এযাবৎ শুধু ১৬০৭ শকে নির্মিত দ্বিতীয় রত্নমাণিক্যেরই কতকগুলি মুদ্রার কথা জানা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আমরা নরেন্দ্র ও মহেন্দ্রের দুইটি মুদ্রার অস্তিত্বের কথা জানিয়াছি। লণ্ডনের জাতীয় সংগ্রহশালায় রক্ষিত এই দুইটির একটি ১৬১৫ শকে নির্মিত নরেন্দ্রের ও অপরটি ১৬৩৪ শকে মুদ্রিত মহেন্দ্রের মুদ্রা। [আমাদের এক ইংরেজ বন্ধুর চিঠিতে এই তথ্য পাইয়াছি।] ইহারা সমসাময়িক ঘটনাবলীর উপর বিশেষ আলোকপাত করিয়াছে। ১৬০৭ শকাব্দে বা তাঁহার কিছু পূর্বেই রত্ন সিংহাসনে বসেন; কিন্তু নরেন্দ্রের সম্ভাব্য বৈরিতাসত্ত্বেও অন্তত ৮/৯ বৎসর রাজত্ব করেন। তাঁহার মুদ্রাগুলির মধ্যে কতকগুলিতে মহিষী সত্যবতী ও কতকগুলিতে ভাগ্যবতীর নাম দেখা যায়। যাহা হউক, ১৬১৫ শকের কাছাকাছি কোন সময় নরেন্দ্র রত্নমাণিক্যকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া রাজা হন এবং, রাজমালার কথা সত্য হইলে, কিছু দিনের মধ্যে নিজেই বিতাড়িত ও নিহত হন। তাঁহার পর রত্ন আবার রাজ্যের কর্তৃত্ব লাভ করেন এবং বহুদিন রাজত্ব করিবার পর কনিষ্ঠ ভ্রাতা মহেন্দ্র কর্ত্তৃক ১৬৩৪ শকাব্দে বা তাঁহার কিছু পূর্বে নিহত হন। মহেন্দ্র প্রায় দুই বৎসর রাজত্ব করেন। তাঁহার মৃত্যুর পর কনিষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিতীয় ধর্মমাণিক্য রাজা হন এবং ১৬৩৬ শকাব্দের তারিখযুক্ত দুই প্রকার মুদ্রা নির্মাণ করেন। প্রথম প্রকারের মুদ্রায় শুধু ধর্ম্মের নাম ও দ্বিতীয় প্রকার মুদ্রায় ধর্মমাণিক্য ও মহিষী ধর্মশীলার নাম থাকে। ধর্ম ঠিক কতদিন রাজত্ব করেন, তাহা বলা কঠিন; শুধু জানা যায় যে, তাঁহার পর তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা মুকুন্দ রাজা হন। মুকুন্দের কোন শিলালেখ ও মুদ্রা না থাকায় তাঁহার রাজত্বকাল সম্বন্ধেও আমরা সঠিক কোন ধারণা করিতে পারি না। মুকুন্দের পর ত্রিপুরারাজ্যে অভিষিক্ত হন কল্যাণান্বয় জগন্নাথের বংশধর দ্বিতীয় জয়মাণিক্য। সম্প্রতি আবিস্কৃত ইহার একটি মুদ্রায় তারিখ হিসাবে ‘১৬৬১’ ও মহিষীর নাম ‘জয়াবতী’ লেখা আছে। [এই মুদ্রাটিও শেঠ হনুমান প্রসাদ পোন্দার মহাশয়ের সংগ্রহে আছে। ইহা শীঘই লেখককর্ত্তৃক প্রকাশিত হইবে।] দ্বিতীয় জয়মাণিক্য প্রায় পাঁচ বৎসর রাজত্ব করেন। তাঁহার পর ১৬৬৬ শকে দ্বিতীয় ইন্দ্ৰমাণিক্য রাজা হন এবং ঐ তারিখ দিয়া কতকগুলি ক্ষুদ্রাকৃতি মুদ্রা নির্মাণ করেন। ইন্দ্র শেষ পর্যন্ত রাজ্যচ্যুত ও নিহত হন; তবে ঠিক কবে যে এই ঘটনা ঘটে তাহা বলা কঠিন। [ইন্দ্রের পর ত্রিপুরার সিংহাসনে বসেন জয়মাণিক্যের ভ্রাতা দ্বিতীয় বিজয়মাণিক্য। তাঁহার রাজ্যকাল সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানা যায় নাই।]