২
আমার নাম বাণ। বহু কাব্য নাটক আমি লিখেছ্ সাহিত্যের কষ্টি পাথরেই লোকে আমাকে কষে দেখতে চাইরে, এই জস্য আমাকে কয়েকটি কথা লিখে রেখে যেতে হচ্ছে, কারণ আমি জানি, বর্তমান রাজবংশের সময় পর্যন্ত এই ষেখা প্রকাশিত হবে না। আমি এগুলো নিরাপদে রাখবার ব্যবস্থা করেছি। আমার সম্বন্ধে ভবিষ্যুৎ মানুষের ভুল ধারণার হাত থেকে রেতাই পাব যদি তারা আমার প্রসিদ্ধ পুস্তকাবলী পড়বার আগে এই লেখাটা পড়ার সুযোগ পায়।
রাজা হষূ একদিন সারা সভার মাঝে আমাকে বুজঙ্গ লম্পট বলে বসলেন-আর এর ফলে লোকে আমায় ভুল বুঝতে পারে। আমি ছিলাম ধনী পিতার আদুরে ছেলে। ভাল ও কালিদাসের রচনাবলী পড়ে আমার মন রঙীন হয়ে উঠেছিল ।আমার রুপ, যৌবন ছিল; আর ছিল দেশভ্রমণের সখও। আমি চেয়েছিলাম যৌবনের ‘আনন্দ’ উপভোগ করতে; অবশ্য ইচ্ছা করলে পিতার ন্যায় ঘরে বসেই সেটা করতে পারতাম। কিন্তু আমার কাছে তা ভন্ডামী বলে মনে হল! ভেতরে যখন লালসা স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে তকন নিজেকে জিতেন্দ্রিয়, সংযমী মহাত্না রুপে প্রকট করতে আমার খুবই খারাপ লাগত। সারা জীবন আমি এ সব পছন্দ করিনি। জীবনে যা কিছু করেছি সব সামনা-সামনি। আমার বাবা অবশ্য একবারই সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন –নিজের অসবর্ণ পুত্রকে স্বীকার করে, কিন্তু তাকেম তারুন্যের পাপ কলে গণ্য করা যায়।
আমি বুঝেছিলাম, যৌবনের আনন্দ যা আমি উপভোগ করতে চাই, নিজের জম্মভুমিতে থেকে সেটা সম্ভব নয়। কসল জাতি ও কুলের লোক ক্ষেপে উঠবে, আর পৈতৃক ধন সম্পত্তি ও খোয়াতে হবে। আমার মাথায় এক বিচিত্র পরিকল্পনা এল। আমি এক নাট্য-মন্ডলী গঠন করলাম, মগধের বাইরে গিয়ে। আমার এক গুণী ও কলাকুশলী তরুণ বন্ধু সেখানে ছিল। মূর্খ, ধুর্ত ও চাটুকার বন্ধু আমি কোনোদিন পছন্দ করি না। আমার নাট্য-মন্ডলীতে অনেক সুন্দরী তরুীকে নিয়ে এসেছিলাম, এদের সকলেই বারবনিতা ছিল না। ‘রত্নাবলী’ ‘প্রিয়দর্শিকা’ পুবৃতি নাটক এই নাট্য-মন্ডলীতে অভিনয় বারবার জন্যে লিখলাম। তারুণ্যের আনন্দের সঙ্গে আমি শিল্পকলার মিলন ঘটালাম, আর তা দেখে সহুদয় দর্মকেরা আমার প্রশংসাই করত। জীবনের আনন্দ আমি উভোগ করলাম , সঙ্গে সঙ্গে ‘রত্নাবলী’ ‘প্রিয়দর্শিকা’ ইত্যাদি আপনাদের সামনে উপস্থিত করলাম। যারা শুধু নিজের ব্যক্তিকেন্দ্রিক আনন্দ পূরণ করবার জন্যই সব কিছু করে, তারা ভোগী। লোকে বলবে, রাজা হর্ষকে তোষামোদ করার জন্যেই আপন নাটকসমূহ তার নামে প্রকাশ করেছি। কিন্দু তারা জানে না। যে-সময় প্রবাসে বসে এইসব্ নাটক লিখি তখন হর্ষকে আমি শুধু নামেই জানতাম । সে সময় আমি এও জানতাম না যে, আগামী দিনে হর্ষ আমাকে আমন্ত্রণ করে তার দরবার িকবি করে রাখবে। আত্নগোপনের তাগিদে-শুধু নিজেকে গোপন করার জন্যেই এইসব নাটকের রচয়িতা হিসাবে আমি হর্ষে র নাম দিয়েছি। এইসব নাটক যারা পড়ে, তারা এর মূল্য জানে। এগুলো সম্পৃর্ণ মৌলিক রচনা। আমার দর্শকগণের মধ্যে গুনীজন থাকত বহুল সংখ্যায়। দলে দলে আসত পন্ডিত, রাজা, কলাবিদ। যদি তারা প্রকৃত নাজ্যকারের নাম জানতে পারত, তা’হলে আমি আর নাট্র-মন্ডলীর সূত্রধার হয়ে থাকতে পারতাম না, সকলেই মহাকবি বাণের পশ্চাদ্বাবন করতে সুরু করত। কামরুপ থেকে সিন্ধু এবং হিমালয় থেকে সিংহলের অনুরাধাপুর পর্যন্ত- হর্ষ চাড়া অন্যান্য প্রায় সকল রাজ-দরবারেই নাটক অভিয় করেছি। ভেবে দেখুন, যদি কামরুপেশ্বর, সিংহলেশ্বর বা কুন্ডুলেশ্বরের গোচরীভুত হত যে, আমিই নাটক রচনাকারী মহাকবি বাণভট্র তবে আমার পর্যটন, আমার আনন্দোপভোগে কি দশা হত?আমি কোনো রাজার দরবারী কবি হয়ে থাকতে চাইনি। হর্ষের রাজ্যে যদি আমার জম্মভুমি না হত, তবে তার দরবারী কবিও হতাম না, পিতার সম্পত্তিই আমার কাছে যথেষ্ট ছিল।
হর্ষের বর্ণনা অনুসারে আপনাদের মনে হতে পারে যে, আমি একজন গণিকাসক্ত লম্পট। বস্তুত আমার নাট্য-মন্ডুলীর মধ্যে গুণিকাদের স্থান খুবই নগণ্য। তবু যারা এসেছিল, তারা তাদের নৃত্য-গীত অভিনয়কলার সৌষ্ঠব গুণেই এসেছিল, এখানে তার উৎকর্ষের চর্চা হত আমার সময় নাট্যগগনের তারকার।ভ আসত ভিন্ন পথ ধরে। ভাবীকালে কি হবে জানি না, কিন্তু আমার সময় দেশের সব তরুণীরা- তা সে ব্রাক্ষণ কন্যা বা বেণিয়ার মেয়ে হোক না কেন, রাজা ও সামন্তবর্গের সম্পত্তি বলে গন্য হত।
আমার পিসীমাকে মগধের এক সামন্ত বলপূর্বক নিয়ে গিয়েছিল। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পিসীর আয়ুও শেষ হল বলা চলে। পিসীমা ফিরে এলেন আমাদের ঘরে। আমার প্রতি তাঁর অশেষ স্নেহ ছিল। আমি কোনোদিনই তাঁর সামন্ত-সম্বন্ধের ওপর কটাক্ষ করিনি। আর এই অবলার দোষ কি? সুন্দরী তরুণীদের প্রথম অধীকারী হত মুষ্টিমেয় সামন্ত। আর সুন্দরী তরুণীর সংখ্যা খুব বেশী ছিল তা নয়। সামন্ত রাজারা ছলে বলে কৌশলে যুবতীলে পাওয়ার চেষ্টা কত। াতির কাছে যাওয়ার পূর্ব রাত্রে কোথাও কোথাও সামন্তদের সঙ্গে রাত্রিবাস করতে হত; কারণ এরা যে তাদেরই সম্পত্তি! সাধারণ লোকে একে ধর্ম-মর্যাদা মনে করত।
ব্রাক্ষণ ও বেণিয়ারা আপন কন্যা , পত্নী ও বোনেদের ডুলিতে করে এক রাত্রের জন্যে রাজান্তঃপুরে পৌছে দিত। ডুলি না পাঠাবার অর্থই ছিল, সর্বনাশ ডেকে আনা। আর মেয়ে পছন্দ হলে তো কথাই ছিল না, রাজান্তঃপুরের প্রমোদগৃহে রাখা হত স্থায়ীবাবে। তারা যে রানী হত, তা মনে করার কারণ নেই, পরিচারিকার সম্মান কপালে জুটত। রাণী হওয়ার সৌভাগ্য শুধু রাজকুমারী এবং সামন্তকুমারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। অন্তঃপুরের এই হাজার হাজার তরুণীর অধিকাংশই এমন ছিল, যারা মাত্র এক রাতের সন্যে রাজা অথবা সামন্তের সঙ্গলাভ করেছে। এই হতভাগিনী নারীদের যৌবন কিভাবে ব্যর্থ হয়েছে সেটা িএকবার ভেবে দেখুন? আমার নাট্যমন্ডলীর অভিনেত্রীরা আসত এইসব অন্তঃপুরের পমোদাগার থেকেই কিন্তু পালিয়ে বা চুপিচুপি নয়। ভালোই বলুন আর মন্দই বলুন, রাজা ও সামন্তবর্গকে কথার জালে নিজের পক্ষে টেনে আনতে আমি ছিলাম সিদ্ধবাক। অবশ্য রাজনীতি আমার বিষয়বুত ছিল না, আমায় তারিফ করে যে শত-শত পত্র পাঠাত রাজা ও সামন্তরা ,গেুলো আজও সাক্ষী হয়ে আছে। যখন কলা সম্বন্ধে প্রশংসায় এরা পষ্ণমূখ হত , আমি তখন বিলাপ করতে সুরু করতাম। বলতাম, æকি করব বলুন! কলাকুশলী তরুণী থাকা সত্বেও পাওয়া যায় না।”