I imagine, however, that in spite of the vast mental and cultural difference between the small thinking minority and the unthinking masses, there was a bond between them or, at any rate, there was no obvious gulf. The graded society in which they lived had its mental gradation also and these were accepted and provided for. This led to some kind of social harmony and conflicts were avoided.(১৬)
মোদ্দা কথায়, চিন্তাশীল বলতে সেকালে ছিলো মাত্র মুষ্টিমেয় মানুষ। বাকি মূঢ় জনতার মধ্যে কোনো রকম চিন্তার বালাই ছিলো না। কিন্তু এ-দু’-এর মধ্যে মানসিক ও সাংস্কৃতিক তফাতটা বিরাট হলেও একটা বন্ধনও ছিলো। অন্তত কোনো প্রফট খাদ ছিলো না। ক্রমানুসারে সাজানো যে-সমাজটিতে তারা বাস করতো সে-সমাজে মানসিক ক্রমানুসারও ছিলো। সেগুলি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিলো এবং তার জন্যে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিলো। এরই দরুন দেখা দিয়েছিলো একটা সামাজিক সামঞ্জস্য এবং সম্ভব হয়েছিল সংঘাত এড়িয়ে যাওয়া।
চিত্রটি মনোরম। সন্দেহ নেই। একালের বাস্তবটা যদি ওই কাল্পনিক অতীতের অনুরূপ হতো—যদি সংঘাত না থাকতো, যদি শুধু সামঞ্জস্যই থাকতো—তাহলে আজকে অনেকে নিশ্চয়ই নিশ্চিন্ত হতে পারতেন। কিন্তু সেকালের ওই সরল-সুন্দর ছবিটি এঁকে পণ্ডিত জবাহরলালা নেহেরু আমাদের মনে যেটুকু নেশা ধরিয়েছিলেন তা তিনিই এক মুহূর্তে ভেঙে দিলেন লোকায়তিকদের লেখা পুঁথিপত্রগুলি ধংস করবার কথা উল্লেখ করে।
————————————
১২. S. N. Dasgupta op, cit. 3:514.
১৩. পাণিনি ৭.৩.৪৫।
১৪. G. Tucci (in PFIPC-1925 : 35) এ-বিষয়ে আরো তথ্য উল্লেখ করেছেন। R. Garbe (ERE 8.138) আরো একটি প্রমাণ হিসাবে ভাষ্করাচার্যের ব্রহ্মসূত্রভাষ্য (৩.৩.৫৩) উল্লেখ করেছেন।
১৫. J. Nehru DI 80.
১৬. Ibid 77.
০৪. বিতণ্ডাবাদী
পণ্ডিত জবাহরলাল নেহেরু যাদের মূঢ় জনতা বলে বর্ণনা করেছেন তাদেরই দার্শনিক চেতনাটুকু নিয়ে আমরা আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছি। কেননা, প্রাচীনেরা বারবার লিখে গিয়েছেন যে লোকায়ত বলতে শুধুই বস্তুবাদী দর্শন মনে করা চলবে না, মনে রাখতে হবে এই হলো দেশের জনসাধারণের দর্শন।
অবশ্যই এ-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে মাধবাচার্যই বলুন আর শঙ্করাচার্যই বলুন—লোকায়ত দর্শনকে যখন তাঁরা সাধারণ লোকের দর্শন বলে উল্লেখ করেছেন তখন তাঁদের আসল উদ্দেশ্যটা নিশ্চয়ই জনসাধারণকে তাদের প্রকৃত দার্শনিক ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেওয়া নয়; তার বদলে লোকায়ত-দর্শনকে ওই বলে খাটো করবার বা ছোটো করবার চেষ্টাই।
মূঢ় জনতা। তাদের বোধটা নেহাতই স্থূল, তাই তারা মনে করেছে দেহ ছাড়া আত্মা বলে কিছুই নেই। তাদের দৃষ্টিটা নেহাতই সংকীর্ণ, তাই তারা ইহলোক ছাড়িয়ে পরলোক বা পরকালকে দেখতে পায় নি। তাদের রুচিটা নেহাতই কদর্য, তাই তারা মনে করেছে অর্থ ও কামই পরম পুরুষার্থ—ধর্ম ও মোক্ষের কথা শুনলে তারা ভয় পেয়েছে, ভেবেছে মাথায় হাত বোলেতে এসেছে বুঝি!
কিন্তু লোকায়তিকদের লেখা পুঁথিপত্রগুলি বিলুপ্ত হলেও তাঁদের বিদ্রুপ করবার জন্যেই বিপক্ষরা তাঁদের সম্বন্ধে যতটুকু টুকরো-টাকরা সংবাদ লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন সেগুলিকে পরীক্ষা করলে সন্দেহ হয়, লোকায়তিকেরা যে-সব যুক্তিতর্কের অবতারণা করতেন সেগুলির মধ্যে এই রকমের হাবাগোবা বোকাসোকা মনোভাবের পরিচয় ছিলো না। এমন কি, মনে রাখা দরকার, লোকায়তিকদের বর্ণনায় স্বয়ং বুদ্ধঘোষ(১৭) বিতণ্ডাবাদী বলে বিশেষণ ব্যবহার করে গিয়েছেন। অন্যান্য পুঁথিতেও হুবহু একই কথাই লেখা আছে(১৮)। এখন বিতণ্ডা আর বাদ—এই দুটি কথাই যে একসঙ্গে কেমন করে ব্যবহার করা যায় তাই নিয়ে আধুনিক পণ্ডিতেরা খুবই সমস্যায় পড়েন। কেননা, ন্যায়সূত্র(১৯) অনুসারে বিতণ্ডা মানে হলো নিছক নেতিবাচক তর্ক—একটা মত খণ্ডন করবার জন্যে তর্ক করা হচ্ছে কিন্তু কোনো পাল্টা-মন স্থাপন করবার উৎসাহে নয়। আর বাদ বলতে বোঝায় ঠিক এর উল্টো : একটা মত স্থাপন করবার উদ্দেশ্যেই বিরুদ্ধ মত খণ্ডন করবার চেষ্টায় তর্ক। তাই সমস্যা হলো, একই সঙ্গে লোকায়তিকদের সম্বন্ধে দুটো কথাই কেমন করে মেনে নেওয়া যায়? একালের পণ্ডিতেরা তাঁদের ওই সমস্যা নিয়ে থাকুন। আমাদের যুক্তির পক্ষে আপাতত যেটা খুবই জরুরী কথা সেটা হলো, লোকায়তিকেরা রীতিমত ভালো যুক্তিতর্ক করতে জানতেন। তাঁদের যুক্তিতর্কগুলি ছিলো খুবই ধারালো। সে-সব যুক্তিতর্কের কিছুকিছু নমুনা পাবেন মাধবাচার্যের সর্বদর্শনসংগ্রহে(২০), আরো নানান বইতে(২১)। এমনকি, আমরা পরে দেখবো, এ-কথা অনুমান করবারও অবকাশ রয়েছে যে প্রাচীন ভারতে যুক্তিবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেন লোকায়তিকেরাই।
তাই চিন্তার জড়তার দরুনই তাঁরা এই জড় জগৎটাকে একমাত্র সত্য মনে করেছেন, এ-কথা বললে তথ্যবলের চেয়েও দেহবলের পরিচয় দেওয়া হবে। লোকায়তিকদের বিপক্ষরাই তাঁদের সম্বন্ধে যে-সব কথা লিখে গিয়েছেন তা থেকেই বোঝা যায় তাঁরা চিন্তা করতে জানতেন, এবং সে-চিন্তা খুবই তীক্ষ্ণ। লোকায়ত-দর্শনের ধ্বংসস্তূপ থেকে যখন তার পুনর্গঠন করবার চেষ্টা করবো তখন এ-কথার আরো ভালো নজির দেখানো সম্ভব হবে।