‘ধ্ধত,–তে রি তো- তোর্র্-তু—তুর্—কী—ঈ—।আ—া—ম্মার ইন্—ন্—দ্র-ও পুর্—র্—ঈ—তে—তে কো—কো—ওন্শ্—শালা—আ—স্—সে। স্—স্—সব্জোর্সে ন্—না—া—চো ।’
সকল রাণী আপন আপন বস্ত্রালস্কার খুলে ফেলল। ওদের তরুণ সুন্দর দেহের ওপর ঘনস্থল কবরী রাজার পছন্দ হল না। কবরী খুলে ফেলতে বললেন তিনি, সব ক’জনের মাথা থেকে কালনাগিনীর মতো দীর্ঘ বেণী নিতস্বের ওপর আকছড়ে পড়ল। মহারাজকে স্বয়ং সষ্ণুক খুলতে দেখে তাঁর পরিধেয় বস্ত্র খুলে দিল তরুণীরা। তাঁর লোলচর্ম শীর্ণ চিবুক, কাঁচা-পাকা গোঁফ, প্রসুতির স্তনের মতো ঝুলে পড়া বুক, মহাকুন্তের মতো উদর এবং শীর্ণ ঢিলে চর্মাবৃত ঊরু এবং জঙ্ঘা আর কর্কম লোমশ বাহু সাধারণ তরুণীরাও ঘৃণা না করে পারে না, কিন্তু এখানে এদের দেহ প্রাণ সবই এই বৃদ্ধের হাতে। কউ তাঁর দন্তহীন ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল , কেউ বা তাঁর দেহে আপন স্তনদ্বয় পীড়িত করতে লাগল, আবার কেউ তাঁর লোমশ বাহু নিজের কাঁধে বা গালে বুলিয়ে দিতে লাগল। কামোদ্দীপক গানের সঙ্গে সঙ্গে নাচ সুরু হল, রাণী এবং পরিচারিকাদের মাঝে দাঁড়িয়ে মহারাজও তাঁর বিশাল ভুড়ি নিয়ে রাচতে আরম্ভ করলেন।
৩
“এস কবি কুল-তিলক।”—বলে রাজা এক আধাবয়সী পুরুষকে আসন দেখিয়ে দিলেন এবং সে বসবার কপর বড় দু’খিলি পান সসম্মানে এগিয়ে দিলেন।
কবির বয়স পষ্ণাশের ওপর কিন্তু তাঁর সুন্দর সুগৌর মুখমন্ডলে অতীত যৌবনের চাপ স্পট। গোঁফের রঙ কালো , পরণে শাদা ধুতি এবং শাদা চাদর ছাড়াও তাঁর গলায় সুন্দর এক রুদ্রাক্ষের মালা এবং কপালে ভস্মাষ্কিত চন্দ্রাকার তিলক। সোনার পাতে মোড়া সুগন্ধি পান মুখে দিয়ে কবি বলল,“দেব’যাত্রা কুশলেই সাঙ্গ হয়েছে? শরীর সুস্থ ছিল? রাত্তিরে আরামেই গুমিয়েছেন তো?”
“আমি এখন পুরুষত্বহীন হয়ে পড়েছি কবি-পৃঙ্গব।”
“মহারাজ, কবি শ্রীহর্ষকে আপনি খুব ব্যঙ্গ করলেন যাহোক।”
“পুঙ্গব তো ব্যঙ্গ নয়, প্রশংসাসুচক কথা।”
“পুঙ্গব বলদকেই বলে, মহারাজ।”
“জানি, কিন্তু সেই সঙ্গে শ্রেষ্ঠকেও পুঙ্গব বলে।”
“আমি তো একে বলদ অর্থে গ্রহণ করি।”
“এবং আমি শ্রেষ্ঠ অর্থে। আর তা’ছাড়া, তোমার মতো অন্তরঙ্গ ইয়ারের সঙ্গে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ না গেলে, কার সঙ্গে করা যাবে করি?”
“কিন্তু সে তো দরাবারে বসে নয়, মহারাজ।” নীচু গলায় শ্রীহর্ষ বলল কবির হাত ধরে দরবার কক্ষ থেকে বেরিয়ে ক্রীঢ়া-উদ্যানের দিকে চললেন জয়চন্দ্র।
গ্রীষ্ম সুরু হয়েছে—মনোরম বাতাস, সবুজ রঙয়ের গাছগুলোকে আন্দোলিত করছে। দীঘির সোপানের ওপর অবস্থিত শুভ্র শিলাসনে বসে পাশের আসনে কবিতে বলতে বললেন রাজা, এবং তারপর বাক্যলাপ আরম্ভ করলেন। “রাত্তিরের কথা তুমি কি জিজ্ঞেস করছিলে কবি? আমি এখন বেশ অনুভব করছি যে, আমি বুড়ো হয়ে পড়েছি।”
“কেন?”
“উলঙ্গ সুন্দরীরাও আমার কাম জাগাতে পারছে না।”
“তা”হলে তো আপনি পুরো যোগী হয়ে পড়েছেন, মহারাজ!”
“এই যোগীর কাছে থেকে এই ষোল হাজার সুন্দরী কি করবে?”
“বিলিয়ে দিন মহারাজ, নেবার মতো লোক অনেক জুটে যাবে; অথবা গঙ্গাতীরে জলকুশ দিয়ে ব্রাহ্মণদের দান করে দিন—সর্বেষামেব দানানাং ভার্ষাদানং বিশিষ্যতে!”
“তাই করতে হবে। বৈদ্যরাজ চক্রপাণির বাজীকরণ নিষ্ফল হয়ে গেছে। এখন শুধুমাত্র তোমার কাব্যরসের আশাতেই আছি।”
“নগ্ন-সৌন্দর্য-রস যেখানে কিছু করতে পারেনি, কাব্যরস সেখানে কি করবে মহারাজ?
তা’ছাড়া আপনি এখন ষাটের ওপরে চলে এসেছেন।”
“আমি কনৌজে আসার পর দু’মাস কেটে গেছে, কিন্তু তুমি আমার সঙ্গে এতদিন দখো করনি কেন?”
“চৈত্রের নবরাত্রিতে আমি ভগবতী বিদ্ধ্যবাসিনীর চরণ দর্শনে গিয়েছিলাম।”
“ঐ পথেই তো আমার নৌকা এসেছে, যদি জানতাম তা’হলে ডেকে নিতাম।”
“অথবা ওখানে নেমে কুমারি-পূজায় ব্যাপৃত হয়ে যেতেন।”
“তা’হলে কবিবর, তুমিও কুমারী-পূজায় জন্যই ওখানে যাওনি তো!”
“মহারাজ, আমি ভগবতীর উপাসক—শাক্ত।”
“কিন্তু তুমি যেভাবে রাম-সীতার বন্দনা কর, তাতে মনে হয় যেন খাঁটি বৈষ্ণব।”
“অন্তঃ শাক্ত। বহিশ্যৈবাঃ সভামধ্যে চ বৈষ্ণবাঃ।”
“সভামধ্যে তুমি বৈষ্ণব তা’হলে?”
“হতেই হয় মহারাজ! আপনার মতো অন্যের জিভ টেনে ধরতে তো পারি না।”
“ধন্য হে তুমি বহুরূপী!”
“শুধু এইটুকুই নয় মহারাজ, আমি বুদ্ধকেও আমার আরাধ্য করে নিয়েছি।”
“সুগত—ভগবান তথাগতকেও?”
“ভগবান!”
“হ্যাঁ, কিন্তু এখানে বসে ও নাম শুনলে আমারও চক্ষুলজ্জা হয়!”
“মহারাজ, শাক্তদের সুবিধার জন্য সুগতের পূজা সরল করে দিয়েছি বজ্রযান রূপে।”
“ঠিক বলেছ বন্ধু, এই জন্যেই তো তাকে সহজিয়া বলা হয়।”
“এই সহজিয়া সিদ্ধগণের দোহা এবং গানে কোনো কবিত্বের স্ফুরণ আমি দেখতে পাই না; কিন্তু পঞ্চ ম-কার (মদ, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা, মৈথুন) প্রচার করে যতটা জন-কল্যাণ এরা করেছেন, তার জন্য আমি যথেষ্ট কৃতজ্ঞ।”
“কিন্তু আমার পক্ষে এখন আর এই পঞ্চ ম-কারের উপাসনা করা দুস্কর।”
“বজ্রযানের সঙ্গে নাগাজুর্নের মাধ্যমিক দর্শন—একেবারে যেন সোনায় সোহাগা।”
“তোমার কাব্যরস তো তবু চেখে দেখতে পারি, যদিও ওতেও কখনও কখনও মাথা ঘুরে যায়; কিন্তু এই দর্শনশাস্ত্র যেন পর্বতপ্রমাণ বোঝা হয়ে চেপে বসে।”
“তা’হলে মহারাজ, নাগাজুর্নের দর্শন বহু মিথ্যা ধারণা দূর কর।”