আপনার স্ত্রী আপনাকে কাকার সম্পর্কে কোন কথা বলেছিলেন?
না।
আপনার ঠিক মনে আছে?
হ্যাঁ।
চা খেতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আপনার স্ত্রী আপনার সঙ্গেই ছিলেন কী সেই ঘরে?
হ্যাঁ।
আপনাদের দুজনের মধ্যে কী কথাবার্তা হয়েছিল জানতে পারি কী?
না, বলতে আমার অত্যন্ত আপত্তি আছে, কেননা সে-সব কথা সম্পূর্ণ আমাদের জীবনের নিজস্ব ব্যাপার।
আচ্ছা আপনি যখন ফিরে এসে কাকার সঙ্গে দেখা করেন, তখন তাকে কোন প্রকার অসুস্থ বা অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়েছিল?
যতদূর মনে পড়ে, না।
আপনার কাকার শরীরটা কয়েকদিন থেকে অসুস্থ ছিল?
হ্যাঁ।
আপনার কাকার সম্পত্তি কী ভাবে ভাগ হবে, জানেন কিছু?
হ্যাঁ–আমরা সব কজন ভাই সমানভাবে পাব।
আপনি আপনার কাকাকে ভালবাসতেন?
না।
কাকার ব্যবহারে আপনি দিনের পর দিন অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন নিশ্চয়ই?
তা কতকটা হচ্ছিলাম বৈকি।
আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?
না। তাছাড়া এটাকে আপনারা এভাবে ধরছেনই বা কেন? বুড়ো মানুষ, হাটের ব্যারামে ভুগছিলেন-হঠাৎ হার্টফেল করে মৃত্যু হয়েছে, এটাই কি স্বাভাবিক নয়? ডাঃ চক্রবর্তী যে কেন ব্যাপারটাকে সন্দেহের চোখে দেখলেন, বুঝতে পারছি না। মিথ্যে একটা familyকে হয়রান করে আপনাদের লাভই বা কি? তাছাড়া যিনি আমাদের প্রতিপালক, তিনি যতই খারাপ হোন না কেন, আমরা কেউ তাকে খুন করতে পারি এ কথাটা ভাবাও কি বাতুলতা নয় মিঃ রায়!
আপনি এখন যেতে পারেন, রণধীরবাবু। সমীরবাবুকে পাঠিয়ে দিন।
রণধীর ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেল।
কিরীটী একটা কাগজে কতকগুলো কি নোট করে নিল।
সমীর এসে ঘরে প্রবেশ করল।
অত্যন্ত রুক্ষ বিষণ্ণ তার চেহারা। চোখের কোলে কালি পড়ে গেছে। চোখে একটা ভয়চকিত চঞ্চল দৃষ্টি!
অত্যন্ত ক্লান্ত ও অবসন্ন।
আসুন সমীরবাবু, বসুন। কিরীটী আহ্বান করলে সমীরকে। সমীর সামনের চেয়ারটার উপরে বসে পড়ল।
সমীরবাবু, আপনাকে কতকগুলো কথা জিজ্ঞাসা করব, আশা করি যথাযথ জবাব দেবেন।
বলুন?
আপনি সর্বশেষ কখন আপনার কাকাকে জীবিত দেখেছিলেন?
প্রায় তখন পাঁচটা পঞ্চাশ মিনিট হবে।
সঠিক সময়টা আপনি জানলেন কি করে?
আমার রিস্টওয়াচটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফিরে এসে কাকার সঙ্গে যখন কথা বলি তখন কাকার হাতঘড়িটা দেখে সময় মিলিয়ে নিই।
হুঁ। আচ্ছা সেই সময় আপনার কাকাকে দেখে কোনরূপ অসুস্থ বা কোনপ্রকার অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়েছিল?
না।
আপনার কাকার সঙ্গে আপনার কি কথাবার্তা হয়েছিল?
তখনকার আমার মনের অবস্থা অত্যন্ত উত্তেজিত ও অস্থির ছিল। দীর্ঘকাল ধরে কাকার শাসনের মধ্যে থেকে আমি পাগল হয়ে উঠেছিলাম। এ ভয়ঙ্কর অবস্থা আর আমার সহ্য হচ্ছিল না। আমি কাকার সঙ্গে একটা শেষ বোঝাপড়া করবার জন্যই এসেছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন কথাই আমার বলা হয়নি, তার সামনে এসেই সবটুকু সাহস আমার উবে গিয়েছিল-আমার কোন কথাই আর কাকাকে বলা হল না, ফিরে এলাম নিজের ঘরে।
আপনি যখন বেড়াতে বের হন, তখন কে আপনার সঙ্গে ছিল?
আমি যখন বের হচ্ছি, হোটেলের গোড়াতেই আমার সমীরবাবুর সঙ্গে দেখা হয়, আমরা দুজনে একসঙ্গে সমুদ্রের ধার ধরে হাঁটতে থাকি। দুজনে কথা বলতে বলতে অনেকটা পথ যাবার পর কিছুকষণ এক জায়গায় বসে গল্প করি, তারপর আমি সেখান থেকে উঠে আসি। পথে ডাঃ প্রতিমা গাঙ্গুলীর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি সমুদ্রের ধারে বসে গান গাইছিলেন। তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ বসে গল্প করবার পর আমি হোটেলে ফিসে আসি।
ডাঃ প্রতিমা গাঙ্গুলীর সঙ্গে আপনার কতদিনের আলাপ?
সামান্য দিনের। মৃদুস্বরে সমীর জবাব দেয়।
হুঁ। আচ্ছা সমীরবাবু, ডাঃ প্রতিমা গাঙ্গুলীকে আপনার কী রকম মনে হয়?
চমৎকার। শিক্ষিতা ও অত্যন্ত রুচিসম্পন্না।
ডাঃ গাঙ্গুলীকে আপনার খুব ভাল লাগে, না সমীরবাবু?
কিরীটীর প্রশ্নে সহসা সমীরের সমগ্ৰ মুখখানা সিঁদুরের মত রাঙা হয়ে উঠল, সে কিরীটীর তীক্ষ্ণ অনুসন্ধানী দৃষ্টিপথ থেকে আপনার দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
কিরীটী আবার প্রশ্ন করলে, সেদিন বিকেলে আপনাদের মধ্যে—মানে আপনার ও ডাঃ গাঙ্গুলীর মধ্যে ঠিক কি ধরনের কথাবার্তা হয়েছিল সমীরবাবু?
মাপ করবেন মিঃ রায়, সে কথাগুলো একান্তই আমাদের দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
আপনার কাকার সম্পর্কে কোন কথা হয়েছিল কি?
হ্যাঁ, হয়েছিল।
কী ধরনের কথা?
এমন বিশেষ কিছু নয়, এবং আমার মনেও নেই তা।
হুঁ। আচ্ছা আপনার কাকাকে আপনি খুব ভালবাসতেন, না?
মোটেই না, বরং বলতে পারেন ভয় করতাম।
আপনার কাকার ব্যবহার আপনার প্রতি কী রকম ছিল?
বলতে পারি না।
আপনি আপনার বর্তমান জীবনধারার প্রতি একান্ত বীতস্পৃহ হয়ে উঠেছিলেন সমীরবাবু, কেমন না?
তা হয়েছিলাম।
আচ্ছা আপনার কাকার হত্যা সম্পর্কে, যদি ধরে নেওয়া হয় তাকে হত্যাই করা হয়েছে, কাউকের সন্দেহ করেন?
না।
আচ্ছা আপনার কাকার এই আকস্মিক মৃত্যু স্বাভাবিক কি অস্বাভাবিক বলে আপনার মনে হয়?
বলতে পারি না।
তবু?
স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। একে তিনি বৃদ্ধ হয়েছিলেন, তারপর হার্টের ব্যারামে দীর্ঘদিন ভুগছিলেন। মরবার দুদিন আগে palpitation অত্যন্ত বেড়েছিল।
আপনার কাকাকে ঔষধপত্র খাওয়াত কে?
সাধারণত বৌদিই কাকার দেখাশুনা করতেন ও ঔষধপত্র খাওয়াতেন, তবে মাঝে মাঝে আমিও করতাম।