নবাব সাহেব হঠাৎ যেন স্থান কাল পাত্র ভুলে সম্বিৎ হারিয়ে চিৎকার করে উঠলেন, বেরিয়ে যান বেরিয়ে যান আমার ঘর থেকেget out-বলতে বলতে নবাব সাহেব উঠে দাঁড়ান।
বেরিয়ে আমি যাচ্ছি, কিন্তু মানিকবাবু আপনাকে নিষ্কৃতি দেবেন না, জাহানারা বেগমের হত্যাপরাধে আপনাকে গ্রেপ্তার করবেন।
ঘরের মধ্যে যেন বজ্রপাত হল।
নবাব সাহেব হঠাৎ ধপ করে আবার বসে পড়লেন সোফার উপরে।
মানিকবাবু-জাহানারার হত্যাকারী উনি। কিরীটী বলে ওঠে।
হঠাৎ পাগলের মত হা হা করে হেসে উঠলেন নবাব সাহেব।
হ্যাঁ হ্যাঁ—আমি–আমিই হত্যা করেছি জাহানকে।
১৮.
ফেরার পথে কিরীটী মানিক চাটুয্যেকে বলছিল।
দুটো—দুটো মারাত্মক ভুল করেছিলেন নবাব সাহেব—এক ঐ মোতির বোরখা ব্যবহার করে তার ঘাড়ে দোষটা চাপাবার চেষ্টা করে—দ্বিতীয় জাহানারার হাতের আঙুল থেকে হীরার আংটিটা খুলে নিয়ে এসে লোভের বশে।
কিন্তু কি করে আপনি বুঝলেন মিঃ রায় যে নবাব সাহেবই
হত্যাকারী—তাইনা? ছোরাটা যেভাবে আমূল বুকের মধ্যেবিঁধেছিল সেটাকোনস্ত্রীলোকের পক্ষেই সম্ভব নয়। কোন শক্তিমান পুরুষেরই কাজ। এ বাড়িতে পারবেন একনবাব সাহেব—দুই নাসির হোসেন, কিন্তু নাসির হোসেন স্বর্ণডিম্বপ্রসূ জাহানারাকে হত্যা করতে যাবে কেন, জাহানারা তাকে অর্থ যোগাত আর তার সঙ্গে নাসিরের পীরিতও ছিল।
কিন্তু কেন কেন হত্যা করলেন নবাব সাহেব তাঁর প্রিয় বেগমকে?
এখনও সেটা বুঝতে পারেননি–
না।
মেহেরের জন্য।
মেহের?
হ্যাঁ–ঐ মেহেরের জন্যই। অতিরিক্ত নারীলোভী নবাব সাহেবের যখনই মেহেরের উপর নজর পড়েছিল, জাহানারা সম্ভবত প্রতিবাদ জানিয়েছিল—সংঘর্ষ বেধেছিল সেই মুহূর্তে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে—যার ফলে শেষ পর্যন্ত তাঁকে অমন করে প্রাণ দিতে হল….
কিন্তু কি ভাবে হত্যা সংঘটিত হয়েছিল বুঝলেন কি করে?
ঐ বাড়ির দোতলার একটা নকশা মনে মনে ছকে নিন, তাহলেই ব্যাপারটা আপনার কাছে সহজ হয়ে আসবে। অবশ্য আমি ব্যাপারটা নবাব সাহেবকে সন্দেহ করে মোটামুটি অনুমান করেছিলাম–কারণ ঐ ভাবে ছাড়া হত্যা করা সম্ভবপর ছিল না।
কিরীটী চুপ করল।