সঙ্কল্পিত কাজটিকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে উপায় আবিষ্কার করতেই হবে আপনাকে। এর জন্যে মাথা ঘামানোর দরকার পড়ে। আপনাকে চিন্তা করে উপায় উদ্ভাবন করতে হবে।
ভয়ের কিছুই নেই, কারণ চিন্তা করে উপায় উদ্ভাবনের ব্যাপারটা মোটেই কঠিন নয়। এর জন্যে প্রতিভাবান বা অসাধারণ বুদ্ধিমান না হলেও চলবে।
কাজ একটি, কিন্তু সেটিকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে অনেকগুলো উপায়ের দরকার। ধরুন, পিকনিকে যাবেন। আপনার বন্ধু-বান্ধবদের কারো মাথায় এলো, সে-ই প্রকাশ করলো ইচ্ছের কথাটা। আপনারা সবাই রাজি হলেন যেতে।
এবার পরিকল্পনা রচনার পালা।
কাজ একটি–পিকনিক। পরিকল্পনা করতে হলে এই কাজটিকে বেশ কয়েকভাগে ভাগ করে নিতে হবে। এবং প্রত্যেকটি ভাগকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে আলাদা আলাদা উপায় আবিষ্কার করে নিতে হবে।
প্রথমেই যে প্রশ্নটি দেখা দেবে সেটি হলো, কোথায় যাবেন? এ ব্যাপারে মত বিরোধ দেখা দিতে পারে। কেউ বলবে চন্দ্রায় যাবো, কেউ বলবে জয়দেবপুরের নাম বা সুদূর কক্সবাজারের নাম। ধরুন, আপনারা দশজন বন্ধু যাবেন, ছয়জনই এর আগে চন্দ্রায় পিকনিক করে এসেছেন। একই জায়গায় দু’বার যেতে চায় না। সাধারণত কেউ। তর্ক-বিতর্ক চলবে আপনাদের মধ্যে। আরো উল্লেখযোগ্য জায়গার নামে প্রস্তাব উঠবে। কিন্তু দেখা গেল প্রশ্নটার সমাধান হচ্ছে না। উপায়?
আবিষ্কার করতে হবে। শেষ পর্যন্ত হয়তো দেখা গেল, রাজবাড়িতে যাবার কথা বলছে সাতজন। বাকি তিনজন রাজি নয়, কারণ রাজবাড়িতে আগে গেছে তারা। এই তিনজনের মধ্যে হয়তো আপনিও আছেন। সমস্যাটার সমাধানকল্পে, অধিকাংশ বন্ধু যখন রাজবাড়িতেই যেতে চাইছে, আপনিও সম্মতি দিলেন। বাকি রইলো দু’জন। এদেরকে বোঝানো দরকার। সবাই মিলে চেষ্টা করলেন। দুজনই হয়তো, অনিচ্ছাসত্ত্বেও, শেষ পর্যন্ত, রাজি হলো রাজবাড়ি যেতে। কিংবা, যদি রাজি না হয়, অগত্যা ওদের দুজনকে বাদ দিয়েই আপনারা সিদ্ধান্ত নিলেন, রাজবাড়িতেই যাবেন পিকনিক করতে।
এক নম্বর সমস্যার সমাধান হলো। এরপর দু’নম্বর সমস্যা। কবে যাবেন?
এ ব্যাপারেও মতবিরোধ দেখা দেবে। কেউ বলবে আগামী মাসের এক তারিখে.শুক্রবার, ছুটির দিন, ওই দিনই চলো। কিন্তু দু’জন মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলো, আগামী মাসের এক তারিখে জরুরী কাজ আছে, কোনোমতেই যেতে পারবো না। ব্যবসা করে এমন দুই বন্ধু হয়তো বলবে, তাহলে দু’তারিখে, শনিবার দিন চলো। পাঁচজন হয়তো সাথে সাথে প্রতিবাদ জানাবে, কারণ, তারা চাকরি করে, শনিবার দিন অফিস কামাই করা অসম্ভব।
প্রশ্নটাকে নিয়ে সমস্যার উদ্ভব হবে। সমস্যাটার সমাধান করতে হলে উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। আগামী মাসের আট তারিখ, শুক্রবার। সকলের ছুটির দিন। কেউ হয়তো এই দিনটির কথা বললো। ওই দিনে হয়তো আপনার জন্যে ঢাকার বাইরে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। কারণ, ওই আট তারিখে, আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে, স্ত্রীকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবেন। সাত তারিখে বেতন পাবেন, আট তারিখে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাবেন-কথা দিয়েছেন স্ত্রীকে। প্রায় বছর খানেক স্ত্রীকে নিয়ে সিনেমা দেখেননি। রীতিমতো ঝগড়া-ঝাটি, মান-অভিমানের পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অমুক তারিখে নিয়ে যাবেনই। এই অবস্থায় সিনেমা না দেখিয়ে আপনার উপায়ই নেই, প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে।
ওদিকে, আপনি ছাড়া, আর সবাই ওই আট তারিখে পিকনিকে যাওয়ার ব্যাপারে একমত। এখন উপায়? চিন্তা করতে হবে আপনাকে। উপায় বের করতে হবে।
সিনেমাও দেখাতে হবে, পিকনিকেও যেতে হবে। একই দিনে দুটো কাজ। করা সম্ভব নয়। চিন্তা করতে গিয়ে আপনি দেখবেন, সমস্যাটার সমাধান একটা। নয়, বেশ কয়েকটি আছে। যেমন, এক-নির্দিষ্ট তারিখের আগেই স্ত্রীকে সিনেমা দেখিয়ে দেয়া। দুই স্ত্রীকে সমস্যাটার কথা বলা, তাকেও পিকনিকে নিয়ে যাবার প্রস্তাব দেয়া। তিন-স্ত্রীকে ঘুষ দেয়া (সিনেমা দেখাতে খরচ হবে ত্রিশ টাকার মতো, তাকে পঞ্চাশ বা একশো টাকার কিছু দেবার লোভ দেখান, বলুন, পরে সিনেমা দেখাবো)। চার-মিথ্যে অজুহাত দেখিয়ে তাকে ক্ষান্ত করা। আপনি বলতে পারেন, আট তারিখে বসের বাড়িতে যেতে হবে, পদোন্নতির ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্যে (তবে, মিথ্যে অজুহাত না দেখানোই ভালো)। অর্থাৎ কোনো না কোনো ভাবে আপনার ব্যক্তিগত সমস্যাটার সমাধান আপনি করে নিলেন। মিটে গেল পিকনিকে যাবার দু’নম্বর সমস্যা।
এইভাবে, এক এক করে প্রতিটি বাধা এবং সমস্যা খতিয়ে দেখে উপায় উদ্ভাবনের মাধ্যমে সব কিছু স্থির করতে হবে আপনাকে। একের পর এক প্রশ্ন উঠবে। প্রত্যেকটিরই উত্তর বের করে নিতে হবে। কখন রওনা হবেন, কখন ফিরবেন, খাওয়া-দাওয়ার কি ব্যবস্থা হবে, কতো টাকা করে চাঁদা ধরা হবে, তৈজসপত্র সাথে নেবেন কি কি, কার কাছে কি তৈজসপত্র আছে,ইত্যাদি আরো
অনেক ব্যাপারে আলোচনা করে প্রত্যেকটি ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাদেরকে। অর্থাৎ পিকনিকে যাবার ইচ্ছাটাকে একটা পরিকল্পনার মধ্যে বন্দী। করতে হবে। আপনাদের পরিকল্পনা যতোটা নিখুঁত হবে পিকনিকটাও সেই পরিমাণ নির্ঝঞ্ঝাট, আনন্দ মুখর ও উপভোগ্য হবে। এই-ই নিয়ম।
এই নিয়ম সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য।