আমরা আমাদের জীবনে একধরনের মানুষকে পাওনা-আদায়ের জন্যে এইভাবেই হানা দিতে দেখেছি; চলতি কথায় তাদের বলি কাবুলিওয়ালা। ইংরেজী সাহিত্যে আমরা এই রকমেরই একটি চরিত্রের পরিচয় পেয়েছি; তার নাম সাইলক। আর, আমরা বরুণকে দেখেছি ঋগ্বেদে—সে-বরুণ কিন্তু এ-বরুণ নয়। সে-বরুণ মানুষকে শুধু দিচ্ছেন, মানুষের কাছ থেকে পাওনা-আদায়ের জন্যে তাঁকে হানা দিতে দেখা যায়নি।
ঋগ্বেদের প্রাচীন অংশে প্রতিবিম্বিত সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে ঐতরেয়-ব্রাহ্মণে প্রতিবিম্বিত সমাজের যে কতোখানি পার্থক্য, তা বরুণের রূপান্তর থেকেই অনুমান করা অসম্ভব নয়। ঐতরেয়-ব্রাহ্মণের বরুণের ওই কাবুলিওয়ালা-রূপটিকে আমরা দেখলাম; এবার ঋগ্বেদের বরুণকে দেখা যাক।
মিত্র ও বরুণ সুমধুর বারি বর্ষণ করেন (৫.৬৩.১), বৃষ্টিরূপ ধন ও অমরত্ব দান করেন (৫.৬৩.২), মেঘ ও বৃষ্টি দ্বারা অন্তরীক্ষে সূর্যের রক্ষা বিধান করেন (৫.৬৩, ৪), মেঘকে অন্নসাধক প্রভাব্যঞ্জক বিচিত্র গর্জনধ্বনিতে মুখর করে তোলেন (৫.৬৩.৬), উপকারক-দ্বারা যজ্ঞ রক্ষা করেন এবং পূজনীয় রথের ন্যায় সূর্যকে অন্তরীক্ষে ধারণ করেন (৫.৬৩.৭)। মিত্র ও বরুণের বাঞ্ছিত প্রদত্ত সুখ সকল স্থানেই ব্যাপ্ত আছে (৫.৬৪.২); তাঁহারা অন্ন, ধন ও কল্যাণবিষয়ে যজমানদের প্রতি বিশেষরূপে বদান্য হন (৫.৬৪, ৬)– ইত্যাদি, ইত্যাদি।
ইরাবতীর্বরুণ ধেনবো বাং মধুমদ্বাং সিদ্ধবো মিত্র দুহে।
ত্রয়স্তস্থর্বৃষভাসস্থিস ণাং ধিষণানাং রেতোধা বি দ্যুমস্তঃ।।
অর্থাৎ, —হে বরুণ, হে মিত্র, তোমাদের দ্বারা ধেনুগুলি দুগ্ধবতী, নদীগুলি মধুক্ষরা; (তোমাদের আজ্ঞায়) রেতযুক্ত তিনটি কামবর্ষী স্থান বিশেষরূপে দীপ্তিযুক্ত হইয়াছে।। ঋগ্বেদ : ৫.৬৯.২ ॥
বৃষ্টিদ্যাবা রীত্যাপেষস্পতী দানুমত্যাঃ।
বৃহস্তং গর্তমাশাতে।।
অর্থাৎ, —বৃষ্টিকারী যে গতিযুক্ত দ্যুলোক, হে অন্নের পতি, তোমাদের (মিত্র ও বরুণ) দানশীলতার জন্যই তাহা শ্রেষ্ঠ; তোমরা মহৎ গর্তকে আশ্রয় কর।। ঋগ্বেদ : ৫.৬৮.৫ ॥
আ নো মিত্রাবরণা ঘৃতৈর্গব্যূতিমূক্ষতম্।
মধ্ব রজাংসি সূক্রতূ।।
অর্থাৎ,—হে মিত্রাবরণ, তোমরা আমাদের গোশালাটিকে ঘৃতসিক্ত কর, আমাদের বাসস্থানগুলিকে মধুসিক্ত কর, হে শোভনকৰ্মদ্বয়।। ঋগ্বেদ : ৩.৬২.১৬।
সং যা দানূনি যেমথুর্দিব্যাঃ পার্থিবরিষঃ।
নভস্বতীরা বাং চরন্তু বৃষ্টয়ঃ।।
অর্থাৎ,—হে মিত্রাবরুণ, তোমরা আমাদিগের দানের উপযোগী ধন এবং পার্থিব অন্ন আমাদিগের মধ্যে দান কর; তোমাদিগের জলযুক্ত বৃষ্টি (আমাদিগের মধ্যে) সঞ্চরণ করুক।। ঋগ্বেদ : ৮.২৫.৬ ৷।
ঋগ্বেদের এই দাতা বরুণটিরই প্রেতের মতো, ঐতরেয় ব্রাহ্মণের উত্তমর্ণ বরুণটি পাওনা-আদায়ের জন্যে বারবার হানা দিচ্ছে। ঋগ্বেদে আর যাই হোক আদায়ের ফিকিরে বরুণ বিভীষিকা সৃষ্টি করছেন—একথা কল্পনা করা যায় না।
শুধু তাই নয়, ঋগ্বেদে দেখি বরুণের সঙ্গে যজমানদের একটা রীতিমতো বন্ধু-সম্পর্ক। অধ্যাপক ম্যাক্ডোন্যাল(৭৪) বলছেন,
Varuna is on a footing of friendship with his worshipper who communes with him in his celestial abode and sometimes sees him with the mental eye.
য আপির্নিত্যো বরুণ প্রিয়ঃ সন্ত্বামাগাংসি কৃণবৎসখা তে।
মা ত এনস্বন্তে যক্ষিন্ ভূজেম যদ্ধি ষ্মা বিপ্রঃ স্তবতে বরুথম।।
অর্থাৎ, —হে বরুণ, যে তোমার সমীপে পাপ করিয়াছিল, সে এখন তোমার প্রিয় ও নিত্যবন্ধু; তোমার আত্মীয়স্থানীয় আমরা যেন পাপযুক্ত না হই, আমরা যেন ভোগ করিতে পারি, বিপ্ররূপ তুমি স্তুতিকারীকে অনিষ্টনিবারক গৃহ প্রদান কর।। ঋগ্বেদ : ৭.৮৮.৬ ।।
কিন্তু ঋগ্বেদে বরুণের চরিত্রে যেটা সবচেয়ে মহান দিক তা হলো তার নৈতিক গৌরব। অধ্যাপক ম্যাকডোন্যাল বলছেন,
The anthropomorphism of Varuna’s personality is more fully developed on the moral than the physical side. The descriptions of his person and his equipment are scanty, more stress being laid on his personality……
The spies (*) of Varuna are sometimes mentioned. They sit down around him (1.24. 13). They behold the two worlds; acquainted with sacrifice they stimulate prayer (7.87. 3)……
In marked contrast with Indra, Varuna has no myths related of him, while much is said about him (and Mitra) as upholder of physical and moral order……They are the guardians of the whole world (2.27.4)…….The order (*) of Mitra and Varuna is established where the steeds of the sun are loosed (5.62. 1.)……(৭৫)
As a moral governor Varuna stands far above any other deity. His wrath is roused by sin, the infringement of his ordinances, which he severely punishes (7.86. 3-4). The fetters (*ffort:) with which he binds sinners, are often mentioned (1.24, 15, etc.). They are cast sevenfold and threefold, ensnaring the man who tells lies, passing by him who’speaks truth (A. V. 4, 16.6). Mitra and Varuna are barriers, furnished with many fetters, against falsehood (7.65.3)……Together with Mitra, Varuna is said to be a dispeller, hater and punisher of falsehood (1.151. 2, etc)…… On. the other hand, Varuna is gracious to the penitent. He unties like a rope and, removes sin (2.28.5; 5.85, 7-8). He releases not only from the sins which men themselves commit, but from those committed by their fathers (7.86. 5)……(৭৬)