হ্যাঁ, এসেই তো শুনলাম ব্যাপারটা কিছুক্ষণ আগে।
আচ্ছা আপনি যে কাল রাত্রে ফিরতে পারেন নি কেউ জানতো এ বাড়িতে কথাটা?
কাল আসতে পারব না বলে ফোনে এখানে জানিয়ে দিয়েছিলাম।
ফোনে জানিয়ে দিয়েছিলেন?
হ্যাঁ।
হঠাৎ ঐ সময় মানিক চাটুয্যে বলে ওঠেন, কাল রাত্রে কখন ফোন করেছিলেন?
কেন, রাত তখন সাড়ে সাতটা আটটা হবে বৃষ্টি নামার কিছুক্ষণ পরেই।
মানিক চাটুয্যেই আবার প্রশ্ন করেন, ফোন কে ধরেছিল?
কেন বলুন তো?
না, তাই জিজ্ঞাসা করছি।
অবিশ্যি ব্যাপারটা সত্যি স্যাড।–মৃদু কণ্ঠে বলে নাসির হোসেন সাহেব।
কেন, স্যাড কেন?
কারণ ছোট মামীই ফোন ধরেছিলেন।
ছোট মামী! কিন্তু কুণ্ডু মশাই যে বলছিলেন—
কি?
কাল বিকেল থেকেই এ বাড়ির ফোনটা আউট অফ অর্ডার হয়ে আছে।
নাসির হোসেন সাহেব হেসে উঠলেন। বললেন, এ বাড়ির ফোন আউট অফ অর্ডার হয়েছিল?
হ্যাঁ।
কে বলেছে আপনাদের?
সৌমেন কুণ্ড মশাই।
মানিক চাটুয্যে বললেন।
ননসেন্স-ঐ লোকটা কখনো কোনো খবর রাখে না কিছু না, দুম্ করে একটা কথা এক এক সময় বলে বসে—আমি নিজে ফোনে ছোট মামীর সঙ্গে প্রায় দশ মিনিট ধরে কথা বললাম। আর ফোন আউট অফ অর্ডার হয়েছিল বলে বসলেন!
কিরীটী মানিক চাটুয্যের দিকে তাকিয়ে বললে, মানিকবাবু, সৌমেনবাবুকে একবার ডাকবেন এ ঘরে?
নিশ্চয়ই।
মানিক চাটুয্যে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।
নাসির হোসেন সাহেব!
কিরীটীর ডাকে নাসির হোসেন কিরীটীর মুখের দিকে তাকাল আবার।
কালরাত্রে কখন আপনি দমদমে আপনার বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হয়েছেন?
পৌনে তিনটে নাগাদ হবে।
কিসে এলেন?
কেন আমার নিজের গাড়িতে।
আপনার গাড়ি আছে? আছে বৈকি।
কি গাড়ি?
অস্টিন অক্সফোর্ড—
নিজেই চালান, না ড্রাইভার আছে?
না না, ড্রাইভার নেই, নিজেই চালাই নিজের গাড়ি।
আপনি সাধারণত কেমন speedয়ে গাড়ি চালান?
সে যদি বলেন মশাই, আমি একটু জোরে—মানে speedয়েই গাড়ি চালাই।
Speedয়ে–তবু সাধারণত কত মাইল?
মিনিমাম চল্লিশ তো বটেই, তার কমে গরুর গাড়ি চলে, সে মটোর নয়—
তা বটে!
মানিক চাটুয্যে কুণ্ডুকে নিয়ে এসে ঘরে ঢুকলেন ঐ সময়।
আসুন কুণ্ডু মশাই, এ বাড়ির ফোনটা কি ঠিক আছে? কিরীটী প্রশ্ন করে।
আজ্ঞে না।
ঠিক নেই?
না।
কখন থেকে আউট অফ অর্ডার?
কাল বিকেল থেকে। কোন্ ঘরে ফোন আছে?
এই তো বাইরের বারান্দায়।
কই, চলুন তো দেখি।
কিরীটী বের হয়ে গেল ঘর থেকে বারান্দায়।
১০. বারান্দার এক কোণে ফোনটা
বারান্দার এক কোণে ফোনটা এমনভাবে এবং এমন জায়গায় রাখা যে চট্ করে কারো চোখে পড়ে না।
ফোনটা কিরীটী পরীক্ষা করে দেখলো—একেবারে ডেড়, কোন শব্দই নেই তখনো।
কিরীটী সৌরীন কুণ্ডুর দিকে তাকাল, কখন আপনি প্রথম জানতে পারেন সৌরীনবাবু। যে ফোনটা আউট অফ অর্ডার?
কাল বিকালেই ছোট বেগম সাহেবা আমাকে জানান এবং বলেন, অফিসে একটা কমপ্লেন করতে।
মানে জাহানারা বেগম?
হ্যাঁ।
আচ্ছা সৌরীনবাবু, এই বাড়িতে পর্দার ব্যাপারটা কি রকম মানা হয়, সবাই পদানশিন কি?
সবাই, তবে—
তবে?
ছোট বেগম সাহেবা পদার ব্যাপারটা তেমন মানতেন না।
সকলের সঙ্গেই বুঝি তিনি কথা বলতেন?
সকলের সঙ্গেই।
খুব স্বাধীনচেতা ছিলেন বোধ হয়?
তাই–হুটহাট করে যখন যেখানে খুশি বেরুতেন, যা এ বাড়ির অন্যান্য বেগমরা আদৌ করেন না।
নবাব সাহেব নিশ্চয়ই খুব রক্ষণশীল মানুষ?
খুবই—তাহলেও ছোট বেগম সাহেবার ব্যাপারে তাঁর খুব একটা কনট্রোল ছিল বলে মনে হয় না।
আচ্ছা কুণ্ডু মশাই, একটা কথা—
বলুন। নবাব সাহেবের ঐ ভাগ্নে মানে আমাদের নাসির হোসেন সাহেব—ওঁর প্রতি নবাব সাহেবের মনোভাবটা ঠিক কেমন জানেন কিছু?
খুব প্রীতির বলব না, তবে—
তবে?
সুলতানা বেগম সাহেবার যে কারণেই হোক তাঁর ভাইয়ের প্রতি একটা হোল্ড আছে যে জন্য ঐ ভাগ্নেটির এ গৃহে বিশেষ একটা প্রতিপত্তি আছে।
হোল্ড থাকার কারণ তাহলে আপনার জানা নেই?
না, তবে মনে হয় নবাব সাহেব তাঁর বোনকে যেন একটু ভয় ও সমীহ করেন।
হুঁ—আচ্ছা নাসির হোসেন সাহেবের সিনেমার ছবি তৈরীর ব্যাপারে নবাব সাহেবের—
সহযোগিতার কথা বলছেন তো-খুব বেশীই আছে— তাই নাকি?
হ্যাঁ।
কিন্তু কেন?
তার কারণ নবাব সাহেবের এ বয়সেও একটা ব্যাধি আছে।
স্ত্রীলোকের উপরে দুর্বলতা বোধ হয়? কিরীটী মৃদুকণ্ঠে বলে কথাটা।
আপনি ধরেছেন ঠিক।
কিরীটী মৃদু হাসল।
ভাল কথা, নবাব সাহেব তো তাঁর ঘরেই আছেন?
হ্যাঁ।
এই দুর্ঘটনার ব্যাপারে খুব upset হয়ে পড়েছেন নাকি?
স্বাভাবিক, কারণ জাহানারা বেগম বলতে তো নবাব সাহেব একেবারে পাগল ছিলেন।
হুঁ–চলুন ঘরে যাওয়া যাক।
দুজনে এসে আগের ঘরে আবার প্রবেশ করল।
মানিক চাটুয্যে একাই ঘরে ছিলেন।
নাসির হোসেন সাহেব কই? কিরীটী প্রশ্ন করে।
তাঁর ঘরে গেছেন।
চলুন, তাহলে একবার নবাব সাহেবের সঙ্গে দেখা করে আসা যাক।
কিরীটীকে সঙ্গে নিয়ে অতঃপর মানিক চাটুয্যে নবাব সাহেবের ঘরের দিকে অগ্রসর হয়।
দোতলারই একটা অংশে দুখানা বড় বড় ঘর নিয়ে নবাব সাহেব থাকেন। বাব সাহেবের ঘরের একদিকে লাইব্রেরী-ঘর, অন্যদিকে যে দুখানা পর পর ঘর সেখানেই তিনি থাকেন।
ঘরের সংলগ্ন দুদিকে দুটি বাথরুম।
বড় বেগম সাহেবা নবাব সাহেবের পাশের ঘরেই থাকেন।
১১. বাথরুম দুটির মধ্যে একটি
বাথরুম দুটির মধ্যে একটি বড় বেগম সাহেবা রৌশেনারা বেগম সাহেবার ব্যবহারের জন্য, অন্যটি তাঁর নিজস্ব ব্যবহারের।