কোন মানুষ আততায়ী তো নয় মিঃ রামিয়া!
রামিয়া কিরীটীর মুখের দিকে তাকাল, তবে ওঁর মৃত্যু হল কি করে?
ডাঃ ওয়াংয়ের প্রেরিত বিষাক্ত কোন গ্যাসে—
গ্যাসে!
কেন, গন্ধ পাচ্ছেন না ঘরে-still thereis some smell! ঘরের বাতাসে ছড়িয়ে আছে। তাই তো। দুবার নাক টেনে রামিয়া বলেন, একটা pungent smell যেন পাচ্ছি!
হ্যাঁ।
কিন্তু গ্যাস এলো কি করে ঘরে? সব তো বন্ধ ছিল।
গ্যাস এসেছিল আজই বিকেলে।
বিকেলে? কেমন করে?
আঙুল তুলে অদূরে টেবিলের উপরে রক্ষিত পার্সেলটা দেখিয়ে কিরীটী বললে, ঐ পার্সেলে এসেছে। চলুন দেখা যাক—
এগিয়ে গেল ওরা দুজনে। হোট একটা চৌকো বাক্স। তার মধ্যে কেটা ভাঙা কাঁচের কেস। তলায় কিছু জুয়েল্স্ চক করছে
এর মধ্যে ছিল গ্যাস? রামিয়া প্রশ্ন করলেন।
হ্যাঁ, কাঁচের কেসের মধ্যে কিছু জুয়েলের সঙ্গে বিষাক্ত গ্যাস সিল করে ভরে দেওয়া ছিল, কাঁচের কেসটা ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই সে গ্যাস বের হয়ে মিঃ ডিবরাজকে মৃত্যুচুম্বন দিয়েছে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে।
কি ভয়ঙ্কর! অস্পষ্ট কণ্ঠে বললেন মিঃ রামিয়া।
১১. বিস্ময়ের তখনো আরও বাকী
কিন্তু বিস্ময়ের তখনো আরও বাকী ছিল।
কিরীটী মৃতদেহটা ওল্টাতে অস্ফুটে বলে ওঠে, এ কে? এ কে?
কে! ঝুঁকে পড়েন মিঃ রামিয়া।
এ তো মিঃ ডিবরাজ নয়!
তাই তো!
কৃষ্ণান, দেখ তো এঁকে চিনতে পার কিনা—দেখেছো আগে কখনো কিনা?
কিরীটীর ডাকে কৃষ্ণান দরজার গোড়া থেকে এগিয়ে এসে মৃতদেহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেই অধস্ফুট কণ্ঠে বললে, এ যে সেক্রেটারি সাহেব।
রাজীবলোচন?
জী।
হঠাৎ কিরীটীর কি মনে হয়। সে মিঃ রামিয়াকে বলে, মিঃ রামিয়া, মিঃ ডিবরাজের অফিস কোথায় জানেন?
জানি।
Quick! এখুনি সেখানে চলে যান—গিয়েই আমাকে জানাবেন মিঃ ডিবরাজ সেখানে আছেন কিনা—
রামিয়া দ্রুতপদে বের হয়ে গেলেন।
কিরীটী মৃতের মুখের দিকে তখনও তাকিয়ে আছে। মুখখানা যেন ফ্যাকাশে, একবিন্দু রক্ত নেই কোথাও বলে মনে হয়। মুখটা সামান্য যা করা, কশ দিয়ে রক্তের লালা গড়িয়ে পড়ছে, চক্ষু দুটি বিস্ফারিত।
কিরীটী ঘর থেকে বের হয়ে কৃষ্ণার কাছে যায়।
কৃষ্ণা!
কৃষ্ণা তখনও কাদছিল। মুখ তুলে তাকাল কিরীটীর ডাকে।
ও মৃতদেহটা তো মিঃ ডিবরাজের নয়!
নয়?
না।
তবে কার?
সেক্রেটারী রাজীবলোচনের—
তবে ড্যাডি-ড্যাড়ি কোথায়?
জানি না। মিঃ রামিয়াকে পাঠিয়েছি তার অফিসে খোঁজ নিতে।
আমি যাব—
বসুন, ব্যস্ত হবেন না, ব্যস্ত হয়ে কোন লাভ নেই, কারণ আমার সন্দেহ হচ্ছে—
কি-কি আপনার সন্দেহ হচ্ছে মিঃ রায়?
তাকে হয়ত তার অফিসেও পাওয়া যাবে না।
পাওয়া যাবে না?
সম্ভবতঃ। Still hope for the best!
ঠিক তাই।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মিঃ রামিয়া ফিরে এলেন, বললেন, না, অফিস-ঘরে আলো জ্বলছে, অফিস খোলা, ঘরের দরজায় বেয়ারাটা মরে পড়ে আছে-মিঃ ডিবরাজ অফিসে নেই, আর এই পোশাকগুলো সেখানে পেয়েছি-একটা প্যান্ট, একটা কোট।
হুঁ।
কি ব্যাপার বলুন তো মিঃ রায়? মিঃ ডিবরাজ কোথায় গেলেন?
খুব সম্ভবতঃ হলুদ শয়তানের খপ্পরে-তার হাতেই এখন তিনি।
হলুদ শয়তান তাহলে—
ঠিক বলতে পারছি না মিঃ রামিয়া, তবে আমার অনুমান–হলুদ শয়তান যে করেই হোক রাজীবকে হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়েছিল–
বলেন কি!
তাই। এবং রাজীবকে দিয়েই ফোন করিয়ে আজ সন্ধ্যার পর জরুরী কাজের কথা বলে মিঃ ডিবরাজকে তারা তার অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থাকতেই হলুদ শয়তানের অনুচরেরা প্রস্তুত ছিল। সঙ্গে সঙ্গে মিঃ ডিবরাজকে গায়েব করে অন্যত্র নিয়ে যায়–
কিন্তু রাজীব।
ভগবানের দণ্ড-হ্যাঁ, ভগবানের দেওয়া পাপের দণ্ড তাকে মাথা পেতে নিতে হয়েছে। সে নিশ্চয়ই শুনেছিল বা দেখেছিল পার্সেলটার মধ্যে কাঁচের বাস্কের ভিতর জুয়েগুলো আছে। তার লোভ সে সামলাতে পারেনি, সে তাই পরে নিজের পোশাক ছেড়ে মিঃ ডিবরাজের পোশাক পরে সেগুলো হাতাতে এসেছিল। সে তো জানত না যে আমি বারংবার মিঃ ডিবরাজকে সাবধান করে দিয়েছিলাম, কাল কোনরকম পার্সেল বা প্যাকেট কারও হাতে বা ডাকে এলে আমার অনুপস্থিতিতে সেটা না খুলতে। তাই মিঃ ডিবরাজ বোধ হয় কাঁচের বাক্সটা খোলেননি, হয়ত আমাকে কাল সংবাদ দিতেন–
হঠাৎ ঐ সময় ঘরের ফোনটা বেজে উঠল ঝনঝন করে।
মিঃ রামিয়া গিয়ে রিসিভারটা তুললেন।
মিঃ রামিয়া আছেন ওখানে?
কথা বলছি।
আমি পোর্ট থেকে প্রহরী কথা বলছি।
কি ব্যাপার?
আজ বিকেলের দিকেই একটা ছোট সাদা রঙের জাহাজ এসেছিল এবং এতক্ষণ নোঙর করে ছিল। এখন মনে হচ্ছে জাহাজটা ছেড়ে যাবে। আপনি বলেছিলেন নতুন কোন লঞ্চ বা জাহাজ দেখতে পেলে, সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে ফোন করে জানাতে। তাই বাড়িতে আপনার ফোন করে জানলাম আপনি এখানে আছেন–
ঠিক আছে।
বস্তুত কিরীটীই রামিয়াকে গতকাল ঐ নির্দেশ দিয়েছিল, পোর্টে constant ওয়া রাখবার জন্য। রামিয়া বললেন ফোনের সংবাদ কিরীটীকে।
মিঃ রামিয়া, পুলিসের লঞ্চও আছে নিশ্চয়ই পোর্টে?
হ্যাঁ, জল-পুলিসের লঞ্চও আছে-দ্রুতগামী লঞ্চ গান-বোট।
এখুনি পোর্ট-পুলিসে ফোন করে ঐ সাদা জাহাজটার প্রতি নজর রাখতে বলুন—আমরা এখুনি আসছি। আরও বললেন, যেন গান-বোট রেডি থাকে।
মিঃ রামিয়া কিরীটীর নির্দেশমত ফোন করে দিলেন।
তারপরেই দুজনে গাড়ি নিয়ে বের হল।
গাড়িতে বসে কিরীটী শুধাল, সঙ্গে আর্মস আছে তো আপনার মিঃ রামিয়া?