যার নিয়তের দরুন তাদের উপরে ভাতৃহত্যার পাপই বর্তায়। পরবর্তীতে তারা ঈসা নবীকে হত্যা করে। যদিও তারা সত্যিকারের ঈসা নবীকে হত্যা করতে পারে নাই। তাঁরই সদৃশ একজনকে হত্যা করে। সুতরাং নবী হত্যার নিয়ত বা সংকল্পের দরুণ হত্যার পাপের দায়ভার তাদের উপর বর্তায়। শেষে আমরা দেখি তারা হযরত মুহম্মদ (সাঃ) কেও হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কুরআনের এই আয়াতের অর্থ যদিও ইহুদীদের সম্বোধন করে বলা হয়েছে, কিন্তু এর নৈতিক আবেদন সার্বজনীন। এর নৈতিক উপদেশ হচ্ছে, যদি কেউ ব্যক্তিগত বা জাতিগতভাবে উদ্ধত ও অহংকারী হয় এবং নৈতিক মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিক মুক্তি ও স্বাধীনতার চেয়ে পৃথিবীর চাকচিক্যময় জীবন ও ভোগ বিলাস অধিক পছন্দ করে, আল্লাহ্র আইন ভঙ্গ করে অর্থাৎ আল্লাহ্ প্রদত্ত নৈতিক নিয়মাবলী (যথা সত্যি কথা বলা, চুরি না করা, আমানতের খেয়ানত না করা, ব্যভিচার না করা ইত্যাদি) ভঙ্গ করে, আল্লাহ্র নিয়ামত প্রত্যাখান করে [যেমন করেছিলো ইহুদীরা] তবে তাদের জন্য সে যে ব্যক্তিই বা জাতিই হোক, রয়েছে দুঃখজনক লাঞ্ছনা এই পৃথিবীতে এবং পরকালে।
আয়াতঃ 002.062
নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।
Verily! Those who believe and those who are Jews and Christians, and Sabians, whoever believes in Allâh and the Last Day and do righteous good deeds shall have their reward with their Lord, on them shall be no fear, nor shall they grieve .
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَادُواْ وَالنَّصَارَى وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحاً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
Inna allatheena amanoo waallatheena hadoo waalnnasara waalssabi-eena man amana biAllahi waalyawmi al-akhiri waAAamila salihan falahum ajruhum AAinda rabbihim wala khawfun AAalayhim wala hum yahzanoona
YUSUFALI: Those who believe (in the Qur’an), and those who follow the Jewish (scriptures), and the Christians and the Sabians,- any who believe in Allah and the Last Day, and work righteousness, shall have their reward with their Lord; on them shall be no fear, nor shall they grieve.
PICKTHAL: Lo! Those who believe (in that which is revealed unto thee, Muhammad), and those who are Jews, and Christians, and Sabaeans – whoever believeth in Allah and the Last Day and doeth right – surely their reward is with their Lord, and there shall no fear come upon them neither shall they grieve.
SHAKIR: Surely those who believe, and those who are Jews, and the f Christians, and the Sabians, whoever believes in Allah and the Last day and does good, they shall have their reward from their Lord, and there is no fear for them, nor shall they grieve.
KHALIFA: Surely, those who believe, those who are Jewish, the Christians, and the converts; anyone who (1) believes in GOD, and (2) believes in the Last Day, and (3) leads a righteous life, will receive their recompense from their Lord. They have nothing to fear, nor will they grieve.
রুকু – ৮
৬২। যারা ঈমান আনে [এই কুর-আনে], এবং যারা ইহুদীদের [ধর্মগ্রন্থ] অনুসরণ করে, এবং খৃশ্চিয়ান, এবং সাবীয়ান ৭৬, যারাই ঈমান আনে আল্লাহ্র [একত্বে] শেষ [বিচার] দিবসে এবং সৎ কাজ করে, তাদের জন্য পুরষ্কার আছে তাদের প্রভুর নিকট। তাদের কোন ভয় নাই তারা দুঃখিতও হবে না ৭৭।
৭৬। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ইরাকের নিম্নাংশ বসরার সন্নিকটে খুব ছোট এক সম্প্রদায় বাস করে। এদের জনসংখ্যা ২০০০ এর বেশী হবে না। আরবীতে তাদের বলা হয় সুবী (বহুবচনে সুবা)। তাদেরকে বলা হয় সার্বিয়ান এবং নাসোরিয়ান, অথবা সেন্ট জনসের ক্রিশ্চিয়ান। এরা নিজেদের আধ্যাত্মিক রহস্যবাদী খৃষ্টানরূপে বা জীবনের মূল রহস্যভেদী রূপে দাবী করে। তারা সাদা কাপড় পরে এবং ঘন ঘন পানিতে ডুব দিয়ে গোসল করে। তাদের ধর্মপুস্তকের নাম গিন্জা, যা সিরীয় ভাষায় লেখা। তারা অগ্নি উপাসক বা জরাথুষ্ট্র। তারা যে কোন নদীকে ইয়ারডান (জর্দান) নামে অভিহিত করে। তারা তাদের মুসলমান প্রতিবেশীদের সাথে সুখ-শান্তিতে বসবাস করে। এদের সাথেই কুরআন শরীফ বর্ণিত সার্বিয়ানদের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায; কিন্তু আবার কুরআন বর্ণিত সম্প্রদায়ের সাথে সম্পূর্ণ একও নয়।
আর একটি সম্প্রদায় যাদেরকে বলা হতো হারানের নকল সার্বিয়ান। এই সম্প্রদায় তাদের লম্বা চুল ও অদ্ভূত পোষাকের জন্য ৮৩০ খৃষ্টাদে খলিফা হারুন-অর-রশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সম্ভতঃ তারা কুরআনের বর্ণিত সার্বিয়ান নাম গ্রহণ করে কারণ তাহলে তারা কিতাব প্রাপ্ত জাতিসমূহের অন্তর্গত হতে পারবে। এরা সিরিয়াবাসী এবং তারার পূজক (star worshipper) এবং এদের আচার আচরণ সমসাময়িক গ্রীক ভাষাভাষি ইহুদীদের মত। এরা যদিও নিজদের কিতাবপ্রাপ্ত জাতিসমূহের অন্তর্গত বলে দাবী করে তবে তা যৌক্তিক কিনা তা বিবেচ্য। এ ব্যাপারে মাওলানা ইউসুফ আলীর মতামত হচ্ছে (যদিও অনেক লেখক ভিন্নমত পোষণ করেন) সার্বিয়ান কথাটির সঙ্কীর্ণার্থে ব্যবহার না করে ব্যাপক ও সার্বজনীন অর্থে ব্যবহার করা যায়। এদের মধ্যে যুগে যুগে অন্যান্য মহান শিক্ষক যারা পৃথিবীকে নৈতিক শিক্ষা দানে ধন্য করেছেন তাঁদের সবাইকে অন্তুর্ভুক্ত করা যায়। এখানেও ইসলামের মাহাত্ম্য ও সার্বজনীনতা বিদ্যমান।
আর একটি শ্রেণী আছে যাদের সার্বিয়ান নামে অভিহিত করা হয়। এরা প্রাচীন আরবের ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। যার সাথে ফিনিশিয়া দেশীয় এবং বেবীলন দেশীয়দের সম্যক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ৮০০-৭০০ খৃঃ পূর্বে আরবের দক্ষিণে ইয়েমেনের কাছে এদের এক সমৃদ্ধশালী রাজ্যের বিস্তার লাভ করে, যদিও এদের সাম্রাজ্যের সূত্রপাত হয় আরবের উত্তরাংশে।এরা তারার পূজক ছিল (সূর্য, চন্দ্র, ভেনাস)। সম্ভবতঃ শেবার রাণী এদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরা ৩৫০ খৃষ্টাব্দে আসোরিয়ানদের কাছে পরাভূত হয়। এদের রাজধানী ছিল সানার নিকটে। এরা পাথরের তৈরি প্রাসাদ তৈরি করেছিল যার বৈশিষ্ট্য ছিল সুদৃশ্য তোরণ।
৭৭। এই কথা বলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম ধর্ম কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের একচেটিয়া অন্তর্ভূক্ত নয়। যেমন-ইহুদীরা নিজেদের স্বতন্ত্র মনে করে, খৃষ্টানেরা নিজেদের মনে করে ইহুদীদের থেকে উদ্ভূদ। অর্থাৎ আল্লাহ্র প্রদত্ত ধর্ম ইহুদীদের মধ্যে ব্যতীত আর কারও কাছে নাজেল হওয়া সম্ভব নয়। কারন তারা বিশ্বাস করে তারা আল্লাহ্র মনোনীত। এমনকি আধুনিক খৃষ্টান সম্প্রদায় সচেতনভাবে যা অযৌক্তিক ভাবে আল্লাহ্র প্রতিনিধিমূলক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে। অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করে যে পাদ্রী বা পুরোহিতের সাহায্য পাপস্খালনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তারা বিশ্বাস করে যে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে আল্লাহ্র মনোনীত পাদ্রী বা পুরোহিতের প্রয়োজন। এর অর্থ দাঁড়ায় যে খৃষ্টান বা ইহুদী ব্যতীত আর কেহই আল্লাহ্র সন্নিকটে পৌঁছানোর যোগ্য নয়। কিন্তু উপরের আয়াত থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। হযরত মুহম্মদ (দঃ) এর পূর্বে পৃথিবীতে ইসলাম ছিল। কুরআন শরীফের [৩ : ৬৭] এ পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম ছিলেন একজন প্রকৃত মুসলমান। কারণ তিনি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে সমর্পন করেছিলেন। ইসলামের শিক্ষার মূল নির্যাস হচ্ছে আল্লাহ্র কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পন। আর আল্লাহ্র ইচ্ছা হচ্ছে (১) বিশ্বাস করা স্রষ্টা এক এবং অদ্বিতীয়, পরকালে তার কাছেই ইহকালের হিসাব দিতে হবে এবং (২) তাঁরই সন্তুষ্টি বিধানের জন্য সৎ কাজ করতে হবে। এই দুই ধর্ম যে পালন করে, সে-ই প্রকৃত মুসলমান। তাদের কোনও ভয় নাই। ইসলামের এই শিক্ষা সর্বকালের, সর্বযুগের এবং সর্ব মানুষের জন্য।
আয়াতঃ 002.063
আর আমি যখন তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তুর পর্বতকে তোমাদের মাথার উপর তুলে ধরেছিলাম এই বলে যে, তোমাদিগকে যে কিতাব দেয়া হয়েছে তাকে ধর সুদৃঢ়ভাবে এবং এতে যা কিছু রয়েছে তা মনে রেখো যাতে তোমরা ভয় কর।
And (O Children of Israel, remember) when We took your covenant and We raised above you the Mount (saying): ”Hold fast to that which We have given you, and remember that which is therein so that you may become Al-Muttaqûn (the pious – see V.2:2).
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّورَ خُذُواْ مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُواْ مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
Wa-ith akhathna meethaqakum warafaAAna fawqakumu alttoora khuthoo ma ataynakum biquwwatin waothkuroo ma feehi laAAallakum tattaqoona
YUSUFALI: And remember We took your covenant and We raised above you (The towering height) of Mount (Sinai) : (Saying): “Hold firmly to what We have given you and bring (ever) to remembrance what is therein: Perchance ye may fear Allah.”
PICKTHAL: And (remember, O Children of Israel) when We made a covenant with you and caused the mount to tower above you, (saying): Hold fast that which We have given you, and remember that which is therein, that ye may ward off (evil).
SHAKIR: And when We took a promise from you and lifted the mountain over you: Take hold of the law (Tavrat) We have given you with firmness and bear in mind what is in it, so that you may guard (against evil).
KHALIFA: We made a covenant with you, as we raised Mount Sinai above you: “You shall uphold what we have given you strongly, and remember its contents, that you may be saved.”
৬৩। এবং স্মরণ কর আমি তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং [সুউচ্চ সিনাই] পর্বতকে উর্ধ্বে উত্তোলন করেছিলাম ৭৮ [বলেছিলাম] : ‘আমি যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং তাতে যা আছে তা [চিরকাল] স্মরণ রেখো। [তাহলে] সম্ভবতঃ তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করবে।
৭৮। সিনাই পর্বত বা তুর পর্বত আরবের মরুভূমিতে অবস্থিত একটি অন্যতম প্রধান পর্বত; যার অবস্থান লোহিত সাগরের দুই বাহুর মধ্যবর্তী উপদ্বীপে (Peninsula)। এই জায়গায় হযরত মুসাকে বাইবেলে বর্ণিত দশটি বিধান দেওয়া হয়। সেই কারণে এই পাহাড়কে মুসার পাহাড়ও বলা হয় (Jabal Musa) এখানেই ইসরাঈলীরা প্রায় এক বছর অবস্থান করে। এ সম্বন্ধে তাদের ধর্মগ্রন্থে যে বর্ণনা আছে তা হচ্ছে-এরূপ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বজ্র ও বিদ্যুৎ উদ্ভাসিত হলে এক স্বর্গীয় সুষমামন্ডিত দৃশ্যের অবতারণা করে। এ দৃশ্য অবলোকন করে সমস্ত লোকেরা ভক্তিভরে দশ বিধান মেনে চলার চুক্তিতে উপনীত হয়। সব লোকেরা এক সাথে ভক্তিভরে বলেছিল, ‘আমাদের প্রভু আমাদের যা করতে আদেশ দিয়েছে আমরা তা করবো।’
আয়াতঃ 002.064
তারপরেও তোমরা তা থেকে ফিরে গেছ। কাজেই আল্লাহর অনুগ্রহ ও মেহেরবানী যদি তোমাদের উপর না থাকত, তবে অবশ্যই তোমরা ধবংস হয়ে যেতে।
Then after that you turned away. Had it not been for the Grace and Mercy of Allâh upon you, indeed you would have been among the losers.
ثُمَّ تَوَلَّيْتُم مِّن بَعْدِ ذَلِكَ فَلَوْلاَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَكُنتُم مِّنَ الْخَاسِرِينَ
Thumma tawallaytum min baAAdi thalika falawla fadlu Allahi AAalaykum warahmatuhu lakuntum mina alkhasireena
YUSUFALI: But ye turned back thereafter: Had it not been for the Grace and Mercy of Allah to you, ye had surely been among the lost.
PICKTHAL: Then, even after that, ye turned away, and if it had not been for the grace of Allah and His mercy ye had been among the losers.
SHAKIR: Then you turned back after that; so were it not for the grace of Allah and His mercy on you, you would certainly have been among the losers.
KHALIFA: But you turned away thereafter, and if it were not for GOD’s grace towards you and His mercy, you would have been doomed.
৬৪। এরপরেও তোমরা [অঙ্গীকার থেকে] ফিরে গেলে। যদি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকতো, তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হতে।
৬৫। তোমরা তো ভাল করেই জানো তোমাদের মধ্যে যারা সাবাতের [শনিবারের] সম্পর্কে সীমালঙ্ঘন করেছিলো। আমি তাদের বললাম, ‘তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।’ ৭৯
৬৬। সুতরাং আমি তা সমসাময়িক ও তাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য করেছিলাম দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহ্ ভীরুদের জন্য করেছিলাম উপদেশ।
৭৯। ইহুদী ধর্ম মতে শনিবার হচ্ছে অত্যন্ত পবিত্র দিন। ঐদিনকে বলে সাবাত। ঐদিন সমস্ত কাজ নিষিদ্ধ, শুধুমাত্র সাপ্তাহিক উপসনার জন্য নির্দিষ্ট। হযরত মুসার আইন অনুযায়ী সাবাতের আইন ভঙ্গ করার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে একদল ইহুদী বাস করতো যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। এই সম্প্রদায় সাবাত আইন লঙ্ঘন করে সেদিনও মাছ ধরতো। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই তারা মৎস্য শিকার করতো। ফলে তারা আল্লাহ্র রোষানলে পতিত হয় এবং তাদের আকৃতির রূপান্তর ঘটে। আয়াত [৭: ১৬৩-১৬৬]-এ বর্ণনা আছে যে, যেহেতু শনিবার বা সাবাত দিনে সমস্ত কাজ কর্ম বন্ধ থাকে মাছেরা নিরাপদ মনে করে ঐ দিন সমুদ্র উপকূলে নির্ভয়ে মাথা উচুঁ করে চলাফেরা করতো। কিন্তু সপ্তাহের অন্য দিন তা করতো না। এটা ছিলো ঐ সম্প্রদায়ের জন্য এক পরীক্ষা। বিভিন্ন রেওয়াত থেকে জানা যায় যে, ইহুদীরা শরীয়তের নির্দেশ অমান্য করার জন্য অপকৌশল অবলম্বন করে। তারা সমুদ্র উপকূলে নির্ভয়ে বিচরণশীল মাছগুলিকে ধরে লেজে লম্বা সুতো বেঁধে দিত এবং তার একটা মাথা ডাঙ্গায় কোন কিছুর সাথে বেঁধে রাখা হতো। রবিবার আসতেই সুতো টেনে মাছ শিকার করে নেওয়া হতো। এ শুধু আল্লাহ্র আইন লঙ্ঘনই নয়, এ এক রকম উপহাসও বটে। হয়তো বা তাদের মধ্যে ধারণা ছিলো যে তারা শনিবারে মাছগুলিকে বধ করছে না সুতরাং আল্লাহ্র আইন ভঙ্গ করছে না। কিন্তু আল্লাহ্র আইন ছিলো যে ঐ দিনটি মাছেদের জন্য নিরাপদ থাকবে। যেহেতু ইহুদীরা অপকৌশল অবলম্বনকারী, সেই কারণে তারা ধর্মের মূল ভিত্তি থেকে সরে এসে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তাদের ধারণা ছিলো তারা শনিবারে মাছ বধ না করে রবিবারে করছে। এটা ধর্মের পরিপন্থি হবে না। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার উপর তারা অত্যাধিক গুরুত্ব দিত। আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে কোন ধর্ম নাই। এই সহজ সত্য বোঝা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্যও অপরিহার্য বটে। কারণ আত্মিক প্রণোদনা ব্যতীত কর্মের গুরুত্ব নাই। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ বিশদ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন মানুষের জন্য। আমাদের মনে রাখতে হবে ‘নিয়তের উপরেই কর্মের ফলাফল নির্ভর করে’। একমাত্র আল্লাহ্ই অন্তর্যামী, তিনি সব কাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক অবহিত। আজকের মুসলিম সম্প্রদায় আল্লাহ্ প্রদত্ত ন্যায় ও সত্য পথকে পরিহার করে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। ফলে ঐ ধীবর ইহুদী সম্প্রদায়ের মতই তাদের আজ বিশ্বব্যাপী লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা।
আয়াতঃ 002.065
তোমরা তাদেরকে ভালরূপে জেনেছ, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘণ করেছিল। আমি বলেছিলামঃ তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।
And indeed you knew those amongst you who transgressed in the matter of the Sabbath (i.e. Saturday). We said to them: ”Be you monkeys, despised and rejected.”
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِينَ اعْتَدَواْ مِنكُمْ فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُونُواْ قِرَدَةً خَاسِئِينَ
Walaqad AAalimtumu allatheena iAAtadaw minkum fee alssabti faqulna lahum koonoo qiradatan khasi-eena
YUSUFALI: And well ye knew those amongst you who transgressed in the matter of the Sabbath: We said to them: “Be ye apes, despised and rejected.”
PICKTHAL: And ye know of those of you who broke the Sabbath, how We said unto them: Be ye apes, despised and hated!
SHAKIR: And certainly you have known those among you who exceeded the limits of the Sabbath, so We said to them: Be (as) apes, despised and hated.
KHALIFA: You have known about those among you who desecrated the Sabbath. We said to them, “Be you as despicable as apes.”
৬৪। এরপরেও তোমরা [অঙ্গীকার থেকে] ফিরে গেলে। যদি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকতো, তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হতে।
৬৫। তোমরা তো ভাল করেই জানো তোমাদের মধ্যে যারা সাবাতের [শনিবারের] সম্পর্কে সীমালঙ্ঘন করেছিলো। আমি তাদের বললাম, ‘তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।’ ৭৯
৬৬। সুতরাং আমি তা সমসাময়িক ও তাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য করেছিলাম দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহ্ ভীরুদের জন্য করেছিলাম উপদেশ।
৭৯। ইহুদী ধর্ম মতে শনিবার হচ্ছে অত্যন্ত পবিত্র দিন। ঐদিনকে বলে সাবাত। ঐদিন সমস্ত কাজ নিষিদ্ধ, শুধুমাত্র সাপ্তাহিক উপসনার জন্য নির্দিষ্ট। হযরত মুসার আইন অনুযায়ী সাবাতের আইন ভঙ্গ করার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে একদল ইহুদী বাস করতো যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। এই সম্প্রদায় সাবাত আইন লঙ্ঘন করে সেদিনও মাছ ধরতো। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই তারা মৎস্য শিকার করতো। ফলে তারা আল্লাহ্র রোষানলে পতিত হয় এবং তাদের আকৃতির রূপান্তর ঘটে। আয়াত [৭: ১৬৩-১৬৬]-এ বর্ণনা আছে যে, যেহেতু শনিবার বা সাবাত দিনে সমস্ত কাজ কর্ম বন্ধ থাকে মাছেরা নিরাপদ মনে করে ঐ দিন সমুদ্র উপকূলে নির্ভয়ে মাথা উচুঁ করে চলাফেরা করতো। কিন্তু সপ্তাহের অন্য দিন তা করতো না। এটা ছিলো ঐ সম্প্রদায়ের জন্য এক পরীক্ষা। বিভিন্ন রেওয়াত থেকে জানা যায় যে, ইহুদীরা শরীয়তের নির্দেশ অমান্য করার জন্য অপকৌশল অবলম্বন করে। তারা সমুদ্র উপকূলে নির্ভয়ে বিচরণশীল মাছগুলিকে ধরে লেজে লম্বা সুতো বেঁধে দিত এবং তার একটা মাথা ডাঙ্গায় কোন কিছুর সাথে বেঁধে রাখা হতো। রবিবার আসতেই সুতো টেনে মাছ শিকার করে নেওয়া হতো। এ শুধু আল্লাহ্র আইন লঙ্ঘনই নয়, এ এক রকম উপহাসও বটে। হয়তো বা তাদের মধ্যে ধারণা ছিলো যে তারা শনিবারে মাছগুলিকে বধ করছে না সুতরাং আল্লাহ্র আইন ভঙ্গ করছে না। কিন্তু আল্লাহ্র আইন ছিলো যে ঐ দিনটি মাছেদের জন্য নিরাপদ থাকবে। যেহেতু ইহুদীরা অপকৌশল অবলম্বনকারী, সেই কারণে তারা ধর্মের মূল ভিত্তি থেকে সরে এসে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তাদের ধারণা ছিলো তারা শনিবারে মাছ বধ না করে রবিবারে করছে। এটা ধর্মের পরিপন্থি হবে না। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার উপর তারা অত্যাধিক গুরুত্ব দিত। আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে কোন ধর্ম নাই। এই সহজ সত্য বোঝা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্যও অপরিহার্য বটে। কারণ আত্মিক প্রণোদনা ব্যতীত কর্মের গুরুত্ব নাই। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ বিশদ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন মানুষের জন্য। আমাদের মনে রাখতে হবে ‘নিয়তের উপরেই কর্মের ফলাফল নির্ভর করে’। একমাত্র আল্লাহ্ই অন্তর্যামী, তিনি সব কাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক অবহিত। আজকের মুসলিম সম্প্রদায় আল্লাহ্ প্রদত্ত ন্যায় ও সত্য পথকে পরিহার করে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। ফলে ঐ ধীবর ইহুদী সম্প্রদায়ের মতই তাদের আজ বিশ্বব্যাপী লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা।
আয়াতঃ 002.066
অতঃপর আমি এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহভীরুদের জন্য উপদেশ গ্রহণের উপাদান করে দিয়েছি।
So We made this punishment an example to their own and to succeeding generations and a lesson to those who are Al-Muttaqûn (the pious – see V.2:2).
فَجَعَلْنَاهَا نَكَالاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهَا وَمَا خَلْفَهَا وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ
FajaAAalnaha nakalan lima bayna yadayha wama khalfaha wamawAAithatan lilmuttaqeena
YUSUFALI: So We made it an example to their own time and to their posterity, and a lesson to those who fear Allah.
PICKTHAL: And We made it an example to their own and to succeeding generations, and an admonition to the Allah-fearing.
SHAKIR: So We made them an example to those who witnessed it and those who came after it, and an admonition to those who guard (against evil).
KHALIFA: We set them up as an example for their generation, as well as subsequent generations, and an enlightenment for the righteous.
৬৪। এরপরেও তোমরা [অঙ্গীকার থেকে] ফিরে গেলে। যদি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকতো, তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হতে।
৬৫। তোমরা তো ভাল করেই জানো তোমাদের মধ্যে যারা সাবাতের [শনিবারের] সম্পর্কে সীমালঙ্ঘন করেছিলো। আমি তাদের বললাম, ‘তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।’ ৭৯
৬৬। সুতরাং আমি তা সমসাময়িক ও তাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য করেছিলাম দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহ্ ভীরুদের জন্য করেছিলাম উপদেশ।
৭৯। ইহুদী ধর্ম মতে শনিবার হচ্ছে অত্যন্ত পবিত্র দিন। ঐদিনকে বলে সাবাত। ঐদিন সমস্ত কাজ নিষিদ্ধ, শুধুমাত্র সাপ্তাহিক উপসনার জন্য নির্দিষ্ট। হযরত মুসার আইন অনুযায়ী সাবাতের আইন ভঙ্গ করার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে একদল ইহুদী বাস করতো যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। এই সম্প্রদায় সাবাত আইন লঙ্ঘন করে সেদিনও মাছ ধরতো। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই তারা মৎস্য শিকার করতো। ফলে তারা আল্লাহ্র রোষানলে পতিত হয় এবং তাদের আকৃতির রূপান্তর ঘটে। আয়াত [৭: ১৬৩-১৬৬]-এ বর্ণনা আছে যে, যেহেতু শনিবার বা সাবাত দিনে সমস্ত কাজ কর্ম বন্ধ থাকে মাছেরা নিরাপদ মনে করে ঐ দিন সমুদ্র উপকূলে নির্ভয়ে মাথা উচুঁ করে চলাফেরা করতো। কিন্তু সপ্তাহের অন্য দিন তা করতো না। এটা ছিলো ঐ সম্প্রদায়ের জন্য এক পরীক্ষা। বিভিন্ন রেওয়াত থেকে জানা যায় যে, ইহুদীরা শরীয়তের নির্দেশ অমান্য করার জন্য অপকৌশল অবলম্বন করে। তারা সমুদ্র উপকূলে নির্ভয়ে বিচরণশীল মাছগুলিকে ধরে লেজে লম্বা সুতো বেঁধে দিত এবং তার একটা মাথা ডাঙ্গায় কোন কিছুর সাথে বেঁধে রাখা হতো। রবিবার আসতেই সুতো টেনে মাছ শিকার করে নেওয়া হতো। এ শুধু আল্লাহ্র আইন লঙ্ঘনই নয়, এ এক রকম উপহাসও বটে। হয়তো বা তাদের মধ্যে ধারণা ছিলো যে তারা শনিবারে মাছগুলিকে বধ করছে না সুতরাং আল্লাহ্র আইন ভঙ্গ করছে না। কিন্তু আল্লাহ্র আইন ছিলো যে ঐ দিনটি মাছেদের জন্য নিরাপদ থাকবে। যেহেতু ইহুদীরা অপকৌশল অবলম্বনকারী, সেই কারণে তারা ধর্মের মূল ভিত্তি থেকে সরে এসে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তাদের ধারণা ছিলো তারা শনিবারে মাছ বধ না করে রবিবারে করছে। এটা ধর্মের পরিপন্থি হবে না। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার উপর তারা অত্যাধিক গুরুত্ব দিত। আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে কোন ধর্ম নাই। এই সহজ সত্য বোঝা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্যও অপরিহার্য বটে। কারণ আত্মিক প্রণোদনা ব্যতীত কর্মের গুরুত্ব নাই। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ বিশদ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন মানুষের জন্য। আমাদের মনে রাখতে হবে ‘নিয়তের উপরেই কর্মের ফলাফল নির্ভর করে’। একমাত্র আল্লাহ্ই অন্তর্যামী, তিনি সব কাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক অবহিত। আজকের মুসলিম সম্প্রদায় আল্লাহ্ প্রদত্ত ন্যায় ও সত্য পথকে পরিহার করে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। ফলে ঐ ধীবর ইহুদী সম্প্রদায়ের মতই তাদের আজ বিশ্বব্যাপী লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা।
আয়াতঃ 002.067
যখন মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ? মূসা (আঃ) বললেন, মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
And (remember) when Mûsa (Moses) said to his people: ”Verily, Allâh commands you that you slaughter a cow.” They said, ”Do you make fun of us?” He said, ”I take Allâh’s Refuge from being among Al-Jâhilûn (the ignorants or the foolish).”
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَذْبَحُواْ بَقَرَةً قَالُواْ أَتَتَّخِذُنَا هُزُواً قَالَ أَعُوذُ بِاللّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ
Wa-ith qala moosa liqawmihi inna Allaha ya/murukum an tathbahoo baqaratan qaloo atattakhithuna huzuwan qala aAAoothu biAllahi an akoona mina aljahileena
YUSUFALI: And remember Moses said to his people: “Allah commands that ye sacrifice a heifer.” They said: “Makest thou a laughing-stock of us?” He said: “Allah save me from being an ignorant (fool)!”
PICKTHAL: And when Moses said unto his people: Lo! Allah commandeth you that ye sacrifice a cow, they said: Dost thou make game of us? He answered: Allah forbid that I should be among the foolish!
SHAKIR: And when Musa said to his people: Surely Allah commands you that you should sacrifice a cow; they said: Do you ridicule us? He said: I seek the protection of Allah from being one of the ignorant.
KHALIFA: Moses said to his people, “GOD commands you to sacrifice a heifer.” They said, “Are you mocking us?” He said, “GOD forbid, that I should behave like the ignorant ones.”
৬৭। এবং স্মরণ কর মুসা তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলো, ‘আল্লাহ্ আদেশ দিচ্ছেন যে তোমরা একটি বকনা গাভী কোরবানী দাও’ ৮০। তারা বলেছিলো, ‘তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো?’ সে [মুসা] বলেছিলো, ‘অজ্ঞ এবং নির্বোধ হওয়া থেকে আল্লাহ্ আমাকে রক্ষা করুণ।
৮০। এই আয়াতটি [৬৭-৭১] পড়তে হবে [২:৭২-৭৩] সঙ্গে সংযুক্তি করে। এই নীর্তিগর্ভমূলক বিবরণ এই যে, বনী ইসরাঈলীদের মধ্যে একটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিলো। হত্যাকারী কে তা জানা কঠিন হয়ে পড়ে। বনী ইসরাঈলরা মুসা (আঃ)’র কাছে হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তিনি আল্লাহ্র নির্দেশ অনুযায়ী একটি গরু জবাই করার জন্য আদেশ দেন। তারা চিরাচরিত অভ্যাস ও প্রকৃতি অনুযায়ী এতে নানা প্রকার বাদানুবাদের অবতারণা করতে থাকে ও বলে তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছো? (কোথায় হত্যাকারীর সন্ধান, আর কোথায় গরু জবাই)। উপরের ঘটনার মাধ্যমে যে উপদেশ দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত সহজ। হযরত মুসা কোরবানীর জন্য উপদেশ দিলেন। কিন্তু ইসরাঈলরা তা হাসি ঠাট্টা রূপে পরিগণিত করলো। কিন্তু যখন মুসা আল্লাহ্র নামে হল্ফ করে তাদের কোরবাণী দেয়ার জন্য ক্রমাগত তাগাদা দিতে লাগলেন, তখন তারা বিভিন্ন অজুহাতের অবতারণা করতে লাগলো। এসব অজুহাত ছিল কোরবাণী না দেওয়ার অজুহাত। কারণ যে সব প্রশ্ন তারা হযরত মুসাকে করেছিলো যদি তারা আন্তরিক হতো কোরবাণীর ব্যাপারে তবে তারা নিজেরাই প্রশ্নের সমাধান করতে পারতো। হযরত মুসার নির্দেশ খুব সহজেই বুঝতে পারতো। কিন্তু তারা আল্লাহ্র নির্দেশ বুঝতে চেষ্টা করে নাই মোটেও। তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ, দোষত্রুটি খুঁজে সমালোচনা করাই ছিল তাদের আসল উদ্দেশ্য। পুরো জিনিষটাই ছিল তাদের এক ধরণের ভাল অপকৌশল, যে তারা সুপথের বা আল্লাহ্র নির্দেশকে বুঝতে চেষ্টা করছে। শেষ পর্যন্ত যখন তাদের কোনও অজুহাত বা টালবাহানা টিকলো না তখন তারা গরু কোরবানী দিল কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও। ফলে তাদের নিবেদন (কোরবানী) এর মূল সুর যা হচ্ছে আত্মাকে পাপ থেকে পরিশুদ্ধ করা, তা হারিয়ে যায়। তারা কৌশলে সত্যকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেছে। এই এড়ানোর চেষ্টা স্বরূপ তারা নানা রকম কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে। কারণ বিবেককে প্রতারিত করতে অনেক কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়।
আয়াতঃ 002.068
তারা বলল, তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, যেন সেটির রূপ বিশ্লেষণ করা হয়। মূসা (আঃ) বললেন, তিনি বলছেন, সেটা হবে একটা গাভী, যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়-বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি বয়সের। এখন আদিষ্ট কাজ করে ফেল।
They said, ”Call upon your Lord for us that He may make plain to us what it is!” He said, ”He says, ’Verily, it is a cow neither too old nor too young, but (it is) between the two conditions’, so do what you are commanded.”
قَالُواْ ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لّنَا مَا هِيَ قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ لاَّ فَارِضٌ وَلاَ بِكْرٌ عَوَانٌ بَيْنَ ذَلِكَ فَافْعَلُواْ مَا تُؤْمَرونَ
Qaloo odAAu lana rabbaka yubayyin lana ma hiya qala innahu yaqoolu innaha baqaratun la faridun wala bikrun AAawanun bayna thalika faifAAaloo ma tu/maroona
YUSUFALI: They said: “Beseech on our behalf Thy Lord to make plain to us what (heifer) it is!” He said; “He says: The heifer should be neither too old nor too young, but of middling age. Now do what ye are commanded!”
PICKTHAL: They said: Pray for us unto thy Lord that He make clear to us what (cow) she is. (Moses) answered: Lo! He saith, Verily she is a cow neither with calf nor immature; (she is) between the two conditions; so do that which ye are commanded.
SHAKIR: They said: Call on your Lord for our sake to make it plain to us what she is. Musa said: He says, Surely she is a cow neither advanced in age nor too young, of middle age between that (and this); do therefore what you are commanded.
KHALIFA: They said, “Call upon your Lord to show us which one.” He said, “He says that she is a heifer that is neither too old, nor too young; of an intermediate age. Now, carry out what you are commanded to do.”
৬৮। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে স্পষ্টভাবে আমাদের জন্য জেনে নাও [বক্না গাভীটি] কেমন হবে! সে [মুসা] বলেছিলো, [আল্লাহ্ বলেছেন]: ‘বক্না গাভীটি খুব বৃদ্ধও নয় আবার খুব বাচ্চাও নয়, কিন্তু তা হবে এ দুয়ের মাঝামাঝি বয়সের। এখন তোমাদের যা আদেশ করা হয়েছে তা কর।’
৬৯। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে স্পষ্টভাবে জেনে নাও উহার রং কি?’ সে [মুসা] বলেছিলো, ‘আল্লাহ্ বলেছেন, [হরিণ শিশুর ন্যায়] হলুদ বর্ণের গাভী, উজ্জ্বল রং এর আমেজ যা দর্শকদের সন্তুষ্ট করে।’
৭০। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট বল, তিনি যেনো আমাদের সুস্পষ্ট করে বলেন এটি কেমন হবে; আমাদের নিকট সকল গাভীই এক রকম; যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তবে নিশ্চয়ই আমরা নির্দেশ পাব।
৭১। সে বলেছিলো, ‘আল্লাহা বলেছেন, উহা এমন একটি গাভী যা ক্ষেত চাষ বা পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয় নাই। সুস্থ এবং নিখুঁত।’ তারা বলেছিলো, ‘এখন তুমি সত্য এনেছ।’ অতঃপর তারা গাভীটিকে কোরবাণী দিলো যদিও তারা তা করতে ইচ্ছুক ছিলো না।
রুকু – ৯
৭২। স্মরণ কর যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে ৮১, এবং অপরাধের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলে। কিন্তু তোমরা যা গোপন করেছিলে, আল্লাহ্ তা প্রকাশ করে দিতেছেন।
৮১। ইহুদী ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এক ব্যক্তিকে হত্যা করে মাঠে ফেলে রাখা হয়েছিলো, কেউই জানতো না তার হত্যাকারী কে? আল্লাহ্র নির্দেশ হলো বক্না গাভী কোরবানী দিয়ে তার উপরে নগরের প্রতিটি লোক তার হস্ত প্রক্ষালন করবে এবং নিজেকে নির্দোষ দাবী করবে। এভাবেই তাদেরকে রক্তের ঋণ শোধ করতে হুকুম দেয়া হল। প্রথমে তারা একে অন্যকে দোষারোপ শুরু করলো, তারপরে তারা চেষ্টা করলো যেন বক্না গাভটিকে কোরবানী দেওয়া না হয়, সেজন্য নানা টালবাহানা বের করলো যেমন বর্ণনা করা হয়েছে। যখন গরু জবাই হলো, আল্লাহ্র হুকুমে মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে তার হত্যাকারীকে সনাক্ত করলো।
এই আয়াতের উপদেশ হচ্ছে, মানুষ তার পাপ ও অন্যায়কে লুকাতে চায়। এটা হতে পারে ব্যক্তিগতভাবে বা সমষ্টিগতভাবে। কিন্তু পাপ কখনও লুকায়িত থাকে না। যে কোন ভাবেই হোক পাপ জনসম্মুখে প্রকাশ পাবেই। এ-ই হচ্ছে আল্লাহ্র বিধান। ইহুদীদের জাতীয় ইতিহাসের মাধ্যমে এই শিক্ষাই আমাদের দেয়া হচ্ছে।
আয়াতঃ 002.069
তারা বলল, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যে, তার রঙ কিরূপ হবে? মূসা (আঃ) বললেন, তিনি বলেছেন যে, গাঢ় পীতবর্ণের গাভী-যা দর্শকদের চমৎকৃত করবে।
They said, ”Call upon your Lord for us to make plain to us its colour.” He said, ”He says, ’It is a yellow cow, bright in its colour, pleasing to the beholders.’ ”
قَالُواْ ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا لَوْنُهَا قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنّهَا بَقَرَةٌ صَفْرَاء فَاقِـعٌ لَّوْنُهَا تَسُرُّ النَّاظِرِينَ
Qaloo odAAu lana rabbaka yubayyin lana ma lawnuha qala innahu yaqoolu innaha baqaratun safrao faqiAAun lawnuha tasurru alnnathireena
YUSUFALI: They said: “Beseech on our behalf Thy Lord to make plain to us Her colour.” He said: “He says: A fawn-coloured heifer, pure and rich in tone, the admiration of beholders!”
PICKTHAL: They said: Pray for us unto thy Lord that He make clear to us of what colour she is. (Moses) answered: Lo! He saith: Verily she is a yellow cow. Bright is her colour, gladdening beholders.
SHAKIR: They said: Call on your Lord for our sake to make it plain to us what her color is. Musa said: He says, Surely she is a yellow cow; her color is intensely yellow, giving delight to the beholders.
KHALIFA: They said, “Call upon your Lord to show us her color.” He said, “He says that she is a yellow heifer, bright colored, pleases the beholders.”
৬৮। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে স্পষ্টভাবে আমাদের জন্য জেনে নাও [বক্না গাভীটি] কেমন হবে! সে [মুসা] বলেছিলো, [আল্লাহ্ বলেছেন]: ‘বক্না গাভীটি খুব বৃদ্ধও নয় আবার খুব বাচ্চাও নয়, কিন্তু তা হবে এ দুয়ের মাঝামাঝি বয়সের। এখন তোমাদের যা আদেশ করা হয়েছে তা কর।’
৬৯। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে স্পষ্টভাবে জেনে নাও উহার রং কি?’ সে [মুসা] বলেছিলো, ‘আল্লাহ্ বলেছেন, [হরিণ শিশুর ন্যায়] হলুদ বর্ণের গাভী, উজ্জ্বল রং এর আমেজ যা দর্শকদের সন্তুষ্ট করে।’
৭০। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট বল, তিনি যেনো আমাদের সুস্পষ্ট করে বলেন এটি কেমন হবে; আমাদের নিকট সকল গাভীই এক রকম; যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তবে নিশ্চয়ই আমরা নির্দেশ পাব।
৭১। সে বলেছিলো, ‘আল্লাহা বলেছেন, উহা এমন একটি গাভী যা ক্ষেত চাষ বা পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয় নাই। সুস্থ এবং নিখুঁত।’ তারা বলেছিলো, ‘এখন তুমি সত্য এনেছ।’ অতঃপর তারা গাভীটিকে কোরবাণী দিলো যদিও তারা তা করতে ইচ্ছুক ছিলো না।
রুকু – ৯
৭২। স্মরণ কর যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে ৮১, এবং অপরাধের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলে। কিন্তু তোমরা যা গোপন করেছিলে, আল্লাহ্ তা প্রকাশ করে দিতেছেন।
৮১। ইহুদী ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এক ব্যক্তিকে হত্যা করে মাঠে ফেলে রাখা হয়েছিলো, কেউই জানতো না তার হত্যাকারী কে? আল্লাহ্র নির্দেশ হলো বক্না গাভী কোরবানী দিয়ে তার উপরে নগরের প্রতিটি লোক তার হস্ত প্রক্ষালন করবে এবং নিজেকে নির্দোষ দাবী করবে। এভাবেই তাদেরকে রক্তের ঋণ শোধ করতে হুকুম দেয়া হল। প্রথমে তারা একে অন্যকে দোষারোপ শুরু করলো, তারপরে তারা চেষ্টা করলো যেন বক্না গাভটিকে কোরবানী দেওয়া না হয়, সেজন্য নানা টালবাহানা বের করলো যেমন বর্ণনা করা হয়েছে। যখন গরু জবাই হলো, আল্লাহ্র হুকুমে মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে তার হত্যাকারীকে সনাক্ত করলো।
এই আয়াতের উপদেশ হচ্ছে, মানুষ তার পাপ ও অন্যায়কে লুকাতে চায়। এটা হতে পারে ব্যক্তিগতভাবে বা সমষ্টিগতভাবে। কিন্তু পাপ কখনও লুকায়িত থাকে না। যে কোন ভাবেই হোক পাপ জনসম্মুখে প্রকাশ পাবেই। এ-ই হচ্ছে আল্লাহ্র বিধান। ইহুদীদের জাতীয় ইতিহাসের মাধ্যমে এই শিক্ষাই আমাদের দেয়া হচ্ছে।
আয়াতঃ 002.070
তারা বলল, আপনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন-তিনি বলে দিন যে, সেটা কিরূপ? কেননা, গরু আমাদের কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়। ইনশাআল্লাহ এবার আমরা অবশ্যই পথপ্রাপ্ত হব। মূসা (আঃ) বললেন, তিনি বলেন যে, এ গাভী ভূকর্ষণ ও জল সেচনের শ্রমে অভ্যস্ত নয়-হবে নিষ্কলঙ্ক, নিখুঁত।
They said, ”Call upon your Lord for us to make plain to us what it is. Verily to us all cows are alike, And surely, if Allâh wills, we will be guided.”
قَالُواْ ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا هِيَ إِنَّ البَقَرَ تَشَابَهَ عَلَيْنَا وَإِنَّآ إِن شَاء اللَّهُ لَمُهْتَدُونَ
Qaloo odAAu lana rabbaka yubayyin lana ma hiya inna albaqara tashabaha AAalayna wa-inna in shaa Allahu lamuhtadoona
YUSUFALI: They said: “Beseech on our behalf Thy Lord to make plain to us what she is: To us are all heifers alike: We wish indeed for guidance, if Allah wills.”
PICKTHAL: They said: Pray for us unto thy Lord that He make clear to us what (cow) she is. Lo! cows are much alike to us; and Lo! if Allah wills, we may be led aright.
SHAKIR: They said: Call on your Lord for our sake to make it plain to us what she is, for surely to us the cows are all alike, and if Allah please we shall surely be guided aright.
KHALIFA: They said, “Call upon your Lord to show us which one. The heifers look alike to us and, GOD willing, we will be guided.”
৬৮। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে স্পষ্টভাবে আমাদের জন্য জেনে নাও [বক্না গাভীটি] কেমন হবে! সে [মুসা] বলেছিলো, [আল্লাহ্ বলেছেন]: ‘বক্না গাভীটি খুব বৃদ্ধও নয় আবার খুব বাচ্চাও নয়, কিন্তু তা হবে এ দুয়ের মাঝামাঝি বয়সের। এখন তোমাদের যা আদেশ করা হয়েছে তা কর।’
৬৯। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে স্পষ্টভাবে জেনে নাও উহার রং কি?’ সে [মুসা] বলেছিলো, ‘আল্লাহ্ বলেছেন, [হরিণ শিশুর ন্যায়] হলুদ বর্ণের গাভী, উজ্জ্বল রং এর আমেজ যা দর্শকদের সন্তুষ্ট করে।’
৭০। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট বল, তিনি যেনো আমাদের সুস্পষ্ট করে বলেন এটি কেমন হবে; আমাদের নিকট সকল গাভীই এক রকম; যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তবে নিশ্চয়ই আমরা নির্দেশ পাব।
৭১। সে বলেছিলো, ‘আল্লাহা বলেছেন, উহা এমন একটি গাভী যা ক্ষেত চাষ বা পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয় নাই। সুস্থ এবং নিখুঁত।’ তারা বলেছিলো, ‘এখন তুমি সত্য এনেছ।’ অতঃপর তারা গাভীটিকে কোরবাণী দিলো যদিও তারা তা করতে ইচ্ছুক ছিলো না।
রুকু – ৯
৭২। স্মরণ কর যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে ৮১, এবং অপরাধের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলে। কিন্তু তোমরা যা গোপন করেছিলে, আল্লাহ্ তা প্রকাশ করে দিতেছেন।
৮১। ইহুদী ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এক ব্যক্তিকে হত্যা করে মাঠে ফেলে রাখা হয়েছিলো, কেউই জানতো না তার হত্যাকারী কে? আল্লাহ্র নির্দেশ হলো বক্না গাভী কোরবানী দিয়ে তার উপরে নগরের প্রতিটি লোক তার হস্ত প্রক্ষালন করবে এবং নিজেকে নির্দোষ দাবী করবে। এভাবেই তাদেরকে রক্তের ঋণ শোধ করতে হুকুম দেয়া হল। প্রথমে তারা একে অন্যকে দোষারোপ শুরু করলো, তারপরে তারা চেষ্টা করলো যেন বক্না গাভটিকে কোরবানী দেওয়া না হয়, সেজন্য নানা টালবাহানা বের করলো যেমন বর্ণনা করা হয়েছে। যখন গরু জবাই হলো, আল্লাহ্র হুকুমে মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে তার হত্যাকারীকে সনাক্ত করলো।
এই আয়াতের উপদেশ হচ্ছে, মানুষ তার পাপ ও অন্যায়কে লুকাতে চায়। এটা হতে পারে ব্যক্তিগতভাবে বা সমষ্টিগতভাবে। কিন্তু পাপ কখনও লুকায়িত থাকে না। যে কোন ভাবেই হোক পাপ জনসম্মুখে প্রকাশ পাবেই। এ-ই হচ্ছে আল্লাহ্র বিধান। ইহুদীদের জাতীয় ইতিহাসের মাধ্যমে এই শিক্ষাই আমাদের দেয়া হচ্ছে।
আয়াতঃ 002.071
তারা বলল, এবার সঠিক তথ্য এনেছ। অতঃপর তারা সেটা জবাই করল, অথচ জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না।
He [Mûsa (Moses)] said, ”He says, ’It is a cow neither trained to till the soil nor water the fields, sound, having no other colour except bright yellow.’ ” They said, ”Now you have brought the truth.” So they slaughtered it though they were near to not doing it.
قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ لاَّ ذَلُولٌ تُثِيرُ الأَرْضَ وَلاَ تَسْقِي الْحَرْثَ مُسَلَّمَةٌ لاَّ شِيَةَ فِيهَا قَالُواْ الآنَ جِئْتَ بِالْحَقِّ فَذَبَحُوهَا وَمَا كَادُواْ يَفْعَلُونَ
Qala innahu yaqoolu innaha baqaratun la thaloolun tutheeru al-arda wala tasqee alhartha musallamatun la shiyata feeha qaloo al-ana ji/ta bialhaqqi fathabahooha wama kadoo yafAAaloona
YUSUFALI: He said: “He says: A heifer not trained to till the soil or water the fields; sound and without blemish.” They said: “Now hast thou brought the truth.” Then they offered her in sacrifice, but not with good-will.
PICKTHAL: (Moses) answered: Lo! He saith: Verily she is a cow unyoked; she plougheth not the soil nor watereth the tilth; whole and without mark. They said: Now thou bringest the truth. So they sacrificed her, though almost they did not.
SHAKIR: Musa said: He says, Surely she is a cow not made submissive that she should plough the land, nor does she irrigate the tilth; sound, without a blemish in her. They said: Now you have brought the truth; so they sacrificed her, though they had not the mind to do (it).
KHALIFA: He said, “He says that she is a heifer that was never humiliated in plowing the land or watering the crops; free from any blemish.” They said, “Now you have brought the truth.” They finally sacrificed her, after this lengthy reluctance.
৬৮। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে স্পষ্টভাবে আমাদের জন্য জেনে নাও [বক্না গাভীটি] কেমন হবে! সে [মুসা] বলেছিলো, [আল্লাহ্ বলেছেন]: ‘বক্না গাভীটি খুব বৃদ্ধও নয় আবার খুব বাচ্চাও নয়, কিন্তু তা হবে এ দুয়ের মাঝামাঝি বয়সের। এখন তোমাদের যা আদেশ করা হয়েছে তা কর।’
৬৯। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে স্পষ্টভাবে জেনে নাও উহার রং কি?’ সে [মুসা] বলেছিলো, ‘আল্লাহ্ বলেছেন, [হরিণ শিশুর ন্যায়] হলুদ বর্ণের গাভী, উজ্জ্বল রং এর আমেজ যা দর্শকদের সন্তুষ্ট করে।’
৭০। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট বল, তিনি যেনো আমাদের সুস্পষ্ট করে বলেন এটি কেমন হবে; আমাদের নিকট সকল গাভীই এক রকম; যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তবে নিশ্চয়ই আমরা নির্দেশ পাব।
৭১। সে বলেছিলো, ‘আল্লাহা বলেছেন, উহা এমন একটি গাভী যা ক্ষেত চাষ বা পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয় নাই। সুস্থ এবং নিখুঁত।’ তারা বলেছিলো, ‘এখন তুমি সত্য এনেছ।’ অতঃপর তারা গাভীটিকে কোরবাণী দিলো যদিও তারা তা করতে ইচ্ছুক ছিলো না।
রুকু – ৯
৭২। স্মরণ কর যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে ৮১, এবং অপরাধের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলে। কিন্তু তোমরা যা গোপন করেছিলে, আল্লাহ্ তা প্রকাশ করে দিতেছেন।
৮১। ইহুদী ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এক ব্যক্তিকে হত্যা করে মাঠে ফেলে রাখা হয়েছিলো, কেউই জানতো না তার হত্যাকারী কে? আল্লাহ্র নির্দেশ হলো বক্না গাভী কোরবানী দিয়ে তার উপরে নগরের প্রতিটি লোক তার হস্ত প্রক্ষালন করবে এবং নিজেকে নির্দোষ দাবী করবে। এভাবেই তাদেরকে রক্তের ঋণ শোধ করতে হুকুম দেয়া হল। প্রথমে তারা একে অন্যকে দোষারোপ শুরু করলো, তারপরে তারা চেষ্টা করলো যেন বক্না গাভটিকে কোরবানী দেওয়া না হয়, সেজন্য নানা টালবাহানা বের করলো যেমন বর্ণনা করা হয়েছে। যখন গরু জবাই হলো, আল্লাহ্র হুকুমে মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে তার হত্যাকারীকে সনাক্ত করলো।
এই আয়াতের উপদেশ হচ্ছে, মানুষ তার পাপ ও অন্যায়কে লুকাতে চায়। এটা হতে পারে ব্যক্তিগতভাবে বা সমষ্টিগতভাবে। কিন্তু পাপ কখনও লুকায়িত থাকে না। যে কোন ভাবেই হোক পাপ জনসম্মুখে প্রকাশ পাবেই। এ-ই হচ্ছে আল্লাহ্র বিধান। ইহুদীদের জাতীয় ইতিহাসের মাধ্যমে এই শিক্ষাই আমাদের দেয়া হচ্ছে।
আয়াতঃ 002.072
যখন তোমরা একজনকে হত্যা করে পরে সে সম্পর্কে একে অপরকে অভিযুক্ত করেছিলে। যা তোমরা গোপন করছিলে, তা প্রকাশ করে দেয়া ছিল আল্লাহর অভিপ্রায়।
And (remember) when you killed a man and fell into dispute among yourselves as to the crime. But Allâh brought forth that which you were hiding.
وَإِذْ قَتَلْتُمْ نَفْساً فَادَّارَأْتُمْ فِيهَا وَاللّهُ مُخْرِجٌ مَّا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ
Wa-ith qataltum nafsan faiddara/tum feeha waAllahu mukhrijun ma kuntum taktumoona
YUSUFALI: Remember ye slew a man and fell into a dispute among yourselves as to the crime: But Allah was to bring forth what ye did hide.
PICKTHAL: And (remember) when ye slew a man and disagreed concerning it and Allah brought forth that which ye were hiding.
SHAKIR: And when you killed a man, then you disagreed with respect to that, and Allah was to bring forth that which you were going to hide.
KHALIFA: You had killed a soul, then disputed among yourselves. GOD was to expose what you tried to conceal.
৬৮। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে স্পষ্টভাবে আমাদের জন্য জেনে নাও [বক্না গাভীটি] কেমন হবে! সে [মুসা] বলেছিলো, [আল্লাহ্ বলেছেন]: ‘বক্না গাভীটি খুব বৃদ্ধও নয় আবার খুব বাচ্চাও নয়, কিন্তু তা হবে এ দুয়ের মাঝামাঝি বয়সের। এখন তোমাদের যা আদেশ করা হয়েছে তা কর।’
৬৯। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করে স্পষ্টভাবে জেনে নাও উহার রং কি?’ সে [মুসা] বলেছিলো, ‘আল্লাহ্ বলেছেন, [হরিণ শিশুর ন্যায়] হলুদ বর্ণের গাভী, উজ্জ্বল রং এর আমেজ যা দর্শকদের সন্তুষ্ট করে।’
৭০। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রভুর নিকট বল, তিনি যেনো আমাদের সুস্পষ্ট করে বলেন এটি কেমন হবে; আমাদের নিকট সকল গাভীই এক রকম; যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তবে নিশ্চয়ই আমরা নির্দেশ পাব।
৭১। সে বলেছিলো, ‘আল্লাহা বলেছেন, উহা এমন একটি গাভী যা ক্ষেত চাষ বা পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয় নাই। সুস্থ এবং নিখুঁত।’ তারা বলেছিলো, ‘এখন তুমি সত্য এনেছ।’ অতঃপর তারা গাভীটিকে কোরবাণী দিলো যদিও তারা তা করতে ইচ্ছুক ছিলো না।
রুকু – ৯
৭২। স্মরণ কর যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে ৮১, এবং অপরাধের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলে। কিন্তু তোমরা যা গোপন করেছিলে, আল্লাহ্ তা প্রকাশ করে দিতেছেন।
৮১। ইহুদী ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এক ব্যক্তিকে হত্যা করে মাঠে ফেলে রাখা হয়েছিলো, কেউই জানতো না তার হত্যাকারী কে? আল্লাহ্র নির্দেশ হলো বক্না গাভী কোরবানী দিয়ে তার উপরে নগরের প্রতিটি লোক তার হস্ত প্রক্ষালন করবে এবং নিজেকে নির্দোষ দাবী করবে। এভাবেই তাদেরকে রক্তের ঋণ শোধ করতে হুকুম দেয়া হল। প্রথমে তারা একে অন্যকে দোষারোপ শুরু করলো, তারপরে তারা চেষ্টা করলো যেন বক্না গাভটিকে কোরবানী দেওয়া না হয়, সেজন্য নানা টালবাহানা বের করলো যেমন বর্ণনা করা হয়েছে। যখন গরু জবাই হলো, আল্লাহ্র হুকুমে মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে তার হত্যাকারীকে সনাক্ত করলো।
এই আয়াতের উপদেশ হচ্ছে, মানুষ তার পাপ ও অন্যায়কে লুকাতে চায়। এটা হতে পারে ব্যক্তিগতভাবে বা সমষ্টিগতভাবে। কিন্তু পাপ কখনও লুকায়িত থাকে না। যে কোন ভাবেই হোক পাপ জনসম্মুখে প্রকাশ পাবেই। এ-ই হচ্ছে আল্লাহ্র বিধান। ইহুদীদের জাতীয় ইতিহাসের মাধ্যমে এই শিক্ষাই আমাদের দেয়া হচ্ছে।
আয়াতঃ 002.073
অতঃপর আমি বললামঃ গরুর একটি খন্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত কর। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শণ সমূহ প্রদর্শন করেন-যাতে তোমরা চিন্তা কর।
So We said: ”Strike him (the dead man) with a piece of it (the cow).” Thus Allâh brings the dead to life and shows you His Ayât (proofs, evidences, verses, lessons, signs, revelations, etc.) so that you may understand.
فَقُلْنَا اضْرِبُوهُ بِبَعْضِهَا كَذَلِكَ يُحْيِي اللّهُ الْمَوْتَى وَيُرِيكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
Faqulna idriboohu bibaAAdiha kathalika yuhyee Allahu almawta wayureekum ayatihi laAAallakum taAAqiloona
YUSUFALI: So We said: “Strike the (body) with a piece of the (heifer).” Thus Allah bringeth the dead to life and showeth you His Signs: Perchance ye may understand.
PICKTHAL: And We said: Smite him with some of it. Thus Allah bringeth the dead to life and showeth you His portents so that ye may understand.
SHAKIR: So We said: Strike the (dead body) with part of the (Sacrificed cow), thus Allah brings the dead to life, and He shows you His signs so that you may understand.
KHALIFA: We said, “Strike (the victim) with part (of the heifer).” That is when GOD brought the victim back to life, and showed you His signs, that you may understand.
৭৩। সুতরাং আমি বললাম, ‘গাভীর একটি অংশ দ্বারা [মৃত দেহটিকে] আঘাত কর।’ এভাবেই আল্লাহ্ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদের তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখান। সম্ভবতঃ তোমরা বুঝতে পারবে।
৭৪। এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেলো; কাঠিন্যে পাথরের মত অথবা তদপেক্ষা অধিক। পাথরের মধ্যে এমনও কতক আছে যেগুলি থেকে নদী বেগে উৎসারিত হয়; কতক এমন আছে যেগুলি বিদীর্ণ হলে তা থেকে পানি নির্গত হয়; এবং এমনও কতক আছে যা আল্লাহ্র ভয়ে ধ্বসে পড়ে। এবং তোমরা যা কর আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অমনোযোগী নন ৮২।
৮২। পাপী লোকের হৃদয় কঠিন থেকে কঠিনতর হয় যত দিন যায়। সুন্দর উপমার সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে যে এদের হৃদয় শক্ত পাথরের থেকেও শক্ত। আমাদের ধারণা প্রকৃতিতে পাথরের থেকে শক্ত আর কিছু নাই। কিন্তু এই পাথরের বুক চিরেই ঝর্ণাধারার উৎপত্তি হয়-যা পরবর্তীতে নদীতে রূপান্তরিত হয়। যে নদীপ্রবাহ মানুষের জীবন ফুলে-ফলে ভরিয়ে তোলে। আবার এমন পাথরের স্তর আছে যা ডিনামাইটের সাহায্যে উড়িয়ে দিলে তার নীচে সুমিষ্ট পানিয় জলের স্তরের সন্ধান পাওয়া যায়। আবার এমন অনেক পাথরের স্তর আছে যা প্রাকৃতিক কারণে বা ভূমির চাপ বা ভূমিকম্পন ইত্যাদিতে মাটির নীচে ডুবে যায় এবং ফলশ্রুতিতে পানির স্তরকে মাটির উপরে এনে দেয়। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে-১৯৩৪ সালে বিহারের ভূমিকম্পে ঠিক এরকমই এক ঘটনা ঘটে। একেই কবিতার ছন্দে উপমার সাহায্যে বলা হচ্ছে বিশ্ব প্রকৃতি আল্লাহ্র হুকুম মেনে চলে। এমনকি কঠিন পাথরের বুকেও সুমিষ্ট পানির সন্ধান লাভ করা যায় আল্লাহ্র হুকুমে। ঠিক সেইরকম যে কঠিন হৃদয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ্ ভীতি থাকবে সে হৃদয় যত কঠিনই হোক না কেন একদিন না একদিন তা অনুতাপের আগুনে গলে চোখের পানিতে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবে। খোদভীতি তার অন্তরের তন্ত্রীগুলোতে অনুতাপের আগুন জ্বেলে দেবে। পাথরের বুকে যেমন সুমিষ্ট ঝর্ণাধারার সৃষ্টি হয়, অনুতাপের আগুনে কঠিন হৃদয়ে আল্লাহ্ প্রেমের অমিয় ধারার সৃষ্টি হবে। কিন্তু জ্ঞান পাপীর হৃদয় ঐ প্রস্তর খন্ডের চেয়েও বেশি শক্ত। পৃথিবীর কোন শক্তিই ঐ হৃদয়কে আল্লাহ্র ভয়ে ভীত করতে পারবে না। পারবে না ঐ কঠিন হৃদয় থেকে উৎসরিত করতে আল্লাহ্ প্রেমের অমিয় ধারা।
আয়াতঃ 002.074
অতঃপর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মত অথবা তদপেক্ষাও কঠিন। পাথরের মধ্যে এমন ও আছে; যা থেকে ঝরণা প্রবাহিত হয়, এমনও আছে, যা বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা থেকে পানি নির্গত হয় এবং এমনও আছে, যা আল্লাহর ভয়ে খসেপড়তে থাকে! আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।
Then, after that, your hearts were hardened and became as stones or even worse in hardness. And indeed, there are stones out of which rivers gush forth, and indeed, there are of them (stones) which split asunder so that water flows from them, and indeed, there are of them (stones) which fall down for fear of Allâh. And Allâh is not unaware of what you do.
ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُم مِّن بَعْدِ ذَلِكَ فَهِيَ كَالْحِجَارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةً وَإِنَّ مِنَ الْحِجَارَةِ لَمَا يَتَفَجَّرُ مِنْهُ الأَنْهَارُ وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَشَّقَّقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُ الْمَاء وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللّهِ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
Thumma qasat quloobukum min baAAdi thalika fahiya kaalhijarati aw ashaddu qaswatan wa-inna mina alhijarati lama yatafajjaru minhu al-anharu wa-inna minha lama yashshaqqaqu fayakhruju minhu almao wa-inna minha lama yahbitu min khashyati Allahi wama Allahu bighafilin AAamma taAAmaloona
YUSUFALI: Thenceforth were your hearts hardened: They became like a rock and even worse in hardness. For among rocks there are some from which rivers gush forth; others there are which when split asunder send forth water; and others which sink for fear of Allah. And Allah is not unmindful of what ye do.
PICKTHAL: Then, even after that, your hearts were hardened and became as rocks, or worse than rocks, for hardness. For indeed there are rocks from out which rivers gush, and indeed there are rocks which split asunder so that water floweth from them. And indeed there are rocks which fall down for the fear of Allah. Allah is not unaware of what ye do.
SHAKIR: Then your hearts hardened after that, so that they were like rocks, rather worse in hardness; and surely there are some rocks from which streams burst forth, and surely there are some of them which split asunder so water issues out of them, and surely there are some of them which fall down for fear of Allah, and Allah is not at all heedless of what you do.
KHALIFA: Despite this, your hearts hardened like rocks, or even harder. For there are rocks from which rivers gush out. Others crack and release gentle streams, and other rocks cringe out of reverence for GOD. GOD is never unaware of anything you do.
৭৩। সুতরাং আমি বললাম, ‘গাভীর একটি অংশ দ্বারা [মৃত দেহটিকে] আঘাত কর।’ এভাবেই আল্লাহ্ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদের তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখান। সম্ভবতঃ তোমরা বুঝতে পারবে।
৭৪। এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেলো; কাঠিন্যে পাথরের মত অথবা তদপেক্ষা অধিক। পাথরের মধ্যে এমনও কতক আছে যেগুলি থেকে নদী বেগে উৎসারিত হয়; কতক এমন আছে যেগুলি বিদীর্ণ হলে তা থেকে পানি নির্গত হয়; এবং এমনও কতক আছে যা আল্লাহ্র ভয়ে ধ্বসে পড়ে। এবং তোমরা যা কর আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অমনোযোগী নন ৮২।
৮২। পাপী লোকের হৃদয় কঠিন থেকে কঠিনতর হয় যত দিন যায়। সুন্দর উপমার সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে যে এদের হৃদয় শক্ত পাথরের থেকেও শক্ত। আমাদের ধারণা প্রকৃতিতে পাথরের থেকে শক্ত আর কিছু নাই। কিন্তু এই পাথরের বুক চিরেই ঝর্ণাধারার উৎপত্তি হয়-যা পরবর্তীতে নদীতে রূপান্তরিত হয়। যে নদীপ্রবাহ মানুষের জীবন ফুলে-ফলে ভরিয়ে তোলে। আবার এমন পাথরের স্তর আছে যা ডিনামাইটের সাহায্যে উড়িয়ে দিলে তার নীচে সুমিষ্ট পানিয় জলের স্তরের সন্ধান পাওয়া যায়। আবার এমন অনেক পাথরের স্তর আছে যা প্রাকৃতিক কারণে বা ভূমির চাপ বা ভূমিকম্পন ইত্যাদিতে মাটির নীচে ডুবে যায় এবং ফলশ্রুতিতে পানির স্তরকে মাটির উপরে এনে দেয়। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে-১৯৩৪ সালে বিহারের ভূমিকম্পে ঠিক এরকমই এক ঘটনা ঘটে। একেই কবিতার ছন্দে উপমার সাহায্যে বলা হচ্ছে বিশ্ব প্রকৃতি আল্লাহ্র হুকুম মেনে চলে। এমনকি কঠিন পাথরের বুকেও সুমিষ্ট পানির সন্ধান লাভ করা যায় আল্লাহ্র হুকুমে। ঠিক সেইরকম যে কঠিন হৃদয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ্ ভীতি থাকবে সে হৃদয় যত কঠিনই হোক না কেন একদিন না একদিন তা অনুতাপের আগুনে গলে চোখের পানিতে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবে। খোদভীতি তার অন্তরের তন্ত্রীগুলোতে অনুতাপের আগুন জ্বেলে দেবে। পাথরের বুকে যেমন সুমিষ্ট ঝর্ণাধারার সৃষ্টি হয়, অনুতাপের আগুনে কঠিন হৃদয়ে আল্লাহ্ প্রেমের অমিয় ধারার সৃষ্টি হবে। কিন্তু জ্ঞান পাপীর হৃদয় ঐ প্রস্তর খন্ডের চেয়েও বেশি শক্ত। পৃথিবীর কোন শক্তিই ঐ হৃদয়কে আল্লাহ্র ভয়ে ভীত করতে পারবে না। পারবে না ঐ কঠিন হৃদয় থেকে উৎসরিত করতে আল্লাহ্ প্রেমের অমিয় ধারা।
আয়াতঃ 002.075
হে মুসলমানগণ, তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত; অতঃপর বুঝে-শুনে তা পরিবর্তন করে দিত এবং তারা তা অবগত ছিল।
Do you (faithful believers) covet that they will believe in your religion inspite of the fact that a party of them (Jewish rabbis) used to hear the Word of Allâh [the Taurât (Torah)], then they used to change it knowingly after they understood it?
أَفَتَطْمَعُونَ أَن يُؤْمِنُواْ لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلاَمَ اللّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِن بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
AfatatmaAAoona an yu/minoo lakum waqad kana fareequn minhum yasmaAAoona kalama Allahi thumma yuharrifoonahu min baAAdi ma AAaqaloohu wahum yaAAlamoona
YUSUFALI: Can ye (o ye men of Faith) entertain the hope that they will believe in you?- Seeing that a party of them heard the Word of Allah, and perverted it knowingly after they understood it.
PICKTHAL: Have ye any hope that they will be true to you when a party of them used to listen to the word of Allah, then used to change it, after they had understood it, knowingly?
SHAKIR: Do you then hope that they would believe in you, and a party from among them indeed used to hear the Word of Allah, then altered it after they had understood it, and they know (this).
KHALIFA: Do you expect them to believe as you do, when some of them used to hear the word of GOD, then distort it, with full understanding thereof, and deliberately?
৭৫। [হে বিশ্বাসী সম্প্রদায়] তোমরা কি এই আশা পোষণ কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? – যখন তাদের একদল আল্লাহ্র বাণী শোনে এবং তা হৃদয়ঙ্গম করার পরে; জেনে-বুঝে বিকৃত করে থাকে।
৭৬। দেখো! যখন তারা মুমিনদের সংস্পর্শে আসে, তারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ ৮৩, কিন্তু যখন তারা একান্তে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়, তখন তারা বলে, ‘আল্লাহ্ তোমাদের যে প্রত্যাদেশ দিয়েছেন তোমরা কি তাদের তা বলে দেবে; যেনো ইহার দ্বারা তোমাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র সামনে যুক্তি পেশ করতে পারে?’ তোমরা কি [তাদের উদ্দেশ্য] বুঝতে পার না ?
৮৩। তাৎক্ষণিকভাবে এই আয়াতে মদিনার সমসাময়িক ইহুদী সম্প্রদায়ের সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিন্তু এর আবেদন সার্বজনীন-সর্বকালের, সর্ব সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য-
মদিনার মুসলিমদের ধারণা ছিল ইহুদীরা হযরত মুহম্মদ-কে (সাঃ) নবী হিসেবে সাদরে গ্রহণ করবে। কারণ তাদের ধর্মগ্রন্থে মুহম্মদ (দঃ) সম্বন্ধে বলা আছে। কিন্তু মুসলমানদের এ ধারণা ছিল ভুল। তাদের ধর্মগ্রন্থে [Deut xviii-১৮] এ বর্ণিত আছে যে, ‘I will raise them up a prophet from among their brethen, like unto thee’ অর্থাৎ হযরত মুসার মত।
এই লাইনটি ইহুদীদের মধ্যে কিছু গুণী এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) হচ্ছেন আল্লাহ্র অঙ্গীকার করা সেই নবী। ফলে অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। আরবেরা সেমেটিকদের স্বগোত্রভূক্ত। ইহুদীরা সেমোটিক গোত্রভূক্ত। সুতরাং ইহুদী ধর্মগ্রন্থে সঠিকভাবেই বর্ণিত হয়েছে যে, ‘তোমাদের ভ্রাতৃদের মধ্যে থেকেই হযরত মুসার মত নবী প্রেরণ করা হবে’। আর এ কথাও ঠিক যে হযরত মুহম্মদ (দঃ) ব্যতীত আর কোনও নবীই হযরত মুসার মত ছিলেন না। ওল্ড টেস্টামেন্টের পঞ্চম গ্রন্থ ‘Deuteronomy’ যা হযরত মুসার বহু পরে লেখা হয়েছিলো, তাতে বলা হয়েছে, ‘There arose not a prophet since in Israel like unto Moses, whom the lord knew face to face.’
তাই হযরত মুহম্মদের (দঃ) আগমনে ইহুদীরা অত্যন্ত হিংসা অনুভব করতে থাকলো। কারণ হযরত মুহম্মদকে (দঃ) হযরত মুসার প্রতিদ্বন্দী ভাবতে শুরু করলো। মুসলমানদের সাথে তারা দ্বৈত ভূমিকা পালন করতে থাকলো। মদিনায় যখন ধীরে ধীরে মুসলিম কমিউনিটি বড় হতে থাকলো এবং শক্তি সংগ্রহ করতে থাকলো, তখন ইহুদীরা এমন ভান করতে থাকলো যে তারা মুসলিমদের উন্নতিতে খুশী এবং তারা তাদেরই একজন। কিন্তু সত্যিকারভাবে তাদের মনোভাব ছিল অন্য। তারা সযত্নে তাদের ধর্মগ্রন্থ বর্ণিত হযরত মুহম্মদের (দঃ) আগমন বার্তা গোপন রাখে যেনো তারা এ ব্যাপারে কখনও প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়।
ইহুদীদের এই দ্বৈত ভূমিকা সমন্বিত এই আয়াতটির সার্বজনীন ব্যাখ্যা হচ্ছে সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বসাধারণের জন্য। আল্লাহ্তে বিশ্বাস হচ্ছে এক ধরণের নৈতিক মূল্যবোধ, এক ধরনের নীতিজ্ঞান, এক ধরণের আদর্শ। যুগে-যুগে, কালে-কালে, বিশ্বাস বা আদর্শকে টিকে থাকার জন্য জিহাদ করা হয়েছে, ক্ষমতা, শক্তি, সামাজিক মর্যাদা, প্রতিষ্ঠা, সংঘটিত সংঘ ও প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ সুযোগ সুবিধার বিরুদ্ধে। এই জিহাদে বিশ্বাস বা সদ্যনীতি বা আদর্শ যখন জয়লাভ করে তখন দেখা যায় যে, সব প্রতিকূল শক্তি বা অবিশ্বাসীরা যারা এতদিন বাধা দান করেছে তারা বন্ধুর ছদ্মবেশে, মিত্রের ছদ্মবেশে তাদের দিকে সখ্যতার হাত বাড়ায়। কিন্তু অবিশ্বাসীরা কোনও নীতিতেই বিশ্বাসী নয়, তারা সব সময়েই বিশ্বাসীদের অর্থাৎ নীতিজ্ঞান সম্পন্নদের কাফেলার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত। বন্ধুত্ব তাদের একটি ভান মাত্র।
বিশ্বাসীরা তাদের জ্ঞান ও মেধাকে আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করে ফলে আল্লাহ্ তাদের জ্ঞান ও মেধাকে [এই জ্ঞান শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান বা ধর্মের ইত্যাদির] আরও বিকশিত করেন। তাদের এই সাফল্য অবিশ্বাসীদের আরও হিংসার কারণ হয়। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, তিনি সবই জানেন। বিশ্বাসীদের সত্যিকারভাবে জ্ঞানার্জন করতে বলা হচ্ছে এবং এর জন্য সর্বপ্রকার দুঃখ কষ্ট স্বীকার করতেও দ্বিধাবোধ না করে, এমনকি প্রয়োজনে বিদ্যা অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যেতেও তাদের অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। এরপর আল্লাহ্র হুকুম হচ্ছে বিশ্বাসীদের এই জ্ঞানকে যদি জনহিতকর কার্যে নিয়োজিত করা হয় তবে অবশ্য ছদ্মবেশধারী অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসীদের কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হবে। অবিশ্বাসীরা হয় নীতিজ্ঞান শূন্য, কপট ও ভণ্ড। তারা সু-সময়েই বন্ধুর ছদ্মবেশে বিশ্বাসীদের আস্থাভাজন হয়ে তাদের বিপথে চালিত করতে চায়।
আয়াতঃ 002.076
যখন তারা মুসলমানদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলেঃ আমরা মুসলমান হয়েছি। আর যখন পরস্পরের সাথে নিভৃতে অবস্থান করে, তখন বলে, পালনকর্তা তোমাদের জন্যে যা প্রকাশ করেছেন, তা কি তাদের কাছে বলে দিচ্ছ? তাহলে যে তারা এ নিয়ে পালকর্তার সামনে তোমাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে। তোমরা কি তা উপলব্ধি কর না?
And when they (Jews) meet those who believe (Muslims), they say, ”We believe”, but when they meet one another in private, they say, ”Shall you (Jews) tell them (Muslims) what Allâh has revealed to you [Jews, about the description and the qualities of Prophet Muhammad Peace be upon him , that which are written in the Taurât (Torah)] , that they (Muslims) may argue with you (Jews) about it before your Lord?” Have you (Jews) then no understanding?
وَإِذَا لَقُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلاَ بَعْضُهُمْ إِلَىَ بَعْضٍ قَالُواْ أَتُحَدِّثُونَهُم بِمَا فَتَحَ اللّهُ عَلَيْكُمْ لِيُحَآجُّوكُم بِهِ عِندَ رَبِّكُمْ أَفَلاَ تَعْقِلُونَ
Wa-itha laqoo allatheena amanoo qaloo amanna wa-itha khala baAAduhum ila baAAdin qaloo atuhaddithoonahum bima fataha Allahu AAalaykum liyuhajjookum bihi AAinda rabbikum afala taAAqiloona
YUSUFALI: Behold! when they meet the men of Faith, they say: “We believe”: But when they meet each other in private, they say: “Shall you tell them what Allah hath revealed to you, that they may engage you in argument about it before your Lord?”- Do ye not understand (their aim)?
PICKTHAL: And when they fall in with those who believe, they say: We believe. But when they go apart one with another they say: Prate ye to them of that which Allah hath disclosed to you that they may contend with you before your Lord concerning it? Have ye then no sense?
SHAKIR: And when they meet those who believe they say: We believe, and when they are alone one with another they say: Do you talk to them of what Allah has disclosed to you that they may contend with you by this before your Lord? Do you not then understand?
KHALIFA: And when they meet the believers, they say, “We believe,” but when they get together with each other, they say, “Do not inform (the believers) of the information given to you by GOD, lest you provide them with support for their argument concerning your Lord. Do you not understand?”
৭৫। [হে বিশ্বাসী সম্প্রদায়] তোমরা কি এই আশা পোষণ কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? – যখন তাদের একদল আল্লাহ্র বাণী শোনে এবং তা হৃদয়ঙ্গম করার পরে; জেনে-বুঝে বিকৃত করে থাকে।
৭৬। দেখো! যখন তারা মুমিনদের সংস্পর্শে আসে, তারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ ৮৩, কিন্তু যখন তারা একান্তে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়, তখন তারা বলে, ‘আল্লাহ্ তোমাদের যে প্রত্যাদেশ দিয়েছেন তোমরা কি তাদের তা বলে দেবে; যেনো ইহার দ্বারা তোমাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র সামনে যুক্তি পেশ করতে পারে?’ তোমরা কি [তাদের উদ্দেশ্য] বুঝতে পার না ?
৮৩। তাৎক্ষণিকভাবে এই আয়াতে মদিনার সমসাময়িক ইহুদী সম্প্রদায়ের সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিন্তু এর আবেদন সার্বজনীন-সর্বকালের, সর্ব সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য-
মদিনার মুসলিমদের ধারণা ছিল ইহুদীরা হযরত মুহম্মদ-কে (সাঃ) নবী হিসেবে সাদরে গ্রহণ করবে। কারণ তাদের ধর্মগ্রন্থে মুহম্মদ (দঃ) সম্বন্ধে বলা আছে। কিন্তু মুসলমানদের এ ধারণা ছিল ভুল। তাদের ধর্মগ্রন্থে [Deut xviii-১৮] এ বর্ণিত আছে যে, ‘I will raise them up a prophet from among their brethen, like unto thee’ অর্থাৎ হযরত মুসার মত।
এই লাইনটি ইহুদীদের মধ্যে কিছু গুণী এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) হচ্ছেন আল্লাহ্র অঙ্গীকার করা সেই নবী। ফলে অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। আরবেরা সেমেটিকদের স্বগোত্রভূক্ত। ইহুদীরা সেমোটিক গোত্রভূক্ত। সুতরাং ইহুদী ধর্মগ্রন্থে সঠিকভাবেই বর্ণিত হয়েছে যে, ‘তোমাদের ভ্রাতৃদের মধ্যে থেকেই হযরত মুসার মত নবী প্রেরণ করা হবে’। আর এ কথাও ঠিক যে হযরত মুহম্মদ (দঃ) ব্যতীত আর কোনও নবীই হযরত মুসার মত ছিলেন না। ওল্ড টেস্টামেন্টের পঞ্চম গ্রন্থ ‘Deuteronomy’ যা হযরত মুসার বহু পরে লেখা হয়েছিলো, তাতে বলা হয়েছে, ‘There arose not a prophet since in Israel like unto Moses, whom the lord knew face to face.’
তাই হযরত মুহম্মদের (দঃ) আগমনে ইহুদীরা অত্যন্ত হিংসা অনুভব করতে থাকলো। কারণ হযরত মুহম্মদকে (দঃ) হযরত মুসার প্রতিদ্বন্দী ভাবতে শুরু করলো। মুসলমানদের সাথে তারা দ্বৈত ভূমিকা পালন করতে থাকলো। মদিনায় যখন ধীরে ধীরে মুসলিম কমিউনিটি বড় হতে থাকলো এবং শক্তি সংগ্রহ করতে থাকলো, তখন ইহুদীরা এমন ভান করতে থাকলো যে তারা মুসলিমদের উন্নতিতে খুশী এবং তারা তাদেরই একজন। কিন্তু সত্যিকারভাবে তাদের মনোভাব ছিল অন্য। তারা সযত্নে তাদের ধর্মগ্রন্থ বর্ণিত হযরত মুহম্মদের (দঃ) আগমন বার্তা গোপন রাখে যেনো তারা এ ব্যাপারে কখনও প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়।
ইহুদীদের এই দ্বৈত ভূমিকা সমন্বিত এই আয়াতটির সার্বজনীন ব্যাখ্যা হচ্ছে সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বসাধারণের জন্য। আল্লাহ্তে বিশ্বাস হচ্ছে এক ধরণের নৈতিক মূল্যবোধ, এক ধরনের নীতিজ্ঞান, এক ধরণের আদর্শ। যুগে-যুগে, কালে-কালে, বিশ্বাস বা আদর্শকে টিকে থাকার জন্য জিহাদ করা হয়েছে, ক্ষমতা, শক্তি, সামাজিক মর্যাদা, প্রতিষ্ঠা, সংঘটিত সংঘ ও প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ সুযোগ সুবিধার বিরুদ্ধে। এই জিহাদে বিশ্বাস বা সদ্যনীতি বা আদর্শ যখন জয়লাভ করে তখন দেখা যায় যে, সব প্রতিকূল শক্তি বা অবিশ্বাসীরা যারা এতদিন বাধা দান করেছে তারা বন্ধুর ছদ্মবেশে, মিত্রের ছদ্মবেশে তাদের দিকে সখ্যতার হাত বাড়ায়। কিন্তু অবিশ্বাসীরা কোনও নীতিতেই বিশ্বাসী নয়, তারা সব সময়েই বিশ্বাসীদের অর্থাৎ নীতিজ্ঞান সম্পন্নদের কাফেলার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত। বন্ধুত্ব তাদের একটি ভান মাত্র।
বিশ্বাসীরা তাদের জ্ঞান ও মেধাকে আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করে ফলে আল্লাহ্ তাদের জ্ঞান ও মেধাকে [এই জ্ঞান শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান বা ধর্মের ইত্যাদির] আরও বিকশিত করেন। তাদের এই সাফল্য অবিশ্বাসীদের আরও হিংসার কারণ হয়। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, তিনি সবই জানেন। বিশ্বাসীদের সত্যিকারভাবে জ্ঞানার্জন করতে বলা হচ্ছে এবং এর জন্য সর্বপ্রকার দুঃখ কষ্ট স্বীকার করতেও দ্বিধাবোধ না করে, এমনকি প্রয়োজনে বিদ্যা অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যেতেও তাদের অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। এরপর আল্লাহ্র হুকুম হচ্ছে বিশ্বাসীদের এই জ্ঞানকে যদি জনহিতকর কার্যে নিয়োজিত করা হয় তবে অবশ্য ছদ্মবেশধারী অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসীদের কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হবে। অবিশ্বাসীরা হয় নীতিজ্ঞান শূন্য, কপট ও ভণ্ড। তারা সু-সময়েই বন্ধুর ছদ্মবেশে বিশ্বাসীদের আস্থাভাজন হয়ে তাদের বিপথে চালিত করতে চায়।
আয়াতঃ 002.077
তারা কি এতটুকুও জানে না যে, আল্লাহ সেসব বিষয়ও পরিজ্ঞাত যা তারা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে?
Know they (Jews) not that Allâh knows what they conceal and what they reveal?
أَوَلاَ يَعْلَمُونَ أَنَّ اللّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ
Awa la yaAAlamoona anna Allaha yaAAlamu ma yusirroona wama yuAAlinoona
YUSUFALI: Know they not that Allah knoweth what they conceal and what they reveal?
PICKTHAL: Are they then unaware that Allah knoweth that which they keep hidden and that which they proclaim?
SHAKIR: Do they not know that Allah knows what they keep secret and what they make known?
KHALIFA: Do they not know that GOD knows everything they conceal, and everything they declare?
৭৭। তারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে আল্লাহ্ তা জানেন?
৭৮। তাদের মধ্যে কিছু নিরক্ষর লোক আছে, যারা [নিজেদের] আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যতীত কিতাব সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নাই। তারা অনুমান ব্যতীত আর কিছু করে না। ৮৪
৮৪। এই আয়াতটি [২:৭৬] এর বর্ধিত অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। ইহুদীরা তাদের ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত জ্ঞানকে (অর্থাৎ হযরত মুহম্মদের (দঃ) আর্বিভাবের খবর) গোপন করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইহুদীদের মধ্যে যারা ধর্মগ্রন্থ পড়তে পারতো তারাও নিরপেক্ষ ছিল না। অশিক্ষিতদের সাথে তাদের খুব পার্থক্য ছিল না। কারণ তারা তাদের ধর্মগ্রন্থের আসল উপদেশ খুব ভালভাবেই জানতো, কিন্তু তারা তা বিকৃত করে নিজেদের মনগড়া তথ্য যা শুধুমাত্র অনুমানভিত্তিক তা পরিবেশন করতো। তারা মানুষকে প্রতারণা করার জন্য নিজস্ব লেখাকে আল্লাহ্র বাণী বলে প্রচার করতো। এই জঘন্য প্রতারণা তাদের সাময়িক সুবিধা দান করতে সক্ষম হয়েছিলো। কিন্তু এই সুবিধা বা লাভ কখনও সত্যিকারের হতে পারে না। যদি এই সুবিধার পরিবর্তে সমস্ত পৃথিবীও করতলগত হয় তবুও তা জোচ্চুরি, আর তা হচ্ছে আত্মাকে বিক্রি করার সামিল। তারা ক্রয় করলো ‘Gained the whole world and lost their own souls.’ কারণ নিজের হাতে বাণী লিখে আল্লাহ্র বাণী বলে প্রচারিত করা জঘন্য পাপ। কারণ এর মধ্যে কোনও সত্য নাই।
[সর্বজনীন উপদেশ হচ্ছে, ধর্মহীনতা সব সময়েই নিজস্ব মনগড়া কাল্পনিক স্রষ্টা গড়তে ভালবাসে। ধর্মহীন ব্যক্তির নিজস্ব সুযোগ, সুবিধা, কল্পনা যা তাকে আত্মতৃপ্ত করে তার নিজস্ব কল্পনার জগৎকে। তার নিজস্ব ধর্মকে সে নিজে সৃষ্টি করে, কিন্তু প্রতারিত করে বিশ্বস্রষ্টার নামে। দেখা যায় তারা তাদের কামনা বাসনা চরিতার্থ করার জন্য অন্যায় অবিচার, অপরাধের আশ্রয় নেয়। এ সবই করে শুধুমাত্র জনসাধারণকে প্রভাবিত করার জন্য তাদের স্বপক্ষে, এর সাথে স্রষ্টার তুষ্টির কোন সম্পর্ক নাই। ধর্মের নামে এই অনাচার যুগে যুগে দেশে দেশে সংগঠিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এর থেকে আমরা মুসলমানেরাও বাদ যাচ্ছি না। এর ফল অত্যন্ত বিষদায়ক। তাৎক্ষণিকভাবে কখনও এর কিছু সুফল পাওয়া যেতে পারে তা খুব স্বল্প সময়ের জন্য। এ যেনো সেই সাবানের বুদবুদ যা স্বল্পকালের জন্য রামধনুর বর্ণালী বিচ্ছুরিত করে আকাশে ওড়ে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেটে যায়। সেইরূপ ধর্মের নামে জোচ্চুরী সব সময়েই ধ্বংস ডেকে আনবে।
আয়াতঃ 002.078
তোমাদের কিছু লোক নিরক্ষর। তারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া আল্লাহর গ্রন্থের কিছুই জানে না। তাদের কাছে কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই।
And there are among them (Jews) unlettered people, who know not the Book, but they trust upon false desires and they but guess.
وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لاَ يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ إِلاَّ أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلاَّ يَظُنُّونَ
Waminhum ommiyyoona la yaAAlamoona alkitaba illa amaniyya wa-in hum illa yathunnoona
YUSUFALI: And there are among them illiterates, who know not the Book, but (see therein their own) desires, and they do nothing but conjecture.
PICKTHAL: Among them are unlettered folk who know the Scripture not except from hearsay. They but guess.
SHAKIR: And there are among them illiterates who know not the Book but only lies, and they do but conjecture.
KHALIFA: Among them are gentiles who do not know the scripture, except through hearsay, then assume that they know it.
৭৭। তারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে আল্লাহ্ তা জানেন?
৭৮। তাদের মধ্যে কিছু নিরক্ষর লোক আছে, যারা [নিজেদের] আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যতীত কিতাব সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নাই। তারা অনুমান ব্যতীত আর কিছু করে না। ৮৪
৮৪। এই আয়াতটি [২:৭৬] এর বর্ধিত অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। ইহুদীরা তাদের ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত জ্ঞানকে (অর্থাৎ হযরত মুহম্মদের (দঃ) আর্বিভাবের খবর) গোপন করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইহুদীদের মধ্যে যারা ধর্মগ্রন্থ পড়তে পারতো তারাও নিরপেক্ষ ছিল না। অশিক্ষিতদের সাথে তাদের খুব পার্থক্য ছিল না। কারণ তারা তাদের ধর্মগ্রন্থের আসল উপদেশ খুব ভালভাবেই জানতো, কিন্তু তারা তা বিকৃত করে নিজেদের মনগড়া তথ্য যা শুধুমাত্র অনুমানভিত্তিক তা পরিবেশন করতো। তারা মানুষকে প্রতারণা করার জন্য নিজস্ব লেখাকে আল্লাহ্র বাণী বলে প্রচার করতো। এই জঘন্য প্রতারণা তাদের সাময়িক সুবিধা দান করতে সক্ষম হয়েছিলো। কিন্তু এই সুবিধা বা লাভ কখনও সত্যিকারের হতে পারে না। যদি এই সুবিধার পরিবর্তে সমস্ত পৃথিবীও করতলগত হয় তবুও তা জোচ্চুরি, আর তা হচ্ছে আত্মাকে বিক্রি করার সামিল। তারা ক্রয় করলো ‘Gained the whole world and lost their own souls.’ কারণ নিজের হাতে বাণী লিখে আল্লাহ্র বাণী বলে প্রচারিত করা জঘন্য পাপ। কারণ এর মধ্যে কোনও সত্য নাই।
[সর্বজনীন উপদেশ হচ্ছে, ধর্মহীনতা সব সময়েই নিজস্ব মনগড়া কাল্পনিক স্রষ্টা গড়তে ভালবাসে। ধর্মহীন ব্যক্তির নিজস্ব সুযোগ, সুবিধা, কল্পনা যা তাকে আত্মতৃপ্ত করে তার নিজস্ব কল্পনার জগৎকে। তার নিজস্ব ধর্মকে সে নিজে সৃষ্টি করে, কিন্তু প্রতারিত করে বিশ্বস্রষ্টার নামে। দেখা যায় তারা তাদের কামনা বাসনা চরিতার্থ করার জন্য অন্যায় অবিচার, অপরাধের আশ্রয় নেয়। এ সবই করে শুধুমাত্র জনসাধারণকে প্রভাবিত করার জন্য তাদের স্বপক্ষে, এর সাথে স্রষ্টার তুষ্টির কোন সম্পর্ক নাই। ধর্মের নামে এই অনাচার যুগে যুগে দেশে দেশে সংগঠিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এর থেকে আমরা মুসলমানেরাও বাদ যাচ্ছি না। এর ফল অত্যন্ত বিষদায়ক। তাৎক্ষণিকভাবে কখনও এর কিছু সুফল পাওয়া যেতে পারে তা খুব স্বল্প সময়ের জন্য। এ যেনো সেই সাবানের বুদবুদ যা স্বল্পকালের জন্য রামধনুর বর্ণালী বিচ্ছুরিত করে আকাশে ওড়ে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেটে যায়। সেইরূপ ধর্মের নামে জোচ্চুরী সব সময়েই ধ্বংস ডেকে আনবে।
আয়াতঃ 002.079
অতএব তাদের জন্যে আফসোস! যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লেখে এবং বলে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ-যাতে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে। অতএব তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের হাতের লেখার জন্য এবং তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের উপার্জনের জন্যে।
Then woe to those who write the Book with their own hands and then say, ”This is from Allâh,” to purchase with it a little price! Woe to them for what their hands have written and woe to them for that they earn thereby.
فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـذَا مِنْ عِندِ اللّهِ لِيَشْتَرُواْ بِهِ ثَمَناً قَلِيلاً فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا يَكْسِبُونَ
Fawaylun lillatheena yaktuboona alkitaba bi-aydeehim thumma yaqooloona hatha min AAindi Allahi liyashtaroo bihi thamanan qaleelan fawaylun lahum mimma katabat aydeehim wawaylun lahum mimma yaksiboona
YUSUFALI: Then woe to those who write the Book with their own hands, and then say:”This is from Allah,” to traffic with it for miserable price!- Woe to them for what their hands do write, and for the gain they make thereby.
PICKTHAL: Therefore woe be unto those who write the Scripture with their hands and then say, “This is from Allah,” that they may purchase a small gain therewith. Woe unto them for that their hands have written, and woe unto them for that they earn thereby.
SHAKIR: Woe, then, to those who write the book with their hands and then say: This is from Allah, so that they may take for it a small price; therefore woe to them for what their hands have written and woe to them for what they earn.
KHALIFA: Therefore, woe to those who distort the scripture with their own hands, then say, “This is what GOD has revealed,” seeking a cheap material gain. Woe to them for such distortion, and woe to them for their illicit gains.
৭৯। তাদের জন্য দুর্ভোগ যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং ঘৃণ্য মূল্যে বাণিজ্য করার জন্য বলে, ‘এটা আল্লাহ্র নিকট থেকে [প্রাপ্ত]’।- তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য এবং তা দ্বারা যা তারা উপার্জন করেছে তার জন্য তাদের [নির্ধারিত আছে] দুঃখ।’
৮০। এবং তারা বলে, ‘দিন কতক ব্যতীত আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না।’ ৮৫। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছো যা তোমরা জান না?
৮৫। উদ্ধত অহংকারী ইহুদীরা দাবী করে যে, যেহেতু তারা হযরত ইব্রাহীমের বংশধর তারা যত গুণাহ্ করুক না কেন তারা বেহেশ্তে যাবেই। যদি তাদের কারও দোযখে যেতেই হয় তবে তা হবে শুধুমাত্র অল্প কয়েকদিনের জন্য। তারপর তাদের বেহেশ্তে পুনর্বাসিত করা হবে। তাদের এই মিথ্যা অহংকারকে বা মিথ্যা দাবীকে আল্লাহ্ [২ : ৮১-৮২] নাকচ করে দিয়েছেন। তাদের মিথ্যার ফানুস সত্যের আঘাতে ফুটো হয়ে গেছে।
সাধারণ উপদেশ হচ্ছে, ধর্মহীনতা উৎপন্ন করে মানসিক অবিশ্বাস, অবিশ্বস্ততা। আর তাই অবিশ্বাসী ব্যক্তিদের দেখা যায় নিজেদের সম্বন্ধে অন্ধ আত্ম অহংকারে মত্ত থাকতে। এরা নিজেদের সম্বন্ধে পদ মর্যাদা, উচ্চ বংশ গৌরব, সভ্যতা, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষমতা দাবী করে। কারণ এরা মনে করে তারা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তি। এরা জানে না যে, যা কিছুর উপরই তাদের লোভ থাকুক না কেন এর কোন কিছুই তাদের অধিকারে নেই। অসামান্য ধন-সম্পদ, প্রতিপত্তি নিয়েও মানুষ মুহূর্তের মধ্যে নির্মমভাবে লাঞ্ছিত হতে পারে। বাহ্যিকভাবে সুশ্রী হয়েও চিত্তে ধারণ করতে পারে অপরিমেয় অসুখ যন্ত্রণা। ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও সাধারণ মানুষের পদদলিত হতে পারে, হতে পারে জীবনের প্রতিকূলে যে কোন বিপর্যয়। আর মানুষের জীবনের এইসব প্রাপ্তি কিংবা অপ্রাপ্তির কোন কিছুই মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। মানুষ চেষ্টা করতে পারে কিন্তু চেষ্টা করার মানসিকতা তৈরি করতে পারে না। যখন আল্লাহ্ কাউকে সে মানসিকতা দেন আর যখন সে তা অবহেলা করে তখন কোন কিছুই আর তার জন্য ভাল অবস্থা তৈরি করতে পারে না। মানুষের মনের উপর সৃষ্টিকর্তার রয়েছে এই রকম সুক্ষ্ণ ও সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু তাদের এই বিপরীতে মানসিক অবস্থা তাদের ধর্মহীনতারই ফসল। এই ধর্মহীনতার কয়েক রকম আছে। কেউ ধর্মের নামে ধর্মহীন, কেউ মানবতার নামে ধর্মহীন, কেউ ব্যক্তিস্বার্থে ধর্মহীন। তবে ধর্মহীনতার বা অবিশ্বাসের মূল কথা হচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ। কিন্তু আল্লাহ্ সব জানেন-মানুষের অন্তরের নিয়ত সম্পর্কে। আল্লাহ্র রহমত তারই উপরে বর্ষিত হবে যে লোক দেখানো বা ব্যক্তিস্বার্থের জন্য নয়, শুধুমাত্র আল্লাহ্কে খুশী করার জন্যই চারিত্রিক গুণাবলী (Conduct of life) অর্জন করবে।
আয়াতঃ 002.080
তারা বলেঃ আগুন আমাদিগকে কখনও স্পর্শ করবে না; কিন্তু গণাগনতি কয়েকদিন। বলে দিনঃ তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার পেয়েছ যে, আল্লাহ কখনও তার খেলাফ করবেন না-না তোমরা যা জান না, তা আল্লাহর সাথে জুড়ে দিচ্ছ।
And they (Jews) say, ”The Fire (i.e. Hell-fire on the Day of Resurrection) shall not touch us but for a few numbered days.” Say (O Muhammad Peace be upon him to them): ”Have you taken a covenant from Allâh, so that Allâh will not break His Covenant? Or is it that you say of Allâh what you know not?”
وَقَالُواْ لَن تَمَسَّنَا النَّارُ إِلاَّ أَيَّاماً مَّعْدُودَةً قُلْ أَتَّخَذْتُمْ عِندَ اللّهِ عَهْدًا فَلَن يُخْلِفَ اللّهُ عَهْدَهُ أَمْ تَقُولُونَ عَلَى اللّهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
Waqaloo lan tamassana alnnaru illa ayyaman maAAdoodatan qul attakhathtum AAinda Allahi AAahdan falan yukhlifa Allahu AAahdahu am taqooloona AAala Allahi ma la taAAlamoona
YUSUFALI: And they say: “The Fire shall not touch us but for a few numbered days:” Say: “Have ye taken a promise from Allah, for He never breaks His promise? or is it that ye say of Allah what ye do not know?”
PICKTHAL: And they say: The Fire (of punishment) will not touch us save for a certain number of days. Say: Have ye received a covenant from Allah – truly Allah will not break His covenant – or tell ye concerning Allah that which ye know not?
SHAKIR: And they say: Fire shall not touch us but for a few days. Say: Have you received a promise from Allah, then Allah will not fail to perform His promise, or do you speak against Allah what you do not know?
KHALIFA: Some have said, “Hell will not touch us, except for a limited number of days.” Say, “Have you taken such a pledge from GOD – GOD never breaks His pledge – or, are you saying about GOD what you do not know?”
৭৯। তাদের জন্য দুর্ভোগ যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং ঘৃণ্য মূল্যে বাণিজ্য করার জন্য বলে, ‘এটা আল্লাহ্র নিকট থেকে [প্রাপ্ত]’।- তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য এবং তা দ্বারা যা তারা উপার্জন করেছে তার জন্য তাদের [নির্ধারিত আছে] দুঃখ।’
৮০। এবং তারা বলে, ‘দিন কতক ব্যতীত আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না।’ ৮৫। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছো যা তোমরা জান না?
৮৫। উদ্ধত অহংকারী ইহুদীরা দাবী করে যে, যেহেতু তারা হযরত ইব্রাহীমের বংশধর তারা যত গুণাহ্ করুক না কেন তারা বেহেশ্তে যাবেই। যদি তাদের কারও দোযখে যেতেই হয় তবে তা হবে শুধুমাত্র অল্প কয়েকদিনের জন্য। তারপর তাদের বেহেশ্তে পুনর্বাসিত করা হবে। তাদের এই মিথ্যা অহংকারকে বা মিথ্যা দাবীকে আল্লাহ্ [২ : ৮১-৮২] নাকচ করে দিয়েছেন। তাদের মিথ্যার ফানুস সত্যের আঘাতে ফুটো হয়ে গেছে।
সাধারণ উপদেশ হচ্ছে, ধর্মহীনতা উৎপন্ন করে মানসিক অবিশ্বাস, অবিশ্বস্ততা। আর তাই অবিশ্বাসী ব্যক্তিদের দেখা যায় নিজেদের সম্বন্ধে অন্ধ আত্ম অহংকারে মত্ত থাকতে। এরা নিজেদের সম্বন্ধে পদ মর্যাদা, উচ্চ বংশ গৌরব, সভ্যতা, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষমতা দাবী করে। কারণ এরা মনে করে তারা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তি। এরা জানে না যে, যা কিছুর উপরই তাদের লোভ থাকুক না কেন এর কোন কিছুই তাদের অধিকারে নেই। অসামান্য ধন-সম্পদ, প্রতিপত্তি নিয়েও মানুষ মুহূর্তের মধ্যে নির্মমভাবে লাঞ্ছিত হতে পারে। বাহ্যিকভাবে সুশ্রী হয়েও চিত্তে ধারণ করতে পারে অপরিমেয় অসুখ যন্ত্রণা। ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও সাধারণ মানুষের পদদলিত হতে পারে, হতে পারে জীবনের প্রতিকূলে যে কোন বিপর্যয়। আর মানুষের জীবনের এইসব প্রাপ্তি কিংবা অপ্রাপ্তির কোন কিছুই মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। মানুষ চেষ্টা করতে পারে কিন্তু চেষ্টা করার মানসিকতা তৈরি করতে পারে না। যখন আল্লাহ্ কাউকে সে মানসিকতা দেন আর যখন সে তা অবহেলা করে তখন কোন কিছুই আর তার জন্য ভাল অবস্থা তৈরি করতে পারে না। মানুষের মনের উপর সৃষ্টিকর্তার রয়েছে এই রকম সুক্ষ্ণ ও সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু তাদের এই বিপরীতে মানসিক অবস্থা তাদের ধর্মহীনতারই ফসল। এই ধর্মহীনতার কয়েক রকম আছে। কেউ ধর্মের নামে ধর্মহীন, কেউ মানবতার নামে ধর্মহীন, কেউ ব্যক্তিস্বার্থে ধর্মহীন। তবে ধর্মহীনতার বা অবিশ্বাসের মূল কথা হচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ। কিন্তু আল্লাহ্ সব জানেন-মানুষের অন্তরের নিয়ত সম্পর্কে। আল্লাহ্র রহমত তারই উপরে বর্ষিত হবে যে লোক দেখানো বা ব্যক্তিস্বার্থের জন্য নয়, শুধুমাত্র আল্লাহ্কে খুশী করার জন্যই চারিত্রিক গুণাবলী (Conduct of life) অর্জন করবে।
আয়াতঃ 002.081
হাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জন করেছে এবং সে পাপ তাকে পরিবেষ্টিত করে নিয়েছে, তারাই দোযখের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে।
Yes! Whosoever earns evil and his sin has surrounded him, they are dwellers of the Fire (i.e. Hell); they will dwell therein forever.
بَلَى مَن كَسَبَ سَيِّئَةً وَأَحَاطَتْ بِهِ خَطِيـئَتُهُ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
Bala man kasaba sayyi-atan waahatat bihi khatee-atuhu faola-ika as-habu alnnari hum feeha khalidoona
YUSUFALI: Nay, those who seek gain in evil, and are girt round by their sins,- they are companions of the Fire: Therein shall they abide (For ever).
PICKTHAL: Nay, but whosoever hath done evil and his sin surroundeth him; such are rightful owners of the Fire; they will abide therein.
SHAKIR: Yea, whoever earns evil and his sins beset him on every side, these are the inmates of the fire; in it they shall abide.
KHALIFA: Indeed, those who earn sins and become surrounded by their evil work will be the dwellers of Hell; they abide in it forever.
৮১। কেবল তাই নয়, যারা পাপ [কাজের মাধ্যমে] লাভ অনুসন্ধান করে, এবং যারা পরিবেষ্টিত হয় তাদের পাপ দ্বারা, এরাই হবে আগুনের অধিবাসী। সেখানে তারা [চিরকাল] থাকবে; ৮৬।
৮৬। নিজস্ব স্বার্থ বা লাভের জন্য যারা পাপ করে তারা আল্লাহ্র চোখে অত্যন্ত গুণাহ্গার। তারা সাধারণ পাপীদের থেকে বহুগুণ জঘন্য। কারণ নিজের স্বার্থ-লাভের জন্য যারা পাপ করে তারা চরম স্বার্থপর। স্বার্থপরতা এমন একটি দোষ যা মানুষের ন্যায় অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা লুপ্ত করে দেয়। আর ন্যায়-অন্যায়বোধ লুপ্ত মানুষ হয় সমস্ত নীতিজ্ঞান বা বিবেক বিবর্জিত। এর উদাহরণ আমরা বাংলাদেশীরা আমাদের চারিপাশে ব্যক্তি জীবনে বা জাতীয় জীবনে দেখতে পাই। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কারণ আল্লাহ্ মানুষকে বিবেক দান করেছেন। কিন্তু মানুষ যখন তার নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সেই বিবেককে বিসর্জন দেয়, তখন অন্যায়ের পথ, পাপের পথ তার পক্ষে হয় অনেক সহজ, অনেক মসৃণ। নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য যারা পাপ কাজ করে তাদের মানসিক অবস্থা [State of mind] এমনরূপ ধারণ করে যে, সেখানে কোনও ভালো, কোনও ন্যায়, কোনও সত্য প্রবেশ করতে পারে না। [They are impervious to truth and justice] অর্থাৎ তাদের ন্যায় ও সত্য বোঝার ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই আল্লাহ্ বলেছেন যারা শুধুমাত্র জাগতিক লাভ ও নিজস্ব স্বার্থের জন্য পাপ করে তাদের ক্ষতি সাধারণ পাপীদের থেকে অনেক বেশি। কারণ তারা তাদের আত্মাকে বিক্রি করে দেয় স্বার্থপরতার কাছে।
আয়াতঃ 002.082
পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে।
And those who believe (in the Oneness of Allâh ÊÚÇáì – Islâmic Monotheism) and do righteous good deeds, they are dwellers of Paradise, they will dwell therein forever.
وَالَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ أُولَـئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
Waallatheena amanoo waAAamiloo alssalihati ola-ika as-habu aljannati hum feeha khalidoona
YUSUFALI: But those who have faith and work righteousness, they are companions of the Garden: Therein shall they abide (For ever).
PICKTHAL: And those who believe and do good works: such are rightful owners of the Garden. They will abide therein.
SHAKIR: And (as for) those who believe and do good deeds, these are the dwellers of the garden; in it they shall abide.
KHALIFA: As for those who believe, and lead a righteous life, they will be the dwellers of Paradise; they abide in it forever.
৮২। কিন্তু যাদের আছে ঈমান এবং যারা সৎকাজ করে, তারা হবে [বেহেশতের] বাগানের অধিবাসী। সেখানে তারা [চিরদিন] থাকবে।
রুকু – ১০
৮৩। এবং স্মরণ কর, আমি বনী ইসরাঈলীদের নিকট থেকে [এই মর্মে] অঙ্গীকার নিয়েছিলাম ৮৭ যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করবে না; পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন এবং এতিম ও অভাবগ্রস্থের সাথে সদয় ব্যবহার করবে। মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলবে। সালাতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যাকাত দেয়ার অভ্যাস গঠন করবে। অতঃপর তোমাদের মাঝে স্বল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা [তা থেকে] মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এবং [এখন পর্যন্ত] তোমরা পতিত হয়ে আছ।
৮৭। উপরের আয়াতে বলা হচ্ছে যে সেই সব নির্দেশের কথা যা তাওরাতে আল্লাহ্ হযরত মুসাকে দিয়েছিলেন। আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, একত্ববাদে ঈমান, পিতা-মাতা, এতিম বালক-বালিকা ও দীন-দরিদ্রের সেবা যত্ন করা, সব মানুষের ভালর জন্য কথা বলা এবং যাকাত দেওয়া ইসলামী শরীয়তসহ পূর্ববর্তী শরিয়তসমূহেও বিদ্যমান ছিল। অর্থাৎ এইসব নৈতিক অনুশাসন সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বজাতির জন্য প্রযোজ্য [Universal]। যদি কেউ আল্লাহ্র এই আইন অমান্য বা লঙ্ঘন করে, তবে আল্লাহ্র শাস্তি সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। কারও জন্য তা লাঘব করা হবে না। [২ : ৮৬]।
‘মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলবে’ বা ‘Speak fair to the people’ কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ। এর আবেদন অনেক গভীর। শুধুমাত্র বাহ্যিক ভালো ব্যবহার চরিত্রের নম্রতা প্রকাশ করে না। এর অর্থ অনেক গভীর, অনেক ব্যাপক। নিপীড়িত, বঞ্চিত ও শোষিত এদের সাথে শুধু ভাল ব্যবহারই যথেষ্ট নয়, এদের অধিকারের জন্য কথা বলা, দুঃখীর সান্তনার জন্য কথা বলা, দুঃখ মোচনের জন্য কাজ করা, সত্য গোপন না করে সত্যর জন্য কথা বলা, এ সবই এই আয়াতটির দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ যেখানেই মানুষের প্রতি অন্যায় অবিচার হতে দেখা যাবে সেখানেই আল্লাহ্ নির্দেশ অনুযায়ী তার পাশে দাঁড়াতে হবে, তার হয়ে কথা বলতে হবে।
আয়াতঃ 002.083
যখন আমি বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্বজন, এতীম ও দীন-দরিদ্রদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দেবে, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে, তোমরাই অগ্রাহ্যকারী।
And (remember) when We took a covenant from the Children of Israel, (saying): Worship none but Allâh (Alone) and be dutiful and good to parents, and to kindred, and to orphans and Al-Masâkîn (the poor), [Tafsir At-Tabarî, Vol. 10, Page 158 (Verse 9:60)] and speak good to people [i.e. enjoin righteousness and forbid evil, and say the truth about Muhammad Peace be upon him ], and perform As-Salât (Iqâmat-as-Salât), and give Zakât. Then you slid back, except a few of you, while you are backsliders. (Tafsir Al-Qurtubî, Vol. 2, Page 392).
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لاَ تَعْبُدُونَ إِلاَّ اللّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسْناً وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلاَّ قَلِيلاً مِّنكُمْ وَأَنتُم مِّعْرِضُونَ
Wa-ith akhathna meethaqa banee isra-eela la taAAbudoona illa Allaha wabialwalidayni ihsanan wathee alqurba waalyatama waalmasakeeni waqooloo lilnnasi husnan waaqeemoo alssalata waatoo alzzakata thumma tawallaytum illa qaleelan minkum waantum muAAridoona
YUSUFALI: And remember We took a covenant from the Children of Israel (to this effect): Worship none but Allah; treat with kindness your parents and kindred, and orphans and those in need; speak fair to the people; be steadfast in prayer; and practise regular charity. Then did ye turn back, except a few among you, and ye backslide (even now).
PICKTHAL: And (remember) when We made a covenant with the Children of Israel, (saying): Worship none save Allah (only), and be good to parents and to kindred and to orphans and the needy, and speak kindly to mankind; and establish worship and pay the poor-due. Then, after that, ye slid back, save a few of you, being averse.
SHAKIR: And when We made a covenant with the children of Israel: You shall not serve any but Allah and (you shall do) good to (your) parents, and to the near of kin and to the orphans and the needy, and you shall speak to men good words and keep up prayer and pay the poor-rate. Then you turned back except a few of you and (now too) you turn aside.
KHALIFA: We made a covenant with the Children of Israel: “You shall not worship except GOD. You shall honor your parents and regard the relatives, the orphans, and the poor. You shall treat the people amicably. You shall observe the Contact Prayers (Salat) and give the obligatory charity (Zakat).” But you turned away, except a few of you, and you became averse.
৮২। কিন্তু যাদের আছে ঈমান এবং যারা সৎকাজ করে, তারা হবে [বেহেশতের] বাগানের অধিবাসী। সেখানে তারা [চিরদিন] থাকবে।
রুকু – ১০
৮৩। এবং স্মরণ কর, আমি বনী ইসরাঈলীদের নিকট থেকে [এই মর্মে] অঙ্গীকার নিয়েছিলাম ৮৭ যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করবে না; পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন এবং এতিম ও অভাবগ্রস্থের সাথে সদয় ব্যবহার করবে। মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলবে। সালাতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যাকাত দেয়ার অভ্যাস গঠন করবে। অতঃপর তোমাদের মাঝে স্বল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা [তা থেকে] মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এবং [এখন পর্যন্ত] তোমরা পতিত হয়ে আছ।
৮৭। উপরের আয়াতে বলা হচ্ছে যে সেই সব নির্দেশের কথা যা তাওরাতে আল্লাহ্ হযরত মুসাকে দিয়েছিলেন। আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, একত্ববাদে ঈমান, পিতা-মাতা, এতিম বালক-বালিকা ও দীন-দরিদ্রের সেবা যত্ন করা, সব মানুষের ভালর জন্য কথা বলা এবং যাকাত দেওয়া ইসলামী শরীয়তসহ পূর্ববর্তী শরিয়তসমূহেও বিদ্যমান ছিল। অর্থাৎ এইসব নৈতিক অনুশাসন সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বজাতির জন্য প্রযোজ্য [Universal]। যদি কেউ আল্লাহ্র এই আইন অমান্য বা লঙ্ঘন করে, তবে আল্লাহ্র শাস্তি সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। কারও জন্য তা লাঘব করা হবে না। [২ : ৮৬]।
‘মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলবে’ বা ‘Speak fair to the people’ কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ। এর আবেদন অনেক গভীর। শুধুমাত্র বাহ্যিক ভালো ব্যবহার চরিত্রের নম্রতা প্রকাশ করে না। এর অর্থ অনেক গভীর, অনেক ব্যাপক। নিপীড়িত, বঞ্চিত ও শোষিত এদের সাথে শুধু ভাল ব্যবহারই যথেষ্ট নয়, এদের অধিকারের জন্য কথা বলা, দুঃখীর সান্তনার জন্য কথা বলা, দুঃখ মোচনের জন্য কাজ করা, সত্য গোপন না করে সত্যর জন্য কথা বলা, এ সবই এই আয়াতটির দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ যেখানেই মানুষের প্রতি অন্যায় অবিচার হতে দেখা যাবে সেখানেই আল্লাহ্ নির্দেশ অনুযায়ী তার পাশে দাঁড়াতে হবে, তার হয়ে কথা বলতে হবে।
আয়াতঃ 002.084
যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা পরস্পর খুনাখুনি করবে না এবং নিজেদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করবে না, তখন তোমরা তা স্বীকার করেছিলে এবং তোমরা তার সাক্ষ্য দিচ্ছিলে।
And (remember) when We took your covenant (saying): Shed not the blood of your people, nor turn out your own people from their dwellings. Then, (this) you ratified and (to this) you bear witness.
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ لاَ تَسْفِكُونَ دِمَاءكُمْ وَلاَ تُخْرِجُونَ أَنفُسَكُم مِّن دِيَارِكُمْ ثُمَّ أَقْرَرْتُمْ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ
Wa-ith akhathna meethaqakum la tasfikoona dimaakum wala tukhrijoona anfusakum min diyarikum thumma aqrartum waantum tashhadoona
YUSUFALI: And remember We took your covenant (to this effect): Shed no blood amongst you, nor turn out your own people from your homes: and this ye solemnly ratified, and to this ye can bear witness.
PICKTHAL: And when We made with you a covenant (saying): Shed not the blood of your people nor turn (a party of) your people out of your dwellings. Then ye ratified (Our covenant) and ye were witnesses (thereto).
SHAKIR: And when We made a covenant with you: You shall not shed your blood and you shall not turn your people out of your cities; then you gave a promise while you witnessed.
KHALIFA: We made a covenant with you, that you shall not shed your blood, nor shall you evict each other from your homes. You agreed and bore witness.
৮৪। এবং স্মরণ কর, আমি [এই মর্মে] তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, ৮৮ নিজেদের মধ্যে রক্তপাত ঘটাবে না, নিজ সম্প্রদায়কে দেশ ছাড়া করবে না। তোমরা তা শ্রদ্ধার সাথে অনুমোদন করেছিলে এবং এ বিষয়ে তোমরাই ছিলে সাক্ষী।
৮৮। [২ : ৮৩] আয়াতটি হচ্ছে সার্বজনীন। পূর্বের আয়াতে যে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছিল [২:৮৪], আয়াতে তারই পরিশিষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে। এই পরিশিষ্টে বলা হচ্ছে যে, মদিনায় হযরত মুহম্মদের (দঃ) নেতৃত্বে যে মুসলিম সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়েছে, তাদের সাথে মদিনার ইহুদীরা চুক্তিতে আসে যার শর্তগুলি আয়াতে [২:৮৪] বর্ণিত হয়েছে। চুক্তিটি ইব্নে হিশামের সিরাত-উর-রসূল এবং আমীর আলীর স্পিরিট অফ ইসলাম গ্রন্থে [পৃষ্ঠা ৫৭-৬১ লন্ডন ১৯২২] বর্ণিত আছে। হিযরতের দ্বিতীয় বর্ষে মদিনায় ইহুদীরা বিশ্বাস ঘাতকতা করে এবং ঐ চুক্তি লঙ্ঘন করে। সে সম্পর্কে এখানে বলা হয়েছে।
আয়াতঃ 002.085
অতঃপর তোমরাই পরস্পর খুনাখুনি করছ এবং তোমাদেরই একদলকে তাদের দেশ থেকে বহিস্কার করছ। তাদের বিরুদ্ধে পাপ ও অন্যায়ের মাধ্যমে আক্রমণ করছ। আর যদি তারাই কারও বন্দী হয়ে তোমাদের কাছে আসে, তবে বিনিময় নিয়ে তাদের মুক্ত করছ। অথচ তাদের বহিস্কার করাও তোমাদের জন্য অবৈধ। তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।
After this, it is you who kill one another and drive out a party of you from their homes, assist (their enemies) against them, in sin and transgression. And if they come to you as captives, you ransom them, although their expulsion was forbidden to you. Then do you believe in a part of the Scripture and reject the rest? Then what is the recompense of those who do so among you, except disgrace in the life of this world, and on the Day of Resurrection they shall be consigned to the most grievous torment. And Allâh is not unaware of what you do.
ثُمَّ أَنتُمْ هَـؤُلاء تَقْتُلُونَ أَنفُسَكُمْ وَتُخْرِجُونَ فَرِيقاً مِّنكُم مِّن دِيَارِهِمْ تَظَاهَرُونَ عَلَيْهِم بِالإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَإِن يَأتُوكُمْ أُسَارَى تُفَادُوهُمْ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْكُمْ إِخْرَاجُهُمْ أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاء مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ إِلاَّ خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
Thumma antum haola-i taqtuloona anfusakum watukhrijoona fareeqan minkum min diyarihim tathaharoona AAalayhim bial-ithmi waalAAudwani wa-in ya/tookum osara tufadoohum wahuwa muharramun AAalaykum ikhrajuhum afatu/minoona bibaAAdi alkitabi watakfuroona bibaAAdin fama jazao man yafAAalu thalika minkum illa khizyun fee alhayati alddunya wayawma alqiyamati yuraddoona ila ashaddi alAAathabi wama Allahu bighafilin AAamma taAAmaloona
YUSUFALI: After this it is ye, the same people, who slay among yourselves, and banish a party of you from their homes; assist (Their enemies) against them, in guilt and rancour; and if they come to you as captives, ye ransom them, though it was not lawful for you to banish them. Then is it only a part of the Book that ye believe in, and do ye reject the rest? but what is the reward for those among you who behave like this but disgrace in this life?- and on the Day of Judgment they shall be consigned to the most grievous penalty. For Allah is not unmindful of what ye do.
PICKTHAL: Yet ye it is who slay each other and drive out a party of your people from their homes, supporting one another against them by sin and transgression? – and if they came to you as captives ye would ransom them, whereas their expulsion was itself unlawful for you – Believe ye in part of the Scripture and disbelieve ye in part thereof? And what is the reward of those who do so save ignominy in the life of the world, and on the Day of Resurrection they will be consigned to the most grievous doom. For Allah is not unaware of what ye do.
SHAKIR: Yet you it is who slay your people and turn a party from among you out of their homes, backing each other up against them unlawfully and exceeding the limits; and if they should come to you, as captives you would ransom them– while their very turning out was unlawful for you. Do you then believe in a part of the Book and disbelieve in the other? What then is the re ward of such among you as do this but disgrace in the life of this world, and on the day of resurrection they shall be sent back to the most grievous chastisement, and Allah is not at all heedless of what you do.
KHALIFA: Yet, here you are killing each other, and evicting some of you from their homes, banding against them sinfully and maliciously. Even when they surrendered, you demanded ransom from them. Evicting them was prohibited for you in the first place. Do you believe in part of the scripture and disbelieve in part? What should be the retribution for those among you who do this, except humiliation in this life, and a far worse retribution on the Day of Resurrection? GOD is never unaware of anything you do.
৮৫। এরপরে, তোমরা সেই একই সম্প্রদায়, যারা নিজেরা নিজেদের হত্যা করেছ এবং তোমাদেরই একদলকে তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত করেছ। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও বিদ্বেষ পোষণ করতে, তাদের [শত্রুদের] সাহায্য করছো। এবং তারা যখন বন্দীরূপে তোমাদের নিকট উপস্থিত হয় তখন তোমরা তাদের মুক্তিপণ দাও ৮৯। অথচ তাদের নির্বাসিত করা তোমাদের জন্য বৈধ ছিল না। তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং অবশিষ্টাংশ প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্য যারা এরূপ ব্যবহার করো, এই জীবনে তাদের জন্য অসম্মান ব্যতীত আর কি পুরস্কার আছে? এবং শেষ বিচারের দিনে তাদের ভয়াবহ শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত করা হবে। তোমরা যা কর আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অমনোযোগী নন।
৮৯। বনী ইসরাঈলকে তিনটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রথমতঃ খুনোখুনী না করা, দ্বিতীয়তঃ বহিস্কার অর্থাৎ দেশত্যাগে বাধ্য না করা, তৃতীয়তঃ স্বগোত্রের কেউ কারও হাতে বন্দী হলে অর্থের বিনিময়ে তাকে মুক্ত করা। এই আয়াতটি অনুবাদের সময়ে কেউ কেউ ‘মুক্তিপণ আদায়’ করতো আবার কেউ ‘মুক্তিপণ দিত’ এই অনুবাদ করেছেন। সে সময়ে মদিনায় অনেকগুলি ইহুদী গোত্র বাস করতো। এর মধ্যে আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ প্রায়ই লেগে থাকতো এবং এই সব যুদ্ধ বিগ্রহে উষ্কানী এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিজেদের সুযোগ সুবিধা মত মদদ দেওয়াই ছিল অন্যান্য ইহুদী গোত্রদের কাজ। বিনিময়ে তারা যুদ্ধলব্ধ ধন-সম্পদের হিস্সা পেত। তদুপরি তারা পরাজিতদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতো। ইহুদীরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ফ্যাসাদ প্রায়ই করতো ফলে তারা আল্লাহ্র প্রথম ও দ্বিতীয় আদেশ অমান্য করতো। তৃতীয় আদেশ যদি অনুবাদ হয় মুক্তিপণ নিত অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে মুক্ত করতো, তবে তৃতীয় আদেশও অমান্য করতো কিন্তু যদি অনুবাদ হয় ‘মুক্তিপণ দিত’ অর্থাৎ মুক্ত করার জন্য তারা টাকা পয়সা দিত। সেক্ষেত্রে অনেক অনুবাদকের মতে, ইহুদীরা আল্লাহ্র প্রথম দুটি আদেশ অমান্য করে ধার্মিকতা প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধবন্দী ঘটা করে মুক্ত করতো এবং সে জন্য চাঁদা প্রদান করতো। অথচ যুদ্ধ না করার ও অযথা নির্বাসন না দেওয়ার ওয়াদা ভঙ্গ করতে তারা দ্বিধাবোধ করে নাই।
এই আয়াতটির সার্বজনীন উপদেশ হচ্ছে একদিকে আল্লাহ্র হুকুম অমান্য করা অন্যদিকে ধার্মিকতা প্রদর্শন করা ইহুদীদের এই মানসিকতা সর্বকালে সর্বস্থানে পৃথিবীর বহু জাতির মধ্যে দেখা যায়। যেমন-আমাদের দেশে অসৎ পথে অর্জিত অর্থে দান-ধ্যান করে ধার্মিকতা প্রদর্শন করে। অথচ অসৎ পথে অর্থ উপার্জন আল্লাহ্র নিষেধ। এই নিষেধ ভঙ্গ করতে দ্বিধাবোধ করে না; কিন্তু সে অর্থে ধার্মিকতা প্রদর্শনে আত্মতৃপ্তি পায় এ রকম উদাহরণ পৃথিবীর বহু জাতির মধ্যে বিদ্যমান।
আয়াতঃ 002.086
এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে। অতএব এদের শাস্তি লঘু হবে না এবং এরা সাহায্যও পাবে না।
Those are they who have bought the life of this world at the price of the Hereafter. Their torment shall not be lightened nor shall they be helped.
أُولَـئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُاْ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالآَخِرَةِ فَلاَ يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلاَ هُمْ يُنصَرُونَ
Ola-ika allatheena ishtarawoo alhayata alddunya bial-akhirati fala yukhaffafu AAanhumu alAAathabu wala hum yunsaroona
YUSUFALI: These are the people who buy the life of this world at the price of the Hereafter: their penalty shall not be lightened nor shall they be helped.
PICKTHAL: Such are those who buy the life of the world at the price of the Hereafter. Their punishment will not be lightened, neither will they have support.
SHAKIR: These are they who buy the life of this world for the hereafter, so their chastisement shall not be lightened nor shall they be helped.
KHALIFA: It is they who bought this lowly life at the expense of the Hereafter. Consequently, the retribution is never commuted for them, nor can they be helped.
৮৬। এরাই তারা, যারা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে ক্রয় করে থাকে। তাদের শাস্তিকে লঘু করা হবে না অথবা তাদের সাহায্যও করা হবে না।
রুকু – ১১
৮৭। আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তাকে অনুসরণ করে পর্যায়ক্রমে রাসূল প্রেরণ করেছি। আমি মরিয়ম পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট [প্রমাণ] দান করেছি এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিশালী করেছি ৯০। তবে কি যখনই কোন রাসূল তোমাদের নিকট এমন কিছু এনেছে যা তোমাদের মনঃপূত হয় নাই, তখনই তোমরা অহংকারে স্ফীত হয়েছ?-এদের কতককে বলেছ প্রতারক এবং অন্যদের করেছ হত্যা ৯১।
৯০। [১৯:১৬-৩৪] এই আয়াতগুলিতে যীশুখৃষ্টের জন্মের বিবরণ দেয়া হয়েছে। কেন তাঁকে ‘মরিয়মের পুত্র’ নামে সম্বোধন করা হয়েছে? ‘স্পষ্ট প্রমাণ’ কি? ‘পবিত্র আত্মা’ কে যা দ্বারা তাঁকে শক্তিশালী করা হয়েছিলো? আমরা কুরআনের এই উক্তি সম্বন্ধে পরে আলোচনা করবো। দেখুন সূরা ৩, আয়াত ৬২ এবং টিকা ৪০১।
৯১। সেকশন ১১-১৩, আয়াত [২:৮৭-১১২] পর্যন্ত সাধারণভাবে কিতাবী লোকদের সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে বিশেষভাবে ইহুদী ও খৃষ্টানদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। খৃষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে যেসব নৈতিক আইনাবলী বিদ্যমান তা ইহুদীদের কিতাব যা আল্লাহ্ মুসাকে দান করেছেন তারই অনুরূপ। হযরত মুহম্মদের (দঃ) ধর্ম ইসলামের শিক্ষা সেই একই স্রষ্টার কাছ থেকে আগত। সুতরাং খৃষ্টান বা ইহুদীদের তা না বোঝার বা না সনাক্ত করার কথা নয়। কিন্তু তাদের অন্ধ অহংকার ও উদ্ধতপনা তাদের ইসলাম গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণ উপদেশ হচ্ছে, অহংকার একটি খারাপ রিপু যা সত্যকে দেখতে, অনুধাবন করতে ও গ্রহণ করতে বাধা দেয়।
আয়াতঃ 002.087
অবশ্যই আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি। এবং তার পরে পর্যায়ক্রমে রসূল পাঠিয়েছি। আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে সুস্পষ্ট মোজেযা দান করেছি এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে শক্তিদান করেছি। অতঃপর যখনই কোন রসূল এমন নির্দেশ নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে, যা তোমাদের মনে ভাল লাগেনি, তখনই তোমরা অহংকার করেছ। শেষ পর্যন্ত তোমরা একদলকে মিথ্যাবাদী বলেছ এবং একদলকে হত্যা করেছ।
And indeed, We gave Mûsa (Moses) the Book and followed him up with a succession of Messengers. And We gave ’Iesa (Jesus), the son of Maryam (Mary), clear signs and supported him with Rûh-ul-Qudus [Jibrael (Gabriel) ]. Is it that whenever there came to you a Messenger with what you yourselves desired not, you grew arrogant? Some, you disbelieved and some, you killed.
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَقَفَّيْنَا مِن بَعْدِهِ بِالرُّسُلِ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ أَفَكُلَّمَا جَاءكُمْ رَسُولٌ بِمَا لاَ تَهْوَى أَنفُسُكُمُ اسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيقاً كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقاً تَقْتُلُونَ
Walaqad atayna moosa alkitaba waqaffayna min baAAdihi bialrrusuli waatayna AAeesa ibna maryama albayyinati waayyadnahu biroohi alqudusi afakullama jaakum rasoolun bima la tahwa anfusukumu istakbartum fafareeqan kaththabtum wafareeqan taqtuloona
YUSUFALI: We gave Moses the Book and followed him up with a succession of messengers; We gave Jesus the son of Mary Clear (Signs) and strengthened him with the holy spirit. Is it that whenever there comes to you a messenger with what ye yourselves desire not, ye are puffed up with pride?- Some ye called impostors, and others ye slay!
PICKTHAL: And verily We gave unto Moses the Scripture and We caused a train of messengers to follow after him, and We gave unto Jesus, son of Mary, clear proofs (of Allah’s sovereignty), and We supported him with the Holy spirit. Is it ever so, that, when there cometh unto you a messenger (from Allah) with that which ye yourselves desire not, ye grow arrogant, and some ye disbelieve and some ye slay?
SHAKIR: And most certainly We gave Musa the Book and We sent messengers after him one after another; and We gave Isa, the son of Marium, clear arguments and strengthened him with the holy spirit, What! whenever then a messenger came to you with that which your souls did not desire, you were insolent so you called some liars and some you slew.
KHALIFA: We gave Moses the scripture, and subsequent to him we sent other messengers, and we gave Jesus, son of Mary, profound miracles and supported him with the Holy Spirit. Is it not a fact that every time a messenger went to you with anything you disliked, your ego caused you to be arrogant? Some of them you rejected, and some of them you killed.
৮৬। এরাই তারা, যারা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে ক্রয় করে থাকে। তাদের শাস্তিকে লঘু করা হবে না অথবা তাদের সাহায্যও করা হবে না।
রুকু – ১১
৮৭। আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তাকে অনুসরণ করে পর্যায়ক্রমে রাসূল প্রেরণ করেছি। আমি মরিয়ম পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট [প্রমাণ] দান করেছি এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিশালী করেছি ৯০। তবে কি যখনই কোন রাসূল তোমাদের নিকট এমন কিছু এনেছে যা তোমাদের মনঃপূত হয় নাই, তখনই তোমরা অহংকারে স্ফীত হয়েছ?-এদের কতককে বলেছ প্রতারক এবং অন্যদের করেছ হত্যা ৯১।
৯০। [১৯:১৬-৩৪] এই আয়াতগুলিতে যীশুখৃষ্টের জন্মের বিবরণ দেয়া হয়েছে। কেন তাঁকে ‘মরিয়মের পুত্র’ নামে সম্বোধন করা হয়েছে? ‘স্পষ্ট প্রমাণ’ কি? ‘পবিত্র আত্মা’ কে যা দ্বারা তাঁকে শক্তিশালী করা হয়েছিলো? আমরা কুরআনের এই উক্তি সম্বন্ধে পরে আলোচনা করবো। দেখুন সূরা ৩, আয়াত ৬২ এবং টিকা ৪০১।
৯১। সেকশন ১১-১৩, আয়াত [২:৮৭-১১২] পর্যন্ত সাধারণভাবে কিতাবী লোকদের সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে বিশেষভাবে ইহুদী ও খৃষ্টানদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। খৃষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে যেসব নৈতিক আইনাবলী বিদ্যমান তা ইহুদীদের কিতাব যা আল্লাহ্ মুসাকে দান করেছেন তারই অনুরূপ। হযরত মুহম্মদের (দঃ) ধর্ম ইসলামের শিক্ষা সেই একই স্রষ্টার কাছ থেকে আগত। সুতরাং খৃষ্টান বা ইহুদীদের তা না বোঝার বা না সনাক্ত করার কথা নয়। কিন্তু তাদের অন্ধ অহংকার ও উদ্ধতপনা তাদের ইসলাম গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণ উপদেশ হচ্ছে, অহংকার একটি খারাপ রিপু যা সত্যকে দেখতে, অনুধাবন করতে ও গ্রহণ করতে বাধা দেয়।
আয়াতঃ 002.088
তারা বলে, আমাদের হৃদয় অর্ধাবৃত। এবং তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। ফলে তারা অল্পই ঈমান আনে।
And they say, ”Our hearts are wrapped (i.e. do not hear or understand Allâh’s Word).” Nay, Allâh has cursed them for their disbelief, so little is that which they believe.
وَقَالُواْ قُلُوبُنَا غُلْفٌ بَل لَّعَنَهُمُ اللَّه بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلاً مَّا يُؤْمِنُونَ
Waqaloo quloobuna ghulfun bal laAAanahumu Allahu bikufrihim faqaleelan ma yu/minoona
YUSUFALI: They say, “Our hearts are the wrappings (which preserve Allah’s Word: we need no more).” Nay, Allah’s curse is on them for their blasphemy: Little is it they believe.
PICKTHAL: And they say: Our hearts are hardened. Nay, but Allah hath cursed them for their unbelief. Little is that which they believe.
SHAKIR: And they say: Our hearts are covered. Nay, Allah has cursed them on account of their unbelief; so little it is that they believe.
KHALIFA: Some would say, “Our minds are made up!” Instead, it is a curse from GOD, as a consequence of their disbelief, that keeps them from believing, except for a few of them.
৮৮। তারা বলেছিলো, ‘আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত ৯২ [তা আল্লাহ্র বাণীকে সংরক্ষিত করেছে, সুতরাং আমাদের আর প্রয়োজন নাই]।’ না, বরং তাদের আল্লাহ্ নিন্দার জন্য তাদের উপরে আল্লাহ্র অভিশাপ। তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান এনে থাকে ৯৩।
৯২। অহংকার বা অহংবোধ মানুষকে অন্ধ করে তোলে, এর ফলে স্রষ্টার করুণা ও মানুষের আত্মার মাঝে দেয়ালের সৃষ্টি হয়। ইহুদীদের ঠিক সেই অবস্থা হয়েছিলো। তারা বিশ্বাস করতো যে আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞান ও বিবেক দ্বারা একমাত্র তাদের হৃদয়ই পূর্ণ। গর্ব এবং অহংকার তাদের চোখের উপর পর্দা টেনে দিয়েছে-তাই তারা প্রকৃত সত্যকে দেখতে বা অনুধাবন করতে সক্ষম নয়। তাদের দাবী, যে একমাত্র তারাই আল্লাহ্র বাণীর ধারক, বাহক ও রক্ষক। এ শুধু যে মিথ্যা তা-ই নয়, এ এক ধরণের কুফ্রী। বাস্তব সত্য হচ্ছে তারা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তারা অবিশ্বাসী, তারা আল্লাহ্কে বিশ্বাস করে না।
সার্বজনীন উপদেশ হচ্ছে যুগে-যুগে, কালে-কালে, দেশে-দেশে বহু ব্যক্তি, বহু জাতি দেখা যায় যারা ক্ষুদ্র জ্ঞানের অধিকারী হয়ে অহংকারে অন্ধ হয়ে যায় এবং এই অন্ধ অহংকার তাদের জ্ঞানের বৃহত্তর পরিসরে প্রবেশে বাঁধা দান করে। ধর্ম সম্বন্ধে ক্ষুদ্র জ্ঞান তাদের করে তোলে কুসংস্কারাচ্ছন্ন, একগুঁয়ে, অহংকারী। নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবার প্রবণতা জন্মায়। এই মনোভাবের কারণেই যুগে যুগে, কালে-কালে, ধর্ম নিয়ে দ্বন্দ কলহের সৃষ্টি হয়েছে। এই মনোভাব হচ্ছে প্রকৃত কুফরী মনোভাব, অধার্মিকতার বা অবিশ্বাসের মনোভাব। আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহ্র নেয়ামত অফুরন্ত। এই সব মৌলবাদীরা অহংকারের ফলে সেই অফুরন্ত নেয়ামত হৃদয়ে ধারণ করার দরজা বন্ধ করে দেয়। ফলে তারা আল্লাহ্র রোষানলে পতিত হয়।
৯৩। মূল শব্দ ‘কাফারা’ এর অনেক মানে আছে-
১) আল্লাহ্র রহমতকে অস্বীকার করা এবং অকৃতজ্ঞ হওয়া।
২) ধর্মে বিশ্বাস হারানো এবং প্রত্যাদেশকে আল্লাহ্র প্রেরিত বাণীরূপে বিশ্বাস না করা।
৩) এরা আল্লাহ্র সম্পর্কে বহু মনগড়া কথা বলে। ব্যাখ্যা দান করে যা আল্লাহ্র প্রতি নিন্দারূপে আল্লাহ্র চোখে পরিগণিত।
এই লাইনটিতে এর যে কোনও একটি মানে প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু মনে হয় এই লাইনটিতে এর তিনটি অর্থই সমভাবে প্রযোজ্য।
আয়াতঃ 002.089
যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব এসে পৌঁছাল, যা সে বিষয়ের সত্যায়ন করে, যা তাদের কাছে রয়েছে এবং তারা পূর্বে করত। অবশেষে যখন তাদের কাছে পৌঁছল যাকে তারা চিনে রেখেছিল, তখন তারা তা অস্বীকার করে বসল। অতএব, অস্বীকারকারীদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত।
And when there came to them (the Jews), a Book (this Qur’ân) from Allâh confirming what is with them [the Taurât (Torah) and the Injeel (Gospel)], although aforetime they had invoked Allâh (for coming of Muhammad Peace be upon him ) in order to gain victory over those who disbelieved, then when there came to them that which they had recognised, they disbelieved in it. So let the Curse of Allâh be on the disbelievers.
وَلَمَّا جَاءهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِندِ اللّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُواْ مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُواْ فَلَمَّا جَاءهُم مَّا عَرَفُواْ كَفَرُواْ بِهِ فَلَعْنَةُ اللَّه عَلَى الْكَافِرِينَ
Walamma jaahum kitabun min AAindi Allahi musaddiqun lima maAAahum wakanoo min qablu yastaftihoona AAala allatheena kafaroo falamma jaahum ma AAarafoo kafaroo bihi falaAAnatu Allahi AAala alkafireena
YUSUFALI: And when there comes to them a Book from Allah, confirming what is with them,- although from of old they had prayed for victory against those without Faith,- when there comes to them that which they (should) have recognised, they refuse to believe in it but the curse of Allah is on those without Faith.
PICKTHAL: And when there cometh unto them a scripture from Allah, confirming that in their possession – though before that they were asking for a signal triumph over those who disbelieved – and when there cometh unto them that which they know (to be the truth) they disbelieve therein. The curse of Allah is on disbelievers.
SHAKIR: And when there came to them a Book from Allah verifying that which they have, and aforetime they used to pray for victory against those who disbelieve, but when there came to them (Prophet) that which they did not recognize, they disbelieved in him; so Allah’s curse is on the unbelievers.
KHALIFA: When this scripture came to them from GOD, and even though it agrees with, and confirms what they have, and even though they used to prophesy its advent when they talked with the disbelievers, when their own prophecy came to pass, they disbelieved therein. GOD’s condemnation thus afflicts the disbelievers.
৮৯। যখন তাদের নিকট যা [যে কিতাব] আছে তার সমর্থক রূপে আল্লাহ্র তরফ থেকে কিতাব ৯৪ এলো, যদিও প্রাচীন কাল থেকেই তারা এর সাহায্যে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে বিজয় প্রার্থনা করেছিলো-তবুও যখন তাদের নিকট তা আসলো, যা তাদের সনাক্ত করা [উচিত] ছিলো, [কিন্তু] তারা তা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করলো। ফলে যাদের ঈমান নাই আল্লাহ্র অভিশাপ তাদের উপরে [পতিত হলো]।
৯৪। ইহুদীরা বিশ্বাস করে তারা সকলের থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ কারণ অন্য সকলেই অবিশ্বাসী (বিধর্মী), শুধুমাত্র ইহুদীরাই প্রকৃত বিশ্বাসী (ধার্মিক)। কারণ পৃথিবীতে একমাত্র তারাই প্রথম ঐশী গ্রন্থ বা কিতাবপ্রাপ্ত জাতি। কোরআনকে তাওরাতের ‘মুসাদ্দিক’ (সত্যায়নকারী) বলা হয়েছে। এর কারণ এই যে, তাওরাতে মুহম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাব ও কুরআন অবতরণের যে সব ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে কুরআনের মাধ্যমে সেগুলির সতত্যা প্রমাণিত হয়েছে। যে মৌলিক নীতিমালার কথা তাওরাতে বলা হয়েছে, তার সাথে বক্তব্যে, ভাষাতে কুরআনের এত সামঞ্জস্য যে, কুরআন পড়ে যে কোনও ইহুদীর বোঝা উচিত যে, এটা তাওরাতে ‘মুসাদ্দিক’। অর্থাৎ তাওরাতের সম্প্রসারণ ও সত্যায়নকারী। সুতরাং যারা তাওরাতকে স্বীকার করে তারা কিছুতেই কুরআন ও মুহম্মদকে (দঃ) অস্বীকার করতে পারে না। তা করতে গেলে তাওরাতকে অস্বীকার করতে হয়। কিন্তু উদ্ধত এবং অহংকারী ইহুদীরা তাই-ই করে। তারা সত্যকে অস্বীকার করে। এই অবিশ্বাসের জন্যই ইহুদীদের উপর আল্লাহ্র অভিসম্পাত এবং তারা আল্লাহ্র রহমত থেকে বঞ্চিত এবং এই মনোভাব যদি গ্রহণ করি, তবে আমরাও পরম করুণাময়ের করুণা থেকে বঞ্চিত হব।
আয়াতঃ 002.090
যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিক্রি করেছে, তা খুবই মন্দ; যেহেতু তারা আল্লাহ যা নযিল করেছেন, তা অস্বীকার করেছে এই হঠকারিতার দরুন যে, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ নাযিল করেন। অতএব, তারা ক্রোধের উপর ক্রোধ অর্জন করেছে। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
How bad is that for which they have sold their ownselves, that they should disbelieve in that which Allâh has revealed (the Qur’ân), grudging that Allâh should reveal of His Grace unto whom He will of His slaves. So they have drawn on themselves wrath upon wrath. And for the disbelievers, there is disgracing torment.
بِئْسَمَا اشْتَرَوْاْ بِهِ أَنفُسَهُمْ أَن يَكْفُرُواْ بِمَا أنَزَلَ اللّهُ بَغْياً أَن يُنَزِّلُ اللّهُ مِن فَضْلِهِ عَلَى مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ فَبَآؤُواْ بِغَضَبٍ عَلَى غَضَبٍ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ مُّهِينٌ
Bi/sama ishtaraw bihi anfusahum an yakfuroo bima anzala Allahu baghyan an yunazzila Allahu min fadlihi AAala man yashao min AAibadihi fabaoo bighadabin AAala ghadabin walilkafireena AAathabun muheenun
YUSUFALI: Miserable is the price for which they have sold their souls, in that they deny (the revelation) which Allah has sent down, in insolent envy that Allah of His Grace should send it to any of His servants He pleases: Thus have they drawn on themselves Wrath upon Wrath. And humiliating is the punishment of those who reject Faith.
PICKTHAL: Evil is that for which they sell their souls: that they should disbelieve in that which Allah hath revealed, grudging that Allah should reveal of His bounty unto whom He will of His slaves. They have incurred anger upon anger. For disbelievers is a shameful doom.
SHAKIR: Evil is that for which they have sold their souls– that they should deny what Allah has revealed, out of envy that Allah should send down of His grace on whomsoever of His servants He pleases; so they have made themselves deserving of wrath upon wrath, and there is a disgraceful punishment for the unbelievers.
KHALIFA: Miserable indeed is what they sold their souls for – rejecting these revelations of GOD out of sheer resentment that GOD should bestow His grace upon whomever He chooses from among His servants. Consequently, they incurred wrath upon wrath. The disbelievers have incurred a humiliating retribution.
৯০। তা হচ্ছে কত নিকৃষ্ট মূল্য যার বিনিময়ে তারা তাদের আত্মাকে বিক্রী করেছে – উহা এই যে, আল্লাহ্ যে প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছেন প্রতিহিংসায় উম্মত্ত হয়ে তারা তা অস্বীকার করে, এই কারণে যে, আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহ দান করে থাকেন ৯৫। এভাবে তারা ক্রোধের উপর ক্রোধ আকর্ষণ করেছে। যারা ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের জন্য আছে অপমানজনক শাস্তি।
৯৫। জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ববোধ, অন্ধ অহংকার, উদ্ধত দৃষ্টিভঙ্গী ইহুদীদের কুরআনের সত্যকে গ্রহণ করতে বাঁধা দান করেছে। কারণ, কুরআন এবং হযরত মুহম্মদ (দঃ) তাদের জাতির বাইরের একজন। তাদের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী একমাত্র তারাই শ্রেষ্ঠ জাতি। সুতরাং আল্লাহ্র কিতাব পাওয়ার অধিকারী একমাত্র তারাই। এখানে সার্বজনীন উপদেশ হচ্ছে, জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের (Racial arrogance) দাবী তা কি আজকের পৃথিবীতে অনুপস্থিত? অনুপস্থিত নয়, আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির মধ্যে এই বিকৃত মানসিকতার সন্ধান পাই। বিকৃত এই জন্য যে এ ধরণের দৃষ্টিভঙ্গী আল্লাহ্র খুব অপছন্দ। আজকের পৃথিবীতে মৌলবাদী মুসলমানদের আমরা ঐ ইহুদীদের মতই দাবী করতে দেখি যে, মুসলমান নামের দরুণই আমরা বেহেশ্তে যাব। অন্য সব ধর্মের লোকেরা দোযখে যাবে। কিন্তু [২:৬২] আয়াতে আল্লাহ্ পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছেন যে, যে কেউ একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং পৃথিবীর কাজকর্মের জন্য পরকালের জবাবদিহিতাতে বিশ্বাস করবে এবং স্রষ্টার সৃষ্টির সেবার জন্য সৎ কাজ করবে সেই বেহেশ্তের অধিকারী হবে। এখানে কোনও নির্দিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠীর কথা বলা হয় নাই।
সুতরাং মানুষ কিভাবে সীমানা নির্ধারণ করে, কে বেহেশ্তে যাবে আর কে যাবে না? আল্লাহ্ এই বিশাল বিশ্বভূবনের মালিক। তিনিই এর নিয়ন্তা, পরিচালক ও পালনকর্তা। বেহেশ্ত দোযখের সীমা নির্ধারণ করার ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই। সুতরাং এভাবে যারা আল্লাহ্র আদেশ লঙ্ঘন করে তারা ইহুদী, খৃষ্টান বা মুসলিম যে সম্প্রদায়েরই হোক না কেন তারা সবাই আল্লাহ্র রোষানলে পতিত হবে।
আয়াতঃ 002.091
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা পাঠিয়েছেন তা মেনে নাও, তখন তারা বলে, আমরা মানি যা আমাদের প্রতি অবর্তীণ হয়েছে। সেটি ছাড়া সবগুলোকে তারা অস্বীকার করে। অথচ এ গ্রন্থটি সত্য এবং সত্যায়ন করে ঐ গ্রন্থের যা তাদের কাছে রয়েছে। বলে দিন, তবে তোমরা ইতিপূর্বে পয়গম্বরদের হত্যা করতে কেন যদি তোমরা বিশ্বাসী ছিলে?
And when it is said to them (the Jews), ”Believe in what Allâh has sent down,” they say, ”We believe in what was sent down to us.” And they disbelieve in that which came after it, while it is the truth confirming what is with them. Say (O Muhammad Peace be upon him to them): ”Why then have you killed the Prophets of Allâh aforetime, if you indeed have been believers?”
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ بِمَا أَنزَلَ اللّهُ قَالُواْ نُؤْمِنُ بِمَآ أُنزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرونَ بِمَا وَرَاءهُ وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقاً لِّمَا مَعَهُمْ قُلْ فَلِمَ تَقْتُلُونَ أَنبِيَاء اللّهِ مِن قَبْلُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
Wa-itha qeela lahum aminoo bima anzala Allahu qaloo nu/minu bima onzila AAalayna wayakfuroona bima waraahu wahuwa alhaqqu musaddiqan lima maAAahum qul falima taqtuloona anbiyaa Allahi min qablu in kuntum mu/mineena
YUSUFALI: When it is said to them, “Believe in what Allah Hath sent down, “they say, “We believe in what was sent down to us:” yet they reject all besides, even if it be Truth confirming what is with them. Say: “Why then have ye slain the prophets of Allah in times gone by, if ye did indeed believe?”
PICKTHAL: And when it is said unto them: Believe in that which Allah hath revealed, they say: We believe in that which was revealed unto us. And they disbelieve in that which cometh after it, though it is the truth confirming that which they possess. Say (unto them, O Muhammad): Why then slew ye the prophets of Allah aforetime, if ye are (indeed) believers?
SHAKIR: And when it is said to them, Believe in what Allah has revealed, they say: We believe in that which was revealed to us; and they deny what is besides that, while it is the truth verifying that which they have. Say: Why then did you kill Allah’s Prophets before if you were indeed believers?
KHALIFA: When they are told, “You shall believe in these revelations of GOD,” they say, “We believe only in what was sent down to us.” Thus, they disbelieve in subsequent revelations, even if it is the truth from their Lord, and even though it confirms what they have! Say, “Why then did you kill GOD’s prophets, if you were believers?”
৯১। যখন তাদের বলা হয়, ‘আল্লাহ যা প্রেরণ করেছেন তাতে বিশ্বাস স্থাপন কর।’ তারা বলে, ‘আমাদের প্রতি যা প্রেরণ করা হয়েছে, আমরা তাতে বিশ্বাস করি।’ এবং এর পরে যা এসেছে তাতে তারা ঈমান আনে না, যদিও এটাই [প্রকৃত] সত্য এবং যা তাদের নিকট আছে তার সত্যায়নকারী। বল, ‘যদি তোমরা প্রকৃতই বিশ্বাসী ছিলে তবে কেন অতীতে তোমরা আল্লাহ্র নবীগণকে হত্যা করেছিলে?’ ৯৬
৯৬। ইহুদীদের এই জাতিগত আভিজাত্য যা তারা দাবী করে তা তাদের কাজের দ্বারা প্রমাণিত হয় না। কারণ ইহুদীরা তাদের নিজ গোষ্ঠীভূত বহু পয়গম্বরকে হত্যা করেছে। যখনই তাদের নিজেদের মতের সাথে সত্যের বিরোধ হয়েছে তখনই তারা তাদের হত্যা করেছে। অথচ এসব পয়গম্বরেরা বিশেষভাবে তাওরাতের শিক্ষাই প্রচার করতেন। এসব হত্যাকারীদেরই ইহুদীরা নেতা ও পুরোহিত মনে করেছে। এভাবে তারা তাওরাতের সাথে কুফ্রী করেছে। সুতরাং তাওরাতের প্রতি ঈমান আনার দাবী অসার প্রতিপন্ন হয়। মোটকথা তাদের কথা ও কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
[এখানে সর্বজনীন শিক্ষা হচ্ছে, এই মানসিকতা আমরা এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির মধ্যে দেখতে পাই। আমাদের কাজ বিচার বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে কেন মুসলিম জাতি বা সম্প্রদায় আজ পৃথিবীব্যাপী এত লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার। একটু তলিয়ে চিন্তা করলেই দেখা যায় যে আজ মুসলিম সমাজ প্রকৃত সত্যের আলো থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। আজ মুসলিম সমাজ কুরআনের সত্য থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে তাদের পৃথিবীব্যাপী এত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা।
আয়াতঃ 002.092
সুস্পষ্ট মু’জেযাসহ মূসা তোমাদের কাছে এসেছেন। এরপর তার অনুপস্থিতিতে তোমরা গোবৎস বানিয়েছ। বাস্তবিকই তোমরা অত্যাচারী।
And indeed Mûsa (Moses) came to you with clear proofs, yet you worshipped the calf after he left, and you were Zâlimûn (polytheists and wrong-doers).
وَلَقَدْ جَاءكُم مُّوسَى بِالْبَيِّنَاتِ ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِن بَعْدِهِ وَأَنتُمْ ظَالِمُونَ
Walaqad jaakum moosa bialbayyinati thumma ittakhathtumu alAAijla min baAAdihi waantum thalimoona
YUSUFALI: There came to you Moses with clear (Signs); yet ye worshipped the calf (Even) after that, and ye did behave wrongfully.
PICKTHAL: And Moses came unto you with clear proofs (of Allah’s Sovereignty), yet, while he was away, ye chose the calf (for worship) and ye were wrong-doers.
SHAKIR: And most certainly Musa came to you with clear arguments, then you took the calf (for a god) in his absence and you were unjust.
KHALIFA: Moses went to you with profound miracles, yet you worshiped the calf in his absence, and you turned wicked.
৯২। তোমাদের নিকট মুসা এসেছিলো স্পষ্ট [প্রমাণ] সহ। এর পরেও তোমরা গোবৎসের পূঁজা করেছিলে এবং তোমরা পাপিষ্ঠের [ন্যায়] আচরণ করেছিল।
৯৩। এবং স্মরণ কর, আমি তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং আমি [উচ্চ সিনাই] পর্বতকে তোমাদের উর্দ্ধে উত্তোলন করেছিলাম, [বলেছিলাম]: “আমি তোমাদের যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং [আইনের প্রতি] মনোযোগী হও। “৯৭। তারা বলেছিল ” আমরা শুনলাম এবং আমরা অমান্য করলাম ৯৮। ” [ফলে] কুফরী হেতু তাদের হৃদয়ে গোবৎসের প্রতি প্রীতি সঞ্চিত হয়েছিলো ৯৯।বলঃ” তা কতই না নিকৃষ্ট যা তোমাদের ঈমান তোমাদেরকে নির্দ্দেশ দেয়, [অবশ্য] যদি তোমাদের কোন ঈমান থাকে।”
৯৭+৯৮। [:৬৩] আয়াতের এবং [:৯৩] আয়াতের আরাম্ভ এক। কিন্তু সূচনা এক হলেও, এই দুই আয়াতের ভিন্ন প্রেক্ষাপট যুক্তির সাহায্যে উত্থাপন করা হয়েছে। [:৬৩] আয়াতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সিনাই পর্বতের নীচে তারা আল্লাহ্র সাথে যে পবিত্র চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল পরর্বতী যুগে কেমনভাবে তারা চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এই আয়াতে [:৯৩] সেই একই চুক্তি কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে সেই থেকে তারা চুক্তিটিকে অন্তরের সাথে গ্রহণ করে নাই। তারা মুখে বলে, “আল্লাহ্র সব হুকুম আমরা মানবো”, কিন্তু তারা মনে মনে বলে “আমরা অস্বীকার করবো,”কিন্তু তাদের অন্তর থেকে বলা উচিত ছিল, ” আমরা যা শুনলাম সবই মেনে চলবো।” কথা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য না করা হচ্ছে মুত্তাকী বা বিশ্বাসী লোকের লক্ষণ [:২৮৫]।
৯৯। হযরত মুসা তুর পর্বতে কিতাবপ্রাপ্ত হওয়ার পর ফিরে এসে ইহুদীদের পবিত্র গ্রন্থের চুক্তিসমূহ মেনে চলার নির্দেশ দেন এবং ইহুদীরা অঙ্গীকার করেছিল যে তারা তাওরাতের অনুশাসন মেনে চলবে। তার অবর্তমানে ইহুদীরা সোনার গো-বৎস বানিয়ে পূজা করতে থাকে। হযরত মুসা ফিরে এসে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে যান এবং সোনার গো-বৎসকে আগুনে পুড়িয়ে গুড়ো করে পানিতে মিশিয়ে ইহুদীদের খেতে বাধ্য করেন, এই ঘটনাকে কোরআনে উপমার সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে। সোনার গো-বৎস হচ্ছে আল্লাহ্র হুকুম না মানার, অবাধ্যতার, বিদ্রোহ এবং অবিশ্বাসের প্রতীক। একে তুলনা করা যায় সামান্য পরিমাণ বিষের প্রভূত ক্ষতি সাধন করার ক্ষমতার সাথে। গো-বৎস পূজার শাস্তি ছিলো ঐ বিষবৎ পানীয় পান করা। এই বিষ তারা পান করলো তাদের পাকস্থলীতে নয়; তাদের হৃদয়ে। আল্লাহর চোখে তাদের অপবিত্র, উদ্ধত, অহংকারী আত্মার বিনাশ হতে হবে। তাদের হতে হবে বিনয়ী [:৫৪]
আয়াতঃ 002.093
আর যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিলাম এবং তুর পর্বতকে তোমাদের উপর তুলে ধরলাম যে, শক্ত করে ধর, আমি যা তোমাদের দিয়েছি আর শোন। তারা বলল, আমরা শুনেছি আর অমান্য করেছি। কুফরের কারণে তাদের অন্তরে গোবৎসপ্রীতি পান করানো হয়েছিল। বলে দিন, তোমরা বিশ্বাসী হলে, তোমাদের সে বিশ্বাস মন্দ বিষয়াদি শিক্ষা দেয়।
And (remember) when We took your covenant and We raised above you the Mount (saying), ”Hold firmly to what We have given you and hear (Our Word). They said, ”We have heard and disobeyed.” And their hearts absorbed (the worship of) the calf because of their disbelief. Say: ”Worst indeed is that which your faith enjoins on you if you are believers.”
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّورَ خُذُواْ مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاسْمَعُواْ قَالُواْ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَأُشْرِبُواْ فِي قُلُوبِهِمُ الْعِجْلَ بِكُفْرِهِمْ قُلْ بِئْسَمَا يَأْمُرُكُمْ بِهِ إِيمَانُكُمْ إِن كُنتُمْ مُّؤْمِنِينَ
Wa-ith akhathna meethaqakum warafaAAna fawqakumu alttoora khuthoo ma ataynakum biquwwatin waismaAAoo qaloo samiAAna waAAasayna waoshriboo fee quloobihimu alAAijla bikufrihim qul bi/sama ya/murukum bihi eemanukum in kuntum mu/mineena
YUSUFALI: And remember We took your covenant and We raised above you (the towering height) of Mount (Sinai): (Saying): “Hold firmly to what We have given you, and hearken (to the Law)”: They said:” We hear, and we disobey:” And they had to drink into their hearts (of the taint) of the calf because of their Faithlessness. Say: “Vile indeed are the behests of your Faith if ye have any faith!”
PICKTHAL: And when We made with you a covenant and caused the Mount to tower above you, (saying): Hold fast by that which We have given you, and hear (Our Word), they said: We hear and we rebel. And (worship of) the calf was made to sink into their hearts because of their rejection (of the covenant). Say (unto them): Evil is that which your belief enjoineth on you, if ye are believers.
SHAKIR: And when We made a covenant with you and raised the mountain over you: Take hold of what We have given you with firmness and be obedient. They said: We hear and disobey. And they were made to imbibe (the love of) the calf into their hearts on account of their unbelief Say: Evil is that which your belief bids you if you are believers.
KHALIFA: We made a covenant with you, as we raised Mount Sinai above you, saying, “You shall uphold the commandments we have given you, strongly, and listen.” They said, “We hear, but we disobey.” Their hearts became filled with adoration for the calf, due to their disbelief. Say, “Miserable indeed is what your faith dictates upon you, if you do have any faith.”
৯২। তোমাদের নিকট মুসা এসেছিলো স্পষ্ট [প্রমাণ] সহ। এর পরেও তোমরা গোবৎসের পূঁজা করেছিলে এবং তোমরা পাপিষ্ঠের [ন্যায়] আচরণ করেছিল।
৯৩। এবং স্মরণ কর, আমি তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং আমি [উচ্চ সিনাই] পর্বতকে তোমাদের উর্দ্ধে উত্তোলন করেছিলাম, [বলেছিলাম]: “আমি তোমাদের যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং [আইনের প্রতি] মনোযোগী হও। “৯৭। তারা বলেছিল ” আমরা শুনলাম এবং আমরা অমান্য করলাম ৯৮। ” [ফলে] কুফরী হেতু তাদের হৃদয়ে গোবৎসের প্রতি প্রীতি সঞ্চিত হয়েছিলো ৯৯।বলঃ” তা কতই না নিকৃষ্ট যা তোমাদের ঈমান তোমাদেরকে নির্দ্দেশ দেয়, [অবশ্য] যদি তোমাদের কোন ঈমান থাকে।”
৯৭+৯৮। [:৬৩] আয়াতের এবং [:৯৩] আয়াতের আরাম্ভ এক। কিন্তু সূচনা এক হলেও, এই দুই আয়াতের ভিন্ন প্রেক্ষাপট যুক্তির সাহায্যে উত্থাপন করা হয়েছে। [:৬৩] আয়াতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সিনাই পর্বতের নীচে তারা আল্লাহ্র সাথে যে পবিত্র চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল পরর্বতী যুগে কেমনভাবে তারা চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এই আয়াতে [:৯৩] সেই একই চুক্তি কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে সেই থেকে তারা চুক্তিটিকে অন্তরের সাথে গ্রহণ করে নাই। তারা মুখে বলে, “আল্লাহ্র সব হুকুম আমরা মানবো”, কিন্তু তারা মনে মনে বলে “আমরা অস্বীকার করবো,”কিন্তু তাদের অন্তর থেকে বলা উচিত ছিল, ” আমরা যা শুনলাম সবই মেনে চলবো।” কথা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য না করা হচ্ছে মুত্তাকী বা বিশ্বাসী লোকের লক্ষণ [:২৮৫]।
৯৯। হযরত মুসা তুর পর্বতে কিতাবপ্রাপ্ত হওয়ার পর ফিরে এসে ইহুদীদের পবিত্র গ্রন্থের চুক্তিসমূহ মেনে চলার নির্দেশ দেন এবং ইহুদীরা অঙ্গীকার করেছিল যে তারা তাওরাতের অনুশাসন মেনে চলবে। তার অবর্তমানে ইহুদীরা সোনার গো-বৎস বানিয়ে পূজা করতে থাকে। হযরত মুসা ফিরে এসে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে যান এবং সোনার গো-বৎসকে আগুনে পুড়িয়ে গুড়ো করে পানিতে মিশিয়ে ইহুদীদের খেতে বাধ্য করেন, এই ঘটনাকে কোরআনে উপমার সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে। সোনার গো-বৎস হচ্ছে আল্লাহ্র হুকুম না মানার, অবাধ্যতার, বিদ্রোহ এবং অবিশ্বাসের প্রতীক। একে তুলনা করা যায় সামান্য পরিমাণ বিষের প্রভূত ক্ষতি সাধন করার ক্ষমতার সাথে। গো-বৎস পূজার শাস্তি ছিলো ঐ বিষবৎ পানীয় পান করা। এই বিষ তারা পান করলো তাদের পাকস্থলীতে নয়; তাদের হৃদয়ে। আল্লাহর চোখে তাদের অপবিত্র, উদ্ধত, অহংকারী আত্মার বিনাশ হতে হবে। তাদের হতে হবে বিনয়ী [:৫৪]
আয়াতঃ 002.094
বলে দিন, যদি আখেরাতের বাসস্থান আল্লাহর কাছে একমাত্র তোমাদের জন্যই বরাদ্দ হয়ে থাকে-অন্য লোকদের বাদ দিয়ে, তবে মৃত্যু কামনা কর, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক।
Say to (them): ”If the home of the Hereafter with Allâh is indeed for you specially and not for others, of mankind, then long for death if you are truthful.”
قُلْ إِن كَانَتْ لَكُمُ الدَّارُ الآَخِرَةُ عِندَ اللّهِ خَالِصَةً مِّن دُونِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُاْ الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
Qul in kanat lakumu alddaru al-akhiratu AAinda Allahi khalisatan min dooni alnnasi fatamannawoo almawta in kuntum sadiqeena
YUSUFALI: Say: “If the last Home, with Allah, be for you specially, and not for anyone else, then seek ye for death, if ye are sincere.”
PICKTHAL: Say (unto them): If the abode of the Hereafter in the providence of Allah is indeed for you alone and not for others of mankind (as ye pretend), then long for death (for ye must long for death) if ye are truthful.
SHAKIR: Say: If the future abode with Allah is specially for you to the exclusion of the people, then invoke death if you are truthful.
KHALIFA: Say, “If the abode of the Hereafter is reserved for you at GOD, to the exclusion of all other people, then you should long for death, if you are truthful.”
৯৪। বল, “যদি আল্লাহ্র নিকট অবস্থিত আখিরাতের আবাসস্থল অন্য লোকের না হয়ে বিশেষভাবে শুধু তোমাদের জন্যই হয়ে থাকে; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর-যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
৯৫। কিন্তু তারা কখনও মৃত্যু কামনা করবে না, কারণ হচ্ছে তাদের [পাপ কর্ম] যা তাদের হাতসমূহ তাদের পূর্বেই [আল্লাহ্র নিকট] প্রেরণ করেছে ১০০। আল্লাহ্ পাপীদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন।
১০০। ‘Which their hands have sent on before them’ মওলানা ইউসুফ আলী লাইনটি এভাবে উপস্থাপন করেছেন “[তাদের পাপ] যা তাদের হাত সমূহ তাদের পূর্বেই আল্লাহ্ নিকট প্রেরণ করেছে।” কথাটার অর্থ অনেক ব্যাপক, মহাকালের গর্ভে কিছুই হারায় না । আমরা মৃত্যুর পরে আল্লাহর দরবারে নীত হব। কিন্তু আমাদের পৃথিবীতে কৃতকর্মগুলি আমাদের মৃত্যুর বহুপূর্বে সাথে সাথেই আল্লাহ্র দরবারে নীত হয়। “তাদের হাত যা পূর্বে প্রেরণ করেছে”- এই কথাটি কুরআন শরীফে বহুবার বলা হয়েছে। আমাদের সু-কর্ম বা কু-কর্ম সবই আল্লাহ্র দরবারে তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে যায়। এর কিছু উদাহরণ দেওয়া যায় বর্তমানে ইন্টারনেট, ফ্যাক্স ইত্যাদির সাহায্যে পৃথিবীর এক প্রান্তের সংবাদ মূহুর্তের মধ্যে পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। সুতরাং আমরা কি করি, আমরা কি ভাবি, কি আমাদের কাজের নিয়ত সব আমাদের চিন্তাধারার সাথে সংম্পৃক্ত। আর এই চিন্তাধারা ঐ ইন্টানেটের মত মূহুর্তের মধ্যে আল্লাহ্র দরবারে নীত হয়, কারণ আল্লাহ্ বারে বারে বলেছেন যে আল্লাহ্ আমাদের কাজের বিচার করবেন তার নিয়ত দ্বারা কাজ দ্বারা নয়। এখানে এবং কুরআনে বহু স্থানে বলা হয়েছে যে মানুষের সুপ্ত এবং গুপ্ত সব পাপ কার্যই আল্লাহ্র দরবারে তার মৃত্যুর পূর্বেই নীত হয়, সূরা [৭:৪০] অথবা [৮:১৪] বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে পৃথিবীতে আমাদের কৃত ভালো কাজ ও মন্দ কাজ আমাদের মৃত্যুর বহু পূর্বেই তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহ্র দরবারে বিচারাধীন হওয়ার জন্য ফাইলবন্দী হয়ে নীত হয়। আমাদের এই কৃতকর্ম হবে আমাদের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। আল্লাহ্র দরবারে আমাদের কৃতকর্ম সবই আমাদের মৃত্যুর পূর্বেই আমাদের এই পৃথিবীতে অবস্থান সময়েই মহান আল্লাহ্র দরবারে পৌঁছে যাবে। আমরা বুঝতে পারি বা নাই পারি এর ফলাফল এই পৃথিবীতেই আমাদের জীবনে পেতে শুরু করি। আমরা দেখি সৎ আল্লাহ ভীরু লোকের জীবন শান্তিতে ভরে যায়। অপরপক্ষে, জাগতিক উন্নতি সত্ত্বেও অসৎ অধার্মিক লোকের শান্তি (Bliss) আসে না কারণ আত্মার শান্তির পূর্বশর্ত হচ্ছে আত্মিক উন্নতি [Spiritual growth] আবার আত্মার [Spiritual faculty] সমৃদ্ধির পূর্বশর্তই হচ্ছে সততা ও সৎ কাজ। আল্লাহ্র নিয়তে যারা সততা অবলম্বন করে ও সৎ কাজ করে তাদের সেই নিয়ত ও কাজ তার মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহর দরবারে নীত হয় এবং আল্লাহ্ তাদের আত্মিক সমৃদ্ধি দান করেন। ফলশ্রুতিতে তারা আত্মার মাঝে শান্তি খুঁজে পায়। অপর পক্ষে যারা শুধু জাগতিক মোহে অসৎ ও অধার্মিকতার পথ অবলম্বন করে তাদের সেই নিয়ত বা চিন্তাধারাও আল্লাহ্র দরবারে তাদের মৃত্যুর পূর্বেই নীত হয়। ফলে তাদের আত্মিক উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে তারা ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আত্মিক শান্তি থেকে বঞ্চিত হয় এবং এক ধরনের আত্মিক যন্ত্রণাতে ভোগে।
আয়াতঃ 002.095
কস্মিনকালেও তারা মৃত্যু কামনা করবে না ঐসব গোনাহর কারণে, যা তাদের হাত পাঠিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ গোনাহগারদের সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন।
But they will never long for it because of what their hands have sent before them (i.e. what they have done). And Allâh is All-Aware of the Zâlimûn (polytheists and wrong-doers).
وَلَن يَتَمَنَّوْهُ أَبَدًا بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ وَاللّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمينَ
Walan yatamannawhu abadan bima qaddamat aydeehim waAllahu AAaleemun bialththalimeena
YUSUFALI: But they will never seek for death, on account of the (sins) which their hands have sent on before them. and Allah is well-acquainted with the wrong-doers.
PICKTHAL: But they will never long for it, because of that which their own hands have sent before them. Allah is aware of evil-doers.
SHAKIR: And they will never invoke it on account of what their hands have sent before, and Allah knows the unjust.
KHALIFA: They never long for it, because of what their hands have sent forth. GOD is fully aware of the wicked.
৯৪। বল, “যদি আল্লাহ্র নিকট অবস্থিত আখিরাতের আবাসস্থল অন্য লোকের না হয়ে বিশেষভাবে শুধু তোমাদের জন্যই হয়ে থাকে; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর-যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
৯৫। কিন্তু তারা কখনও মৃত্যু কামনা করবে না, কারণ হচ্ছে তাদের [পাপ কর্ম] যা তাদের হাতসমূহ তাদের পূর্বেই [আল্লাহ্র নিকট] প্রেরণ করেছে ১০০। আল্লাহ্ পাপীদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন।
১০০। ‘Which their hands have sent on before them’ মওলানা ইউসুফ আলী লাইনটি এভাবে উপস্থাপন করেছেন “[তাদের পাপ] যা তাদের হাত সমূহ তাদের পূর্বেই আল্লাহ্ নিকট প্রেরণ করেছে।” কথাটার অর্থ অনেক ব্যাপক, মহাকালের গর্ভে কিছুই হারায় না । আমরা মৃত্যুর পরে আল্লাহর দরবারে নীত হব। কিন্তু আমাদের পৃথিবীতে কৃতকর্মগুলি আমাদের মৃত্যুর বহুপূর্বে সাথে সাথেই আল্লাহ্র দরবারে নীত হয়। “তাদের হাত যা পূর্বে প্রেরণ করেছে”- এই কথাটি কুরআন শরীফে বহুবার বলা হয়েছে। আমাদের সু-কর্ম বা কু-কর্ম সবই আল্লাহ্র দরবারে তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে যায়। এর কিছু উদাহরণ দেওয়া যায় বর্তমানে ইন্টারনেট, ফ্যাক্স ইত্যাদির সাহায্যে পৃথিবীর এক প্রান্তের সংবাদ মূহুর্তের মধ্যে পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। সুতরাং আমরা কি করি, আমরা কি ভাবি, কি আমাদের কাজের নিয়ত সব আমাদের চিন্তাধারার সাথে সংম্পৃক্ত। আর এই চিন্তাধারা ঐ ইন্টানেটের মত মূহুর্তের মধ্যে আল্লাহ্র দরবারে নীত হয়, কারণ আল্লাহ্ বারে বারে বলেছেন যে আল্লাহ্ আমাদের কাজের বিচার করবেন তার নিয়ত দ্বারা কাজ দ্বারা নয়। এখানে এবং কুরআনে বহু স্থানে বলা হয়েছে যে মানুষের সুপ্ত এবং গুপ্ত সব পাপ কার্যই আল্লাহ্র দরবারে তার মৃত্যুর পূর্বেই নীত হয়, সূরা [৭:৪০] অথবা [৮:১৪] বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে পৃথিবীতে আমাদের কৃত ভালো কাজ ও মন্দ কাজ আমাদের মৃত্যুর বহু পূর্বেই তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহ্র দরবারে বিচারাধীন হওয়ার জন্য ফাইলবন্দী হয়ে নীত হয়। আমাদের এই কৃতকর্ম হবে আমাদের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। আল্লাহ্র দরবারে আমাদের কৃতকর্ম সবই আমাদের মৃত্যুর পূর্বেই আমাদের এই পৃথিবীতে অবস্থান সময়েই মহান আল্লাহ্র দরবারে পৌঁছে যাবে। আমরা বুঝতে পারি বা নাই পারি এর ফলাফল এই পৃথিবীতেই আমাদের জীবনে পেতে শুরু করি। আমরা দেখি সৎ আল্লাহ ভীরু লোকের জীবন শান্তিতে ভরে যায়। অপরপক্ষে, জাগতিক উন্নতি সত্ত্বেও অসৎ অধার্মিক লোকের শান্তি (Bliss) আসে না কারণ আত্মার শান্তির পূর্বশর্ত হচ্ছে আত্মিক উন্নতি [Spiritual growth] আবার আত্মার [Spiritual faculty] সমৃদ্ধির পূর্বশর্তই হচ্ছে সততা ও সৎ কাজ। আল্লাহ্র নিয়তে যারা সততা অবলম্বন করে ও সৎ কাজ করে তাদের সেই নিয়ত ও কাজ তার মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহর দরবারে নীত হয় এবং আল্লাহ্ তাদের আত্মিক সমৃদ্ধি দান করেন। ফলশ্রুতিতে তারা আত্মার মাঝে শান্তি খুঁজে পায়। অপর পক্ষে যারা শুধু জাগতিক মোহে অসৎ ও অধার্মিকতার পথ অবলম্বন করে তাদের সেই নিয়ত বা চিন্তাধারাও আল্লাহ্র দরবারে তাদের মৃত্যুর পূর্বেই নীত হয়। ফলে তাদের আত্মিক উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে তারা ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আত্মিক শান্তি থেকে বঞ্চিত হয় এবং এক ধরনের আত্মিক যন্ত্রণাতে ভোগে।
আয়াতঃ 002.096
আপনি তাদেরকে জীবনের প্রতি সবার চাইতে, এমনকি মুশরিকদের চাইতেও অধিক লোভী দেখবেন। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে, যেন হাজার বছর আয়ু পায়। অথচ এরূপ আয়ু প্রাপ্তি তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ দেখেন যা কিছু তারা করে।
And verily, you will find them (the Jews) the greediest of mankind for life and (even greedier) than those who – ascribe partners to Allâh (and do not believe in Resurrection – Magians, pagans, and idolaters, etc.). Everyone of them wishes that he could be given a life of a thousand years. But the grant of such life will not save him even a little from (due) punishment. And Allâh is All-Seer of what they do.
وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَى حَيَاةٍ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِ مِنَ الْعَذَابِ أَن يُعَمَّرَ وَاللّهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ
Walatajidannahum ahrasa alnnasi AAala hayatin wamina allatheena ashrakoo yawaddu ahaduhum law yuAAammaru alfa sanatin wama huwa bimuzahzihihi mina alAAathabi an yuAAammara waAllahu baseerun bima yaAAmaloona
YUSUFALI: Thou wilt indeed find them, of all people, most greedy of life,-even more than the idolaters: Each one of them wishes He could be given a life of a thousand years: But the grant of such life will not save him from (due) punishment. For Allah sees well all that they do.
PICKTHAL: And thou wilt find them greediest of mankind for life and (greedier) than the idolaters. (Each) one of them would like to be allowed to live a thousand years. And to live (a thousand years) would be no means remove him from the doom. Allah is Seer of what they do.
SHAKIR: And you will most certainly find them the greediest of men for life (greedier) than even those who are polytheists; every one of them loves that he should be granted a life of a thousand years, and his being granted a long life will in no way remove him further off from the chastisement, and Allah sees what they do.
KHALIFA: In fact, you will find them the most covetous of life; even more so than the idol worshipers. The one of them wishes to live a thousand years. But this will not spare him any retribution, no matter how long he lives. GOD is seer of everything they do.
৯৬। তুমি তাদের নিশ্চই জীবনের প্রতি, সমস্ত মানুষ এমনকি মুশরিকদের অপেক্ষা অধিক লোভী দেখবে। এদের প্রত্যেকে আকাঙ্খা করে যদি হাজার বৎসর পরমায়ু দেয়া হতো। কিন্তু এরূপ দীর্ঘায়ু তাদের [প্রাপ্য] শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। কারণ তারা যা করে আল্লাহ্ সব দেখেন।
রুকু – ১২
৯৭। বল, “যে কেউ জিব্রাইলের শত্রু এই জন্য যে, সে ১০১ আল্লাহ্র নির্দেশে তোমার হৃদয়ে [প্রত্যাদেশ] অবতীর্ণ করেছে যা, উহার পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং যা মুমিনদের জন্য পথ প্রদর্শক ও শুভ সংবাদ।”
১০১। জিব্রাইল (আ) ওহী নিয়ে আগমন করেন, একথা রাসুল্লাহ (সাঃ) এর মুখে শুনে কতক ইহুদী বলতে থাকে, ইনি তো আমাদের শুত্রু: আমাদের সম্প্রদায়ের প্রলয়ঙ্কারী ঘটনাবলী এবং প্রাণান্তকর নির্দেশাবলী তার মাধ্যমেই অবতীর্ণ হয়েছে। পক্ষান্তরে মীকাঈল (আঃ) অত্যন্ত গুণী ফেরেশ্তা, তিনি বৃষ্টি ও রহমতের সাথে জড়িত। তিনি ওহী নিয়ে এলে আমরা তাকে মেনে নিতাম। এটা অবশ্যই একটা ভণ্ডামী – তারা আল্লাহ্র প্রেরিত একজন দূতকে মানবে, অন্য দূতকে প্রত্যাখান করবে, সেটা তো ভণ্ডামীরই লক্ষণ। হযরত মুহাম্মদের [সাঃ] অন্তরে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ পৌঁছে দিয়েছেন জিব্রাইল (আঃ)। আধ্যাত্মিক আলোয় মুহাম্মদের (দঃ) অন্তর আল্লাহ্ আলোকিত করেছেন জিব্রাইলের দ্বারা। সুতরাং জিব্রাইলের বৈশিষ্ট্য না দেখে স্বয়ং কুরআনকে দেখা দরকার এবং দেখা দরকার মানুষ হিসাবে নবী করিমের নিষ্কলুষ, উজ্জ্বল চারিত্রিক গুণাবলী। আমাদের নিরক্ষর নবীর কিতাব পাওয়া, কোনও রকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীত আমাদের নবীর চারিত্রিক গুণাবলী, তার প্রজ্ঞা, জ্ঞান সবই সেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র অসীম ক্ষমতার ইঙ্গিত বহন করে। সবচেয়ে বড় কথা কোরআন [এর অবস্থান এই যে] সে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহের সত্যায়ন করে, এবং কিতাবপ্রাপ্ত জাতিদের পথ প্রদর্শন করে ও মুমিনদের সুসংবাদ দেয়। আসমানী কিতাবসমূহের অবস্থা তাই-ই হয়ে থাকে। সুতরাং জিব্রাইলের দোহাই দিয়ে এই আসমানী কিতাবে বিশ্বাস স্থাপন না করার অর্থই হচ্ছে এ সবই ইহুদীদের কপটতা বা ছলনা।
আয়াতঃ 002.097
আপনি বলে দিন, যে কেউ জিবরাঈলের শত্রু হয়-যেহেতু তিনি আল্লাহর আদেশে এ কালাম আপনার অন্তরে নাযিল করেছেন, যা সত্যায়নকারী তাদের সম্মুখস্থ কালামের এবং মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা।
Say (O Muhammad Peace be upon him ): ”Whoever is an enemy to Jibrael (Gabriel) (let him die in his fury), for indeed he has brought it (this Qur’ân) down to your heart by Allâh’s Permission, confirming what came before it [i.e. the Taurât (Torah) and the Injeel (Gospel)] and guidance and glad tidings for the believers.
قُلْ مَن كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيلَ فَإِنَّهُ نَزَّلَهُ عَلَى قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللّهِ مُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَبُشْرَى لِلْمُؤْمِنِينَ
Qul man kana AAaduwwan lijibreela fa-innahu nazzalahu AAala qalbika bi-ithni Allahi musaddiqan lima bayna yadayhi wahudan wabushra lilmu/mineena
YUSUFALI: Say: Whoever is an enemy to Gabriel-for he brings down the (revelation) to thy heart by Allah’s will, a confirmation of what went before, and guidance and glad tidings for those who believe,-
PICKTHAL: Say (O Muhammad, to mankind): Who is an enemy to Gabriel! For he it is who hath revealed (this Scripture) to thy heart by Allah’s leave, confirming that which was (revealed) before it, and a guidance and glad tidings to believers;
SHAKIR: Say: Whoever is the enemy of Jibreel– for surely he revealed it to your heart by Allah’s command, verifying that which is before it and guidance and good news for the believers.
KHALIFA: Say, “Anyone who opposes Gabriel should know that he has brought down this (Quran) into your heart, in accordance with GOD’s will, confirming previous scriptures, and providing guidance and good news for the believers.”
৯৬। তুমি তাদের নিশ্চই জীবনের প্রতি, সমস্ত মানুষ এমনকি মুশরিকদের অপেক্ষা অধিক লোভী দেখবে। এদের প্রত্যেকে আকাঙ্খা করে যদি হাজার বৎসর পরমায়ু দেয়া হতো। কিন্তু এরূপ দীর্ঘায়ু তাদের [প্রাপ্য] শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। কারণ তারা যা করে আল্লাহ্ সব দেখেন।
রুকু – ১২
৯৭। বল, “যে কেউ জিব্রাইলের শত্রু এই জন্য যে, সে ১০১ আল্লাহ্র নির্দেশে তোমার হৃদয়ে [প্রত্যাদেশ] অবতীর্ণ করেছে যা, উহার পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং যা মুমিনদের জন্য পথ প্রদর্শক ও শুভ সংবাদ।”
১০১। জিব্রাইল (আ) ওহী নিয়ে আগমন করেন, একথা রাসুল্লাহ (সাঃ) এর মুখে শুনে কতক ইহুদী বলতে থাকে, ইনি তো আমাদের শুত্রু: আমাদের সম্প্রদায়ের প্রলয়ঙ্কারী ঘটনাবলী এবং প্রাণান্তকর নির্দেশাবলী তার মাধ্যমেই অবতীর্ণ হয়েছে। পক্ষান্তরে মীকাঈল (আঃ) অত্যন্ত গুণী ফেরেশ্তা, তিনি বৃষ্টি ও রহমতের সাথে জড়িত। তিনি ওহী নিয়ে এলে আমরা তাকে মেনে নিতাম। এটা অবশ্যই একটা ভণ্ডামী – তারা আল্লাহ্র প্রেরিত একজন দূতকে মানবে, অন্য দূতকে প্রত্যাখান করবে, সেটা তো ভণ্ডামীরই লক্ষণ। হযরত মুহাম্মদের [সাঃ] অন্তরে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ পৌঁছে দিয়েছেন জিব্রাইল (আঃ)। আধ্যাত্মিক আলোয় মুহাম্মদের (দঃ) অন্তর আল্লাহ্ আলোকিত করেছেন জিব্রাইলের দ্বারা। সুতরাং জিব্রাইলের বৈশিষ্ট্য না দেখে স্বয়ং কুরআনকে দেখা দরকার এবং দেখা দরকার মানুষ হিসাবে নবী করিমের নিষ্কলুষ, উজ্জ্বল চারিত্রিক গুণাবলী। আমাদের নিরক্ষর নবীর কিতাব পাওয়া, কোনও রকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীত আমাদের নবীর চারিত্রিক গুণাবলী, তার প্রজ্ঞা, জ্ঞান সবই সেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র অসীম ক্ষমতার ইঙ্গিত বহন করে। সবচেয়ে বড় কথা কোরআন [এর অবস্থান এই যে] সে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহের সত্যায়ন করে, এবং কিতাবপ্রাপ্ত জাতিদের পথ প্রদর্শন করে ও মুমিনদের সুসংবাদ দেয়। আসমানী কিতাবসমূহের অবস্থা তাই-ই হয়ে থাকে। সুতরাং জিব্রাইলের দোহাই দিয়ে এই আসমানী কিতাবে বিশ্বাস স্থাপন না করার অর্থই হচ্ছে এ সবই ইহুদীদের কপটতা বা ছলনা।
আয়াতঃ 002.098
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাঁর ফেরেশতা ও রসূলগণ এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চিতই আল্লাহ সেসব কাফেরের শত্রু।
”Whoever is an enemy to Allâh, His Angels, His Messengers, Jibrael (Gabriel) and Mikael (Michael), then verily, Allâh is an enemy to the disbelievers.”
مَن كَانَ عَدُوًّا لِّلّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللّهَ عَدُوٌّ لِّلْكَافِرِينَ
Man kana AAaduwwan lillahi wamala-ikatihi warusulihi wajibreela wameekala fa-inna Allaha AAaduwwun lilkafireena
YUSUFALI: Whoever is an enemy to Allah and His angels and messengers, to Gabriel and Michael,- Lo! Allah is an enemy to those who reject Faith.
PICKTHAL: Who is an enemy to Allah, and His angels and His messengers, and Gabriel and Michael! Then, lo! Allah (Himself) is an enemy to the disbelievers.
SHAKIR: Whoever is the enemy of Allah and His angels and His messengers and Jibreel and Meekaeel, so surely Allah is the enemy of the unbelievers.
KHALIFA: Anyone who opposes GOD, and His angels, and His messengers, and Gabriel and Michael, should know that GOD opposes the disbelievers.
৯৮। যে কেউ আল্লাহ্র, তাঁর ফেরেশতাগণের, তাঁর রাসূলগণের এবং জিব্রাইল ও মীকাঈলের শত্রু; সে জেনে রাখুক; যারা ঈমান আনে না আল্লাহ তাদের শত্রু।
৯৯। আমি তোমার প্রতি সুস্পষ্ট নিদর্শন [আয়াতসমূহ] অবতীর্ণ করেছি। বিকৃত স্বভাব সম্পন্ন ব্যতীত আর কেউ তা প্রত্যাখান করে না।
১০০। [ঘটনা] কি এই নয় যে, প্রত্যেক সময় তারা অঙ্গীকার করে, [কিন্তু] তাদের মধ্যে একদল তা ছুঁড়ে ফেলে দেয়? বরং তাদের অধিকাংশই ঈমানহীন।
১০১। যখন তাদের নিকট আল্লাহ্র তরফ থেকে একজন রাসূল এসেছিলো, যে তাদের নিকট যা আছে উহার সমর্থক, কিতাবীদের একদল, আল্লাহ্র কিতাবটিকে পিছনে নিক্ষেপ করলো, যেনো [এটা এমন একটি ঘটনা যা] তারা জানে না ১০২।
১০২। এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি ঈমান না আনার ব্যাপারে একটি বিশেষ অঙ্গীকার ভঙ্গের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তাদের কাছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একজন মহান পয়গম্বর আসলেন এবং কুরআন নাজেল হলো যা ইহুদীদের কাছে যে ধর্মগ্রন্থ [তাওরাত] আছে তাকে সত্যায়ন করে। এ অবস্থায় রসূল করিম (সাঃ) এর প্রতি ঈমান আনা তাওরাতের নির্দেশ পালনেরই নামান্তর ছিল। তাওরাতকে তারাও আল্লাহ্র প্রেরিত গ্রন্থ মনে করতো। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাদের নিজেদের ধর্ম গ্রন্থের বাণীকে অস্বীকার করলো। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী তার পরিবর্তন করলো। যদি তারা আন্তরিক হতো তবে তারা অবশ্যই দেখতে পেতো তাদের ধর্মগ্রন্থের [তাওরাতের] যে বাণী বা নৈতিক নীতিমালা, সে নীতিমালা আমাদের কুরআনের নৈতিক নীতিমালারই অনুরূপ। কারণ সবই একই স্রষ্টার কাছ থেকে আগত। কিন্তু তারা সে চেষ্টা না করে কপটতার আশ্রয় গ্রহণ করলো। সবচেয়ে খারাপ কাজ যেটা তারা করলো তা হচ্ছে মিথ্যা কপটতা ও অমঙ্গলের পথ তারা বেছে নিল। মন্দের দ্বারা তারা প্রভাবিত হয়ে পড়লো। যেমন-তারা [আল্লাহ্র কিতাব অনুসরণ না করে] ম্যাজিক বা যাদুবিদ্যার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লো এবং তারই অনুসরণ করতো। পরবর্তী আয়াতে এ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াতঃ 002.099
আমি আপনার প্রতি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করেছি। অবাধ্যরা ব্যতীত কেউ এগুলো অস্বীকার করে না।
And indeed We have sent down to you manifest Ayât (these Verses of the Qur’ân which inform in detail about the news of the Jews and their secret intentions, etc.), and none disbelieve in them but Fâsiqûn (those who rebel against Allâh’s Command).
وَلَقَدْ أَنزَلْنَآ إِلَيْكَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ وَمَا يَكْفُرُ بِهَا إِلاَّ الْفَاسِقُونَ
Walaqad anzalna ilayka ayatin bayyinatin wama yakfuru biha illa alfasiqoona
YUSUFALI: We have sent down to thee Manifest Signs (ayat); and none reject them but those who are perverse.
PICKTHAL: Verily We have revealed unto thee clear tokens, and only miscreants will disbelieve in them.
SHAKIR: And certainly We have revealed to you clear communications and none disbelieve in them except the transgressors.
KHALIFA: We have sent down to you such clear revelations, and only the wicked will reject them.
৯৮। যে কেউ আল্লাহ্র, তাঁর ফেরেশতাগণের, তাঁর রাসূলগণের এবং জিব্রাইল ও মীকাঈলের শত্রু; সে জেনে রাখুক; যারা ঈমান আনে না আল্লাহ তাদের শত্রু।
৯৯। আমি তোমার প্রতি সুস্পষ্ট নিদর্শন [আয়াতসমূহ] অবতীর্ণ করেছি। বিকৃত স্বভাব সম্পন্ন ব্যতীত আর কেউ তা প্রত্যাখান করে না।
১০০। [ঘটনা] কি এই নয় যে, প্রত্যেক সময় তারা অঙ্গীকার করে, [কিন্তু] তাদের মধ্যে একদল তা ছুঁড়ে ফেলে দেয়? বরং তাদের অধিকাংশই ঈমানহীন।
১০১। যখন তাদের নিকট আল্লাহ্র তরফ থেকে একজন রাসূল এসেছিলো, যে তাদের নিকট যা আছে উহার সমর্থক, কিতাবীদের একদল, আল্লাহ্র কিতাবটিকে পিছনে নিক্ষেপ করলো, যেনো [এটা এমন একটি ঘটনা যা] তারা জানে না ১০২।
১০২। এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি ঈমান না আনার ব্যাপারে একটি বিশেষ অঙ্গীকার ভঙ্গের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তাদের কাছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একজন মহান পয়গম্বর আসলেন এবং কুরআন নাজেল হলো যা ইহুদীদের কাছে যে ধর্মগ্রন্থ [তাওরাত] আছে তাকে সত্যায়ন করে। এ অবস্থায় রসূল করিম (সাঃ) এর প্রতি ঈমান আনা তাওরাতের নির্দেশ পালনেরই নামান্তর ছিল। তাওরাতকে তারাও আল্লাহ্র প্রেরিত গ্রন্থ মনে করতো। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাদের নিজেদের ধর্ম গ্রন্থের বাণীকে অস্বীকার করলো। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী তার পরিবর্তন করলো। যদি তারা আন্তরিক হতো তবে তারা অবশ্যই দেখতে পেতো তাদের ধর্মগ্রন্থের [তাওরাতের] যে বাণী বা নৈতিক নীতিমালা, সে নীতিমালা আমাদের কুরআনের নৈতিক নীতিমালারই অনুরূপ। কারণ সবই একই স্রষ্টার কাছ থেকে আগত। কিন্তু তারা সে চেষ্টা না করে কপটতার আশ্রয় গ্রহণ করলো। সবচেয়ে খারাপ কাজ যেটা তারা করলো তা হচ্ছে মিথ্যা কপটতা ও অমঙ্গলের পথ তারা বেছে নিল। মন্দের দ্বারা তারা প্রভাবিত হয়ে পড়লো। যেমন-তারা [আল্লাহ্র কিতাব অনুসরণ না করে] ম্যাজিক বা যাদুবিদ্যার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লো এবং তারই অনুসরণ করতো। পরবর্তী আয়াতে এ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াতঃ 002.100
কি আশ্চর্য, যখন তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়, তখন তাদের একদল তা ছুঁড়ে ফেলে, বরং অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।
Is it not (the case) that every time they make a covenant, some party among them throw it aside? Nay! the truth is most of them believe not.
أَوَكُلَّمَا عَاهَدُواْ عَهْداً نَّبَذَهُ فَرِيقٌ مِّنْهُم بَلْ أَكْثَرُهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ
Awa kullama AAahadoo AAahdan nabathahu fareequn minhum bal aktharuhum la yu/minoona
YUSUFALI: Is it not (the case) that every time they make a covenant, some party among them throw it aside?- Nay, Most of them are faithless.
PICKTHAL: Is it ever so that when they make a covenant a party of them set it aside? The truth is, most of them believe not.
SHAKIR: What! whenever they make a covenant, a party of them cast it aside? Nay, most of them do not believe.
KHALIFA: Is it not a fact that when they make a covenant and pledge to keep it, some of them always disregard it? In fact, most of them do not believe.
৯৮। যে কেউ আল্লাহ্র, তাঁর ফেরেশতাগণের, তাঁর রাসূলগণের এবং জিব্রাইল ও মীকাঈলের শত্রু; সে জেনে রাখুক; যারা ঈমান আনে না আল্লাহ তাদের শত্রু।
৯৯। আমি তোমার প্রতি সুস্পষ্ট নিদর্শন [আয়াতসমূহ] অবতীর্ণ করেছি। বিকৃত স্বভাব সম্পন্ন ব্যতীত আর কেউ তা প্রত্যাখান করে না।
১০০। [ঘটনা] কি এই নয় যে, প্রত্যেক সময় তারা অঙ্গীকার করে, [কিন্তু] তাদের মধ্যে একদল তা ছুঁড়ে ফেলে দেয়? বরং তাদের অধিকাংশই ঈমানহীন।
১০১। যখন তাদের নিকট আল্লাহ্র তরফ থেকে একজন রাসূল এসেছিলো, যে তাদের নিকট যা আছে উহার সমর্থক, কিতাবীদের একদল, আল্লাহ্র কিতাবটিকে পিছনে নিক্ষেপ করলো, যেনো [এটা এমন একটি ঘটনা যা] তারা জানে না ১০২।
১০২। এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি ঈমান না আনার ব্যাপারে একটি বিশেষ অঙ্গীকার ভঙ্গের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তাদের কাছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একজন মহান পয়গম্বর আসলেন এবং কুরআন নাজেল হলো যা ইহুদীদের কাছে যে ধর্মগ্রন্থ [তাওরাত] আছে তাকে সত্যায়ন করে। এ অবস্থায় রসূল করিম (সাঃ) এর প্রতি ঈমান আনা তাওরাতের নির্দেশ পালনেরই নামান্তর ছিল। তাওরাতকে তারাও আল্লাহ্র প্রেরিত গ্রন্থ মনে করতো। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাদের নিজেদের ধর্ম গ্রন্থের বাণীকে অস্বীকার করলো। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী তার পরিবর্তন করলো। যদি তারা আন্তরিক হতো তবে তারা অবশ্যই দেখতে পেতো তাদের ধর্মগ্রন্থের [তাওরাতের] যে বাণী বা নৈতিক নীতিমালা, সে নীতিমালা আমাদের কুরআনের নৈতিক নীতিমালারই অনুরূপ। কারণ সবই একই স্রষ্টার কাছ থেকে আগত। কিন্তু তারা সে চেষ্টা না করে কপটতার আশ্রয় গ্রহণ করলো। সবচেয়ে খারাপ কাজ যেটা তারা করলো তা হচ্ছে মিথ্যা কপটতা ও অমঙ্গলের পথ তারা বেছে নিল। মন্দের দ্বারা তারা প্রভাবিত হয়ে পড়লো। যেমন-তারা [আল্লাহ্র কিতাব অনুসরণ না করে] ম্যাজিক বা যাদুবিদ্যার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লো এবং তারই অনুসরণ করতো। পরবর্তী আয়াতে এ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াতঃ 002.101
যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রসূল আগমন করলেন-যিনি ঐ কিতাবের সত্যায়ন করেন, যা তাদের কাছে রয়েছে, তখন আহলে কেতাবদের একদল আল্লাহর গ্রন্থকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল-যেন তারা জানেই না।
And when there came to them a Messenger from Allâh (i.e. Muhammad Peace be upon him ) confirming what was with them, a party of those who were given the Scripture threw away the Book of Allâh behind their backs as if they did not know!
وَلَمَّا جَاءهُمْ رَسُولٌ مِّنْ عِندِ اللّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌ مِّنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ كِتَابَ اللّهِ وَرَاء ظُهُورِهِمْ كَأَنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ
Walamma jaahum rasoolun min AAindi Allahi musaddiqun lima maAAahum nabatha fareequn mina allatheena ootoo alkitaba kitaba Allahi waraa thuhoorihim kaannahum la yaAAlamoona
YUSUFALI: And when there came to them a messenger from Allah, confirming what was with them, a party of the people of the Book threw away the Book of Allah behind their backs, as if (it had been something) they did not know!
PICKTHAL: And when there cometh unto them a messenger from Allah, confirming that which they possess, a party of those who have received the Scripture fling the Scripture of Allah behind their backs as if they knew not,
SHAKIR: And when there came to them a Messenger from Allah verifying that which they have, a party of those who were given the Book threw the Book of Allah behind their backs as if they knew nothing.
KHALIFA: Now that a messenger from GOD has come to them, and even though he proves and confirms their own scripture, some followers of the scripture (Jews, Christians, and Muslims) disregard GOD’s scripture behind their backs, as if they never had any scripture.
৯৮। যে কেউ আল্লাহ্র, তাঁর ফেরেশতাগণের, তাঁর রাসূলগণের এবং জিব্রাইল ও মীকাঈলের শত্রু; সে জেনে রাখুক; যারা ঈমান আনে না আল্লাহ তাদের শত্রু।
৯৯। আমি তোমার প্রতি সুস্পষ্ট নিদর্শন [আয়াতসমূহ] অবতীর্ণ করেছি। বিকৃত স্বভাব সম্পন্ন ব্যতীত আর কেউ তা প্রত্যাখান করে না।
১০০। [ঘটনা] কি এই নয় যে, প্রত্যেক সময় তারা অঙ্গীকার করে, [কিন্তু] তাদের মধ্যে একদল তা ছুঁড়ে ফেলে দেয়? বরং তাদের অধিকাংশই ঈমানহীন।
১০১। যখন তাদের নিকট আল্লাহ্র তরফ থেকে একজন রাসূল এসেছিলো, যে তাদের নিকট যা আছে উহার সমর্থক, কিতাবীদের একদল, আল্লাহ্র কিতাবটিকে পিছনে নিক্ষেপ করলো, যেনো [এটা এমন একটি ঘটনা যা] তারা জানে না ১০২।
১০২। এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি ঈমান না আনার ব্যাপারে একটি বিশেষ অঙ্গীকার ভঙ্গের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তাদের কাছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একজন মহান পয়গম্বর আসলেন এবং কুরআন নাজেল হলো যা ইহুদীদের কাছে যে ধর্মগ্রন্থ [তাওরাত] আছে তাকে সত্যায়ন করে। এ অবস্থায় রসূল করিম (সাঃ) এর প্রতি ঈমান আনা তাওরাতের নির্দেশ পালনেরই নামান্তর ছিল। তাওরাতকে তারাও আল্লাহ্র প্রেরিত গ্রন্থ মনে করতো। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাদের নিজেদের ধর্ম গ্রন্থের বাণীকে অস্বীকার করলো। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী তার পরিবর্তন করলো। যদি তারা আন্তরিক হতো তবে তারা অবশ্যই দেখতে পেতো তাদের ধর্মগ্রন্থের [তাওরাতের] যে বাণী বা নৈতিক নীতিমালা, সে নীতিমালা আমাদের কুরআনের নৈতিক নীতিমালারই অনুরূপ। কারণ সবই একই স্রষ্টার কাছ থেকে আগত। কিন্তু তারা সে চেষ্টা না করে কপটতার আশ্রয় গ্রহণ করলো। সবচেয়ে খারাপ কাজ যেটা তারা করলো তা হচ্ছে মিথ্যা কপটতা ও অমঙ্গলের পথ তারা বেছে নিল। মন্দের দ্বারা তারা প্রভাবিত হয়ে পড়লো। যেমন-তারা [আল্লাহ্র কিতাব অনুসরণ না করে] ম্যাজিক বা যাদুবিদ্যার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লো এবং তারই অনুসরণ করতো। পরবর্তী আয়াতে এ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াতঃ 002.102
তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।
They followed what the Shayâtin (devils) gave out (falsely of the magic) in the lifetime of Sulaimân (Solomon). Sulaimân did not disbelieve, but the Shayâtin (devils) disbelieved, teaching men magic and such things that came down at Babylon to the two angels, Hârût and Mârût, but neither of these two (angels) taught anyone (such things) till they had said, ”We are only for trial, so disbelieve not (by learning this magic from us).” And from these (angels) people learn that by which they cause separation between man and his wife, but they could not thus harm anyone except by Allâh’s Leave. And they learn that which harms them and profits them not. And indeed they knew that the buyers of it (magic) would have no share in the Hereafter. And how bad indeed was that for which they sold their ownselves, if they but knew.
وَاتَّبَعُواْ مَا تَتْلُواْ الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُواْ لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْاْ بِهِ أَنفُسَهُمْ لَوْ كَانُواْ يَعْلَمُونَ
ttabaAAoo ma tatloo alshshayateenu AAala mulki sulaymana wama kafara sulaymanu walakinna alshshayateena kafaroo yuAAallimoona alnnasa alssihra wama onzila AAala almalakayni bibabila haroota wamaroota wama yuAAallimani min ahadin hatta yaqoola innama nahnu fitnatun fala takfur fayataAAallamoona minhuma ma yufarriqoona bihi bayna almar-i wazawjihi wama hum bidarreena bihi min ahadin illa bi-ithni Allahi wayataAAallamoona ma yadurruhum wala yanfaAAuhum walaqad AAalimoo lamani ishtarahu ma lahu fee al-akhirati min khalaqin walabi/sa ma sharaw bihi anfusahum law kanoo yaAAlamoona
YUSUFALI: They followed what the evil ones gave out (falsely) against the power of Solomon: the blasphemers Were, not Solomon, but the evil ones, teaching men Magic, and such things as came down at babylon to the angels Harut and Marut. But neither of these taught anyone (Such things) without saying: “We are only for trial; so do not blaspheme.” They learned from them the means to sow discord between man and wife. But they could not thus harm anyone except by Allah’s permission. And they learned what harmed them, not what profited them. And they knew that the buyers of (magic) would have no share in the happiness of the Hereafter. And vile was the price for which they did sell their souls, if they but knew!
PICKTHAL: And follow that which the devils falsely related against the kingdom of Solomon. Solomon disbelieved not; but the devils disbelieved, teaching mankind magic and that which was revealed to the two angels in Babel, Harut and Marut. Nor did they (the two angels) teach it to anyone till they had said: We are only a temptation, therefore disbelieve not (in the guidance of Allah). And from these two (angles) people learn that by which they cause division between man and wife; but they injure thereby no-one save by Allah’s leave. And they learn that which harmeth them and profiteth them not. And surely they do know that he who trafficketh therein will have no (happy) portion in the Hereafter; and surely evil is the price for which they sell their souls, if they but knew.
SHAKIR: And they followed what the Shaitans chanted of sorcery in the reign of Sulaiman, and Sulaiman was not an unbeliever, but the Shaitans disbelieved, they taught men sorcery and that was sent down to the two angels at Babel, Harut and Marut, yet these two taught no man until they had said, “Surely we are only a trial, therefore do not be a disbeliever.” Even then men learned from these two, magic by which they might cause a separation between a man and his wife; and they cannot hurt with it any one except with Allah’s permission, and they learned what harmed them and did not profit them, and certainly they know that he who bought it should have no share of good in the hereafter and evil was the price for which they sold their souls, had they but known this.
KHALIFA: They pursued what the devils taught concerning Solomon’s kingdom. Solomon, however, was not a disbeliever, but the devils were disbelievers. They taught the people sorcery, and that which was sent down through the two angels of Babel, Haroot and Maroot. These two did not divulge such knowledge without pointing out: “This is a test. You shall not abuse such knowledge.” But the people used it in such evil schemes as the breaking up of marriages. They can never harm anyone against the will of GOD. They thus learn what hurts them, not what benefits them, and they know full well that whoever practices witchcraft will have no share in the Hereafter. Miserable indeed is what they sell their souls for, if they only knew.
১০২। সুলাইমানের ক্ষমতার বিরুদ্ধে শয়তানেরা [মিথ্যা ম্যাজিককে] প্রকাশ করতো যার অনুসরণ তারা করতো ১০৩। সুলাইমান আল্লাহ্র নিন্দা করে নাই, করেছিলো শয়তানগণ, তারা মানুষকে শিক্ষা দিত-যাদু এবং এরূপ জিনিষ যা বেবিলন শহরে হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয়ের উপরে অবতীর্ণ করা হয়েছিলো ১০৪। ‘আমরা পরীক্ষা স্বরূপ; সুতরাং [আমাদের নিকট থেকে এ ম্যাজিক শিখে] অবিশ্বাসী হয়ো না;’-এ কথা না বলে তারা কাউকেও [এসব জিনিষ শিক্ষা দিত না। তারা তাদের নিকট থেকে শিক্ষা লাভ করতো যা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করবে। কিন্তু আল্লাহ্র নির্দেশ ব্যতীত এভাবে তারা কারও ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। তারা শিক্ষা লাভ করেছিলো যা তাদের [নিজেদের] ক্ষতি সাধন করবে, কোন উপকারেই আসবে না। আর তারা জানতো যে, যারা [যাদুবিদ্যা] ক্রয় করে পরলোকের সুখ শান্তিতে তাদের কোন অংশ নাই। কত নিকৃষ্ট মূল্য যার বিনিময়ে তারা স্বীয় আত্মাকে বিক্রি করেছে-যদি তারা তা জানতো; ১০৫।
১০৩। এই আয়াতটি পূর্ববর্তী আয়াতের সংযোজিত অংশ। ইহুদীরা আল্লাহ্র ইচ্ছার প্রতিফলন বা আল্লাহ্র কিতাবের অনুসরণ না করে ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করলো, যা হযরত সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানেরা চর্চা করতো। তা হচ্ছে জ্যোতিষ শাস্ত্রের চর্চা ও যাদুবিদ্যা। আল্লাহ্ এগুলি থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। জ্যোতিষ বিদ্যা ও যাদু বিদ্যাতে বিশ্বাস স্থাপন করা কুফ্র। কিন্তু ইহুদীরা হযরত সোলায়মান সম্পর্কে অপূর্ব সব যাদুর কাহিনী চালু করেছিলো। কিন্তু আল্লাহ্ বলেছেন যে হযরত সোলায়মান যাদুতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি শয়তানের শক্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের খোদাভীরু নবী। যারা এইসব অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস করে তারা আল্লাহ্র আইনের বিরোধিতা করে। তারাই সত্যিকারের স্রষ্টার নিন্দুক বা কাফের।
সার্বজনীন উপদেশ হচ্ছে, যে সব জাতি শিক্ষা দীক্ষায় অনগ্রসর এবং সামাজিক জীবনে দারিদ্র এবং অবিচার ও অনাচারের মধ্যে বাস করে, দেখা যায় তাদের মধ্যে স্রষ্টার উপরে নির্ভরশীলতা অপেক্ষা অতিপ্রাকৃত শক্তির উপর নির্ভরশীলতা বেশি হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, বাংলাদেশীদের জাতীয় জীবনে এ ধরনের প্রভাব অত্যন্ত বেশি।
১০৪। এই আয়াতটিকে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। প্রশ্ন জাগে হারূত মারূত কে ছিলেন? তারা কি শিক্ষা দিতেন? মাওলানা ইউসুফ আলী ‘তফসীর হাক্কানী’ ও ‘তফসীর কবীর’- কে অনুসরণ করেছেন। হারূত ও মারূতকে ফেরেশ্তা বলা হয়েছে। ফেরেশ্তা এখানে প্রতীক অর্থে ব্যবহৃত। যার অর্থ করা যায় তারা ছিলেন ভাল মানুষ ও বিভিন্ন জ্ঞানে সমৃদ্ধ। তারা ছিলেন জ্ঞানী এবং বিবেকবান [man of knowledge and wisdom]। তাদের ফেরেশ্তা বলা হচ্ছে এই জন্য যে, প্রাচীনকালে ফেরেশ্তারা ছিলেন পৌরুষের প্রতীক। ফেরেশ্তা সমতুল্য ব্যক্তি হবেন জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ, বিচক্ষণতা, বিবেকে, ক্ষমতায় যারা অপ্রতিদ্বন্ধী। যদি প্রতীকরূপে ধরা হয় তবে হারূত ও মারূত ছিলেন সেইরূপ ব্যক্তি। শঠতা, নীচতা, কপটতার উর্ধ্বে ছিলেন তারা।
হারূত ও মারূত প্রাচীন বেবীলন শহরে বাস করতেন। বেবীলন শহর সেই যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞানের পীঠস্থানরূপে পরিচিত ছিল। ঠিক কখন সে সম্পর্কে সুনিশ্চিত তথ্য জানা না থাকলেও এক সময়ে পৃথিবীতে বিশেষ করে বাবেল শহরে যাদুবিদ্যার যথেষ্ট প্রচলন ছিল। যাদুর অত্যাচার্য ক্রিয়া দেখে মূর্খ লোকদের মধ্যে যাদু ও পয়গম্বরদের মো’জেযার স্বরূপ সম্বন্ধে বিভ্রান্তি দেখা যায়। সে কারণে তারা হযরত সোলায়মান (আঃ) কে যাদু বিদ্যার চর্চা করার কথা বলতো। কিন্তু আল্লাহ্ বলেছেন হযরত সোলায়মান যাদুর র্চচা করতেন না। তিনি ছিলেন সত্যদ্রষ্টা আল্লাহ্ কর্তৃক মোজেযাপ্রাপ্ত পয়গম্বর। কেউ কেউ যাদুকরদেরও সজ্জন ও অনুসরণযোগ্য মনে করতে থাকে। এই বিভ্রান্তি দূর করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তায়ালা বাবেল শহরে হারূত ও মারূত নামে দুজন ফেরেশ্তাকে প্রেরণ করেন। তাদের কাজ ছিল যাদুর স্বরুপ ও ভেল্কিবাজী সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা যাতে বিভ্রান্তি দূর হয় এবং যাদুর আমল, রূপ ও যাদুকরদের অনুসরণ থেকে তারা বিরত থাকতে পারে। মোট কথা ফেরেশ্তাদ্বয় বাবেল শহরে কাজ আরম্ভ করে দিলেন। তারা যাদুর মূল শাখা-প্রশাখার বর্ণনা করে জনগণকে এ কুকর্ম থেকে আত্মরক্ষা ও যাদুকরগণকে ঘৃণা করার উপদেশ দেন। ফেরেশ্তাদ্বয় এ বলে লোকজনদের সাবধান করতেন যে দেখ, আমাদের দ্বারা আল্লাহ্ তায়ালা পরীক্ষা নিতে চান যে, এগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে কে স্বীয় ধর্মের হেফাজত ও সংরক্ষণ করেন এবং কে এগুলো সম্পর্কে অবগত হয়ে নিজেই সে অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে এবং স্বীয় দ্বীন ঈমান বরবাদ করে দেয়। যে জ্ঞান পৃথিবীকে আলোকিত ও শান্তিতে ভরিয়ে দিতে পারে, সেই জ্ঞান দুষ্ট লোকের হাতে পড়লে ক্ষতি সাধন হয়। উদাহরণ স্বরূপ আমরা আমাদের সাম্প্রতিক পৃথিবীতে দেখতে পাই যে, পারমাণবিক জ্ঞান যখন শান্তির কাজে ব্যবহার করা হয় তা হয় মানুষের কল্যাণের জন্য। এই জ্ঞানই আবার পৃথিবীর ধ্বংস যজ্ঞের কারণ হতে পারে। জ্ঞানই শক্তি-আবার এই জ্ঞানই দুষ্ট লোকের হাতে মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জ্ঞান এরূপ পরীক্ষার সম্মুখীন। আল্লাহ্ আমাদে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। হারূত মারূতের মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞান আমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। জ্ঞানকে মানুষ লোভ ও ক্ষমতার জন্য অপব্যবহার করবে না। জ্ঞানকে মানুষ আল্লাহ্র রাস্তায় অর্থাৎ মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করবে। আর একটি উপদেশ হচ্ছে এই যে, জীবনের কোনও অবস্থাতেই কোনও বিপদ-আপদের সম্মুখীন হলেও তা থেকে উদ্ধারের জন্য যাদু-টোনা, ঝাড়-ফুক ও অলৌকিক কিছুর আশ্রয় গ্রহণ করা হারাম ও কুফর। আজ আমাদের বাংলাদেশীদের মধ্যে রত্ন পাথর, ঝাড়-ফুক, মাদুলী – তাবিজ ইত্যাদির অত্যাধিক প্রসার লাভ করেছে। সেই সাথে প্রসার লাভ করেছে পীর-ফকির নামধারী ভন্ড প্রতারকদের, যারা দাবী করে যে তাদের অলৌকিক ক্ষমতাবলে তারা সব মুশকিল আসান করে দিতে পারে। কিন্তু মুসলমাদের কর্তব্য হচ্ছে মুসকিল আসান বা বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য শুধুমাত্র সর্বশক্তিমানের কাছে আত্মসমর্পন করা। তিনি সব মুশকিল-আসানের মালিক। যাদু টোনা বা অলৌকিক কিছুর আশ্রয় গ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ বা হারাম।
১০৫। দুষ্ট লোকেরা হারূত ও মারূতের কাছ থেকে যাদুর স্বরূপ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে তা তাদের দুষ্ট অভিসন্ধি চরিতার্থ করার কাজে নিয়োজিত করে। তাদের প্রতারণা, জালিয়াতি, সাধারণ মানুষের চোখে বিভ্রান্তি ঘটায়। এসব যাদুকরেরা সাধারণভাবে স্ত্রী পুরুষের মধ্যে বিভেদ ঘটানোর জন্য তাদের এই যাদুর ব্যবহার করতো। কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় এসব অলৌকিক কর্মকাণ্ডকে যাদু বলা হয়। যাদু হচ্ছে সেই জিনিষ বা শয়তানের সন্তুষ্টির জন্য করা হয়; যে কাজ সম্পাদনের জন্য শয়তানের সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। কিন্তু মহান আল্লাহ্ আমাদের আস্বস্ত করেছেন যে ওদের ক্ষমতা আল্লাহ্ খুবই সীমিত করেছেন। শয়তানকে এই সীমিত ক্ষমতা আল্লাহ্ দিয়েছেন বেহেশ্ত থেকে বিতাড়িত করার সময়েই। আর আদমকে দেয়া হয়েছিলো সেই স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি যেনো সে স্ব-ইচ্ছায় আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন করে, শয়তানের সন্তুষ্টির জন্য কাজ না করে। যারা শয়তানের কু-প্রভাব থেকে সর্বশক্তিমানের আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করে, আল্লাহ্ তাদের সাহায্য করেন। আল্লাহ্র রহমত ও করুণাধারা তাদের বেষ্টিত করে রাখে। যারা অনুতপ্ত এবং সেই সাথে নিজ কার্যপ্রণালীকে সংশোধনের মাধ্যমে আল্লাহ্র নির্দেশ অন্বেষণ করে; তারা অবশ্যই সমস্ত ক্ষতি, সমস্ত কু-প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ্র আশ্রয় লাভ করে। বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এসব যাদুকর বা ভণ্ড পীরের আশ্রয় প্রার্থনা করার অর্থ হচ্ছে কুফ্র এবং নিজের আত্মার বা আধ্যাত্মিক জীবনের ক্ষতি করা। কিন্তু আল্লাহ্ বলেছেন এসব যাদুকর বা ভণ্ড পীরেরা (যারা ধর্মের নামে মানুষকে ঠকায়) তাদের নিজের আত্মাকে শয়তানের কাছে বিক্রি করে দেয়। তারা অশুভ শক্তির ক্রীতদাসে পরিণত হয়। এই আয়াতে শুধু যে ব্যক্তিগত দু-একজনের কথাই বলা হয়েছে তা নয় বরং এখানে বলা হয়েছে ইহুদীদের এক বিশাল জনগোষ্ঠীর কথা, ঠিক একইভাবে পৃথিবীর যে কোনও অধঃপতিত জাতি সমষ্টিগতভাবে রত্ন-পাথর, যাদু-টোনা, পীর-ফকিরের আধিপত্যে বিশ্বাসী হতে পারে। পরিণামে সে জাতির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। কারন তারা আল্লাহ্র করুণা বা রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।
আয়াতঃ 002.103
যদি তারা ঈমান আনত এবং খোদাভীরু হত, তবে আল্লাহর কাছ থেকে উত্তম প্রতিদান পেত। যদি তারা জানত।
And if they had believed, and guarded themselves from evil and kept their duty to Allâh, far better would have been the reward from their Lord, if they but knew!
وَلَوْ أَنَّهُمْ آمَنُواْ واتَّقَوْا لَمَثُوبَةٌ مِّنْ عِندِ اللَّه خَيْرٌ لَّوْ كَانُواْ يَعْلَمُونَ
Walaw annahum amanoo waittaqaw lamathoobatun min AAindi Allahi khayrun law kanoo yaAAlamoona
YUSUFALI: If they had kept their Faith and guarded themselves from evil, far better had been the reward from their Lord, if they but knew!
PICKTHAL: And if they had believed and kept from evil, a recompense from Allah would be better, if they only knew.
SHAKIR: And if they had believed and guarded themselves (against evil), reward from Allah would certainly have been better; had they but known (this).
KHALIFA: If they believe and lead a righteous life, the reward from GOD is far better, if they only knew.
১০৩। যদি তারা ঈমান আনতো এবং পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতো; তবে আল্লাহ্র নিকট থেকে পুরস্কার অধিক কল্যাণকর হতো-যদি তারা তা জানতো।
রুকু – ১৩
১০৪। হে বিশ্বাসীগণ! [নবীকে দ্বর্থ্যবোধক শব্দ] ‘রাঈনা’ বলো না, বরং [সম্মানকনক শব্দ] ‘উরজুরনা ‘ বল, এবং [তাঁর কথা] মনোযোগের সাথে শোন। অবিশ্বাসীদের জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি ১০৬।
১০৬। কোন কোন ইহুদী রাসুলুল্লাহ্কে (সাঃ) এর নিকট এসে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে তাঁকে, ‘রাঈনা’ বলে সম্বোধন করত। হিব্রু ভাষায় এর অর্থ একটি বদ দোয়া। তারা এ নিয়তেই তা বলতো কিন্তু আরবী ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে ‘আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন’ ফলে আরবীভাষীরা তাদের এই দুরভিসন্ধি বুঝতে পারতো না। ভাল অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে কোন কোন মুসলমানও রাসুলুল্লাহ্কে এই শব্দে সম্বোধন করতেন। এতে দুষ্টরা আরও আশ্কারা পেতো ও পরস্পর হাসাহাসি করতো আর বলতো, ‘এত দিন আমরা গোপনেই তাকে মন্দ বলতাম। এখন এতে মুসলমানদেরও শরীক হওয়ার কারণে প্রকাশ্যে মন্দ বলার সুযোগ এসেছে’। তাদের এই সুযোগ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ মুসলমানদের নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘হে মুমিনগণ তোমরা ‘রাঈনা’ শব্দটি বলো না। এর পরিবর্তে উনযুরনা বলবে।
সার্বজনীন শিক্ষা হচ্ছে, প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জাতির মধ্যে একশ্রেণীর লোক থাকে যারা ভালো জিনিষকে কথার মাধ্যমে মন্দভাবে উপস্থাপন করতে ভালবাসে। এরা হচ্ছে বিশ্বনিন্দুক। এদের কথার ধুম্রজালে সাধারণ মানুষ হয় বিভ্রান্ত। আল্লাহ্র হুকুম হচ্ছে চিন্তা ও বক্তব্যে সৎ হওয়া। বক্তব্য হবে স্বচ্ছ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। আরও হুকুম হচ্ছে সৎ বিবেকবান নেতার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, যে জাতির চিন্তা ও কথার মধ্যে ব্যবধান থাকে তারা মুনাফিক। কারণ তারা ভাবে এক কথা বলে অন্য কথা এরূপ ব্যক্তি বা জাতির উপর আল্লাহ্র গজব অবশ্যই নিপতিত হবে।
আয়াতঃ 002.104
হে মুমিন গণ, তোমরা ‘রায়িনা’ বলো না-‘উনযুরনা’ বল এবং শুনতে থাক। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
O you who believe! Say not (to the Messenger Peace be upon him ) Râ’ina but say Unzurna (Do make us understand) and hear. And for the disbelievers there is a painful torment. (See Verse 4:46)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَقُولُواْ رَاعِنَا وَقُولُواْ انظُرْنَا وَاسْمَعُوا ْوَلِلكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ
Ya ayyuha allatheena amanoo la taqooloo raAAina waqooloo onthurna waismaAAoo walilkafireena AAathabun aleemun
YUSUFALI: O ye of Faith! Say not (to the Messenger) words of ambiguous import, but words of respect; and hearken (to him): To those without Faith is a grievous punishment.
PICKTHAL: O ye who believe, say not (unto the Prophet): “Listen to us” but say “Look upon us,” and be ye listeners. For disbelievers is a painful doom.
SHAKIR: O you who believe! do not say Raina and say Unzurna and listen, and for the unbelievers there is a painful chastisement.
KHALIFA: O you who believe, do not say, “Raa`ena” (be our shepherd). Instead, you should say, “Unzurna” (watch over us), and listen. The disbelievers have incurred a painful retribution.
১০৩। যদি তারা ঈমান আনতো এবং পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতো; তবে আল্লাহ্র নিকট থেকে পুরস্কার অধিক কল্যাণকর হতো-যদি তারা তা জানতো।
রুকু – ১৩
১০৪। হে বিশ্বাসীগণ! [নবীকে দ্বর্থ্যবোধক শব্দ] ‘রাঈনা’ বলো না, বরং [সম্মানকনক শব্দ] ‘উরজুরনা ‘ বল, এবং [তাঁর কথা] মনোযোগের সাথে শোন। অবিশ্বাসীদের জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি ১০৬।
১০৬। কোন কোন ইহুদী রাসুলুল্লাহ্কে (সাঃ) এর নিকট এসে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে তাঁকে, ‘রাঈনা’ বলে সম্বোধন করত। হিব্রু ভাষায় এর অর্থ একটি বদ দোয়া। তারা এ নিয়তেই তা বলতো কিন্তু আরবী ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে ‘আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন’ ফলে আরবীভাষীরা তাদের এই দুরভিসন্ধি বুঝতে পারতো না। ভাল অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে কোন কোন মুসলমানও রাসুলুল্লাহ্কে এই শব্দে সম্বোধন করতেন। এতে দুষ্টরা আরও আশ্কারা পেতো ও পরস্পর হাসাহাসি করতো আর বলতো, ‘এত দিন আমরা গোপনেই তাকে মন্দ বলতাম। এখন এতে মুসলমানদেরও শরীক হওয়ার কারণে প্রকাশ্যে মন্দ বলার সুযোগ এসেছে’। তাদের এই সুযোগ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ মুসলমানদের নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘হে মুমিনগণ তোমরা ‘রাঈনা’ শব্দটি বলো না। এর পরিবর্তে উনযুরনা বলবে।
সার্বজনীন শিক্ষা হচ্ছে, প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জাতির মধ্যে একশ্রেণীর লোক থাকে যারা ভালো জিনিষকে কথার মাধ্যমে মন্দভাবে উপস্থাপন করতে ভালবাসে। এরা হচ্ছে বিশ্বনিন্দুক। এদের কথার ধুম্রজালে সাধারণ মানুষ হয় বিভ্রান্ত। আল্লাহ্র হুকুম হচ্ছে চিন্তা ও বক্তব্যে সৎ হওয়া। বক্তব্য হবে স্বচ্ছ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। আরও হুকুম হচ্ছে সৎ বিবেকবান নেতার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, যে জাতির চিন্তা ও কথার মধ্যে ব্যবধান থাকে তারা মুনাফিক। কারণ তারা ভাবে এক কথা বলে অন্য কথা এরূপ ব্যক্তি বা জাতির উপর আল্লাহ্র গজব অবশ্যই নিপতিত হবে।
আয়াতঃ 002.105
আহলে-কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফের, তাদের মনঃপুত নয় যে, তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ ভাবে স্বীয় অনুগ্রহ দান করেন। আল্লাহ মহান অনুগ্রহদাতা।
Neither those who disbelieve among the people of the Scripture (Jews and Christians) nor Al-Mushrikûn (the disbelievers in the Oneness of Allâh, idolaters, polytheists, pagans, etc.) like that there should be sent down unto you any good from your Lord. But Allâh chooses for His Mercy whom He wills. And Allâh is the Owner of Great Bounty.
مَّا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَلاَ الْمُشْرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْكُم مِّنْ خَيْرٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَاللّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن يَشَاء وَاللّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
Ma yawaddu allatheena kafaroo min ahli alkitabi wala almushrikeena an yunazzala AAalaykum min khayrin min rabbikum waAllahu yakhtassu birahmatihi man yashao waAllahu thoo alfadli alAAatheemi
YUSUFALI: It is never the wish of those without Faith among the People of the Book, nor of the Pagans, that anything good should come down to you from your Lord. But Allah will choose for His special Mercy whom He will – for Allah is Lord of grace abounding.
PICKTHAL: Neither those who disbelieve among the people of the Scripture nor the idolaters love that there should be sent down unto you any good thing from your Lord. But Allah chooseth for His mercy whom He will, and Allah is of Infinite Bounty.
SHAKIR: Those who disbelieve from among the followers of the Book do not like, nor do the polytheists, that the good should be sent down to you from your Lord, and Allah chooses especially whom He pleases for His mercy, and Allah is the Lord of mighty grace.
KHALIFA: Neither the disbelievers among the followers of the scripture, nor the idol worshipers, wish to see any blessings come down to you from your Lord. However, GOD showers His blessings upon whomever He chooses. GOD possesses infinite grace.
১০৫। কিতাবীদের মধ্যে যারা ঈমানহীন তারা এবং মুশরিকরা চায় না যে, তোমার প্রভুর নিকট থেকে তোমার প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক। কিন্তু আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে নিজ অনুগ্রহের জন্য বিশেষভাবে মনোনীত করেন। কারণ আল্লাহ্ অসীম অনুগ্রহের মালিক।
১০৬। আমি কোন আয়াতকে রহিত করলে, বা ভুলে যেতে দিলে, তা থেকে উত্তম কিংবা সমতুল্য কোন আয়াত প্রতিস্থাপন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ্ সকল জিনিষের উপরে ক্ষমতাবান? ১০৭।
১০৭। উপরের আয়াতটির অর্থ সার্বজনীন। এর অর্থ সঙ্কীর্ণ অর্থে ব্যবহার না করাই উচিত। এই আয়াতের অর্থ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করলে এর অর্থ দাঁড়ায় যে, যুগে-যুগে, কালে-কালে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আল্লাহ্র বাণী সময় ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। এর ভাষা, নিয়ম-কানুনের মধ্যে বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে সময়ের দাবী ও সময়ের প্রয়োজনে এবং যুগের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত বক্তব্য সেই আদি যুগ থেকে আজ পর্যন্ত একই রয়ে গেছে। হযরত মুসার ধর্মগ্রন্থের সামাজিক নিয়ম কানুনের সাথে হযরত ঈসার ধর্মগ্রন্থের সামাজিক নিয়ম কানুনের পার্থক্য এবং শেষে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর উম্মতদের সামাজিক নিয়ম কানুনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় কিতাবীদের নৈতিক নীতিমালা যুগে-যুগে, কালে-কালে একই রয়ে গেছে। শুধু পরিবর্তন হয়েছে বাহ্যিক, সামাজিক নিয়ম নীতিমালা যা যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে যুগোপযোগী করা হয়েছে। এটা ভাবা অন্যায় নয় যে মানব সমাজ সময় ও যুগ অতিক্রম করে সভ্যতার দিকে এগিয়ে চলেছে। যুগে-যুগে আল্লাহ্ ধর্মকে সেই যুগের উপযোগী করার জন্য বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নবী রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। [৩ : ৭] আয়াতে আল্লাহ্ পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন যে-
‘তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন; যাহার কতক আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন; এইগুলি কিতাবের মূল অংশ’ আর অন্যগুলি রূপক। যাদের অন্তরে সত্য লঙ্ঘন প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাই ফিত্না এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রূপক তার অনুসরণ করে।’
উদাহরণ স্বরূপ যেমন-অনেকে বলে যে আয়াত [২ : ১১৫] কে [২ : ১৪৪] আয়াত দ্বারা রহিত করা হয়েছে। আয়াত [২ : ১১৫] এ বলা হয়েছে যে –
‘পূর্ব পশ্চিম সর্বত্রই আল্লাহ্ বিদ্যমান; এবং যে দিকেই তোমরা মুখ ফিরাও না কেন সে দিকেই আল্লাহ্র উপস্থিতি বিদ্যমান। আল্লাহ্ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।’ এবং আয়াত [২:১৪৪] তে বলা হয়েছে –
‘…. তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাইয়া দিতেছি যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে। অতএব তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন উহার দিকে মুখ ফিরাও ….’।
– এর অর্থ এই দাঁড়ায় না যে আয়াত [২:১৪৪] দ্বারা আয়াত [২:১১৫] কে রহিত করা হয়েছে। কারণ এটা ভাবা সংকীর্ণতা ও অন্যায় যে আল্লাহ্ শুধু কোনও নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ। তাঁর অবস্থান সর্বত্র; আয়াত [২:১১৫] দ্বারা এই বুঝানো হয়েছে যে আল্লাহ্র ব্যপ্তি বিশ্বজগৎব্যাপী; তাঁর উপস্থিতি সর্বত্র। আয়াত [২:১৪৪] দ্বারা বুঝনো হয়েছে যে, এবাদতের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সকলে মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাবে।
পৃথিবীর দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে কালের আবর্তে পৃথিবীতে কোনও জিনিস স্থায়ী নয়। কত জনপদ, সভ্যতা, অনুসরণীয় প্রতিষ্ঠান সময়ের আর্বতনে লোপ পেয়ে যায়। বিবর্তনের ধারায় তাদের শিক্ষাও লোকে ভুলে যায়। আজকে যা মনে হবে প্রকৃষ্ট অনুসরণীয় নীতি আগামীকাল তা মনে হবে যুগোপযোগী নয়। কিন্তু আল্লাহ্র শাশ্বত বাণী অপরিবর্তনীয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে, সত্য কথা বলা, চুরি না করা, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হস্তগত না করা, ব্যাভিচার না করা ইত্যাদি এগুলি হচ্ছে আল্লাহ্র শাশ্বত আইন। হযরত মুসার কিতাব থেকে হযরত ঈসা, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর কুরআন পর্যন্ত একইভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে। যে কোনও কিতাবীদের ধর্মের মূল নৈতিক নীতিমালা এক। কিন্তু এমন অনেক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আছে যেখানে খৃষ্টানদের সাথে ইহুদীদের মেলে না, আবার খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের মেলে না ইত্যাদি। তাই বলে ইহুদী, খৃষ্টান বা ইসলাম এর কোনটাই ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম নয়। কিতাবীরা সবাই হযরত ইব্রাহীমের ধর্মের অনুসারী। সময়ের ব্যবধানে ধর্মের মধ্যে যে অনাচার প্রবেশ করেছিলো, সেগুলি পরিশুদ্ধ করে যুগোপযোগী করার জন্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পরিবর্তন করা হয়েছে। কুরআন হলো সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যুগোপযোগী করার জন্য ইসলামে মেয়েদের অধিকার স্বীকৃত করা হয় – জীবনের সর্ব অবস্থায় যথা : সম্পত্তি, সাক্ষী ইত্যাদিতে যা পূর্বে ছিল না।
আয়াতঃ 002.106
আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?
Whatever a Verse (revelation) do We abrogate or cause to be forgotten, We bring a better one or similar to it. Know you not that Allâh is able to do all things?
مَا نَنسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِّنْهَا أَوْ مِثْلِهَا أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللّهَ عَلَىَ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
Ma nansakh min ayatin aw nunsiha na/ti bikhayrin minha aw mithliha alam taAAlam anna Allaha AAala kulli shay-in qadeerun
YUSUFALI: None of Our revelations do We abrogate or cause to be forgotten, but We substitute something better or similar: Knowest thou not that Allah Hath power over all things?
PICKTHAL: Nothing of our revelation (even a single verse) do we abrogate or cause be forgotten, but we bring (in place) one better or the like thereof. Knowest thou not that Allah is Able to do all things?
SHAKIR: Whatever communications We abrogate or cause to be forgotten, We bring one better than it or like it. Do you not know that Allah has power over all things?
KHALIFA: When we abrogate any miracle, or cause it to be forgotten, we produce a better miracle, or at least an equal one. Do you not recognize the fact that GOD is Omnipotent?
১০৫। কিতাবীদের মধ্যে যারা ঈমানহীন তারা এবং মুশরিকরা চায় না যে, তোমার প্রভুর নিকট থেকে তোমার প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক। কিন্তু আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে নিজ অনুগ্রহের জন্য বিশেষভাবে মনোনীত করেন। কারণ আল্লাহ্ অসীম অনুগ্রহের মালিক।
১০৬। আমি কোন আয়াতকে রহিত করলে, বা ভুলে যেতে দিলে, তা থেকে উত্তম কিংবা সমতুল্য কোন আয়াত প্রতিস্থাপন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ্ সকল জিনিষের উপরে ক্ষমতাবান? ১০৭।
১০৭। উপরের আয়াতটির অর্থ সার্বজনীন। এর অর্থ সঙ্কীর্ণ অর্থে ব্যবহার না করাই উচিত। এই আয়াতের অর্থ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করলে এর অর্থ দাঁড়ায় যে, যুগে-যুগে, কালে-কালে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আল্লাহ্র বাণী সময় ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। এর ভাষা, নিয়ম-কানুনের মধ্যে বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে সময়ের দাবী ও সময়ের প্রয়োজনে এবং যুগের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত বক্তব্য সেই আদি যুগ থেকে আজ পর্যন্ত একই রয়ে গেছে। হযরত মুসার ধর্মগ্রন্থের সামাজিক নিয়ম কানুনের সাথে হযরত ঈসার ধর্মগ্রন্থের সামাজিক নিয়ম কানুনের পার্থক্য এবং শেষে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর উম্মতদের সামাজিক নিয়ম কানুনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় কিতাবীদের নৈতিক নীতিমালা যুগে-যুগে, কালে-কালে একই রয়ে গেছে। শুধু পরিবর্তন হয়েছে বাহ্যিক, সামাজিক নিয়ম নীতিমালা যা যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে যুগোপযোগী করা হয়েছে। এটা ভাবা অন্যায় নয় যে মানব সমাজ সময় ও যুগ অতিক্রম করে সভ্যতার দিকে এগিয়ে চলেছে। যুগে-যুগে আল্লাহ্ ধর্মকে সেই যুগের উপযোগী করার জন্য বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নবী রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। [৩ : ৭] আয়াতে আল্লাহ্ পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন যে-
‘তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন; যাহার কতক আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন; এইগুলি কিতাবের মূল অংশ’ আর অন্যগুলি রূপক। যাদের অন্তরে সত্য লঙ্ঘন প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাই ফিত্না এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রূপক তার অনুসরণ করে।’
উদাহরণ স্বরূপ যেমন-অনেকে বলে যে আয়াত [২ : ১১৫] কে [২ : ১৪৪] আয়াত দ্বারা রহিত করা হয়েছে। আয়াত [২ : ১১৫] এ বলা হয়েছে যে –
‘পূর্ব পশ্চিম সর্বত্রই আল্লাহ্ বিদ্যমান; এবং যে দিকেই তোমরা মুখ ফিরাও না কেন সে দিকেই আল্লাহ্র উপস্থিতি বিদ্যমান। আল্লাহ্ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।’ এবং আয়াত [২:১৪৪] তে বলা হয়েছে –
‘…. তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাইয়া দিতেছি যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে। অতএব তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন উহার দিকে মুখ ফিরাও ….’।
– এর অর্থ এই দাঁড়ায় না যে আয়াত [২:১৪৪] দ্বারা আয়াত [২:১১৫] কে রহিত করা হয়েছে। কারণ এটা ভাবা সংকীর্ণতা ও অন্যায় যে আল্লাহ্ শুধু কোনও নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ। তাঁর অবস্থান সর্বত্র; আয়াত [২:১১৫] দ্বারা এই বুঝানো হয়েছে যে আল্লাহ্র ব্যপ্তি বিশ্বজগৎব্যাপী; তাঁর উপস্থিতি সর্বত্র। আয়াত [২:১৪৪] দ্বারা বুঝনো হয়েছে যে, এবাদতের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সকলে মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাবে।
পৃথিবীর দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে কালের আবর্তে পৃথিবীতে কোনও জিনিস স্থায়ী নয়। কত জনপদ, সভ্যতা, অনুসরণীয় প্রতিষ্ঠান সময়ের আর্বতনে লোপ পেয়ে যায়। বিবর্তনের ধারায় তাদের শিক্ষাও লোকে ভুলে যায়। আজকে যা মনে হবে প্রকৃষ্ট অনুসরণীয় নীতি আগামীকাল তা মনে হবে যুগোপযোগী নয়। কিন্তু আল্লাহ্র শাশ্বত বাণী অপরিবর্তনীয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে, সত্য কথা বলা, চুরি না করা, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হস্তগত না করা, ব্যাভিচার না করা ইত্যাদি এগুলি হচ্ছে আল্লাহ্র শাশ্বত আইন। হযরত মুসার কিতাব থেকে হযরত ঈসা, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর কুরআন পর্যন্ত একইভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে। যে কোনও কিতাবীদের ধর্মের মূল নৈতিক নীতিমালা এক। কিন্তু এমন অনেক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আছে যেখানে খৃষ্টানদের সাথে ইহুদীদের মেলে না, আবার খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের মেলে না ইত্যাদি। তাই বলে ইহুদী, খৃষ্টান বা ইসলাম এর কোনটাই ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম নয়। কিতাবীরা সবাই হযরত ইব্রাহীমের ধর্মের অনুসারী। সময়ের ব্যবধানে ধর্মের মধ্যে যে অনাচার প্রবেশ করেছিলো, সেগুলি পরিশুদ্ধ করে যুগোপযোগী করার জন্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পরিবর্তন করা হয়েছে। কুরআন হলো সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যুগোপযোগী করার জন্য ইসলামে মেয়েদের অধিকার স্বীকৃত করা হয় – জীবনের সর্ব অবস্থায় যথা : সম্পত্তি, সাক্ষী ইত্যাদিতে যা পূর্বে ছিল না।
আয়াতঃ 002.107
তুমি কি জান না যে, আল্লাহর জন্যই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের আধিপত্য? আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই।
Know you not that it is Allâh to Whom belongs the dominion of the heavens and the earth? And besides Allâh you have neither any Walî (protector or guardian) nor any helper.
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللّهِ مِن وَلِيٍّ وَلاَ نَصِيرٍ
Alam taAAlam anna Allaha lahu mulku alssamawati waal-ardi wama lakum min dooni Allahi min waliyyin wala naseerin
YUSUFALI: Knowest thou not that to Allah belongeth the dominion of the heavens and the earth? And besides Him ye have neither patron nor helper.
PICKTHAL: Knowest thou not that it is Allah unto Whom belongeth the Sovereignty of the heavens and the earth; and ye have not, beside Allah, any guardian or helper?
SHAKIR: Do you not know that Allah’s is the kingdom of the heavens and the earth, and that besides Allah you have no guardian or helper?
KHALIFA: Do you not recognize the fact that GOD possesses the kingship of the heavens and the earth; that you have none besides GOD as your Lord and Master?
১০৭। তুমি কি জান না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সীমানা আল্লাহ্রই নিয়ন্ত্রণাধীনে? তিনি ব্যতীত তোমাদের কোনও অভিভাবক নাই, সাহায্যকারীও নাই।
১০৮। তোমরা কি তোমাদের রাসূলকে সেইরূপ প্রশ্ন করতে চাও, প্রাচীনকালে মুসাকে যেরূপ করা হয়েছিল? ১০৮। কিন্তু যে বিশ্বাসী থেকে অবিশ্বাসীতে পরিবর্তিত হয়, নিঃসন্দেহে সে সরল পথ থেকে বিপথে যায় ১০৯।
১০৮। ইহুদীরা হযরত মুসা (আঃ) কে অপ্রাসঙ্গিক কুটিল প্রশ্ন দ্বারা অবিরাম হয়রানী করতো। এখানে আল্লাহ্ মুসলমানদের সেই উদাহরণ অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আধ্যাত্মিক জগতে নিজেকে জাহির করা বা প্রচার করার মাধ্যমে কিছুই পাওয়া যায় না। সত্যিকারের যদি কিছু জানার আকাঙ্ক্ষা থাকে শুধুমাত্র তবেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা উচিত।
১০৯। আরবী শব্দ ‘সাওয়াআ’ এর অর্থ অনেক ব্যাপক। শুধুমাত্র সরল পথ বা মসৃন পথ-এভাবে এর অর্থ প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর দ্বারা বিভিন্ন ভাবের প্রকাশ পায়। যেমন-এ এমন পথ যা মসৃন [বন্ধুর পথের বিপরীত]; সুসামঞ্জস্যপূর্ণ [এলোমেলো এর বিপরীত]; সঙ্গতিপূর্ণ [অসঙ্গতির বিপরীত]; ন্যায়ের পথ [অন্যায়ের বিপরীত]; মধ্য পথ [চরম পথের বিপরীত] এবং যে পথ আদর্শ বা উদ্দেশ্যের প্রতি নিবেদিত। অর্থাৎ এটা এমন এক পথ যা মধ্য পথ, ন্যায় ও সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত, পারিপার্শ্বিকের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভালোর প্রতি, সত্য ও সুন্দরের প্রতি নিবেদিত পরিকল্পিত জীবন। সুতরাং এ পথ অবলম্বন করতে হলে চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করতে হবে। সরল পথ হারায় অর্থাৎ চারিত্রিক গুণাবলীর যে মাধুর্য যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সরল পথকে নির্দেশ করে, তা হারিয়ে ফেলে এবং ঠিক তার বিপরীত ধর্মই তার চরিত্রে প্রকাশ পায়। চারিত্রিক গুণাবলীর বিকাশই হচ্ছে ইসলামের সরল পথের ঠিকানা। ‘সাওয়াআ’ অর্থ এই সরল পথের ঠিকানা।
আয়াতঃ 002.108
ইতিপূর্বে মূসা (আঃ) যেমন জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, (মুসলমানগন, ) তোমরাও কি তোমাদের রসূলকে তেমনি প্রশ্ন করতে চাও? যে কেউ ঈমানের পরিবর্তে কুফর গ্রহন করে, সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।
Or do you want to ask your Messenger (Muhammad Peace be upon him ) as Mûsa (Moses) was asked before (i.e. show us openly our Lord?) And he who changes Faith for disbelief, verily, he has gone astray from the right way.
أَمْ تُرِيدُونَ أَن تَسْأَلُواْ رَسُولَكُمْ كَمَا سُئِلَ مُوسَى مِن قَبْلُ وَمَن يَتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالإِيمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاء السَّبِيلِ
Am tureedoona an tas-aloo rasoolakum kama su-ila moosa min qablu waman yatabaddali alkufra bial-eemani faqad dalla sawaa alssabeeli
YUSUFALI: Would ye question your Messenger as Moses was questioned of old? but whoever changeth from Faith to Unbelief, Hath strayed without doubt from the even way.
PICKTHAL: Or would ye question your messenger as Moses was questioned aforetime? He who chooseth disbelief instead of faith, verily he hath gone astray from a plain road.
SHAKIR: Rather you wish to put questions to your Messenger, as Musa was questioned before; and whoever adopts unbelief instead of faith, he indeed has lost the right direction of the way.
KHALIFA: Do you wish to demand of your messenger what was demanded of Moses in the past? Anyone who chooses disbelief, instead of belief, has truly strayed off the right path.
১০৭। তুমি কি জান না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সীমানা আল্লাহ্রই নিয়ন্ত্রণাধীনে? তিনি ব্যতীত তোমাদের কোনও অভিভাবক নাই, সাহায্যকারীও নাই।
১০৮। তোমরা কি তোমাদের রাসূলকে সেইরূপ প্রশ্ন করতে চাও, প্রাচীনকালে মুসাকে যেরূপ করা হয়েছিল? ১০৮। কিন্তু যে বিশ্বাসী থেকে অবিশ্বাসীতে পরিবর্তিত হয়, নিঃসন্দেহে সে সরল পথ থেকে বিপথে যায় ১০৯।
১০৮। ইহুদীরা হযরত মুসা (আঃ) কে অপ্রাসঙ্গিক কুটিল প্রশ্ন দ্বারা অবিরাম হয়রানী করতো। এখানে আল্লাহ্ মুসলমানদের সেই উদাহরণ অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আধ্যাত্মিক জগতে নিজেকে জাহির করা বা প্রচার করার মাধ্যমে কিছুই পাওয়া যায় না। সত্যিকারের যদি কিছু জানার আকাঙ্ক্ষা থাকে শুধুমাত্র তবেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা উচিত।
১০৯। আরবী শব্দ ‘সাওয়াআ’ এর অর্থ অনেক ব্যাপক। শুধুমাত্র সরল পথ বা মসৃন পথ-এভাবে এর অর্থ প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর দ্বারা বিভিন্ন ভাবের প্রকাশ পায়। যেমন-এ এমন পথ যা মসৃন [বন্ধুর পথের বিপরীত]; সুসামঞ্জস্যপূর্ণ [এলোমেলো এর বিপরীত]; সঙ্গতিপূর্ণ [অসঙ্গতির বিপরীত]; ন্যায়ের পথ [অন্যায়ের বিপরীত]; মধ্য পথ [চরম পথের বিপরীত] এবং যে পথ আদর্শ বা উদ্দেশ্যের প্রতি নিবেদিত। অর্থাৎ এটা এমন এক পথ যা মধ্য পথ, ন্যায় ও সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত, পারিপার্শ্বিকের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভালোর প্রতি, সত্য ও সুন্দরের প্রতি নিবেদিত পরিকল্পিত জীবন। সুতরাং এ পথ অবলম্বন করতে হলে চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করতে হবে। সরল পথ হারায় অর্থাৎ চারিত্রিক গুণাবলীর যে মাধুর্য যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সরল পথকে নির্দেশ করে, তা হারিয়ে ফেলে এবং ঠিক তার বিপরীত ধর্মই তার চরিত্রে প্রকাশ পায়। চারিত্রিক গুণাবলীর বিকাশই হচ্ছে ইসলামের সরল পথের ঠিকানা। ‘সাওয়াআ’ অর্থ এই সরল পথের ঠিকানা।
আয়াতঃ 002.109
আহলে কিতাবদের অনেকেই প্রতিহিংসাবশতঃ চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফের বানিয়ে দেয়। তাদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর (তারা এটা চায়)। যাক তোমরা আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত তাদের ক্ষমা কর এবং উপেক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
Many of the people of the Scripture (Jews and Christians) wish that if they could turn you away as disbelievers after you have believed, out of envy from their ownselves, even, after the truth (that Muhammad Peace be upon him is Allâh’s Messenger) has become manifest unto them. But forgive and overlook, till Allâh brings His Command. Verily, Allâh is Able to do all things.
وَدَّ كَثِيرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُم مِّن بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّاراً حَسَدًا مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ فَاعْفُواْ وَاصْفَحُواْ حَتَّى يَأْتِيَ اللّهُ بِأَمْرِهِ إِنَّ اللّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
Wadda katheerun min ahli alkitabi law yaruddoonakum min baAAdi eemanikum kuffaran hasadan min AAindi anfusihim min baAAdi ma tabayyana lahumu alhaqqu faoAAfoo waisfahoo hatta ya/tiya Allahu bi-amrihi inna Allaha AAala kulli shay-in qadeerun
YUSUFALI: Quite a number of the People of the Book wish they could Turn you (people) back to infidelity after ye have believed, from selfish envy, after the Truth hath become Manifest unto them: But forgive and overlook, Till Allah accomplish His purpose; for Allah Hath power over all things.
PICKTHAL: Many of the people of the Scripture long to make you disbelievers after your belief, through envy on their own account, after the truth hath become manifest unto them. Forgive and be indulgent (toward them) until Allah give command. Lo! Allah is Able to do all things.
SHAKIR: Many of the followers of the Book wish that they could turn you back into unbelievers after your faith, out of envy from themselves, (even) after the truth has become manifest to them; but pardon and forgive, so that Allah should bring about His command; surely Allah has power over all things.
KHALIFA: Many followers of the scripture would rather see you revert to disbelief, now that you have believed. This is due to jealousy on their part, after the truth has become evident to them. You shall pardon them, and leave them alone, until GOD issues His judgment. GOD is Omnipotent.
১০৯। তাদের নিকট সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কিতাবীদের মধ্যে অনেকেই, তোমরা ঈমান আনার পরও ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে আবার তোমাদের নাস্তিক রূপে ফিরে পেতে চায়। কিন্তু তোমরা [তাদের] ক্ষমা কর এবং উপক্ষো কর ১১০ যতক্ষণ না আল্লাহ্ তার অভিপ্রায় সম্পাদন করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সকল বিষয়ের উপরে ক্ষমতাবান ১১২।
১১০। কোরআন শরীফে তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ ‘ক্ষমা করা’র সমার্থক, তবুও এদের ব্যবহারে এদের বিভিন্নতা দেখা যায়। ‘আফা’ কে এই আয়াতে ক্ষমা করা অনুবাদ করা হয়েছে কিন্তু আরবী এই শব্দটির দ্বারা বুঝানো হয়েছে ভুলে যাওয়া বা মন থেকে মুছে ফেলা। ‘সাফাহা’ কে এখানে অনুবাদ করা হয়েছে উপেক্ষা করা। আরবী শব্দটির দ্বারা বুঝানো হয়েছে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, উপক্ষো করা, এমন ভাব করা যেনো ব্যাপারটি কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে নাই ইত্যাদি এই ব্যাপক অর্থ প্রকাশ করা হয়েছে। ‘সাফা’ শব্দের বাংলা এক কথায় উপেক্ষা করা শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। সুতরাং ‘আফা’ এবং ‘সাফা’ এই দুটোই ক্ষমা এই কথাটির সমার্থক বোঝায়। কিন্তু কোরআন শরীফে আর একটি শব্দ ‘গাফারা’ ব্যবহার করা হয়েছে ক্ষমা করা অর্থে। এই শব্দটি শুধুমাত্র আল্লাহ্র প্রতি প্রযোজ্য, কারণ পাপীর পাপ শুধু ক্ষমা নয়, ক্ষমার পর তাকে রহমতের ধারায় বিধৌত করা এবং বার বার পাপীর পাপ ক্ষমা করা এবং রহমত করার নামই হচ্ছে ‘গাফারা’; এই জন্য আল্লাহ্র আর এক নাম ‘গফুর’।
১১২। [২:১০৬] আয়াতের এই লাইনটি যে, ‘আল্লাহ্ সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান’-এর পূর্বে ও পরে কুরআন শরীফের অনেক জায়গাতেই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকবার এই লাইনটি ব্যবহার করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। [২:১০৬] এ বলা হয়েছে প্রত্যাদেশের ধারাবাহিকতার উপরে। এখানে বক্তব্য হচ্ছে ধর্মের মূলনীতি রয়ে গেছে একই কিন্তু যুগোপযোগী করা হয়েছে যুগে-যুগে, কালে-কালে। বাঁধা এসেছে প্রতিটি যুগেই। কিন্তু আল্লাহ্র ক্ষমতা অসীম, তাঁর ইচ্ছাই জয় লাভ করে শেষ পর্যন্ত, এই ছিল [২:১০৬] এর প্রেক্ষাপট। কিন্তু [২:১০৯] আয়াতে আল্লাহ্ আমাদের বাধা-বিপত্তির মুখে ধৈর্য্যশীল ও ক্ষমাশীল হতে আদেশ দিচ্ছেন অন্যায়কারী ও হিংসুকদের উপরে। প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের মাধ্যমে নয়। আল্লাহ্র যা ইচ্ছা শেষ পর্যন্ত পূরণ হবেই। কারণ তিনি সব কিছুর উপরে শক্তিমান।
আয়াতঃ 002.110
তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্যে পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।
And perform As-Salât (Iqâmat-as-Salât), and give Zakât, and whatever of good (deeds that Allâh loves) you send forth for yourselves before you, you shall find it with Allâh. Certainly, Allâh is All-Seer of what you do.
وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُواْ لأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللّهِ إِنَّ اللّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
Waaqeemoo alssalata waatoo alzzakata wama tuqaddimoo li-anfusikum min khayrin tajidoohu AAinda Allahi inna Allaha bima taAAmaloona baseerun
YUSUFALI: And be steadfast in prayer and regular in charity: And whatever good ye send forth for your souls before you, ye shall find it with Allah: for Allah sees Well all that ye do.
PICKTHAL: Establish worship, and pay the poor-due; and whatever of good ye send before (you) for your souls, ye will find it with Allah. Lo! Allah is Seer of what ye do.
SHAKIR: And keep up prayer and pay the poor-rate and whatever good you send before for yourselves, you shall find it with Allah; surely Allah sees what you do.
KHALIFA: You shall observe the Contact Prayers (Salat) and give the obligatory charity (Zakat). Any good you send forth on behalf of your souls, you will find it at GOD. GOD is seer of everything you do.
১১০। তোমরা সালাতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাক এবং যাকাত দাও। [তোমাদের মৃত্যুর] পূর্বে যা কিছু তোমরা তোমাদের আত্মার [কল্যাণের] জন্য প্রেরণ করবে, আল্লাহ্র নিকট তা [ফেরৎ] পাবে। তোমরা যা কর আল্লাহ্ সব ভালভাবে জানেন ১১৩।
১১৩। [২:৯৫] আয়াতে এবং টিকা ১০০ তে দ্রষ্টব্য।
আয়াতঃ 002.111
ওরা বলে, ইহুদী অথবা খ্রীস্টান ব্যতীত কেউ জান্নাতে যাবে না। এটা ওদের মনের বাসনা। বলে দিন, তোমরা সত্যবাদী হলে, প্রমাণ উপস্থিত কর।
And they say, ”None shall enter Paradise unless he be a Jew or a Christian.” These are their own desires. Say (O Muhammad Peace be upon him ), ”Produce your proof if you are truthful.”
وَقَالُواْ لَن يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَن كَانَ هُوداً أَوْ نَصَارَى تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ قُلْ هَاتُواْ بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
Waqaloo lan yadkhula aljannata illa man kana hoodan aw nasara tilka amaniyyuhum qul hatoo burhanakum in kuntum sadiqeena
YUSUFALI: And they say: “None shall enter Paradise unless he be a Jew or a Christian.” Those are their (vain) desires. Say: “Produce your proof if ye are truthful.”
PICKTHAL: And they say: None entereth paradise unless he be a Jew or a Christian. These are their own desires. Say: Bring your proof (of what ye state) if ye are truthful.
SHAKIR: And they say: None shall enter the garden (or paradise) except he who is a Jew or a Christian. These are their vain desires. Say: Bring your proof if you are truthful.
KHALIFA: Some have said, “No one will enter Paradise except Jews or Christians!” Such is their wishful thinking. Say, “Show us your proof, if you are right.”
১১১। এবং তারা বলে, ‘ইহুদী অথবা খৃষ্টান ব্যতীত আর কেউ বেহেশ্তে প্রবেশ করবে না”। এটা তাদের [মিথ্যা] আশা। বল, ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে প্রমাণ দাও।’
১১২। পক্ষান্তরে, যে কেউ পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পন করে ১১৪, এবং ভালো কাজ করে, সে এর পুরষ্কার তার প্রভুর নিকট পাবে; তাদের কোন ভয় নাই, তারা দুঃখিতও হবে না; ১১৫।
১১৪। এখানে ‘ওয়াজহা’ আরবী শব্দটির অর্থ হচ্চে মুখমণ্ডল। কিন্তু তর্জমা করা হয়েছে ‘আত্ম’ কথাটির দ্বারা। এখানে আল্লাহ্ বলেছেন, যে ব্যক্তি স্বীয় মাথা আল্লাহ্র দিকে নত করে দেয় অর্থাৎ আত্মসমর্পন করে বা বিশ্বাস ও কাজকর্মে আনুগত্য অবলম্বন করে এবং তৎসঙ্গে [শুধু বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানই নয়, আন্তরিকভাবে] সৎ কর্ম করে, সে তার আনুগত্যের প্রতিদান প্রতিপালকের কাছে পাবে।
আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তায়ালা ইহুদী ও খৃষ্টানদের পারস্পরিক মত বিরোধ উল্লেখ করে তাদের নিবুর্দ্ধিতা ও মত বিরোধের কুফল বর্ণনা করেছেন। অতঃপর সত্য উদঘাটন করেছেন। এ ঘটনায় মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হেদায়েত (পথ নির্দেশ) নিহিত আছে।
খৃষ্টান ও ইহুদী উভয় সম্প্রদায়ই ধর্মের প্রকৃত সত্যকে উপক্ষো করে ধর্মের নাম ভিত্তিক জাতীয়তা গড়ে তুলেছিল। তারা প্রত্যেকেই স্ব-জাতিকে জান্নাত ও আল্লাহ্র প্রিয় পাত্র বলে দাবী করতো এবং তারা ব্যতীত জগতের সমস্ত জাতিকে জাহান্নামী ও পথভ্রষ্ট বলে বিশ্বাস করতো। আল্লাহ্ তায়ালা উভয় সম্প্রদায়কে তাদের মূর্খতা সম্বন্ধে মন্তব্য করেছেন যে, এরা উভয় সম্প্রদায়ই জান্নাতে যাওয়ার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে উদাসীন। তারা শুধু ধর্মের নামভিত্তিক জাতীয়তার অনুসরণ করে। বস্তুতঃ ইহুদী, খৃষ্টান ও ইসলাম যে কোনও ধর্মেরই প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে দুটি বিষয়।
ক) বান্দা মনে প্রাণে নিজেকে আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে সমর্পন করবে। তাঁর আনুগত্যকেই স্বীয় মত ও পথ বলে মনে করবে। এ উদ্দেশ্যটি যে ধর্মে অর্জিত হয় তাই প্রকৃত ধর্ম। ধর্মের প্রকৃত স্বরূপকে পেছনে ফেলে ইহুদী অথবা খৃষ্টান অথবা ইসলাম জাতীয়তাবাদের ধ্বজা উত্তোলন করা ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক।
খ) দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে সৎকর্ম। পারলৌকিক মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশের জন্য শুধু আনুগত্যের সংকল্পই যথেষ্ট নয় বরং সৎকর্মেরও প্রয়োজন। আল্লাহ্র কাছে ইহুদী, খৃষ্টান ও মুসলমানের কোনও মূল্য নাই। গ্রহণীয় বিষয় হচ্ছে ঈমান ও সৎকর্ম। সৎকর্ম কি? যে কাজ আল্লাহ্র সৃষ্টির মঙ্গলের জন্য আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয় তাই-ই সৎকর্ম। কুরআনের বহু স্থানে সমাজ ও জাতির মঙ্গলের জন্য কাজ করার নির্দেশ দান করা হয়েছে। এই জাতীয় কাজই হচ্ছে সৎকাজ।
যে কেউ উপরোক্ত মৌলিক বিষয়াদির মধ্য থেকে যে কোনও একটি ছেড়ে দেয়, অতঃপর শুধুমাত্র নাম ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে নিজেকে জান্নাতের ইজারাদার মনে করে নেয়; সে আত্মপ্রবঞ্চনা বৈ আর কিছুই করে না। আসল সত্যের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নাই। এসব নামের উপর ভরসা করে কেউ আল্লাহ্র নিকটবর্তী ও মকবুল হতে পারবে না। যে পর্যন্ত না তার মধ্যে ঈমান ও সৎ কর্ম থাকে। সুতরাং এ দাবী যেনো কেউ না করে যে আমরা পুরুষানুক্রমে মুসলমান। প্রত্যেক অফিস ও রেজিস্টারে আমাদের নাম মুসলমানদের কোটায় লিপিবদ্ধ এবং আমরা মুখেও নিজেদের মুসলমান বলি, সুতরাং সকল পুরস্কারের যোগ্য হকদার আমরাই। তাহলে ইহুদী ও আমাদের মধ্যে পার্থক্য খুব কমই থাকবে। দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের অবনতি ও অস্থিরতার মূল কারণ আমাদের এখানেই খুঁজে দেখতে হবে। আমাদের ঈমান মৌখিক। এর সাথে আন্তরিকতার সম্পর্ক কম। অর্থাৎ আমরা আন্তরিকভাবে আল্লাহ্র হুকুম মান্য করি না। যেমন-আমরা মিথ্যার বেসাতি করি, মানুষকে ঠকাতে দ্বিধাবোধ করি না, অন্যায়-অবিচার, অসত্য আজ আমাদের জীবনের সামাজিক ব্যাধি। অন্যায় আইন আজ আমরা সমাজ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে স্বীকার করে চলছি। এগুলি হচ্ছে আল্লাহ্র আইন অমান্য করা। আল্লাহ্র আইনকে অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে, মৌখিকভাবে নিজেকে মুসলমান দাবী করলেও অন্তরে আল্লাহ্কে অস্বীকার করা। সে নিজের প্রতি নিজে বিশ্বস্ত নয় এটা মুনাফিকীরই নামান্তর।
দ্বিতীয়তঃ তাঁর সৃষ্টির সেবা করা। এ ব্যাপারে মুসলমানেরা কতটুকু অগ্রগামী তা বিবেচ্য। আমরা কতটুকু আন্তরিক সমাজের মঙ্গলের জন্য, সৎ কাজে আমরা কতটুকু উৎসর্গীকৃত। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দ্বীনের ব্যাপারে মুসলিম সমাজ আজ খুব একটা আন্তরিক নয়। এখানেই দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের এত অস্থিরতা ও অবনতির কারণ। মুসলমানদের অবনতি ও অস্থিরতা অপরপক্ষে খৃষ্টান ও ইহুদীদের উন্নতির ও প্রশান্তির মূল বিষয় উপরে বর্ণিত হলো। এতে প্রতীয়মান হয় যে জগতে আমাদের দারিদ্র, পরমুখাপেক্ষিতা, বিপদ-আপদ ও সংকট ইসলামের মূল ধারা থেকে বিচ্যুতির কারণে। যারাই এই মূলধারা বা ধর্মের মূল অন্তর্নিহিত নৈতিক গুণাবলী অর্জন করেছে তারা ইহুদী বা খৃষ্টান যেই হোক না কেন তাদের উপরে আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হয়। আলোচ্য আয়াত থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ঈমান ও সৎকর্ম পূর্ণরূপে অবলম্বন না করলে শুধু বংশগতভাবে ইসলামের নাম ব্যবহারের দ্বারা কোনও শুভ ফল আশা করা যায় না [২ :৬২] দেখুন।
১১৫। ‘তাদের কোনও ভয় নাই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’-এই লাইনটি এই সূরায় এবং কুরআনের বহু জায়গাতে এসেছে। যেমন-[২, ৩৮, ৬২, ১১২, ২৬২, ২৭৪ এবং ২৭৭]এ। কুরআন নাজেল হয়েছে কবিতার ছন্দে। এর ভাষা, ছন্দ, বর্ণনার মাধুর্যে অতুলনীয়। এই লাইনটি বার বার ব্যবহৃত হয়েছে সঙ্গীতের মত। যেমন-সঙ্গীতের একটি লাইন ‘সোমের’ সৃষ্টি করে ঠিক সেরূপ। এছাড়াও এ দ্বারা লাইনটির গূঢ় অর্থের গুরুত্বের প্রতিও ইঙ্গিত করা হয়েছে।
আয়াতঃ 002.112
হাঁ, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমর্পন করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার পালনকর্তার কাছে পুরস্কার বয়েছে। তাদের ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
Yes, but whoever submits his face (himself) to Allâh (i.e. follows Allâh’s Religion of Islâmic Monotheism) and he is a Muhsin (good-doer i.e. performs good deeds totally for Allâh’s sake only without any show off or to gain praise or fame, etc., and in accordance with the Sunnah of Allâh’s Messenger Muhammad Peace be upon him ) then his reward is with his Lord (Allâh), on such shall be no fear, nor shall they grieve. [See Tafsir Ibn Kathîr, Vol.1, Page 154].
بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِندَ رَبِّهِ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
Bala man aslama wajhahu lillahi wahuwa muhsinun falahu ajruhu AAinda rabbihi wala khawfun AAalayhim wala hum yahzanoona
YUSUFALI: Nay,-whoever submits His whole self to Allah and is a doer of good,- He will get his reward with his Lord; on such shall be no fear, nor shall they grieve.
PICKTHAL: Nay, but whosoever surrendereth his purpose to Allah while doing good, his reward is with his Lord; and there shall no fear come upon them neither shall they grieve.
SHAKIR: Yes! whoever submits himself entirely to Allah and he is the doer of good (to others) he has his reward from his Lord, and there is no fear for him nor shall he grieve.
KHALIFA: Indeed, those who submit themselves absolutely to GOD alone, while leading a righteous life, will receive their recompense from their Lord; they have nothing to fear, nor will they grieve.
১১১। এবং তারা বলে, ‘ইহুদী অথবা খৃষ্টান ব্যতীত আর কেউ বেহেশ্তে প্রবেশ করবে না”। এটা তাদের [মিথ্যা] আশা। বল, ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে প্রমাণ দাও।’
১১২। পক্ষান্তরে, যে কেউ পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পন করে ১১৪, এবং ভালো কাজ করে, সে এর পুরষ্কার তার প্রভুর নিকট পাবে; তাদের কোন ভয় নাই, তারা দুঃখিতও হবে না; ১১৫।
১১৪। এখানে ‘ওয়াজহা’ আরবী শব্দটির অর্থ হচ্চে মুখমণ্ডল। কিন্তু তর্জমা করা হয়েছে ‘আত্ম’ কথাটির দ্বারা। এখানে আল্লাহ্ বলেছেন, যে ব্যক্তি স্বীয় মাথা আল্লাহ্র দিকে নত করে দেয় অর্থাৎ আত্মসমর্পন করে বা বিশ্বাস ও কাজকর্মে আনুগত্য অবলম্বন করে এবং তৎসঙ্গে [শুধু বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানই নয়, আন্তরিকভাবে] সৎ কর্ম করে, সে তার আনুগত্যের প্রতিদান প্রতিপালকের কাছে পাবে।
আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তায়ালা ইহুদী ও খৃষ্টানদের পারস্পরিক মত বিরোধ উল্লেখ করে তাদের নিবুর্দ্ধিতা ও মত বিরোধের কুফল বর্ণনা করেছেন। অতঃপর সত্য উদঘাটন করেছেন। এ ঘটনায় মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হেদায়েত (পথ নির্দেশ) নিহিত আছে।
খৃষ্টান ও ইহুদী উভয় সম্প্রদায়ই ধর্মের প্রকৃত সত্যকে উপক্ষো করে ধর্মের নাম ভিত্তিক জাতীয়তা গড়ে তুলেছিল। তারা প্রত্যেকেই স্ব-জাতিকে জান্নাত ও আল্লাহ্র প্রিয় পাত্র বলে দাবী করতো এবং তারা ব্যতীত জগতের সমস্ত জাতিকে জাহান্নামী ও পথভ্রষ্ট বলে বিশ্বাস করতো। আল্লাহ্ তায়ালা উভয় সম্প্রদায়কে তাদের মূর্খতা সম্বন্ধে মন্তব্য করেছেন যে, এরা উভয় সম্প্রদায়ই জান্নাতে যাওয়ার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে উদাসীন। তারা শুধু ধর্মের নামভিত্তিক জাতীয়তার অনুসরণ করে। বস্তুতঃ ইহুদী, খৃষ্টান ও ইসলাম যে কোনও ধর্মেরই প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে দুটি বিষয়।
ক) বান্দা মনে প্রাণে নিজেকে আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে সমর্পন করবে। তাঁর আনুগত্যকেই স্বীয় মত ও পথ বলে মনে করবে। এ উদ্দেশ্যটি যে ধর্মে অর্জিত হয় তাই প্রকৃত ধর্ম। ধর্মের প্রকৃত স্বরূপকে পেছনে ফেলে ইহুদী অথবা খৃষ্টান অথবা ইসলাম জাতীয়তাবাদের ধ্বজা উত্তোলন করা ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক।
খ) দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে সৎকর্ম। পারলৌকিক মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশের জন্য শুধু আনুগত্যের সংকল্পই যথেষ্ট নয় বরং সৎকর্মেরও প্রয়োজন। আল্লাহ্র কাছে ইহুদী, খৃষ্টান ও মুসলমানের কোনও মূল্য নাই। গ্রহণীয় বিষয় হচ্ছে ঈমান ও সৎকর্ম। সৎকর্ম কি? যে কাজ আল্লাহ্র সৃষ্টির মঙ্গলের জন্য আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয় তাই-ই সৎকর্ম। কুরআনের বহু স্থানে সমাজ ও জাতির মঙ্গলের জন্য কাজ করার নির্দেশ দান করা হয়েছে। এই জাতীয় কাজই হচ্ছে সৎকাজ।
যে কেউ উপরোক্ত মৌলিক বিষয়াদির মধ্য থেকে যে কোনও একটি ছেড়ে দেয়, অতঃপর শুধুমাত্র নাম ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে নিজেকে জান্নাতের ইজারাদার মনে করে নেয়; সে আত্মপ্রবঞ্চনা বৈ আর কিছুই করে না। আসল সত্যের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নাই। এসব নামের উপর ভরসা করে কেউ আল্লাহ্র নিকটবর্তী ও মকবুল হতে পারবে না। যে পর্যন্ত না তার মধ্যে ঈমান ও সৎ কর্ম থাকে। সুতরাং এ দাবী যেনো কেউ না করে যে আমরা পুরুষানুক্রমে মুসলমান। প্রত্যেক অফিস ও রেজিস্টারে আমাদের নাম মুসলমানদের কোটায় লিপিবদ্ধ এবং আমরা মুখেও নিজেদের মুসলমান বলি, সুতরাং সকল পুরস্কারের যোগ্য হকদার আমরাই। তাহলে ইহুদী ও আমাদের মধ্যে পার্থক্য খুব কমই থাকবে। দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের অবনতি ও অস্থিরতার মূল কারণ আমাদের এখানেই খুঁজে দেখতে হবে। আমাদের ঈমান মৌখিক। এর সাথে আন্তরিকতার সম্পর্ক কম। অর্থাৎ আমরা আন্তরিকভাবে আল্লাহ্র হুকুম মান্য করি না। যেমন-আমরা মিথ্যার বেসাতি করি, মানুষকে ঠকাতে দ্বিধাবোধ করি না, অন্যায়-অবিচার, অসত্য আজ আমাদের জীবনের সামাজিক ব্যাধি। অন্যায় আইন আজ আমরা সমাজ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে স্বীকার করে চলছি। এগুলি হচ্ছে আল্লাহ্র আইন অমান্য করা। আল্লাহ্র আইনকে অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে, মৌখিকভাবে নিজেকে মুসলমান দাবী করলেও অন্তরে আল্লাহ্কে অস্বীকার করা। সে নিজের প্রতি নিজে বিশ্বস্ত নয় এটা মুনাফিকীরই নামান্তর।
দ্বিতীয়তঃ তাঁর সৃষ্টির সেবা করা। এ ব্যাপারে মুসলমানেরা কতটুকু অগ্রগামী তা বিবেচ্য। আমরা কতটুকু আন্তরিক সমাজের মঙ্গলের জন্য, সৎ কাজে আমরা কতটুকু উৎসর্গীকৃত। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দ্বীনের ব্যাপারে মুসলিম সমাজ আজ খুব একটা আন্তরিক নয়। এখানেই দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের এত অস্থিরতা ও অবনতির কারণ। মুসলমানদের অবনতি ও অস্থিরতা অপরপক্ষে খৃষ্টান ও ইহুদীদের উন্নতির ও প্রশান্তির মূল বিষয় উপরে বর্ণিত হলো। এতে প্রতীয়মান হয় যে জগতে আমাদের দারিদ্র, পরমুখাপেক্ষিতা, বিপদ-আপদ ও সংকট ইসলামের মূল ধারা থেকে বিচ্যুতির কারণে। যারাই এই মূলধারা বা ধর্মের মূল অন্তর্নিহিত নৈতিক গুণাবলী অর্জন করেছে তারা ইহুদী বা খৃষ্টান যেই হোক না কেন তাদের উপরে আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হয়। আলোচ্য আয়াত থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ঈমান ও সৎকর্ম পূর্ণরূপে অবলম্বন না করলে শুধু বংশগতভাবে ইসলামের নাম ব্যবহারের দ্বারা কোনও শুভ ফল আশা করা যায় না [২ :৬২] দেখুন।
১১৫। ‘তাদের কোনও ভয় নাই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’-এই লাইনটি এই সূরায় এবং কুরআনের বহু জায়গাতে এসেছে। যেমন-[২, ৩৮, ৬২, ১১২, ২৬২, ২৭৪ এবং ২৭৭]এ। কুরআন নাজেল হয়েছে কবিতার ছন্দে। এর ভাষা, ছন্দ, বর্ণনার মাধুর্যে অতুলনীয়। এই লাইনটি বার বার ব্যবহৃত হয়েছে সঙ্গীতের মত। যেমন-সঙ্গীতের একটি লাইন ‘সোমের’ সৃষ্টি করে ঠিক সেরূপ। এছাড়াও এ দ্বারা লাইনটির গূঢ় অর্থের গুরুত্বের প্রতিও ইঙ্গিত করা হয়েছে।
আয়াতঃ 002.113
ইহুদীরা বলে, খ্রীস্টানরা কোন ভিত্তির উপরেই নয় এবং খ্রীস্টানরা বলে, ইহুদীরা কোন ভিত্তির উপরেই নয়। অথচ ওরা সবাই কিতাব পাঠ করে! এমনিভাবে যারা মূর্খ, তারাও ওদের মতই উক্তি করে। অতএব, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা দেবেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছিল।
The Jews said that the Christians follow nothing (i.e. are not on the right religion); and the Christians said that the Jews follow nothing (i.e. are not on the right religion); though they both recite the Scripture. Like unto their word, said (the pagans) who know not. Allâh will judge between them on the Day of Resurrection about that wherein they have been differing.
وَقَالَتِ الْيَهُودُ لَيْسَتِ النَّصَارَى عَلَىَ شَيْءٍ وَقَالَتِ النَّصَارَى لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ وَهُمْ يَتْلُونَ الْكِتَابَ كَذَلِكَ قَالَ الَّذِينَ لاَ يَعْلَمُونَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ فَاللّهُ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُواْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
Waqalati alyahoodu laysati alnnasara AAala shay-in waqalati alnnasara laysati alyahoodu AAala shay-in wahum yatloona alkitaba kathalika qala allatheena la yaAAlamoona mithla qawlihim faAllahu yahkumu baynahum yawma alqiyamati feema kanoo feehi yakhtalifoona
YUSUFALI: The Jews say: “The Christians have naught (to stand) upon; and the Christians say: “The Jews have naught (To stand) upon.” Yet they (Profess to) study the (same) Book. Like unto their word is what those say who know not; but Allah will judge between them in their quarrel on the Day of Judgment.
PICKTHAL: And the Jews say the Christians follow nothing (true), and the Christians say the Jews follow nothing (true); yet both are readers of the Scripture. Even thus speak those who know not. Allah will judge between them on the Day of Resurrection concerning that wherein they differ.
SHAKIR: And the Jews say: The Christians do not follow anything (good) and the Christians say: The Jews do not follow anything (good) while they recite the (same) Book. Even thus say those who have no knowledge, like to what they say; so Allah shall judge between them on the day of resurrection in what they differ.
KHALIFA: The Jews said, “The Christians have no basis,” while the Christians said, “The Jews have no basis.” Yet, both of them read the scripture. Such are the utterances of those who possess no knowledge. GOD will judge them on the Day of Resurrection, regarding their disputes.
রুকু – ১৪
১১৩। ইহুদীরা বলে, ‘খৃষ্টানদের [বিশ্বাসের] কোন ভিত্তি নাই’; এবং খৃষ্টানেরা বলে, ‘ইহুদীদের [বিশ্বাসের] কোন ভিত্তি নাই।’ যদিও তারা [একই কিতাব] পাঠ করে [বলে স্বীকার করে]। একইভাবে, যারা কিছুই জানে না তারাও অনুরূপ কথা বলে ১১৬। সুতরাং যে বিষয়ে তাদের মতভেদ আছে শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ্ তা ফয়সালা করবেন।
১১৬। এই আয়াতে কিতাবধারীদের সম্বন্ধে আলোচনা করা হচ্ছে। যদিও তারা ঐশী গ্রন্থপ্রাপ্ত এবং ইব্রাহীমের ধর্মের অনুসারী, তবুও নিজেদের অজ্ঞতা এবং অন্ধ অহংকারে তারা একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। যদিও তারা সকলেই ঐশী গ্রন্থের অধিকারী।
[সার্বজনীন শিক্ষা হচ্ছে অজ্ঞতা, অন্ধ-অহংকার, একগুঁয়েমী আমাদের অন্তরে অন্ধকারের সৃষ্টি করে যা আমাদের সত্য ও সুন্দরকে চিনতে বাঁধা দান করে। ভালো-মন্দ সব একাকার হয়ে যায়, ফলে সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা জন্মে।
আয়াতঃ 002.114
যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।
And who is more unjust than those who forbid that Allâh’s Name be glorified and mentioned much (i.e. prayers and invocations, etc.) in Allâh’s Mosques and strive for their ruin? It was not fitting that such should themselves enter them (Allâh’s Mosques) except in fear. For them there is disgrace in this world, and they will have a great torment in the Hereafter.
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا أُوْلَـئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلاَّ خَآئِفِينَ لهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
Waman athlamu mimman manaAAa masajida Allahi an yuthkara feeha ismuhu wasaAAa fee kharabiha ola-ika ma kana lahum an yadkhulooha illa kha-ifeena lahum fee alddunya khizyun walahum fee al-akhirati AAathabun AAatheemun
YUSUFALI: And who is more unjust than he who forbids that in places for the worship of Allah, Allah’s name should be celebrated?-whose zeal is (in fact) to ruin them? It was not fitting that such should themselves enter them except in fear. For them there is nothing but disgrace in this world, and in the world to come, an exceeding torment.
PICKTHAL: And who doth greater wrong than he who forbiddeth the approach to the sanctuaries of Allah lest His name should be mentioned therein, and striveth for their ruin. As for such, it was never meant that they should enter them except in fear. Theirs in the world is ignominy and theirs in the Hereafter is an awful doom.
SHAKIR: And who is more unjust than he who prevents (men) from the masjids of Allah, that His name should be remembered in them, and strives to ruin them? (As for) these, it was not proper for them that they should have entered them except in fear; they shall meet with disgrace in this world, and they shall have great chastisement in the hereafter.
KHALIFA: Who are more evil than those who boycott GOD’s masjids, where His name is commemorated, and contribute to their desertion? These ought not to enter therein except fearfully. They will suffer in this life humiliation, and will suffer in the Hereafter a terrible retribution.
১১৪। তার থেকে বড় জালিম আর কে আছে যে আল্লাহ্র মসজিদসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাঁধা প্রদান করে ১১৭। [প্রকৃতপক্ষে] তার প্রচন্ড ইচ্ছা সেগুলির ধ্বংস সাধন। [আল্লাহ্র ভয়ে] ভীত না হয়ে তাদের সেখানে প্রবেশ করা সঙ্গত ছিল না। তাদের জন্য এই পৃথিবীতে লাঞ্ছনা ছাড়া কিছু নাই, এবং অনাগত পৃথিবীতে তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি।
১১৭। মক্কা বিজয়ের পূর্বে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন মক্কায় প্রবেশ করে কাবা গৃহে তাওয়াফ ও নামাজ আদায় করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, তখন মক্কার মুশরিকরা তাঁকে বাধা দান করে। ফলে শেষ পর্যন্ত তিনি নামাজ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। আল্লাহ্ তায়ালা এখানে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করে এ কাজের দোষ প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় জালেম আর কে আছে যে আল্লাহ্র মসজিদসমূহে [মক্কার মসজিদুল হারাম, মদীনার মসজিদে নববী, মসজিদে বায়তুল মোকাদ্দাস প্রভৃতি সব মসজিদই অন্তর্ভূক্ত] তার নাম উচ্চারণ [ও এবাদত] করতে বাধা দেয় এবং পরিত্যক্ত করতে চেষ্টা করে।
হুদায়বিয়ার ঘটনার পর মক্কার মুশরিকরা যখন রাসূলুল্লাহ্কে (সাঃ) কাবা প্রাঙ্গণে প্রবেশ এবং তাঁর তাওয়াফে বাঁধা প্রদান করে, তখন এই আয়াত নাজেল হয়।
এই আয়াতের বর্ণনায় সাধারণ শব্দের মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র আইনের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে যাতে নির্দেশটি শুধুমাত্র খৃষ্টান ও মুশরিকদের সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করা না হয়। বরং এ নির্দেশটি সার্বজনীন, সর্বকালের জন্য এবং সকল সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য করা হয়। এ কারণেই আয়াতে বিশেষভাবে বায়তুল মোকাদ্দাসের নামোল্লেখের পরিবর্তে ‘আল্লাহ্র মসজিদ সমূহে’ সব মসজিদের ক্ষেত্রেই নির্দেশটি ব্যাপক করে দেওয়া হয়েছে।
[সাধারণ জ্ঞাতব্য হচ্ছে-ইসলাম এবাদতের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সমস্ত মসজিদই আল্লাহ্র এবাদতের জন্য উন্মুক্ত। ধর্ম সম্বন্ধে বিভিন্ন মতবাদ থাকতে পারে। ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত বা জাতিগত। ইসলাম বলে সে যেই হোক না কেন এক সম্প্রদায় আর এক সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ করতে পারেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সকলের শান্তিপূর্ণ এবাদতের জন্য বাধা স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। যতক্ষণ পর্যন্ত যে কেউ এক আল্লাহ্-য় বিশ্বাসী হয় এবং ভক্তিভরে স্রষ্টার কাছে নিজেকে নিবেদনের জন্য মসজিদে উপস্থি হয়, তার জন্য আল্লাহ্র মসজিদের দ্বার উন্মুক্ত। আত্মবিশ্লেষনের মাধ্যমে আমাদের খুঁজে দেখতে হবে আমরা কি কুরআনের এই নির্দেশ অনুসরণ করি না গোষ্ঠীগত বিভক্তিতে আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের চেষ্টা করি।
আয়াতঃ 002.115
পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।
And to Allâh belong the east and the west, so wherever you turn yourselves or your faces there is the Face of Allâh (and He is High above, over His Throne). Surely! Allâh is All-Sufficient for His creatures’ needs, All-Knowing.
وَلِلّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اللّهِ إِنَّ اللّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
Walillahi almashriqu waalmaghribu faaynama tuwalloo fathamma wajhu Allahi inna Allaha wasiAAun AAaleemun
YUSUFALI: To Allah belong the east and the West: Whithersoever ye turn, there is the presence of Allah. For Allah is all-Pervading, all-Knowing.
PICKTHAL: Unto Allah belong the East and the West, and whithersoever ye turn, there is Allah’s Countenance. Lo! Allah is All-Embracing, All-Knowing.
SHAKIR: And Allah’s is the East and the West, therefore, whither you turn, thither is Allah’s purpose; surely Allah is Amplegiving, Knowing.
KHALIFA: To GOD belongs the east and the west; wherever you go there will be the presence of GOD. GOD is Omnipresent, Omniscient.
১১৫। পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহ্রই। যেদিকেই তাকাও না কেন সর্বত্র আল্লাহ্র উপস্থিতি বিদ্যমান। আল্লাহ্র [অবস্থান] সর্বব্যাপী, [তিনি] সর্বজ্ঞ ১১৮।
১১৮। ‘ওয়াজহা’ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ‘মুখমন্ডল’ এখানে অনুবাদ করা হয়েছে উপস্থিতি। টিকা ১০৭-দ্রষ্টব্য।
আয়াতঃ 002.116
তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি তো এসব কিছু থেকে পবিত্র, বরং নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তার আজ্ঞাধীন।
And they (Jews, Christians and pagans) say: Allâh has begotten a son (children or offspring). Glory be to Him (Exalted be He above all that they associate with Him). Nay, to Him belongs all that is in the heavens and on earth, and all surrender with obedience (in worship) to Him.
وَقَالُواْ اتَّخَذَ اللّهُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَل لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ كُلٌّ لَّهُ قَانِتُونَ
Waqaloo itakhatha Allahu waladan subhanahu bal lahu ma fee alssamawati waal-ardi kullun lahu qanitoona
YUSUFALI: They say: “Allah hath begotten a son” :Glory be to Him.-Nay, to Him belongs all that is in the heavens and on earth: everything renders worship to Him.
PICKTHAL: And they say: Allah hath taken unto Himself a son. Be He glorified! Nay, but whatsoever is in the heavens and the earth is His. All are subservient unto Him.
SHAKIR: And they say: Allah has taken to himself a son. Glory be to Him; rather, whatever is in the heavens and the earth is His; all are obedient to Him.
KHALIFA: They said, “GOD has begotten a son!” Be He glorified; never! To Him belongs everything in the heavens and the earth; all are subservient to Him.
১১৬। তারা বলে, ‘আল্লাহ্ পুত্র সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র, বরং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব আল্লাহ্র [নিয়ন্ত্রণাধীনে] সকল কিছুই তারই এবাদত করে ১১৯।
১১৯। ‘আল্লাহ্ পুত্র সন্তান গ্রহণ ,করেছেন’ এ কথাটির দ্বারা আল্লাহ্র মহিমা খর্ব করা হয়। শুধু খর্ব করাই নয়, এ এক ধরণের ‘ঈশ্বর নিন্দা’ কারণ এ কথার দ্বারা এটাই বোঝানো হয় যে, আল্লাহ্ সাধারণ মানুষের মত যৌন-তাড়িত বস্তুবাদী এক শক্তি। এতে আল্লাহ্র মহিমাকে খর্ব করা হয়। আল্লাহ্র কোন অভাব নাই। তিনি অভাবমুক্ত। মরণশীল মানুষ বা প্রাণীর যে কোনও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মহান আল্লাহ্র জন্য প্রয়োগ করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। অপরপক্ষে, আধ্যাত্মিক মতবাদ অনুযায়ী সমস্ত সৃষ্টিই আল্লাহ্র সন্তান তুল্য। মা যেভাবে নিজ সন্তানকে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করে। স্নেহ ভালবাসায় সন্তানের জীবনকে ভরিয়ে দেয়, আল্লাহ্ তার সৃষ্টিকে মায়ের স্নেহের থেকেও বেশি ভালবাসেন। তাঁর করুণাধারা মায়ের স্নেহ অপেক্ষাও বেশি তাঁর সৃষ্টিকে ঘিরে থাকে। সেই হিসেবে আমরা সবাই আল্লাহ্র সন্তান। তাঁর সৃষ্টির দিকে চোখ ফিরালে দেখতে পাই, সমস্ত সৃষ্টি তাঁর আইন অর্থাৎ হুকুম মেনে চলছে। বৃক্ষকুল, প্রাণীকূল, বিশ্ব-প্রকৃতি সদা-সর্বদা আল্লাহ্র আইন মেনে চলে। উদাহরণ স্বরূপ, বলা যায়-বীজকে উপযুক্ত পরিবেশে রাখলে অঙ্কুরোদগম ঘটে। বৃক্ষ তার নিজস্ব গতিতে বড় হয়, ফল-ফুলে শোভিত হয়ে এক সময়ে মরে যায়। এটা আল্লাহ্র আইন। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, আকাশ, বাতাস, পানি, আলো সমস্ত বিশ্বভূবন ও বস্তুজগত সকলেই আল্লাহ্র প্রদত্ত স্ব-স্ব আইন মেনে চলে। সেই হিসেবে বিশ্ব-চরাচরে সকলেই আল্লাহ্র গুণগানে ব্যস্ত। আল্লাহ্র আইন মান্য করা মানেই তাঁর এবাদত করা। বস্তুজগতের ক্ষমতা নাই আল্লাহ্র আইন অমান্য করার। একমাত্র মানুষকেই আল্লাহ্ সীমিত ইচ্ছা শক্তির স্বাধীনতা দিয়েছেন যেনো সে তা প্রয়োগ করতে পারে আত্মিক উন্নতির জন্য। কিন্তু মানুষের যে দেহ সে দেহের দিকে লক্ষ্য করলেও আমরা দেখতে পাই সে নির্ভুলভাবে আল্লাহ্র আইন মেনে চলে। শৈশবে, কৈশোরে, যৌবনে, বার্ধক্যে তার যে পরিবর্তন তা আল্লাহ্র আইনকেই মেনে চলা। এ পরিবর্তনের ধারাকে রহিত করার ক্ষমতা কারও নাই। তাই আমাদের দেহ আল্লাহ্র আইন মেনে চলে। সুতরাং তাঁর গুণগান করে তাঁরই এবাদত করে। কিন্তু সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি [Limited free will] প্রাপ্ত হওয়ার ফলে মানুষ আল্লাহ্র আইন লঙ্ঘন করার ক্ষমতা রাখে এবং এ শক্তি তার আত্মায় নিহিত। এর সদ্ব্যবহার করলে আত্মিক উন্নতি হয়। অপব্যবহার আত্মিক ক্ষতি হয়।
আয়াতঃ 002.117
তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদনের সিন্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে একথাই বলেন, ‘হয়ে যাও’ তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়।
The Originator of the heavens and the earth. When He decrees a matter, He only says to it : ”Be!” – and it is.
بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَإِذَا قَضَى أَمْراً فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ
BadeeAAu alssamawati waal-ardi wa-itha qada amran fa-innama yaqoolu lahu kun fayakoonu
YUSUFALI: To Him is due the primal origin of the heavens and the earth: When He decreeth a matter, He saith to it: “Be,” and it is.
PICKTHAL: The Originator of the heavens and the earth! When He decreeth a thing, He saith unto it only: Be! and it is.
SHAKIR: Wonderful Originator of the heavens and the earth, and when He decrees an affair, He only says to it, Be, so there it is.
KHALIFA: The Initiator of the heavens and the earth: to have anything done, He simply says to it, “Be,” and it is.
১১৭। তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদি স্রষ্টা। এবং যখন তিনি কিছু করতে সিদ্ধান্ত করেন, তিনি শুধু বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়।
১১৮। যাদের কোন জ্ঞান নাই, তারা বলে, ‘আল্লাহ্ আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? অথবা আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে না কেন?’ এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরাও অনুরূপ কথা বলতো। তাদের অন্তর একই রকম। যে কেউ দৃঢ়ভাবে [তাদের অন্তরে] ঈমানকে ধরে রাখে, আমি অবশ্যই তাদের জন্য নিদর্শনাবলীকে সুস্পষ্ট করেছি।
১১৯। আমি তোমাকে সত্যসহ শুভ সংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। জাহান্নামের অধিবাসীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
১২০। ইহুদী ও খ্রীষ্টানগণ কখনও সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম মত অনুসরণ কর। বল, ‘আল্লাহ্র পথ নির্দেশই [একমাত্র] পথ নির্দেশ।’ তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে তা প্রাপ্তির পর যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ্র বিপক্ষে তোমার কোন রক্ষাকারী থাকবে না এবং কোন সাহায্যকারীও থাকবে না।
১২১। যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি যেভাবে তা পাঠ করা উচিত সেভাবে পাঠ কর। এরাই তারা যারা তাতে বিশ্বাস করে। যারা তাতে বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ।
রুকু – ১৫
১২২। হে বনী ইসরাঈলীগণ! আমার সেই বিশেষ অনুগ্রহ স্মরণ কর যা দ্বারা আমি তোমাদের অনুগৃহীত করেছি এবং সকল [জাতির] মধ্যে তোমাদের [নবুয়তের জন্য] পছন্দ করেছি।
১২৩। সেই দিন থেকে নিজেকে রক্ষা কর, যেদিন কেউ কারও উপকারে আসবে না। কারও কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবে না। কোন সুপারিশ লাভজনক হবে না। এবং [বাইরে থেকে] কেউ কোন সাহায্য পাবে না ১২২।
১২২। [২: ১২২-১২৩] আয়াত দুটি, [২: ৪৭-৪৮] আয়াত দুটির পুনরাবৃত্তি। ১২৩ এর ভাষাতে সামান্য পরিবর্তন হলেও তা আয়াতের অর্থে কোনও পরিবর্তন ঘটে নাই। এই আয়াতগুলিতে ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহের বর্ণনা সুন্দরভাবে শেষ করা হয়েছে। এরপরে শুরু হতে যাচ্ছে, আধ্যাত্মিক জগতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর হিসেবে [হযরত ইসমাইলের (আঃ) মাধ্যমে] আরবদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহ বা করুণার বর্ণনা।
আয়াতঃ 002.118
যারা কিছু জানে না, তারা বলে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে কেন কথা বলেন না? অথবা আমাদের কাছে কোন নিদর্শন কেন আসে না? এমনি ভাবে তাদের পূর্বে যারা ছিল তারাও তাদেরই অনুরূপ কথা বলেছে। তাদের অন্তর একই রকম। নিশ্চয় আমি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেছি তাদের জন্যে যারা প্রত্যয়শীল।
And those who have no knowledge say: ”Why does not Allâh speak to us (face to face) or why does not a sign come to us?” So said the people before them words of similar import. Their hearts are alike, We have indeed made plain the signs for people who believe with certainty.
وَقَالَ الَّذِينَ لاَ يَعْلَمُونَ لَوْلاَ يُكَلِّمُنَا اللّهُ أَوْ تَأْتِينَا آيَةٌ كَذَلِكَ قَالَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِم مِّثْلَ قَوْلِهِمْ تَشَابَهَتْ قُلُوبُهُمْ قَدْ بَيَّنَّا الآيَاتِ لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ
Waqala allatheena la yaAAlamoona lawla yukallimuna Allahu aw ta/teena ayatun kathalika qala allatheena min qablihim mithla qawlihim tashabahat quloobuhum qad bayyanna al-ayati liqawmin yooqinoona
YUSUFALI: Say those without knowledge: “Why speaketh not Allah unto us? or why cometh not unto us a Sign?” So said the people before them words of similar import. Their hearts are alike. We have indeed made clear the Signs unto any people who hold firmly to Faith (in their hearts).
PICKTHAL: And those who have no knowledge say: Why doth not Allah speak unto us, or some sign come unto us? Even thus, as they now speak, spake those (who were) before them. Their hearts are all alike. We have made clear the revelations for people who are sure.
SHAKIR: And those who have no knowledge say: Why does not Allah speak to us or a sign come to us? Even thus said those before them, the like of what they say; their hearts are all alike. Indeed We have made the communications clear for a people who are sure.
KHALIFA: Those who possess no knowledge say, “If only GOD could speak to us, or some miracle could come to us!” Others before them have uttered similar utterances; their minds are similar. We do manifest the miracles for those who have attained certainty.
১১৭। তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদি স্রষ্টা। এবং যখন তিনি কিছু করতে সিদ্ধান্ত করেন, তিনি শুধু বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়।
১১৮। যাদের কোন জ্ঞান নাই, তারা বলে, ‘আল্লাহ্ আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? অথবা আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে না কেন?’ এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরাও অনুরূপ কথা বলতো। তাদের অন্তর একই রকম। যে কেউ দৃঢ়ভাবে [তাদের অন্তরে] ঈমানকে ধরে রাখে, আমি অবশ্যই তাদের জন্য নিদর্শনাবলীকে সুস্পষ্ট করেছি।
১১৯। আমি তোমাকে সত্যসহ শুভ সংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। জাহান্নামের অধিবাসীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
১২০। ইহুদী ও খ্রীষ্টানগণ কখনও সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম মত অনুসরণ কর। বল, ‘আল্লাহ্র পথ নির্দেশই [একমাত্র] পথ নির্দেশ।’ তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে তা প্রাপ্তির পর যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ্র বিপক্ষে তোমার কোন রক্ষাকারী থাকবে না এবং কোন সাহায্যকারীও থাকবে না।
১২১। যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি যেভাবে তা পাঠ করা উচিত সেভাবে পাঠ কর। এরাই তারা যারা তাতে বিশ্বাস করে। যারা তাতে বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ।
রুকু – ১৫
১২২। হে বনী ইসরাঈলীগণ! আমার সেই বিশেষ অনুগ্রহ স্মরণ কর যা দ্বারা আমি তোমাদের অনুগৃহীত করেছি এবং সকল [জাতির] মধ্যে তোমাদের [নবুয়তের জন্য] পছন্দ করেছি।
১২৩। সেই দিন থেকে নিজেকে রক্ষা কর, যেদিন কেউ কারও উপকারে আসবে না। কারও কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবে না। কোন সুপারিশ লাভজনক হবে না। এবং [বাইরে থেকে] কেউ কোন সাহায্য পাবে না ১২২।
১২২। [২: ১২২-১২৩] আয়াত দুটি, [২: ৪৭-৪৮] আয়াত দুটির পুনরাবৃত্তি। ১২৩ এর ভাষাতে সামান্য পরিবর্তন হলেও তা আয়াতের অর্থে কোনও পরিবর্তন ঘটে নাই। এই আয়াতগুলিতে ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহের বর্ণনা সুন্দরভাবে শেষ করা হয়েছে। এরপরে শুরু হতে যাচ্ছে, আধ্যাত্মিক জগতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর হিসেবে [হযরত ইসমাইলের (আঃ) মাধ্যমে] আরবদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহ বা করুণার বর্ণনা।
আয়াতঃ 002.119
নিশ্চয় আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি। আপনি দোযখবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না।
Verily, We have sent you (O Muhammad Peace be upon him ) with the truth (Islâm), a bringer of glad tidings (for those who believe in what you brought, that they will enter Paradise) and a warner (for those who disbelieve in what you brought, they will enter the Hell-fire). And you will not be asked about the dwellers of the blazing Fire.
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلاَ تُسْأَلُ عَنْ أَصْحَابِ الْجَحِيمِ
Inna arsalnaka bialhaqqi basheeran wanatheeran wala tus-alu Aaan as-habi aljaheemi
YUSUFALI: Verily We have sent thee in truth as a bearer of glad tidings and a warner: But of thee no question shall be asked of the Companions of the Blazing Fire.
PICKTHAL: Lo! We have sent thee (O Muhammad) with the truth, a bringer of glad tidings and a warner. And thou wilt not be asked about the owners of hell-fire.
SHAKIR: Surely We have sent you with the truth as a bearer of good news and as a warner, and you shall not be called upon to answer for the companions of the flaming fire.
KHALIFA: We have sent you with the truth as a bearer of good news, as well as a warner. You are not answerable for those who incur Hell.
১১৭। তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদি স্রষ্টা। এবং যখন তিনি কিছু করতে সিদ্ধান্ত করেন, তিনি শুধু বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়।
১১৮। যাদের কোন জ্ঞান নাই, তারা বলে, ‘আল্লাহ্ আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? অথবা আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে না কেন?’ এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরাও অনুরূপ কথা বলতো। তাদের অন্তর একই রকম। যে কেউ দৃঢ়ভাবে [তাদের অন্তরে] ঈমানকে ধরে রাখে, আমি অবশ্যই তাদের জন্য নিদর্শনাবলীকে সুস্পষ্ট করেছি।
১১৯। আমি তোমাকে সত্যসহ শুভ সংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। জাহান্নামের অধিবাসীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
১২০। ইহুদী ও খ্রীষ্টানগণ কখনও সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম মত অনুসরণ কর। বল, ‘আল্লাহ্র পথ নির্দেশই [একমাত্র] পথ নির্দেশ।’ তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে তা প্রাপ্তির পর যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ্র বিপক্ষে তোমার কোন রক্ষাকারী থাকবে না এবং কোন সাহায্যকারীও থাকবে না।
১২১। যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি যেভাবে তা পাঠ করা উচিত সেভাবে পাঠ কর। এরাই তারা যারা তাতে বিশ্বাস করে। যারা তাতে বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ।
রুকু – ১৫
১২২। হে বনী ইসরাঈলীগণ! আমার সেই বিশেষ অনুগ্রহ স্মরণ কর যা দ্বারা আমি তোমাদের অনুগৃহীত করেছি এবং সকল [জাতির] মধ্যে তোমাদের [নবুয়তের জন্য] পছন্দ করেছি।
১২৩। সেই দিন থেকে নিজেকে রক্ষা কর, যেদিন কেউ কারও উপকারে আসবে না। কারও কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবে না। কোন সুপারিশ লাভজনক হবে না। এবং [বাইরে থেকে] কেউ কোন সাহায্য পাবে না ১২২।
১২২। [২: ১২২-১২৩] আয়াত দুটি, [২: ৪৭-৪৮] আয়াত দুটির পুনরাবৃত্তি। ১২৩ এর ভাষাতে সামান্য পরিবর্তন হলেও তা আয়াতের অর্থে কোনও পরিবর্তন ঘটে নাই। এই আয়াতগুলিতে ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহের বর্ণনা সুন্দরভাবে শেষ করা হয়েছে। এরপরে শুরু হতে যাচ্ছে, আধ্যাত্মিক জগতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর হিসেবে [হযরত ইসমাইলের (আঃ) মাধ্যমে] আরবদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহ বা করুণার বর্ণনা।
আয়াতঃ 002.120
ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই।
Never will the Jews nor the Christians be pleased with you (O Muhammad Peace be upon him ) till you follow their religion. Say: ”Verily, the Guidance of Allâh (i.e. Islâmic Monotheism) that is the (only) Guidance. And if you (O Muhammad Peace be upon him ) were to follow their (Jews and Christians) desires after what you have received of Knowledge (i.e. the Qur’ân), then you would have against Allâh neither any Walî (protector or guardian) nor any helper.
وَلَن تَرْضَى عَنكَ الْيَهُودُ وَلاَ النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ قُلْ إِنَّ هُدَى اللّهِ هُوَ الْهُدَى وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللّهِ مِن وَلِيٍّ وَلاَ نَصِيرٍ
Walan tarda AAanka alyahoodu wala alnnasara hatta tattabiAAa millatahum qul inna huda Allahi huwa alhuda wala-ini ittabaAAta ahwaahum baAAda allathee jaaka mina alAAilmi ma laka mina Allahi min waliyyin wala naseerin
YUSUFALI: Never will the Jews or the Christians be satisfied with thee unless thou follow their form of religion. Say: “The Guidance of Allah,-that is the (only) Guidance.” Wert thou to follow their desires after the knowledge which hath reached thee, then wouldst thou find neither Protector nor helper against Allah.
PICKTHAL: And the Jews will not be pleased with thee, nor will the Christians, till thou follow their creed. Say: Lo! the guidance of Allah (Himself) is Guidance. And if thou shouldst follow their desires after the knowledge which hath come unto thee, then wouldst thou have from Allah no protecting guardian nor helper.
SHAKIR: And the Jews will not be pleased with you, nor the Christians until you follow their religion. Say: Surely Allah’s guidance, that is the (true) guidance. And if you follow their desires after the knowledge that has come to you, you shall have no guardian from Allah, nor any helper.
KHALIFA: Neither the Jews, nor the Christians, will accept you, unless you follow their religion. Say, “GOD’s guidance is the true guidance.” If you acquiesce to their wishes, despite the knowledge you have received, you will find no ally or supporter to help you against GOD.
১১৭। তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদি স্রষ্টা। এবং যখন তিনি কিছু করতে সিদ্ধান্ত করেন, তিনি শুধু বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়।
১১৮। যাদের কোন জ্ঞান নাই, তারা বলে, ‘আল্লাহ্ আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? অথবা আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে না কেন?’ এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরাও অনুরূপ কথা বলতো। তাদের অন্তর একই রকম। যে কেউ দৃঢ়ভাবে [তাদের অন্তরে] ঈমানকে ধরে রাখে, আমি অবশ্যই তাদের জন্য নিদর্শনাবলীকে সুস্পষ্ট করেছি।
১১৯। আমি তোমাকে সত্যসহ শুভ সংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। জাহান্নামের অধিবাসীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
১২০। ইহুদী ও খ্রীষ্টানগণ কখনও সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম মত অনুসরণ কর। বল, ‘আল্লাহ্র পথ নির্দেশই [একমাত্র] পথ নির্দেশ।’ তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে তা প্রাপ্তির পর যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ্র বিপক্ষে তোমার কোন রক্ষাকারী থাকবে না এবং কোন সাহায্যকারীও থাকবে না।
১২১। যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি যেভাবে তা পাঠ করা উচিত সেভাবে পাঠ কর। এরাই তারা যারা তাতে বিশ্বাস করে। যারা তাতে বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ।
রুকু – ১৫
১২২। হে বনী ইসরাঈলীগণ! আমার সেই বিশেষ অনুগ্রহ স্মরণ কর যা দ্বারা আমি তোমাদের অনুগৃহীত করেছি এবং সকল [জাতির] মধ্যে তোমাদের [নবুয়তের জন্য] পছন্দ করেছি।
১২৩। সেই দিন থেকে নিজেকে রক্ষা কর, যেদিন কেউ কারও উপকারে আসবে না। কারও কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবে না। কোন সুপারিশ লাভজনক হবে না। এবং [বাইরে থেকে] কেউ কোন সাহায্য পাবে না ১২২।
১২২। [২: ১২২-১২৩] আয়াত দুটি, [২: ৪৭-৪৮] আয়াত দুটির পুনরাবৃত্তি। ১২৩ এর ভাষাতে সামান্য পরিবর্তন হলেও তা আয়াতের অর্থে কোনও পরিবর্তন ঘটে নাই। এই আয়াতগুলিতে ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহের বর্ণনা সুন্দরভাবে শেষ করা হয়েছে। এরপরে শুরু হতে যাচ্ছে, আধ্যাত্মিক জগতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর হিসেবে [হযরত ইসমাইলের (আঃ) মাধ্যমে] আরবদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহ বা করুণার বর্ণনা।
আয়াতঃ 002.121
আমি যাদেরকে গ্রন্থ দান করেছি, তারা তা যথাযথভাবে পাঠ করে। তারাই তৎপ্রতি বিশ্বাস করে। আর যারা তা অবিশ্বাস করে, তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
Those (who embraced Islâm from Banî Israel) to whom We gave the Book [the Taurât (Torah)] [or those (Muhammad’s Peace be upon him companions) to whom We have given the Book (the Qur’ân)] recite it (i.e. obey its orders and follow its teachings) as it should be recited (i.e. followed), they are the ones that believe therein. And whoso disbelieves in it (the Qur’ân), those are they who are the losers. (Tafsir Al-Qurtubî. Vol. 2, Page 95).
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلاَوَتِهِ أُوْلَـئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَمن يَكْفُرْ بِهِ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
Allatheena ataynahumu alkitaba yatloonahu haqqa tilawatihi ola-ika yu/minoona bihi waman yakfur bihi faola-ika humu alkhasiroona
YUSUFALI: Those to whom We have sent the Book study it as it should be studied: They are the ones that believe therein: Those who reject faith therein,- the loss is their own.
PICKTHAL: Those unto whom We have given the Scripture, who read it with the right reading, those believe in it. And whoso disbelieveth in it, those are they who are the losers.
SHAKIR: Those to whom We have given the Book read it as it ought to be read. These believe in it; and whoever disbelieves in it, these it is that are the losers.
KHALIFA: Those who received the scripture, and know it as it should be known, will believe in this. As for those who disbelieve, they are the losers.
১১৭। তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদি স্রষ্টা। এবং যখন তিনি কিছু করতে সিদ্ধান্ত করেন, তিনি শুধু বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়।
১১৮। যাদের কোন জ্ঞান নাই, তারা বলে, ‘আল্লাহ্ আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? অথবা আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে না কেন?’ এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরাও অনুরূপ কথা বলতো। তাদের অন্তর একই রকম। যে কেউ দৃঢ়ভাবে [তাদের অন্তরে] ঈমানকে ধরে রাখে, আমি অবশ্যই তাদের জন্য নিদর্শনাবলীকে সুস্পষ্ট করেছি।
১১৯। আমি তোমাকে সত্যসহ শুভ সংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। জাহান্নামের অধিবাসীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
১২০। ইহুদী ও খ্রীষ্টানগণ কখনও সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম মত অনুসরণ কর। বল, ‘আল্লাহ্র পথ নির্দেশই [একমাত্র] পথ নির্দেশ।’ তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে তা প্রাপ্তির পর যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ্র বিপক্ষে তোমার কোন রক্ষাকারী থাকবে না এবং কোন সাহায্যকারীও থাকবে না।
১২১। যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি যেভাবে তা পাঠ করা উচিত সেভাবে পাঠ কর। এরাই তারা যারা তাতে বিশ্বাস করে। যারা তাতে বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ।
রুকু – ১৫
১২২। হে বনী ইসরাঈলীগণ! আমার সেই বিশেষ অনুগ্রহ স্মরণ কর যা দ্বারা আমি তোমাদের অনুগৃহীত করেছি এবং সকল [জাতির] মধ্যে তোমাদের [নবুয়তের জন্য] পছন্দ করেছি।
১২৩। সেই দিন থেকে নিজেকে রক্ষা কর, যেদিন কেউ কারও উপকারে আসবে না। কারও কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবে না। কোন সুপারিশ লাভজনক হবে না। এবং [বাইরে থেকে] কেউ কোন সাহায্য পাবে না ১২২।
১২২। [২: ১২২-১২৩] আয়াত দুটি, [২: ৪৭-৪৮] আয়াত দুটির পুনরাবৃত্তি। ১২৩ এর ভাষাতে সামান্য পরিবর্তন হলেও তা আয়াতের অর্থে কোনও পরিবর্তন ঘটে নাই। এই আয়াতগুলিতে ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহের বর্ণনা সুন্দরভাবে শেষ করা হয়েছে। এরপরে শুরু হতে যাচ্ছে, আধ্যাত্মিক জগতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর হিসেবে [হযরত ইসমাইলের (আঃ) মাধ্যমে] আরবদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহ বা করুণার বর্ণনা।
আয়াতঃ 002.122
হে বনী-ইসরাঈল! আমার অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা আমি তোমাদের দিয়েছি। আমি তোমাদেরকে বিশ্বাবাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।
O Children of Israel! Remember My Favour which I bestowed upon you and that I preferred you to the ’Alamîn (mankind and jinns) (of your time-period, in the past).
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُواْ نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ
Ya banee isra-eela othkuroo niAAmatiya allatee anAAamtu AAalaykum waannee faddaltukum AAala alAAalameena
YUSUFALI: O Children of Israel! call to mind the special favour which I bestowed upon you, and that I preferred you to all others (for My Message).
PICKTHAL: O Children of Israel! Remember My favour wherewith I favoured you and how I preferred you to (all) creatures.
SHAKIR: O children of Israel, call to mind My favor which I bestowed on you and that I made you excel the nations.
KHALIFA: O Children of Israel, remember My favor which I bestowed upon you, and that I blessed you more than any other people.
১১৭। তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদি স্রষ্টা। এবং যখন তিনি কিছু করতে সিদ্ধান্ত করেন, তিনি শুধু বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়।
১১৮। যাদের কোন জ্ঞান নাই, তারা বলে, ‘আল্লাহ্ আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? অথবা আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে না কেন?’ এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরাও অনুরূপ কথা বলতো। তাদের অন্তর একই রকম। যে কেউ দৃঢ়ভাবে [তাদের অন্তরে] ঈমানকে ধরে রাখে, আমি অবশ্যই তাদের জন্য নিদর্শনাবলীকে সুস্পষ্ট করেছি।
১১৯। আমি তোমাকে সত্যসহ শুভ সংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। জাহান্নামের অধিবাসীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
১২০। ইহুদী ও খ্রীষ্টানগণ কখনও সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম মত অনুসরণ কর। বল, ‘আল্লাহ্র পথ নির্দেশই [একমাত্র] পথ নির্দেশ।’ তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে তা প্রাপ্তির পর যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ্র বিপক্ষে তোমার কোন রক্ষাকারী থাকবে না এবং কোন সাহায্যকারীও থাকবে না।
১২১। যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি যেভাবে তা পাঠ করা উচিত সেভাবে পাঠ কর। এরাই তারা যারা তাতে বিশ্বাস করে। যারা তাতে বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ।
রুকু – ১৫
১২২। হে বনী ইসরাঈলীগণ! আমার সেই বিশেষ অনুগ্রহ স্মরণ কর যা দ্বারা আমি তোমাদের অনুগৃহীত করেছি এবং সকল [জাতির] মধ্যে তোমাদের [নবুয়তের জন্য] পছন্দ করেছি।
১২৩। সেই দিন থেকে নিজেকে রক্ষা কর, যেদিন কেউ কারও উপকারে আসবে না। কারও কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবে না। কোন সুপারিশ লাভজনক হবে না। এবং [বাইরে থেকে] কেউ কোন সাহায্য পাবে না ১২২।
১২২। [২: ১২২-১২৩] আয়াত দুটি, [২: ৪৭-৪৮] আয়াত দুটির পুনরাবৃত্তি। ১২৩ এর ভাষাতে সামান্য পরিবর্তন হলেও তা আয়াতের অর্থে কোনও পরিবর্তন ঘটে নাই। এই আয়াতগুলিতে ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহের বর্ণনা সুন্দরভাবে শেষ করা হয়েছে। এরপরে শুরু হতে যাচ্ছে, আধ্যাত্মিক জগতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর হিসেবে [হযরত ইসমাইলের (আঃ) মাধ্যমে] আরবদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহ বা করুণার বর্ণনা।
আয়াতঃ 002.123
তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যে দিন এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না, কারও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কার ও সুপারিশ ফলপ্রদ হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত ও হবে না।
And fear the Day (of Judgement) when no person shall avail another, nor shall compensation be accepted from him, nor shall intercession be of use to him, nor shall they be helped.
وَاتَّقُواْ يَوْماً لاَّ تَجْزِي نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ شَيْئاً وَلاَ يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلاَ تَنفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَلاَ هُمْ يُنصَرُونَ
Waittaqoo yawman la tajzee nafsun AAan nafsin shay-an wala yuqbalu minha AAadlun wala tanfaAAuha shafaAAatun wala hum yunsaroona
YUSUFALI: Then guard yourselves against a-Day when one soul shall not avail another, nor shall compensation be accepted from her nor shall intercession profit her nor shall anyone be helped (from outside).
PICKTHAL: And guard (yourselves) against a day when no soul will in aught avail another, nor will compensation be accepted from it, nor will intercession be of use to it; nor will they be helped.
SHAKIR: And be on your guard against a day when no soul shall avail another in the least neither shall any compensation be accepted from it, nor shall intercession profit it, nor shall they be helped.
KHALIFA: Beware of the day when no soul will help another soul, no ransom will be accepted, no intercession will be useful, and no one will be helped.
১১৭। তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদি স্রষ্টা। এবং যখন তিনি কিছু করতে সিদ্ধান্ত করেন, তিনি শুধু বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়।
১১৮। যাদের কোন জ্ঞান নাই, তারা বলে, ‘আল্লাহ্ আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? অথবা আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে না কেন?’ এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরাও অনুরূপ কথা বলতো। তাদের অন্তর একই রকম। যে কেউ দৃঢ়ভাবে [তাদের অন্তরে] ঈমানকে ধরে রাখে, আমি অবশ্যই তাদের জন্য নিদর্শনাবলীকে সুস্পষ্ট করেছি।
১১৯। আমি তোমাকে সত্যসহ শুভ সংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। জাহান্নামের অধিবাসীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
১২০। ইহুদী ও খ্রীষ্টানগণ কখনও সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম মত অনুসরণ কর। বল, ‘আল্লাহ্র পথ নির্দেশই [একমাত্র] পথ নির্দেশ।’ তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে তা প্রাপ্তির পর যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ্র বিপক্ষে তোমার কোন রক্ষাকারী থাকবে না এবং কোন সাহায্যকারীও থাকবে না।
১২১। যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি যেভাবে তা পাঠ করা উচিত সেভাবে পাঠ কর। এরাই তারা যারা তাতে বিশ্বাস করে। যারা তাতে বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ।
রুকু – ১৫
১২২। হে বনী ইসরাঈলীগণ! আমার সেই বিশেষ অনুগ্রহ স্মরণ কর যা দ্বারা আমি তোমাদের অনুগৃহীত করেছি এবং সকল [জাতির] মধ্যে তোমাদের [নবুয়তের জন্য] পছন্দ করেছি।
১২৩। সেই দিন থেকে নিজেকে রক্ষা কর, যেদিন কেউ কারও উপকারে আসবে না। কারও কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবে না। কোন সুপারিশ লাভজনক হবে না। এবং [বাইরে থেকে] কেউ কোন সাহায্য পাবে না ১২২।
১২২। [২: ১২২-১২৩] আয়াত দুটি, [২: ৪৭-৪৮] আয়াত দুটির পুনরাবৃত্তি। ১২৩ এর ভাষাতে সামান্য পরিবর্তন হলেও তা আয়াতের অর্থে কোনও পরিবর্তন ঘটে নাই। এই আয়াতগুলিতে ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহের বর্ণনা সুন্দরভাবে শেষ করা হয়েছে। এরপরে শুরু হতে যাচ্ছে, আধ্যাত্মিক জগতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর হিসেবে [হযরত ইসমাইলের (আঃ) মাধ্যমে] আরবদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহ বা করুণার বর্ণনা।
যখন ইব্রাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না।
And (remember) when the Lord of Ibrâhim (Abraham) [i.e., Allâh] tried him with (certain) Commands, which he fulfilled. He (Allâh) said (to him), ”Verily, I am going to make you a leader (Prophet) of mankind.” [Ibrâhim (Abraham)] said, ”And of my offspring (to make leaders).” (Allâh) said, ”My Covenant (Prophethood, etc.) includes not Zâlimûn (polytheists and wrong-doers).”
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِي قَالَ لاَ يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ
Wa-ithi ibtala ibraheema rabbuhu bikalimatin faatammahunna qala innee jaAAiluka lilnnasi imaman qala wamin thurriyyatee qala la yanalu AAahdee alththalimeena
YUSUFALI: And remember that Abraham was tried by his Lord with certain commands, which he fulfilled: He said: “I will make thee an Imam to the Nations.” He pleaded: “And also (Imams) from my offspring!” He answered: “But My Promise is not within the reach of evil-doers.”
PICKTHAL: And (remember) when his Lord tried Abraham with (His) commands, and he fulfilled them, He said: Lo! I have appointed thee a leader for mankind. (Abraham) said: And of my offspring (will there be leaders)? He said: My covenant includeth not wrong-doers.
SHAKIR: And when his Lord tried Ibrahim with certain words, he fulfilled them. He said: Surely I will make you an Imam of men. Ibrahim said: And of my offspring? My covenant does not include the unjust, said He.
KHALIFA: Recall that Abraham was put to the test by his Lord, through certain commands, and he fulfilled them. (God) said, “I am appointing you an imam for the people.” He said, “And also my descendants?” He said, “My covenant does not include the transgressors.”
১২৪। এবং স্মরণ কর ইব্রাহীমকে তাঁর প্রভু কয়েকটি হুকুম দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন ১২৩ যা সে প্রতিপালন করেছিলো। আল্লাহ্ বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে সকল জাতির নেতা করবো ১২৪।’ সে আবেদন করেছিলো, ‘এবং আমার বংশধরগণের মধ্য থেকেও [ইমাম হবে]’। আল্লাহ্ বলেছিলেন, ‘কিন্তু আমার প্রতিশ্রুতি পাপীদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না।’
১২৩+১২৪। এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে, তিনি হযরত ইব্রাহীমের পরীক্ষা নিয়েছিলেন এবং হযরত ইব্রাহীম তাঁর ইচ্ছাকে স্রষ্টার ইচ্ছার কাছে বিলীনকরে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ্র ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ। হযরত ইব্রাহীমের পরীক্ষা কোন অজ্ঞতা যাচাই এর জন্য ছিল না বরং এর উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁকে আধ্যাত্মিক জগতে পূর্ণতার স্তরে পৌঁছে দেওয়া। আল্লাহ্র কাছে শিক্ষা বিষয়ক জ্ঞানের চাইতে চারিত্রিক দৃঢ়তার মূল্য বেশি। এতে বোঝা যায় আল্লাহ্র দরবারে যে বিষয়ের মূল্য বেশি তা শিক্ষা বিষয়ক জ্ঞান নয়, বরং কার্যগত ও চরিত্রগত শ্রেষ্ঠত্ব। এ ধরনের পরীক্ষার বিষয়-বস্তুর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল-
আল্লাহ্ তায়ালার ইচ্ছা ছিল হযরত ইব্রাহীমকে স্বীয় বন্ধুত্বের বিশেষ মূল্যবোন পোশাক উপহার দেওয়া। তাই তাঁকে বিভিন্ন রকম কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। সমগ্র জাতি এমন কি তাঁর আপন পরিবারের সবাই মূর্তি পূজায় লিপ্ত ছিল। সবার বিশ্বাস ও রীতিনীতির বিপরীত একটি সনাতন ধর্ম তাকে দেওয়া হয়। জাতিকে এ ধর্মের দিকে আহবান জানানোর গুরু দায়িত্ব তাঁর কাঁধে অর্পন করা হয়। তিনি পয়গম্বর সুলভ দৃঢ়তা ও সাহসিকতার মাধ্যমে নির্ভয়ে জাতিকে এক আল্লাহ্র দিকে আহবান জানান। বিভিন্ন পন্থায় তিনি মূর্তিপূঁজার নিন্দা ও কুৎসা প্রচার করেন। প্রকৃত পক্ষে কার্যক্ষেত্রে তিনি মূর্তিসমূহের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। ফলে সমগ্র জাতি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উদ্যত হয়। বাদশাহ নমরুদ ও তার পরিবারবর্গ তাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেয়। আল্লাহ্র খলীল (বন্ধু) প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য এসব বিপদ-আপদ সত্ত্বেও হাসিমুখে নিজেকে অগ্নিতে নিক্ষেপের জন্য পেশ করেন।
এ পরীক্ষা সমাপ্ত হলে জন্মভূমি ত্যাগ করে সিরিয়ায় হিজরতের পর দ্বিতীয় পরীক্ষা নেওয়া হয়। ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের আশায় স্বগোত্র ও মাতৃভূমিকেও হাসিমুখে ত্যাগ করে পরিবার পরিজনসহ হিজরত করলেন।
মাতৃভূমি ও স্বজাতি ত্যাগ করে সিরিয়ায় অবস্থান করতেই নির্দেশ এরো বিবি হাজেরাকে দুগ্ধপোশ্য শিশু হযরত ইসমাঈলসহ নির্বাসনের। আল্লাহ্র ইচ্ছা মক্কা নগরীর সৃষ্টি ও হযরত ইসমাঈলের বংশে আরবে শেষ নবী প্রেরণ করা। তাই এই পুরো ঘটনার অবতারণা। এখানে অনুধাবনযোগ্য যে, শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ নবী স্বীয় বংশে পাওয়ার সম্মান ও গৌরব আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীমকে দিবেন। কিন্তু আল্লাহ্ দান বহু সাধনার দ্বারা ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হয়। তাই তো আমরা দেখি সৎ ও ঈমানদার ব্যক্তি দুঃখ কষ্টের মধ্যে বেশি নিপতিত হয়। কারণ দুঃখ কষ্টের আগুনে পুড়ে তাদের আত্মা নিখাদ হয়, খাঁটি সোনায় রূপান্তরিত হয়, ফলে আল্লাহ্র সান্নিধ্য সেই হৃদয়ে অনুভব করার ক্ষমতা জন্মে। হযরত ইব্রাহীমের চরিত্রের মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে, আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনই হচ্ছে ইসলাম। দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা এরই মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ এবং সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের যোগ্যতা অর্জন করে।
অতঃপর হযরত হাজেরা দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে জন-মানবহীন প্রান্তরে কালাতিপাত করতে থাকেন। এক সময়ে দারুণ পিপাসা তাঁকে পানির খোঁজে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করলো। তিনি শিশুকে উন্মুক্ত প্রান্তরে রেখে পানির খোঁজে ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ পাহাড়ে বারবার দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলেন। কিন্তু কোথাও পানির চিহ্নমাত্র দেখলেন না এবং এমন কোনও মানুষ দৃষ্টিগোচর হল না, যার কাছে কিছু সাহায্য পেতে পারেন। সাতবার ছুটাছুটি করে পানির কোনও হদিস করতে না পেরে বিবি হাজেরা শিশু ইসমাঈলের কাছে ফিরে এলেন। কিন্তু তিনি আল্লাহ্র রহমতের উপরে অটল বিশ্বাসে, আল্লাহ্র কাছেই পানির জন্য প্রার্থনা জানালেন। এবারে আল্লাহ্র রহমত নাজিল হল। জিবরাঈল এলেন এবং শুষ্ক মরুভূমিতে পানির একটি ঝর্ণা ধারা বইয়ে দিলেন-যা যমযম কূপ নামে খ্যাত। এখানে বিবি হাজেরার চরিত্র থেকে আল্লাহ্ আমাদের শিক্ষনীয় করেছেন যে বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করতে এবং আল্লাহ্র রহমত থেকে কখনও নিরাশ না হতে। বিবি হাজেরার সাফা ও মারওয়া দৌড়ানোর ঘটনা হচ্ছে বিপদে ধৈর্য্য ধারণের প্রতীক। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ পাহাড় দুটির মাঝখানে সাতবার দৌড়ানো কিয়ামত পর্যন্ত ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য হজ্জ্বের বিধিবিধানে অত্যাবশকীয় করা হয়েছে। ধৈর্য্য ও আল্লাহ্র রহমতের প্রত্যাশাকে প্রতীকের সাহায্যে হজ্জ্বের ময়দানে আমরা এভাবেই উপস্থাপন করি। যমযম কূপের সৃষ্টির পর তার চারিপাশে আস্তে আস্তে জনবসতি গড়ে উঠে এবং মক্কা নগরীর সূত্রপাত হয় এবং শিশু ইসমাঈল ধীরে ধীরে বড় হতে থাকেন।
এরপর আল্লাহ্র হুকুম হয় হযরত ইসমাঈলকে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য কোরবানী দিতে। এর পরবর্তী ঘটনা সবারই জানা। এটা ছিল পুত্রবৎসল পিতার চরম আত্মোৎসর্গের পরীক্ষা। এগুলো ছিল শক্ত ও বড় কঠিন পরীক্ষা যার সম্মুখীন হযরত খলীলুল্লাহকে করা হল।
এই আয়াতটিকে [২:১২৪] পরবর্তী আয়াতসমূহের সারাংশ হিসেবে ধরা হয়। ‘কালিমাত’ এ শব্দটির দ্বারা রহস্যময় ইচ্ছা বা পরীক্ষাসমূহকে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষাতেই হযরত ইব্রাহীম আল্লাহ্র ইচ্ছা পূরণ করেন। এছাড়াও তিনি আল্লাহ্র ঘরকে পুনঃনির্মাণ করেন। একে পুতঃ পবিত্র করেন। যে কেউ আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন করে সেই মুসলিম। হযরত ইব্রাহীম ছিলেন খাঁটি মুসলিম। আমাদের যে বিশ্বাস আমরা জন্মসূত্রে মুসলিম-সুতরাং আমরা আল্লাহ্র কাছে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এ বিশ্বাস ঠিক নয়। মুসলমানের একমাত্র মানদন্ড হচ্ছে আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পন, তা কি আজকে বিশ্ব মুসলিম সমাজ পালন করে? আমরা নামেই বা জন্মসূত্রে মুসলিম-কিন্তু প্রতিনিয়ত আমরা আল্লাহ্র ইচ্ছার আইন অমান্য করি-অর্থাৎ আমরা সত্যবাদী হব, সৎ পথে চলবো, মানুষকে ঠকাবো না, ন্যায় ও সত্যের জন্য জেহাদ ঘোষণা করবো ইত্যাদিই হচ্ছে আল্লাহ্র ইচ্ছা বা আইন যা আমরা অমান্য করি। ভেবে দেখতে হবে আমরা ব্যক্তিগত জীবনে ও জাতীয় জীবনে আল্লাহ্র এই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছি কিনা। যদি না পেরে থাকি তবে অবশ্যই আল্লাহ্র রোষানলে আমরা পতিত হবে। এই-ই আল্লাহ্র বিধান।
হযরত ইব্রাহীমের এই চারিত্রিক দৃঢ়তার জন্য আল্লাহ্ তাকে পৃথিবীর আধ্যাত্মিক জগতের নেতৃত্ব দান করেন। হযরত ইব্রাহীম তাঁর বংশধরদের জন্যও এই অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। আল্লাহ্ তাঁর প্রার্থনা কবুল করেন-কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে। নৈতিক ও কার্যগত গুণে গুণান্বিত হওয়া হচ্ছে নেতৃত্বের প্রধান শর্ত। পাপাচারী ও জালিমকে নেতৃত্ব লাভের সম্মান দেওয়া হবে না-হোক না কেন সে হযরত ইব্রাহীমের বংশধর। এর ব্যাখ্যা এই যে নেতৃত্ব একদিক দিয়ে আল্লাহ্র খেলাফত বা প্রতিনিধি। আল্লাহ্র অবাধ্য বা বিদ্রোহী, যারা উপরিউক্ত নৈতিক ও কর্মগতগুণে গুণান্বিত হয় না, তাদেরকে এ পদ দেয়া যায় না। এ কারণেই যারা নৈতিক চরিত্র ও কর্মগুণে গুণান্বিত নয়, তাদের স্বেচ্ছায় বা ভোট দানের মাধ্যমে নেতা নিযুক্ত না করা মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
আয়াতঃ 002.125
যখন আমি কা’বা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।
And (remember) when We made the House (the Ka’bah at Makkah) a place of resort for mankind and a place of safety. And take you (people) the Maqâm (place) of Ibrâhim (Abraham) [or the stone on which Ibrâhim (Abraham) stood while he was building the Ka’bah] as a place of prayer (for some of your prayers, e.g. two Rak’at after the Tawâf of the Ka’bah at Makkah), and We commanded Ibrâhim (Abraham) and Ismâ’il (Ishmael) that they should purify My House (the Ka’bah at Makkah) for those who are circumambulating it, or staying (I’tikâf), or bowing or prostrating themselves (there, in prayer).
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْناً وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
Wa-ith jaAAalna albayta mathabatan lilnnasi waamnan waittakhithoo min maqami ibraheema musallan waAAahidna ila ibraheema wa-ismaAAeela an tahhira baytiya liltta-ifeena waalAAakifeena waalrrukkaAAi alssujoodi
YUSUFALI: Remember We made the House a place of assembly for men and a place of safety; and take ye the station of Abraham as a place of prayer; and We covenanted with Abraham and Isma’il, that they should sanctify My House for those who compass it round, or use it as a retreat, or bow, or prostrate themselves (therein in prayer).
PICKTHAL: And when We made the House (at Makka) a resort for mankind and sanctuary, (saying): Take as your place of worship the place where Abraham stood (to pray). And We imposed a duty upon Abraham and Ishmael, (saying): Purify My house for those who go around and those who meditate therein and those who bow down and prostrate themselves (in worship).
SHAKIR: And when We made the House a pilgrimage for men and a (place of) security, and: Appoint for yourselves a place of prayer on the standing-place of Ibrahim. And We enjoined Ibrahim and Ismail saying: Purify My House for those who visit (it) and those who abide (in it) for devotion and those who bow down (and) those who prostrate themselves.
KHALIFA: We have rendered the shrine (the Ka`aba) a focal point for the people, and a safe sanctuary. You may use Abraham’s shrine as a prayer house. We commissioned Abraham and Ismail: “You shall purify My house for those who visit, those who live there, and those who bow and prostrate.”
১২৫। স্মরণ কর, কাবা ঘরকে আমি মানব জাতির মিলন কেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম, [এবং বলেছিলাম] তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর; ১২৫। আমি ইব্রাহীম, ইসমাঈল এর নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম, যে, তারা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখবে ১২৬।
১২৫। কাবা শরীফ হচ্ছে আল্লাহ্র ঘর। কাবা শরীফ পুনঃনির্মাণ করেন হযরত ইব্রাহীম, হযরত ইসমাঈলের সহযোগিতায়। আল্লাহ্ কাবা শরীফের চারটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যেমন-
ক) এই স্থান হবে সকলের সম্মেলন স্থান, তা হতে পারে ব্যবসা বাণিজ্য বা উপাসনা, যে কোন ব্যাপারে।
খ) কাবা গৃহ এবং এর সীমানা অত্যন্ত পবিত্র। শত্রু-মিত্র সবাই এই স্থানকে সম্মান করবে। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সীমানার মধ্যে সর্বপ্রকার সহিংসতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোন রকম খেলাধুলা এবং আনুষাঙ্গিক আনন্দ ফূর্তি করাও সীমানার মধ্যে নিষেধ। এই স্থানকে আল্লাহ্ সকলের জন্য নিরাপদ স্থানরূপে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। কাবা হচ্ছে শান্তির আবাসস্থল।
গ) কাবা গৃহ হচ্ছে আল্লাহ্র এবাদতের স্থান। এখানে মাকামে ইব্রাহীম অবস্থিত অর্থাৎ ঐ পাথর যাতে মোজেযা হিসেবে হযরত ইব্রাহীমের পদচিহ্ন অঙ্কিত হয়ে আছে।
ঘ) এ গৃহকে অবশ্যই সর্বদা পূত-পবিত্র রাখা কর্তব্য। কাবা গৃহকে যাবতীয় বাহ্যিক ও আত্মিক অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। দেহ ও পোষাক পরিচ্ছদকে যাবতীয় অপবিত্রতা ও দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু থেকে পাক-সাফ করে এবং অন্তরকে কুফ্র, শিরক্, দুশ্চরিত্রতা, অহংকার, হিংসা, লোভ-লালসা ইত্যাদি থেকে পবিত্র করে কাবা শরীফে প্রবেশ করা কর্তব্য। অর্থাৎ হজ্বের পূর্বশর্ত হচ্ছে দৈহিক ও আত্মিক পবিত্রতা।
১২৬। এখানে চারটি আচার অনুষ্ঠানের উল্লেখ করা হয়েছে।
ক) তাওয়াফ করা বা কাবা শরীফের চতুর্দিক প্রদক্ষিণ করা
খ) ইতিকাফ করার স্থান হচ্ছে এই স্থান।
গ) রুকু করা।
ঘ) সেজদা করা।
এই পবিত্র স্থানকে পবিত্র রাখার দায়িত্ব সবার। তবে যারা হজ্জ্বযাত্রী, যারা এই আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে তাদের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতার উপর। বাহ্যিক অপবিত্রতা ও আবর্জনা এবং আত্মিক অপবিত্রতা উভয়টিই এর অন্তুর্ভূক্ত যেমন-কুফর, শির্ক, দুশ্চরিত্রতা, হিংসা, লোভ-লালসা, কু-প্রবৃত্তি, অহংকার, রিয়া, নাম-যশ ইত্যাদি অন্তরে রেখে আল্লাহ্র গৃহে আগমণ না জায়েয। পৃথিবীর সব লোভ-লালসা, প্রবৃত্তি কামনা সব কিছু ত্যাগ করে শুদ্ধ পবিত্র আত্মাকে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে নিবেদনের জন্যই তীর্থযাত্রীদের কাবাগৃহে আগমন করা উচিত। আমাদের আচার-অনুষ্ঠান সবই হবে আন্তরিক যেনো শুদ্ধ-পবিত্র আত্মার নিবেদন তাঁর কাছে পৌঁছায়। পৃথিবীর সবকিছুর মোহ ত্যাগ করে পবিত্র আত্মা নিয়ে তার দরবারে হাজির হওয়ার নামই হচ্ছে হজ্বব্রত পালন।
আয়াতঃ 002.126
যখন ইব্রাহীম বললেন, পরওয়ারদেগার! এ স্থানকে তুমি শান্তিধান কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা অল্লাহ ও কিয়ামতে বিশ্বাস করে, তাদেরকে ফলের দ্বারা রিযিক দান কর। বললেনঃ যারা অবিশ্বাস করে, আমি তাদেরও কিছুদিন ফায়দা ভোগ করার সুযোগ দেব, অতঃপর তাদেরকে বলপ্রয়োগে দোযখের আযাবে ঠেলে দেবো; সেটা নিকৃষ্ট বাসস্থান।
And (remember) when Ibrâhim (Abraham) said, ”My Lord, make this city (Makkah) a place of security and provide its people with fruits, such of them as believe in Allâh and the Last Day.” He (Allâh) answered: ”As for him who disbelieves, I shall leave him in contentment for a while, then I shall compel him to the torment of the Fire, and worst indeed is that destination!”
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَـَذَا بَلَدًا آمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آمَنَ مِنْهُم بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ قَالَ وَمَن كَفَرَ فَأُمَتِّعُهُ قَلِيلاً ثُمَّ أَضْطَرُّهُ إِلَى عَذَابِ النَّارِ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
Wa-ith qala ibraheemu rabbi ijAAal hatha baladan aminan waorzuq ahlahu mina alththamarati man amana minhum biAllahi waalyawmi al-akhiri qala waman kafara faomattiAAuhu qaleelan thumma adtarruhu ila AAathabi alnnari wabi/sa almaseeru
YUSUFALI: And remember Abraham said: “My Lord, make this a City of Peace, and feed its people with fruits,-such of them as believe in Allah and the Last Day.” He said: “(Yea), and such as reject Faith,-for a while will I grant them their pleasure, but will soon drive them to the torment of Fire,- an evil destination (indeed)!”
PICKTHAL: And when Abraham prayed: My Lord! Make this a region of security and bestow upon its people fruits, such of them as believe in Allah and the Last Day, He answered: As for him who disbelieveth, I shall leave him in contentment for a while, then I shall compel him to the doom of Fire – a hapless journey’s end!
SHAKIR: And when Ibrahim said: My Lord, make it a secure town and provide its people with fruits, such of them as believe in Allah and the last day. He said: And whoever disbelieves, I will grant him enjoyment for a short while, then I will drive him to the chastisement of the fire; and it is an evil destination.
KHALIFA: Abraham prayed: “My Lord, make this a peaceful land, and provide its people with fruits. Provide for those who believe in GOD and the Last Day.” (God) said, “I will also provide for those who disbelieve. I will let them enjoy, temporarily, then commit them to the retribution of Hell, and a miserable destiny.”
১২৬। এবং স্মরণ কর, ইব্রাহীম বলেছিলো, ‘হে আমার প্রভু ইহাকে শান্তির শহরে পরিণত করে দিও ১২৭; এবং এদের মধ্যে যারা আল্লাহ্ এবং পরকালে বিশ্বাস করে তাদের ফলমূল থেকে জীবিকা প্রদান করো’ ১২৮। তিনি বললেন, ‘[হ্যাঁ] এবং যারা ঈমানকে প্রত্যাখান করবে, তাদেরকেও কিছুকালের জন্য সুখ ভোগ করতে দেবো। কিন্তু শীঘ্রই তাদের আগুনের শাস্তির দিকে তাড়িত করা হবে-[প্রকৃতই] উহা কত নিকৃষ্ট পরিণাম।’
১২৭। মূল শব্দ ‘সালাম’। ইসলাম অর্থ ‘শান্তি’। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হেরেমকে শান্তির স্থলরূপে বানানোর জন্য প্রার্থনা করেন। ইসলামে হেরেমকে শান্তির শহর বলা হয়, কারণ এখানে কাবা গৃহ অবস্থিত। ইহুদীরাও জেরুজালেমকে তাদের ‘শান্তির শহর’ বলে। আয়াত [২:১৩৪, ১৪১] থেকে বোঝা যায় যে পুরনো দিন গত। সুতরাং মক্কা হবে নূতন ‘জেরুজালেম’ বা বলা যায় হযরত ইব্রাহীমের সেই ‘শান্তির আলয়’ যার জন্য হযরত ইব্রাহীম প্রার্থনা করেছিলেন। এখন থেকে হেরেম শরীফ ও কাবা ঘর হবে বিশ্ব মানবের মিলন কেন্দ্র। আত্মিক শান্তির আশ্রয়স্থল। হেরেমের শান্তির স্থল হওয়ার বিধান হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর দোয়ারই ফলশ্রুতি যা জাহিলিয়ত যুগ থেকে কার্যকর রয়েছে। ইসলাম ও কুরআন এগুলোকে অধিকতর সুসংহত ও বিকশিত করেছে। মোটকথা হযরত ইব্রাহীমের দোয়া অনুযায়ী আল্লাহ্ তায়ালা শহরটিকে প্রাকৃতিক দিক থেকেও সারা বিশ্বের জন্য শান্তির আলয়ে পরিণত করে দিয়েছেন।
১২৮। হযরত ইব্রাহীমের দোয়া ছিল এই যে, এ শহরের উপজীবিকা হিসেবে যেন ফল-মূল দান করা হয়। মক্কা মুকাররমা ও পার্শ্ববর্তী ভূমি কোনরূপ বাগ-বাগিচার উপযোগী ছিল না। দূর-দূরান্তর পর্যন্ত ছিল না পানির নিশানা। কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা ইব্রাহীমের দোয়া কবুল করেন এবং ফলে মক্কার অদূরে তায়েফ হয়ে উঠে সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা।
এখানে হযরত ইব্রাহীমের দোয়া থেকে মনে হয় তাঁর দোয়ায় সবটুকুই ছিল তাঁর বংশধরদের জাগতিক সুখ ও স্বাচ্ছন্দের নিশ্চয়তার জন্য। আক্ষরিকভাবে এর অর্থ তাই-ই দাঁড়ায়। কিন্তু আয়াতটির দিকে লক্ষ্য করলেই দেখা যায় হযরত ইব্রাহীমের প্রার্থনা ছিল পূণ্যাত্মাদের জন্য যারা খোদভীরু তাদের জন্য আল্লাহ্র নিয়ামত বা [ফল] অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জীবনে আত্মার বিকাশ লাভের জন্য আল্লাহর নিয়ামত প্রার্থনা করা হয়েছে। আক্ষরিক অর্থে-আল্লাহ্র উত্তর হচ্ছে যারা ‘অবিশ্বাসী তাদের জন্যও জীবন উপভোগের সুযোগ দেওয়া হবে’। এর রূপক অর্থ এই যে এই পৃথিবীতে পূণ্যাত্মা ও অবিশ্বাসী সবার জন্যই আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হয়। কারণ আল্লাহ্ রাহমানুর রহিম। কিন্তু আল্লাহ্র রহমতে বিশ্বাসীদের জন্য ইহকালে ও পরকালে সুখ ও শান্তি বয়ে আনে, কিন্তু অবিশ্বাসীদের জন্য শেষ পর্যন্ত এর কোন সুফল নাই।
[আল্লাহ্ আমাদের যে নৈতিক গুণাবলী অর্জন করতে বলেছেন তা না করে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে অন্যায়, অসত্যের, মিথ্যা ঘুষ, জোচ্চুরীর আশ্রয় নিয়েছে যার ফলাফল আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ও জাতীয় জীবনে ছাপ ফেলেছে। একথা পৃথিবীর সব মানুষ সব জাতির জন্যই প্রযোজ্য ছিল অতীতে। প্রযোজ্য থাকবে বর্তমানে আরও থাকবে ভবিষ্যতে। কোরআনের এই বাণী শাশ্বত সর্বকালের, সর্বযুগের।
আয়াতঃ 002.127
স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।
And (remember) when Ibrâhim (Abraham) and (his son) Ismâ’il (Ishmael) were raising the foundations of the House (the Ka’bah at Makkah), (saying), ”Our Lord! Accept (this service) from us. Verily! You are the All-Hearer, the All-Knower.”
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
Wa-ith yarfaAAu ibraheemu alqawaAAida mina albayti wa-ismaAAeelu rabbana taqabbal minna innaka anta alssameeAAu alAAaleemu
YUSUFALI: And remember Abraham and Isma’il raised the foundations of the House (With this prayer): “Our Lord! Accept (this service) from us: For Thou art the All-Hearing, the All-knowing.
PICKTHAL: And when Abraham and Ishmael were raising the foundations of the House, (Abraham prayed): Our Lord! Accept from us (this duty). Lo! Thou, only Thou, art the Hearer, the Knower.
SHAKIR: And when Ibrahim and Ismail raised the foundations of the House: Our Lord! accept from us; surely Thou art the Hearing, the Knowing:
KHALIFA: As Abraham raised the foundations of the shrine, together with Ismail (they prayed): “Our Lord, accept this from us. You are the Hearer, the Omniscient.
১২৭। এবং স্মরণ কর! ইব্রাহীম ও ইসমাঈল [এই প্রার্থনার সাথে] কাবা গৃহের ভিত্তি স্থাপন করেছিলো, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের [এই কাজ] গ্রহণ কর। নিশ্চয় তুমি সব কিছু শোন এবং সব কিছু জানো।’
১২৮। ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের তোমার [ইচ্ছার] কাছে আত্মসমর্পনকারী মুসলিম কর এবং আমাদের পরবর্তী বংশধরদের তোমার [ইচ্ছার] কাছে আত্ম সমর্পনকারী মুসলিম করো। আমাদের এবাদতের নিয়ম পদ্ধতি শিখিয়ে দাও এবং আমাদের প্রতি [অনুগ্রহ] কর। তুমি তো বারে বারে ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।
১২৯। ‘হে আমাদের প্রভু! তাদের মধ্য থেকে তাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ কর, যে তাদের নিকট তোমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করবে, তাদের কিতাব এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে এবং তাদের পবিত্র করবে। তুমি তো শক্তিতে পরাক্রমশালী এবং প্রজ্ঞাময়।’ ১২৯
১২৯। আয়াত [২:১২৫]-এ কাবা গৃহের ইতিহাস, হযরত ইব্রাহীম ও হযরত ইসমাঈল (আঃ) কর্তৃক কাবা গৃহ পুনঃনির্মাণ, কাবা ও মক্কার কতিপয় বৈশিষ্ট্য এবং কাবা গৃহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন সম্পর্কিত বিধি বিধান উল্লেখিত হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম ও হযরত ইসমাঈল কাবাকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন এবং একে পাক-সাফ করেন মুমিনদের জন্য। এই হিসেবে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হচ্ছেন ইসলামের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা। কাবা শরীফ হচ্ছে ইসলামের প্রতীক।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ্র নির্দেশে সিরিয়ার সুজলা-সুফলা ভূখণ্ড ছেড়ে মক্কার বিশুষ্ক পাহাড় সমূহের মাঝখানে স্বীয় পরিবার পরিজন এনে ফেলে রাখেন এবং কাবাগৃহ নির্মাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। এরূপ ক্ষেত্রে অন্য কোন আত্মত্যাগী সাধকের অন্তরে অহংকার দানা বাঁধতে পারতো এবং সে তাঁর ক্রিয়া কর্মকে অনেক মূল্যবান মনে করতে পারতো। কিন্তু তিনি জানতেন আল্লাহ্র উপযুক্ত ইবাদত ও আনুগত্য কোন মানুষের পক্ষেই করা সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই নিজ নিজ শক্তি সামর্থ অনুযায়ী কাজ করে। তাই আমল যত বড়ই হোক সেজন্য অহংকার না করে কেঁদে কেঁদে এমনি দোয়া করা প্রয়োজন যে, হে পরওয়ারদেগার! আমার এ আমল কবুল হোক।
আয়াত [১২৭, ১২৮, ১২৯]-এ হযরত ইব্রাহীমের মোনাজাত কত সুন্দর। বিনয়ের সাথে তিনি তাঁর সমস্ত এবাদত আল্লাহ্কে সমর্পন করছেন এবং আল্লাহ্কে শ্রবণকারী ও সর্বজ্ঞ বলে সম্বোধন করছেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ভবিষ্যৎ বংশধরদের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মঙ্গরের জন্য আল্লাহ্র কাছে দোয়া করেছেন। তিনি তাঁর পয়গম্বর সুলভ অন্তর্দৃষ্টি থেকে বুঝতে পেরেছিলেন যে ভবিষ্যতে তাঁর বংশধরদের মধ্যে মোশরেকী প্রবেশ করবে। মক্কা হবে ৩৬০টি মূর্তির আবাসস্থল। পবিত্র নগরী জেরুজালেম হবে বেশ্যাদের দ্বারা কলুষিত। তাই তিনি আল্লাহ্র অনুগ্রহ প্রার্থনা করেছেন, আল্লাহ্র ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য। এবং মোনাজাতের শেষ আয়াতে [২:১২৯] দেখা যায় তিনি অন্তর্দৃষ্টিতে তার বংশে আমাদের শেষ নবীর আগমন প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তার জন্য আল্লাহ্র করুণা ভিক্ষা করেছেন।
হযরত ইব্রাহীমের মোনাজাত আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে আল্লাহ্র কাছে নিজের সু-কর্মকে বিনয়ের সাথে নিবেদন করতে হয়। আত্ম-অহংকার যেনো আমাদের সুকৃতি নষ্ট করে না দেয়।
আয়াতঃ 002.128
পরওয়ারদেগার! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ কর এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজ্বের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী। দয়ালু।
”Our Lord! And make us submissive unto You and of our offspring a nation submissive unto You, and show us our Manâsik (all the ceremonies of pilgrimage – Hajj and ’Umrah, etc.), and accept our repentance. Truly, You are the One Who accepts repentance, the Most Merciful.
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
Rabbana waijAAalna muslimayni laka wamin thurriyyatina ommatan muslimatan laka waarina manasikana watub AAalayna innaka anta alttawwabu alrraheemu
YUSUFALI: “Our Lord! make of us Muslims, bowing to Thy (Will), and of our progeny a people Muslim, bowing to Thy (will); and show us our place for the celebration of (due) rites; and turn unto us (in Mercy); for Thou art the Oft-Returning, Most Merciful.
PICKTHAL: Our Lord! And make us submissive unto Thee and of our seed a nation submissive unto Thee, and show us our ways of worship, and relent toward us. Lo! Thou, only Thou, art the Relenting, the Merciful.
SHAKIR: Our Lord! and make us both submissive to Thee and (raise) from our offspring a nation submitting to Thee, and show us our ways of devotion and turn to us (mercifully), surely Thou art the Oft-returning (to mercy), the Merciful.
KHALIFA: “Our Lord, make us submitters to You, and from our descendants let there be a community of submitters to You. Teach us the rites of our religion, and redeem us. You are the Redeemer, Most Merciful.
১২৭। এবং স্মরণ কর! ইব্রাহীম ও ইসমাঈল [এই প্রার্থনার সাথে] কাবা গৃহের ভিত্তি স্থাপন করেছিলো, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের [এই কাজ] গ্রহণ কর। নিশ্চয় তুমি সব কিছু শোন এবং সব কিছু জানো।’
১২৮। ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের তোমার [ইচ্ছার] কাছে আত্মসমর্পনকারী মুসলিম কর এবং আমাদের পরবর্তী বংশধরদের তোমার [ইচ্ছার] কাছে আত্ম সমর্পনকারী মুসলিম করো। আমাদের এবাদতের নিয়ম পদ্ধতি শিখিয়ে দাও এবং আমাদের প্রতি [অনুগ্রহ] কর। তুমি তো বারে বারে ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।
১২৯। ‘হে আমাদের প্রভু! তাদের মধ্য থেকে তাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ কর, যে তাদের নিকট তোমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করবে, তাদের কিতাব এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে এবং তাদের পবিত্র করবে। তুমি তো শক্তিতে পরাক্রমশালী এবং প্রজ্ঞাময়।’ ১২৯
১২৯। আয়াত [২:১২৫]-এ কাবা গৃহের ইতিহাস, হযরত ইব্রাহীম ও হযরত ইসমাঈল (আঃ) কর্তৃক কাবা গৃহ পুনঃনির্মাণ, কাবা ও মক্কার কতিপয় বৈশিষ্ট্য এবং কাবা গৃহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন সম্পর্কিত বিধি বিধান উল্লেখিত হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম ও হযরত ইসমাঈল কাবাকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন এবং একে পাক-সাফ করেন মুমিনদের জন্য। এই হিসেবে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হচ্ছেন ইসলামের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা। কাবা শরীফ হচ্ছে ইসলামের প্রতীক।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ্র নির্দেশে সিরিয়ার সুজলা-সুফলা ভূখণ্ড ছেড়ে মক্কার বিশুষ্ক পাহাড় সমূহের মাঝখানে স্বীয় পরিবার পরিজন এনে ফেলে রাখেন এবং কাবাগৃহ নির্মাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। এরূপ ক্ষেত্রে অন্য কোন আত্মত্যাগী সাধকের অন্তরে অহংকার দানা বাঁধতে পারতো এবং সে তাঁর ক্রিয়া কর্মকে অনেক মূল্যবান মনে করতে পারতো। কিন্তু তিনি জানতেন আল্লাহ্র উপযুক্ত ইবাদত ও আনুগত্য কোন মানুষের পক্ষেই করা সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই নিজ নিজ শক্তি সামর্থ অনুযায়ী কাজ করে। তাই আমল যত বড়ই হোক সেজন্য অহংকার না করে কেঁদে কেঁদে এমনি দোয়া করা প্রয়ো