কি কি বিষয়ে পারদর্শী হতে চান আপনি, ভেবে বের করুন। তারপর সেগুলো সিরিয়াল নম্বর দিয়ে এক এক করে লিখে ফেলুন।
ধরুন, আপনি হতে চান ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী। লিখুন।
১) ভালো স্বাস্থ্য চাই। ২) ওজন কমিয়ে একহারা হতে চাই। ৩) স্মরণশক্তি বাড়াতে চাই। ৪) অভ্যাসের নিয়ন্ত্রক হতে চাই। ৫) মনোনিবেশ করার ক্ষমতার অধিকারী হতে চাই। ৬) সুখী হতে চাই। ৭) আত্মবিশ্বাসী হতে চাই। ৮) স্মার্ট হতে চাই। ৯) দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়া শিখতে চাই। ১০) আরো জ্ঞান অর্জন করতে চাই। ১১) ধূমপান ছাড়তে চাই। ১২) পরচর্চা ত্যাগ করতে চাই। ১৩) সকলের। প্রশংসা পেতে চাই। ১৪) নেতৃত্ব লাভ করতে চাই। ১৫) সম্মানজনক পেশা পেতে চাই। ১৬) পারিবারিক মর্যাদা বাড়াতে চাই। ১৭) মানসিক শান্তি পেতে চাই। ১৮) বিদেশে ভ্রমণে যেতে চাই। ১৯) সৃষ্টিধর্মী কাজে পারদর্শী হতে চাই। ২০) সুন্দর বাচন ভঙ্গির অধিকারী হতে চাই অর্থাৎ সুন্দরভাবে কথা বলা শিখতে চাই। ২১) আত্মীয়-স্বজনের প্রিয়পাত্র হতে চাই। ২২) ছেলে-মেয়েদেরকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ২৩) সৎ হতে চাই। ২৪) সমাজের সেবা করতে চাই। ২৫) বন্ধুত্ব অর্জন করতে চাই। ২৬) সম্মানী মানুষদের সংস্পর্শে আসতে চাই। ২৭) চাকরিতে উন্নতি করতে চাই। ২৮) আধুনিক জীবন-যাপন পদ্ধতি শিখতে চাই। ইত্যাদি।
এক লাফে গাছে চড়তে গেলে যেমন পপাত ধরণীতল হবার আশঙ্কা আছে। তেমনি আপনার অবজেকটিভের তালিকার সবগুলো বস্তু এবং বিষয় যদি একবারে একসাথে অর্জন করতে চান তাহলে বিপদ ঘটবার সমূহ সম্ভাবনা। তাছাড়া কোন দৈব-বলে সব যদি একবারে পেয়েও যান, কদিন পরেই বাসি হয়ে যাবে সব, নতুন বিষয় ও বস্তু খুঁজতে হবে পাগলের মতো। কাজেই একবারে একটি বস্তুবা বিষয়কে বেছে নিন, সেটিকে অর্জন করার চেষ্টা করুন।
একটার পর একটা কা বস্তু অর্জন করবেন, জীবনটা হয়ে উঠবে আনন্দ, মুখর, বৈচিত্র্যময়।
তালিকা তো তৈরি করেছেন। এবার প্রত্যক্ষদর্শনের পালা। আপনার অবজেকটিভকে কি করে প্রত্যক্ষভাবে দর্শন করবেন তাও জানতে হবে আপনার। নির্দিষ্ট নিয়ম আছে, সেগুলো আপনাকে নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করতে হবে, কাজে লাগাতে হবে একটা অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক শক্তিকে।
কিন্তু প্রত্যক্ষ দর্শনের নিয়ম শেখার আগে আরো কিছু কথা জেনে রাখুন, উপকারে আসবে।
সাফল্যের পথে যাত্রী আপনি। সাথে কি কি নেবেন, ঠিক করতে হবে না? যোদ্ধা যায় যুদ্ধ করতে, সাথে নেয় সে অস্ত্র-শস্ত্র। আরো কিছু জিনিস সাথে নিতে হয় তাকে। বলুন তো কি সেই জিনিস?
বেশ কয়েকটি জিনিস সাথে নিতে হয় তাকে। যেমন-এক, দেশ প্রেম। দুই, সাহস। তিন, ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা। চার, নিয়মানুবর্তিতা। পাঁচ, আদেশ। পালনের দৃঢ় সংকল্প, ইত্যাদি।
আপনাকে কিন্তু বিশেষ কিছুই সাথে নিতে হবে না। বস্তুগত উপকরণ-দরকার নেই। যা পরে আছেন, কাপড়চোপড় ছাড়া, আর কিছু নিতে হবে না সঙ্গে। কিন্তু মনের ভাণ্ডারে কিছু জিনিসপত্র নিতে হবে, যা হবে আপনার সাফল্যের ভ্রমণে পাথেয়-স্বরূপ। কি কি নিতে হবে, আসুন, ঠিক করে ফেলা যাক।
.
আমি পারবো–এই বিশ্বাস
আমি পারবো এই বিশ্বাস আপনার না থাকলে আপনি কোনো কাজে হাতই দেবেন, তাই না? সুতরাং আগে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে আপনি পারবেন। এটাই প্রথম কাজ।
প্রশ্ন করতে পারেন, আমি পারবো এই বিশ্বাস কিভাবে নিজের মধ্যে আনা যায়?
নিজের মধ্যে এই বিশ্বাসটি আমদানী করা খুবই সহজ কাজ। যা আপনি সত্যি করতে চান তা করতে সবরকম উপায়ই ব্যবহার করবেন, সম্ভাব্য সব কিছু করতে রাজি আছেন-মাত্র এই চিন্তাটুকুই আপনার মধ্যে “আমি পারবো” এই বিশ্বাস এনে দেবে।
সম্ভাব্য সবকিছুই আপনি পারবেন, এটা নির্ভেজাল সত্যি কথা। আপনি মানুষ, মানুষের দ্বারা যা সম্ভব, আপনার দ্বারাও তা সম্ভব। লিঙ্কনের কথা ধরুন। অতি সাধারণ লোক ছিলেন তিনি। কিভাবে পরবর্তী জীবনে তিনি হতে পেরেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট? আমি হতে পারবো-এই বিশ্বাস তার মধ্যে ছিল বলেই তো।
আবিষ্কারক, উদ্ভাবক, মনীষী, প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের জীবনী ঘেঁটে দেখুন, এঁদের অধিকাংশই ছিলেন আমার-আপনার মতোই সাধারণ মানুষ। পারবো-এই মনোবল এবং বিশ্বাসই তাদেরকে বড় করেছে। আপনিও মনে করুন-পারবো। তাহলেই পারবেন। যত বড় হতে চাইবেন, ঠিক তত বড়ই হতে পারবেন।
কোনো কাজকে কঠিন মনে করা উচিত নয়। কারণ, কোনো কাজই আসলে কঠিন নয়। দশতলা একটা দালান দেখে কি মনে হয়? মনে হয় না কি, এইরকম একটা বিল্ডিং তৈরি করা কঠিন কাজ? কিন্তু আসলে কি তাই? না, তা নয়। সম্পূর্ণ কাজটিকে এক নজরে দেখে কঠিন বলে মনে হলেও আসলে তা সত্যি কঠিন নয়। একরাতে একজন লোক বিল্ডিংটাকে তৈরি করেনি। করেছে বহু লোকজন মিলে, একটু একটু করে, অনেকদিন ধরে। বিল্ডিংটা একটা বড় কাজ। সেটাকে ছোটো ছোটো কাজে ভাগ করে নিয়ে সবাই মিলে প্রতিটি ভাগকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। ক্ষুদ্র কাজগুলোর একত্রিত রূপ হলো দিন। শুংটা। যারা এটা তৈরি করার জন্যে খেটেছে তাদের কাছে মোটেই কঠিন বলে মনে হয়নি। তারা নিয়ম পালন করে মনের আনন্দে যার যার কাজ করে গেছে মাত্র।