হ্যাঁ, লোডেড পিস্তল আছে।
পোর্টে এসে ওরা জানতে পারল, তখুনি সেই সাদা জাহাজটা ছেড়েছে-বেশীদূর যেতে পারেনি। গান-বোট মেসেজ পেয়ে প্রস্তুতই ছিল।
গান-বোটের কমাণ্ডার ক্যাপ্টেন বালকৃষ্ণ ডেকের উপর দাঁড়িয়ে—একটা লঞ্চ করে ওরা তিনজন—কিরীটী, মিঃ রামিয়া আর রাজু গান-বোটে উঠে বোট ছাড়বার নির্দেশ দিল।
সঙ্গে সঙ্গে গান-বোট দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলল—কিছু দূরে চলমান সাদা জাহাজটা লক্ষ্য করে।
যেমন করে হোক ক্যাপ্টেন, ঐ জাহাজটার গতি রোধ করতেই হবে।
ক্যাপ্টেন বললে, একটা ওয়ারলেস মেসেজ পাঠাব অগ্রবর্তী জাহাজটাকে থামাবার জন্য মিঃ রামিয়া?
কিরীটী বললে, কোন ফল হবে না। ওরা আমাদের মেসেস ইগনোর করবে।
কিন্তু জাহাজের কাছাকাছি হলে ওরা যদি কামান দাগে! মিঃ রামিয়া বললেন।
সম্ভবতঃ ঐ জাহাজে সেরকম কোন অ্যারেঞ্জমেন্ট নেই। সেরকম হলে আমাদেরই কামান দেগে জাহাজটা ড়ুবিয়ে দিতে হবে।
আপনার কি ধারণা মিঃ রায়, ঐ জাহাজেই ডাঃ ওয়াং আছে?
নিঃসন্দেহে। কিরীটী বললে, শুধু তাই নয়, মিঃ ডিবরাজকে ও মিঃ চিদাম্বরমকেও ঐ জাহাজেই বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছে ডাঃ ওয়াং।
কিন্তু–
ওয়াং বুঝতে পেরেছিল এখানে আর তার সুবিধা হবে না—তাই ওদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর একটা মোটা রকমের টাকা ওরা ডিমাণ্ড করবে। কিরীটী বললে।
গান-বোট জাহাজটার কাছাকাছি আসতেই কিরীটী চাঁদের আলোয় দেখতে পেল, জাহাজের ডেকে একটা দীর্ঘকায় মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে যেন ছায়ার মত।
কিরীটী বললে, মিঃ রামিয়া, ঐ যে ডেকের উপর একটা লোক দাঁড়িয়ে, দেখতে পাচ্ছেন?
ইয়েস!
ক্যাপ্টেন? এবারে কিরীটী ক্যাপ্টেনকে সম্বোধন করলে।
ইয়েস!
কিন্তু তার আগেই পর পর দুটো গুলি ওই জাহাজটা থেকে ছুটে এল।সাবধান! ওরা রিভলবার চালাচ্ছে। কিরীটী সকলকে হুশিয়ার করে দেয়।
ক্যাপ্টেন ততক্ষণে জাহাজ লক্ষ্য করে গুলি করেছে।
পর পর কয়েকটা গুলিবিনিময় হল দুপক্ষের মধ্যে, এবং গুলি করতে করতেই গানবোট জাহাজের গায়ে এসে ভিড়ল।
জাহাজের ডেকের উপরে তখন চার-পাঁচজন পিস্তল হাতে গুলি চালাচ্ছে, গানবোট থেকেও গুলি চলে।
একটা খণ্ডযুদ্ধের পর জাহাজের ডেক থেকে গুলি ছোঁড়া বন্ধ হল।
জাহাজটা তখনও চলেছে ধীরে ধীরে।
১২. একটা দড়ি জাহাজের রেলিংয়ে
একটা দড়ি জাহাজের রেলিংয়ে গলিয়ে সেই দড়ির সাহায্যেই ওরা একে একে যখন জাহাজের ডেকে উঠে এল-সেখানে ডেকের উপরে চার-পাঁচটি মৃতদেহ পড়ে আছে।
কিরীটী ও মিঃ রামিয়া চারিদিকে দৃষ্টিপাত করে দেখলে, জাহাজের ডেকে আর জনপ্রাণী নেই, ইতিমধ্যে গান-বোট থেকে দশ-বারোজন সৈনিক উঠে এসেছে জাহাজে।
তাদের পাঁচজনকে প্রহরা দিতে বলে বাকী সৈনিক নিয়ে কিরীটী এগিয়ে চলল সিঁড়ি বেয়ে নীচের দিকে।
জাহাজটা কিন্তু তখনও চলেছে।
সিঁড়ি যেখানে শেষ হয়েছে-সামনেই একটা সরু প্যাসেজের মত—প্যাসেজে আলো ছিল, সেই আলোতেই ওরা এগিয়ে চলল—সর্বাগ্রে একজন সৈনিক রাইফেল হাতে, তার পিছনে কিরীটী ও মিঃ রামিয়া পিস্তল হাতে এবং বাকী সব তাদের অনুসরণ করে। হঠাৎওদের নজরে পড়ল একটা কাঁচের দরজা-কাজের ভিতর দিয়ে দৃষ্টিপাত করতেই বোঝা গেল–ওটা একটা কেবিনের দরজা। বেশ প্রশস্ত কেবিন-কেবিনের মধ্যে আলো জ্বলছে, আর–
আর সেই আলোয় দেখা গেল-কালো রঙের আলখাল্লা পরিহিত দীর্ঘকায় এক ব্যক্তি পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে এবং তার সামনে একটা চেয়ারে বসে মিঃ ডিবরাজ-তার হাত-পা বাঁধা।
ঐ–ঐ তো মিঃ ডিবরাজ! কাঁপা উত্তেজিত কণ্ঠে মিঃ রামিয়া কথাটা বলে শেষ করবার আগেই কিরীটী তার মুখে হাত চাপা দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল, hush! চুপ।
ও লোকটা কে? দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে মিঃ রামিযা বললেন।
ডাঃ ওয়াং সম্ভবত। কিরীটী চাপাগলায় জবাব দিল।
কোণের আর একটা চেয়ারে আর একজন বসে না? দেখতে পাচ্ছেন মিঃ রায়?
যা, উনি হয়ত মিঃ চিদাম্বরম।
এখন আমাদের কি কর্তব্য? : ডাঃ ওয়াং সম্ভবত এখনও জানতে পারেনি যে জাহাজ আমরা অধিকার করেছি—কিরীটীর কথা শেষ হল না, ওরা দেখতে পেল, কেবিনের এক কোণ থেকে একটা ছোট বাঁদর লাফাতে লাফাতে এগিয়ে এসে ডাক্তারের সামনে দাঁড়াল, ডাক্তার হাত বাড়াতেই বাঁদরটা তার হাত বেয়ে অবলীলাক্রমে ডাক্তারের কাধের উপর উঠে বসল।
ক্যাপ্টেন?
ইয়েস! কিরীটীর ডাকে সাড়া দিলেন ক্যাপ্টেন বালকৃষ্ণ, গান-বোটের কমাণ্ডার।
আপনার লোকদের বলুন জাহাজের ইঞ্জিন-ঘর দখল করতে—যান, চটপট অর্ডার দিয়ে আসুন।
ক্যাপ্টেন তখনি গিয়ে উপরের ডেকে অর্ডার দিয়ে মিনিট-তিনেকের মধ্যেই ফিরে এল, আর ঠিক সেই মুহূর্তে ডাঃ ওয়াং ঘুরে দাঁড়াল—
ওরা সকলে সঙ্গে সঙ্গে দরজার দুপাশে সরে দাঁড়াল।
দরজাটা খুলে ডাঃ ওয়াং বাইরে পা দিতেই কিরীটী ডাঃ ওয়াংয়ের উপরে ঝাপিয়ে পড়ল।
কিন্তু প্রচণ্ড শক্তি ডাঃ ওয়াংয়ের শরীরে। তাছাড়া জায়গাটা অপরিসর—দুজনে জড়াজড়ি করে কেবিনের মধ্যে গিয়ে পড়ল।
রাজুও কিরীটীর সাহায্যে এগিয়ে এল।
এদিকে আরেক বিপত্তি। জাহাজটা যেন একপাশে কাত হয়ে পড়তে শুরু করে, আর কেবিনের আলোটা হঠাৎ দপ করে নিভে গেল কিসের একটা শব্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।
অন্ধকার। নিকষ আলো অন্ধকার। কিছু চোখে পড়ে না।
তারই মধ্যে কিরীটী লোকটাকে নিয়ে জাপটাজাপটি করছে-জাহাজটা আরও একটু যেন কাত হয়ে পড়েছে ততক্ষণে।
একটা কিসের আঁঝাল গন্ধ নাকে আসছে। মিষ্টি কিন্তু ঝাঁঝাল–