মিষ্টি গন্ধটা কিসের হতে পারে? হঠাৎ মনে হয় সুব্রতর, ক্লোরোফরমের গন্ধ নয়তো ক্লোরোফরমের সাহায্যে অজ্ঞান করে তীক্ষ্ণ সঁচের মত কোন অস্ত্রের সাহায্যে একেবারে হৃৎপিণ্ডকে বিদ্ধ করে মৃত্যু ঘটানো হয়নি তো? ঐসময় পুলিস সার্জন ডাঃ আমেদ এসে ঘরে। প্রবেশ করলেন, Good morning মিঃ রায়, মিঃ তালুকদার!
Good morning! ওঁরাও প্রত্যুত্তরে বললেন।
মৃতদেহ কোথায়? ডাঃ আমেদ প্রশ্ন করলেন।
ঐ যে দেখুন। বলে সুব্রত আঙুল তুলে দেখাল।
ডাঃ আমেদ সুব্রতর নির্দেশমত মৃতদেহের দিকে এগিয়ে গেলেন।
ডাঃ আমেদের পরীক্ষা হয়ে গেলে, সুব্রত ডাঃ আমেদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, মিঃ সরকার কতক্ষণ মারা গেছেন বলে আপনার মনে হয়, ডাঃ আমেদ?
রাইগারমর্টিস বেশ ভাল করেই হয়েছে। মনে হয় রাত্রি সাড়ে নয়টা থেকে দেড়টার মধ্যে কোন এক সময় মারা গেছেন—কোন বিষের ক্রিয়ায়। কারণ মৃতদেহের বাঁদিককার fifth intercostal space-এ mamary line থেকে একটু laterally ও below-তে puncture wound দেখা যাচ্ছে–
সুব্রত বলে, হ্যাঁ–
ডাঃ আমেদ বলেন, তাই আমার মনে হচ্ছে, ঐ wound কোন needle জাতীয় instrument-এর সাহায্যে হয়ে থাকবে!
তালুকদার বলেন, স্পষ্ট করে আর একটু বলুন, ডক্টর আমেদ?
মনে হচ্ছে কোন বিষ needle-এর সাহায্যে একেবারে হার্টে প্রবেশ করিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওঁর মৃত্যু ঘটানো হয়েছে—অবশ্য ময়নাতদন্তে সবই প্রকাশ পাবে
You mean–
ঠিক তাই। এটা suicide বলে মনে হয় না, তালুকদার সাহেব! খুব সম্ভব a case of homicide-হত্যা—মার্ডার!
আপনার কি তাই মনে হয়?
হ্যাঁ। তাছাড়া–
কি?
ঐ সময় সুব্রত কথা বলে, মৃত ব্যক্তির নাকের ডগায় দুতিনটে yellow spots আছে। মৃত ব্যক্তির নাকের কাছে নাক দিয়ে শুঁকে দেখুন, chloroform-এর গন্ধও পাওয়া যায়।
তাই নাকি? দেখি! ডাঃ আমেদ সুব্রতর কথামত মৃত ব্যক্তির নাক, পরীক্ষা করে ও এঁকে দেখলেন, Yes! You are right, ওটা chloroform-এরই দাগ।
আমারও মনে হয় ডাক্তার যে, আগে chloroform করা হয়েছিল। পরে কোন হাইপোডারমিক নি জাতীয় বস্তুর সাহায্যে হার্টকে puncture করতেই shock-এ মৃত্যু হয়েছে।
ডাঃ আমেদ বললে, না তা হতে পারে না! Chloroform দিলে shock হবে কেন? হবে না বুঝি?
না। কোন বিষপ্রয়োগে বলেই মনে হয়!
মৃতদেহ তাহলে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাবার ব্যবস্থা করি? তালুকদার অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন।
করুন। আমি তাহলে চলি। নমস্কার।
নমস্কার।
ডাঃ আমেদ ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলেন।
০৩. সুব্রত তালুকদারের মুখের দিকে তাকিয়ে
সুব্রত তালুকদারের মুখের দিকে তাকিয়ে এবারে বললে, এখানকার সকলের জবানবন্দী নিয়েছেন? কে কে এখন বাড়িতে আছেন?
না, জবানবন্দী নিইনি এখনও। মিঃ সরকারের বড় ছেলে গণেন্দ্রবাবুকে সংবাদ পাঠানো হয়েছে। এখুনি হয়তো আসবেন তিনি। একমাত্র তিনি ছাড়া ছোট ছেলে সৌরীন্দ্র, ভাগ্নে অশোক, ছোট ভাই বিনয়ে সকলেই আছেন। মিঃ, সরকারের সেক্রেটারি অনিমেষবাবুও আছেন। বাড়ির চাকরবাকরের মধ্যে মিঃ সরকারের বহুদিনকার পুরাতন ভৃত্য গোপাল ও থাকোহরি, ঠাকুর রামস্বরূপ, সোফার কিষণ সিং, দারোয়ান রণবাহাদুর থাপা, মালী হরি, সকলেই আছে।
বেশ। আগে একবার চলুন, মিঃ সরকারের শয়নকক্ষটা দেখে আসি। তারপর লাইব্রেরিটা আর একবার ভাল করে দেখব। হ্যাঁ ভাল কথা, মৃতদেহ সর্বপ্রথমে কার নজরে পড়ে?
সে এক বিচিত্র ব্যাপার মিঃ রায়! এ বাড়ির এক বিশেষ পরিচিত যুবক সুবিমল চৌধুরী। তিনি খুব ভোরে মিঃ সরকারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। শয়নঘরে মিঃ সরকারকে না পেয়ে লাইব্রেরিতে গিয়ে ঢোকেন। মিঃ সরকারের নাকি খুব ভোরে উঠে লাইব্রেরি ঘরে ঘণ্টাখানেক পড়াশুনা করা অভ্যাস ছিল। তাই তিনি লাইব্রেরিতে যান এবং তিনিই সর্বপ্রথম মিঃ সরকারকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তখন চিৎকার করে সকলকে ডাকাডাকি করেন এবং পুলিশে সংবাদ দিতে বলেন। ছোট ভাই বিনয়ে বাড়িতে ছিলেন না। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বরাহনগরে এক বন্ধুর বিবাহে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন। তিনি এই কিছুক্ষণ হল এসেছেন। মোটামুটি এইটুকুই এখন পর্যন্ত আমি জানি।
হুঁ।–বলতে বলতে সুব্রত মিঃ সরকারের লাইব্রেরি সংলগ্ন শয়ন কক্ষে গিয়ে প্রবেশ করল। শয়নকক্ষটি বেশ প্রশস্ত। নরম পুরু গালিচায় ঘরের মেঝেটি আগাগোড়া মোড়া। ঘরের এক কোণে একটি দামী মেহগনি কাঠের পালঙ্ক। পালঙ্কের ওপরে ধবধবে পরিষ্কার শয্যা বিছানো। নিভাজ নিখুঁত শয্যা। শয্যাটি যে গত রাত্রে ব্যবহৃত হয়নি সেটা দেখলে বুঝতে দেরি হয় না।
খাটের শিয়রের ধারে একটি শ্বেতপাথরের টীপয়ের ওপরে ফোন। তার এক পাশে একটি সুদৃশ্য ভাঙা দামী সোনার রিস্টওয়াচ। দুটো বেজে বন্ধ হয়ে আছে। এক পাশে একটি কাঁচের গ্লাসভর্তি জল। জলটিও ব্যবহৃত হয়নি বোঝা যায়।
ঘরের অন্য কোণে একটি আলনায় কয়েকটি জামা কাপড় ও সুট। তারই পাশে একটি লোহার সে ও তার পাশে একটি আয়নাওয়ালা কাঁচের আলমারি ঘরের মধ্যে, আর কোন আসবাবপত্র নেই।
দেওয়ালে গোটা দুই ফটো। একটি ফটো একজন স্ত্রীলোকের—অন্যটি একটি বছর দশেকের ছেলের, একটা কাঠের ঘোড়ার ওপরে চেপে বসে আছে। * শয়নঘরটি দেখে সুব্রত এসে লাইব্রেরিতে ঢুকল। মৃতদেহের সামনে টেবিলের ওপরে রক্ষিত খোলা বইটার দিকে তাকাল! বইটা কৃত্তিবাসের রামায়ণ। হঠাৎ একটা শ্লোকের দিকে সুব্রতর নজর পড়ল, মৃত্যুপথযাত্রী লংকার অধীশ্বর রাবণের খেদএকটি কবিতার চরণের নীচে ডিপ ভায়োলেট কালিতে আনডারলাইন করা এবং আনডারলাইনের পাশেই একই কালিতে দুটি xx চিহ্ন দেওয়া। লাইনটা হচ্ছে :