মৃত্যুর সাথে সাথে আমাদের এই মরদেহের বিনাশ ঘটে, কিন্তু এই দেহের মাধ্যমে পৃথিবীতে আমরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করি, মৃত্যুর পরেও আত্মা সেই অভিজ্ঞতা বহন করে পরকালের যাত্রা শুরু করে। অর্থাৎ ভাল কাজের শেষে যে স্বর্গীয় অনুভূতি বা শান্তি আর মন্দ কাজের শেষে আত্মার যন্ত্রণা বা অস্থিরতা এই অভিজ্ঞতা মৃত্যুর পরেও আমরা বহন করে নিয়ে যাব পরলোকে। পৃথিবীর অভিজ্ঞতা পরকালে বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এই অভিজ্ঞতাকেই ‘ফলের’ প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে।
বেহেশ্তের বর্ণনায় এর পরে এসেছে সঙ্গীর কথা। অনেকেই এই কথাটাকে স্থুলভাবে যৌনসঙ্গী রূপে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এখানে ‘মুতাহ্হারাতুন’ শব্দটির দ্বারা বুঝানো হয়েছে সেই সব সঙ্গী যারা পূত ও পবিত্র। এই শব্দটির দ্বারা যে পবিত্রতা বুঝাতে চাওয়া হয়েছে তা হবে সর্বোচ্চ। অনেকে এভাবে তফসীর করেছেন যে তারা হবে পবিত্র কারণ তারা মল-মূত্র ত্যাগ করবে না বা তাদের মাসিক হবে না। অর্থাৎ মাসিক কথাটির দ্বারা তারা বুঝাতে চাচ্ছেন সে সঙ্গীরা সবাই স্ত্রী ধর্মী। কিন্তু সঙ্গী অর্থ শুধু মেয়ে নয়। এখানে সঙ্গী কথাটি দ্বারা ‘আত্মার সঙ্গী’ এ কথাটাকেই বোঝানো হয়েছে। নশ্বর দেহ-মিলনে যে সঙ্গ-সুখ তা ক্ষণস্থায়ী, তা স্থুল, তা জৈব। এই স্থুল সঙ্গ-সুখ পেতে হলে লিঙ্গের প্রয়োজন। যৌন সঙ্গীর প্রয়োজন। কিন্তু মরদেহ ত্যাগ করে যে অবিনশ্বর ও চিরঞ্জীব আত্মা থাকে তার কোনও লিঙ্গ নাই। সে পুরুষও নয়, মেয়েও নয়। পুত-পবিত্র আত্মারা হবে পরস্পরের সঙ্গী। এই প্রেম হবে দেহাতীত। পৃথিবীর প্রেমের যে অনুভূতি তার থেকে এর অনুভূতি হবে বহুগুণ তীব্র। এর যে শান্তি তা হবে স্থায়ী। পৃথিবীর মত তা ক্ষণস্থায়ী হবে না।