কোনো কাজে সাফল্য চান? পরিকল্পনা রচনা করুন।
আপনি সাফল্য চান। সাফল্যের পথে রওনা হতে চান। কি করতে হবে আপনাকে তা এখন আবার নতুন করে বলে দিতে হবে না নিশ্চয়ই? হ্যাঁ, একটি সুন্দর, নিখুঁত পরিকল্পনা রচনা করা দরকার এখন।
কোথায় কোথায় যাবেন? সাফল্যের পথে যাত্রা শুরু করার আগে এই প্রশ্ন উঠছে, তাই না? কোথায় যে থায় যাবেন অর্থাৎ কি কি চান আপনি?
সাফল্যের পথে যাত্রা, বই গুরুত্বপূর্ণ যাত্রা। মুখে মুখে বা মনে মনে এর। পরিকল্পনা করা উচিত হবে না। কাগজ কলম নিন।– কাগজ কলম নিয়েছেন? বেশ। একটু সবুর করুন, প্রয়োজনীয় দু’চার কথা বলে নেই আগে। কি কি চান তা ঠিক করবেন আপনি, ঠিক করে জিনিসগুলোর। নাম লিখবেন কাগজে। অর্থাৎ একটা তালিকা তৈরি করবেন।
আপনার প্রয়োজন এবং আপনার ইচ্ছা বা কামনা-এ অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কি কি চান আপনি তা আপনাকে নিখুঁত, পরিষ্কার এবং বিশদভাবে জানতে হবে। এবং যা যা চান, গুরুত্ব অনুসারে, এক এক করে সাজাতে হবে।
কিন্তু তারও আগে, যা যা চান তা ঠিক করার আগে, আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কি কি চান না।
একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বোঝাবার চেষ্টা করছি।
ধরুন, আপনি একটি পুরানো বিল্ডিংকে ভেঙে নবরূপ দিতে চান। প্রথম পদক্ষেপটা কি হবে আপনার? একজন আর্কিটেক্টকে ডাকা, তাই না? বেশ, আর্কিটেক্ট এলেন। তাঁর প্রথম পদক্ষেপটা কি হবে? বিল্ডিংটিকে ঠিক কি রূপে রূপান্তরিত করতে চান তিনি তা সবচেয়ে আগে স্থির করতে হবে তাঁকে। নবরূপ দানের জন্যে তিনি একটি পরিকল্পনা রচনা করবেন অর্থাৎ তিনি একটি নকশা তৈরি করবেন এবং নকশাটিকে বাস্তবে রূপ দেবার সূচনা-স্বরূপ তিনি স্থির করবেন বিল্ডিংটা থেকে কি কি জিনিস সরিয়ে ফেলতে হবে, কোন কোন অংশ আংশিক বা সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলতে হবে। অন্য কথায়, গড়ে তোলার আগে তাকে ভাঙার কাজে হাত দিতে হবে।
নতুন করে জীবনটাকে গড়ে তুলতে হলে আর্কিটেক্ট ভদ্রলোকের পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে আপনাকেও।
আধুনিক মনস্তত্ত্ববিদরা প্রত্যক্ষদর্শনে বিশ্বাসী। আপনার পরিকল্পনাটা কাগজে লিখে নিন, প্রয়োজনে কাগজের ভাঁজ খুলে লিখিত পরিকল্পনা পরীক্ষা করুন বারবার এবং প্রয়োজন মতো সংশোধন করুন-এই প্রচলিত নিয়ম পালন করার পরামর্শ তো তারা দিচ্ছেনই, তারা আরও বলছেন, তুমি যা চাও অর্থাৎ তোমার অবজেকটিভ বা কাম্যবস্তু যে জিনিসটি সেটির ছবি তোমাকে দেখতেই হবে।
ছবি দেখতেই হবে–কিভাবে? পরে বলছি। তার আগে আপনার জানতে হবে কিভাবে তৈরি করবেন আপনার অবজেকটিভের তালিকা।
আপনার অবজেকটিভের সংখ্যা জানতে হবে আপনাকে। কি কি চান, লিখে ফেলতে হবে এক এক করে, সাধারণ একটা তালিকা তৈরি করতে যাচ্ছি আমরা। এটাকে আপনি কাম্যবস্তুর তালিকা বা অবজেকটিভ চার্ট বলতে পারেন। চার্টটাকে আমরা দু’ভাগে ভাগ করে নেবো। এই চার্টের তালিকা হয়তো আপনার নিজস্ব চাহিদার তালিকার সাথে মিলবে না। আপনার প্রয়োজন এবং মনের ইচ্ছাগুলো হতে পারে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের। সেক্ষেত্রে, তালিকার নমুনাটা বুঝে নিয়ে আপনি নিজেই নিজের জন্যে একটি আলাদা চার্ট তৈরি করে নেবেন, আপনার নিজস্ব প্রয়োজন এবং মনের ইচ্ছাগুলো অনুযায়ী।
আসুন, শিখে নিন। কাগজ নিন দুশিট ফুলস্কেপ। কলম নিন।
নিয়েছেন কাগজ-কলম?
বেশ। প্রথম কাগজটার উপরে লিখুন, বেশ বড় বড় অক্ষরে-বস্তু। এবার স্থির করুন অর্থাৎ চিন্তা করে নির্ধারণ করুন কি কি বস্তু প্রয়োজন আপনার। এক এক করে, সিরিয়াল নম্বর দিয়ে লিখে ফেলুন আপনার প্রতিটি প্রয়োজন। ধরুন, আপনার এক নম্বর প্রয়োজন (বস্তুগত উপকরণ)-একটি নতুন বাড়ি। কাগজে লিখুন, ১) একটি নতুন বাড়ি। এর নিচে লিখুন, ২) একটি নতুন ব্যবসা। এইভাবে নম্বর দিয়ে লিখতে থাকুন এক এক করে প্রত্যেকটি প্রয়োজনের নাম-৩) নতুন গাড়ি। ৪) টেলিভিশন। ৫) ইলেকট্রিক ফ্যান। ৬) ফ্রিজ। ৭) স্টীল আলমারি। ৮) দামী ক্যামেরা। ৯) ড্রেসিং টেবিল। ১০) থ্রী-ইন-ওয়ান। ১১) রেডিওগ্রাম। ১২) গহনা। ১৩) দামী ঘড়ি। ১৪) কার্পেট। ১৫) এয়ারকুলার। ১৬) পোশাক পরিচ্ছদ। ১৭) সোফা। ১৮) অ্যান্টিকস। ১৯) বন্দুক। ২০) দূরবীক্ষণ যন্ত্র। ২১) প্রজেক্টর। ২২) মুভিক্যামেরা। ইত্যাদি।
বস্তুগত উপকরণের শেষ নেই। সুতরাং তালিকাটা দীর্ঘ হবে না ক্ষুদ্র হবে তা সম্পূর্ণ আপনার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করছে। ইচ্ছা করলে তালিকা আপনি যত খুশি বড় করতে পারেন, কিংবা প্রথমে ছোটখাট একটা তালিকা তৈরি করতে পারেন। পরে, যথাসময়ে, আরো প্রয়োজন যোগ করবেন। দীর্ঘ হয়ে উঠবে ক্রমশ তালিকাটা। যথাসময়ে বলতে আমি বলতে চাইছি, ছোটো তালিকার সবগুলো প্রয়োজন মিটে যাবার পর। এক এক করে বগুলো প্রয়োজন মেটাবেন আপনি। তারপর আরো প্রয়োজন যোগ করবেন তালিকায়। যোগ করার মতো চাহিদার অভাব কোনোদিনই হবে না আপনার। যতদিন বেঁচে থাকবেন, এটা সেটার প্রয়োজন লেগেই থাকবে। সেই প্রয়োজনের জিনিসগুলো অর্জন করে নিতে। হবে আপনাকে।
আপনার প্রয়োজনের (বস্তুগত উপকরণের) তালিকার প্রথম দু’চারটির মধ্যে কিন্তু থাকতে হবে-অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার ব্যবস্থা।
এবার দু’নম্বর কাগজটি নিন।
এটির উপর বড় বড় অক্ষরে লিখুন-বিষয়।