ইসলাম প্রথমে সমগ্র দুনিয়াকে আপন আরবী উপজাতিগ্রলোর বিস্তৃত-রুপে রুপায়িত করতে চেয়েছিল, এবং সেই সঙ্গে উপজাতির সবলতা, সাম্যভাবও ভ্রাতৃত্বকে আপন অনুগামীগণের মধ্যে জাগ্রত করে তূলতে চেয়েছিল। এই সময় থেকে তিন হাজার বছর পুর্বেই দিক আর্ষভাষীদের পুর্বজগণ ৈএই অবস্থাকে অতিক্রম করে এসেছে।অতিবাহিত যুগের পুনরাবৃত্তি অসম্ভব। এই জন্য যেমন ইসলাম তার উপজাতিসমুহের পরবর্তী ধাপে অবস্থিত সামন্তযুগের সংস্পর্থে এসেছে এবং তার তরবারির সামনে আক্রান্তের রানৈতিক স্বাতস্ত্র্য বিলীন হয়ে গেছে, তেমনি ঐ সংস্পর্শে এসেই ইসলামী সমাজের উপজাতীয়তার স্বরুপও বিনষ্ট হয়ে গেছে। ইসলামের প্রধান শাসককে বহুকাল পর্যন্ত কেবল তার সংস্থাপকের খলিফা-উত্তরাধিকারী বলা হত। বস্তুত স সুলতান-নিরক্ষুশ রাজা হওয়া সত্ত্বেও। এখন অবশষ্য নামে নিজেদের সুলতান বলে জাহির করার মতো অনেকেই এসে ড় হয়েছে। এদের কাছে ইসলামের উপজাতীয়তা, তার সরলতা বা ভ্রাতৃভাবের বিশেষ কোনো মুল্য নেই। নতুন অষ্ণল জয় করতে প্রয়োজন হত অস্ত্রচালনাকারী সৈন্যের এবং অস্ত্রচালনাকারীরা ৈএই সময় সবাই আরব জাতের ছিল না। এইসব ন্যৈদের সুলতানের সামে লড়াই করার জন্য উৎসাহিত করা যেত না, এ জন্য স্বর্গস্থিত নানা প্রলোভনের সঙ্গে সঙ্গে পার্থিব আনন্দের ভাগও তাদের দেওয়া হত। লুটের মাল এবং বন্দীদের ওপর তাদের অধিকার ছিল, নব-জয়লব্ধ ভুমিতে বসতি করার স্বত্ত তাদের ছিল, পুর্বতন অত্যাচারী. প্রবুকুলের কবল থেকে মুক্তি পাবার, এমন কি তাদের অস্তিত্বকেও বিলুপ্ত করে দেবার ও অধিকার ছিল। বিজেতার ধ্বজাকে আপনজ্ঞানে সগর্বে বয়ে নিয়ে চলার মতো এত সৈন্য বিজিতদের ভিতর থেকে কেউ কখনও লাভ করেনি। -যারা আক্রান্তদের ভিতর থেকেই নিজেদের জন্য ন্যৈ সংগ্রহ করতে সক্ষম, তাদের সম্মুখীন হওয়া সহজ কাজ নয়।
হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর একশ’ বছরও কাটেনি এমন সময় সিন্ধু িইসলাম শাসনে চলে গেল। বারাণসী থেকে সোমনাথ (গুজরাট ) পর্যন্ত সারা ভারত ইসলামী অস্ত্রের স্পর্শ অনুভব করতে লাগল। এই নতুন বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য প্রয়োজন ছিল নতুন কর্মপদ্দতির, কিন্তু হিন্দুরা নিজেদের পুরনো পথ পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল না। সমগ্র দেশকে যুদ্দের জন্য প্রস্তুত করার বদলে ভারতের ন্যৈবাহিনী তৈরী হল একমাত্র রাজপুতদের ( প্রাচীন ক্ষত্রিয় এবং এদের সঙ্গে বিবাহাদি সুত্রে আবদ্ধ শক, যবন, গুর্জর ইত্যাদি )নিয়ে। আবার অন্তবৈরিতা থেকে এরা মুক্ত ছিলনা এবং রাজবংশগুলোর মধ্যে নতুন-পুরাতন শক্রতার জন্য শেষ পর্যন্ত ও তারা পারস্পরিক সহযোহিতার ভিত্তিতে ইসলামী আক্রমণের বিরুদ্ েপ্রস্তুত হতে পারল না।
“মহারাজ কোনো চিন্তা করবেন না। স্ধিগুরু এমন সাধনা সুরু করেছেন যাতে তুর্কসেনা শুকনো পাতার মতো হাওয়ায় উড়ে যাবে।”
“আমার ওপর শুরু মিত্রপাদের (জগন্মিত্রানন্দ ) কি অসীম করুণা! আমার বা আমার পরিবারের যখনই কোনো সস্কট এসেছে, গুরুমহারাজ দিব্যবলে রক্ষা করেছেন।”
“মহারাজ, সিদ্ধগুরু হিমালয়ের ওপারে ভোট দেশ থেকে কান্যকুজের সস্কট দেখতে পেয়েছেন, এই জস্যই তিনি আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।”
“কি অপার করুণা !”
“বলেছেন, তারিণী ( তারাদেবী) মহারাজের সহায়তা করবেন। তুকীদের সম্বদ্ধে আনি কিছু ভাববেন না।”
“তারা মায়ের ওপর আমার পুর্ণ আস্থা আছে। তারিণী, বরাভয়দারিনী ! স্নেচ্ছদের হাত থেকে রক্ষা কর মা।”
বৃদ্ধ মহারাজ জয়চন্দ্র ইন্দ্রভবনতুল্য আপন রাজপ্রাসাদে এক কর্পুরশ্বেত সিংহাসনে বসে রয়েছেন। চাজন সুন্দরী তরুণী রানী তাঁর পাশে বসে, এদের গৌর মুখমন্ডল থেকে ভ্রমরের চেয়েও কালো চুলের রাশ টেনে পিছনের দিকে খোঁপা করে বাঁধা । চুড়ামণি, কর্ণফুল, অঙ্গদ, কষ্কণ , চন্দ্রহার, মুক্তাহার , কাটকিস্কিনী, নুপুর ইত্যাদি নানা অলস্কারের ভার এদের গেতের ওজন অপেক্ষা বেশী । পণে সুক্ষ পাড়ি কাঁচুলী, কিন্তু বেশ বোঝা যায়, দেহ আবৃত করার জন্য এগুলো পরা হয়নি, হয়েছে দেহ-সৌষ্ঠব সুপ্রকট করে তুলে ধরার জন্যেই! কাঁচুলি ভেদ করে স্মনের স্ফীতি এবং অরুণিমা সুন্দর রুপে পরিস্ফুট। নীচে নাভি পর্যন্ত সমগ্র উদর অনাচ্ছাদিত; উরু জঙ্ঘার আকৃতি ও বর্ণ পরিষ্কারভা্বে দেখা যাচ্ছে। চুলের দুগন্ধি তৈল এবং নব প্রস্ফটিত জুঁই ফুলের মালার সুগন্ধে সমগ্র পুরী আমোদিত। রাণীরা ছাড়াও পচিশ জনের বেশী তরুণী পরিচারিকা রয়েছে। এদের মধ্যে কেই চামর, কউ মোরছল বা ব্যজন দোলাচ্ছে। কারও হাতে পানদান, কারও হাতে আয়নাম চিরুণী, কারও হাতে সুগন্ধ জলের ঝারি, কারও হাতে কাঁচের সুরাপত্রও সোনার পেয়লা, আবার কারও হাতে সাপের চামড়ার মতো মসৃণ কোমল তোয়ালে। কউ কউ মৃদঙ্গ, মুরজ, বীণা, বেণু ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বসে রয়েছে, কউ বা স্বর্ণদন্ডু হাতে এখানে সেখানে টহল দিচ্ছে। রাজা জয়চন্দ্র এবং আগন্তুক মিত্রপাদের শিষ্যু শুভাকর ছাড়া এখানে আর সবাই মহিলা , সবাই সুন্দরী ও তরুণী। মহারাজের নিকট বিদায় নিয়ে ভিক্ষু চলে গেল। রাজা এবং রাণীরা উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালেন।
এখন শুধু নারীময় জগৎ। জয়চন্দ্র বৃদ্ধ, কিন্তু তাঁর অধপাকা লম্বা চুল মাঝখান দিয়ে ভাগ করে যেভাবে পিছনের দিকে নিয়ে বাঁধা, বিরাট গোঁফ যে রকম যম্নসহকারে আঁচড়ানো, বস্তালস্কারে তাঁর দেহ যেভাবে সজ্জিত, তাতে মনে হয়, তিনি যৌবনকে অনবসিত বলেই মনে করেন। মহারাজের ইঙ্গিতে এক পরিচারিকা তাঁর সামনে ঝুঁকে মদের পেয়ালা এগিয়ে দিল, এবং জনৈকা রাণী সেই পেয়ালা মহারাজের সামনে তুলে ধরল। পেয়ালঅটি রাণীর ঠোঁটে লাগিয়ে তিনি বললেন, “তোমার উচ্ছিষ্ট না হলে আমি কেমন করে পান করব?” এরপর তাঁর প্রিয়তমা রাণীরা একে একে প্রসাদ দিল তাঁকে। মহারাজের মুখাবয়ব থেকে তুকীদের চিন্তা বিদুরিত হয়ে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল। রাজার স্থল দেহ মসনদের ওপর ঢলে পড়লএবং কোনো রাণীকে তাঁর এপাশে কোনো রাণীকে ওপাশে টেনে তিনি বসালেন । কারও কোলে মাথা রাখলেন, কারও বুকের ওপর হাত রাখলেন। মদের পেয়ালা চলতে লাগল; কামোদ্দীপক হাসি-ঠাট্রাও চলতে থাকল। রাণীদের নাচের আদেশ দিলেন মহারাজা। বিষন্তনা, করস নিতদ্বিনী সুন্দরীরা ঘাঘরা গানের তালে তালে নাচ সুরু হল। একটা গান শেষ হলে রাজা সুন্দরীদের নগ্ন-নৃত্যেন্ত আদেশ দিলেন। নর্তকীরা বেশবুষা সব খুলে ফেলল, রইল শুধু পায়ের নুপুর। রানী এবং তরুনী পরিচারিকাদের সঙ্গে আলিঙ্গন, চুম্বন এবং হাস্য পরিহাস চলতে লাগল। নর্তকীদের মধ্যে যার নগ্নদেহ মহারাজকে আকর্ষণ করল, সে-ই এসে বসতে লাগল মহারাজের পাশে, অন্য একজন নগ্নিকা তার স্থান পুরণ করল। আর লাল হয়ে উঠল মহারাজের চোখ, কণ্ঠস্বরে সুরা প্রভাব বিস্তার করল; মহারাজ গান ধরলেন-