কিন্তু–
জলধর চেষ্টা করলে বোধ হয় খবরটা সংগ্রহ করে আনতে পারবে। আরও আমার একটা কথা কি মনে হচ্ছে জান সুব্রত লক্ষ্মী দেবীও হয়তো জানতে পেরেছেন ওদের দুই ভাইয়ের এখানে উপস্থিতির কথাটা। সত্যিই যদি লক্ষ্মী দেবী ও মানসী দেবী একই ব্যক্তি হয়, তাহলে যে কোন কারণেই হোক তিনি এই মুহূর্তে ওঁদের সামনে আসতে চান না। তাই তিনি হঠাৎ বেপাত্তা হয়েছেন!
কিন্তু লক্ষ্মী দেবীর কথা ওঁরা জানবেন কি করে?
সেটা অতি সহজ ব্যাপার, কোন পত্রিকায় হয়তো ওঁরা নতুন চিত্রতারকা লক্ষ্মী দেবীর ছবি। দেখেছেন। আর সেই ছবির সঙ্গে সংবাদ পড়েই
কিন্তু তাই যদি হয় তো লক্ষ্মীদেবী কি জানতেন না তার ছবি কাগজে বেরুলে এমন কিছু ঘটতে পারে—তখন তার বেঁচে থাকার ব্যাপারটা ওঁরা দুজনেই জেনে যাবেন।
তুমি একটা দিকই কেবল বিবেচনা করছ সুব্রত, কিরীটী বললে, এমনও তো হতে পারে সুব্রত, ওইভাবে তিনি ইচ্ছা করেই আত্মপ্রকাশ করেছেন। এবং এবারই শুরু হবে আসল নাটক!
ঠিক ঐ সময় সুষমা দেবীর স্বামী নিবারণ ভট্টাচার্য এসে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, ভিতরে আসতে পারি?
আসুন—আসুন মিঃ ভট্টাচার্য।
মিঃ ভট্টাচার্য এসে ঘরে ঢুকলেন।—একটা সংবাদ আছে, মিঃ রায়!
কি বলুন তো?
আপনি লক্ষ্মী দেবীর ঠিকানা খুঁজছিলেন না? ভট্টাচার্য বললেন।
কে বললে আপনাকে?
একটু আগে উদয়বাবু এসেছিলেন—
এসেছিলেন? কিন্তু কই, আমাদের সঙ্গে তো দেখা করলেন না?
লক্ষ্মী দেবী ডাইরেকটার নীলমণি রাউতকে একটা নাকি চিঠি দিয়েছেন—তাতে জানিয়েছেন তিনি আর অভিনয় করতে পারবেন না তাঁর ছবিতে, আর তিনি ভুবনেশ্বর থেকে চলে যাচ্ছেন।
কবে এসেছে সে চিঠি?
আজই সকালে তোক মারফৎ–কথাটা উদয়বাবু আমাকে বলে চলে গেলেন।
উদয়বাবু কখন এসেছিলেন?
মিনিট দশেক আগে। তারপরই একটু থেমে ভট্টাচার্য বললেন, আপনার স্টকে আর আছে। নাকি স্যার? কতদিন বাদে যে সেদিন স্কচ খেলাম!
না, আর তো নেই! কিরীটী বললে।
নেই? ভট্টাচার্যের কণ্ঠস্বরে রীতিমত যেন একটা হতাশা ফুটে ওঠে। একটু থেমে নিম্নকণ্ঠে অতঃপর বললেন, এই নিন তার ঠিকানা–।
আচ্ছা চলি—ভট্টাচার্য ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।
কিরীটীকে একটু যেন চিন্তিত মনে হল সুব্রতর, সে বললে, কি ভাবছ?
ভাবছি উদয়বাবু আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন না কেন? ঠিক আছে, চল!
কোথায়?
ভুবনেশ্বর।
এক্ষুনি?
হ্যাঁ, শুভস্য শীঘ্রম, নাও—চটপটে জামাটা বদলে নাও–
১২. একটা ট্যাক্সি যোগাড় করে
একটা ট্যাক্সি যোগাড় করে কিরীটী আর সুব্রত বেলা দেড়টা নাগাদ ভুবনেশ্বরে এসে পৌঁছুল। ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাহায্যেই বাড়িটা খুঁজে বের করতে ওদের কোন অসুবিধা হল না, বাড়ির সামনে এসে ওরা ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিল। ট্যাক্সিটা চলে গেল।
দোতলা বাড়ি। এবং বাড়িটা নতুন তৈরি হয়েছে মনে হয়। দরজা বন্ধ। কলিং বেল টিপতেই একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক এসে দরজা খুলে দিলেন। পরনে পায়জামা আর পাঞ্জাবি। মাথার চুল প্রায় সব সাদা। চোখে চশমা।
কাকে চাই? ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন।
আমরা একটা ফিল্ম কোম্পানি থেকে আসছি, কিরীটী বলল, লক্ষ্মী দেবী কি বাড়িতে আছেন?
না।
তিনি তো এখানেই থাকেন? কিরীটীর প্রশ্ন।
হ্যাঁ থাকতেন, তবে দিনপাঁচেক হল চলে গিয়েছেন। তাছাড়া আমি যত দূর শুনেছি আর কোন ছবিতে তিনি অভিনয় করবেন না।
কেন?
তা কেমন করে বলব বলুন!
তিনি কোথায় গিয়েছেন বলতে পারেন?
ভদ্রলোক বললেন একটু যেন ইতস্তত করেই, না, তা বলতে পারব না। মানে আমাকে সেসব কিছু বলে যাননি।
আচ্ছা এখানে তিনি কতদিন ছিলেন?
তা মাস আষ্টেক হবে।
আপনার নামটা জিজ্ঞাসা করতে পারি কি?
জগন্নাথ সাহু!
এটা বোধ হয় আপনারই বাড়ি? কিরীটীই বললে!
হ্যাঁ, কিন্তু এত কথা জিজ্ঞাসা করছেন কেন বলুন তো! ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বরে এবার যেন বেশ একটু রুক্ষতাই প্রকাশ পায়।
কিরীটী মৃদুকণ্ঠে বললে, লক্ষ্মী দেবীর ঠিকানাটা পেলে বড় ভাল হত। সত্যিই আপনি জানেন
জগন্নাথবাবু?
না। রুক্ষকণ্ঠে কথাটা বলেই জগন্নাথ সাহু ওদের মুখের ওপরই দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।
দুজনেই হতভম্ব কিছুটা। সুব্রত বললে, অতঃ কিম্?
কিরীটী সুব্রতর কথার কোন জবাব না দিয়ে ঘুরতে গিয়েই হঠাৎ একটা বন্ধ জানালার দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেল।
কিরীটীর দৃষ্টি অনুসরণ করে সুব্রতও ঐদিকে তাকিয়েছিল—তার যেন মনে হল জানালার একটা কপাট ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল।
চল, সুব্রত!
কোথায়—স্টেশনে তো?
না, কোন একটা হোটেলে। ওড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বর—নিশ্চয়ই এখানে দু-একটা ভাল হোটেল আছে!
কিন্তু হোটেলে কেন? সুব্রত পালটা প্রশ্ন করে।
কিরীটী বললে, করুণ দুটি চোখের মিনতি—যেও না, যেও না বঁধু!
মানে?
চোখ থাকলে দেখতে পেতে। চল—আর এখানে নয়-পা চালাও।
দুজনে হাঁটতে শুরু করে। কিরীটী চিন্তিত।
কিরীটী। জানালায় কার চোখের মিনতি দেখলি?
লক্ষ্মী দেবী ভুবনেশ্বর ছেড়ে যাননি কোথাও! কিরীটী বললে।
কি করে বুঝলি?
নারীজাতির সহজাত কৌতূহল। বুঝলে সুব্রত—সেই কৌতূহলটুকু প্রকাশ করতে গিয়েই ধরা পড়ে গেলেন!
হোটেলে একটা ভাল ঘরই পাওয়া গেল। একপেট আহারের পর সুব্রত একটানা একটা ঘুম দিল। ঘুম থেকে উঠে সুব্রত দেখল কিরীটী ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে।
কি হে, সারাটাক্ষণ পায়চারি করেই কাটালে নাকি?
কিরীটীর দিক থেকে কোন সাড়া এল না। সে একমনে তখনও পাইপটা ঠোঁটে চেপে পায়চারিই করে বেড়াচ্ছে।