তা জানি পাব—কিন্তু আমি ভাবছিলাম—
কিরীটী শুধাল, কি?
ওদের ডিমাণ্ড আমি মিটিয়ে দেব। সুন্দর দাসের মত—
কত ডিমাণ্ড করেছে ড্রাগন আপনার কাছে? কিরীটী শুধাল।
এক লাখ টাকা।
কবে দিতে হবে?
আগামী পরশুর মধ্যে—
টাকা কে কি ভাবে কালেকশন করবে? কিরীটী শুধাল।
আজ সকালে একটা ফোন পেয়েছি-ডিবরাজ বললেন।
ফোন!
হ্যাঁ, তাতে আবারও আমাকে শাসানো হয়েছে-টাকা না দিলে নাকি সুন্দর দাস বা মিঃ চিদাম্বরমের অবস্থাই আমারও হবে। আর টাকা দিতে রাজী থাকলে পরশু রাত বারোটায় তার নোক এসে টাকা নিয়ে যাবে–
আপনি বলেছেন দেবেন?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে-এবারে যা করবার আমরাই করব।
ঐ সময় কৃষ বেয়ারাকে সঙ্গে করে একটা ট্রলির উপরে চায়ের সরঞ্জাম ও প্রচুর জলখাবার নিয়ে পারলারে এসে ঢুকল।
আবার কিরীটী ও কৃষ্ণার চোখাচোখি হল।
কৃষ্ণাই ওদের চা পরিবেশন করল।
কিরীটী খাবারের দিকে হাত বাড়ায়নি, চায়ের কাপেই চুমুক দিচ্ছিল।
কৃষ্ণা প্যাসট্রির সামনে তুলে ধরে বললে, প্যাসট্রি নেবেন না?
কিরীটী তাকাল কৃষ্ণার মুখের দিকে, তারপর একটা প্যাসট্র প্লেট থেকে তুলে নিল।
মিঃ ডিবরাজ কিরীটীর পরিচয় করিয়ে দিলেন কৃষ্ণার সঙ্গে।
মিঃ রায়, আমার মেয়ে—একমাত্র সন্তান কৃষ্ণা। ও বোম্বাইয়ে ওর মামার কাছে থেকে পড়াশুনা করে। ছুটিতে আমার কাছে এসেছে। কৃষ্ণা, উনি মিঃ কিরীটী রায়-মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন মিঃ ডিবরাজ, কলকাতা শহরের একজন
কৃষ্ণা বললে মৃদু হেসে, ওকে চাক্ষুষ না দেখলেও ওঁর পরিচয় আমার জানা আছে ড্যাডি!
কিরীটী তাকিয়ে ছিল কৃষ্ণার মুখের দিকে।
কৃষ্ণা মৃদু হেসে বললে, আপনাকে আমি জানি—আপনার অনেক কীর্তির কথা আমি জানি।
কিরীটী মৃদু হাসল।
ড্যাডি!
ইয়েস!
মিঃ রায় ও মিঃ রামিয়াকে আজ রাত্রে ডিনারে আসতে বল না?
সে তত ভাল কথা—আসুন না আপনারা।
কিরীটী বললে, মিঃ রামিয়া এলে আমিও আসতে পারি
আসবেন তো তা হলে মিঃ রায়? কৃষ্ণা বললে।
আসব। কিরীটী বললে।
কৃষ্ণা বললে, আর এক কাপ চা দিই আপনাকে মিঃ রায়?
চা!
যা, আপনি তো চা খুব ভালবাসেন।
জানলেন কি করে?
জানি।
বেশ, দিন।
চা ঢেলে দিল আর এক কাপ কৃষ্ণা কিরীটীকে।
ড্যাডি, আমি একটু মার্কেটে বেরুব। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফিরব—
বেশ তো, যাও।
কৃষ্ণা ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
০৮. ঐদিনই সন্ধ্যার দিকে
ঐদিনই সন্ধ্যার দিকে।
বাংলোর পিছনদিকে পশ্চিমের বারান্দায় মিঃ ডিবরাজ, মিঃ রামিয়া ও কিরীটী বসে গল্প করছিলেন।
কৃষ্ণাও এতক্ষণ ছিল, এইমাত্র ভিতরে গিয়েছে ডিনারের ব্যবস্থা করতে।
পূর্ণিমার রাত বোধ হয়।
মস্ত বড় চাদ উঠেছে।
সামনে যতদূর দেখা যায় চন্দ্রালোকিত সাগর মাতামাতি করছে। ঢেউয়ের মাথায় মাথায় চাঁদের আলো যেন পিছলে পড়ছে।
কিরীটী বললে, মিঃ ডিবরাজ, পরশু আমরা ঠিক করেছি সন্ধ্যার পরই এখানে আসব।
কিন্তু ওদের ডিমাণ্ড মত টাকা না দিলে—
দিলেও ওদের আপনি নিবৃত্ত করতে পারবেন না। বরং দেখবেন ঐ ড্রাগনের লোভ আরো বেড়েই গিয়েছে। হলুদ শয়তানকে আপনি চেনেন না!—কিরীটী বললে।
হলুদ শয়তান!
হ্যাঁ, ডাঃ ওয়াং-লোকটা শুধু ক্রিমিন্যালই নয়—মূর্তিমান শয়তান।
কিন্তু–
আপনি কিছু ভাববেন না।
হঠাৎ ঐ সময় সিজারের ক্রুদ্ধ ডাক শোনা গেল দূরে।
সিজার-সিজার অমন করে ডাকছে কেন, বলতে বলতে তাড়াতাড়ি উঠে পড়লেন মিঃ ডিবরাজ এবং দ্রুতপায়ে বাড়ির পিছনদিককার বাগানের দিকে চলে গেলেন।
কিরীটীও সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ে ওঁকে অনুসরণ করে।
সিজারের ডাক শোনা যাচ্ছে–
কিরীটী ডিবরাজকে বেশীদূর অনুসরণ করতে পারে না, তার আগেই একটা সিনামোনের ঝোপের আড়ালে তিনি চলে গেছেন।
তবু কিরীটী এগুতে থাকে।
মিঃ ডিবরাজ-মিঃ ডিবরাজ যাবেন না—ফিরুন! কিরীটী চেঁচিয়ে ডাকল।
কোন সাড়া পাওয়া গেল না মিঃ ডিবরাজের।
সিজারের কুদ্ধ গর্জন আর একবার শোনা গেল।
তারপরই হঠাৎ যেন সব স্তব্ধ।
কিরীটী তবু এগিয়ে যায়।
হঠাৎ ঐ সময় রাত্রির স্তব্ধতাকে দীর্ণ করে পর পর দুটো গুলির আওয়াজ শোনা গেল।
ইন্সপেক্টার মিঃ রামিয়াও ততক্ষণে তার পিস্তলটা মুঠোয় চেপে ঐদিকে ছুটে আসছেন।
গাছগাছালিতে একেবারে জায়গাটা যেন বেশী দুর্ভেদ্য।
মাথার উপর আবছা আলো থাকলেও নিবিড় গাছ-গাছালির জন্য ঐ জায়গাটায় একটা আবছা আলোছায়া।
ভাল করে নজরে পড়ে না।
কিরীটী তথাপি এগিয়ে যায়।
হঠাৎ সামনে পড়ল একটা দীঘি।
দীঘির চারপাশে বড় বড় ঘাস গজিয়েছে। দুরে সীমানায় তারের বেড়া।
কিরীটী এদিক-ওদিক তাকায়, কিন্তু কোথাও মিঃ ডিবরাজকে দেখতে পায় না।
কুকুরের ডাকও আর শোনা যাচ্ছে না তখন।
কেবল একটানা ঝিঁঝির ডাক।
হঠাৎ নজরে পড়ল কিরীটীর, ডানদিকের ঝোপ থেকে কে একজন বের হয়ে আসছে।
কে? মিঃ ডিবরাজ না? হ্যাঁ, তিনিই—
মিঃ ডিবরাজ? দুপা এগিয়ে গিয়ে কিরীটী ডাকল।
মিঃ রায়?
সিজার-সিজার কোথায়?
আসুন। ভাঙা গলায় মিঃ ডিরাজ জবাব দিলেন।
কোথায়?
He is dead!
Dead? কে?
সিজার। ডিবরাজের সঙ্গে এগিয়ে গেল কিরীটী সামনের দিকে কিছুটা।
একটা পাম-ট্রির নীচে এগিয়ে এসে মিঃ ডিবরাজ বললেন, ঐ যে—
কিরীটী দেখল, সিজারের দেহটা মাটিতে পড়ে আছে।
কিরীটী আরও এগিয়ে গেল।
নীচু হয়ে দেখল।
চাঁদের আলোয় এবারে তার নজরে পড়ল, মৃত সিজারের পেটে একটা লোহার সরু শলার মত কি বিঁধে আছে। পকেট থেকে রুমাল বের করে কিরীটী সিজারের মৃতদেহ থেকে শলাটা টেনে বের করে চাঁদের আলোয় চোখের সামনে তুলে ধরল।